বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ২০

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ২০
জাওয়াদ জামী

রুমে এসে বিছানায় শোয়া মাত্রই কুহু ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়। অনেকদিন পর আজ ও নিশ্চিন্তে ঘুমাবে।
তাহমিদ রুমে এসে ভাবতে থাকে, কাল কিভাবে নিজের বিয়ের কথা আলোচনা করবে। তবে তার আগে এখন একটা কাজ আছে। তৎক্ষনাৎ কাজটা করে আবার ভাবতে শুরু করল।

কিন্তু বেশিক্ষণ ভাবতে পারলনা, একসময় ঘুমিয়ে পরল।
সকালে তাহমিদ দেরিতে ঘুম থেকে উঠেছে। এরপর প্রথমেই মেডিকেলে ফোন দিয়ে জানিয়েছে আজ সে যেতে পারবেনা। সানাউল রাশেদিনের শরীরটা ভালো না লাগায়, অফিসে ফোন করে জানিয়েছেন, আজ তিনি অফিসে যেতে পারবেননা। তাই তিনিও দেরি করেই রুম থেকে বের হয়েছেন।
তাহমিদ যখন নিচে নামল তখন সকাল নয়টা। ও ড্রয়িংরুমে এসে দেখল সবাই সেখানে বসে গল্প করছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” এসেছিস, বাপ। এবার খেতে চল। তোর জন্যই সবাই অপেক্ষা করছিল। আজ কি মেডিকেলে যাবিনা? এত দেরি করে নিচে আসলি? ”
” আজ কোথাও যাবনা, বড়মা। বাসায়ই কাজ আছে। মা, তারাতারি খেতে দাও। ” বড়মার সাথে কথা বলার সময় দেখল তাহমিনা ডাইনিং টেবিলে কিছু একটা রাখছে। তখন তাহমিদ মা’য়ের কাছ থেকে খেতে চায়।
” সব রেডি করেছি, তুই এসে বস। ”

সানাউল রাশেদিন লক্ষ্য করল, তাহমিদ আজ তার সাথে কথা বলেনি। তিনি বেশ অবাক হলেন। এনটাতো হওয়ার কথা নয়!
এদিকে তাহমিদ চিন্তা করছে কিভাবে ও বিয়ের প্রসঙ্গ তুলবে। সেই চিন্তা করতে যেয়ে সানাউল রাশেদিনের সাথে কথা বলতে ভুলে গেছে।

” আফরোজা, সিক্তা আর কুহু যে আসলনা? ওদেরকে ডেকেছ? ” সানাউল রাশেদিন স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন।
” তোমার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। আর কুহু এখন খাবেনা। এবার তুমি খেয়ে নাও। খেয়ে ঔষধ খেতে হবে। ”
” সিনিয়র রাশেদিন, তোমার কি হয়েছে? আজ এতক্ষণ অফিসে যাওনি যে! ”
” যাক আমার কথা তোমার তাহলে মনে আছে! এতক্ষণ এমন ভাব করছিলে, যেন এই বাসায় আমার কোন অস্তিত্বই নেই। ”

” তুমি হাজার চেষ্টা করলেও নিজের অস্তিত্বকে মুছে দিতে পারবেনা। সবকিছু মুছে গেলেও তোমার ভুঁড়ি কখনোই মুছবার নয়। তাই উল্টাপাল্টা চিন্তা করে ভুঁড়ির ওজন কমানোর কি দরকার! আর তাছাড়া কখনো যদি জগদ্বিখ্যাত ভুঁড়ির এ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়, সেটা তুমিই পাবে। ”

তাহমিদের কথা শুনে সামিহা হোহো করে হেসে উঠে। ওর এমন হাসিতে সবাই অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তাহমিদ আর আয়েশা সালেহা বিরক্ত হয়ে সামিহার দিকে তাকায়। অবশেষে নুসরাতের ধমক খেয়ে সামিহা হাসি থামায়।
সানাউল রাশেদিন কিছু না বলে চুপচাপ খেতে থাকেন।
খাবার টেবিলে আর কোন কথা হয়না।
খাওয়ার কিছুক্ষণ পর নুসরাত তার মেয়েকে নিয়ে ওর ননদের মেয়ের বাসায় বেড়াতে যায়। তারা আজ সারাদিন সেখানেই থাকবে।

আয়েশা সালেহা তার বড় ছেলেকে নিজের রুমে ডাকলেন। সেই সাথে ডেকে পাঠালেন ছেলের বউদের আর তাহমিদকে।
তাহমিদ দিদুনের রুমে এসে দেখল বড় চাচ্চু, মা, বড়মা সবাই এখানে আছে। ও এমন একটা সুযোগই খুঁজছিল।
” দিদুন, হঠাৎ করে সবাইকে ডেকেছ যে! কোন দরকার? ”
” হুম, তুমি বস। ”
তাহমিদ দিদুনের পাশে বসে।

” দাদু ভাই, তোমার বড় চাচ্চু তোমার জন্য সামিহাকে পছন্দ করেছে। এই বিষয়ে আমি তোমার মতামত জানতে চাচ্ছি। ” তাহমিদের চিন্তা উড়িয়ে দিয়ে দিদুন প্রশ্ন করল।
” আমি সামিহাকে বিয়ে করতে পারবনা। মেয়েটা ম্যানার্স জানেনা। এমন মেয়েকে আমার পছন্দ নয়। একটা প্রশ্ন দিদুন, তোমার ছেলের মাথায় হঠাৎ সামিহার কথা আসলো কেন? ”

” তুমি বিয়ে করব, বিয়ে করব বলে সবার মাথা খাচ্ছিলে। মানুষজনের সামনে লাজলজ্জা ভুলে অক্সিজেন সিলিন্ডারের কথা বলেছিলে, মনে আছে? সেজন্যই আমি সামিহার কথা ভেবেছিলাম। ”
” সামিহা ছাড়া দেশে কি আর কোন মেয়ে ছিলনা! চারপাশে কত মেয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে, তাদেরকে তোমার চোখে পড়েনি? আজব! ”

” চারপাশে মেয়েদের উড়াউড়ি দেখেই যে আমি প্রতিমাসে স্যালারি পাই। তাই অফিসে না বসে মেয়েদের পেছনেই পরে থাকি, তাইনা? ”
” তোমরা আবার শুরু করলে! ” আফরোজা নাজনীন অসহায় চোখে শ্বাশুড়ির দিকে তাকায়।

তাহমিনা আক্তার মনে মনে স্বস্তি পেয়েছেন। তারও সামিহাকে পছন্দ ছিলনা। কিন্তু বড় ভাসুরের মুখের ওপর নিষেধ করার অভিলাস তার নেই। তিনি ভাসুরকে সম্মান করেন। তাই তার মুখের ওপর মানা করতে সেদিন মন সায় দেয়নি।
আফরোজা নাজনীনও তাহমিদের সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছেন। সামিহাকে তারও পছন্দ নয়। মেয়েটা একটু বেশিই উচ্চাভিলাষী।
” আম্মা, নুসরাতকে কিভাবে না করা যায় বলুনতো? যেহেতু তাহমিদ না করেছে, তাই আমার মনে হয়, আমাদের আর এগোনো ঠিক হবেনা। ” তাহমিনা আক্তার শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলেন।

” আমি নুসরাতের সাথে এ নিয়ে কথা বলব। তোমরা চিন্তা করোনা। আশা করছি সব ভালোভাবে মিটে যাবে। ”
” মা, এই বেয়াদবকে বল আর কারও সামনে যেন বিয়ে করব, বিয়ে করব না করে। অন্যের সামনে লজ্জায় মাথা কা’টা যায়। ”

” বিয়ে করিয়ে দিলেই আর সবার সামনে বলতে হয়না, আমার বউ প্রয়োজন। এতে তুমিও লজ্জা থেকে রেহাই পেলে, আমিও অক্সিজেন সিলিন্ডার পেলাম। জীবনের বাকি কয়টা দিন বউ-বাচ্চা নিয়ে আনন্দ করতে পারি। ”
” বাপ, তোর কাউকে পছন্দ থাকলে আমাকে বল। আমরা সেখানে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাব। আর দেরি করবনা। ”
” কোন প্রস্তাব পাঠানোতে আমি নেই। আমি ডিরেক্ট বিয়েতে বিশ্বাসী। এবং সেই বিয়ে আজকেই হবে। তোমরা ব্যবস্থা কর। ”

তাহমিদের কথা শুনে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। সানাউল রাশেদিনেরতো বুকে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে।
” মা, তোমার এই নাতি আমাকে পাবনা পাঠিয়ে তবেই ক্ষান্ত দিবে। সে বিয়ে করবে, কিন্তু বউ কোথায়? মেয়ে কি রাস্তা থেকে ধরে আনব? বউ কি ছেলের হাতের মোয়া, যে ইচ্ছে হল কিনে আনলাম? তার ওপর বাপ শহরে নেই অথচ ছেলে বিয়ে করবে! ” সানাউল রাশেদিন পারলে নিজের চুল ছিঁড়েন।

” কে বলেছে, বউ নেই? আমার না হওয়া বউ তোমার বাসাতেই উড়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সেটা দেখার চোখ তোমার নেই। আর রইল আমার বাবার কথা, বাবাকে ছাড়া বিয়ে করব, এটা তুমি কি করে ভাবলে? বাবা কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। ”
” বউ এই বাসাতেই আছে! কার কথা বলছিস বাবু? ” তাহমিনা আক্তারের কন্ঠে বিস্ময়।
” বাপ, কার কথা বলছিস? ”

সানাউল রাশেদিন ড্যাবডেবিয়ে তাকিয়ে আছেন তাহমিদের দিকে। আজ তার সত্যিই মনে হচ্ছে, তিনি অতি শীঘ্রই পাবনার স্থায়ী বাসিন্দা হবেন। এই ছেলের জন্মই হয়েছে তাকে পাবনায় পাঠানোর জন্য।
” আমি কুহুর কথা বলছি, বড়মা। তোমার কোন আপত্তি আছে? অবশ্য আপত্তি থাকলেও আমার সমস্যা নেই। বিয়ে আমি কুহুকেই করব। ”

এবার আফরোজা নাজনীন চরম বিস্মিত। তিনি কথা বলতে ভুলে গেছেন।
” মা, তুমি কিছু বল। তোমার কোন মতামত নেই? আর সিনিয়র রাশেদিন, তুমি কি বল? ”
” আমার তো কুহুকে ভিষণই পছন্দ। কি লক্ষ্মী একটা মেয়ে। মনে মনে অনেকবারই ভেবেছি, আমার ছোট ছেলের বউটা যদি এমন হত। ”

” বড় বউমা, সানাউল তোমাদের এ বিষয়ে কি মত তা আমাকে বল। তোমরা রাজি থাকলেই তবে এ বিয়ে হবে। আমার দাদু ভাই এই প্রথম নিজ থেকে আমাদের কাছে কিছু চেয়েছে। সেটা তাকে দিতেই হবে বলে আমি মনে করি। ”
” মা, তোমার এই নাতির ভালোমন্দ কোন বিষয়েই আমি নেই। তোমরা যা করার কর। তবে আমার চিন্তা হচ্ছে কুহুর জন্য। মেয়েটার দিকে সাইক্লোন ধেয়ে আসছে অথচ সে বোধহয় কিছুই জানেনা। ”

” বাপ, আমি কুহুর অভিভাবক নই। ওর বাবা ওর অভিভাবক। কায়েস যদি রাজি থাকে তবে আমার কোনও আপত্তি নেই। আমার বাপ যেটা চাইবে, আমি চেষ্টা করব তাকে দিতে। ”
” তোমার রোমিও ভাইও রাজি আছে। সে-ও আসছে। এমন যোগ্য জামাই কে হাতছাড়া করতে চায় বল। ”
” এই আফরোজা, ও এসব কি বলছে? কায়েস আসছে মানে! আবার নাকি শফিউলও আসছে! ও কি বলতে চাইছে? আমি এত সাসপেন্স আর নিতে পারছিনা। এবার ওকে গলা ছেড়ে সবকিছু বলতে বল। ”

” বাবু, তুই সবকিছু প্রথম থেকে বল। আমরা এখনও অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। ” তাহমিনা আক্তারও ছেলের এমন কথার মানে বুঝতে পারছেননা।

” মা, বড়মা, সিনিয়র রাশেদিন, বাবাকে আমি আগেই কুহুর কথা বলেছিলাম। বাবা সব শুনে রাজি হয়েছে। রোমিওকে ও বলেছিলাম। সে-ও রাজি তবে তোমরা রাজি থাকলেই তবে সে রাজি। গতকাল যখন দিদুনের কাছ থেকে জানলাম, সিনিয়র রাশেদিন সামিহাকে আমার জন্য পছন্দ করেছে, তখন অনেক ভেবেচিন্তে বাবাকে বললাম, আজকে বিয়ে করব। বাবাও সায় দিল। তাকে বলে দিলাম, দুপুরের মধ্যেই বাসায় আসতে। বাবা মেনে নিল। এরপর বাবাকে বললাম, রোমিওকে ফোন করে আজ ঢাকায় আসার কথা বলতে। বাবা সেটাই করল। আর কিছু জানতে চাও? ” ইচ্ছে করেই তাহমিদ কুহুর কথা গোপন করল। ও কুহুকে সবার সামনে লজ্জায় ফেলতে চায়না।

” আফরোজা, বেয়াদবটা আগে থেকেই সবকিছু প্ল্যান করে রেখেছিল! এর মাথাতো নয় যেন বুদ্ধির গ্যারেজ! সবাই মেনে নিল ঠিক আছে কিন্তু কুহু তারও তো পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে? সেক্ষেত্রে তুমি কি বলতে চাও? ” সানাউল রাশেদিন তাহমিদকে জিজ্ঞেস করলেন।

” বড়মা, তুমি রোমিওর মেয়েকে জিজ্ঞেস করে দেখ। উত্তর পজিটিভ হলে আলহামদুলিল্লাহ। নেগেটিভ হলেও আলহামদুলিল্লাহ। বিয়ে তাকে করতেই হবে। এবার সিনিয়রকে একটু রিল্যাক্স হতে বল। বেশি টেনশন করলে তার ভুঁড়িতে প্যাঁচ লেগে যেতে পারে। ”

” কুহু যদি রাজি না হয় তবে তুই কি কুহুকে জোড় করবি, বাপ? ”
” রাজি হবেনা কি হ্যাঁ? তুমি আর মা মিলে তাকে রাজি করাবে। মনে রেখ, ওকে আমার চাই। তোমাদের ছেলের জীবন-মরণ নির্ভর করছে ঐ মেয়ের মতামতের ওপর। যেকোনো মূল্যেই তাকে আমার চাই। তবে যা করার বাবা আর আর রোমিও আসার আগেই কর। রোমিও আসলে কেনাকাটা করতে যেতে হবে। সে নাকি পছন্দ করে তার মেয়ের জন্য বিয়ের বেনারসি কিনবে। ”

” বাব্বাহ্ এই কথাও হয়ে গেছে! আফরোজা সবাই ঢাকার বাইরে থেকে সবকিছু জানছে কিন্তু আমরা বাসায় থেকে কি করলাম! মেয়ের বাপ, শ্বশুর, জামাই সবাই একজোট হল, সব ঠিকঠাক করল! আর আমরা আজ বসে বসে দাওয়াত খাব। ”
” দাদু ভাই, তুমি সব ঠিক করে রেখেছ! মানতে হবে তোমার এলেম আছে। ”

” বিয়ের বয়স হয়েছে অথচ বাড়ির লোকজন বিয়ের কথা বলেনা। সেক্ষেত্রে আমি আর কি করতে পারি দিদুন? অথচ আমার বয়সে সিনিয়র রাশেদিন এক বাচ্চার বাপ হয়েছিল। নিজে বিয়ে করেছে ঠিক বয়সে, কিন্তু ভাইয়ের ছেলের বিয়ে না দিয়ে তার হক মা’র’ছে! ঠিক বয়সে বিয়ে করলে আজ আমিও এক বাচ্চার বাপ হতাম। ”
তাহমিদের এই কথা শোনামাত্রই সানাউল রাশেদিন গর্জে উঠলেন। তাহমিদ আর রুমে থাকলনা। ও বুঝতে পেরেছে ও আর কিছু বললেই সিনিয়র ওকে থা’প্প’ড় মা’র’তে দুইবার ভাববেনা।

” বড় বউমা, মেজো বউমা, তোমরা কুহুর সাথে কথা বল। ওকে রাজি করাও। দেখ, আমার নাতিটা যেন কষ্ট না পায়। কুহু রাজি হলেই তবে বিয়ের আয়োজন কর। কুহু সোনা রাজি হলে তুমি শাহনাজ, নাজমাকে আসতে বল। এছাড়া কাছের দুই একজন আত্মীয় স্বজনদেরও ডাকবে। তাহমিনা, তুমি তাওহীদ আর নীরাকেও আসতে বলবে। তবে সেটা কুহু বিয়েতে মত দেয়ার পরই করবে। ”

শ্বাশুড়ির কথা শুনে আফরোজা নাজনীন তাহমিনা আক্তারকে নিয়ে কুহুর কাছে আসলেন।কুহুকে জানালেন তাহমিদের বিষয়ে। তারা সবাই রাজি সেকথা বলতেও ভুললেননা। তিনি এ-ও বললেন কায়েস ঢাকায় আসছে। কুহু রাজি থাকলেই আজই সে মেয়ের বিয়ে দিবে৷ তাহমিনা আক্তার কুহুকে ছেলের বউ হিসেবে পেতে চান একথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন।
কুহু তাদের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর জানায় সে-ও রাজি।

আফরোজা নাজনীন শ্বাশুড়িকে কুহুর মতামত জানালেন। এর পরপরই তিনি সবাইকে ফোন আসতে বললেন। তিনি আজ ভিষণ খুশি। কুহু এখন থেকে সারাজীবন তার কাছে থাকবে, এরথেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে!
শাহনাজ সুলতানা বড় বোনের ফোন পাওয়ার দুই ঘন্টা পরই চলে এসেছেন। নাজমা পারভিন চিটাগং থেকে আসবেন। তার দেরি হবে আসতে। তবে তারা প্লেনে আসবেন। নীরা আর তাওহীদও সিলেট থেকে প্লেনে আসবে।
ইতোমধ্যেই কায়েস এবং শফিউল বাসায় এসেছে।

সিক্তা, আরোশি কুহুকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে চিৎকার দিচ্ছে।
‘ কুঞ্জছায়া ‘হঠাৎ করেই বিয়ের সাজে সেজে উঠেছে। সানাউল রাশেদিন কাউকে ফোন করে বাড়ি সাজানোর ব্যবস্থা করেছেন। তিন ঘন্টার মধ্যে বাড়ি পুরোপুরি সেজে উঠেছে।
তাহমিদ নিজের রুমে ঘুমাচ্ছে। আনান ভার্সিটি থেকে সোজা এই বাসায় এসেছে। ও সোজা এসেছে তাহমিদের রুমে। কিন্তু তাহমিদকে ঘুমাতে দেখে ও যায় কুহুর কাছে।

” কিরে কোকিলা, এসব কি শুনছি! তুই নাকি আজ ঐ পাগল ডক্টরের বউ হবি? ঐ তার ছেঁড়ার সাথে কিভাবে বসবাস করবি! তোর ভয় করবেনা? ”
” আনাইন্না, তুই আমার ভাইয়াকে কি বললি? যদি প্রানের ভয় থাকে তবে অফ যা। আমি এক্ষুনি ভাইয়াকে ডাকব। ” সিক্তা খেঁকিয়ে উঠল।

” দেখ ভেজা গামছা, বেশি পটরপটর করিসনা। তোর ভাইকে আমি ভয় পাই নাকি? তোর বয়সে বড়, তাই সম্মান দিয়ে কথা বলবি। খুব তো আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস, নিজে যে বড় মাপের বেয়াদব তা কি জানিস? ”
” ভেজা গামছা মানে কি? আর আমি বেয়াদব! তুই আগে বল ভেজা গামছা মানে কি? তারপর বাকিটা দেখছি। ”
” ভেজা গামছা মানে, ভেজা গামছা। সিক্ত বা সিক্তা যাই বলি না কে সেটা মানে তো ভেজা জিনিস। আর ভেজা জিনিস মানেই গামছা। যেমনটা তুই ভেজা গামছা। ”

আনানের কথা শুনে সিক্তা রাগে তেড়ে আসলে আনান দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সিক্তাও ওর পিছুপিছু দৌড় দেয়। আনান দৌড়াতে দৌড়াতে দক্ষিণের করিডোরে যেয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আর যাওয়ার রাস্তা নেই। করিডোরের শেষ মাথায় বারান্দা। সিক্তাকে আসতে দেখে ও বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ায়।
” এবার কোথায় যাবি? তোকে আমি আজকেই সাইজ করব। ” সিক্তা এদিকওদিক তাকিয়ে একটা লোহার রড পায়। সেটা হাতে তুলে নিয়ে এগিয়ে যায় আনানের দিকে।
আনান আরেকটু সরে গ্রীল ঘেষে দাঁড়ায়। তবে ও ভয় পাচ্ছেনা। আজ প্রেয়সির চোখে নিজের সর্বনাশ দেখেছে সে। মিটমিটিয়ে হাসছে আনান।

আনানের হাসি দেখে সিক্তা থমকে দাঁড়ায়। ও বুঝতে পারছেনা হঠাৎ কি এমন হল, যা দরুন আনান হাসছে!
” দাঁড়িয়ে আছিস কেন? মার আমাকে। নাকি সাহস নেই? খালি ভাইয়ের মত ফাঁপড় মারতে জানিস? ”
আনান কথাটা বলা মাত্রই সিক্তা রড তুলে আনানের মুখোমুখি হতেই, আনান হ্যাঁচকা টানে রড নিয়ে ফেলে দেয়। এরপর ও সিক্তার দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।

” এভাবে রুদ্রমূর্তি না ধরে, একটু ভালোবাসলেও তো পারিস। আর কতদিন একতরফা ভলোবাসব? তোকে ভালোবাসতে বাসতে আমার ভালোবাসার ক্ষুধা বেড়েই চলেছে। এবার একটু ক্ষুধা নিবারন কর। একদিন ঝগড়া না করে ভালোবেসে আমার চোখে তাকিয়ে দেখ। দেখবি তোর জন্য এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে আমি অপেক্ষায় আছি। হাহাকার করছি তোর ভালোবাসা পেতে। ভালোবাসি সিক্তা, তোকে বড্ড ভালোবাসি। ” টুপ করেই সিক্তার ডান চোখে চুমু দেয় আনান। অপেক্ষা করেনা সিক্তা প্রত্যুত্তরের। পা বাড়ায় তাহমিদের রুমের উদ্দেশ্যে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ১৯

সিক্তা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। এসব কি বলে গেল আনান! এ-ও কি সম্ভব! কিন্তু ওর কথা শুনে একবারও মনে হলোনা ও মিথ্যে বলেছে। আনানের কন্ঠের সেই মাদকতা এখনো সিক্তার কানে বাজছে।
আফরোজা নাজনীন আর তাহমিনা আক্তার মিলে শপিং করে এনেছে। তবে বিয়ের বেনারসি কায়েস নিজে পছন্দ করেছে।
নুসরাত এবং তার মেয়েকে অবাক করে দিয়ে মাগরিবের নামাযের পর তাহমিদ-কুহুর বিয়ে পড়ানো হল।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ২১