প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ৭+৮

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ৭+৮
শান্তনা আক্তার

গোসল করে কি পড়বে সেটা ভেবে পাচ্ছেনা শান্তনা।গতকাল মৌরি দুটো শাড়ি ও তার সাথে ম্যাচিং দুটো ব্লাউজ দিয়েছিল শান্তনাকে।একটা বাসররাতের জন্য আরেকটা নরমাল শাড়ি যেটা এখন ও পড়ে আছে।কিন্তু গোসল করার পর ও কি পড়বে সেটা খাটের কোণে বসে পা দুলিয়ে ভাবছে থাকে।তখনই মৌরি আসে ওর রুমে।

কি করছে আমার সতিনী?

আসলে দাদি আমি গোসল করবো কিন্তু তারপর কি পড়বো সেটাই ভাবছিলাম।আমি তো কোনো জামা কাপড় আনিনি আমার সাথে।

হুম এই ব্যাপার তাহলে,,,আবরা কা ডাবরা গিলি গিলি ছু মৌরি হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলার পর বলল,,, তোমরা ভেতরে আসো।সাথে সাথে দু তিন জন লোক ৪-৫টা লাগেজ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।শান্তনা কিছু বুঝতে পারছে না কি করছে তারা এতো ব্যাগ নিয়ে কেন আসছে এখানে।তারা সবাই লাগেজ রেখে চলে যাওয়ার পর শান্তনা মৌরিকে জিজ্ঞেস করে,,

দাদি এসব কি?

তোর প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ও জামা কাপড়।

কিন্তু এতো গুলো ব্যাগ!!

হুম,,আমার মেঘের বউ বলে কথা।বেশি বেশি তো লাগবেই একদম বাংলালিংক সিমের অফারের মতো।

হা হা হা তুমি ও না।কিন্তু ব্যাগ গুলোতে এতো কি আছে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নিজেই খুলে দেখ।
শান্তনা গিয়ে সব গুলো ব্যাগ এক এক করে খুলে দেখলো কোনো টায় শাড়ি,কোনোটায় প্রসাধনীর সামগ্রী,কোনোটায় থ্রি পিস,,আবার কোনে টায় কিছু জুয়েলারি সাথে শ্যাম্পু,কন্ডিশনার ব্লা ব্লা রয়েছে।

এতো কিছু আমার জন্য?

আজ্ঞে হ্যা তোর জন্য।এখন চট করে শাওয়ার নিয়ে নে তারপর পট করে চলে আসবি খেতে।

তুমি না খুব মজার মানুষ।সবসময় হাসি খুশি থাকো।খুব ভালো লাগে তোমাকে আমার।

তাই?

হুম তাই।দাদু নিশ্চয়ই তোমাকে খুব ভালবাসতো?

হ্যাঁ খুব ভালবাসতো।শুধু তোর দাদু নয়, তোর শ্বশুর বউ পাগল ছিল।আমার মেঘটাও একই হয়েছে।তোকে তো চোখে হারায় একদম।

(আমার দরকার নেই ওনার মতো স্বামীর -মনে মনে)আচ্ছা দাদি আমি তাহলে গেলাম গোসলে।

আচ্ছা।
রাতে মেঘ খুব টায়ার্ড হয়ে বাসায় ফেরে।ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট ভেসে আসছে ওর মুখে।নিজের রুমে ঢুকে হাতের ল্যাপটপ বিছানায় ফেলে দিয়ে শান্তনাকে খুঁজতে শুরু করলো।ফুলির কাছে শান্তনার কথা জিজ্ঞেস করায় ফুলি বলেছিল শান্তনা নাকি রুমেই আছে।কিন্তু মেঘ আশে পাশে ওয়াশরুমে কোথাও শান্তনাকে দেখতে পেলনা।শান্তনাকে ঘরের আনাচে কানাচে কোথাও দেখতে না পেয়ে মেঘ খুব টেনশনে পরে যায়।নানান ভাবনা চিন্তা উঁকি দিচ্ছে দিতে থাকে ওর মনে।মেঘ বেলকনির দিকে যেতেই কারো গুনগুন শব্দ ভেসে আসলো ওর কানে।মেঘ ধিরে সুস্থে বেলকনির ভেতরে প্রবেশ করতেই শান্তনাকে দেখতে পেল।দেখলো শান্তনা আকাশের পানে চেয়ে আছে আপন কি যেন বিরবির করে বলছে মাঝে মাঝে নাক টেনে নিচ্ছে।মেঘ খানিকটা কাছে গিয়ে কান পাতলো শান্তনার বলা কথা শুনতে।কিছুটা কাছে যেতেই মেঘ স্পষ্ট শুনতে পেল শান্তনার কথা।শান্তনা বলছে,,,,

আম্মু আব্বু সবাই তো আমার সাথে আড়ি করেছে।শেষমেষ তুমিও করলে চান্দামামা?আজকে কেন ঢেকে গেলে মেঘের ছায়ায়?কথা বলতে ভালো লাগেনা আমার সাথে? তুমি কি জানোনা আমার কষ্টের কথাগুলো তোমাকে না বললে আমার ঘুম আসেনা?সবাই পঁচা।কেউ আমাকে ভালবাসো না আমাকে।সবাই ভুল বুঝলে আমায়।যাও আর কোনোদিন ও আম্মু আব্বু এমনি তোমাকেও বিরক্ত করবো না এই বলে দিলাম।অভিমান কি তোমরা একা করতে পারো?আমিও পারি।এবার থেকে আমিও করবো অভিমান।তখন বুঝতে কাছের মানুষ অভিমান করলে কতটা কষ্ট হয়।শান্তনা ওর কনিষ্ঠা আঙুল জাগিয়ে বলল,,আড়ি আড়ি আড়ি।তোমার সাথে জীবনের জন্য আড়ি।আর কখনো কথা বলবো না তোমার সাথে বলে পেছনে ফিরে মেঘকে দেখে বড় সড় একটা শক খেল।তারপর মাথা নিচু করে মেঘের পাশ কেটে চলেই যাচ্ছিল কিন্ত মেঘের কথায় থেমে যায়,,,

তোমার চাঁদমামা নেইতো কি হয়েছে?এই মেঘ তো আছে।দেখো কি সুন্দর করে চেয়ে আছে তোমার দিকে।তোমার চাঁদমামাও বুঝে গেছে শান্তনা মেঘের প্রপার্টি,তাইতো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেছে।কারণ সে জানে শান্তনা চোখ শুধু তার মেঘকেই দেখবে।

মেঘ কালো ছায়া ছাড়া কিছুনা আমার কাছে।আমি ঘেন্না করি এই মেঘকে।বুঝলেন?জাস্ট ঘেন্না করি।

কেন শুনি?

যখনই মেঘ হয় তখনই আমার সব কিছু হারিয়ে যায় আমার থেকে।মেঘ সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে আমার জীবন থেকে।প্রথমে আমার মাকে তারপর আমার ছোট বোনটাকে মেরে ফেললো।নিয়ে গেল অনেক দূরে।এখন আপনি মেঘ নামক মানুষ আমার পরিবার ভালবাসা সব কেড়ে নিলেন।সব।তাই আমি ঘেন্না করি এই মেঘকে বলে রুমের ভেতর চলে যায়।

মা বোনকে নিয়ে নিল মানে?ওর মা তো বেঁচে আছে আর বোন ইবা কোথা থেকে আসছে?
মেয়েটা কি মেন্টালি সিক হয়ে গেল নাকি?প্রথমে একা একা আকাশের দিকে চেয়ে কথা বলা তারপর মা বোনের ব্যাপারে কিসব বললো।না এভাবে চললে তো পাগল হয়ে যাবে ও।এমন কিছু করতে হবে যার জন্য ও একটু স্বাভাবিক হতে পারে।
রাতে বেশ ঝড় নেমে বৃষ্টি আসে।সাথে বিদ্যুৎ চমকানো তো আছেই।বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজে শান্তনার ঘুম ভেঙে যায়।ও দৌঁড়ে মেঘের কাছে যায় গিয়ে দেখে বেলকনির দরজা ভেতর থেকে লাগানো।শান্তনা জোড়ে জোড়ে ধাক্কাতে থাকে বেলকনির দরজা।মেঘ ভেজা শরীরে দরজা খুলে দেয়।শান্তনা মেঘের অবস্থা দেখে চরম অবাক হয়।মেঘ ভেজা শরীরে কাঁপছে রীতিমতো।
আপনি তো ভিজে গেছেন।যখন বৃষ্টি হচ্ছিল তখন ভেতরে আসেন নি কেন?

এমনি ভিজতে মন চাইলো তাই আর ভেতরে যাইনি।

আপনি কি পাগল?এতো রাতে কেউ বৃষ্টিতে ভেজে নাকি?ভেতরে আসুন জলদি।

পরে আসবো তুমি যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

আপনি ভেতরে আসুন আগে।

বললাম তো তুমি যাও।

আমি বললাম আপনি ভেতরে আসুন আর ভেজা কাপড় বদলে নিন।
মেঘ আর কথা না ভেতরে ঢুকে গেল।মেঘ যেখানে যেখানে পা রাখলো সেখানে সেখানে পানি দিয়ে ভিজে গেল।শান্তনা সেই ভেজা জায়গায় পা রাখতেই স্লিপ করে গেল।তারপর জোড়ে এক চিৎকার দিয়ে চোখ অফ করে ফেললো।চোখ খুলে দেখলো মেঘ ওকে ধরে রেখেছে।মেঘের চুল মুখের পানি এসে শান্তনার মুখের উপর পড়ছে।প্রতিটি ফোঁটায় এক অজানা কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে শান্তনার মনে।এক ফোঁটা পানি শান্তনার ঠোঁটকে ছুঁতেই এক প্রকার মোহ জাগ্রত হলো শান্তনার মনে।শান্তনা ওর বাম হাত দিয়ে খামচে ধরলো মেঘের টি-শার্টটি।মেঘ শান্তনার এরুপ আচরণে নেশাক্ত চোখে শান্তনার দিকে ওর মুখ এগিয়ে নিয়ে যায়।এতোটাই কাছে নিয়ে যায় যে ওদের দুজনের নিশ্বাস মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।গরম গরম নিশ্বাসের উত্তাপে দুজনের মনে এক উতলা ঝড় বয়ে যাচ্ছে।ওদের এই উতলা মনটাকে আরও উতলা করে দিচ্ছে বৃষ্টি ভেজা রাতটা।মেঘ নিজেকে সামলাতে না পেরে এগিয়ে যায় শান্তনার ঠোঁটের ত্রিসীমানার দিকে।যখনই মেঘের ঠোঁট শান্তনার ঠোঁটের একদম কাছে চলে আসে তখনই শান্তনা ওর মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নেয়।মেঘ গম্ভীর গলায় বলে,, ।
কি হয়েছে?মুখ ফিরিয়ে নিলে যে?

ছাড়ুন আমাকে।

কেন?একটু ভালবাসতে দাও তোমাকে।মেঘ কথাটা বলা মাত্র শান্তনা মেঘকে ধাক্কা দিয়ে ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দূরে সরে আসে।

আপনার সাহস তো কমনা।আপনার লজ্জা করেনা আমার থেকে ভালবাসা চাইতে?শান্তনার কথার মাঝেই হঠাৎ করে বিদ্যৎ চমকে ওঠে।ভয়ে লাফ দিয়ে শান্তনা মেঘের গায়ে ঝাপিয়ে পড়ে।সাথে সাথে দু একবার বিদ্যৎ চমকানোর শব্দ হয়।ভয়ে বারবার কেঁপে উঠছে শান্তনার শরীর।শান্তনা বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে মেঘকে।একে বারে আষ্টেপিষ্টে লেগে আছে মেঘের বুকের সাথে ওর বুক।মেঘ আস্তে করে শান্তনার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,,

এবার বলো কার লজ্জা নেই?
মেঘের কথায় শান্তনা বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় আর মেঘকে ছেড়ে দেয়।তারপর বলে,,,

আপনি পুরো ঘর ভিজিয়ে দিচ্ছেন।আমাকেও ভিজিয়ে দিলেন।(কথা ঘুরিয়ে)

আমি কি প্রশ্ন করলাম আর তুমি তার কি উত্তর দিলে?

আমি কি ইচ্ছে করে কিছু করেছি নাকি?আম তো ভয় পেয়ে,,,

থাক তোমার এক্সকিউজেস তোমার কাছেই রাখো আমি চেঞ্জ করে আসছি।তুমি ও চেঞ্জ করে নাও এখানে।চিন্তা করোনা তোমার চেঞ্জ করা শেষ হলেই আমি বেরোবে বলে ওয়াশরুমে চলে যায় মেঘ।চেঞ্জ করা শেষ হলে মেঘ ওয়াশরুমেই থেকে যায় কিছুক্ষণ শান্তনার চেঞ্জ করা শেষ হয়নি এই ভেবে।তারপর মেঘ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখলো শান্তনা কানে বালিশ চেপে খাটের উপর বসে আসে।মেঘকে দেখে ঝাড়ি মেরে বলে,,

কি সমস্যা এতো দেড়ি করলেন কেন চেঞ্জ করতে?

আমি ভাবলাম তুমি চেঞ্জ করছো তাই বের হইনি।কিন্তু তুমি এভাবে কেন বলছো?

এমনি বলছি?

ওহ,,আচ্ছা।তারপর মেঘ মেঝেতে আলমারি থেকে একটা চাদর বের করে বিছাতে শুরু করলো।

আরে আরে নিচে চাদর কেন বিছাচ্ছেন?

ঘুমাবো বলে।

বিছানায় শুতে পারেন।আমার সমস্যা নেই।

আমি পাগল নাকি?

পাগল কথাটা কেন আসছে এখানে?

তুমি আমাকে লুচু বলবে তাই বিছানায় শুতে বলছো আমি সব জানি।কিন্ত আমি তোমার কোনো জালেই পা দিবোনা।

আরে ব্যাটা বান্দরের খালাতো ভাই,চামচিকার নানা তোকে কি আমি সাধে বিছানায় শুতে বলছি নাকি?আমার ভয় করছে বলে বলেছি।নইলে তোতে কে বলবে বিছানায় আমার সাথে শোয়ার জন্য-মনে মনে।

নিশচয়ই কোনো বদ মতলব করছো।কিন্তু এই মেঘ যেচে অপমানিত হবে না বুঝেছো।

প্লিজ আজকের রাতটা আমার সাথে বিছানায় ঘুমান শুধু।কাল বলবো না।আর আপনাকে অপমান ও করবো না।প্রমিস।

মনে থাকবে তো?

হুম খুব মনে থাকবে।

খুব ভালো হলো।এই সুযোগে বউ এর সাথে শুতে পারবো।ধন্যবাদ মেঘ,বৃষ্টি,বিদ্যুৎ ভাই।

ওই কি বললেন আপনি?

কোথায় কি বললাম?

যান আপনাকে শুতে হবে না বিছানায়।

আচ্ছা ঠিক আছে বলে নিচে শুতে নিচ্ছিলো মেঘ।

আরে আরে বলছি বলে সত্যি সত্যি নিচে শুবেন নাকি?

তো?

উপরেই শোন।

এক এক সময় একেক কথা কেন বলো তুমি?

এই লাস্ট কথা আমার,আপনি বিছানায় শোন।

ওকে মেঘ বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে শান্তনার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
শান্তনা ওর আর মেঘের মাঝে পাশবালিশ দিয়ে দেয়।আর বলে,,,

আপনি কিন্তু পাশবালিশের এপাশে আসবেন না।

ওকে।

মনে থাকবে তো।

ওকে।

আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে বলে শান্তনা উল্টো দিক ফিরে শুয়ে পড়ে।

কি বউ জুটলো কপালে।কি আর করবো সবই কপাল-মনে মনে বলল মেঘ।তারপর চোখ বুজে নিল।

মেঘ ঘুম থেকে উঠে দেখে শান্তনা ওর বুকের মধ্যে গুটিশুটি মেরে মুখ গুজে শুয়ে আছে।ঠিক বাচ্চাদের মতো।মেঘের কাছে শান্তনাকে বাচ্চার মতো নয়,বাচ্চাই মনে হচ্ছে।মেঘ শান্তনার মুখের উপর ছড়িয়ে থাকা চুল গুলো কানের কাছে গুজে বলল,,,
পিচ্চি একটা।সাথে সাথে শান্তনা নড়েচড়ে ওঠে।ঘুম ঘুম ভাবেই বলতে থাকে,,

একদম নড়বে না কুশাল।আমাকে এভাবেই জড়িয়ে রাখো।বলে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় মেঘকে।কিন্তু মেঘ কুশালের নাম শুনে চটে গিয়ে শান্তনাকে বেশ জোড়ে ধাক্কা দেয় ফলে শান্তনা কিছুটা দূরে সরে যায়।ঘুমের মধ্যে বেচারি লাফ দিয়ে উঠে পড়ে।আর বলে,,,,

কি হয়েছিল?

সেটা তুমি জানো।কার সাথে ঘুমিয়ে ছিলে?

মানে?

স্বপ্নের মধ্যে কার সাথে ঘুমিয়ে ছিলে(দাঁতে দাঁত চেপে বলল)

আপনাকে কেন বলবো?

আমাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে কুশালের স্বপ্ন দেখো তাইনা?

দেখলে আপনার কি?আমার স্বপ্ন আমার ইচ্ছে।আর আমি আপনাকে কখন জড়িয়ে ধরেছি?

তুমি আমার বউ তাই তুমি শুধু আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবে পরপুরুষকে নিয়ে নয়।আর রইলো জড়িয়ে ধরার কথা,সেটা তুমিই ভালো জানো।

আমি আপনাকে স্বামী বলে মানিই না তাহলে কিসের স্বপ্ন আর কিসের জড়িয়ে ধরা।

তুমি মানছো না যে তুমিই আমাকে জড়িয়ে ধরেছো?

না মানছি না।

তোমার মতো মিথ্যাবাদী মেয়ে আমি আর একটাও দেখিনি।

আপনার মতো খারাপ মানুষ আমিও আর একটাও দেখিনি।

আমি খারাপ মানুষ?

হ্যাঁ,হ্যাঁ খুব খারাপ আপনি।

খারাপ হলেও আমি তোমার হাসবেন্ড।যাই হোক আজ থেকে তুমি আবারও কলেজ যেতে পারবে।

মানে কি বললেন?

কানে কালা নাকি?

না তবে আপনি যেটা বললেন সেটা আমার বিশ্বাস হয়নি।আবার বলুন?

আমি বললাম আজ থেকে তুমি কলেজে যেতে পারবে।

সত্যি!!

হুম,,সত্যি।কিন্তু তাই বলে পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা করোনা না যেন।

আপনার বিশ্বাস না হলে থাক।আমাকে যেতে দিয়েন না কলেজে।(মন খারাপ করে)

সেটা আমি বলিনি।জাস্ট তোমাকে সাবধান করলাম।

(সাবধান করলেও বা কি আমি কি আপনার কথা শুনবো নাকি-মনে মনে)
ওকে আমি পালিয়ে যাবনা।পালিয়ে কোথায় বা যাবো বলেন?আব্বু আম্মু তো তাদের সামনে যেতেও মানা করে দিয়েছে।

ওকে ট্রাস্ট করলাম আমি।এবার চলো দুজনে ফজরের নামাজ পড়ে নেই।বেশ কিছুক্ষণ আগে আযান দিয়েছে।

হুম চলুন।
মেঘ শান্তনাকে কলেজে ড্রপ করে অফিসে চলে যায়।
কলেজে এসে শান্তনা যেন প্রাণ ফিরে পেল।দুটো দিন যে কিভাবে ঘরবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছিল সেটা ওই ভালো জানে।শান্তনা ভেবেছিল কলেজে ওকে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।কিন্তু সেরকম কিছুই হয়নি।শান্তনার ফ্রেন্ডস বাদে কেউই তেমন প্রশ্ন করেনি এমনকি টিচার্সরাও না।এর কারণ শান্তনা ওর ফ্রেন্ডদের কাছে জিজ্ঞেস করলে ওরা বলে মেঘ নাকি প্রিন্সিপালকে মানা করে দিয়েছিল যে কেউ যেন শান্তনাকে উল্টো পাল্টা কিছু জিজ্ঞেস করে বিরক্ত না করে।শান্তনা বেশ খুশি হয় মেঘের কাজে ওর প্রতি রাগটা কিছুটা হলেও কমে যায়।এখন বেচারি বাহিরে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।অন্য দিনের থেকে আজ বেশ তাড়াতাড়ি শান্তনাদের কলেজ ছুটি হয়ে গেল।ও কিছুক্ষণ হাঁটে আবার কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে।

আজতো তাড়াতাড়ি কলেজ ছুটি হয়ে গেল।আমি তো একা একা যেতেও পারবো না মেঘদের বাসায়।টাকাও তো নেই আমার কাছে।খুব বিরক্ত লাগছে আমার উফফ।হঠাৎ শান্তনার চোখ যায় ওর সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া ছেলেটির দিকে।ছেলেটি রাস্তার বিপরীত সাইটে আর শান্তনা অন্য সাইটে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটির সাথে একটা মেয়েও আছে।ছেলেটিকে খুব ভালো করে খেয়াল করে শান্তনা।তারপর বলে,,,
এটা তো কুশাল।কিন্তু ও ওই মেয়েটির সাথে কি করছে?গিয়ে দেখি তো বলে রাস্তা পাড় হয়।তারপর কুশাল বলে ডাক দিকেই কুশাল থেমে যায়।শান্তনাকে দেখা মাত্র কুশালের ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায়।ওর সাথে থাকে মেয়েটি বলে ওঠে,,,
বেবি তোমাকে ওই মেয়েটি চেনে নাকি?

আমি জানি নাতো সনিয়া বেবি।কে জানে কোথাকার কোন মেয়ে।চলো আমরা যাই এখান থেকে মনে হচ্ছে পাগল টাগল হবে রাস্তার।

মেয়েটিকে দেখে তো স্টুডেন্ট মনে হচ্ছে।পাগল কেন বলছো তুমি?দাঁড়াও শুনি কি বলে।ইতোমধ্যে শান্তনা ওদের কাছে পৌঁছে যায়।মেয়েটির কাছে গিয়ে বলে,,

তুমি কুশালের সাথে কি করছো?আর কুশাল তুমি কি তোমার সিম অফ করে রেখেছো?আমি গতকাল কতবার ট্রাই করলাম তোমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য কিন্তু বার বার তোমার নাম্বার বন্ধ বলছে।(একনাগাড়ে বলে ফেললো)

এই মেয়ে তুমি কে হুম?কুশালকে কিভাবে চেনো?আমি কুশালের গিএফ আমি ওর সাথে থাকবো না তো কে থাকবে?

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ৫+৬

জিএফ কথাটা শুনে শান্তনা বেশ বড় ধরনের শক খেল।
কিসের গিএফ?আমি কুশালের গিএফ তুমি না ওকে?কুশাল এই মেয়েটা কি বলছে?

ঠিকই বলেছে।আপনি কে হুম?আমি তো আপনাকে চিনি না।কাজ কাম নেই?রাস্তা দিয়ে যে যাবে সেই কি আপনার বিএফ হয়ে যাবে নাকি?ওহ-হো আপনি তো ওই মেয়েটাই যাকে আমি কদিন আগে রিজেক্ট করেছিলাম।আজ প্রতিশোধ নিতে আসছেন আমার রিলেশন ভেঙে তাইনা?

তুমি এসব কি বলছো কুশাল?তুমি আমাকে চেনো না?আমাকে তুমি রিজেক্ট করেছিলে?আমি তোমার রিলেশন ভাঙতে এসেছি?

না চিনি না।নাটক থামান আর নিজের বাড়ি যান।আমি সনিয়াকে ভালবাসি।আপনাকে না।অন্য কোনো ছেলেকে লাইন মারুন যত্তসব।চলো সনিয়া আমরা যাই এসব রাস্তার মেয়েদের সাথে কথা বলাই বেকার।কি জানি বাবা মা কি শিক্ষা দিয়েছে।

হুম চলো কুশাল।

এক্সকিউজ মি মিস্টার কুশাল।আপনার এতো বড় স্পর্ধা কি করে হয় আমার বাবা মা নিয়ে কথা বলার?আপনার বাবা মা আপনাকে কি শিক্ষা দিয়েছে তাই বলুন?রাস্তার ছেলে আমি না আপনি।আমারই ভুল।আমিই আপনাকে অন্ধের মতো ভালবেসেছিলাম।ভুল ছিলাম আমি।আজ থেকে আপনাকে মন থেকে ছুড়ে ফেলে দিলাম আমি।ছি ছি ছি বলে উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করল শান্তনা।রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছে আর চোখের পানি ফেলছে।ভালবাসার মানুষের থেকে এতো বড় ধোকা পাবে সেটা স্বপ্নেও ভাবেনি ও।ওদিকে মেঘ যে গাড়ির হর্ন বাজিয়ে চলেছে একের পর এক সেদিকে ওর কোনোই ভ্রুক্ষেপ নেই।শান্তনা আপন মনে হাঁটছে তো হাঁটছেই।মেঘ গাড়ি থেকে নেমে শান্তনার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আর বলে,,,

তুমি কোথায় যাচ্ছো?আমি যে হর্ন বাজাচ্ছি কখন থেকে কানে নিচ্ছিলে না কেন?মেঘ দেখলো শান্তনা এখনো নিচের দিকে চেয়ে আছে।মেঘ শান্তনার দু বাহু ধরে ঝাকি দিতেই শান্তনা ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে।আর ডুকরে কেঁদে ওঠে।
একি শান্তনা তুমি কাঁদছো কেন?

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ৯+১০