প্রেয়সী পর্ব ৯

প্রেয়সী পর্ব ৯
নন্দিনী নীলা

তিনজন মেয়ে এক রুমে বসে আছে। মধু, তিন্নি ও রাহী। চিন্তিত মুখে রাহী হাঁসফাঁস করছে। মধু একটু পর পর রুম থেকে বেরিয়ে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করতে চাইছে নিচে কি হচ্ছে। তিন্নি আরামসে বসে ফোন টিপছে। কোন চিন্তা ভাবনা নাই ওর। নিচে এসেছে নাঈম। একটু আগে ওকে ডেকে আনা হয়েছে। তারপর কি হচ্ছে ওরা জানে না। ওরা তিনজন ছাড়া সবাই নিচে উপস্থিত।

মধু তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল,,” তুই নিচে গিয়ে তো খবর আনতে পারিস। আমি না হয় তোদের পরিবারের কেউ না তাই তাড়িয়ে দিছে। কিন্তু তুই তো এই পরিবারের মেয়ে।”
” আমার এসব জানার ইচ্ছা নাই।”
রাহী এসে বসল বোনের সামনে।
” যা না বোন আমার। আমি না তোর বড় বোন আমার জন্য এইটুকু করবি না। ছোট বেলায় কতো খাইয়ে দিছি। তোরে ভুলে গেছিস?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” খবর এনে দিতে পারি বিনিময়ে ট্রিট দিতে হবে আমাকে।”
” আচ্ছা দেব এবার তো যা।”
তিন্নি উঠে দাঁড়াল তারপর হেলেদুলে নিচে নেমে এল। আলাপ আলোচনা সব শেষ মনে হচ্ছে।
রাজিব খান নাঈম এর উদ্দেশ্যে বললেন,,” তোমার বাবা মাকে নিয়ে কবে আসবে বলো। শুধু প্রেম করলে তো হবে না। বিয়ের বয়স হয়েছে মেয়ের বিয়েও তো দিতে হবে। তা তুমি কি এখন বিয়ে করতে চাও?”
নাঈভ বলল,,” জি চাই। বাবা মা কে মানিয়ে নিয়ে আসব ইনশাআল্লাহ।”

ফুয়াদ উঠে দাঁড়াল। নাঈম অসহায় মুখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ফুয়াদ রাগ করেছে ওর সাথে এটা তো স্বাভাবিক। ফুয়াদ উপরে চলে গেল উঠে নাঈম ওকে ডাকল পেছনে থেকে। ফুয়াদ শুনল না। সমুদ্র ওকেও উপরে যেতে বলল বন্ধুর রাগ ভাঙাতে। নিচের শেষ করে নাঈম উপরে চলে গেল।

তিন্নি ফিরে এসে রাহী কে বলল,,” তোর জন্য বিশেষ খবর নিয়ে এসেছি এবার বল কত টাকার ট্রিট দিবি!”
” আগে বল সব। ওকে কি অনেক অপমান করেছে। বল না আমার খুব টেনশন হচ্ছে।” রাহী ভয়ার্ত মুখ করে বলল।
তিন্নি বলল,, ” চুপ কর। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে।”
” দেখ মন মেজাজ ভালো নাই এসব ঝামেলা করিস না বোন বল নিচে কি হয়েছে।”
” থাক তুই তোর মন মেজাজ নিয়ে আমি কিছুই বলবো না।”
রাহী রাগে কিছু বলতে যাবে মধু এসে বলল,,” দোস্ত বল প্লিজ। টেনশন হচ্ছে তো।”

তিন্নি গম্ভীর মুখে সব বলল সব শুনে রাহী থপ করে বিছানায় বসে পরল। ওর বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। ভয়ের কেমন লাগছিল এখন একটু শান্তি লাগছে। মধু তো চিৎকার করে বলল,,” সময় মতো এই বাসায় এসেছি বিয়ে একটা খেতে পারব তাহলে। নিজের বিয়ের কিছুই তো খাইনি এবার কব্জি ডুবিয়ে খাব।”

তিন্নি রাহী কে আগামীকাল কেই ট্রিট দেওয়ার কথা বলল। ওকে আর মধু কে। রাহী আচ্ছা বলে কল লাগাল নাঈম কে। কিন্তু নাঈম কল রিসিভ করছে না কেটে দিচ্ছে। রাহী ফুস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। কল রিসিভ না করায় রাগ লাগছে। ও যে রুমে চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে সে কি বুঝে না। নাঈম ওকে ইগনোর করছে এই সময়?

তিনদিন পর‌ই নাঈম ওর বাবা মা ও দুলাভাই নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। রাহী কে শাড়ি পড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে মধু আর তিন্নি। রাহী দেখতে এমনিতেই অনেক সুন্দর শাড়ি পড়ায় ওর সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে। নাঈম অপলক চোখে তাকিয়ে আছিল রাহীর দিকে। রাহীকে নাঈমের মা হাতের বালা ও নাঈম আংটি পরিয়ে বিয়ে পাকা করে ফেলল। নাঈম আর রাহী আলাদা কথা বলতে ছাদে এল।নিচে বড় রা ডেট ফিক্সড করছে। রাহীর ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার কয়েকদিন আছে তাই বিয়ে ডেট পরীক্ষার পর হলো। তিন্নি আর মধু ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। দুজনে উঁকি ঝুঁকি মারছে কি করছে দুজনে দেখার জন্য।

তিন্নি কে আনিতা বেগম ডাকছে। তিন্নি বিরক্তিকর মুখে নিচে নেমে এল। মধু একাই দাঁড়িয়ে আছে ছাদের দরজায়। রাহী আর নাঈম কি যেন কথা বলছে। রাহী লজ্জা পাচ্ছে। নাঈম রাহীর দিকে এগিয়ে এসে কপালে চুমু খেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরল।
মধু নিজেও লজ্জা পেয়েছে ওর মুখটা রাঙা হয়ে উঠেছে। এখানে বোকার মতো দাঁড়িয়ে ওদের উপর নজর রাখার জন্য নিজেকে বকছে। ও নিচে নেমে আসার জন্য পেছনে ঘুরে দৌড় দিবে তখনি অনুভবে করে ওর পেছনে আরেকজনের উপস্থিতি।

শক্তপোক্ত একটা দেহ ওর পেছনে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে ঢোক গিলে পেছনে ফিরে দেখে ফুয়াদ রেগে তাকিয়ে আছে ওর দিকে ও তাকাতেই দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,” অন্যের রোমান্স দেখতে খুব মজা লাগে নাকি?”
লজ্জা মধুর কান গরম হয়ে গেল। নিজের নির্লজ্জ পনায় নিজেই মাথা নিচু করে ফেলল। তিন্নি তো নিচে গিয়ে বেঁচে গেছে ও একাই ফেঁসে গেল।

তোতলানো গলায় বলল মধু,,”আপনি ভুল বুঝছেন আমি তো..”
” বেয়াদব মেয়ে। চোখের সামনে থেকে দূর হ‌ও।”
বলেই ফুয়াদ ছাদের চলে গেল। মধু দৌড়ে নিচে নেমে এসেছে‌। এদিকে ততক্ষণে রাহী আর নাঈম নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছে। ফুয়াদ এসে দাঁড়াল ওদের কাছে। রাহী কে নিচে যেতে বলে নাঈমের সাথে কথা বলতে লাগল।
মধু নিচে চলে এসেছে। লজ্জায় এখনো কারো দিকে তাকাতে পারছে না। ইশ কেন যে উঁকি মারতে গিয়েছিলাম। নাফিসা বেগম বসে কথা বলছিল তাদের সাথে। মধু কে দেখেই নাঈমের মা জিজ্ঞেস করলেন,,” এই মেয়েটা কে চিনলাম না তো!”
নাফিসা মধুকে ডেকে পাশে বসিয়ে বললেন,,” আমাদের তিন্নির ফ্রেন্ড।”

“দেখতে তো মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। আমাদের আরেকটা ছেলে থাকলে এই মেয়েকে হাত ছাড়া করতাম না। ছেলের ব‌উ করতাম‌ই। তা মা তোমার নাম কি?”
মধু খুশি মনেই বসেছে নাফিসার পাশে। কিন্তু নাঈমের মার কথা শুনে রাগ লাগছে। উনার আর ছেলে নাই তা শুনে খুশি হয়ে মনে মনে ভেংচি কাটল। বিয়ে করব না বলে এখানে পরে আছি আর উনি আসছে ব‌‌উমা করতে। শখ কত!
মনের রাগ মনেই জমা রেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,,” জি আমার নাম মেহেরিমা মধু।”

” তোমার বাসায় কোথায়? কয় ভাই বোন তোমরা?” সঙ্গে সঙ্গেই জিজ্ঞেস করলেন নাঈমের মা।
মধু বিরক্তিকর মুখে তাকিয়ে আছে। এতো কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। ওর থমথমে মুখে অবস্থা দেখে নাফিসা বললেন,” মধু দেখ তো রাহী কোথায় ওদের কথা হলো নাকি।”

মধু হাঁফ ছেড়ে বাঁচল থপ করে উঠে দাঁড়াল আর দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করল।
” মধুর বাসা কোথায় আপা?” নাঈমের মা জিজ্ঞেস করলেন।
নাফিসা বললেন,,” আপনার তো আর ছেলে নাই তাহলে এতো কিছু জেনে লাভ কি হবে আপা?”
তিনি হেসে বললেন,,” আমার নাই তো কি হয়েছে হাতে ছেলের অভাব আছে নাকি।”
নাফিসা প্রচুর বিরক্ত হলেন। মধু বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছে। আর তার বিয়েই নাকি আবার এখানে কেউ ঠিক করতে চাইছে। কথা ঘুরিয়ে ফেললেন তিনি।

” ওসব বাদ দেন। আপনারা খাচ্ছেন না কেন একটা মিষ্টি অন্তত খান। ছেলের বিয়ের পাকা কথার মিষ্টি বলে কথা।”
বলেই নাফিসা তার মুখে একটা মিষ্টি ঢুকিয়ে দিলেন। কথার মোড় পরিবর্তন হয়ে গেছে মধু কে ফেলে তারা আবার আড্ডায় জমে গেল।

পরদিন তিন্নি, ফাহাদ, মধু ও রাহী রেডি হয়ে বাসায় থেকে বের হচ্ছিল। আজ রাহীর থেকে ওরা ট্রিট হিসেবে বাইরে খাবে। কীভাবে যেন ফাহাদ সব শুনে ফেলেছে তারপর থেকে পিছু নিয়েছে। রাহী আবার মনে মনে আরেক প্লান করেছে যার একটু ও জানে না এই তিনজন। তিনজন কে খাওয়াতে গিয়ে নিজের টাকা নষ্ট করবে নাকি তাইতে আড়ালে নাঈম কে খবর দিয়েছে। তার শালা, শালি রা ট্রিট চেয়েছে এখনি রেস্টুরেন্টে আসতে। তাইতো কাউকে মানা না করে উল্টো নিজেই সাজুগুজু করে রেডি হয়ে এসেছে। এদিকে তিন্নি বোনকে একটু জব্দ করতে চেয়েছিল বেশি খাবে টাকা উড়াবে।

কিন্তু বোনের মুখে চিন্তা নাই দেখে কপাল কুঁচকে মধু কে ফিসফিস করে বলল,,” দোস্ত আপু ভয় পাচ্ছে না কেন বলতো। তাকে চিন্তায় মুখটা বেজার করে রাখতে দেখব ভেবেছিলাম কিন্তু দেখ কত ফুর্তি নিয়ে সেজে যাচ্ছে। আপুর মতো কিপ্টা পার্সন ট্রিট দিতে যাচ্ছে তাও ফাহাদের মতো রাক্ষস সাথে নিয়ে এত খুশি মনে। আমি চিনতে পারছি না রে। আমার বোন বিয়ের খুশিতে পাগল হয়ে গেল নাকি!”

মধু রাহী কে মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বলল,,” ডাল মে কুচ তো কালা হে। আচ্ছা রাহী আপু আবার নাঈম ভাই কে খবর দেয়নি তো। দেখ কেমন সেজে গুজে যাচ্ছে।”
তিন্নি আর মধু এবার শিউর হয়ে গেল রাহী এমন কিছুই করেছে তাই এতো খুশি আর নিশ্চিন্ত মনে আছে। ওরা সবাই ড্রয়িংরুম হয়ে বের হচ্ছিল তখন কোথা থেকে সমুদ্র এসে উপস্থিত হলো।
আর জিজ্ঞেস করল,,” কিরে সবাই রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছিস?”

তিন্নি গিয়ে সবটা বলল। সব শুনে সমুদ্র রাহী কে বলল,,” কিরে বড় ভাইকে রেখে ট্রিট দিতে যাচ্ছিস। নট ফেয়ার রাহী।”
” আসলে সরি ভাইয়া” চুপ করে গেল রাহী।
” কোন সরি চলবে না আমি ও যাব তোদের সাথে ওয়েট কর রেডি হয়ে আসছি দশ মিনিটের মধ্যে।”

প্রেয়সী পর্ব ৮

সমুদ্র উপরে চলে গেল। রাহী মুখটা ভোঁতা করে বসে আছে। বড় ভাইয়ের সামনে নাঈমের সাথে কথা বলতেও লজ্জা লাগবে। ইশ ভাইয়ের আজকেই যাওয়া লাগল। মধু আর তিন্নি তাকিয়ে আছে রাহীর চুপসে যাওয়া মুখটার দিকে। দুই বান্ধবী রাহীর অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে।

প্রেয়সী পর্ব ১০