প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ৯+১০

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ৯+১০
শান্তনা আক্তার

কি হলো শান্তনা?বলো কি হয়েছে?

কুশাল আমাকে ঠকিয়েছে(কান্নাজড়িত কন্ঠে)

মানে কি হয়েছে?কান্না থামিয়ে স্পষ্ট করে বলো কি হয়েছে।

আজ খুব তাড়াতাড়ি কলেজ ছুটি হয়ে যায়।আমি কলেজ ছুটির পর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি তারপর কুশালকে দেখতে পাই।ওর সাথে একটা মেয়ে ছিল।আমি ওদের কাছে যেতেই ওরা,,,,
শান্তনা এক এক করে সব বললো মেঘকে।সব শুনে মেঘ বলে,,,

এখন ওসব কথা বাদ দাও বাড়ি চলো।তুমি কষ্ট পেয়ে আমাকে ক্ষতবিক্ষত করো না।তোমার চোখের পানি যে আমি দেখতে পারি না।

আমি মানতে পারছি না সবটা।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।যাকে সবটা দিয়ে ভালবাসলাম আজ সে আমাকে না চেনার অভিনয় করলো!আমি কি করবো বেঁচে থেকে বলতে পারেন?আব্বু আম্মুও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।আর আজ কুশাল তার আসল রুপ দেখিয়ে দিল।সত্যি বলছি আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না।

তুমি চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে বসো।আর একবারও যদি মরার কথা বলো তো,,,

তো কি?(কান্না থামিয়ে)

কোলে তুলে নেব।

আপনি কি শোধরাবেন না একটুও?সিরিয়াস মনুমেন্টও বাজে কথা বলেন।

আমি তো বাজে লোক তাই বাজে কথা তো বলতে হয়ই।এখন চোখের পানিটা ভালো করে মুছে নাও সাথে নাকের পানিটাও বলে একটা টিস্যু পেপার এগিয়ে দেয় শান্তনার সামনে।
শান্তনা মেঘের হাত থেকে টিস্যু পেপার টা নিয়ে নাক মুখ মুছে নিল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এইতো ভালো মেয়ে।এবার চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেই।
শান্তনা কিছু না বলে সোজা গাড়িতে গিয়ে বসে।মেঘ শান্তনাকে নিয়ে সুন্দর একটা লেকে যায়।শান্তনা এখানে আসার কারণ জানতে মেঘকে প্রশ্ন করে,,

আমরা এখানে কেন আসছি?

ঘুরতে।

কেন?

তোমার মনটা ফ্রেশ করতে।

আমার মন ফ্রেশ করে আপনার কি লাভ?

আমি তো তোমাতে মিশ্রিত।তাইতো তোমার মন ভালো করতে এখানে আসা।

আপনি কি আমাকে ইম্প্রেস করার ফন্দি আটছেন?ভাবছেন কুশাল এখন আমার জীবনে নেই বলে আমি আপনাকে এক্সেপ্ট করবো?যদি তাই ভেবে থাকেন তাহলে ভুল ভাবছেন।আমি অন্য মেয়েদের মতো নেই যে জামা বদলানোর মতো ভালবাসার মানুষ বদলাবো।
মেঘ বাকা হেসে শান্তনার প্রশ্নের উত্তর দেয়,,,

তুমি কেমন সেটা জেনেই তোমাকে ভালবেসেছি ওকে।যাই হোক তোমার মন,তোমার ইচ্ছে।এখানে আমার কিছুই করার নেই।ওই দেখো তোমার ফেভারিট বুড়ির চুল।(হাত দিয়ে ইশারা করে)।শান্তনা দেখলো পাশেই একজন বুড়ির চুল বিক্রেতা তার ঠেলা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমার ফেভারিট?কে বলেছে আপনাকে যে বুড়ির চুল আমার ফেভারিট?মোটেও ওটা আমার ফেভারিট নয়।

তাহলে বান্ধবীদের সাথে খুব মজা নিয়ে গল্প করে কে খেত বুড়ির চুল শুনি?

কি বলতে চান আপনি?

যা শুনেছো।কেন ভুল বলেছি কি?

আম আম মানে,

থাক আর আমতা আমতা করতে হবে না।

আপনি কি আমাকে ফলো করতেন?

সেটা নাহয় পরে বলি এখন চলো আমরা বুড়ির চুল খাই।মেঘ বুড়ির চুলওয়ালার কাছে গিয়ে বলে,,,,
ভাইয়া দুটো বুড়ির চুল দেন তো।
বুড়ির চুলওয়ালা মাথা নাড়িয়ে বুড়ির চুল বানানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। এদিকে শান্তনা বলে ওঠে,,,

আমি কিন্তু খাবো বলে রাখলাম।

ওকে খেয়ো না আমাকে দেখো।কেমন?
শান্তনা মেঘের কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে,

(হারামি কোথাকার।আমি বললাম খাবো৷ না।তাই বলে কি সত্যি খাবো না নাকি?একটু জোড় ওতো করতে পারে বা রিকুয়েষ্ট ওতো করতে পারে।তা না করলো কিন্তু এটা তো ভাবতে পারে মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে আজ।তাই ভেবে একটু ফোর্স করতো তা না ব্যাটা একা একাই গিলবে।আচ্ছা ঠিক আছে গেলাবো তোকে জাস্ট ওয়েট এন্ড সি -মনে মনে)
বুড়ির চুলওয়ালা দুটো বুড়ির চুল মেঘের হাতে দেওয়ার আগেই শান্তনা নিজের হাতে নিয়ে নেয়।তারপর দুটো বুড়ির চুলেই মুখ লাগিয়ে নেয়।

এটা কি করলে তুমি?

ভালো করেছি।আপনি আমাকে দেখিয়ে খাবেন আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো নাকি?এটা আমার ফেভারিট ওকে?তাই আমি আগে খাবো not you তাছাড়া আমি মুখ লাগিয়ে ফেলেছি এটাই আপনি অন্যটা নিন??(দাঁত চাপাটি বের করে দিয়ে)

কাজটা কিন্তু তুমি ভালো করলে না।আমি অন্যটা খাবো না আমি তোমার হাতের গুলোই খাবো কারণ আমি ওগুলো আগে চেয়েছিলাম।

কিন্তু আমি যে এটো করে ফেলেছি।

তো কি হয়েছে?আমার বউয়ের এটো খেলে তেমন কিছু হয়ে যাবে না।একটা দাও আমায়।

না দেব না।দেব না মানে দেব না।
ওদের ঝগড়া দেখে বুড়ির চুল বিক্রেতা বলে ওঠে,,,

ভাইজান আমনেরে আমি আরেকটা বানায় দিতাছি খাড়ান।আমনে বাবির লকে জগরা কইরেন না।

না ভাইয়া আমি তোমার ভাবির হাতের টাই খাবো।কারণ ওইগুলো আপনি আমার জন্য বানিয়েছিলেন।

শেষ(মুখ থেকে বাশির ন্যায় শব্দ বের করে বলল শান্তনা)।আমার খাওয়া শেষ এইযে লাঠি দুটো বেঁচে আছে আপনি চাইলে এগুলো চিবোতে পারেন?? আর ভাইয়া আপনি আমাকে আরও দুটো দিন।

দেখলেন ভাই আপনার সাথে ঝগড়া করতে গিয়ে সবটা বুড়ির চুল খেয়ে নিল ও।

আচ্ছা বাবি,,
ভাইজান আমনে কি খাইবেন?

না তুমি তোমার ভাবিকেই দাও যেকটা খাবে।

আচ্ছা ভাইজান বলে নিজের কাজে মন দেয় বুড়ির চুল বিক্রেতা।শান্তনা বেশ মজা নিয়ে মেঘকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেল বুড়ির চুলগুলো।মেঘ উপর দিয়ে রাগি লুক দেখালেও মনে মনে প্রশান্তির হাসি দিচ্ছে।

মেঘ খুব খুশি কারণ ওযে হেরে গিয়েও জিতে গেছে।শান্তনার কষ্টটা অন্তত ভুলাতে পেরেছে।এদিকে শান্তনা একের পর বুড়ির চুল খেয়ে গেল।এবার গিয়ে থামে ও,,
ভাইয়া আমি আর খেতে পারবো না।মুখ ভরে আসছে।তা কতো গুলা খেলাম?

বাবি ৪৯ টা।

কিহ!!এতো কম?আমি তো আরও বেশি খাই।শান্তনার কথা শুনে মেঘ বলে ওঠে,,

তুমি যে এতো গুলো করে খাও তোমার দাঁতে পোকা ধরে না?

ধরেছিল ছোট বেলায়।একে বারে ২৪টা দাঁতই পোকা খেয়ে ফেলেছিল।তারপর দাঁত পড়ে যাওয়ায় ভালো দাঁত উঠে।

এগুলো ও পোকার শিকার হবে দেখো,যেভাবে বুড়ির চুল খেলে।এতে আমি নিশ্চিত বেশিদিন নেই তোমার দাঁতে পোকা লাগতে।

কিছু হবে না আমার দাঁত খুব মজবুত আছে।

যখন পোকা ধরবে তখন বুঝবে কতো মজবুত তোমার দাঁত।

আপনার কি হুম?পোকা ধরলে আমার দাঁতে ধরবে আপনার তো আর না হুহ।

ভাইজান আমনে আর বাবি কি লাগাইছেন।জগরা না কইরা সামনে একটা মেলা বইছে ওইহান থেইকা বাবিরে লইয়া ঘুইরা আসেন গিয়া।

মেলা!!কিসের মেলা?(শান্তনা)

অনেক ভালা মেলা বইছে।হেইরকম মেলা বইছে এককারে বিশাল মেলা।হেইয়ানে নাগরদোলা আছে আরও অনেক ধরনের জিনিস আছে।

ওহ তাই।তাহলে তো খুব ভালো মেলা বসেছে।আমার তো নাগরদোলা তারপর ঢেউ তোলা নৌকায় চড়তে খুব মজা লাগে।

হেইলাইগাই তো কইতাছি যান গিয়া ঘুইরা আসেন।আমি তো ওইহানেই যাইতাছিলাম আমার এই হাওয়াইমিঠাই বেচা কেনার লাইগা।

আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম।কিন্তু মেলা বসেছে কোথায়?(মেঘ)

চলেন আমার লগে আমি নিয়া যাইতাছি।

ওকে চলেন।
তারপর মেঘ শান্তনা হাওয়াইমিঠাইওয়ালার সাথে গেল মেলার উদ্দেশ্যে।শান্তনা আর মেঘকে মেলায় নিয়ে যাওয়ার পর হাওয়াইমিঠাইওয়ালা মেঘের থেকে ওর পাওনা বুঝে নিয়ে চলে যায় ভিরের মাঝে।শান্তনা মেলা দেখে খুব খুশি।খুব বেশিই খুশি।নাগরদোলা দেখা মাত্র ছুটে গিয়ে উঠে পড়ে নাগরদোলায়।মেঘ ও গিয়ে শান্তনার পাশে গিয়ে বসে।আর বলে,,
এভাবে কেউ দৌড় দিয়ে উঠে পড়ে নাকি?কি ভাববে মানুষ?(শান্তনার কানে ফিসফিসিয়ে বললো)

আরে কে কি বলবে হুম?আমরা তো ফ্রি ফ্রি চড়ছি না এখানে।

কিন্তু এটার মধ্যে এমন কি আছে?তোমাকে আমি ভালো পার্কে নিয়ে যাব।ওখানে খুব সুন্দর সুন্দর রাইডস রয়েছে।

না ওসব থেকে এগুলাই বেশি ভালো।হাজার গুন ভালো।আমরা আপনাদের মতো বিলাসিতা করে বড় হইনি।আমরা এসব ছোট মোটো আনন্দেই হ্যাপি।বুঝেছেন?

হুম,,বুঝলাম।কিন্তু এটা চালু হচ্ছে না কেন?

মানুষ ভরুক।ওইতো ভরে গেছে।এখন ওই ছেলে দুটো হাত দিয়ে ঘোরালেই নাগরদোলা চালু হয়ে যাবে দেখেন।শান্তনা কথাটা শেষ করতে না করতেই নাগরদোলা চলতে শুরু করে।একটু উপরে চড়তেই শান্তনা ভয়ে ওর হাত চোখে চেপে ধরে।যখনই নাগরদোলা ঘুরতে শুরু করে শান্তনা চিৎকার দিয়ে মেঘকে জড়িয়ে ধরে।আর চিলল্লাতে থাকে থামান থামান বলে।মেঘ মিটিমিটি হাসছে আর নিজের দু হাত দিয়ে শান্তনাকে জড়িয়ে রেখেছে।শান্তনা ভয়ে মেঘের বুকের মধ্যে মুখ গুজে রেখেছে।পারলে বুকের ভেতর ঢুকেই যেত।মেঘ লোক দুটো কে নাগরদোলা থামাতে নিষেধ করলেও পরবর্তীতে থামাতে বলে।কারণ শান্তনা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।

শান্তনা চোখ খোলে দেখো নাগরদোলা থেমে গেছে।মেঘ শান্তনাকে ডাকছে আর নিজের হাত দিয়ে শান্তনার মুখ নাড়াচ্ছে।কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর শান্তনা ওর চোখ খুলে নেয়।আর বলে,,,

আমি আর কোনোদিনও,জীবন ও চড়বো না এই নাগরদোলায়।(মেঘের থেকে সরে এসে বলল)

কেন?খুব তো লাফালাফি করছিলে নাগরদোলায় চড়ার জন্য।এখন কি হলো?

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ৭+৮

হয়েছে এবার নামুন আমার হাত পা কাঁপছে।
মেঘ শান্তনার হাত ধরে ওকে নামিয়ে দিল।শান্তনা দেখলো সেখানে থাকা সব মানুষ ওকে দেখে হাসছে।ওদের হাসা দেখে শান্তনা বলে ওঠে,
কি সমস্যা সবার?এখানে হাসার কি হলো?এবার সকলে বেশ জোড়েই হেসে ওঠে তাই দেখে শান্তনার রাগ যেন দ্বিগুন বেড়ে যায়।মেঘ শান্তনাকে নিয়ে চলে আসে সেখান থেকে কারন ও চায়না শান্তনা আরও হাসির পাত্রী হোক সকলের সামনে।শান্তনাকে দূরে এনে বলে,

এতো রাগ দেখাও কেন?

ওরা হাসছে কেন আমাকে নিয়ে?

হাসবেই তো তুমি ওদের হাসার সুযোগ করে দিলে।ভয় যখন পাও তখন নাগরদোলায় চড়ার কি প্রয়োজন ছিল?

আসলে নাগরদোলা দেখলে চড়তে মন চায় তখন ভয়ের বিষয়টা মাথায় থাকেনা।সরি।

থাক সরি বলতে হবে না।এখন আর কিসে কিসে চড়বে বলো?

আমি আর নাই।আমার শখ মিটে গেছে।

ওহ,তাহলে দেখো ঘুরে কিছু পছন্দ হলে নিতে পারো।

ঠিক আছে এটা করা যায় বলে এটা ওটা দেখতে শুরু করে।কখনো কাঠের তৈরি জিনিস পত্র দেখে।কখনো পুঁতির তৈরি গহনা আবার কখনো বা হিজাব।বেশ কিছু জিনিস দেখেও শান্তনার পছন্দের কিছুই পেলনা।মেঘই এটা ওটা পছন্দ করে কিনে দেয়।তারপর দুজনে বাদাম কিনে খায়।মেঘের খুব ইচ্ছে করছে শান্তনা ওকে আর ও শান্তনাকে বাদাম খাইয়ে দেবে।কিন্তু সেরকম কিছুই হয়নি।শান্তনা নিজের মতো বাদাম ছিলে খেয়ে চলেছে।আর মেঘ বাদামের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে শান্তনার দিকে চেয়ে আছে।শান্তনা সেটা খেয়াল করে বলে,,

আপনি বাদাম খাচ্ছেন না কেন?
প্রতুত্তরে মেঘ বললো,,

ভালো লাগছে না।
মেঘ কথাটা বলতে দেড়ি শান্তনা মেঘের হাত থেকে বাদামের প্যাকেটটা নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে খেতে শুরু করল।আর মেঘ,,ওতো অসহায়।কি বলবে ভেবেই পাচ্ছে না।এখন হারে হারে টের পাচ্ছে কাকে বলে বউয়ের প্যারা।এখন শুধু তাাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো কিছু করার নেই ওর।

প্রেম নেশা সিজন ২ পর্ব ১১+১২