বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ১৭

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ১৭
জাওয়াদ জামী

প্রায় বিশ মিনিট পর গাড়ি বাজারে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থামতেই মেয়েরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে পরে। ওরা কুহুকেও নামতে বলে। কিন্তু কুহু ওদেরকে মানা করে দিয়ে গাড়িতেই বসে থাকে। মেয়েরা কনফেকশনারিতে গিয়ে ইচ্ছেমত খাবার কিনছে। তাহমিদ আনানের কাছে টাকা দিয়ে গাড়িতে আসে।

” তুমি নামলেনা যে? অনেক রাস্তা যেতে হবে, একটু হেঁটে এস ভালো লাগবে। ”
” আমার বাইরে যেতে ইচ্ছে করছেনা। তাছাড়া ওদের সাথে গেলে আমি পাগল হয়ে যেতাম। ”
” এটা নাও। ” তাহমিদ এক বক্স চকলেট বাড়িয়ে দেয় কুহুর দিকে।
” এত চকলেট! আমি এত চকলেট কি করব! ”
” যা খুশি তাই কর। এখন এটা নাও। বান্দরের দল আসলে একটাও তুমি পাবেনা। নিজের জন্য কয়েকটা পার্সে রেখে বাকিগুলো ওদের দিও। ”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” ধন্যবাদ। ”
” আমি তোমার কাছে ধন্যবাদ চাইনি, অন্যকিছু চেয়েছি। কিন্তু সেটা দেয়ার কোনও ইচ্ছেই তোমার মধ্যে দেখতে পাইনা। আমি কি মানুষ হিসেবে খুব খারাপ? নাকি অযোগ্য? তোমার বাড়িতে গেলাম, কিন্তু তুমি দূরে দূরে থাকলে। আমি যতই তোমাকে ভালোবাসায় বন্দিনী করতে চাই, তুমি ততই পালাই পালাই কর। একবার ধরা দিয়ে দেখ, ধরিত্রীর সকল সুখ আমি তোমার পায়ে এনে লুটাব। ” কুহুকে বক্স খুলতে না দেখে নিজেই বক্স খুলে কুহুর ব্যাগে চকলেট রাখতে রাখতে কথাগুলো বলল তাহমিদ।

কুহু কোন উত্তর দেয়ার আগেই তনয়া গাড়ির কাছে আসে। এরপর একে একে সবাই আসে। সকলের হাতেই কয়েকটা করে প্যাকেট। মেয়েরা গাড়িতে উঠে বসলে সবশেষে আনান আর নিহানও উঠে বসে।
” ভাই, তোমার পাঁচ হাজার টাকা ওরা দোকানে ফেলে আসল! এরা একেকটা যে রা’ক্ষ’সী তা আমার জানা ছিলনা। কোন মায়াদয়া ছাড়াই ইচ্ছেমত খাবার কিনল! ”

” আমরা তাহমিদ ভাইয়ার টাকায় সবকিছু কিনেছি। এতে তোমার এত লাগছে কেন? ভাইয়া একজন বড় ডক্টর, তার যথেষ্ট টাকা আছে। সেই টাকা থেকে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা আমাদের জন্য খরচ করেছে। ভাইয়ার এই পাঁচ হাজার টাকা খরচ হওয়া আর সমুদ্র থেকে একফোঁটা পানি তোলা একই কথা। তাইনা, ভাইয়া? ” তনয়া দাঁত কেলিয়ে বলল।
” এই মুহুর্তে তোরা যেটাই বলবি, সেটাই ঠিক। আপাতত কোন তর্ক করার ইচ্ছে আমার নেই। ”
” এই কুহুপু, তোমার কাছে চকলেটের বক্স আসলো কোথায় থেকে! গাড়ি থেকে নামার সময়ও তো তোমার কাছে এটা ছিলনা! ” আরোশি অবাক হয়ে জানতে চায়।

” আমিই এনেছি তোদের জন্য। নিজের কাছে না রেখে কুহুর কাছে রেখেছি। এখন তোরা যে যার মত নে। ” কুহুকে ইতস্তত করতে দেখে তাহমিদ জবাব দেয়।
তাহমিদের বলতে দেরি হয়েছে, কিন্তু আরোশির কুহুর হাত থেকে বক্স নিতে দেরি হয়নি। ও কুহুর হাত থেকে বক্স প্রায় ছিনিয়ে নেয়। এরপর সবাই চকলেটগুলো ভাগাভাগি নেয়।
সবাই মিলে গল্প আর খুনসুটিতে পথ পাড়ি দিচ্ছে। তাহমিদ কুহুর সাথে টুকটাক কথা বলছে। কুহুও ওর কথার উত্তর দিচ্ছে।

” তোমার কি আমার পাশে বসে অস্বস্তি লাগছে? তাহলে আমি নিহানের সিটে যাই। নিহান এখানে বসুক। ”
” না ঠিক আছে। আপনি থাকুন। ”
” কিছু খাবে? আর কিছুদূর এগিয়ে গেলে একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। ”
” খাওয়ার কিছুক্ষণ পর গাড়িতে উঠেছি। আবার এটা সেটা খাচ্ছিই। এরপরও ক্ষুধা লাগবে! আমি একবারে বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খাব। ”

” আমার মিতব্যয়ী, রাতজাগা পাখি, এভাবে না খেয়ে আমাকে বিল গেটস বানাতে চাও? তবে শুনে রাখ আমার প্রানপাখি , আমার রোগাপটকা বউ নয়, গুলুমুলু বউ পছন্দ। যাকে জড়িয়ে ধরলে প্রশান্তিতে বুকটা ভরে যাবে। কিন্তু বউ হাড্ডিসার হলে বিপদ আছে। জড়িয়ে ধরতে গেলেই ব্যথায় থমকে যেতে হবে। ”
তাহমিদের এহেন বেশরম কথাবার্তা শুনে কুহুর কান গরম হয়ে গেছে।

” ছিহ্ মুখে লাগম দিন। আশেপাশে আপনার ছোট ভাই-বোনেরা আছে। তারা শুনলে কি হবে ভেবেছেন? হতে পারেন আপনি নির্লজ্জ, কিন্তু আমি নির্লজ্জ নই। বাকি রাস্তা কোনও কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকবেন। ”
” বাব্বাহ্ অবলা নারীর মুখে দেখছি কথার ফুলঝুরি ছুটছে! প্রতিবাদী হও ঠিক আছে, কিন্তু তাই বলে নিষ্ঠুর হয়োনা। নিষ্ঠুরতার আড়ালে নরম মনটাকে ঢেকে ফেলোনা। আমি তোমার মনের হদিস পেতে চাই। ডুবতে চাই তোমার ঐ মনে অতল তলে। সেখানে ফেলতে চাই আমার নামের প্রেম নোঙর। আমাকে বাঁধা দিওনা মেয়ে। নিজেকেও বেঁধনা অপারগতা নামক বিষাদের মেঘে। যদি নিজেকে বেঁধে নাও অপারগতার মেঘে, তবে জেনে রেখ, আমি একদিন ঐ মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝড়াব, যে বৃষ্টিতে ভিজবে তোমার হিয়া, ভিজবে তুমি। আরও বেশি করে চাইবে ভিজতে। ”

” ভাইয়া, তুমি কুহুপুর সাথে ফিসফিস করে কি গল্প করছ? আমাদেরকেও শোনাও একটু। ”
তনয়ার কথা শুনে কুহু লজ্জা পায়। এই লোকটা দেখছি আমাকে সব সময়ই অপ্রস্তুত করে মুখিয়ে থাকে!
” তোর বোনকে একটু জ্ঞান দিচ্ছিলাম। দেখছিসনা কেমন মুখ বন্ধ করে বসে আছে। তাই তাকে মুখ বন্ধ রাখার কুফলগুলো শোনাচ্ছিলাম। কি সে শিখলে তো! বিনা পয়সায় উপদেশ দিচ্ছি, তাই তার পছন্দ হচ্ছেনা। ”
” ভাই, আমাদের কোকিলা খুব শান্ত মেয়ে। সে এগুলো মত রাক্ষসী নয় যে উপদেশ দিচ্ছ, আর সে গপাগপ হজম করছে। সে ধীরে ধীরে তোমার সব উপদেশ গলাধঃকরণ করবে। ”

” ভাইয়া, তুমি আমাদের রাক্ষসী বললে! তুমি আসলে ভাই নামের শত্রু। সামান্য পাঁচ হাজার টাকার জন্য, তুমি আমাদের সাথে বিরোধিতা করলে, তাও যদি টাকাটা তোমার হত। ” আরোশি নিজের ভাইকে মুখ ঝামটা দেয়।
ঝগড়া বেশিদূর গড়ানোর আগেই তাহমিদের হস্তক্ষেপে ওরা থেমে যায়।
শেষ বিকেলে ওদের গাড়ি ‘ কুঞ্জছায়া ‘র সামনে এসে দাঁড়ায়।

দীর্ঘ ভ্রমনের পর সবাই ক্লান্ত হয়ে গেছে। শাহনাজ সুলতানা তার পরিবার নিয়ে নিজের বাসায় চলে গেছেন। নাজমা পারভিন আগামীকাল সকালে চিটাগংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন। তিনি বর্তমানে বড় বোনের বাসাতেই উঠেছেন।
কিছুক্ষণ রেস্ট নেয়ার পর আফরোজা নাজনীন এবং তাহমিনা আক্তার রাতের খাবার তৈরিতে লেগে যান। নাজমা পারভিনও তাদের সহযোগিতা করছেন।

তাহমিদ বাসায় আসার কিছুক্ষণ পরই বেরিয়ে গেছে। ইমারজেন্সি রোগী থাকায় ক্লিনিক থেকে বার বার ফোন দিচ্ছিল, তাই তাকে ক্লিনিকে যেতে হয়েছে।
কুহু, সিক্তা আর তনয়া এসেই বিছানায় সেই যে গড়ান দিয়েছে, এখনও উঠেইনি বরং পরে পরে ঘুমাচ্ছে। ওদের ঘুম ভাঙ্গলো আফরোজা নাজনীনের ডাকে। তখন রাত দশটা।
দুইদিন তাহমিদের সাথে কুহুর দেখা হয়নি। সে ব্যস্ত হয়ে গেছে তাই খুব সকালেই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়, আর বাসায় আসে রাতে বারোটারও পর।

আটদিন পর কায়েস ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় এসে চিকিৎসা করিয়েছে। তাহমিদ নিজে ওর চিকিৎসার দ্বায়িত্ব নিয়েছে। তিনদিন পর কায়েস গ্রামে ফিরে গেছে
কুহুও ব্যস্ত তার পড়াশোনা নিয়ে। আগামী কয়েকদিন ও অ্যাডমিশন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তাই আপাতত বইয়ের বাইরে অন্য কিছু ভাবতে পারছেনা।
এরইমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে ।
এছাড়াও ও আর সিক্তা দেশের সব পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিবে। সানাউল রাশেদিন মেয়েদের জন্য সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

সব পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা শেষে কুহু আর সিক্তা অলস সময় পার করছে। নাজমা পারভিন ওদেরকে বেড়ানোর জন্য ডাকছেন। সিক্তা বেড়াতে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে গেছে।
কিন্তু আফরোজা নাজনীন বলে দিয়েছেন, আগে রেজাল্ট বের হোক পরে বেড়ানো যাবে।
তাহমিদ সাতদিনের জন্য দেশের বাইরে গেছে। এই কয়দিন কুহু একটু শান্তিতে আছে। কারনে-অকারনে ওকে কেউ জ্বালাচ্ছেনা। কেউ হুটহাট সামনে এসে চমকে দিচ্ছেনা কিংবা এটা-সেটা গিফ্ট দিচ্ছেনা।

কুহু দিদুনের সাথে ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে। এমন সময় কলিং বেল বাজলে, ও যেয়ে দরজা খুলে দেয়। সামনে দাঁড়ানো মাঝ বয়সী মহিলাকে দেখে ওর চোখে যেন আ’গু’ন লেগে যায়। মহিলা যৌবনে আ’গু’ন সুন্দরী ছিল তা তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মহিলার পাশে দাঁড়ানো একুশ-বাইশ বছরের এক তরুণী। সে-ও এই মহিলার মতই সুন্দরী। কুহু দুজনের ওপর থেকে চোখ সরাতে পারছেনা।
” হেই, সরে দাঁড়াও। আমরা ভেতরে যাব। ” সেই মহিলা কর্কশ গলায় বলে।
” ওহ্ সরি। আপনারা আসুন। ”

” খালা কেমন আছো? কতদিন তোমাকে দেখিনা। ” সেই মহিলা এসে দিদুনের পাশে বসে তাকে জিজ্ঞেস করল।
” নুসরাত, তুই এসেছিস! কেমন আছিস, মা? ”
” আমি ভালো আছি, খালা। আমি একা আসিনি, মেয়েকেও সাথে নিয়ে এসেছি। সামিহা, দিদুনকে সালাম দাও। খালা, ভাবিরা কোথায়? আর এই মেয়েটা কে? ”
” তোর ভাবিরা রান্নাঘরে আছে। তুমি কেমন আছো, সামিহা? কতদিন পর এলে তোমরা! মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসতে হয়, তবেই আত্নীয়তা রক্ষা করা যায়। নুসরাত, এ হলো কুহু। আফরোজার ভাইয়ের মেয়ে। কুহু সোনা, এদিকে এস। ইনি তোমার একটা আন্টি হন। আমার বোনের মেয়ে নুসরাত। ”

” ভাবির ভাইয়ের মেয়ে! মানে? ভাবির ভাই না বাড়ি ছেড়েছিল অন্য একজনকে নিয়ে? ”
” কায়েস ফিরে এসেছে। কুহু ওর বড় মেয়ে। ও এখানেই থাকে পড়াশোনার জন্য। ”
” বাহ্ খালা বাহ্। যে মানুষটা তোমার বোনের মেয়ের সাথে চিট্ করেছে, তার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও অন্য মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে, সেই চিটারের মেয়েকে নিজের বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছ! আবার গর্ব করে তার সাথে আমার পরিচয়ও করিয়ে দিচ্ছ! ওই চিটারের মেয়ে এই বাড়িতে আছে জানলে, আমি এখানে কখনোই আসতামনা। ”
নুসরাতের কথা শুনে কুহুর বুঝতে বাকি থাকেনা সে আসলে কে। অন্য একজনের মুখে নিজের বাবার সম্পর্কে এরূপ কথা শুনে কুহুর ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। ও নিরবে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।

” নুসরাত, এসব কি বলছিস! যে অধ্যায় অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে, সেটাকে আবার নতুন করে জাগিয়ে তুলছিস কেন? আমরা সেই ঘটনাকে অনেক আগেই ভুলে গেছি। আসল দোষী আমরা। তাই কায়েসের পছন্দ না জেনেই ওর বিয়ে ঠিক করেছিলাম। তার নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারও যে তার ছিল, সেটা আমরা ভুলে গেছিলাম। বাদ দে সেসব কথা। যা হবার তা হয়ে গেছে। তোর বিয়ে হয়েছে, পুতুলের মত দুইটা মেয়ের মা হয়েছিস। সেই পুরোনো কথা মনে রেখে কি লাভ। তাছাড়া বড় বউমা এসব শুনলে মন খারাপ করবে। পুরোনো কথা ভেবে মন খারাপ না করে বরং বর্তমান নিয়ে ভাব। তুই সুখে আছিস এটাই বড় কথা। ”

আফরোজা নাজনীন রান্নাঘর থেকে এতক্ষণ সবই শুনছিলেন। নিজের ভাইয়ের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য শুনে তার চোখে পানি আসে। কিন্তু পরক্ষণেই তার শ্বাশুড়িকে সেসব কথার জবাব দিতে শুনে চোখ মুছলেন।
তাহমিনা আক্তার নুসরাতের এরূপ কথা শুনে মনে মনে একটু বিরক্ত হন। নুসরাত পুরোনো সেই ঘটনা এখনও মনে পুষে রেখেছে ভাবতেই তার বিরক্ত লাগছে।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি আফরোজা নাজনীনের হাত ধরে ড্রয়িং রুমে আসলেন।
রাতে খাবার পর সবাই ড্রয়িংরুমে বসেছে। নুসরাত অনেকদিন পর এখানে এসেছে। তাই এদিকের সাম্প্রতিক হালচাল তার জানা নেই। সানাউল রাশেদিন তার খালাত বোনের সাথে পুরোনো দিনের গল্পে মেতেছেন সেই সাথে সাম্প্রতিক হালচালও জানাচ্ছেন।

নুসরাত সবার সাথে কথা বললেও কুহুকে এড়িয়ে চলছে। কুহুকে দেখলেই বিরক্তিতে তার মুখের ভেতর তেঁতো হয়ে আসছে। কুহুও বেশ বুঝতে পারছে নুসরাত আন্টি ওকে দেখলেই বিরক্ত হচ্ছে। তাই ও কয়েকবারই রুমে যেতে চেয়েছে কিন্তু তাহমিনা আক্তার ওকে আটকে রেখেছেন।
” তাহমিনা, আমাদের চা খাওয়াও। আজ অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিব। আমার বোনটা অনেকদিন পর এসেছে। ওর সাথে অনেক গল্প করার আছে। ”
” আপনারা কথা বলুন, আমি চা আনছি। ”
” মামণি, তুমিও গল্প কর। আমি চা করে আনছি। ” তাহমিনা আক্তার চা বানাতে যেতে চাইলে, সামিহা তাহমিনা আক্তারকে থামিয়ে দেয়।

” ওমা সে কি কথা! তুমি কেন রান্নাঘরে যাবে! তুমি বস আমি যাচ্ছি। ”
” মামণি, প্লিজ। তোমাদের রান্নাঘর দেখে আমার সেখানে কাজ করতে খুব ইচ্ছে করছে। আমি যাইনা। ” আবদার করে সামিহা।
” তাহমিনা, ওকে যেতে দাও। আজ আমার ভাগ্নীর হাতের চা খাই। ”
মামার সায় পেয়ে সামিহা রান্নাঘরের দিকে দৌড় দেয়।
” নুসরাত, তোর মেয়ে যে সংসারী হয়ে গেছে। কি খুশিমনে কাজ করতে চাইছে। ”
” তোমাদেরই ওকে সব শিখিয়ে পরিয়ে নিতে হবে। সানাউল ভাই তাহমিদের জন্য সামিহাকে পছন্দ করেছে। তাই ওকে শেখানোর দ্বায়িত্ব তোমাদের। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কিছুদিন পরই ও তোমাদের বাড়ির বউ হতে চলেছে। আমি কি ভুল কিছু বললাম, খালা?

” তোর কথায় ভুল কিছুই নেই। কিন্তু যারা সংসার করবে, আগে তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে। তাহমিদ দেশের বাইরে আছে। ও আসুক ওকে জিজ্ঞেস করে দেখি। তাহমিদ রাজি থাকলে আমাদেরও আপত্তি থাকবেনা। তোমরা কি বল, বউমা? ”
” আপনি ঠিক বলেছেন, আম্মা। তাহমিদ রাজি থাকলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবেনা। কিন্তু আমার ছেলে যদি একবার না করে, তবে আমি তাকে জোড় করবনা। ” তাহমিনা আক্তার সোজাসাপটা বলে দেন।
” তুই ঠিক বলেছিস, তাহমিনা। তাহমিদ রাজি থাকলেই তবে আমরা বিয়ের আয়োজন করব। ” আফরোজা নাজনীনও মেজো জায়ের কথায় সায় দেন।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ১৬

কুহু মাথা নিচু করে সবার আলোচনা শুনছে। তাহমিদের বিয়ের কথা শুনেই ওর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে। সত্যিই কি মানুষটার সামিহা আপুর সাথে বিয়ে হবে! তবে যে মানুষটা এতদিন ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে, তার কি হবে!
বিঃদ্রঃ আজকের পর্বটা ভিষণ অগোছালো হয়েছে। একদিকে কাজের চাপ, অন্যদিকে ছেলের অসুস্থতা। সবদিক সামলে লিখা খুব কষ্টকর হয়ে যায়। এজন্যই সব মিলিয়ে আজকের পার্ট গুছিয়ে লিখতে পারিনি। সেজন্য আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ১৮