বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ১৩

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ১৩
জাওয়াদ জামী

আজ রাতেও কুহুর দুচোখে ঘুম আসেনা।
জানালায় দাঁড়িয়ে জীবনের হিসাবনিকেশ করছে।
এর আগেও অনেক ছেলেই ওকে ভালোবাসার কথা বলেছে। অনেকেই খারাপ ইংগিত করেছে।অনেকের চোখেই দেখেছে লালসা কিংবা কামনা।

কিন্তু আজ অবধি তাহমিদের মত করে কেউ ওকে বলেনি ‘ ভালোবাসি ‘। কেউই এভাবে চমকে দেয়নি। হ্যাঁ সবুজ ওকে বারবার চমকে দিয়েছে ওর নোংরা ছোঁয়া দিয়ে। কখনোসখনো বাজে ইংগিত করেছে। কিন্তু সবুজের ছোঁয়ার সাথে তাহমিদের ছোঁয়ার তফাৎ আকাশপাতাল। তাহমিদের কথার মধ্যে কোনও লালসা ছিলনা। ওর ছোঁয়ায় কোন নোংরামো ছিলনা। তবুও কুহু তাহমিদকে ভালোবাসার কথা ভাবতে পারছেনা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ওর কেবলই মনে হচ্ছে, ওর জন্য আবার সবার সাথে সম্পর্ক নষ্ট হবেনাতো? কত বছর পর বাবা তার বোনদের ফিরে পেয়েছে। বাবার মুখে হাসি দেখতে পেয়েছে। এখন বাবার চিকিৎসাও হবে। কিন্তু যদি ও তাহমিদের সাথে সম্পর্কে জড়ায়, আর যদি এ বাড়ির কেউ তা মেনে না নেয়! বাবা-মা’র সেই পুরোনো কথা আবার যদি নতুন করে সামনে আসে! যদি ওর জন্য বাবাকে অপমানিত হতে হয়! কুহু আর কিছুই ভাবতে পারছেনা। তবে ও বেশ বুঝতে পারছে, এ বাড়িতে ওর আর থাকা হচ্ছেনা। তাহমিদের সামনে ও আর যাবেনা। উনাকে এড়িয়ে চলতে হবে, যে কয়দিন এই বাড়িতে থাকবে।
সকালে খাবার টেবিলে কুহুকে না দেখে তাহমিদের মন খারাপ হয়ে যায়। এদিকসেদিক তাকিয়ে দেখল কুহু আছে কিনা। কিন্তু ওকে হতাশ হতে হয়। কোনমতে অল্প কিছু মুখে দিয়ে বেরিয়ে যায় মেডিকেলের উদ্দেশ্যে।

তাহমিদ যাওয়ার অনেকক্ষণ পর কুহু নিচে আসে। অল্প কিছু খেয়ে, ফুপুকে জানায় আজ ছোট ফুপুর কাছে যেতে চায়। গ্রামে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ছোট ফুপুর বাসাতেই থাকবে। আফরোজা নাজনীন এতে আপত্তি করলেন। মাঝখানে আর দুইদিন আছে। এই দুইদিন তিনি কুহুকে অন্য কোথাও থাকতে দিতে চাইছেননা। কিন্তু কুহু বলে, ওর ছোট ফুপুকে দেখতে ইচ্ছে করছে। তাই আফরোজা নাজনীন আর অমত করেননা। তিনি আনানকে ফোন করে দেন, বিকেলে কোচিং শেষ হলে সে যেন কুহুকে ওর বাসায় নিয়ে যায়।

রাতে তাহমিদ বাসায় এসে কুহুকে দেখলনা। ও কুহুকে দেখার জন্য ছটফট করছে। খাওয়ার পর কোন একটা অযুহাতে সিক্তার রুমের দরজায় এসে ওকে ডাক দেয়।
” সিক্ত, আছিস? ”
কয়েক সেকেন্ড পরেই সিক্তা দরজা খুলে বেরিয়ে আসে।
” ভাইয়া, তুমি! কোন দরকার? ”
” কি করছিলি? পড়া বাদ দিয়ে দুই বোন মিলে গল্প করছিস? ”
” আমিতো আজ একা আছি। তাই গল্প করারও সুযোগ নেই। ”
” একা কেন! সে কোথায়? ”

” কুহু ছোট খালামনির বাসায় গেছে। তুমি কি কিছু বলবে, ভাইয়া? ”
” সে হঠাৎ ঐ বাসায় গেল কেন! এখানে কি ওর কোন সমস্যা হচ্ছিল? ”
” ওর নাকি খালামনিকে দেখতে ইচ্ছে করছিল। তাই গেছে। ”
” আচ্ছা, শোন তোর কাছে ড্যান ব্রাউনের কোন বই আছে? থাকলে আমাকে দে। ”
সিক্তার কথা শুনে তাহমিদের মন খারাপ হয়ে গেছে। ও এখানে কুহুর খোঁজ নিতে এসেছে সেটা বুঝতে না দিয়ে সিক্তাকে বইয়ের কথা বলে।

” তুমি ভেতরে এস। আমি বই দিচ্ছি। ”
” শোন, তুই বই নিয়ে আমার রুমে আয়। তোর জন্য চকলেট এনেছি। ”
তাহমিদ চলে গেলে, সিক্তা বই নিয়ে তাহমিদের রুমে যায়।
তাহমিদের ভিষণ রাগ হচ্ছে। ওর বারবার মনে হচ্ছে, মেয়েটা ওকে না জানিয়েই চলে গেল! কেন ও এমন করল! একটিবার জানালে কি হত। ও সিদ্ধান্ত নেয় আগামীকাল একবার আনানের বাসায় যাবে। মেয়েটাকে না দেখলে ও ভালো থাকবেনা। ওর ভালো থাকার টনিক কুহু। সারাটা রাত ছটফট করে ভোরের দিকে ঘুমায়।
পরদিন সারাদিন মেডিকেলে ব্যস্ত সময় পার করে, রাত বারোটার দিকে বাসায় আসে তাহমিদ। ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও কুহুর কাছে যেতে পারেনা।

রাতে বাসায় এসে ওর বুকটা খাঁ খাঁ করছে। সারাদিন কাজের চাপে কুহুর জন্য কষ্ট হলেও রুগীদের কথা ভেবে নিজেকে শান্ত রেখেছে। কিন্তু বাসায় এসে একা রুমে শূন্যতা ওকে গ্রাস করছে। শুধু মনে হচ্ছে ও একা, ভিষণ একা।
” আজ যে করেই হোক আমাকে ওর কাছে যেতে হবে। ওকে একটিবার না দেখলে আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যায়। যে অন্ধকারে থাকে শুধুই দমবন্ধকর শূন্যতা। আর সেই ঘূর্ণিবর্তে আমি অনবরত পাক খেতে থাকি। যেখান থেকে পরিত্রান পেতে আমার ওকেই প্রয়োজন। ”

তাহমিদ সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের সাথে কথা বলছে। ওর চোখের কোনে অশ্রুরা এসে ভীড় জমিয়েছে।
কুহু কোচিং থেকে এসে ফুপুর সাথে রান্নাঘরে টুকটাক কাজ করছে। শাহনাজ সুলতানা অনেকবার নিষেধ করলেও ও শোনেনি। মাঝেমধ্যে আরোশি এসে ওকে টানছে রুমে যেয়ে গল্প করবে বলে। কিন্তু কুহু ওর কথা পাত্তা না দিয়ে কাজ করতে থাকে। কারন ফুপুর শরীরটা ভালো নয়। তার কোমড়ের ব্যথ্যা বেড়েছে।

এই অবস্থায় ফুপুকে কাজ করতে দেখে ওর খারাপ লাগছে। আরোশিও ওর মা’কে মাঝেমধ্যে সাহায্যে করছে। কিন্তু সাহায্যের থেকে গল্প বেশি করছে আর জিনিসপত্র নষ্ট করছে। তাই শাহনাজ সুলতানা ওকে ধমকে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ও একটু পরপর কুহুকে ডাকতে আসছে।

তাহমিদ সন্ধ্যার পর ওটিতে ঢুকেছে। ওটি সেড়ে রুগীকে পর্যবেক্ষনে রেখে ও নিজেও ক্লিনিকে থেকে যায়। ও প্রতি সপ্তাহের সোমবার এই ক্লিনিকে বসে। রুগীর কন্ডিশন খারাপ থাকায় ও নিজেই রুগীর জ্ঞান না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এছাড়াও আরেকটা ওটি করতে হবে রাত বারোটার দিকে। রুগীর অভিভাবক অনুপস্থিত তাই দেরি হচ্ছে। তবে রুগির মেয়ে জানিয়েছে তার বাবা রাস্তায় আছে, সে বারোটার আগেই চলে আসবে। আজও ওর আনানের বাসায় যাওয়া হবেনা ভাবতেই বুকের ভিতর শূন্যতা অনুভব করে।
রাত এগারোটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে আনানের কাছে ফোন দেয় তাহমিদ।

” ভাই, এই রাত-বিরেতে আমাকে ফোন দিয়ে ব্লাড প্রেশার বাড়িয়ে দাও কেন! তুমি সমত্ত একজন পুরুষ। কোথায় বিয়ে করে বউকে জ্বালাবে, তা না করে আমার মত অবলা একটা ছেলেকে জ্বালাও। বউ তোমার জ্বালায় অস্থির হয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবে, তখন তোমার কালো মুখ দেখে আমি মজা নিব। কিন্তু না তোমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই দেখিনা। আর দুই বছর গেলে তোমার জন্য কোন মেয়ে পাবেনা খালামনি। ”

” বেয়াদব ছেলে, আমাকে শূন্যতার সাগরে ডুবিয়ে এখন মজা নিস? আমার এই পরিস্থিতির জন্য একমাত্র তুই-ই দায়ী। আমাকে সম্পদকে নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে আবার আমাকেই জ্ঞান দিস? আমার সম্পদ যদি আমি কালকের ভেতর ফিরে না পাই, তবে তোর চৌদ্দটা আমি বাজাব। সবকিছু শুরুর আগেই তুই শেষ করে দিচ্ছিস! ”
” ও ভাই, আমি কি করলাম! তোমার কোন সম্পদ আমি বাসায় নিয়ে এনেছি! তোমার নিজের রুম আর রুমের আসবাব ছাড়া তোমার আর কোন সম্পদতো আমি দেখিনা। আমি তোমার রুমে যাই ঠিকই কিন্তু কোন কিছুতে কখনোই হাত দিইনা। তাই আমাকে অযথা দোষী করোনা। ” আনানের মুখটা ছোট হয়ে গেছে।

” আমার রুমের সবচেয়ে দামী জিনিসটাই তুই নিয়ে গেছিস, ইডিয়ট। তোর ভাগ্য ভালো যে আমার সম্পদ এখনো আমার রুমে স্থায়ী হয়নি। একবার সম্পদ আমার রুমে স্থায়ী হোক, তখন বুঝবি মজা। আমার অনুমতি ছাড়া তাকে তুই এক ইঞ্চিও নড়াতে পারবিনা। ”
” ভাই, মানছি তোমরা ধনী। তোমার রুমে সব ইউনিক জিনিসপত্র আছে। কি তাই বলে আমাকে এভাবে অপদস্ত করোনা। আমি তোমার সম্পদ ছুঁয়েও দেখিনি। ”

” চুপ ইডিয়ট। তুই আমার সম্পদ ছুঁয়ে দিবি কেন? যাকে না ছুঁয়েও সাথে নেয়া যায়, তাকে অযথাই ছুঁতে যাবি কেন! তাকে ছোঁয়ার অধিকার শুধুই আমার। সাবধান যদি তার দিকে ভুল করেও হাত বাড়িয়েছিস, তবে তোর হাত আমি ভে’ঙে দিব। ”
” তোমার সম্পদ না ছুঁলে আমি নিয়ে আসলাম কেমন করে! আল্লাহ আমাকে রক্ষা কর। ” এবার আনানের নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।
” কি করছিস তুই? বাসার সবাই কেমন আছে? কি করছে সবাই? ”
” বই নিয়ে বসেছিলাম। বাসার সবাই ভালো আছে। সবাই খেয়েদেয়ে নিজের রুমে ঢুকেছে। কিন্তু তুমি সবার খবর নিতেই এই রাতে ফোন দিয়েছ! ”

” আমি ছাড়া আর কে খবর নিবে? জামাই হিসেবে আমি পার্ফেক্ট এটা সবসময়ই মনে রাখবি। আর কিছুদিন যাক, দেখবি আমাকে নিয়ে তোর গর্ব হবে। আচ্ছা শোন, আমি রাখছি। একটা ওটি আছে। আমার সম্পদকে দেখে রাখবি বুঝলি? মনে রাখিস, তার কোন অযত্ন আমি মানবনা। ”
আনানকে আরেকবার হতভম্ব করে দিয়ে ফোন রাখে তাহমিদ।
এদিকে আনান ফোনের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে তাহমিদের কথার মর্মার্থ। অনেক চেষ্টার পর ও ব্যর্থ হয় তাহমিদের সম্পদ কি তা খুঁজে পেতে।

আজ কুহুরা গ্রামে যাবে। নাজমা পারভিন গতকাল বিকেলে পরিবার নিয়ে বড় বোনের বাসায় এসেছেন। ওরা পাঁচজন একটা গাড়িতে করে আফরোজা নাজনীনের বাসায় যেয়ে, সেখান থেকে আরও কয়েকটা গাড়িতে সবাই রওনা দিবে৷
সকাল দশটায় ওরা ‘কুঞ্জছায়া’য় এসে পৌঁছে। কুহু হাসিমুখেই ভেতরে ঢোকে। কারন ও জানে তাহমিদ বাসায় নেই, তাই সবার সামনে ওকে অপ্রস্তুত হতে হবেনা। কিন্তু ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই ওর হাসি গায়েব হয়ে যায়। তাহমিদ সোফায় বসে মেজো ফুপুর সাথে কথা বলছে।

নাজমা পারভিন ওকে দেখেই হাসিমুখে এগিয়ে আসেন।
” কেমন আছিস, কুহুতান? ”
” আমি ভালো আছি, ফুপু। তুমি কেমন আছো? ”
” আমিও ভালো আছি। তুই আমার সাথে আয়। আমার ছেলে-মেয়ে আর তোর ফুপার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। ” নাজমা পারভিন কুহুকে টেনে সোফায় বসিয়ে দিয়ে কোথাও গেলেন।
তাহমিদ তাকিয়ে আছে তার শ্যামাকন্যার দিকে। যেন বহুকালের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে আজকে। দু-চোখ ভরে দেখেও দেখার তৃষ্ণা মিটছেনা ওর।

” হুট করেই হারিয়ে গেছিলে কেন। এই কয়টা দিন আমার কেমন গেছে, সে সম্পর্কে তোমার কোনও ধারনা আছে! এত নি’ষ্ঠু’র তুমি! আমি বলেছিলাম, বাসা থেকে বেরোনের আগে, বাসায় এসে আমি তোমাকে দেখতে চাই। কিন্তু তুমি আমার ইচ্ছেকে পায়ে মাড়িয়ে পালিয়ে গেলে। আমি কি খুব বেশি কিছু চেয়েছিলাম তোমার কাছে? ”
কুহু মাথা নিচু করে বসে আছে। এমন সময় শাহনাজ সুলতানা ড্রয়িং রুমে আসেন। আরোশিও আছে তার সাথে। তারা এতক্ষণ তাদের পরিচিত একজনের সাথে বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। যিনি পাশের বিল্ডিংয়ে থাকেন।

” ভাইয়া, কেমন আছো? ” আরোশি দৌড়ে এসে তাহমিদের গা ঘেঁষে বসে।
” আমি ঠিকঠাক আছি। তুই কেমন আছিস? কতদিন ধরে তোকে দেখিনা। এতদিন পর কি মনে করে উদয় হলি! ”
” আমি কয়েকদিন আগে এসেছিলাম, কিন্তু তুমি বাসায় ছিলেনা। তোমার গিফ্ট পেয়েছি। সবগুলোই সুন্দর ছিল। আচ্ছা ভাইয়া, তুমি কি আমাদের সাথে যাচ্ছ? ”

” আমার খেয়েদেয়ে কাজ নেই, তোদের মত জংলীদের সাথে যেয়ে নিজের কানের বারোটা বাজাই। ”
তাহমিদের খোঁচা শুনে আরোশির মুখ চুপসে গেছে।
এমন সময় নাজমা পারভিন নিজের ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসেন। তার পেছনে একজন আরও একজন রয়েছে।
” কুহুতান, এইযে আমার বা’ন্দ’র মেয়ে তনয়া আর পাজি ছেলে নিহান। আর এই যে তোর ফুপা। ”
” কুহু উঠে তনয়ার গালে হাত ছুঁইয়ে ফুপাকে যেয়ে সালাম দেয়। তার সাথে কিছু কথা বলে আবার তনয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। ”

” কুহুপু, কেমন আছো? তুমি জানো? আমি কত্ত এক্সাইটেড ছিলাম তোমাকে দেখার জন্য! ফাইনালি তোমার সাথে দেখা হল! ”
” আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? ”
” এই যে মামাতো বোন, একটিবার আমার দিকেও নজর দে। শুধু ও নয় আমিও কিন্তু তোর কাছে নতুন। ”
” ভালো আছ, ভাইয়া? আমি একে একে সবার সাথেই কথা বলব। ”
মুহুর্তেই কুঞ্জছায়া’র ড্রয়িংরুম সবার কথায় মুখরিত হয়ে যায়।
আনান এসে তাহমিদের পাশে বসেছে।

” ঐ তনু, তোরা রেডি হবিনা? তারাতারি কর। খালামনিরা সবাই কোথায়? কখন বের হবে সবাই? এখন বের না হলে পৌঁছাতে রাত হয়ে যাবে। ”
” আমরা সবাই রেডি। এখনই বের হব। ভাইয়া, আমাদের জন্য চকলেট এনেছ? ”
” তোরা কি ফিডার খাওয়া পোলাপাইন, যে চকলেট আনব! যা এখান থেকে ভাগ। ”
” আনাইন্না, তুই এভাবে বলছিস কেন? তোর কাছে চকলেটই চেয়েছে সোনারূপা তো চায়নি। আমাদের চকলেট কই? ” তনয়ার পক্ষ নিয়ে সিক্তা আনানকে ধমক দেয়।
আনান অসহায় চোখে তাহমিদের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর চোখ দুটো যেন বলছে, ভাই আমার নিব্বি কেন আমাকে এভাবে দৌড়ানির উপ্রে রাখে।

” আনান, তুই এতগুলো বা’ন্দ’র নিয়ে এই কয়দিন থাকবি কেমন করে! তোর জন্য আমার এখনই কষ্ট হচ্ছে। এরা তোকে প্রতি মিনিটে দশবার করে ভাজবে। তোর জন্য তিন ড্রাম সমবেদনা। ”
” ভাইয়া, তুমিও আমাদের বা’ন্দ’র বললে! আমরা না তোমার আদরের বোন! শেষ জামানা বুঝি এসে গেছে! তাই বোধহয় ভাই তার বোনদের বান্দর বলছে। বাই দ্য মহাকাশ, তুমি যেদিন গ্রামে যাবে, সেদিন আমাদের জন্য চকলেট আর আইসক্রিম নিয়ে যাবে। এটা অনুরোধ নয় অর্ডার। আনান ভাইয়া, তুমি যা ভুল করার করেছ। তবে রাস্তায় মনে করে চকলেট কিনে দিও।অবশ্য ভুলে গেলেও সমস্যা নেই। আমি মনে করিয়ে দিব। ”

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ১২

কুহু অবাক হয়ে সবার কথা শুনছে। এদের মধ্যে কত মিল! তাহমিদকেও এরা কত ভালোবাসে! আবার তাহমিদও সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলছে! এবার ওর আফসোস হচ্ছে। কেন ওর জীবনটা এদের মত হলোনা? কেন এত এই ভালোবাসার মানুষদের ছেড়ে দূরে থাকতে হল? আজ যদি ছোটবেলা থেকেই সবার মাঝে থাকত, তবে ওর জীবনটাও এদের মত হতে পারত।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ১৪