প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ১৭+১৮
শান্তনা আক্তার
সন্ধ্যার দিকে মেঘ বাসায় ফিরে শান্তনাকে খুঁজতে থাকে।মেঘ ওর রুমের আনাচে কানাচে খুঁজেও যখন শান্তনাকে পেল না তখন মৌরির রুমের দিকে হাঁটা দেয়।সেখানে গিয়ে দেখতে পেল মৌরি আর শান্তনা বসে ফোনে কি দেখছে আর হাসছে তাই দেখে মেঘ বেশ রেগে মেগে মৌরির রুমে প্রবেশ করে।আর হুংকার দিয়ে বলে ওঠে,
কি হচ্ছে এখানে!
মেঘের হুংকার শুনে শান্তনার হাত থেকে ফোনটা বিছানার উপর গিয়ে পড়ে।মেঘ রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে শান্তনার দিকে চেয়ে আছে।আর শান্তনা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে মৌরির কোলের ভেতর ঢুকে যায়।মৌরি মেঘের রাগের কারণ জানতে প্রশ্ন করে,
তুই এতো রেগে আছিস কেন!কি হয়েছে?
।
কি হয়নি তাই বল?আমি শান্তনাকে কতগুলো কল মেসেজ করলাম কিন্তু একটার ও কোনো রেসপন্স পাইনি কেন?
।
কিরে শান্তনা!তুই এমন করেছিস কেন?
।
আসলে দাদি আমি তো তোমার সাথেই তোমার রুমে আছি সেই বিকেল থেকে।আর আমার ফোন তো আমাদের রুমেই রেখে এসেছি।
।
এটা কোনো কথা বল!আচ্ছা যাই হোক ভুল হয়ে গেছে মেয়েটার।কিন্তু তুই আজ এতোটা রেগে কেন আছিস সেটা তো বুঝলাম না।
।
কেন আবার!আমার একটা ফ্রেন্ডের ছেলের ফার্স্ট বার্থডে আজ।আমাকে যেতে বলেছে স্ব পরিবারে।তাই ওকে ফোন দিয়ে বলতে চেয়েছিলাম তোমরা যেন রেডি হয়ে থাকো কিন্তু ওতো,,,,
।
আচ্ছা হয়েছে এতোটা রাগ করার কিছুই হয়নি।তুই আমার ফোনে কল করতিস ওর ফোনে যখন পাসনি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম দাদিয়া।আর আমার মাথায় ওই সময় এই ব্যাপারটা মাথায় আসেনি তোমাকে কল করার।
।
ওমা,,তাই নাকি!বউকে এতটাই ভালবাসিস যে একটু ফোন ধরেনি বলে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিস।আচ্ছা তোর কেমন ফ্রেন্ড রে?
।
কেমন ফ্রেন্ড বলতে?
।
মানে কিছুক্ষণ পর বার্থডে তার ছেলের আর সে আগে থেকে না জানিয়ে আজ কেন জানালো?নাম কি সেই হতচ্ছাড়ার?
।
দাদিয়া নীরবের ছেলের বার্থডে আজ।
।
ওহ তাহলে ওই কাল্লুটার ছেলের বার্থডে আজ।তো আগে থেকে কেন জানালো না আমাদের?
।
আমাকে দুদিন আগেই ইনভিটেশন কার্ড পাঠিয়েছিল অফিসে কিন্তু আমি তোমাদের বলতে ভুলে যাই।
।
তাহলে দোষটা কার?
কার?
।
তোর।তুই ভুল করেছিস এখন এসে শুধু শুধু মেয়েটার উপর রাগ দেখাচ্ছিস।
।
এখন বেশি সময় নেই তোমরা কুইকলি রেডি হও আমিও গেলাম আমার রুমে।
।
আচ্ছা শোন তোরা যা পার্টিতে, আমি যাব না।
।
কেন যাবেনা?
।
আমার পায়ের ব্যাথাটা হটাৎ বেড়েছে তাই আমি যাব না।তুই আর শান্তনাই বরং যা।
।
ড্যাড ও যাবে না বলে দিয়েছে।তাহলে থাক আমি নীরবকে বলে দিচ্ছি আমরা যাচ্ছি না।
।
আরে না তোরা দুজন যা।তাছাড়া ওই কাল্লু নীরব রাগ করবে খুব তুই না গেলে।
আচ্ছা তাহলে আমি রেডি হতে গেলাম।তুমি ওকে(শান্তনাকে) তৈরি হতে বলো।কথাটা বলে মেঘ মৌরির রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।
এদিকে শান্তনা এখনো ভয়ে কাঁপছে মৌরিকে জড়িয়ে।তাই দেখে মৌরি বলে ওঠে,
কিরে আমাকে ছাড়।মেঘ চলে গেছে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।গিয়ে রেডি হয়ে নে।
।
না,আমি যাব না ওই অনুষ্ঠানে।
।
কেন যাবি না?
।
উনি আমাকে বকবে।আমি আজকে ওনার সামনেই যাব না।
।
আরে বাবা কিছু বলবে না আমি তো আছি নাকি?মেঘ কিছু বললে আমি ওকে আচ্ছা মতো পিটে দেব।এখন তুই তোর রুমে যা।
।
আচ্ছা,কিন্তু দাদি,,
।
কিসের কিন্তু?
তুমি ওনার বন্ধুকে কাল্লু কেন বললে?উনি কি খুব কালো?
।
হুম কিন্তু তেমন কালো না।
।
তাহলে কাল্লু কেন বললে?
।
ওই ব্যাটা আগে স্কুল ছুটি হলে মেঘের সাথে আমাদের বাড়িতে আসতো তখন আমাকে ফান করে বলতো দাদিয়া আই লাভ ইউ।তারপর একদিন আমি বলেছিলাম তোর মতো কাল্লুকে আমার পছন্দ হয়নি সেই থেকে ওকে কাল্লু বলা আরকি।তবে ছেলেটা খুব ভালো।এখন কাজের চাপে আসে না আমাদের বাসায়।খুব সুন্দর একটা বউ পেয়েছে।ওর ছেলেটাও খুব সুন্দর।আজ যাবি তো দেখতে পারবি।
।
ওওও এই ব্যাপার তাহলে।আমি কি না কি ভাবলাম।হা হা।
।
এখন ভাবাভাবির সময় নয়।গিয়ে তৈরি হয়ে নে নইলে মেঘ আবারও রেগে যাবে।তারপর কিন্তু আমি আর তোকে বাঁচাবো না বলে দিলাম।
আচ্ছা যাচ্ছি তো উফ তুমি আর উনি পুরো এক রকমই হয়েছো ধ্যাত।
তারপর শান্তনা মৌরির রুম থেকে বেরিয়ে আসে।গুটিগুটি পায়ে ওদের রুমে প্রবেশ করে। তারপর মেঘকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে তাড়াতাড়ি করে কাবার্ডের সামনে চলে যায়।কাবার্ড খুলে যেই শাড়িটা সামনে পড়ে ওটা নিয়েই ওয়াশরুমে যেতে নেই কিন্তু মেঘ ডাক দিয়ে আটকে নেয়,
।
শান্তনা দাঁড়াও,
।
শান্তনা ভয় ভয় চোখে বলে,জ্বি!
।
তুমি এটা পড়ে আসো একটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে।
।
এতে কি আছে?
ওয়াশরুমে গিয়ে দেখ।
শান্তনা মাথা এক দিকে কাত করে ওয়াশরুমে চলে যায়।
মেঘ গায়ের ব্লেজারটা ঠিক করে পেছনে ফিরতেই শান্তনা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।পিংক & অফ হোয়াইট কম্বিনেশনের গরজিয়াছ গাউনে শান্তনার সৌন্দর্যে নতুনত্বের ছোঁয়া ফুটে উঠেছে। মেঘ শান্তনাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত বারবার পর্যবেক্ষণ করছে।তাই দেখে শান্তনার খুব বেশিই অস্বস্তি লাগছে সাথে লজ্জাও পাচ্ছে।এভাবে নেশাক্ত চোখে কোনো ছেলে চেয়ে থাকলে কোন মেয়ের লজ্জা লাগবে না!তাও আবার এক ধ্যানে।আচমকাই মেঘ শান্তনার দিকে পা বাড়াতে শুরু করল।এক পা দু পা করে মেঘ শান্তনার কাছে এগিয়ে যায়।আরও কাছে যাবে কি শান্তনা দু কদম পিছিয়ে যায়।এভাবে করতে করতে শান্তনা দেয়ালে গিয়ে ঠেকে যায়।মেঘ ওর এক হাত দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে মুখটা শান্তনার কানের কাছে নিয়ে যায়।মেঘের নিশ্বাস শান্তনার ঘাড়ে পড়তেই শান্তনা ওর দু চোখ বুজে নেয়।মেঘ ফিসফিস করে বলে,
খুব সুন্দর লাগছে তোমায়। look like a queen of pink land….only my Queen.. কথাটা শেষ করে মেঘ শান্তনার কাছ থেকে সরে আসে।মেঘ সরে আসায় শান্তনা যেন দেহে প্রাণ ফিরে পেল।ভারি নিশ্বাস টাও যেন পাতলা হয়ে গেল।শান্তনা এক হাত দিয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু জমা ঘামগুলো মুছে নেয়।তাই দেখে মেঘ বলে ওঠে,
-সামান্য কানের কাছে গেলাম তাই ঘেমে শেষ!
মেঘের কথায় শান্তনা হকচকিয়ে গেল।তারপর অস্ফুট গলায় বলল,
।
কো কোথায়,আমি তো ঘামছি না।
।
ওহ রিয়ালি!
।
আপনি সবসময় বেশি বোঝেন।আচ্ছা সামনে থেকে সরুন।
।
সরবো কিন্তু আমার দিকে তাকালে।
আপনার দিকে তাকানোর কি আছে?
।
তাকাও একটা স্পেশাল কিছু দেখাবো।
শান্তনা মেঘের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো মেঘ শান্তনার গাউনের সাথে ম্যাচিং করে পিংক কালারের ব্লেজার পড়েছে।
।
আপনি আমার ড্রেসের সাথে ম্যাচ করে ব্লেজার পড়েছেন এটাই স্পেশাল তাইতো?
।
উহু,
মেঘ দু দিকে মাথা নাড়ালো অর্থাৎ না।
।
তাহলে?
মেঘ ব্লেজারের নিচে থাকা টি শার্টটা বাম সাইড থেকে হালকা সরালো।সাথে সাথে অবাক হয়ে শান্তনা ওর চোখ জোড়া বড় বড় করে ফেললো।কারণ মেঘ ওর বুকে শান্তনার নামের ট্যাটু এঁকেছে।দেখে মনে হচ্ছে সদ্য করা।কারণ মেঘের ফর্সা বুক রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে।সাথে ফুলেও আছে।এমন কিছু দেখার জন্য শান্তনা মোটেও প্রস্তুত ছিল না।শান্তনা অবাক দৃষ্টিতে ট্যাটুটার দিকেই তাকিয়ে আছে।ঘুনাক্ষরেও চোখের পলক ফেলছে না।তাই দেখে মেঘ বলে ওঠে,
এভাবে চেয়ে আছো কেন?
মেঘের কথায় শান্তনা ভাবনার জগৎ ভেদ করে বেরিয়ে আসলো তারপর অগ্নিতাপ চোখে মেঘের দিকে চেয়ে বললো,
।
এটা আপনি কি করেছেন?
।
আজ সকালে করেছিলাম আমার এক ট্যাটু আর্টিস্ট ফ্রেন্ডের থেকে।
।
এসব কেন করেছেন?কতটা কষ্ট হয় এসব করতে জানেন?
।
হুম আজ জানলাম।
।
পাগলামি করার একটা লিমিট থাকে বুঝেছেন!এটা তো কোনো পাগলামির মধ্যেও পড়ে না।এটাকে টোটালি বোকামি বলে।
।
তোমার কাছে যাই মনে হয়না কেন,আমার কাছে এটা প্রেম নেশা।
।
ও তাহলে এই প্রেম নেশার জন্য কাল পানিতে ডুব দিয়েন।
মেঘ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,
কেন?
।
কেন আবার,ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হবে।যেটা ট্যাটু ফ্যাটু এঁকে বোঝাতে চাইলেন।
।
আইডিয়াটা ভালো।কিন্তু কথা হলো আমি পানিতে ডুবে মরলে আমার বেবির বাবা কে হবে শুনি?আমার বউটা তো মা ডাক শুনতে পাবে না।শেষে আমাকে অভিশাপ দেবে তাকে মা ডাক শোনাতে না পারার জন্য।
।
কে বলবে এসব?
।
কে আবার আমার পিচ্চি বউটা।মানে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি।
।
মোটেও না।আমি জীবনেও বলবো না।
তাহলে পানিতে ডুব দিয়ে দেখি বলো নাকি বলোনা।
।
আপনার ফালতু কথা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে থামাবেন বুঝি?
।
অপ্স,,,আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।এনিওয়ে,তুমি একটু সেজে নাও।
।
আমার সাজতে ভালো লাগে না।আমি এভাবেই যাব।আপনার যদি প্রবলেম হয় তাহলে আমাকে নিতে হবে না।
।
তা কি আমি বলেছি?আচ্ছা ঠিক আছে তুমি সেজো না কিন্তু হিজাব তো পড়ো।আমি চাইনা আমার ওয়াইফের চুল অন্য কোনো পুরুষ দেখুক।
।
ঠিক আছে এটা করা যায়।কিন্তু আপনি,
।
আমি কি?
আর কোনোদিন ও এসব উল্টো পাল্টা কাজ করবেন না।
।
কেন গো?তোমার কষ্ট হয় বুঝি আমি ব্যাথা
পেলে?
।
জ্বি না,একটুও না।তবে আমার নাম লিখেছেন তাই মানা করলাম।কারণ ভবিষ্যতে কেউ এসব দেখে ফেললে আমায় মাটিতে মিশে যেতে হবে।
।
তুমি ভুল ভাবছো।
।
কিভাবে?
।
বরং তোমাকে দেখে অন্য মেয়েদের হিংসা হবে।
।
কেন?
।
তোমার হাসবেন্ড তোমাকে কতটা ভালবাসে তাই দেখে।
প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ১৫+১৬
মেয়েদের বয়েই গেছে আমাকে হিংসে করার হুহ,বলে শান্তনা ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে যায়।
পার্টিতে এসে মেঘ শান্তনাকে সকলের সাথে আলাপ করিয়ে দেয়।তারপর ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডায় মেতে ওঠে।এদিকে শান্তনা একা একা বসে আছে।চুপচাপ বসে থাকতে খুব বিরক্ত লাগছে শান্তনার কাছে।শান্তনা মেঘের দিকে তাকাচ্ছে আর রাগে গজগজ করছে।আচমকা একটা মেয়ে এসে মেঘকে জড়িয়ে ধরে।তাই দেখে শান্তনার রাগ চরম পর্যায়ে চলে যায়।শান্তনা শরবতের গ্লাসটা খুব শক্ত করে ধরে আছে।আর বিরবির করে বলছে,
ব্যাটা লুচ্চা,ইমরাম হাশমির খালাতো ভাই।আমাকে ভালবাসার কথা বলে অন্য মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করা তাইনা! আবার যখন আসবি বউ বলতে,তখন একটা লাথি দিয়া ফেলে দেব।তোকে মরিচ ভর্তা খাওয়াবো তাও আবার শুধো।মরিচের পানিতে নাকানিচুবানি খাওয়াবো দেখিস।ব্যাটা তোর কপালে বউয়ের ভালবাসা জুটবে না দেখিস।তোর কপালে পোড়া ভাত আর পঁচা শুটকি আছে।আর ওই শাকচুন্নি টাকে তো মাছের আঁশটে দিয়ে ফেসিয়াল করানো উচিত।আর তোর বিয়েতে গোবর দিয়ে হাতে মেহেদী পড়ানো হবে দেখে নিস।শাকচুন্নি একটা।আমার জামাইকে জড়িয়ে ধরা!দিনে দুইবার কারেন্টে শক খাবি।তোর চুল ভ্রু পাপড়ি কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।দেখোতো কিভাবে গায়ে হাত দিয়ে কথা বলছে আমার বরের সাথে।দাঁড়া ডাইনি আমি আসতাছি।তারপর তোর চুল একটা একটা করে ছিড়ছি এই বলে শান্তনা মেঘদের দিকে তেড়ে যায়।