প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ১৫+১৬

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ১৫+১৬
শান্তনা আক্তার

ফজরের আযানের প্রতিধ্বনি ভেসে আসার সাথে সাথেই চোখ জোড়া খুলে নেয় শান্তনা।তারপর চোখ দুটো কচলে যেই উঠে যেতে নেবে তখনই বাধাপ্রাপ্ত হয়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে ডিরেক্ট গিয়ে মেঘের উপর পড়ে।আচমকা এমনটা হওয়ায় মেঘ খানিকটা নড়ে ওঠে।কিন্তু মেঘ কিছু বুঝতে পারছে না কি হয়েছে।।ওর চোখ এমনিতে ঘোলাটে হয়ে আছে হটাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠলে যেমনটা হয় আরকি,তার উপর মেঘের মুখের উপর শান্তনার এক গাদা চুল পড়ে আছে।মেঘের বেশ অস্বস্তি হচ্ছে শান্তনার চুল ওর মুখে পড়ে থাকায়।তাই মেঘ ওর ডান হাত দিয়ে শান্তনার সামনের চুল গুলো টেনে পিছনের দিকে নিয়ে গিয়ে বলে,,
এতো জায়গা থাকতে আমার উপর চড়ে বসলে যে?
শান্তনা এতোক্ষণ ব্যাপারটা বুঝে উঠেতে পারেনি কিন্তু মেঘের অদ্ভুত কথা শুনে চোখ দুটি আস্তে আস্তে খুলে গম্ভীর গলায় বলে ওঠে,,

আমি আপনার সাথে ফান করার মুডে নেই।এটা কোন ধরনের অসভ্যতা!

strange!আমি অসভ্যতার কি করেছি?

কি করেছেন মানে!আমার ওড়না ধরে টান দিয়েছেন কেন?

আমি কখন তোমার ওড়না ধরে টানলাম?
কপাল ঘুচিয়ে জিজ্ঞেস করল মেঘ।

তাহলে আমি আপনার উপরে এসে কিভাবে পড়লাম?

সেই প্রশ্নটা আমি তোমাকে আস্ক করলে মানাতো,তুমি না।কারণ তুমি এসে পড়েছো আমার উপর।আমি আনিনি।

বললেই হলো!আপনিই আমার ওড়না ধরে টান দিয়েছেন তাইতো আমি আপনার উপর এসে পড়লাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আজব তো!এই তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে যে আমি তোমাকে আমার উপর ফেলেছি?

প্রমাণ!ওকে দিচ্ছি প্রমাণ বলে শান্তনা ওর ওড়নার আঁচল তুলতে যাবে তখন দেখতে পেল ওর ওড়নার এক পাশ বালিশের ভেতর ঢুকে আছে আরেক পাশ ওর গলাতেই আছে।শান্তনা বিষয়টা বুঝতে পেরে চোখ বড় বড় করে ওড়নার দিকেই তাকিয়ে আছে।মেঘ শান্তনার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে দুষ্টু একটা স্মাইল দিয়ে বলে ওঠে,

এতো হেজিটেড না করে বললেই পারতে আদর খাবে,আমি কাছে টেনে নিতাম কথাটা বলতেই মেঘ ওর বা হাত দিয়ে শান্তনার কোমড় জড়িয়ে ধরে।

কি করছেন আপনি!আমি কখন বললাম আদর খাবো?

মাত্রই তো বললে।

শান্তনা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,কখন বললাম?

এইতো মাত্র বললে,আমি কখন বললাম আদর খাবো?

আরে ওটা তো জিজ্ঞেস করেছি, বলিনি।এখন আমাকে ছাড়ুন।

কেন ছাড়বো?তুমি নিজ থেকে এসেছো আমি তো আর আনিনি।তাই আমার অর্ডার ছাড়া আমার উপর ঝাপিয়ে পড়া ও আমাকে বিনা দোষে ব্লেম দেওয়ার শাস্তিস্বরূপ আমি তোমাকে ছাড়ছি না।এভাবেই থাকবে আমার উপর।

এমন করছেন কেন?আমি তো ইচ্ছে করে আপনার উপর গিয়ে পড়িনি।আর ভুল করে আমি আপনাকে দোষ দিয়ে ফেলেছি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।

না গো ছাড়ছি না আমি তোমায়।

প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন,দেখুন নামাজের সময় চলে যাচ্ছে।

ওহহ,,,তাইতো বলে মেঘ ওর দুহাত শান্তনার চুলের ভাজ ও কোমড় থেকে সরিয়ে আনে।ছাড়া পেয়ে ঝটপট করে শান্তনা মেঘের উপর থেকে উঠে ওয়াশরুমে ছুট লাগায়।

নামাজের সময়টা চলে যাচ্ছিলো বলে তোমায় ছেড়ে দিলাম নইলে আজ তোমার ওই মিষ্টি ঠোঁটের মিষ্টি স্বাদ নিয়ে ছাড়তাম পিচ্চি।কথা বলে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় মেঘ।
গতদিনের মতো আজকেও খুব দ্রুত ছুটি হয়ে যায় শান্তনার।পরাপর এমনটা হওয়ায় শান্তনার মেজাজ বেশ বিগড়ে যায়।বাইরে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে যা ইচ্ছা বলে যাচ্ছে শান্তনা।কিছুক্ষণ একা একা বকবক করার পর মেঘকে টেক্সট করে জানিয়ে দেয় ওর কলেজ আজও ছুটি হয়ে গিয়েছে।মেঘ শান্তনার বার্তাটি দেখা মাত্র অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে।কলেজের গেটের কাছে শান্তনা দাঁড়িয়ে ছিল। মেঘ শান্তনার পাশ দিয়েই ওর গাড়ির ব্রেক কষে।তারপর গাড়ির গ্লাস নামিয়ে মেঘ ওর কালো চশমা টা চোখ থেকে খুলে বলে ওঠে,,

কি ভাবছো এভাবে মুখ বাকিয়ে?
মেঘের গলা পেয়ে শান্তনা মাথা তুলে থাকায়।তারপর বলে ওঠে,

তাতে আপনার কি হুম?আমি কিছু ভাবলেও আপনার সমস্যা হয় নাকি?(রাগি গলায় বলে দিল)

না আমার ঘাড়ে তো একটাই মাথা তাইনা!

এখানে ঘাড় মাথা কোথ থেকে এলো?

না কিছু না।তুমি গাড়ি তে বসো।

আগে বলুন তারপর উঠছি।

ওহ গড!কি মুশকিলেই না পড়লাম।(বিরবির করে বললো মেঘ)

কি বললেন?

কিছুই না। ইম,শান্তনা তুমি কি আজও যাবে সাফিনের স্কুলে!
সাফিনের স্কুলে যাওয়ার কথা শুনে শান্তনার রাগি ফেস খুশি ফেসে পরিবর্তিত হয়ে গেল। শান্তনা আনন্দিত হয়ে বলে,

হুম যাব বলে গাড়ি তে চড়ে বসে।
মেঘ সাফিনদের স্কুলের থেকে কিছুটা দূরে গাড়ি পার্ক করতেই শান্তনা গাড়ির গেট খুলে বাইরে বের হয়ে যায়।কিন্তু দু কদম যেতেই আবার তরিঘরি করে গাড়ির ভেতর ঢুকে যায়।মেঘ শান্তনার এরুপ কাজ দেখে অবাক দৃষ্টিতে শান্তনার দিকে চেয়ে বলে ওঠে,

গাড়ি থেকে নামতেও দেড়ি নেই,আবার পুনরায় চড়তেও দেড়ি নেই।নেমেছো যখন আবার কেন বসলে গাড়ি তে?

গাড়ি ইউ টার্ন নেন।

কেন?

বাড়ি যাব তাই।

কিন্তু আমরা তো সাফিনের সাথে দেখা করতে এসেছি।

হুম,কিন্তু দেখা করলে বিপদ আছে।(ভয়ার্ত স্বরে বললো)

কিসের বিপদ!

ওই দেখুন আব্বু স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
শান্তনার কথা শুনে মেঘ সামনের দিকে তাকালো।ভালো করে খেয়াল করে দেখলো সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত মধ্য বয়স্ক একটা লোক সাফিনদের স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে দারোয়ানের সাথে কথা বলাবলি করছে।লোকটি মুখ ঘোরাতেই মেঘ লোকটিকে চিনতে পারলো।তারপর বললো,
আমার শ্বশুর আব্বু এখানে কি করছেন?

তা আমি কি করে বলবো?হয়তো আমাকে হাতে নাতে ধরতে এসেছে।গতকাল সাফিন মেবি আমার আর আপনার কথা বলে দিয়েছিল।

হুম,ঠিক বলেছো।তো এখন কি বাড়িতে দিয়ে আসবো তোমায়?

তো আর কি করবেন এটা ছাড়া।

হুম,তবে একবার শ্বশুর আব্বুর সাথে দেখা করলে ভালো হতো না বলো?

মাথা ঠিক আছে আপনার?

হুম, কেন?

আব্বু আমাকে কি বলেছিল মনে নেই?আব্বু বলেছিল আমি ওনার সামনে গেলে সুই,,,,কথাটা শেষ না করেই শান্তনা চুপ হয়ে যায়।মেঘ শান্তনার ছলছল চোখ দুটো দেখে আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলে।

বিকেলে বারান্দায় বসে রঙ তুলির সাহায্যে কি যেন আঁকাআঁকি করছিলো শান্তনা।মাঝে মাঝে আকাশের পানে চাচ্ছে আবার আশে পাশেও চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে।এমন সময় মৌরি বেগম বারান্দার দরজার কড়া নাড়লেন।দরজাটা খোলাই ছিল তবে শান্তনাকে ডাকার সুবিধার্থে তিনি দরজায় নক দিলেন।আওয়াজ পেয়ে শান্তনা পাশে তাকিয়ে বলে ওঠে,
দাদি তুমি!
মৌরি পান চিবুতে চিবুতে বললেন,

হ্যাঁ, আমি রে।তা একা একা কি করছিস বেলকনিতে?

ওই একটু আঁকছিলাম দাদি।

কই দেখি কি আঁকছিস বলে শান্তনার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।শান্তনা একটু সরে বসে মৌরিকে ওর পাশে বসার জন্য ইশারা করে।মৌরি বসতে বসতে বলে,
-বাহ!!খুব দারুন আঁকতে পারিস তো তুই!

তোমার ভালো লেগেছে দাদি?

হুম খুব ভ,,,কথাটা সম্পুর্ন না করে মৌরি শান্তনার মুখে হাত দিয়ে তার দিকে ফিরিয়ে বলে,
-কিরে তোর নাক মুখ ফোলা কেন?

ঘুম থেকে কিছুক্ষণ আগে উঠেছিলাম তো তাই হয়তো।
অপ্রস্তুত ভঙিতে বলে ওঠে শান্তনা।

নাহ,,দেখে তো তাই মনে হচ্ছে না।ওরে আমি যে তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছি রে।আমার থেকে লুকিয়ে পার পাওয়া কি এতোই সোজা!

কি যে বলনা দাদি!আমি তোমার থেকে কিছু কেন লুকাতে যাব বলো?লুকিয়ে আমার কি লাভ?আমি সত্যি বলছি।

থাক বলতে না চাইলে আর কি করার?আমি খুব বুঝতে পেরেছি,তুই এখনো পর্যন্ত আমাকে বন্ধু ভাবতে পারিস নি।তাই নিজের মনের কথা গুলো শেয়ার করতে পারছিস না।

এভাবে কেন বলছো গো?তুমি তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড,সোনা দাদি বলেই মৌরিকে জাপ্টে ধরে শান্তনা।

হয়েছে থাক আর আলগা পিরিত দেখাতে হবে না।আমি যাচ্ছি এখান থেকে।বলে যেই উঠে যেতে নেবে ওমনি শান্তনা মৌরির হাত টান দিয়ে আগের জায়গায় বসিয়ে দেয়।

বলছি বাবা বলছি।এতো অভিমান কর না তুমি।তোমাকে নিয়ে পারা যায় না।একদম ছোট বাচ্চাদের মতো করো তুমি।

মৌরি পান খেয়ে লাল হয়ে যাওয়া ঠোঁট জোড়া বাকিয়ে বলে ওঠে,
-তা আমি কি বুড়ি নাকি হুম!

তুমি বুড়ি কেন হতে যাবে?তুমি তো ছড়ি।

বেশ বলেছিস।এবার বল তাহলে তোর মন খারাপের কারণ কি?

আসলে দাদি আজ আব্বুকে দেখতে পেয়েছিলাম কিন্তু আব্বুর দেওয়া কছমের জন্য আর সামনে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।তাই মনটা কেমন জানি খারাপ হয়ে গেছে।খুব মনে পড়ছে বাড়ির সবার কথা।আর আমার মন খারাপ হলে এভাবেই ছবি আঁকি আর নাহয় চান্দামামার সাথে কথা বলি।এখন তো চান্দামামাকে পাবোনা তাই বসে বসে ড্রইং করছিলাম।

ওও,,,মন তো খারাপ হওয়ার ই কথা।যাই হোক,আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।ভরসা রাখ আল্লাহর প্রতি।

হুম,তাই যেন হয় আর খুব শীঘ্রই যেন হয়।

আচ্ছা দুঃখের কথা ছাড় আর আসল কথায় ফের।

কিসের আসল কথা?

ছোট মেহমান কবে আসবে?আমার কিন্তু আর ওয়েট করতে ভালো লাগছে না।

দাদি তুমি সব সময় এই প্রসঙ্গেই কেন পড়ে থাকো বলোতো?

এটা ছাড়া আর কি বলবো বল?আর আমি না বললে কে বলবে শুনি?

তুমি তো ওনার প্রথম বউ তাইনা?

হুম,তো?

তাহলে তুমিই আগে সুখবর টা দাও তারপর নাহয় আমার পালা আসবে।

ওরে পাজি মেয়েরে বলেই শান্তনার কান মলে দিল।

দাদি লাগছে তো!

লাগার জন্যই ধরেছি।

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ১৩+১৪

-মেয়েটা আজ আসলে ভালোই হতো।কতদিন দেখিনি ওকে।ভেবেছিলাম গত দিনের মতো আজও হয়তো আসবে সাফিনের স্কুলে।এই সুযোগে এক নজর দেখতে পারতাম।ওকে দেখার জন্য স্কুল ছুটি হওয়ার পরে আরও এক ঘন্টা দাঁড়িয়েছলাম।শুধুমাত্র মেয়েটাকে এক নজর দেখার জন্য।কিন্তু তা আর হলো না।কথা গুলো শেষ করার পর বিশাল এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন জিল্লুর রহমান।আচমকাই পিছ থেকে মিলি বেগম বলে ওঠেন,

মেয়ের জন্য মন যখন এতো টাই খা খা করছে তাহলে সব রাগ অভিমান ভুলে আপন করে নিলেই পারো মেয়ে জামাই কে।
জিল্লুর রহমান পিছনে তাকিয়ে দেখলেন চায়ের কাপ হাতে মিলি বেগম দাঁড়িয়ে আছেন।মিলি বেগমের দিকে এক ঝলক চেয়ে আবারও সামনের দিকে মুখ নিয়ে যান।তারপর বলেন,

সেটা তো পারছি না মিলি।যখনই মনটা গলে মম হতে নেয় তখনই এক অদৃশ্য দেয়াল সামনে চলে আসে।

কিসের দেয়াল?

বিশ্বাস ভাঙনের দেয়াল,আদর্শের অবমাননা করার দেয়াল।

তাই বলে,,,মিলি বেগমকে থামাতে জিল্লুর রহমান এক হাত উঁচু করে বলেন,

বিরাম!আর একটা কথাও যেন না ওঠে এই প্রসঙ্গে।

মিলি বেগম মাথা নিচু করে বলেন,
-চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

এখন মন চাচ্ছে না।নিয়ে যাও।
মিলি বেগম কিছু না বলে চলে আসলেন রুম থেকে।

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ১৭+১৮