প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ১৩+১৪

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ১৩+১৪
শান্তনা আক্তার

পরদিন সকালে মেঘ অফিসে চলে যায়।আজ শুক্রবার বলে শান্তনা বাসাতেই আছে।নিজের রুমে বসে টুকিটাকি কাজ করছে।কিন্তু বেশিক্ষণ আর রুমে বসে থাকতে পারলো না।বোর হয়ে নিচে যায়।
কিরে ফুলি তুই ঝাড়ু দিচ্ছিস নাকি মেঝেকে জামাই আদর করছিস?(মৌরি)

কি কন দাদি!আমার মাইয়া কই যে জামাই আদর করমু?আমার তো বিয়াই হয় নাই।এমনেতেও আমার কি কপালডা এতোই পুড়া যে দুনিয়ায় মানুষ থাকতে আমি মেঝের লগে আমার মাইয়ারে বিয়া দিমু!!

আরে বাবা কথার কথা বললাম।তুই যেভাবে ঝাড়ু দিচ্ছিস আমার মনে হয়না এক চুল পরিমাণ ও ময়লা সাফ হচ্ছে বলে।

ও বাবা গো এইডা আপনে কি কইতাছেন?আমি কি কষ্ট কইরা ঝাড়ু মারতাছি আর আপনে কন আমার ঝাড়ু দেওয়ায় ময়লা সাফ হয়না।

হচ্ছেই তো না।তোকে দিয়া কিছুই লাভ হচ্ছে না।
আরে আরে দাদি তুমি আর ফুলি কি নিয়ে ঝগড়া করছো?

নুতান ভাবি আপনেই কন আমার ঝাড়ু দেওয়ায় কি কোনো প্রকার ক্ষুদ আছে?

কেন কি হয়েছে?

দাদি কইতাছে আমি যেমনে ঝাড়ু দেই হেমনে নাকি একটা ময়লাও পরিষ্কার হয় না।

হয় নাতো।শান্তনা তুই ই বল ওর ঝাড়ু দেওয়া কি হয়েছে?

শান্তনা ভালভাবে দেখে বললো
মোটামোটি ভালোই ঝাড়ু দিয়েছে।কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় ময়লা রয়ে গেছে।

হুম,তাইতো ওকে বলছিলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ঠিক আছে আমি আপনাগো বাসায় আর কাম করতাম না। আমি এই বাসা ছাইড়া যামুগা।

কিহ!বাসা ছেড়ে চলে যাবি?আরে পাগলী আমি তো মজা করছিলাম।বুড়ি মানুষ একটু তো মজা করতেই পারি তাইনা?

না আমি আপনার বাসায় আর কাম করুম না মানে করুম না।আমি অন্য আরেকটা বাসা ঠিক করমু।আমি বাসা ছাইড়া যামুগা।

তুই আমাকে দাদি বলিস।এইভাবে দাদির সাথে রাগ করে বাসা ছেড়ে যাসনা বোন।
এভাবে কিছুক্ষণ মৌরি ফুলিকে মানানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ফুলি ওই এক কথাই ধরে বসে আছে।আর শান্তনা ওদের কথা শুনে গেল।মৌরি যখন ফুলিকে মানাতে ব্যর্থ হলো তখন শান্তনাই ফুলিকে রিকুয়েষ্ট করতে শুরু করে।শান্তনা বলে,,

প্লিজ ফুলি তুমি যেওনা। দাদির অনুরোধ টা রাখো প্লিজ।দাদি বয়স্ক মানুষ একটা কথা নাহয় বললোই তাতে বাসা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ঠিক না।শান্তনা কথাটা শেষ করা মাত্র ফুলি আর মৌরি হো হো করে এসে ওঠে।শান্তনার ওদের হাসি দেখে বেকুবের মতো মুখ করে ফেলে।শান্তনা বুঝতে পারছে না ওরা হাসছে তো কেন হাসছে।তাদের হাসার কারণ জানতে শান্তনা প্রশ্ন করে,
-তোমরা দুজন হঠাৎ হাসতে শুরু করেছো কেন?

আমার বোকা সতিনী বোঝে নি যে আমি আর ফুলি অভিনয় করছিলাম।

অভিনয় করছিলে!কিন্তু কেন?

ভাবি আমরা শামসের ঠোঁটের অভিনয় করতাছিলাম।

শামসের ঠোঁট?ওটা আবার কি?

তুই ও না ফুলি।তোকে কতো বার বলবো ওটা শামসের ঠোঁট নয়,ওটা হচ্ছে shams of thoughts..

ওই একই হইলো দাদি।

আরে তোমরা কি বলছো বলবে আমায়?এই shams of thoughts কি?

ভাবি এইডা হইতাছে একটা পাজির নাম।

পাজি মানে?কে পাজি।

আরে তুই ওর কথা শুনিস না।ও উল্টো পাল্টা কি বলে না বলে।ওটা পাজি নয় পেজ হবে।

ওহ আচ্ছা।তো ওই পেজের নাম shams of thoughts…তো কি হয় ওই পেজ টাতে?

ভাবি ওইহানে শামস আফায় তার ভিডু পুস্ট করে।

তুমি কি বলছো এসব ফুলি?

এই মেয়েটা কখনো শুধরাবে না।আরে ফুলি বলতে চায় ওই পেজে শামস ভিডিও পোস্ট করে।ফানি ভিডিও।নিজেই মা,নিজেই ভাই,বাবা,নানি,পাশের বাড়ির আন্টি,কাজের মেয়ে,পাশের বাড়ির আন্টির মেয়ে টুনি,তারপর শামসের ভাইয়ের গিএফ কি যেন নাম,,

দাদি কুলসুম।লা লা লা লা এইরহম কইরা গান গায় মাইয়াডা।

হুম ঠিক বলেছিস।তো এইসকল চরিত্রে অভিনয় করে এডিট করে।

ওমা তাই?আমিও দেখবো তাহলে শামস অফ থটস।

ভাবি পরে হাসতে হাসতে পেট বেতা করলে আমারে আর দাদিরে যেন দোষ দিয়েন না।

এইযে আমি শামসের পেজে ডুকেছি।ফুলি আর শান্তনা এদিকে আয় দেখতে চাইলে।

অহহো দাদি আমি আইতাছি বলে ফুলি ফুরুত করে মৌরির কাছে চলে যায়।
রাতে মেঘ বাসায় ফিরে দেখে শান্তনা খাটের কোণে বই খুলে বসে কিছুক্ষণ পর পর হাসছে।এদিকে মেঘ যে ওকে দেখছে সেদিকে ওর বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই।মেঘ কিছু বুঝতে না পেরে শান্তনাকে প্রশ্ন করে,,

কি ব্যাপার!তুমি এভাবে হাসছো কেন?

মেঘের ডাকে শান্তনা মাথা উচু করে তাকায়।মেঘকে দেখে বলে ওঠে,
আপনি কখন এলেন?

বেশ কিছুক্ষণ আগে।কিন্তু তুমি হাসছিলে কেন?

আর বলবেন না আজ দাদি আর ফুলি,,,শান্তনা আজকের ঘটে যাওয়া সব কথা মেঘকে বলে।মেঘ সব শুনে বলে ওঠে,,

তুমিও তাহলে দাদিয়া আর ফুলির সাথে যোগ হলে।যাক ভালোই হলো এখন দিনরাত সব কিছু ফেলে দেখো শামস অফ থটস।আচ্ছা আমি শাওয়ার নিতে গেলাম বলে মেঘ চলে যায়।
রাতে ঘুমানোর সময় জিল্লুর রহমান মিলি বেগমকে অফিসে ঘটে যাওয়া সব কিছু কথা শেয়ার করছিলো।হঠাৎ করে তাদের মাঝখান থেকে সাফিন বলে ওঠে,,

আব্বু আপু এখনো কেন আসছে না বাসায়?
ছেলের কথা শুনে জিল্লুর রহমান রাগমিশ্রিত গলায় বলে ওঠে,,

সে আর কোনোদিন ও আসবে না এখানে।

কিন্তু কেন আব্বু?আপু কোথায় গিয়েছে?আসবে না কেন আমাদের বাসায়?
জিল্লুর রহমান ছেলের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে চলে যান বাহিরে।তাই দেখে সাফিন মিলি বেগমকে প্রশ্ন করে,আম্মু আব্বু চলে গেল কেন?

আব্বুর গরম লাগছিলো তাই বাহিরে বাতাস খেতে গেছে বাবা।

কিন্তু এখন তো শীতের সময় তাহলে আব্বুর গরম কেন করছে?

জানি না কেন করছে বাবা।

ও,আচ্ছা আম্মু আপুকে কি আর কখনো দেখতে পারবো না আমরা?ওইযে পাশের বাড়ির দাদুর মতো আপু ওকি তারা হয়ে গেছে?সাফিন কথাটা বলা মাত্র মিলি সাফিনের মুখে হাত নিয়ে গিয়ে বলে,

না বাবা তোমার আপু তারা হয়ে যায়নি।তোমার আপু আছে।দেখবে একদিন ঠিক আসবে আমাদের এখানে।

কিন্তু কবে আম্মু?

পরীক্ষা শেষ হলে আসবে।তোমার আপু অনেক কঠিন পরীক্ষা দিচ্ছে তাইতো এখানে আসতে পারছে না।

ওওও।

হুম,এখন ঘুমাও বাবা।মিলি বেগম ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে জিল্লুর রহমানের কাছে গেলেন।মিলি বেগমকে দেখে জিল্লুর রহমান তার চোখের পানি মুছে নিলেন।আর বললেন,

সাফিন ঘুমিয়েছে?

হ্যাঁ,কিন্তু ওকে আর কতো দিন মিথ্যে বলবে?

যত দিন বেঁচে থাকবো আমরা।

আর এভাবে কতদিন লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদবে তুমি?

আমি কেন কাঁদবো?কার জন্যই বা কাঁদবো?

থাক আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না।আমি সবই বুঝি।আমিও দেখবো তোমার মনে জমা পাথারটার কবে অবসান ঘটে।

এই পাথর যেসে পাথর নয় মিলি।এই পাথর ভাঙার সাদ্ধি আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই।এমনকি আমার নিজেরও নেই।এ নিয়ে কথা বাড়াতে চাইনা চলো গিয়ে শুয়ে পড়ি।
গভীর রাতে নাক টেনে কাঁদছে শান্তনা।রোজ রাতে কান্না করাটা যেন ওর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।মাঝরাতের নিরবতা যেন একঝাঁক বেদনা হয়ে নেমে আসে শান্তনার মনে।যা কান্না রুপে প্রকাশ করতে শান্তনার বেশ ভালো লাগে।এভাবে কান্না করতে করতে কিছুটা শান্তি পায় ও আর এভাবেই ঘুমের দেশে হারিয়ে যায় ও।যেখানে কোনো প্রিয় মানুষ হারাবার হাহাকার থাকে না।

গতবারের মতো আজও শান্তনার কলেজ তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যায়।মেঘ শান্তনাকে যে ফোনটা দিয়েছে ওটা দিয়ে মেঘকে কল করে বলে ওকে নিয়ে যেতে।কিছু সময় পর মেঘ চলে আসে।তারপর গাড়ির গ্লাস নামিয়ে বলে,,
গাড়িতে উঠে পড়ো।
শান্তনা গিয়ে গাড়িতে চড়া মাত্র বলে ওঠে,

আপনাকে একটা রিকুয়েষ্ট করলে রাখবেন?
মেঘ কপাল ঘুচিয়ে জিজ্ঞেস করে,,

কি?

আপনার কাজ থাকলে থাক।

আরে আগে বলবে তো কি রিকুয়েষ্ট।

আপনি যদি বিজি থাকেন তাই থাক।

আমি বিজি নেই বলতে পারো।

ও,,আসলে আমি একটু সাফিনের সাথে দেখা করতাম।কিছুক্ষণ পর ওর স্কুল ছুটি হবে।

সাফিন মানে আমার শালাবাবুর সাথে?

তো সাফিন নামে কে আছে আপনার শালাবাবু ছাড়া?কথাটা বলা মাত্র শান্তনা ওর জিভে কামড় লাগায়।

তার মানে তুমি মানছো সাফিন আমার শালা হয়।

আমি কথার কথা বলেছি জাস্ট।এখানে মানা না মানার কথা কি আছে?

থাক আর কথা ঘোরাতে হবে না বলে মেঘ মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।সাফিনের স্কুলের বাহিরে গাড়ি পার্ক করে মেঘ শান্তনাকে গাড়ি থেকে নামতে বলে।শান্তনা গাড়ি থেকে নেমে দু কদম হাঁটতেই সাফিনদের স্কুল ছুটির ঘন্টা বেজে ওঠে।বাচ্চারা এক এক করে বের হচ্ছে স্কুল গেট থেকে।তাদের মধ্যে সাফিন ও ছিল।সাফিনকে দেখে শান্তনা দৌঁড়ে গিয়ে ওকে বুকের সাথে চেপে ধরে।সাফিন মাথা উঁচিয়ে শান্তনার মুখ দেখা মাত্র বলে ওঠে,,

আপু তুই!

হুম আমি বলে হাজারো চুমুতে ভরিয়ে দেয় ভাইকে।

আপু তুই বাসায় কবে আসবি?তোকে ছাড়া ভালো লাগে না।

আমি যাব তো ভাই কিন্তু,,

কিন্তু তোর কঠিন পরীক্ষা আছে তাই আসতে পারছিস না আম্মু বলেছে আমাকে।

হুম ঠিক বলেছে আম্মু।আমি এখন বাড়ি যেতে পারবো না।পরীক্ষা শেষ হোক তারপর যাবো।

আচ্ছা।কিন্তু এখন এখানে কিভাবে আসলি?

আমি এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম তোকে দেখতে পেয়ে তোর সাথে কথা বলতে আসি।

তো আমার ছোট গোলু মোলু শালাবাবু কেমন আছে?
শান্তনার কথা বলার পর পরই মেঘ পেছন থেকে বলে ওঠে।মেঘকে দেখে সাফিন ভয়ে শান্তনার পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে।

আপু ওই বাজে লোকটা আবার এসেছে(মুখে ভয়ের ছাপ এনে বললো)

এটা কেমন কথা শালাবাবু!আমি বাজে লোক কেন হতে যাবো?আমি তো ভালো মানুষ তোমার একমাত্র জামাইবাবু।এসো আমার কাছে তোমাকে চকলেট কিনে দেব। তারপর হাত বাড়িয়ে সাফিনকে কাছে যেতে বলে।

না আমি যাবো না বলে সাফিন শান্তনাকে জড়িয়ে ধরে।

তোমাকে আমি অনেক টয়েস কিনে দেব।

তাও যাবনা।আপনি দুষ্টু আমি যাবনা আপনার কাছে।

সাফিনকে মানাতে শান্তনা বলে ওঠে,,
কিছু করবে না উনি।আমি তো আছি চল।

না আপু তুই যাসনা দেখবি এভাবে বলে আমাদের ধরে নিয়ে যাবে তারপর আটকে রাখবে।আব্বু আম্মুর কাছেও যেতে দেবে না।

কিছু হবে না আমি তো আছি।আমি ও দেখবো আমি থাকতে আমার ভাইকে কে আটকে রাখে।

তিন সত্যি করে বল?

আচ্ছা তিন সত্যি।

তাহলে চল।
তারপর মেঘ শান্তনা আর সাফিনকে নিয়ে একটা শিশু পার্কে গেল।সেখানে সব রকম রাইডে সাফিনকে চড়ালো।অনেক চকলেট আর খেলনা কিনে দিল সব সাফিনের পছন্দের।সাফিন এতোকিছু পেয়ে খুব খুশি হলো।মেঘের প্রতি ভয়টাও ওর মন থেকে কেটে গেল।কিন্তু ওদিকে মিলি বেগম ছেলের জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে।কেঁদে কেটে এলাকার মানুষ জড়ো করে ফেলেছে।জিল্লুর রহমানকে ফোন করে ডেকে এনেছে।জিল্লুর রহমান এসে কিছু লোকদের নিয়ে সাফিনকে খুজতে বের হয়েছেন।
শান্তনা অনেক হয়েছে এবার আমার শালাবাবুকে টাকে ছাড়ো।ও বাড়ি যাবে তো।

আরেকটু থাকুক না আমার কাছে।

কি বলছো তুমি!তোমার বাবা মা ওদিকে সাফিনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে দেখো গিয়ে।সাফিনের স্কুল ছুটি হয়েছে প্রায় ৩ ঘন্টা হয়ে গেছে।

কি! তিন ঘন্টা?কিভাবে অতিবাহিত হয়ে গেল এতো সময়?আম্মু তো তাহলে কান্না করছে খুব।

হুম তাইতো বলছি ওকে দিয়ে আসি।

না আমি এখন যাবো না আরেকটু থাকি আপু।
শান্তনা সাফিনের গালে হাত রেখে বলে,,

না সাফিন।এখন তোকে যেতে হবে।আম্মু খুব চিন্তা করছে তোর জন্য।কান্নাও করছে।তোর কি ভালো লাগবে আম্মু কাঁদলে?
সাফিন দু দিকে মাথা নাড়ালো অর্থাৎ না।তারপর বললো,কিন্তু আবার আসবি কিন্তু তুই।আর জামাইবাবু আপনি ও আসবেন তারপর আমাকে অনেক চকলেট আর খেলনা কিনে দেবেন।তারপর পার্কেও নিয়ে যাবেন।

যথা আজ্ঞা শালাবাবু।
তারপর মেঘ সাফিনকে ওদের বাড়ির গলিতে ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দেবে তখন শান্তনা বলে ওঠে,,
আমি একটু আম্মু আব্বুকে দেখে আসি?

ওকে যাও।

না থাক।

কেন?

আব্বু রাগ করবেন।আর আমি চাইনা আমার জন্য আব্বু…কথাটা শেষ করার আগেই ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে শান্তনা।
মেঘ বিষয়টা বুঝতে পেরে গাড়ি চালানো শুরু করে।
মিলি বেগম সাফিনকে দেখে এক ছুটে সাফিনের কাছে চলে যায়।তারপর সাফিনকে জড়িয়ে কেঁদে দেন,
কোথায় গিয়েছিলি বাবা?আম্মু কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল তোমাকে স্কুলে না পেয়ে।

আমি আপুর সাথে ছিলাম আম্মু।

পিছ থেকে জিল্লুর রহমান হুংকার দিয়ে ওঠে,,
কিহ!তুমি কার সাথে ছিলে?

আপুর সাথে ছিলাম।জানো বাবা আপুর সাথে আমার দেখা হয়েছিল স্কুল ছুটির পরে।তারপর জামাইবাবু আমাকে পার্কে নিয়ে গিয়েছিল।আমি ঘোড়ায় চড়েছি,হাঁসের উপর চড়েছি তারপর হাতির উপর চড়েছি।আমাকে অনেক গুলো চকলেট কিনে দিয়েছে দেখো আমাকে খেলনাও কিনে দিয়েছে।খেলনা গুলো জিল্লুর রহমানের সামনে নিয়ে দেখালো।জিল্লুর রহমান সাফিনের গালে সজোড়ে একটা চড় মারে।আরেকটা মারতে যাবে কি মিলি গিয়ে সাফিনকে সরিয়ে আনে।জিল্লুর রহমান সাফিনের কাছ থেকে সব চকলেট খেলনা নিয়ে বাহিরে ফেলে দিয়ে এসে বলে,,

মিলি তোমার ছেলে যদি আর কখনো ওই মেয়ের সাথে কোথাও যায় তো আমি তোমার ছেলেকে এতিম খানায় দিয়ে আসবো।

কি বলছো তুমি এসব?সাফিন ছোট মানুষ।তোমার রাগের দায়ভার ও কেন নেবে।

আমি আর কিছু শুনতে চাইনা যা বলেছি তাই হবে।বলে রুমের ভেতর ঢুকে যায় জিল্লুর রহমান।
আচ্ছা সাফিন কি বলে দিয়েছে আব্বুকে যে আমি ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম?
মেঘ ফোনের থেকে চোখ সরিয়ে শান্তনার দিকে চেয়ে বললো,

এটা কোনো প্রশ্ন হলো?অবশ্যই বলে দিয়েছে।

আব্বু তো রেগে গেছে তাহলে তাইনা?

হয়তো,আমি এখন কি বলবো।তুমি যেখানে আমি ওতো সেখানেই।

আমার খুব টেনশন হচ্ছে আব্বু যদি সাফিনকে বোকা দিয়ে থাকে?

আরে না পাগলী সেরকম কিছুই হবে না।সাফিন ছোট মানুষ ওর উপর রাগ তুলবে এরকম বোকা তোমার বাবা নন।

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ১১+১২

তারপর ও আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে ওখানে।

কিছুই হয়নি তুমি ঘুমাও তো চিন্তা করা বাদ দিয়ে।

হুম,দাঁড়ান বলে বেশ জোড়েই মেঘের গালে চাটা মারে।

হি হলো এটা?(গালে হাত দিয়ে)

মশা ছিল,উড়ে গেল মারতে পারলাম না।

ওহ,,আমার গালে ওই এক মশা ছাড়া কেউ চুমু খায়না।

মানে?

মানে সেই কপাল কোথায় আমার যে কোনো রমণী আমার গালে চুমু খাবে?তবে আমার শালাবাবুর ভাগ্যটাই ভালো কি সুন্দর চুমু খেল আজ ওর বোনের থেকে।

কি বলতে চান আপনি (বেশ রাগ নিয়ে বললো শান্তনা)

কিছু না বলে কম্বলের নিচে চলে যায় মেঘ।
শান্তনা তাই দেখে কি যেন ভেবে হালকা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ১৫+১৬