প্রেয়সী পর্ব ৭০

প্রেয়সী পর্ব ৭০
নন্দিনী নীলা

সন্ধ্যার পর মধুর বাবা মা চলে যায়। মধু ফুয়াদের বাহু ধরে টেনে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। রুমে এসেই মধু ফুয়াদের মুখের দিকে চেয়ে বলল,,” বাপি আপনাকে কি বলেছে?”
ফুয়াদ ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। ওর বুকের ভেতর অসহ্য রকমের যন্ত্রণা হচ্ছে। বাবা মা ভাইয়ের এসব জানতে পারলে কি হবে?

ভাইয়া এতো বড়ো ক্রিমিনাল জানার পর মা কি এসব সহ্য করতে পারবে? কীভাবে এসব সবাইকে জানাবে? ফুয়াদের মাথায় কিছুই ঢুকছে না ও কি করবে। মধুর বাবার নিজের কাছে যা ছিল সমুদ্র কে সহজেই ক্রিমিনাল প্রমাণ করতে সব ফুয়াদের কাছে দিয়ে গেছে। এতো দিন ভাইয়ের একটা খবর জানত কিন্তু এখন এসব কি শুনল ও। ওর ভাই এসব করতে পারে ও বিলিভ করতে পারছে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফুয়াদ নানান চিন্তায় অস্থির হচ্ছিল এদিকে মধু প্রশ্নের কোন জবাব না পেয়ে বলল,,” কি হলো কথা বলছেন না কেন? বাবা কি আবার‌ আপনাকে হুমকি ধামকি দিয়ে গেছে?”
ফুয়াদ মধুর চোখের দিকে ও তাকাতে পারছে না। ওর ভাই খারাপ ও এটা কীভাবে সবাইকে জানাব।
ফুয়াদ মধুর দিকে না তাকিয়ে বলল,,” আমি একটা জরুরী কাজে যাচ্ছি এসে সব প্রশ্নের উত্তর দেব। তুমি সাবধানে থেকো।”

বলেই ফুয়াদ এক সেকেন্ড ওয়েট না করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এদিকে মধু ফুয়াদের যাওয়ার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ফুয়াদের দুশ্চিন্তায় কাতর হ‌ওয়া মুখটার কথাই ভাবছে থেমে থেমে।
মধুর ফোনটা বেজে উঠলো হঠাৎ করেই। মধু উঠে বাইরে যাবার কথা ভাবছিল‌। ফোন বেজে উঠার জন্য মধু আবার ফিরে এসে ফোন রিসিভ করে। একটা আননোন নাম্বার‌ থেকে কল এসেছে। ও রিসিভ করে বলে,,” হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম! কে বলছেন?”

ওপাশ থেকে বলে উঠে,,” ওয়ালাইকুমুস সালাম। মধু কেমন আছো?”
কন্ঠ টা শুনতেই মধু কেঁপে উঠল এটা তো সমুদ্রের কন্ঠ। ও কাঁপা কন্ঠে বলল,,” আপনি?”
” আমার কন্ঠস্বর এতো ভালো করে চেনো যে শুনেই চিনে ফেললে ভেরি গুড।”
” আপনি আমাকে কল করেছেন কেন?”
” শেষ বারের মতো একটু কথা বলতে মন চাইলো।”
” মানে কি সব বলছেন?”

” মানে হলো, তোমার সাথে একটু কথা বলতে ইচ্ছে করছিল। দেখো ফুয়াদ আর তুমি দু’জনেই তো জেনে গেছে যে আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। আর আমি এটা জেনে গেছি তুমি প্রেগন্যান্ট। আমার স্বপ্ন ছিল আমার সন্তান তোমার পেটে থাকবে। কিন্তু আমার ব্যাড লাক যাকে নিজে ভালবাসলাম, ব‌উ করতে চাইলাম, সন্তানের মা করতে চাইলাম সে হয়ে গেল ছোটো ভাইয়ের ব‌উ। আমি মানুষ টা যেমন‌ই হয় মধু তোমাকে আমি সত্যি ভালবাসি খুব।”
” দয়া করে এই ভালোবাসা শব্দটা আমার জন্য ব্যবহার করে এই শব্দটার অপমান করবেন না। আমি আর ফুয়াদ অনেক সুখে আছি। আমাদের সুখে থাকতে দিন।”

” তোমরা তো সুখেই আছো মধু কিন্তু আমি যে একটু সুখ ও পাচ্ছি না। তুমি প্রেগন্যান্ট হলেও আমার সমস্যা নাই। আমি তোমাকে ভালোবাসি মধু তাই তোমার বাচ্চাকে আমার মেনে নিতে কোন সমস্যা নাই। আমার শুধু তোমাকে চাই তোমার সন্তান আমাকে বাবা বলে ডাকবে আমি এটাই চাই আর কিছু চাই না মধু। প্লিজ আমার চাওয়া কে পূরণ করো। তোমাকে অনেক ভালোবাসি মধু তাই তোমাকে আমি জোর জবরদস্তি করতে পারি না পারব না।”

” ছিহ এসব কি বলছেন আপনি। আপনি এমন অফার করলেন কি করে আমি যাব আপনার কাছে? আমি ফুয়াদ কে পাগলের মতো ভালোবাসি। আমি মরে যাব তবুও আপনার কাছে যাব না। আর আমার বাচ্চা আপনাকে বাবা কোন দুঃখে বলতে যাবে তার কি বাবা নাই? আপনি তার বড় চাচা তাই থাকবেন।”
” হা হা হা মধু আমি কিন্তু অনেক জেদি আমার সাথে চ্যালেন্স করো না। আমি যেহেতু বলেছি তুমি আর তোমার অনাগত সন্তান আমার ই হবে। তাই হবে। এখন তোমাকে কষ্ট দেবো না তুমি সুন্দর মতো একটা সুস্থ বেবির জন্ম দাও তারপর তোমাদের ঠিকানা হবে আমার কাছে।”

রাগে মধুর চিৎকার করে কিছু বলতে যাবে সমুদ্র বলল,,” এতো হাইফাই হয়ো না কেমন। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করো। আমি এই নয়মাস তোমাদের জ্বালাতে আসবো না। তুমি নিজের আর আমাদের বেবির কেয়ার নিও। আমি অনেক দূরে চলে চাচ্ছি। আমার কলিজার ভাই ফুয়াদকে বলে দিও কষ্ট করে না খুঁজতে। সময় মতো আমিই চলে আসবো দেখা দিতে।”

বলেই সমুদ্র কল কেটে দিল। সমুদ্রের কথা শুনে মধুর মনে ভয় ঢুকে গেল এসব কথা সমুদ্র কেন বলল।
ফুয়াদ দুই ঘন্টা পর বাসায় এসে শুনল মধু নাকি দরজা আটকে বসে আছে সবাই ডাকা ডাকি করেও দরজা খোলাতে পারেনি। ফুয়াদ দ্রুত এসে ডাকতে মধু দরজা খুলে দিল। মধু দরজা খুলেই ফুয়াদ কে দুহাতে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠল। ফুয়াদ ওর চোখ মুখ ফোলা দেখে চমকে উঠল। ওকে বুকে থেকে টেনে ওর মুখটা ভালো করে দেখে বলল,,” কি হয়েছে কাঁদছ কেন?”

মধু ফুঁপিয়ে কান্না করছে। অনেক কষ্টে কান্না একটু থামিয়ে সব বলতে লাগল সমুদ্র ওকে যা যা বলেছে।
” উনি এসব কি‌ বলল। আমি উনার নামে মামলা করব। আপনি আমাকে বাধা দিতে পারবেন না বলে দিলাম।”
” মধু শান্ত হ‌ও। তোমার কিছুই করতে হবে না। আমি ভাইয়ার নামে অলরেডি মামলা করে এসেছি।”
মধু হতবিহ্বল কন্ঠে বলল,,” হোয়াট?”

মধু চোখ বড়ো বড়ো করে ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। ফুয়াদের মতো শক্ত মানুষ টাও মুখ ছেপে ধরে কান্না করে উঠল। মধু কিছুই বুঝতে পারছে না। ফুয়াদ হঠাৎ এমন করছে কেন। ফুয়াদ উন্মাদের মতো কান্না করছে। দরজায় নক করছে নাফিসা বেগম। মধু ফোনে সমুদ্রের কল আসার পর দরজা আটকে কান্না করেছে। কিছুই খায় নি। মধু প্রেগন্যান্ট জানার পর ওকে সবাই খাওয়ার উপরেই রাখছে। এখনো নাফিসা বেগম ফল কেটে নিয়ে এসেছে। মধু ফুয়াদের জন্য দরজা ও খুলতে পারছে না। ফুয়াদ উঠে লাল চোখ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। আর মধু দরজা খুলল।

নাফিস বেগম ভেতরে ঢুকে বলল,,” কি হয়েছে তোমার? দরজা আটকে ছিলে কেন? ফুয়াদের সাথে কি ঝগড়া হয়েছে?”
মধু বলল,,” না তো এমনি মাথা ব্যথা করছিল তাই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”
নাফিসা বেগম বুঝলেন মধু মিথ্যা বলছে তাও কিছু না বলে এক গাল হেসে ওর হাতে প্লেট দিয়ে বলল খেয়ে দিতে তারপর তিনি চলে গেলেন।

মধু প্লেট নিয়ে আবার দরজা আটকে বিছানায় এসে বসল। ফুয়াদ চোখে মুখে পানি দিয়ে এসে গায়ের শার্ট খুলে ট্রি শার্ট পরে নিল। মধু আপেলে কামড় দিতে দিতে বলল,,” বললেন না কি হয়েছে? আব্বু তখন কি এমন বলে গেল যে আপনি সমুদ্র ভাইয়ার নামে মামলা অব্দি করে আসলেন। আমি এতো দিন বলেও তো রাজি করাতে পারি না।”
ফুয়াদ মধুর প্লেটে থেকে আঙ্গুর নিয়ে মুখে দিল।

তারপর ওর কোলে থেকে প্লেট সরিয়ে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। মধু মামলার কথাটা শুনে অনেক খুশি হয়েছে মনে মনে কিন্তু প্রকাশ করছে না। ও ফুয়াদের মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছে। ফুয়াদের মনে কি‌ চলছে সেটাই বুঝার ট্রাই করছে।

ফুয়াদ মধুর হাত ধরে বলল,,” বাসার সবাই এটা জানার পর আমাকে ভুল বুঝতে পারে মধু। কিন্তু ভাইয়ার নামে শুধুমাত্র নিজের জন্য মামলা দেই নাই। তিনি যেসব অন্যায় করেছে সেসব ছেড়ে দেওয়ার অধিকার আমার নাই। আমি নিজের জানের পরোয়া করি না কিন্তু আমার ভাইয়ের জন্য অনেক মানুষ আতঙ্কে থাকুক সেটাও আমি চাই না। তাই আমার যতটুকু করার আমি করেছি।”

” সবটা খোলে বলুন আমাকে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
মাহতিম হোসেন ফুয়াদকে যা বলেছে সবটাই ফুয়াদ মধু কে বলল।
” ওটা সত্যি আপনার আপন ভাই তো? আমার না বিলিভ হচ্ছে না।”

” ভাইয়া এমন খারাপ পথে কবে চলে গেল মধু? আমি ভাবতাম তিনি শুধুমাত্র ড্রিংকস করে কিন্তু তিনি এতো‌ কিছু করেছে আমি কল্পনা করতে পারছি না। নিজেকে বাঁচানোর জন্য উনি এতো গুলো খুন করেছে। ভাইয়া খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশে এই পথে গিয়েছিল। তাই তার এই দিকটা মেনেই আমরা থেকেছি কিন্তু সে তো সব সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে। এসব পরিবারের সবাই জানলে কি হবে? আর এসব ছড়িয়ে গেলে আমাদের মান ইজ্জত সব শেষ হয়ে যাবে কারো সামনে আমরা মুখ দেখাতে পারব না। সব শেষ করে দিল ভাইয়া কিন্তু কেন এসব করল। এসব করে তিনি কি পেলেন?”

মধু ফুয়াদের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সমুদ্র এতোটা খারাপ ও কল্পনা করেনি। এতো দেখি ওর বাপ ভাইয়ের থেকেও বেশি খারাপ।
মধু ফুয়াদের চুল টেনে দিচ্ছে এই প্রসঙ্গ চেঞ্জ করে বলল,,” আপনার ফোন কি হয়েছে? এতো বার কল দিয়েছি খালি বন্ধ।”

ফুয়াদ বলল,,” চার্জ নাই বন্ধ হয়ে গেছে।”
মধু ফুয়াদের ফোন নিয়ে অন করল। সাথে সাথে মেসেজ টোন বেজে উঠল। ও ফুয়াদের হাতে ফোন দিয়ে বলল,,” এতো মেসেজ কেন দেখেন তো।”

ফুয়াদ মেসেজ অপেন করে বলল,,” আমি জানি তুই সব জেনে গেছিস ছোটো। এবার আর তুই আমাকে ছাড়বি না। কিন্তু আমি তো এতো সহজে ধরা দেব না। পুলিশের হাতে তো নয়‌ই। তাই আমি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি। ভালো থাকিস বাবা মাকে দেখে রাখিস। মনে রাখিস তোর জন্যে ই আমি দেশ ত্যাগ করলাম।”
ফুয়াদ লাফ দিয়ে উঠে বসল। তাড়াতাড়ি পুলিশ কে কল‌ করে বলল সমুদ্র কে খুঁজতে এয়ারপোর্ট যেতে ইমিডিয়েটলি।

প্রেয়সী পর্ব ৬৯

কাউন্টারে চেক করেও সমুদ্র নামের কাউকে দেশের বাইরে যাওয়ার নাম পেল না পুলিশ‌।
সব শুনে ফুয়াদ বলল,,” ভাইয়া কি তাহলে মিথ্যা বলে আমাদের দৌড় করালো?”

প্রেয়সী পর্ব ৭১