প্রেয়সী পর্ব ৪৪

প্রেয়সী পর্ব ৪৪
নন্দিনী নীলা

সাবরিনা মধু কে দেখেই জড়িয়ে ধরল দুহাতে। কতদিন পর আদরের ভাগ্নি কে দেখল। মধু ও খুশিতে খালামনি কে জড়িয়ে ধরল। সাবরিনা এটা ওটা জিজ্ঞেস করতে লাগল। পাশে ফুয়াদ দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে খেয়াল ই করল না। সাবরিনা মধুর সাথে কথা বলতে লাগল।

মধু আড়চোখে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। ফুয়াদ ওদের দুজনের দিকেই চেয়ে আছে। সাবরিনা অবশেষে তাকাল ফুয়াদের দিকে আর বললেন,,” আবরার ফুয়াদ রাইট?”
ফুয়াদের দৃষ্টি চমকালো। ও থতমত খেয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে সালাম দিল। সাবরিনা হেসে বললেন,,” শুনলাম তুমি নাকি মধুকে খুব জ্বালাতন করেছ।”
ফুয়াদ কপাল চুলকাতে লাগল তার প্রশ্ন শুনে। মধু ফুয়াদের লজ্জা পাওয়া দেখে হেসে উঠল। সাবরিনা মধু কে বললেন,,” এনগেজমেন্ট সেরে ফেলছ?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মধু কাঁচুমাচু মুখ করে বলল,,” হ্যা খালামনি।”
” তুমি তো বলেছিলে ভালোবাসো না। তাহলে কি নিজের মনের খবর নিজেই বুঝতে পারো না।”
” খালামনি আমি কি ভুল করেছি? এনগেজমেন্ট করে?” ভীতু মুখ করে বলল মধু। ফুয়াদ মধুর কথা শুনে চোখ মুখ কঠিন করে তাকাল ওর দিকে।

মধু ফের বলল,,” ভুল করলেও খালামনি আমার কিন্তু একটুও আফসোস হচ্ছে না। বরংচ ভুলটা করেই শান্তি লাগছে।”
বলে মধু ফুয়াদের বাহু জড়িয়ে ধরে বলল,,”দেখো আমাদের কত সুন্দর মানিয়েছে।”
সাবরিনা সত্যি তাকালেন দুজনের দিকে। আসলেই মানিয়েছে দুজনকে তিনি অপলক চোখে দেখতে লাগলেন দুজনকে।

মধু মুখে হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে। সাবরিনা কে নিয়ে ফুয়াদ ভেতরে আসলো। সাবরিনা ভেতরে যেতে চায়নি এখনি র‌ওনা দিতে চান মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে। মধুর বাপ ভাই তার উপর ভরসা করেই ঢাকা ত্যাগ করেছে। তিনি বাংলাদেশে পা রেখেই তাদের খবর দিয়েছে মধু কে নিয়েই ফিরবেন তিনি তারা যেন মধুর পেছনে না পরে থাকে।
ফুয়াদ দেখল তার মা বাবা কেউ নাই অনুষ্ঠানে। এখন চাচা চাচি ছাড়া আর কাউকে পেলেন না পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।

আনিতা বেগম আর পিয়াল খান এক সাথে বসে ছিলেন। ফুয়াদ মধু আর সাবরিনা কে তাদের কাছে নিয়ে গেলেন। আনিতা বেগম আধবয়স্ক এক সুন্দরী মহিলাকে প্যান্ট শার্ট পরিহিত অবস্থায় এগিয়ে আসতে দেখে কপাল কুঁচকে তাকায়। মধু আবার তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।

ফুয়াদ এগিয়ে এসে সাবরিনা কে মধুর খালামনি বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। আনিতা বেগম ভালো মন্দ কোন‌ কথা বলেন না। পিয়াল খান ভদ্রতা সহিত কথা বলেন। তা দেখে আনিতা বেগম রাগে গজগজ করে স্বামীকে টেনে স্থান ত্যাগ করেন। নাফিসা বেগম যে মেয়েকে মানেন নি তার পরিবারের কারো সাথে আনিতা ভালো আচরণ করবেন না। সাবরিনার সামনে ফুয়াদ লজ্জা পরে যায়। সমুদ্র এসে দাঁড়ায় আর সাবরিনার সাথে গল্প করতে লাগে। ফুয়াদ সমুদ্র আর সাবরিনা কে রেখে মধুকে নিয়ে দূরে সরে যায়। সাবরিনার মন জয় করে ফেলে সমুদ্র কিছু সময়ের মধ্যেই।

মধু কে টেনে ফুয়াদ সবার থেকে আলাদা এনে ওকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। মধু ফুয়াদের স্পর্শ চমকে কেঁপে উঠে। কিন্তু ছাড়ানোর চেষ্টা করে না। মধু ফুয়াদের হাতের উপর নিজের হাত রেখে তাকিয়ে থাকে। অনামিকা আঙ্গুলে ফুয়াদের পরিয়ে দেওয়া আংটি জ্বলজ্বল করছে। ও মুগ্ধ নয়নে আংটির দিকে তাকিয়ে থাকে।
ফুয়াদ ফিসফিস করে ওর কানে কানে বলে,,” আজ থেকে তুমি কিন্তু আমার হাফ ব‌উ‌ হয়ে গেছ সুইটহার্ট। এখন থেকে আর আমাকে ইগনোর অবহেলা করার চেষ্টা করতে পারবে না। এখন তোমার উপর আমার একটা অধিকার আছে।”

বলতে বলতে ফুয়াদ ওর হাত ধরে উঁচু করে পেছনে থেকেই আংটির উপর চুমু খেয়ে বলে,,” সিলমোহর করে দিয়েছি এই মেয়েটি এখন শুধুই আমার। তার উপর সমস্ত অধিকার আমার। তাকে ব‌উ করার অধিকার ও শুধু আমার। এই আংটি কোন মূল্যে আঙুল থেকে খুলবে না। এটা আমার দেওয়া তোমার জন্য ভালোবাসা। তোমাকে নিজের করার প্রথম ধাপ। খুব শিগগিরই বড়ো ধাপ পার করে তোমায় ফুয়াদের বধূ রুপে নিয়ে আসব সারাজীবনের জন্য।‌”

মধু পিছু ঘুরে ফুয়াদের বুকে মাথা রেখে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,” আমি সেই অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকব।”
তিন্নির ডাকে দু’জন দূরত্ব করে দাঁড়াল। মধু তিন্নির কাছে গেল। তিন্নি ওকে টেনে বলল,” চলে যাবি শুনলাম। এখন খালি ভাইয়ার সাথেই চিপকে থাকবি? আমার কথা তো ভুলেই গেছিস। কয়দিন আগেও ভাইয়াকে সহ্য করতে পারতি না আর এখন চোখ হারাচ্ছি। রাতে তো খুব বললি ভালোবাসি না। পিছু ছাড়বে বেঁচে গেছিস। এখন তো সব উল্টো হচ্ছে।”

মধু তিন্নি কে জড়িয়ে ধরে বলল,,” তোকে খুব মিস করব দোস্ত।”
তিন্নি ও বলল,,” আমিও অনেক মিস করব তোকে।”
ফাহাদ দৌড়ে এসে বলল,,” মৌমাছি তুমি চলে যাবা?”
মধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল।
ফাহাদ বলল,,” আই মিস ইউ।”

মধু আনিতা বেগম আর পিয়াল খান এর কাছে গিয়ে বিদায় নিল। আনিতা বেগম মুখ ভেংচি কাটল ওকে দেখে। সমুদ্র তখনো সাবরিনা বেগমের সাথে কথা বলছিল। সবার থেকে বিদায় নিয়ে মধু, ফুয়াদ ও সাবরিনা বেগম গাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। মধু নাকের জল চোখের জল এক করে কাঁদছিল তখন। ফুয়াদ ওদের পৌঁছে দিয়ে আসবে।

সাবরিনা বারবার করে ওকে মানা করছিল একা যাবে যদি কোন বিপদ আপদ হয়। কিন্তু ফুয়াদ শুনছিল‌ না কোন কথা ও যাবেই। বাধ্য হয়ে তার ও রাজি হতে হয়েছে ফুয়াদের পাশে মধু সামনে বসল। সাবরিনা বেগম পেছনে‌ বসেছে।
সমুদ্র জানালা দিয়ে ফুয়াদ কে বলল,,” ছোটো আমি কি তোর সাথে আসব? একা এতো দূর যাবি যদি কোন বিপদ আপদ হয়!”

” তুমি টেনশন করো না ভাইয়া সবাইকে নিয়ে বাসায় যাও। আমার কিচ্ছু হবে না।”
সমুদ্র মধুর দিকে তাকিয়ে বলে,,” সাবধানে যেও মধু। বাই।”
মধু হেসে আচ্ছা বলে সমুদ্রের থেকে বিদায় নেয়।
ওদের যাওয়ার দিকে সমুদ্র অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তিন্নি সমুদ্রের পাশেই ছিল ও সমুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল,,” ভাইয়া আমরা বের হবো কখন?”

সমুদ্র বলল,,” সবাই নিয়ে বের হ। ড্রাইভার কে বলে দিচ্ছি।”
” তুমি যাবে না?”
” অনুষ্ঠান শেষ করে আমি ফিরব। তোরা চলে যা। মা তো রেগে আছে তাকে সামলাইস।”
ফাহাদ, আনিতা বেগম, পিয়াল খান, তিন্নি, রাহী নাঈম সবাই চলে গেল। সমুদ্র অনুষ্ঠান শেষ ঘোষণা করল। তারপর নিজেও গাড়িতে উঠে উদ্দেশ্য হীন ভাবে গাড়ি চালাতে লাগল।

মধু গাড়িতে ঘুমিয়ে যাওয়ার ভয়ে একটু পর পর চোখ ঠলে বড়ো বড়ো চোখ করে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। ফুয়াদ ড্রাইভিং করছে। মধু ফুয়াদের দিকে চেয়ে ভাবছে আবার কবে দেখবে ফুয়াদ কে ফুয়াদের থেকে দূরে যাওয়া লাগবে বলেই মধু কত কাহিনী না করেছে থাকার জন্য। ফুয়াদের সাথে পালিয়ে ও বেরিয়েছে।
ফুয়াদ ড্রাইভ করতে করতে বলল,,” এভাবে তাকিয়ে থেকো না এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে আমার।”
মধু বলল,” হোক এক্সিডেন্ট আমি তাকিয়ে থাকব‌ই।”

ফুয়াদ ঘাড় কাত করে তাকাল পেছনে সাবরিনা বেগম ফোনে কথা বলছে কারো সাথে। ফুয়াদ সেদিকে খেয়াল রেখেই বলল,” পেছনে খালা না থাকলে তাকিয়ে থাকার মজা বুঝিয়ে দিতাম।”
মধু বলল,,” তো এখনি বুঝান মানা করছে কে?”
” মেয়ে দেখি আমার থেকেও ডেঞ্জারাস হয়ে উঠেছে।”

মধু ফুয়াদের কথায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। ফুয়াদ বুকের বাম পাশে হাত চেপে বলে,,” এভাবে হাসলে তো খুন হয়ে যাব। তখন আর রেখে আসতে পারব না। আবার নিয়ে চলে আসবো।”
” আমাকে আসতে দিলে তো।”
ফুয়াদ বলল,,” মানা করার মতো কে আছে? তোমার উপর আমার অধিকার আছে। তুমি এখন আমার হাফ ব‌উ ভুলে যেও না।”

মধু বলল,,” হাফ ব‌উ ফুল ব‌উ হয়নি তাই মানা করার মতো অনেকেই আছে।”
” মনে মনে কবেই কবুল করে ব‌উ মেনে নিয়েছি। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘরে তোলা বাকি‌।”
” বাবা কে মানাতে পারবেন?”
” না পারলেও তোমাকে আমার ব‌উ হ‌ওয়াতে কেউ আটকাতে পারবে না। এখন তোমার বাবা স্বেচ্ছায় বিয়ে দিবে নাকি জোর করতে হবে সেটা সামনে দেখা যাবে।”

প্রেয়সী পর্ব ৪৩

মধু আর কথা বাড়াল না ফুয়াদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে র‌ইল। ওভাবেই ঘাড় বাঁকা করেই ঘুমিয়ে গেল মধু। ফুয়াদ ওর কোন আওয়াজ না পেয়ে দেখে মধু ঘুমে বিভোর হয়ে গেছে‌। ও পেছনে চেয়ে দেখে খালামনি নিজের মতো ফোন টিপছে। ফুয়াদ মধুর মাথাটা নিজের কাঁধে তুলে নেয়। পেছনে থেকে সাবরিনা এসব দেখে হাসে‌।

প্রেয়সী পর্ব ৪৫