প্রেয়সী পর্ব ১০

প্রেয়সী পর্ব ১০
নন্দিনী নীলা

সমুদ্র যাবে বলেও শেষমেষ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। দশ মিনিট পর রেডি হয়ে এসেছিল ঠিকি এবং গাড়িতেও সাথেই ছিল। কিন্তু ওদের সাথে রেস্টুরেন্টে নামল না। ওদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল নিজ গন্তব্যে। তার ভাবভঙ্গি দেখে বুঝার উপায় ছিল না তার মনে কি ছিল। গাড়িতে থেকে নেমে রাহী বোকা চোখে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। সমুদ্র ভাইয়া আসবে তাই মেসেজ করে নাঈম কে আসতে বারণ করে দিয়েছে। এখন ভাইয়া ও ওদের বোকা বানিয়ে চলে গেল। হচ্ছে কি এসব। রাহী মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে।

ফাহাদ তিন্নি কে বলল,,” দেখলি ভাই কীভাবে আমাদের বোকা বানালো।”
মধু উত্তর দিয়ে বলল,,” এমন ভাব করে আসলো বুঝতেই পারিনি। তার লক্ষ্য এটা না অন্য জায়গা।”
তিন্নি রাহীর দিকে তাকিয়ে ছিল। ওর মুখটা থমথমে দেখে ও শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,,” নাঈম ভাইকে কি আসতে বারণ করে দিয়েছিস নাকি?”
রাহী চমকে তাকাল তিন্নির দিকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ওকে আমি কখন আসতে বলেছি আবার? কি সব বলছিস?” ঢোক গিলে বলল রাহী‌।
ফাহাদ বলল,,” আপু এখানে ঝগড়া না করে চলো ভেতরে যাই। আগে খাওয়া তারপর ঝগড়া।”
রাহী বলল,,” তোরা ভেতরে যা। আমি আসছি।”
তিন্নি সন্দেহ চোখে সুধাল,,” আবার আসতে বলবি নাকি?”

রাহী কটমট করে তাকাল তিন্নির মুখের দিকে। তিন্নি বলল,,” তোর যা খুশি কর আমরা ভেতরে বসছি।”
ওরা তিনজন ভেতরে গিয়ে একটা টেবিল দখল করে বসল। বিকেল টাইম তাই রেস্টুরেন্ট ফাঁকা নয়। প্রায় সকল টেবিল ফিলাপ করা। তিন্নি আর ফাহাদ কি খাবে। কত টাকা খরচ করাবে। সেসব নিয়ে কথা বলছে। ফাহাদ মেনু কার্ড দেখে সিলেক্ট করছে কি কি খাবে। তিন্নি ফাহাদের হাত থেকে টান দিয়ে নিয়ে নিজে দেখছে। ওদের কাড়াকাড়ির মাঝে মধু নিশ্চুপ বসে আছে।

ওদের দুজনের কাড়াকাড়ি থামল রাহীর সাথে নাঈম কে রেস্টুরেন্টের ভেতরে আসতে দেখে। মধু রাহী আর নাঈম এর থেকে চোখ সরিয়ে তিন্নি আর ফাহাদের দিকে তাকিয়ে দেখল দুজনে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। ওরা নাঈম কে এখানে একদম আসা করেনি। মুখ গোমড়া করে বসে আছে তিন্নি।

মধু নিজের হাসি আটকাতে চেয়ে ও পারছে না। মুখ চেপে ধরে হেসে উঠল। নাঈম আর রাহী এগিয়ে এসে বসল পাশাপাশি। নাঈম ওদের সবাইকে হাই দিল‌। ফাহাদ দুলাভাই বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। তিন্নি গোমড়া মুখো করে আছে। রাহী কে জব্দ করতে পারবে না তাই ওর মনটা খারাপ হয়ে গেছে। তাই তো খেলে ও না বেশি।
সন্ধ্যার আগেই ওদের বাসায় পৌঁছে দিল নাঈম নিজের গাড়ি করেই‌।

মধু দ্বিতীয় বারের মতো নিজের মায়ের নাম্বারে কল ডায়াল করল। কতদিন হয়ে গেল সবাইকে ছেড়ে এসেছে। যত‌ই তাদের প্রতি অভিমান হোক না কেন তাদের ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। ঢোক গিলে কানে ফোন ধরে বেলকনিতে বসে আছে। কল কেটে যাবে সেই শেষ মুহূর্তে ফোন রিসিভ হলো। অনেক দিন পর মমতাময়ী মায়ের কন্ঠস্বর ভেসে এল। মধুর কেন জানি কান্না পেয়ে গেল মায়ের আওয়াজ পেয়েই ফুঁপিয়ে উঠল। অস্ফুট স্বরে ‘আম্মু’ বলে উঠল। সাথে সাথে কান থেকে ফোন নামিয়ে কল কেটে দিল।

কল কাটার সাথে সাথেই কল বেজে উঠল। একবার নয় দুই বার নয় বারবার কল আসতে লাগল। মধু বুঝে গেল মা ওকে চিনে ফেলেছে। সর্বনাশ করে ফেলেছে ইমোশনাল হয়ে ধরা খেল। তাড়াতাড়ি ফোন অফ করে রুমে ফিরে এল। তিন্নি ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,” দোস্ত আমাদের রেজাল্ট নাকি এই মাসেই দিবে।”

মধু তিন্নির কথাকে পাত্তা দিল না ফোন রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ল। টেনশন এ ওর হাত পা কাঁপছে। ওভাবেই ঘুমিয়ে গেল। তিন্নি মধুকে নিশ্চুপ দেখে ওর বাহুতে ধাক্কা দিল। দেখল মধু ঘুমিয়ে গেছে। আজব, এতো তাড়াতাড়ি ঘুমায় কেউ?
মিতুল গুনে গুনে দশবার ফুয়াদের নাম্বারে কল ডায়াল করল। ফুয়াদ একবার ও রিসিভ করেনি। উল্টো ফোন অফ করে দিয়েছে। নাম্বার বন্ধ পাচ্ছে ও।

রাগে দুঃখে ফোন ছুড়ে মারতে ইচ্ছে করছে ওর। বান্দরবান থেকে আসার পর আর দুজনের দেখা হয়নি। এমনিতেও ফুয়াদের সাথে দেখা করা, লং ড্রাইভে যাওয়া এতো সহজ নয়। অনেক রিকোয়েস্ট করে এক দুইবার ওর সাথে ঘুরতে যেতে পেরেছে। সব সময় তিনি বিজি থাকে। কি এমন জব করে এতো ব্যস্ততা কিসের? তাও ওর কথায় কখনোই রাজি হয়না। ওকে রাজি করাতে সব সময় সমুদ্র বা নাফিসা আন্টির সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছে। কখনো একবার কলে ফোন রিসিভ ও করতে দেখেনি। ফিয়ান্সে ও তাও ওর সাথে এতো কিসের ভাব ও বুঝতে পারে না। মিতুল ফুয়াদের নাম্বারে কল দেওয়ার বৃথা চেষ্টা আর করল না।

যাকে কল দিলে ফুয়াদের খোঁজ নেওয়া যাবে তাকেই কল দিল।
সমুদ্র ফুয়াদ কে হঠাৎ ক্লাবে দেখে অবাক হয়ে এগিয়ে আসে। ওর হাতে ড্রিংকস এর গ্লাস। খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে এখন আর ওতো মাতাল হয় না। তাই তো অনেক ড্রিংকস করার পর ও মাতাল হয়নি। তার ভদ্র ছোট ভাইকে ক্লাবে দেখে চমকে এগিয়ে এসেছে।

” তুই এখানে?” চমকিত গলায় বলল সমুদ্র।
ফুয়াদ মুখের মাক্স খুলে বলল,,” চিনলে কিভাবে?”
” মাক্স পরে আমার চোখে ফাঁকি দিতে পারবি না ছোটো। তা তুই কবে থেকে এখানে আসার শুরু করলি তাও লুকিয়ে চুরিয়ে ব্যাপার কি?” জহুরি নজরে তাকিয়ে বলল সমুদ্র।

ফুয়াদ উত্তর না দিয়ে হাসল। তারপর আবার মাক্স পরে নিল। সমুদ্র কে নিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসল।
” রমেশ চন্দ্র নাকি এখানে আসবে তার নিউ গার্লফ্রেন্ড নিয়ে। একটু তার সাথে আলাপ করতে আসলাম। এই আরকি।” ফুয়াদ এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বলল। সমুদ্র বলল,,” একাই এসেছিস?”
” না প্রান্ত সাথে আছে।”
” ও কোথায়?”

ফুয়াদ আঙ্গুল তাক করে দেখাল। দুই টেবিল পরে একটা খোলামেলা পোশাকের মেয়ের সাথে বসে আছে প্রান্ত। দুজন কে দেখে মনে হচ্ছে তারা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড। তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত কিন্তু পুরোটাই দেখানো।
সমুদ্র নজর সরিয়ে তাকাল ফুয়াদের দিকে। আচমকা ওর ফোন বেজে উঠল পকেটে থেকে ফোন বের করে দেখল মিতুল কল করেছে। সমুদ্র ফোন থেকে নজর সরিয়ে তাকাল ফুয়াদের দিকে। ফুয়াদ নজর দরজার দিকে। তাকাচ্ছে একটু পর পর। কানে ব্লুটুথ লাগানো ফিসফিস করে কথা বলছে কারো সাথে। সেই কেউটা প্রান্ত ছাড়া কেউ নয়। এমন ভাবে মিশে আছে যেন প্রতিনিয়ত এখানে যাওয়া আশা চলে ওদের।

” তোর ফিয়ান্সে আমাকে কল দিচ্ছে কেন?” সমুদ্র বিরক্তিকর গলায় বলল।
ফুয়াদ সমুদ্রের ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করে বলল,,”তোমার সাথে হয়ত ডেট করতে চাচ্ছে। রিসিভ করে দেখো।”
সমুদ্র ফুয়াদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল,,” বড় ভাইয়ের সাথে মশকরা করছিস?”
” না তো। এতো বড় স্পর্ধা আমার আছে নাকি।”
কল কেটে আবার বেজে উঠেছে।‌ সমুদ্র ফোন রিসিভ করল।

ফুয়াদ দরজা দিয়ে রমেশ চন্দ্র কে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখেই ফট করে উঠে দাঁড়ায়। একটা লাল শট টপস পরা মেয়ে অনেকক্ষণ ধরেই ওকে ইশারা করছিল। ওর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় মেতেছিল। ও উঠেই মেয়েটার বাহু ধরে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। মেয়েটা খুশিতেই ফুয়াদের গলায় জড়িয়ে ধরে ঠোঁট চোখা করে চুমু খেতে চায়। হাত উঁচিয়ে ফুয়াদের মাক্স খুলে নিতে চাইছে। ফুয়াদ মেয়েটির কোমর জড়িয়ে ধরে ড্রান্স ফ্লোরে নিয়ে যায়। মেয়েটি বারবার ওর মুখের মাক্স সরাতে চাওয়াতে এক ধমক ও দেয় মেয়েটি চমকে হাত সরিয়ে নেয়। রমেশ চন্দ্র গার্লফ্রেন্ড নিয়ে নাচতেছে। প্রান্ত ও উঠে এসেছে সেই মেয়েটাকে নিয়ে। উপযুক্ত প্রমাণ না নিয়েই আজ ফিরবে না দুজন।

” হ্যালো মিতুল, হাউ আর ইউ?”
“আমি ভালো নেই সমুদ্র।”
সমুদ্র কারণ জিজ্ঞাসা করল।” কেন কি হয়েছে তোমার। এনি প্রবলেম?”

” হ্যা অনেক প্রবলেম। জানো ফুয়াদ আজ একবার ও আমার সাথে কথা বলেনি। এতো বার কল দিলাম ও রিসিভ করল না আবার ফোন অফ করে রেখেছে। এমন কেন করছে আমার সাথে। ও কি আমার সাথে কথা বলতে বিরক্ত হয়? ও কেন ফোন অফ করল। ও কোথায় আছে কি করছে একটু বলবে প্লিজ?” অভিযোগ সুরে সব কথা বলল মিতুল। সমুদ্র মনোযোগ দিয়ে শুনল। মিতুল সমুদ্র কে বন্ধুর মতো ভাবে তাই তুমি সম্বোধন‌ই করে থাকে। ফুয়াদের থেকেও সমুদ্রের সাথে মিতুলের বেশি কথা হয়। মিতুলের সকল অভিযোগ ফুয়াদ না শুনলেও সমুদ্র শুনে। মেয়েটা ওর ভাইকে খুব ভালোবাসে কিন্তু গাধা টা ওকে নিয়ে সিরিয়াস নয়।

সমুদ্র মিতুলের মুখে ফুয়াদ কি করছে শুনে তাকাল ফুয়াদের দিকে‌। ফুয়াদ একটা মেয়ের সাথে ডান্স করছে। খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে‌। দেখে মনে হচ্ছে না ওর ভাই জীবনের প্রথম কোন মেয়ের সাথে এমন ভাবে ক্লাবে ডান্স করছে। মনে হচ্ছে ফুয়াদ এসব করেই বেড়ায়। কি ভাল অভিনয় করতে পারে। এই ছেলে জার্নালিস্ট না হয়ে অভিনেতা হলে দারুন মানাতো।
” কি হলো সমুদ্র বলো ফুয়াদ এখন কি করছে? ওর সাথে তোমার কথা হয়েছে কি?”

সমুদ্র চুপ করে আছে। কি বলবে মিতুল কে? তোমার ফিয়ান্সে তোমায় রেখে আরেক মেয়ের সাথে নাচতে ব্যস্ত ক্লাবে?
” না আমার সাথে কথা কীভাবে হবে বলো। তুমি তো বললে ছোটো নাকি ফোন অফ করে রাখছে। ফোন অফ থাকলে কি কথা বলা সম্ভব? আমি তো ক্লাবে আছি ওর খবর তো আমার কাছে নাই মিতুল। সো সরি কোন সাহায্য করতে পারলাম না।”

মিতুল ফুঁপিয়ে উঠে বলল,,” আমায় খুব কষ্ট হচ্ছে সমুদ্র। ফুয়াদ আমাকে এমন‌ কষ্ট না‌ দিলেও পারত। দুইদিন পর আমার বার্থডে আর ও আমাকে এভাবে ইগনোর করছে। ও নিশ্চিত বার্থডের কথাও ভুলে গেছে।”
” আচ্ছা কেঁদো না তুমি। ভুলে গেলে আমি না হয় মনে করিয়ে দেব নি।” সমুদ্র সান্ত্বনা দেওয়ার সুরে বলল।

” না তুমি কিছুই বলবে না। আমিও দেখতে চাই ফুয়াদ নিজে থেকে স্মরণ করতে পারে নাকি।” বলেই মিতুল কল কেটে দিল। সমুদ্র একটা লম্বা শ্বাস ফেলে ডান্স ফ্লোরে তাকাল। ফুয়াদ, প্রান্ত ও রমেশ চন্দ্র কেউ নাই সেখানে। যে দুজন মেয়ের সাথে প্রান্ত আর ফুয়াদ নাচতে ছিল দুজনেই অন্য পার্টনারের সাথে নাচতেছে।
” এরা আবার কোথায় গেল?” বিড়বিড় করল সমুদ্র।

প্রেয়সী পর্ব ৯

কয়েকটা কমেন্ট দেখে হতবাক হয়েছি। কেউ বলছেন ফুয়াদ কে নায়ক না দিলে গল্প পড়বেন না, কেউ বলছেন সমুদ্র নায়ক না হলে গল্প পড়ব না। এটা কেমন দ্বারা কথা বার্তা? আপনাদের পছন্দ একজন কে লাগতেই পারে তাই বলে এমন থ্রেট দেওয়া টাকি উচিত। গল্প শেষ পর্যন্ত পড়া পর্যন্ত কি ধৈর্য রাখতে পারেন না? আমি যেহেতু গল্পটা সাজিয়েছি তাহলে অবশ্যই আপনাদের পছন্দ হবে সেটা ভেবেই সাজিয়েছি আমার উপর বিশ্বাস রেখে পড়ুন সন্তুষ্ট হবেন ইনশাআল্লাহ। আর মধুর নায়ক যেই হোক না কেন এই গল্পে সমুদ্র আর ফুয়াদ দুজনের মেইন চরিত্র‌। আর একটু টুয়েস্ট না থাকলে আপনাদের ও বোরিং লাগবে সব গল্পে তো প্রথমে বুঝে যান এটায় না হয় একটু চিন্তাভাবনা করেন তবেই না ভালো লাগবে। সবাই নিজেদের মন্তব্য দিবেন ছোট ছোট নাইস নেক্সট না লিখে একটু বড় কমেন্ট করার চেষ্টা করবেন। রিপ্লাই করতে না পারলেও সবার কমেন্ট চেক করি প্রতিনিয়ত। আজ আগেই গল্প দিয়ে দিলাম এবার সবার বড় কমেন্ট এর আশা করতেই পারি কি বলে পাঠকমহল??

প্রেয়সী পর্ব ১১