প্রেম নেশা পর্ব ২২+২৩+২৪
শান্তনা আক্তার
উঠুন,,,অনেক বেলা হয়ে গেছে উঠুন,,,
শান্তনার ডাকে মেঘ জেগে ওঠে।
কি হয়েছে আজ একটু ঘুমোতে দেও প্লিজ।
।
জ্বি না,,,আপনি বলেছেন আমাকে রুম ক্লিন করতে হেল্প করবেন আজ।এখন ঘুমালে চলবে না।
।
তুমি গিয়ে সামিরা মমের সাথে গল্প করো,,
নাহ,,,
।
প্লিজ যাও,,আমাকে ঘুমাতে দাও।
।
নাহ,,আপনি এখনই উঠবেন ঘুম থেকে 10 টা বেজে গেছে এখন শুরু না করলে রাত হয়ে যাবে গোছাতে গোছাতে।
।
প্লিজ পিচ্চি,,,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
কোনো প্লিজ কাজ করবে না।আপনি যখন বলেছেন আমাকে হেল্প করবেন তাহলে করতেই হবে এই বলে দিলাম।আপনি আবার ঘুমিয়ে পড়লেন।উঠুন।
মেঘ ওঠার নামই নিচ্ছে না।এবার শান্তনা এক গ্লাস পানি এনে মেঘের মুখে ঢেলে দিল মেঘ লাফ দিয়ে উঠে পড়ল।
।
এটা কি করলে?
।
যা করেছি বেশ করেছি।আপনি আমার কথায় উঠে পড়লে তো এমনটা হতো না।তাইনা?
মেঘ বেশ বিরক্তি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
ওয়াশরুম থেকে এসে দেখল আলমারির সব কিছু নিচে ফেলানো সব কিছু ছড়ানো ছিটানো।
।
এসব কি?
।
দেখতেই তো পারছেন কি।
।
আমি ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম।
আপনার নাস্তা আমি বেলকনিতে রেখেছি নিচে যেতে হবে না।যান ঝটপট খেয়ে আসুন।
মেঘ খুব রেগে মেগে বেলকনিতে গেল।হালকা ব্রেকফাস্ট করে রুমে ঢুকল সাথে সাথে শান্তনা মেঘের হাতে বড় ঝাঁড়ু ধরিয়ে দিল।
।
এটা কি?
।
ঝাঁড়ু।
।
তাতো আমি দেখছি তবে আমার হাতে কেন?
।
ঝাড়ু দেবেন বলে।
।
আমি?
।
তোকি আমি? ওতো উঁচুতে আমি নাগাল পাবো না তাই আপনি উপর দিয়ে একটু ঝাঁড়ু মেরে দিন না।
।
না পারবো না।
প্লিজ,,রিকুয়েষ্ট
মেঘ না পেরে শান্তনার হাত থেকে ঝাঁড়ুটা নিয়ে মুখে একটা মাস্ক লাগিয়ে সানসেট এবং তার আনাচে কানাচে ঝাঁড়ু দেওয়া শুরু করল।
।
এইতো গুড সুইপার বলেই হেসে উঠে শান্তনা।
মেঘ কোনো উত্তর দেয়নি ও ওর মতো কাজ করছে।
আলমারির উপর খুব ধুলা জমেছে একটু মুছে দেই বলে একটা চেয়ার আর ভেজা ন্যাকড়া আনে শান্তনা।চেয়ারে উঠে আলমারি মোছা শুরু করে দেয়। মোছা শেষে নামতেই নিচ্ছিল শান্তনা হঠাৎ পা পিছলে যায় ওর।পড়ে যাবে কি তার আগেই মেঘ ওকে ধরে নেয়।শান্তনা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।চোখ খুলে নিজেকে মেঘের কোলে দেখতে পায়।মেঘের মুখে মাস্ক লাগানো তাও ওর চোখে রাগের ছাপ স্পষ্ট দেখতে পায় শান্তনা।শান্তনাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে,,,
তোমাকে কে বলেছে আলমারির উপরে পরিষ্কার করতে?আমাকে বললেই পারতে।
।
আসলে আমি,,
।
থাক আমাকে দাও আমি মুছে দিচ্চি?
।
না হয়ে গেছে আমি নামতে নিচ্ছিলাম তার আগেই পা পিছলে যায়।
।
এখন পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙলে কেমন হতো হুম?
।
পড়িনি তো।এখন আমাকে না বকে আপনার জিনিসপত্র কোথায় কি রাখবো সেটা বলুনতো।
এরপর মেঘ একটা একটা করে ওর সব জিনিস শান্তনাকে ধরিয়ে দিচ্ছে শান্তনা সেটা আলমারিতে ঘুছিয়ে রাখছে।
OMG,,, ভাইয়া তুই কতো কাজ করছিস।
সামিরার কথায় মেঘ কপাল ঘুচিয়ে নেয়।
।
তুই এখানে কি করতে আসছিস এখন?
।
ভাবির সাথে কথা বলতে আসছিলাম কিন্তু তোকে ঝাঁড়ু দিতে দেখে আর ঘরে ঢুকিনি।
মানে তুই কখন এসেছিস?
।
যখন ঝাঁড়ু দিচ্ছিলি তখন।
।
তার মানে তুই অনেকক্ষণ ধরে এখানে ছিলি।
।
হুম,,,তোর পিকটা কেমন হয়েছে রে ভাইয়া।(মেঘের ঝাঁড়ু দেওয়া পিকটা দেখিয়ে)
।
তুই আমার পিক কেন তুলেছিস?
।
যা করেছে বেশ করেছে গুড জব সামিরা।
।
তোমার জন্যও একটা সারপ্রাইজ আছে।
।
কি?
এইযে দেখো,,,আরেকটা পিক দেখিয়ে।
পিকটা দেখে শান্তনা আর মেঘের চোখ প্রায় চড়কগাছ।কারন পিকটা শান্তনা আর মেঘের।শান্তনা যখন মেঘের কোলে ছিল তখন তুলেছে।
।
এই তুমি এই পিক কেন তুলেছো।ডিলিট করো জলদি।
।
না করবো না।আমি সবাইকে দেখাবো।
।
এবার বলো গুড জব সামিরা।দেখেছোতো
ও কতো বড় শয়তান মেয়ে।
।
সেটা জানি না। আপনি এখন পিকটা ডিলিট দিতে বলুন না। সামিরা তুমি তোমার ভাইয়ার ঝাঁড়ু দেওয়া পিকটা রেখে ওইটা ডিলিট দাও বোন।
।
কোনটা?
তোর কান টানলে মনে পড়বে কোনটা।
।
একদম সেই ভুল করিসনা তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।তাহলে আমি এখনই গিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিব পিকটা।
।
এই না। ভালো বোন প্লিজ তুমি এটা কোরোনা।তোমার ভাইয়া কিছুই করবে না তুমি পিকটা ডিলিট দাও।
।
ঠিক আছে ভাবি,,তুমি যখন বলছো তাহলে আমি পিকটা,,
।
ডিলিট করে দিবে,,,ধন্যবাদ।
।
আরে না,,,কাউকে দেখাবো না তবে আমাকে একটা জিনিস দিতে হবে।
।
কি জিনিস?
।
জিনিসটা ভাইয়া দেবে।কি দিবি তো ভাইয়া?
আগে শুনবো কি জিনিস তারপর।
।
ভাবি আমি গেলাম নিচে সবাইকে পিকটা দেখাতে বলে চলেই যাচ্ছিল,,,
।
আরে আরে দাঁড়াও। তোমার ভাইয়া দেবে তুমি যা চাও।
।
কি বলছো কি তুমি? কি চায় সেটা না শুনেই,,
।
মেনে নিন দয়া করে নইলে সবার সামনে লজ্জিত হতে হবে আমাদের।
।
আমার কাছে কিন্তু বেশি সময় নেই তাড়াতাড়ি বলো তোমরা কি করবে।
।
আচ্ছা বল তুই কি চাস?
।
আজ আমার ফ্রেন্ডের জন্মদিন ওর জন্য একটা ড্রেস কিনবো তাই টাকা লাগবে।
।
কতো?
20 হাজার দিলেই enough…
।
একটা ড্রেস কিনতে তোর এতো টাকা লাগবে?
।
2 টা কিনবো একটা আমার জন্য আরেকটা ফ্রেন্ডের জন্য।
তারপর মেঘ 20 জাহার টাকা বের করে দেয় সাথে পিকগুলো ডিলিট করিয়ে নেয়।সামিরা চলে যাওয়ার পর মেঘ গিয়ে দরজা লাগিয়ে আসে।
।
কি হলো?
।
আবার যদি চলে এসে উল্টো পাল্টা পিক তুলে তাই দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসলাম।
।
ঠিক করেছেন।আমিতো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।এবার আপনি স্নানে যান আমি বাকিটা করে নিবো।
।
ওকে। বলে মেঘ গোসল করতে যায়।
মেঘের বের হতেই শান্তনা গোসল করতে ওয়াশরুমে যায়।শান্তনা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ শেষে আয়নার সামনে গিয়ে মাথা থেকে তোয়ালে খুলে চুল মুছে নেয়।টুপটাপ পানি পড়ছে শান্তনাত চুল বেয়ে। মেঘ বুক পড়া ছেড়ে শান্তনাকে দেখছে এক ধ্যানে।কিছুক্ষণ পর শান্তনা মেঘের কাছে যায়।
এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?নিচে চলুন খেতে। মেঘ শান্তনার কথার পাত্তা না দিয়ে শান্তনার হাত ধরে টান দেয় শান্তনা তাল সামলাতে না পেরে মেঘের উপর গিয়ে পড়ে। মেঘ শান্তনাকে নিয়ে বিছানায় পড়ে যায়।
কি করছেন?
।
মেঘ তার এক আঙুল শান্তনার ঠোঁটে রাখে।
হুশ,,,একদম চুপ।
মেঘ শান্তনাকে পালটি দিয়ে ওর উপর উঠে যায়।একটু একটু করে মেঘ শান্তনার ঠোঁটের দিকে এগোতে থাকে।মেঘর ঠোঁট অনেকটা পৌঁছে যায় শান্তনার ঠোঁটের কাছে।তবে শেষ মুহুর্তে দরজার ঠকঠক আওয়াজে মেঘ তার ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে।সাথে সাথে মেঘ শান্তনার উপর থেকে উঠে দাঁড়ায়।
।
সরি,,শান্তনা।
।
শান্তনা কিছু না বলে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।দরজা খুলে ফুলিকে দেখতে পায়।
।
আফা খাইতে আহেন নিচে খালাম্মা ডাকতাছে।
।
তুমি যাও আমরা আসছি।
আইচ্চা বলে ফুলি চলে যায়।
মেঘ ওইভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। কি হল? ও কি করতে যাচ্ছিল এসবই ভাবছে মেঘ।
।
নিচে আসুন মা খেতে ডাকছেন আমাদের।
।
হুম,,,চলো।
রাতে,,,
শান্তনা বিছানা গোছাচ্ছে আর মেঘ তার নিউ ল্যাপটপ ঘাটাঘাটি করছে।দুপুরের পর থেকে কেউ কারো সাথে একটা কথাও বলেনি।এমনকি কেউ কারো চোখের দিকেও তাকায়নি।
নিরবতা ভেঙে মেঘ বলে ওঠে,,
তুমি কি আমার উপর রাগ করে আছো?
।
না,,,কেন?
।
তাহলে কথা বলছো না যে,,
।
আপনি বলছেন না তাই আমিও বলিনি।
।
সরি দুপুরের কাজটার জন্য। actually,,
।
থাক বাদ দিন।আমি কিছু মনে করিনি।আর কতো বলবেন সরি।
।
তাহলে আমরা আবার আগের মতো ফ্রেন্ড?
আমি কি বলেছি আমরা আগের মতো ফ্রেন্ড নই?
।
তা বলোনি তবে আমি ভাবলাম তুমি রেগে আছো।
।
না রেগে নেই।আর আপনি আজ এতো রাত অব্দি কেন জেগে আছেন শুনি?অন্য দিন তো 12 বাজতে না বাজতেই ঘুমিয়ে যান।আজ কি হলো?
।
আজ টেনশন ছিল তাই।
।
কিসের টেনশন?
।
তোমাকে হারানোর।
।
মানে?
মানে তোমাকে ফ্রেন্ড হিসেবে হারানোর টেনশনে ছিলাম।
।
আমি কেন হারাবো?
।
দুপুরের ব্যাপারটার জন্য।
।
হায় আল্লাহ,,,আমি কতবার বলবো দুপুরের ব্যাপারটা ভুলে যান।আর একবার যদি বলেন তো আমি সত্যি হারিয়ে যাবো।
।
মেঘ ছলছল চোখে বলল,,, না,,তুমি কোথাও হারাবে না।
।
এক দিন না একদিন তো হারাতে হবেই আমাকে।আমি তো আর সারাজীবন আপনার সাথে থাকবো না।আপনি তো আর সারাজীবন একা থাকবেন না।আমি তো তখন চলেই যাব,,, কথাটা শেষ করার আগেই মেঘ এসে জোড়ে চড় বসিয়ে দেয় শান্তনার গালে ।শান্তনা ছিটকে গিয়ে খাটের সাথে বারি খায় সাথে সাথে ওর কপাল ফেটে রক্তক্ষরণ হতে থাকে।মেঘের তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।শান্তনা যখন কপালে হাত দিয়ে রক্ত বলে ওঠে তখন মেঘের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। ও গিয়ে শান্তনাকে নিচ থেকে উঠায়।শান্তনা মেঘকে হালকা ধাক্কা দেয় ফলে মেঘ কিছুটা দূরে সরে যায়।
ধরবেন না আমাকে আপনি।বলে ওরনা দিয়ে কাটা জায়গায় চেপে ধরে।
দেখি কোথায় লেগেছে তোমার।
।
না,,,আপনাকে দেখতে হবে না।
।
প্লিজ পিচ্চি,,আমাকে দেখতে দাও।বলে শান্তনার কাছে যাচ্ছিল কিন্ত,,,
।
আপনি যদি আমার কাছে আসেন তো আমি আমাকে আরও আঘাত করবো।
।
প্লিজ এরকম করো না।আচ্ছা তুমি মমের কাছে গিয়ে ড্রেসিং করিয়ে আসো।
।
না আমি এভাবেই থাকবো।
তাহলে আমি জোড় করে তোমার কাটা জায়গায় ড্রেসিং করিয়ে দেব।এখন তুমি বলো কি করবে?
শান্তনা আর কিছু না বলে নিচে চলে যায়।মেঘ ওইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে।খুব রাগ হচ্ছে মেঘের নিজের প্রতি।
শান্তনা সাহেরা খাতুনের থেকে ড্রেসিং করিয়ে এসে খাটের মাঝে একটা পাশ বালিশ রেখে শুয়ে পড়ে।মেঘ অনেকবার সরি বলেছে।কথা বলতে চেয়েছে তবে শান্তনা মেঘের কথায় কোনো পাত্তা দেয়নি।সারারাত মেঘ ছটফট করেছে অনুতপ্তের যন্ত্রণায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে শান্তনাকে বিছানায় না পেয়ে তাড়াতাড়ি নিচে যায় মেঘ।মেঘ ভেবেছিল শান্তনা হয়তো চলে গেছে কিন্তু রান্নাঘরে শান্তনাকে দেখে মেঘের ধারণা বদলে যায়।তারপর একটা হাফ ছেড়ে আবার নিজের রুমে যায়।সবাই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে।মেঘ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছে নিজের রুমে কিন্তু শান্তনা উপরে যায়নি বলে রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে মেঘ দেখল সবাই ব্রেকফাস্ট করছে আর শান্তনা সবাইকে সার্ভ করছে।মেঘ গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে।
শান্তনা তাড়াতাড়ি করো আমার লেট হয়ে যাচ্ছে তোমাকে ছেড়ে অফিসে যেতে হবে।
।
ভাইয়া আজ ভাবি আমার সাথে যাবে বলেছে।
।
কেন?
।
জানি না। তবে ভাবি বলল আজ আমার সাথে যেতে চায়।আমাদের স্কুলের ওইখানে লাইব্রেরি আছে সেখান থেকে কিছু কিনবে বলে।
মেঘ জানে শান্তনা কেন যাবেনা ওর সাথে তাই আর কিছু বলেনি শান্তনার দিকে এক নজর তাকিয়ে ব্রেড মুখে দেয়।
।
আচ্ছা মেঘ তুমি কাল রাতে কোথায় ছিলে যখন শান্তনা বাথরুম থেকে পড়ে যায়?
সাহেরা খাতুনের কথায় মেঘ মাথা উচু করে তাকায়।
।
মেঘ কিছু বলার আগেই শান্তনা বলে ওঠে,,,
মা উনি ঘুমাচ্ছিলেন বলেছিলাম তো।
।
তাই বলে কোথায় কি হচ্ছে তার খেয়াল রাখবে না।(আজমল)
উনি খুব টায়ার্ড ছিলেন।আমিই ওনাকে ডাক দেইনি।
।
এটা খুব খারাপ মেঘ,,আমার বোনটার সব দায়িত্ব তোমার তুমি এরকম বেখায়ালি কাজ করলে কিভাবে হয়।কি জানি কি আছে ওর কপালে।
রথির কথায় মেঘ প্রচুর রেগে যায়।তবে কিছুই বলেনা।
।
আরে না আপু।ওনার কোনো দোষ নেই।এমনিতে কাল অনেক হেল্প করেছে আমাকে তাই শরীর তেমন ভালো ছিলনা ওনার।তাই টের পায়নি।
।
আমি যাচ্ছি মম,,,বলে মেঘ বেরিয়ে যায়।
।
আরে চলে গেল আমার ছেলেটা পুরো নাস্তা না করেই।(সাহেরা)
।
তোমরা সবাই মিলে মেঘের খিচাই করেছো সেই জন্যই চলে গেছে বেচারা(সামির)
হুম ঠিক বলেছিস ভাইয়া।আমি দেখেছি কাল কতটা পরিশ্রম করেছে ছোট ভাইয়া।ভাইয়া কেন ওর জায়গায় আমি থাকলে ভূমিকম্প হলেও টের পেতাম না।আচ্ছা ভাবি তুমি রেডি হয়ে আসো আমিও যাই বলে সামিরা নিজের রুমে চলে যায়।
ড্রাইভার সামিরা আর শান্তনাকে কলেজে দিয়ে আসে। কলেজ ছুটি হলে শান্তনা ওর ফ্রেন্ডদের সাথে ক্যাফে করে বাড়ি চলে যায়।আজ মেঘ শান্তনাকে নিতে এসেছিল।শান্তনাকে না পেয়ে
শান্তনার ফোনে কল করে তবে রিং বেজে গেছে শুধু রিসিভ হয়নি। তাই বাড়ির ফোনে কল দেয়।তখন ফুলির কাছে জানতে পারে শান্তনা অনেক আগেই বাড়ি চলে গেছে।মেঘের রাগ এবার চরম পর্যায়ে চলে গেছে। বেশ রেগেই গাড়ি স্টার্ট দেয় সে।
শান্তনা জামা কাপড় ভাজ করছিল তখন মেঘ এসে ধপাস করে তার ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারে।
কি সমস্যা তোমার? একা একা বাড়ি কেন এসেছো?আমি কতক্ষণ তোমার কলেজের বাহিরে দাঁড়িয়েছিলাম জানো?
শান্তনা ওর কাজ করে যাচ্ছে মেঘ কি বলছে না বলছে সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই তার।খেয়াল থাকলেও এমন ভাব করছে যেন সে কিছু শুনেই নি।
কি হলো জবাব দিচ্ছো না কেন?আমি কিছু বলছি।
শান্তনা খুব স্বাভাবিক ভাবে মুখ করে আছে।মেঘের কথা কানেই নিচ্ছে না।ভাজ করা কাপড় চোপড় গুলো নিয়ে ওয়ারড্রবে রেখে ঘুরে আসছিল তার আগেই মেঘ শান্তনার এক হাত ঘুরিয়ে পিছনে নিয়ে শান্তনার পিঠের সাথে লাগিয়ে নেয়।
আমার কথার উত্তর কেন দিচ্ছো না হুম?
হাত ছাড়ুন,,আমার ব্যাথা লাগছে।
।
আগে আমার কথার জবাব দাও।
।
কিসের জবাব?জবাব যদি না দেই তাহলে কাল রাতের মতো আবার মারবেন হুম?মারুন তাহলে। মারুন তাও আমি জবার দেব না আপনাকে।
।
যেটা বলেছি তার এন্সার দাও বলছি।
।
কেন দেব?দেব না এন্সার কোনো সমস্যা আপনার?
আমার সমস্যা মানে বলেই শান্তনার কব্জিতে খুব জোড়ে চাপ দেয় মেঘ। ফলে শান্তনার হাতে থাকা কাচের চুড়ি ভেঙ্গে ওর হাতে ঢুকে যায়।ব্যাথায় শান্তনা কুকরে ওঠে।চোখ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
শান্তনার চোখের পানি দেখে মেঘ ওর হাত ছেড়ে দেয় সাথে সাথে ভাঙা চুড়ির টুকরোগুলো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে।শান্তনা ধিরে ধিরে ওর হাত সামনে আনতেই মেঘ ওর রক্তমাখা হাত নিজের হাতে নিয়ে নেয়।
।
সরি পিচ্চি আমি বুঝতে পারিনি।
এবারতো আপনার শান্তি হয়েছে। আমার রক্ত দেখতে তো আপনার খুব ভালো লাগে।এবার দেখেছেন আমার রক্ত?এবার আমার হাত ছাড়ুন।বলে শান্তনা ওর হাত টান দিবে তার আগেই মেঘ শান্তনার কাটা জায়গাটা চুষতে শুরু করে।আচমকা সব হওয়ায় শান্তনা বেশ অবাক হয়ে যায়। ওইভাবেই ফ্রিজড হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।কিছুক্ষণ চোষার পর মেঘ শান্তনাকে পাজকোলে নিয়ে খাটে বসিয়ে দেয়।তারপর ফ্রাসটেড বক্স এনে শান্তনার হাতে bandage করে দেয়।শান্তনা মুগ্ধ চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘের এতটা কেয়ার দেখে শান্তনার রাগ ছু মন্তর হয়ে গেছে।
।
এবার ব্যাথা করছে পিচ্চি?(শান্তনার হাত নিজের হাতের তালুতে রেখে বলল)
কি চান আপনি?
।
মানে?
।
আমাকে মেরে ফেলতে?
।
এটা কি বলছো তুমি?
।
তাহলে কি চান?
।
দেখো আমি যা করেছি ভুল করেছি।আসলে রেগে গেলে আমি আর আমার মধ্যে থাকিনা।আজ তুমি আমাকে না জানিয়ে একা চলে এসেছো।আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তুমি জানো না।সেই ভয়টা রাগে পরিনত হয়ে যায় আর তোমাকে হার্ট করে ফেলি।
আচ্ছা আজকের কথা নাহয় বাদ দিলাম।কাল কি দোষ ছিল আমার?আমি কি এমন করেছি যার জন্য আমাকে চড় মেরেছিলেন?
।
তুমি কেন বলেছিলে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?তুমি যদি না বলতে তাহলে আমি ওইভাবে রিয়েক্ট করতাম না।
।
আমি ভুল কি বলেছিলাম বলুনতো?আপনি ভেবে দেখুনতো আমি কি আপনার সাথে সারাজীবন থাকতে পারবো?আপনি কি সারাজীবন এভাবে থাকতে পারবেন?
।
সারাজীবনের কথা কেন আসছে এখানে?
।
আসবেই তো।আমি আর কদিন আপনার সাথে থাকবো?আপনি কেন বুঝতে পারছেন না।
কি বুঝবো আমি?আমার কিছু বুঝতে হবে না।তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না আমি এটাই জানি এটাই বুঝি।
।
উফফ,,,কিভাবে বুঝবেন আপনি?আরে আমি বলতে চাচ্ছি সংসার করবেন না?ছেলে মেয়ের মুখ দেখবেন না?নাকি এভাবেই থাকবেন?বয়স তো কম হয়নি।
।
আমি তো এগুলো ভেবে দেখিনি।
।
তো কবে ভাববেন?তবে আমার বয়স কিন্তু বেশি নয় মাত্র 26 বছর।
।
এটাকে মাত্র বলছেন!! আপনার এখন দুটো ছেলে মেয়ের বাবা হওয়ার কথা সেখানে আপনি মাত্র 26 বছর বলছেন।
।
জ্বি ম্যাম,,,আপনিই দেখুন।
কি দেখবো?
।
মানে শোনো আমার কথা।
।
ওকে বলুন,,,
।
জানোই তো বাংলাদেশের পড়াশোনা শেষ করতে করতেই 25 বছর বয়স হয়ে যায় একটা ছেলে মেয়ের।তারপর চাকরি পেয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠািত করতে ৫-৭ বছর লেগে যায়।কারো কারো আরও বেশি সময় লাগে।তাহলে এ থেকে বোঝা যায় একটা established ছেলে বিয়ে করতে করতে তার বয়স 30 up হয়ে যায়। most important matter,, অভিভাবকরা তার মেয়ের জন্য একজন established ছেলেকেই চুজ করবে।সেভাবে হিসেব করলে আমার এখনো বিয়ের বয়সই হয়নি।আর এখন মেয়ের বাবা মায়েরা সরকারি চাকুরীজীবি ছেলে খোঁজে নিজের মেয়ের জন্য।আর সরকারি চাকরি কি মুখের কথা হুম? বিসিএস পরীক্ষা এই ডিগ্রি সেই ডিগ্রি দিতে দিতেই তো মানুষের বয়স বেড়ে যাচ্ছে।তারপর তারা বিয়ে করে বাচ্চা গাচ্চার কথা ভাবে।তাই নয়কি?
শান্তনা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,,,
তাইতো।ঠিকই বলেছেন আপনি।
তাহলে আমি আরও 5-6 বছর পর চিন্তা করবো সংসার নিয়ে।
।
তো এখন কি করবেন?
।
যা করছি তাই করবো।
।
এখন কি করছেন?
।
কি করছি দেখতেই তো পারছো।
।
উফফ সিরিয়াস ভাবে কেন নিচ্ছেন না আমার কথা? আচ্ছা বাদ দিলাম।আমাকে কদিন রাখবেন এখানে?
মানে কি? তোমাকে এসব কথা বলতে মানা করেছি না।
।
আরে আমি বলতে চাই আমি তো পড়াশোনা করছি,,,আমাকে আর কতদিন পড়াবেন?
।
যতদিন তুমি চাইবে।
।
আমি যদি বলি আমি চাকরি করার আগ অব্দি পড়বো।
।
তাই হবে।আমি রাজি।
।
আর আমি চাকরি পাওয়ার পর কি করবেন?
।
তখনের কথা তখন ভাবা যাবে।এখন ভেবে লাভ নেই।
প্রেম নেশা পর্ব ১৯+২০+২১
তাও বলেন শুনি।
।
কি বলবো বলোতো? আমি তো জানি না।তবে যতদিন তোমার পড়াশোনা শেষ না হয় ততদিন পর্যন্ত তোমাকে আগলে রাখবো।তোমার ছায়া হয়ে থাকবো।ততদিন আমার পাশে থাকবে তো?তারপর তুমি যা করবে তাই মেনে নেব।
।
সেটা সময় জানে।দেখা যাবে কি আছে আমাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতে।তবে অতদিনে আমার হাড়গোড় ভেঙ্গে তক্তা হয়ে যাবে সেটা বেশ বুঝতে পারছি আমি।সবে তো হাত আর কপালে হামলা পড়েছে।আর কতো কি যে বাকি আল্লাহই ভালো জানেন।
।
মাফ করে দাওনা।আর হবে না পিচ্চি।জাস্ট একটা সুযোগ।
।
মাফ তো কবেই করে দিয়েছি।তবে নিজের রাগকে একটু কাবু করুন প্লিজ।
।
চেষ্টা করবো।কিন্তু তুমি আমাকে কষ্ট দিওনা প্লিজ।তুমি কষ্ট দিলে আমি সইতে পারিনা পিচ্চি।
আমিও চেষ্টা করবো।
।
Thanks a lot পিচ্চি।তাহলে এখন শুয়ে পড়ো।
।
হুম,,,তবে আজকে আপনি আমার মাথায় বিলি কাটবেন আমি ঘুমাবো।
আচ্ছা চলো।
মেঘ আস্তে আস্তে শান্তনার চুলে বিলি কেটে দেয়।শান্তনা পরম শান্তিরসহিত ঘুমিয়ে পড়ে।
তুমি কথা গুলো একদম ঠিক বলেছো পিচ্চি।তবে তুমি চাইলেও আমার বাঁধন থেকে হারাতে পারবে না।এক অদৃশ্য মায়ার বাঁধনে তুমি আমি আটকা পড়েছি।তোমাকে কিভাবে হারাই বলো? তুমি তো আমার শেষ কিনারা। খুব যত্নে আগলে রাখবো তোমায়।তুমি কি আমায় ঠিক সেভাইবেই আগলে রাখবে পিচ্চি?কথা গুলো বলে শান্তনার কপালে চুমু খায় মেঘ।তারপর দুজনের উপর একটা চাদর টেনে ঘুমিয়ে পড়ে।তবে ঘুমানোর আগে ওদের মাঝ থেকে পাশবালিশ টা সরিয়ে নেয় মেঘ।