ফাঁদের অন্তরালে পর্ব ২

ফাঁদের অন্তরালে পর্ব ২
লেখকঃ আবীর হোসেন।

অবনী জানে অবনী যে প্ল্যান করেছে সেটা সাকসেসফুল না হলে পেটের সন্তান সহ নিজে এই কিডন্যাপারের হাতে প্রান হারাবে। তবে বাঁচার জন্য প্রাণ বাজি রেখে কিছু তো একটা করতেই হবে।
অবনী বললো– আমার পার্সব্যাগটা কোথায় ওটা নিয়ে আসুন, আমি চেকে সাইন করে দিচ্ছি, আপনার লোকজন গিয়ে সেই চেক দিয়ে টাকা তোলার পরেই নাহয় আমাকে ছেড়ে দিবেন। বিশ্বাস রাখতে পারেন।
অবনীর কথায় অবিশ্বাস করার মতো কিছু নেই দেখে একটু দূরে একটা টেবিলের ওপর থেকে পার্সব্যাগটা এনে কিডন্যাপার চেক করে দেখলো আসলেই একটা চেকবই রয়েছে।

চেকবইটা দিয়েই অবনী ফাঁদ পেতেছে, যদিও ব্যংকে অবনীর সামান্য কিছু টাকা রয়েছে তবুও ব্যাঙ্কে না যাওয়া পর্যন্ত তো আর কেউ বুঝতে পারবেনা।
কিডন্যাপার বললো– ওকে সই করে টাকার অংক বসিয়ে দাও।
কিডন্যাপার অবনীর দিকে তাকিয়ে বললো– ও আচ্ছা তোমার হাত পা তো বাঁধা রয়েছে।
কিডন্যাপার শুধু অবনীর হাতের বাঁধন খুলে অবনীর সামনে ঝুকে চেকবই দিয়ে বললো জলদি করো।
অবনী বললো– কলম ছাড়া সই কীভাবে করবো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কিডন্যাপার রুমে কোথাও কলম খুঁজে না পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
একটু পরে একটা কলম নিয়ে ফিরে এসে কিডন্যাপার অবনীর সামনে ঝুকে কলমটা দিয়ে বললো জলদি করে সই করে দে সময় কম।
অবনী কলমটা নিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে এক হাতে কিডন্যাপারের মাথার চুল শক্ত করে ধরে অন্য হাত দিয়ে কলমটা ঢুকিয়ে দিলো কিডন্যাপারের গলায়।

অবনীকে ধাক্কা দিয়ে চেয়ার সহ ফেলে দিয়ে কিডন্যাপার নিজের গলা ধরে ফ্লোরে পড়ে গেল ধপাৎ করে।
অবনী দেখলো কাছেই কিডন্যাপারের সেই ছুরিটা পড়ে আছে। হাত দিয়ে ছুরিটা এনে চেয়ারের সাথে নিজের বাঁধনের দাড়ি কেটে উঠে দাড়ালো।

কিডন্যাপারের গলা থেকে কিডন্যাপার নিজে নিজে কলমটা টেনে বের করতেই গলগল করে র*ক্ত বের হতেই র*ক্ত থামাতে নিজেই নিজের গলা চেপে ধরলো। চিৎকার করবে তার আর উপায় নেই। কিছু বলতে চেয়েও ব্যর্থ হচ্ছে কারণ কলমের আঘাতে ফুটো হওয়া স্থান থেকে হাওয়া ফ্যাসফ্যাস করে বেরিয়ে যাচ্ছে মুখে আর শব্দ উচ্চারিত হচ্ছে না। এক হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে অন্য হাত দিয়ে অবনীর দিকে পিস্তল তাক করতেই অবনী বিদ্যুৎ গতিতে চেয়ারটা তুলে সজোরে আঘাত করলো কিডন্যাপারের নাক মুখ বরাবর।

কিডন্যাপার নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। অবনী হাটু গেড়ে কিডন্যাপারের পাশে বসে কলার ধরে বললো– শুধুমাত্র আমার গায়ে আঘাত করলে হয়তো তোকে প্রাণে মারতাম না। কিন্তু আমার পেটে লাথি মানে আমার সন্তানকে আঘাত করার জন্য তোর মৃত্যু অবধারিত।

পিস্তলটা হাতে নিয়ে কিডন্যাপারের মাথায় নল ঠেকিয়ে গুলি করতে গিয়ে আবার থেমে গেল অবনী এই ভেবে যে গুলির শব্দ শুনলে নিচের পাহারাদার গুন্ডাগুলো ওপরে চলে আসবে এবং তাতে আরও বিপদে পড়তে হবে।
এদিকে এতক্ষণে কিডন্যাপারের দেহ পুরোপুরি নিস্তেজ, নাকের সামনে হাত দিয়ে অবনী দেখলো নিশ্বাস বন্ধ। কিডন্যাপার ইতিমধ্যে মারা গেছে।

অবনী জলদি করে কিডন্যাপারের পকেট থেকে তার ফোন বের করে কিডন্যাপারের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ফোন আনলক করে সেটিংস এ গিয়ে আগের ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিমুভ করে নিজের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেট করে নেয়।
এবার এখান থেকে বের হবার পালা কিন্তু নিচে তো পাহারাদার গুন্ডাগুলো রয়েছে। কিডন্যাপার বলেছিল তার ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাহারাদার গুন্ডাগুলো রয়েছে এবং ডাকলে সবাই চলে আসবে।

অবনীর মাথায় চট করে বুদ্ধির উদয় হলো। সেই গ্রুপে গিয়ে অবনী টেক্সট লিখলো– সবাই চারতলার যেকোনো একটা রুমে এসে বসো জরুরি মিটিং আছে।
একটু পরেই নিচ থেকে আসা পায়ের শব্দ শুনে বুঝতে পারলো গুন্ডাগুলো মেসেজ পেয়ে উপরে আসতে শুরু করেছে।
কিছুক্ষণ পরে চুপচাপ নিঃশব্দ। অবনী সিড়ির গোড়ায় গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো সবাই একটা রুমে জড়ো হয়ে বসে আছে।
অবনী আবার মেসেজ লিখলো– রুমের ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে বসো সবাই।

অবনী আড়াল থেকে দেখলো একজন উঠে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। এবার দ্রুত পায়ে পাঁচতলাট সিড়ি বেয়ে চারতলায় নেমে সেই রুমের দরজা বাইরে থেকে লক করে সঙ্গে সঙ্গে অবনী মেসেজ লিখলো– কিছুক্ষণের জন্য বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলাম, বিশ মিনিট পরে এর কারণ বলবো।
ভেতরে বসা গুন্ডাদের বিষয়টি রহস্যময় মনে হলেও ভাবলো মাত্র বিশ মিনিট তো, ব্যাপার না। তারপর বোঝা যাবে কি হচ্ছে। সবাই চুপ করে বসে রইলো।

দ্রুত গতিতে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে নিচতলায় এসে থমকে দাড়ালো অবনী। একজন পাহারাদার অবনীর দিকে পিস্তল তাক করে রহস্যময় হাসি হেসে বললো– ম্যাডাম এখান থেকে পালানো এতটা সহজ নয় মোটেই, সব পাহারাদারকে একত্রে কোথাও ডাকলেও দু একজন থেকে যায় ডিউটিতে যেটা আপনি আন্দাজ করতে পারেননি।
অবনী কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

হঠাৎ করে অবনীর পিঠে পেছন থেকে একজন লাথি মারতেই অবনী ছিটকে সামনের পিস্তল তাক করা পাহারাদারের কাছে এসে চোখের পলকে পিস্তলটা হাতে নিয়ে তার গলায় বিদ্যুৎ গতিতে একটা ঘুসি মারতেই গলা চেপে ধরে পাহারাদার মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, এবং গলা ফেটে রক্ত বেরিয়ে একাকার।
যে পাহারাদার পেছন থেকে লাথি মেরেছিল সে এগিয়ে আসতেই অবনী পিস্তল তুলে পরাপর দুইটা বুলেট ঢুকিয়ে দিলো তার মস্তিষ্কে।

গুলির শব্দ পেয়ে উপরে রুমে বন্দী গুন্ডাগুলোর বুঝতে বাকী নেই যে বড় ধরনের কিছু ঘটেছে। তারা দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করছে।
অবনী দেখলো বাড়ির বাইরেটা ঘন জঙ্গল, তার ভেতর দিয়ে সরু রাস্তা। নিশ্চয়ই এই রাস্তা দিয়ে লোকালয়ে পৌছানো যাবে।

একটু দূরে কয়েকটা বাইক স্ট্যান্ডের ওপর রাখা। অবনী দৌড়ে একটা বাইকে উঠে স্টার্ট করে ছুটে চললো ফুল স্পিডে।
গুন্ডারা দরজা ভেঙ্গে বাইরে বেরিয়ে নিচে নেমে এসে সবাই বাইকে উঠে অবনীকে ধাওয়া করতে লাগলো।
অবনী এতক্ষণে অনেকটা দূর এগিয়ে এসেছে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়, বাইকের তেল ফুরিয়ে গেল।
অবনী বাইক ফেলে পাশের গভীর জঙ্গলের ভেতর দৌড়ে ঢুকে পড়লো। কিছুক্ষন পরে বাকি গুন্ডারা এসে বাইক রাস্তায় পড়ে আছে দেখে বুঝলো অবনী জঙ্গলে লুকিয়েছে। তারাও আলাদা আলাদা হয়ে ঢুকে পড়লো জঙ্গলে অবনীকে খুঁজে বের করতে।

এদিকে অফিসে মন খারাপ করে বসে আছে আয়ান। সকাল থেকে অবনীর ফোন বন্ধ, কল ঢুকছে না। মানসিক চাপে এবং অতিরিক্ত রাগে অবনীকে ঐভাবে কথাগুলো বলায় প্রচন্ড অপরাধবোধে ভুগছে আয়ান। কথাগুলো ওভাবে না বলে অন্যভাবেও বলা যেতে পারতো। আয়ান যেটা করেছে সেটা অন্য কারো ব্ল্যাকমেইল এর শিকার হয়ে সেটা আয়ান ছাড়া কেউ জানেনা। আয়ান অবনীর কাছে ক্ষমা চাইবে বলেই সকাল থেকে ফোনের পরে ফোন করে অবনীর মোবাইল বন্ধ পেয়ে আরও অস্থির হয়ে উঠেছে। অবনীকে যে বাড়িতে বাসা ভাড়া করে রেখেছিল সেই বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো অবনী বাসায় নেই। তাহলে কি অবনী রাগে অভিমানে কোথাও চলে গেল?!

হঠাৎ আয়ানের অফিস-রুমে আয়ানের খুব কাছের বন্ধু মজনু ঢুকে আয়ানকে বিষন্ন মনে বসে আছে দেখে বললো– গাড়ি বাড়ি টাকাপয়সায় যে সবসময় সুখ থাকেনা সেটা এই মূহুর্তে তোকে দেখে শতভাগ সত্যি মনে হচ্ছে বন্ধু। তা তোর অসুখের কারণটা কি?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আয়ান বললো– জীবনে এমন কিছু পরিস্থিতি আসে যখন মানুষের সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় মজনু।
– তাতে কি, রাস্তা বন্ধ হলে হেলিকপ্টার ভাড়া করে উড়ে যা, টাকা থাকতে টেনশন কি, থেমে থাকা যাবেনা– বলে হা হা হা করে হেসে ফেললো মজনু।

মজনুর কথায় আয়ানও হেসে ফেলে বললো– তোর কথায় না হেসে থাকতে পারাটা অসম্ভব দোস্ত।
মজনু বললো– এবার তাহলে বল সমস্যাটা কি।
আয়ান কিছু বলবে ঠিক এমন সময় চিফ একাউন্টেন্ড মারিয়া ঢুকে আয়ানের মুখের কথা টেনে নিয়ে বললো– আসলে আমার অনুপস্থিতিতে আয়ান ভীষণ একা ফিল করে তো, তাই।
তারপর মারিয়া আয়ানের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে আয়ানের কাঁধে হাত রেখে বললো– চলো বেবি আমরা লং ড্রাইভে বের হই, তোমার মন ভালো হয়ে যাবে।

মজনু মারিয়াকে বললো– এত সর্ট ড্রেস পরে লং-ড্রাইভে যাওয়া ঠিক হবেনা বোধহয় ম্যাডাম, বন্ধুর প্রাইভেট সম্পত্তি অন্যরা দেখবে এটা কি ঠিক।
মারিয়া মুখ বেকিয়ে মজনুকে বললো– আনস্মার্ট কোথাকার! সুন্দরী স্মার্ট ওয়েল এডুকেটেড মেয়েদের সাথে ওসব গ্রাম্য শাড়ী, থ্রিপিস বেমানান।
মজনু হেসে ফেলে বললো– এক্সকিউজ-মি ম্যাডাম, গ্রাম্য পোশাকে পিওর বাঙালী, আপনার মতো বিগড়ে যাওয়া অতি শিক্ষিতরা তার মূল্য বুঝবে না।

– ওহ! ডিজগাস্টিং বলে– নাক সিটকে অফিস রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে মারিয়া আয়ানকে বললো– বেবি আমি নিচে গাড়িতে তোমার জন্য অপেক্ষা করতেছি, জলদি এসো।
মারিয়া বেরিয়ে যাবার পরে – আয়ান বেবি তোমার ফিডার কই– বলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো মজনু।
মজনুর কথায় আয়ানও হেসে ফেললো।

মজনু হাসি থামিয়ে আয়ানকে বললো– বাসায় বিরিয়ানি রেখে বাইরের ওয়ান টাইম বার্গারে আসক্ত হলি কবে দোস্ত?
মুহূর্তে আয়ানের মুখটা মলিন হয়ে গেল।
মজনু আয়ানের হাতে হাত রেখে বললো– কি হয়েছে বলবি তো আমাকে, বিপদে যদি তোর উপকার করতে না পারি তাহলে কেমন বন্ধু হলাম।

আয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো– এই মারিয়া মেয়েটা আমাকে গভীর ফাঁদে ফেলেছে মজনু, না পারছি ওকে সরিয়ে দিতে আর না পারছি অবনীকে বুকে টেনে নিতে। আমি কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
মজনু উঠে আয়ানের পাশে দাড়িয়ে কাঁধে চাপড় দিয়ে বললো– অবনী হঠাৎ কোথায় চলে গেছে জানিনা, হয়তো রাগ করে চলে গেল। সবকিছু ঐ মারিয়া মেয়েটার জন্য।
মজনু বললো– মারিয়াকে এত গুরুত্ব দেবার কি আছে, বের করে দে ওকে চাকরি থেকে, ব্যস হয়ে গেল।
আয়ান বললো– ঐ যে বললাম আমাকে জটিল ফাঁদে ফেলেছে, আর সেই ফাঁদের অন্তরালে লুকিয়ে আছে আরও ভয়ংকর কিছু।

ফাঁদের অন্তরালে পর্ব ১

মজনু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আয়ানের মুখের দিকে।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে গ্যালারিতে ঢুকে একটা ছবি দেখালো আয়ান মজনুকে। ছবিটা দেখে মজনুর চোখ কপালে উঠলো। ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে…

ফাঁদের অন্তরালে পর্ব ৩