প্রেম নেশা পর্ব ১৬+১৭+১৮

প্রেম নেশা পর্ব ১৬+১৭+১৮
শান্তনা আক্তার

মাইক হাতে মুখে হালকা হাসি নিয়ে স্টেজের উপর দাঁড়িয়ে আছে শান্তনা।
তো তুমি সাবিনা ইয়াসমিনের কি গানটা গাইবে।(একজন বিচারক)

আমি সাবিনা ইয়াসমিন ম্যামের গাওয়া অশ্রু দিয়ে লেখা এ গানটি গাইবো।

তো শুরু করা যাক(অপরজন বিচারক)
শান্তনা মেঘের দিকে এক ঝলক চেয়ে গান ধরল।
–অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান,,যেন ভুলে যেওনা।
একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে,,এ বাঁধন খুলে যেওনা আ আ আ। অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান।
–যতো সুর ছিল প্রানে,,,সবই দিয়েছি তোমায়।
বিনিময়ে তোমারে শুধু চিরদিন যেন কাছে
পাই।( 2)
–মালা চন্দনে রাঙা এ মনে,,কখনো দুলে যেওনা আ আ আ।
–অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান,,,যেন ভুলে যেওনা।
একই বন্ধনে বাঁধা দুজনে,,এ বাঁধন খুলে যেওনা আ আ আ।অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান।
গান শেষে শান্তনা সকলের মুখের দিকে চেয়ে আছে।কারো কনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ও বুঝে যায় যে ওর গান কারো ভালো লাগেনি।
এতোক্ষন সবাই অবাক হয়ে শান্তনার গান শুনছিল।এবার সবাই চিল্লিয়ে ওঠে সাথে করতালির শব্দ আনাচে কানাচে ছড়িয়ে যায়।
এবার শান্তনা বুঝতে পারলো সবার খুব ভালো লেগেছে তার গান।জাজেজ রাও বসা থেকে দাঁড়িয়ে হাতে তালি দিল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দুর্দান্ত গেয়েছো তুমি(দুজন জাজের মাঝখানে থাকা জাজেজ বলল)
সকল বিচারকরাই খুব তারিফ করল শান্তনার গাওয়া গানের। শান্তনা স্টেজ থেকে নেমে যায়।30 মিনিট পর রেজাল্ট ঘোষণা করা হবে।

খুব ভালো গেয়েছো পিচ্চি।

হুশ,,,আস্তে বলুন।ওরা শুনে ফেলবে।

ওহ সরি।আমি সিউর তুমিই জিতবে।

মিশমি ওতো ভালো গেয়েছে। ওর ও জেতার চান্স আছে।

এটা ঠিক,,,তবে আমার মনে হচ্ছে তুমিই জিতবে।

দেখা যাক কি হয়।


মিশমি ম্যাম,,এই পিদ্দি তো খুব ভালো গেয়েছে।(জুসি)

যতোই ভালো গাক না কেন,,, East or west Mishmy is the best…কথাটা যেন মাথায় থাকে।

ঠিক তাই গিটারটা আমাদের মিশমি ম্যামই পাবে।(কলি)
বিজয়ী ঘোষণা করার সময় হয়ে এসেছে।যিনি অ্যাংকারিং এর দায়িত্বে আছেন উনি সবাইকে যার যার জায়গায় বসতে বললেন এবং 3 জন বিচারক থেকে একজনকে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করার জন্য অনুরোধ জানালেন।সকল participants দের মুখে টেনশনের ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে।সবাই প্রে করছে জেতার জন্য।তাদের টেনশনের পাল্লা দিগুণ হয়ে যায় বিচারকের কথায়।

আসসালামু আলাইকুম সকলকে।প্রথমে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল কে,,যিনি আমাকে বিচারক হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পরিশেষে,, সকল অভিভাবক,,প্রতিযোগি এবং শিক্ষার্থীদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতে চাই আজকের এই সংগীত প্রতিযোগিতার সাথে থাকার জন্য।সকল participants রাই ভালো গেয়েছে।তবে নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো একজন বিজয়ী হবে তার হাতে তুলে দেওয়া হবে একটি স্পেশাল গিটার। তো আজকে গান গেয়ে জাজেজদের মন জয় করে যে বিজয়ী হয়েছে,,,,,,,তার নাম,,,,,,,
শান্তনা নিজের ফিংগার ক্রস করে আছে।সকলেরই একই অবস্থা।
আজকের বিজয়ীর নাম হচ্ছে মিসেস শান্তনা চৌধুরী।শান্তনার হাতে গিটার তুলে দেওয়ার জন্য আমাদের কলেজের মাননীয় প্রিন্সিপালকে মঞ্চে আসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। নিজের নাম বিজয়ী হিসেবে শুনে খুশিতে শান্তনা মেঘকে জড়িয়ে ধরেছে।

মিশমি ম্যাম আপনি হেরে গেলেন।(কলি)

আপনার প্রেসটিজ টা কোথায় থাকলো বলুনতো।(জুসি)

চুপ কর এখন বাড়ি চল,,,এখানে আর এক মুহুর্তও না।

কিন্তু ওদের শায়েস্তা করবেন না।(জুসি)

অন্য সময় বাটে ফেলতে হবে।এমন কিছু করবো যাতে ওই শান্তনা আর এই কলেজে টিকতেই না পারে।বলে মিশমিরা চলে যায় সেখান থেকে।
শান্তনা এখনো মেঘকে জড়িয়ে ধরে আছে।
ওকে যে প্রাইজ নেওয়ার জন্য মঞ্চে ডাকছে সেদিকে ওর খেয়ালই নেই।

এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকবে নাকি। আমাদের সবাই দেখছে। এবার শান্তনার হুশ ফিরে এবং ও যে এতোক্ষন মেঘকে জড়িয়ে রেখেছিল সেটার জন্য লজ্জিত বোধ করে।তারপর ওর ফ্রেন্ডরা তো আছেই এটা ওটা বলার জন্য।শান্তনা গিয়ে প্রিন্সিপালের হাত থেকে গিটার নেয়।সবাই ওকে অভিনন্দন জানায়।গিটার পেয়ে শান্তনা আনন্দে আত্মহারা প্রায়।অনুষ্ঠান শেষে মেঘ শান্তনাকে নিয়ে বাড়ি যায়।
রথি ড্রইংরুমে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল মেঘ আর শান্তনাকে দেখে খবরের কাগজটা একটু সাইটে রেখে দেয়।

আপু দেখ আমি গিটার পেয়েছি।(রথির কাছে গিয়ে)

দেখি দেখি,, বাহ খুব সুন্দর তো তোর গিটার টা।congress

শান্তনা উপরে চলো তুমি টায়ার্ড রেস্ট নিবে একটু।সবাইকে পরে দেখিয়ো।

মা বাবা সামিরাকে একটু দেখিয়ে আসি প্লিজ।বলতে বলতে সামিরা স্কুল থেকে চলে আসে।

ওয়াও ভাবি তুমি তাহলে winner হয়েছো।(সামিরা শান্তনার হাতের গিটারটা দেখে বুঝে নেয়)।খুব সুন্দর তো গিটার টা।শান্তনা এক এক করে সবাইকে দেখাতে থাকে।মেঘের যে খুব রাগ হচ্ছে সেটা রথি বুঝতে পারে।ওকে আরও রাগাতে রথি শান্তনাকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে ব্যস্ত করে রাখে।যাতে শান্তনা ওর রুমে না যায়।
মেঘ খানিকটা রেগে মেগেই নিজের রুমে চলে যায়।শান্তনা তো শান্তনার ধান্দায় পড়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর শান্তনা tired ফিল করে এবং নিজের রুমে চলে আসে।এসে দেখে মেঘ ল্যাপটপ এ কাজ করছে।

আপনি আজ আর অফিস যাবেন না?
মেঘ কিছু না বলে ল্যাপটপ টা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।

উনি কিছু বললেন না কেন? অপ্স উনি তো আজ আমার জন্য ছুটি নিয়েছিলেন। কিন্তু আমার কথার জবাব কেন দিলেন না?গিয়ে দেখি তো বলেই বেলকনিতে যায় শান্তনা।

আপনার কি হয়েছে?কথা বলছেন না কেন?

নো রেসপন্স,,,

আমি কি কিছু ভুল করেছি?

নো রেসপন্স,,

আমি উপরে আসিনি বলে রাগ করেছেন?
এবার মেঘ রেগে গিয়ে ল্যাপটপ টা ছুড়ে মারল সাথে সাথে ল্যাপটপ টা দু টুকরে বিভাজন হয়ে গেল।

যাও এখান থেকে?বিরক্ত করোনা আমাকে(বেশ রেগেই বলল)
মেঘের গর্জনে শান্তনা বেশ ভয় পেয়ে যায় সাথে খুব খারাপ ও লাগে ওর। ওইখান থেকে চলে এসে ওয়াশরুমে যায় শান্তনা ফ্রেশ হতে।মেঘ কিছুক্ষন ঠাঁই হয়ে বসে থাকে সেখানে।রাগ টা বেশি হয়ে গেছে সেটা মেঘ খুব ভালো করে উপলব্ধি করতে পারে।

শেট,,এটা আমি কি করলাম?পিচ্চি খুব কষ্ট পেয়েছে।আমার এতোটা রুড হওয়া উচিত হয়নি।

শান্তনা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই মেঘকে দেখতে পায়।মেঘ দু কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শান্তনা মেঘকে তোয়াক্কা না করে পাশ কেটে চলে যেতে নেয় তবে মেঘ শান্তনার এক হাত ধরে নেয় যার ফলে শান্তনা যেতে পারেনা।

সরি পিচ্চি।

হাত ছাড়ুন আমার কাজ আছে।

আগে আমাকে মাফ করে দাও তারপর যা করার করতে পারো।

কিসের মাফ?ভুলটা আমারি।আমিই আপনাকে বিরক্ত করছিলাম।(অভিমান করে বলল)
মেঘ শান্তনার হাত টেনে ওর সামনে নিয়ে আসে।

আসলে তুমি সবার সাথে কথায় বিজি ছিলে তাই আমার একটু রাগ হয়।

সবার সাথে কথায় বিজি ছিলাম বলে নাকি আপুর সাথে কথা বলছিলাম বলে রেগে গিয়েছিলেন। কোনটা?
মেঘ কি বলবে বুঝতে পারছে না।কারন শান্তনা রথির সাথে কথা বলছিলো বলে মেঘ রেগে গিয়েছিল কথাটা সত্য।

চুপ কেন বলুন?

সত্যি ধরেছো তুমি।

আমি না সত্যি স্পিচলেস।আমি আমার নিজের বোনের সাথে কথা বলেছি অন্য কারো সাথে নয়।এ নিয়ে রাগ করার কি আছে?এখনতো নিজের বাবা মার সাথে কথা বললেও আপনি রেগে যাবেন।তাইনা?

দেখো তুমি ব্যাপারটাকে বিকৃতভাবে নিও না।

তাহলে কিভাবে নেবো?আজকে আপনাকে বলতে হবে আপু কি এমন করেছে যার জন্য আপনি ওকে এতোটা ঘৃণা করেন।কদিন আগে যাকে পাগলের মতো ভালো বাসতেন কি এমন হলো যার জন্য এখন তাকে দু চোখেও দেখতে পারেন না। বলুন?বলুন বলছি?
মেঘের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে সেটা দেখে শান্তনার রাগ অভিমান নিমিষেই উধাও হয়ে গেল।মেঘ কিছু না বলে বেলকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে টান দিল।শান্তনা গিয়ে মেঘের হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে ফেলে দেয়।
কি করছেন এটা? আপনাকে না আমি সিগারেট খেতে মানা করেছিলাম।

আমি তো সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিতেই চেয়েছিলাম তুমিই তো আমাকে বাধ্য করলে।

আমি কিভাবে বাধ্য করলাম?

বাধ্য করোনি কি? পেছনের কথা তুলে আমাকে কষ্ট দেওনি কি? তার থেকেও বড় কথা আমি তোমাকে অন্য কারো সাথে শেয়ার করতে পারবো না।তুমি এটা কেন বোঝোনা।তুমি শুধু আমার সাথে কথা বলবে।তোমার সব কথা আমার সাথে শেয়ার করবে।এটাইতো আমি চাই।জানি না কেন তুমি অন্য কারো সাথে কথা বললে আমার খুব রাগ হয় সেটা কোনো মেয়েই হোকনা কেন। তুমি শুধুই আমার ফ্রেন্ড শুধু আমার।আমি আর কিছু জানতে চাইনা।তুমি আমাকে কথা দাও আমি যতোক্ষন তোমার সাথে থাকবো তুমি আমার সামনে থাকবে।কথা দাও?

আপনি এগুলো কি বলছেন?

কথা দাও নইলে আমি খারাপ কিছু করে ফেলবো।

আপনি এমন কেন করছেন বলুনতো?

আমি কিছুই জানি না।তবে এতোটুকু জানি তুমি আমার নেশা। কিরকম নেশা তা জানি না তবে তুমি আমার কাছে থাকলে আমার অন্য কোনো কিছুর প্রয়োজন পড়ে না।এক কথায় তুমি আমার ভালো থাকার মেডিসিন হয়ে গেছো। তুমি আমাকে কষ্ট দিওনা প্লিজ।আমি নিতে পারবো না। আমি তো তোমার কাছে একটু ভালো থাকা চেয়েছি আর তো কিছু চাইনি।প্লিজ এতোটুকু ইচ্ছে আমার পুরণ করো।প্লিজ।মেঘের চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে।শান্তনার খুব কষ্ট হচ্ছে মেঘের চোখের পানি দেখে।তাই আর কোনো প্রশ্ন করেনি শান্তনা।

আপনি একটু বসুন। মেঘকে খাটে বসিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসে। নিন পানি(পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে)
মেঘ গ্লাসে থাকা পুরো পানি খেয়ে নেয়।তারপর শান্তনা গ্লাসটা আগের জায়গায় রেখে আসে।

পিচ্চি

হুম,,

আমি একটু তোমার কোলে মাথা রাখি?
মেঘের মায়া জড়ানো কন্ঠে বলা আবদারটি শান্তনা পুরণ না করে থাকতে পারলো না।শান্তনা কিছু না বলে ওর পা দুটো গুটিয়ে নিলো।যার অর্থ মেঘ বুঝে নেয়।মেঘ ওর মাথা শান্তনার কোলে রাখে।এবার মেঘ আরেকটা বায়না ধরে।
আমার মাথায় বিলি কেটে দাওনা পিচ্চি।শান্তনাও বাধ্য মেয়ের মতো মেঘের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।কিছুক্ষণ পর মেঘ ঘুমিয়ে পড়ে।শান্তনা মেঘের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে আছে।মেঘের চোখের কোণে জমে থাকা পানি নিজের ওরনা দিয়ে মুছে দেয় শান্তনা।এই সুযোগে শান্তনা মেঘের চোখের সেই নজর কাড়া তিলটাও ছুয়ে দেয়।অনেক দিনের ইচ্ছে আজ পুরণ হলো তার।অনেক্ষন স্লাইড করার পর এক অজানা ঘোরের মধ্যে চলে যায় শান্তনা। আচমকাই মেঘের তিলটায় নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দেয়।মেঘ শান্তনার ঠোঁটের স্পর্শ পাওয়া মাত্রই নিজের চোখ খুলে ফেলে।শান্তনা বেশ ভয় পেয়ে যায় তাতে।

আমি কি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম?

হ্যাঁ কিন্তু উঠে পড়লেন কেন?

জানি না কেন হঠাৎ চোখ খুলে যায়।

তো ঘুমান আবার।আমি গিয়ে আসরের নামাজ পড়ে আসি।

আমিও পড়বো।চলো এক সাথে পড়ি।
মেঘ শান্তনা দুজন মিলে আসরের নামাজ আদায় করে নিল।
রাতে ডিনার করে এসে শান্তনা পড়ার টেবিলে হাতে বই নিয়ে বসে আছে।আর মেঘ ফোন টিপছে।তবে শান্তনা একটুও পড়াতে মন বসাতে পারছে না।ওর খালি মনে হচ্ছে কিভাবে ও মেঘের তিলটায় চুমু দিল।অজানা এক ভালো লাগা কাজ করছে ওর মনে সাথে লজ্জাও করছে।
আচ্ছা উনি কি আমাকে লাইক করে?উনি কেন বললেন আমি ওনার নেশা?উনি কেন আমাকে কারো সাথে শেয়ার করতে চান না?কেনই বা আমার ছোট ছোট আবদার গুলো পুরণ করেন? এরকম নানান প্রশ্ন শান্তনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

পড়তে বসেছো নাকি অন্য ধ্যানে বসেছো?
মেঘের কথায় শান্তনা ভাবনার জগৎ ভেদ করে বেরিয়ে আসে।

কেন কি মনে হচ্ছে আপনার?

আমার তো মনে হচ্ছে কিছু ভাবছো তুমি।

ক ক কি ভভভাব্বো আমি (তোতলিয়ে)

তা তো জানি না।তবে বলো শুনি কি ভাবছিলে।

কিছুই না।

তাই?

হুম,,,তাই।

কিছু যদি নাই ভাবো তাহলে তোমার ঠোঁট কেন নড়ছিল? আর তুমি বইয়ের দিকে না চেয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরে কেন ছিলে?

অন্য দিকে চেয়ে পড়ছিলাম।দেখছিলাম পড়াটা
হয়েছে কিনা। ওকে?আপনি ডিসটার্ব করে দিলেন আমায়।

ওকে,,, ওকে সরি।তাহলে তুমি পড়ো আমার ঘুম পাচ্ছে খুব গুড নাইট।বলে মেঘ বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

যাহ বাবা ঘুমিয়েও গেল।আমিও যাই ঘুমাতে আজ আর আমার মাথায় পড়া ঢুকবে না।বাতি নিভিয়ে প্রতিদিনের মতো মেঘ আর ওর মাঝে একটা পাশ বালিশ দিয়ে শুয়ে পড়ে শান্তনা।

মেঘ শান্তনার বিয়ের 2 মাস পুর্ণ হলো।পক্ষান্তরে সামির আর রথির ও। এই দুই মাসে শান্তনা রথির সাথে ভালো ভাবে কথা বলতে পারেনি।যখনই বলতে যেতো মেঘ চলে আসতো তাই সেভাবে কথা বলেনি।কেউ কারো রুমেও যায়নি এই অব্দি।তবে আজ রথি কি মনে করে শান্তনার রুমে আসল।শান্তনা তখন বিছানা গোছাচ্ছিল।
রথিকে নিজের রুমে দেখে খুশি হয় আবার ভয়ও হয় যদি মেঘ চলে আসে সেই ভেবে।তাও ভয়কে সাইডে ফেলে মুখে হাসির রেখা টেনে আনে শান্তনা।

কি করছে আমার বোনটা?

এইতো বিছানা গোছাচ্ছিলাম।তুমি কি মনে করে এলে?

কি মনে করে এলাম মানে?বিয়ে হয়েছে তার পর থেকে তো আপুকে ভুলেই গেছিস।তাই আজ তোকে পিটুনি দিতে এলাম।

এতে ভোলার কি আছে?

তাহলে আপুর রুমে একবারও গেলি না কেন? Even ঠিক করে কথাও বলিসনি এই দু মাস আমার সাথে।

তুমি তো জানোই আমি কলেজে যাই পড়াশোনা নিয়ে বিজি থাকি।এসব কারণেই যাওয়া হয়না।তাছাড়া তুমি ওতো আসোনা আমার রুমে।

আমি দেখছিলাম তুই আসিস কিনা।এখন যখন বুঝলাম তুই আমাকে ভুলেই গেছিস তখন আমিই চলে এলাম।কি হয়েছে রে তোর?

কিছুই না।বললামই তো সব।(মন খারাপ করে বলল)

আচ্ছা বাবা মানলাম।এতে মন খারাপ করার কিছুই নেই।বাহ তোর রুমটা বেশ সুন্দর তো।র‍থি রুমটাকে ঘুরে ঘুরে দেখছে।ওয়াও তোদের বেলকনি থেকে তো পুরো ঢাকা শহর দেখা যায়।

হুম,,,তুমি বসো এখানে আমি গিয়ে কফি নিয়ে আসি তোমার জন্য।

ওকে যা।শান্তনা কফি আনতে চলে যায়।
রথি গিয়ে মেঘের ছবির ফটোফ্রেমটা হাতে নেয়।তুমি যদি আমাকে মিথ্যা না বলতে তাহলে আজ আমি তোমার বউ হতাম।আজ নিজের ভুলের জন্য আমি অন্য কারো বউ।এক দিক দিয়ে ভালোই হলো সারাজীবন তুমি মরন যন্ত্রণা ভোগ করবে।তবে আমি একটা জিনিস বুঝতে পারিনি তুমি আমাকে মিথ্যে কেন বলেছিলে?কেন বলেছিলে তুমি গরিব? তুমি যদি আমাকে সত্যিটা বলতে তাহলে আজ এসব কিছুই হতো না।আমি তোমার হতাম।কিন্তু আফসোস তোমার একটা ভুলের জন্য সব কিছুই ঘেটে গেল।এক দিন না একদিন তোমাকে এর জবাব দিতেই হবে।আমার কি? আমার তো টাকার প্রয়োজন।সেটা হলেই হবে।আমি কার ওয়াইফ কে আমার হাসবেন্ড এটা কোনো ম্যাটার না।
কারো পায়ের আওয়াজ শুনে রথি ফটোফ্রেমটা আগের জায়গায় রেখে দেয়।

চলে এসেছি কফি নিয়ে।

আয়,,,আজ দু বোন মিলে গল্প করবো ঠিক আগের মতো।শান্তনাও রাজি হয়ে যায়।এক কথায় দু কথা রথি বলে ওঠে,,,,
আচ্ছা তোর আর মেঘের দম্পতি জীবন কেমন চলছে রে?
রথির এমন প্রশ্নে শান্তনার মুখের রং উবে যায়।
মানে মেঘ কি তোকে ওয়াইফ হিসেবে মেনে নিয়েছে?

কেন মেনে নিবো না।ওতো কারো মতো ঠক জালিয়াত নয় যে ওকে ওয়াইফ হিসেবে মেনে নেওয়া যাবে না। কারো গলা শুনে দারজার দিকে তাকায় রথি আর শান্তনা।মেঘকে দেখে রথি কিছুটা চমকে ওঠে।আর শান্তনা ভয়ে ঢোক গিলছে।
কি হলো চুপ করে কেন আছেন ভাবি।

কি বলবো আমি?

এটাই যে আমি শান্তনাকে ওয়াইফ হিসেবে মেনে নেবোনা কেন?কি কমতি আছে ওর।

আমি তো এমনিই জিজ্ঞেস করেছিলাম।এখানে কমতির কথা কেন আসছে।

আসবেই তো।বিয়ের এতো গুলো দিন হয়ে গেছে আপনি এখন এই প্রশ্ন কেন করছেন?তাও আবার নিজের বোনকে।

আপনি বাদ দিন না। আপু আমাকে এমনিই জিজ্ঞাস করেছে।

থাক শান্তনা তোর বরের আমার কথায় খারাপ লেগেছে আর আসবো না তোদের রুমে আমি গেলাম।বলে চলে যাচ্ছিল কিন্ত,,,

দাঁড়ান,,,কফিটা শেষ করেই নাহয় যেয়েন কেমন?রথি বেশ রেগেই ওদের রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

এটা করা একদমই উচিত হয়নি।আপু কষ্ট পেয়ে গেল।

প্রেম নেশা পর্ব ১৩+১৪+১৫

যা করেছি ঠিক করেছি।এই নিয়ে আর একটা কথাও যেন নাহয়।
শান্তনা এখন মেঘের রাগ খুব ভালো করেই বোঝে তাই এ নিয়ে আর কথা বাড়ায়নি।
রথি নিজের রুমে গিয়ে সব কিছু ছোড়াছুড়ি করছে।দু একটা কাঁচের জিনিস ভেঙেও ফেলেছে তাও তার রাগ নিবারন হচ্ছে না।
আমাকে অপমান করা।এই রথিকে অপমান করা।একবার নয় দু বার নয় বারবার সবার সামনে আমাকে নিঁচু করা।খুব বড় ভুল করে ফেলেছো মেঘ।আমারও সময় আসবে যখন তুমি আমার পা ধরে মাফ চাইবে এটা আমার চ্যালেঞ্জ।কথাটা বলে বিছানার চাদর টেনে নিচে ফেলে দেয় রথি।

নিস্তব্ধ মধ্য রাত,,কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই।মেঘ নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। তবে শান্তনার চোখে ঘুম নেই।এই বাড়িতে আসা পর্যন্ত প্রায় প্রতিটা রাতই শান্তনার নির্ঘুমে অতিবাহিত হয়ে যায়।আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
আমি ওনাকে বুঝতে পারিনা।খুব অদ্ভুত উনি।নিজের মনের কথা শেয়ার করেনা।একা একা কষ্ট পায়।সব কথা খুলে বললে কি এমন হয় ওনার।এমনিতে তো খুব বেস্ট ফ্রেন্ড বেস্ট ফ্রেন্ড বলে আমাকে।সেই বেস্ট ফ্রেন্ডের থেকেই কথা লুকায়,,এটা কেমন বন্ধুত্ব?নাহ কাল কলেজ থেকে এসে ওনার মার সাথে কথা বলতেই হবে আমাকে।দেখি কিছু জানতে পারি কিনা।কেন জানি মানুষটার কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না।খুবই ভালো মানুষটা।মেঘের মুখের দিকে চেয়ে কথা গুলো মনে মনে আওড়াচ্ছে শান্তনা।কিছুক্ষণ পর চোখ লেগে আসে ফলে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় সে।

প্রেম নেশা পর্ব ১৯+২০+২১