বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ২১

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ২১
জাওয়াদ জামী

কুহুকে তাহমিদের রুমে দিয়ে গেলেন তাহমিনা আক্তার। তিনি ও আফরোজা নাজনীন মিলে কুহুকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছেন। সেসব কথা ভাবতেই কুহু লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। আবার ভয়ও লাগছে। আর এদিকে সিক্তা, আরোশি, তনয়ার খোঁ’চা তো আছেই। আনানও বাদ যাচ্ছেনা। ও একটু পরপর এসেই কুহুকে এটাসেটা বলে যাচ্ছে।
এই মুহূর্তে কুহুর সামনে দাঁড়িয়ে আছে আনান। তাহমিনা আক্তার ওকে রুমে দিয়ে যাবার পর আনান এসেছে।

” কোকিলারে, তুই এটা কি করলি! ঐ তার ছেঁ’ড়া ডক্টরের সাথে শেষমেশ সংসার শুরু করলি! তোর কপালে দুঃখ আছে রে, কোকিলা। শোন তোকে একটা কথা বলি, ঐ তার ছেঁ’ড়াকে বলিস আমাকে সম্মান দিতে। আমি এখন তার বউয়ের বড় ভাই। তার কাছে একজন সম্মানিত ব্যক্তি। এই কথা তাকে সর্বদাই মনে রাখতে বলবি। ”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” ভাইয়া, তুমি এখানে কি করছ? যাও বাইরে যাও। তাহমিদ ভাইয়ার আসার সময় হয়ে গেছে। ওকে দরজার সামনে আটকাতে হবে। টাকা না দিলে বউয়ের মুখ দেখতে পাবেনা বেচারা। ” তনয়া এসে আনানকে বলল।
” তাইতো, আমি এখানে কি করছি! আজ তো ঐ তার ছেঁ’ড়া ডক্টরের পকেট খালি করতেই হবে। চল যাই। যাইরে কোকিলা। আমার কথাগুলো মনে রাখিস। ”

রাত বারোটা পাঁচ। তাহমিদ নিজের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজায় হেলান দিয়ে বিচ্ছুরা দাঁড়িয়ে আছে। ওর ভ্রু কুঁচকে আসে।
” এখানে কি? এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? সামনে থেকে সর আর আমাকে ভেতরে যেতে দে।”
” টাকা দাও। তবেই ভেতরে যেতে পারবে। ” সামনে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল আরোশি।
” রুম আমার, সেখানে যাব আমি কিন্তু তোদের টাকা দিব কেন? যা ভাগ। ”

” রুম তোমার, ভেতরে তুমিই যাবে। কিন্তু যার কাছে যাবে, সেই মেয়েটা আমাদের বোন। আমার বোনের কাছে যাবে কিন্তু আমাদের টাকা দিবেনা, এটা কেমন করে হয়? তাই কথা না বলে, টাকা দাও, রুমে যাও। ” আনানের সোজাসাপটা জবাব।
” আনান, একটু বেশি হয়ে যাচ্ছেনা? সরে দাঁড়া, আমি ভেতরে যাব। ”
” আজ বেশি হওয়ার মত কিছুই নেই। সোজা কথা তুমি টাকা না দিলে ভেতরে যেতে পারবেনা। এটা শুধু আমার নয়, আমাদের সবারই কথা। কি বলিস, ভেজা গামছা? ”

সিক্তা আনানের দিকে না তাকিয়ে তাহমিদের দিকে তাকায়। দুপুরের সেই ঘটনার পর থেকে ও আনানের দিকে তাকাতে লজ্জা পাচ্ছে। সিক্তার হাসি দেখে তাহমিদ বুঝে গেছে, আজ এদের টাকা না দিলে নিস্তার নেই।
” কত টাকা লাগবে তোদের? ”
” বেশি না মাত্র পঞ্চাশ হাজার। ”

” কিহ্! পঞ্চাশ হাজার টাকা কম মনে হয় তোর কাছে? দশ হাজার দিচ্ছি, নিয়ে কেটে পর। ”
” সরি ভাই, পঞ্চাশ হাজারের এক পয়সাও কম হবেনা। ”
” আমার রুমে যাওয়ার দরকার নেই। তোরা সারারাত আমার বউকে পাহারা দে। আমি অন্য রুমে গেলাম। ”

” ছিহ্ ভাই ছিহ্। তুমি এত কৃপণ তা জানা ছিলনা। মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকার জন্য আজকের রাত মাটি করে চাচ্ছ! নাতি-নাতনীদের বলার জন্য কোন গল্প রাখবেনা? তারা বড় হয়ে জানবে তাদের দাদু পঞ্চাশ হাজার টাকার জন্য বাসর ঘরে ঢোকেনি! বউয়ের থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার দাম তাদের ডক্টর দাদুর কাছে বেশি! তারা লজ্জায় মুখ লুকাবে। এর জন্য দায়ী শুধু তুমি, ভাই। ” আনান ভাষণ দেয়ার ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে থামল।

” ভাইয়া, এমন কিপ্টেমি করোনা। আমরা পাঁচজন আছি, তাই তোমার কাছে পঞ্চাশ হাজার চাইছি। প্রত্যেকে দশ হাজার টাকা পেলে একটু মন খুলে শপিং করতে পারব। প্লিজ ভাইয়া, দাওনা। ” সিক্তা অনুনয় করল।
” ভাইয়া, দিয়ে দাও। নতুন বউটাকে আর কতক্ষণ একা রাখবে। আরেকটু দেরি হলে, ভেতরে গিয়ে দেখবে ও ঘুমিয়ে পরেছে। ” এবার নিহানও ওদের সাথে গলা মেলায়।

” তুমি না আমাদের সুপারম্যান, ভাইয়া? আমরা কোন কিছু না চাইতেই এনে দাও। তবে আজ যখন নিজের মুখে চাইছি, তখন এত টালবাহানা করছ কেন! ” তনয়া এবার তাহমিদকে পটানোর চেষ্টা করছে।
” তোরা থামবি? দেখি সর, আমাকে ভেতরে ঢুকতে দে। ”
” নাআআআআ। টাকা ছাড়া তোমার ভেতরে যাওয়া হবেনা। ” আরোশী চিৎকার দিয়ে বলল।
” আমি কি পঞ্চাশ হাজার টাকা পকেটে নিয়ে ঘুরছি? ভেতরে যেতে দিলেই তবে তোদের টাকা দিতে পারব। এখন কি করবি সেটা তোদের বিষয়। ”

” তোমাকে যেতে দিব, তবে একটা শর্ত আছে। তোমার সাথে আমাদের প্রতিনিধি ভেতরে ঢুকবে। ”
” মানে! ”
” তুমি যদি রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দাও। তাই, এখান থেকে কেউ একজন আগে রুমে যাবে, তারপর তুমি ঢুকবে। তুমি টাকা আমার কাছে দিলেই, তবে আমাদের প্রতিনিধি বেরিয়ে আসবে। ”
” আনান, তোর আজকের সব কথা, কর্মকান্ড আমি মনে রাখব। আমার সাথে সুযোগ নিচ্ছিস তাই না? সুযোগ নেয়া কাকে বলে, আমি তোকে দেখিয়ে দিব। এই তোর কি একটুও লজ্জা করছেনা, ছোট বোনের বাসর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছিস? নিহান তোরও দেখি লজ্জাশরম সব গেছে! ”

” কোকিলা যদি আমাদের ছোট বোন হয়, তবে আমরা তোমার সম্পর্কে বড় হই। আমাদেরও তো তুমি সমানে তুই তুই করেই যাচ্ছ। নিজে আগে আমাদের একটু সম্মান কর। পরে আমরা বাসর ঘরের দরজায় দাঁড়ানোর বিষয়ে চিন্তা করছি। ”
তাহমিদ বুঝতে পারছে এরা নাছোড়বান্দা ন্যায় ওর পিছে পরেছে। এদেরকে টাকা না দিলে সত্যিই রুমে ঢুকতে দিবেনা। আজকের রাতটা ও কোনভাবেই মাটি করতে চায়না।

” আচ্ছা, তোদের প্রতিনিধিকে আগে রুমে পাঠিয়ে দে। এরপর আমি যাচ্ছি। ”
” তনয়া, তুই রুমে যা। তোর দুলাভাই টাকা বের করলে আমার হাতে দিলে তোকে আমি ডাকব। তখনই তুই বেরিয়ে আসবি। ”
” ঠিক আছে, ভাইয়া। আমি আমার দ্বায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করব। ”

এতক্ষণ কুহু ভেতরে থেকেই ওদের সব কথা শুনতে পাচ্ছিল। ও মুচকি মুচকি হাসছে। তাহমিদকে ওরা বেশ ভালোভাবেই জব্দ করেছে।
তনয়াকে রুমে আসতে দেখে মুখ স্বাভাবিক করল কুহু।
তনয়া রুমে এসে কোন কথা না বলে ড্রেসিংটেবিলের সামনে থেকে ছোট টুল নিয়ে বসে পরল।
তাহমিদ ভেতরে এসে কুহুর দিকে এক পলক তাকিয়ে, সোজা আলমিরার দিকে যায়। এরপর সেখান থেকে টাকা বের করে আনানের কাছে দিলে, আনান তনয়াকে ডাকা মাত্রই তনয়া রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
তনয়া বেরিয়ে গেলে, তাহমিদ দরজা লাগিয়ে খাটের কাছে আসে।

একা রুমে তাহমিদকে দেখে কুহুর বুক ধুকপুক করতে থাকে। হঠাৎ করেই রাজ্যের ভয় ওর মনে এসে হানা দেয়।
তাহমিদ দূর থেকে কুহুর মুখ দেখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় রজনীগন্ধার সাজে সজ্জিত বিছানার দিকে। যেখানে তার রমনী মাথা নিচু করে ওর অপেক্ষা করছে।
তাহমিদ যত এগিয়ে আসছে, কুহুর বুক ততই ধুকপুক করছে। ভয়ে শরীর অবসন্ন হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে যেকোন মুহূর্তেই জ্ঞান হারাবে। গলাটা যেন শুকিয়ে খটখটে হয়ে গেছে।

তাহমিদের ঠোঁটের কোনে ঝুলছে প্রাপ্তির হাসি। যাকে জীবনে একান্ত আপন করে চেয়েছিল, অবশেষে সে তারই হয়েছে।
বিছানার মাঝখানে বসে থাকা হৃদয়েশ্বরীর পাশে এসে বসল তাহমিদ।
” ঘোমটা তুমি তুলবে নাকি আমি সাহায্য করব? ”

তাহমিদের এমন কথায় কুহু স্তম্ভিত। এই লোক বলে কি! বাসর ঘরে বউ নাকি নিজেই নিজের ঘোমটা তুলবে! আনান ভাইয়া যে বলেছিল, ইনি তার ছেঁ’ড়া। ভাইয়া ভুল কিছু বলেনি।
কুহুর ভাবনার মাঝেই ঘোমটা খুলে পিঠে লুটোপুটি খায়। হুট করে এমনটা ঘটায়, কুহু একটু চমকে যায়। পরক্ষণেই লজ্জায় চোখ বন্ধ করে।

” একটিবার মুখ তুলে চাও, আমার রাতজাগা পাখি। তোমাকে দেখে আমার চোখের তৃষ্ণা মেটাই। বহুদিনের তৃষ্ণার্ত চোখে তুমিই পারো সুখের সঞ্জীবনীতে ভরিয়ে দিতে। আমার এই বুকে তোমার প্রনয়ের আ’গু’ন জ্ব’ল’ছে। তুমি তোমার অমৃত সুধা দিয়ে আমার বুকের আ’গু’ন নিভিয়ে দাও। দিবে তো আমার সুখের পাখি? ”
তাহমিদের ফিসফিসিয়ে বলা কথায় কুহুর শরীরে শিহরণ খেলে যায়। মানুষটা ওকে এত ভালোবাসে কেন? কুহু বুঝতে পারেনা এতটা ভালোও কেউ কাউকে বাসতে পারে!

তাহমিদের স্পর্শ পেয়ে কুহু চমকে উঠে। তাহমিদ ওর গলায় চেইন পরিয়ে দিচ্ছে।
” বউ, আমি তোমার জন্য তেমন কিছুই কিনতে পারিনি। তুমি কালকে বড়মা কিংবা মা’য়ের সাথে গিয়ে পছন্দমত জুয়েলারি কিনে নিও। মেয়েদের জুয়েলারি ব্যাপারে আমার কোনও ধারনা নেই। তাই এই সামান্য কয়েকটা গহনা কিনেছি। জানিনা তোমার পছন্দ হবে কিনা। ”

” আমার আর কোন গহনা লাগবেনা। এগুলোই অনেক সুন্দর। আপনি মা কিংবা ফুপুকে আর কিছু কেনার কথা বলবেননা। ”
কুহুর কথার মধ্যে কোন মিথ্যা খুঁজে পায়না তাহমিদ। ওর চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা এই সামান্য গহনা পেয়েই খুশি হয়েছে। এক টুকরো সুখের মলয় এসে ছুঁয়ে দিয়ে যায় তাহমিদের মন কানন। সে ভুল মানুষকে জীবন সঙ্গী করেনি।
” কেন লাগবেনা! অবশ্যই লাগবে। আমার বউ থাকবে রাজরানীর মত করে। তাকে দেখলেই যেন সবাই বলে, ঐ যে ডক্টর তাহমিদ রাশেদিনের বউ। আমার চোখে যে রানী, তাকে দুনিয়ার চোখে অবশ্যই রাজকুমারী লাগতে হবে। বুঝেছ, আমার অন্তঃপুর তটিনীর তরঙ্গ ? যে তরঙ্গের দোলায় আমার বক্ষ দোলে, দোলে প্রেম সরোবরের শতদল। ”

তাহমিদের আবেগ মাখা গলার স্বরে কুহুর বুকের ভেতর শত শত প্রজাপতি পাখনা মেলে। চিত্ত কাননের নীপ শাখে যেন হাজার কোকিলের কুহুতান শুনতে পায়।
তাহমিদ ওর সুখ পাখির মুখখানি দু হাতের আঁজলায় তুলে ধরে অধরে অধর মিলিয়ে দেয়।
আর সেই সুখ পাখি হরিণীর ন্যায় জড়োসড়ো হয়ে, অনুভব করতে থাকে তার একান্ত পুরুষের প্রথম মধুমাখা প্রনয়। এক অজানা সুখে আন্দোলিত হচ্ছে ওর তনু-মন।

এভাবে কতক্ষণ তাহমিদ ওর সুখ পাখির থেকে সুখ ছিনিয়ে নিয়েছে তা দুজনের অজানাই থেকে যায়। একটা সময় পর তাহমিদ কুহুর অধরজোড়া ছেড়ে দিয়ে ওর কপালে কপাল ঠেকায়।
কুহু লজ্জায় চোখ বুঁজে থাকে।
” বউ, এভাবে লজ্জা পেলে চলবে! তোমার শিরায়-উপশিরায় এখনো তাহমিদের প্রনয়ের প্রলেপ মাখানো বাকি আছে । তখন কি করবে তুমি? একটু লজ্জা তখনকার জন্যও রাখো। আমিও দেখব আমার বউ আমার প্রনয়ে দিশেহারা হয় নাকি লজ্জায় কুঁকড়ে যায়। ”

তাহমিদের কথা শুনে কুহুর মনে হচ্ছে ও এখনই মাথা ঘুরে পরে যাবে। এই লোকটা এত লজ্জা দেয় কেন!
” ছিহ্ এসব কি বলছেন! আপনি একটু চুপ করুননা। ”
” কি বলছি! আমি তো বউকে নিয়মকানুন শেখাতে চাচ্ছি। আমি আমার প্রনয়ের বেড়াজালে তাকে মাতাল করতে চাই। আমার…..
তাহমিদ আর কিছু বলতে পারেনা। কুহু ওর মুখ চেপে ধরে।

” এবার কথা বন্ধ করে, চুপচাপ গিয়ে অজু করে আসুন। ফুপু দুজনকে একসাথে নামাজ আদায় করতে বলেছে। ”
” যথাআজ্ঞা মহারানী। আপনিও কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নিন। আলমিরা ভর্তি আপনার জন্য কাপড় রাখা আছে। সেখান থেকে নিজের পছন্দমত শাড়ি নিয়ে পরিধান করুন। বাই দ্য ওয়ে, শাড়ি পড়তে পারেন তো? ”

” একটুআধটু পারি। তবে আস্তে আস্তে পুরোটাই শিখে নিব। ” অস্ফুট স্বরে বলে কুহু।
তাহমিদ বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে ঢোকে।
কুহু আলমিরা খুলে অবাক চোখে তাকিয়ে রয়। পুরো আলমিরা ভর্তি শাড়ি! কখন এত শাড়ি তাহমিদ কিনেছে! ও শাড়ি নিবে কি, এত শাড়ি দেখে খেই হারিয়ে ফেলেছেন।
তাহমিদ অজু করে এসে দেখল কুহু আলমিরার সামনে অসহায় চোখে দাঁড়িয়ে আছে।

” এভাবে কি দেখছ, সুখ পাখি? সব শাড়িই তোমার। যখন যেটা মন চাইবে, তখন সেটাই পরবে। আমি শাড়ি পরিহিতা টুকটুকে বউকে দেখতে চাই। যার নুপুরের রিনিঝিনি ছন্দে ‘ কুঞ্জছায়া ‘ মুখর থাকবে। যার রিনরিনে গলার স্বরে ‘ কুঞ্জছায়া ‘ প্রতিটি দেয়াল দুলে উঠবে। ” কুহুকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরে ওর গলায় চুমু দিচ্ছে আর কথাগুলো বলছে তাহমিদ।
” কোন শাড়ি পরব? বুঝতে পারছিনা। ” অনেক কষ্টে বলল কুহু।

তাহমিদ ওকে ছেড়ে দিয়ে আলমিরার দিকে যায়। কিছুক্ষণ পর একটা হালকা কলাপাতা রংয়ের সুতি শাড়ি বের করে কুহুর কাছে দেয়।
দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করেছে কিছুক্ষণ আগে।
কুহু রুমে থাকা চেয়ারটায় চুপচাপ বসে আছে। তাহমিদ খাটে পা ঝুলিয়ে বসে থেকে কুহুকে দেখছে। ওর ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি।

এদিকে কুহু বিছানায় যেতে ভয় পাচ্ছে। ও জানে আজ রাতে কি হতে চলেছে। ফুপু, দিদুন আর ওর শ্বাশুড়ি ওকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে। ওকে স্বাভাবিক থাকতে বলেছে। কিন্তু কুহু কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছেনা। ভয়ে হাতের তালু ঘেমে উঠছে।

” বাই এনি চান্স, তুমি কি আমার কোলে উঠতে চাও! কি চাচ্ছো, তোমাকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে আসি? তবে আমি রাজি। তোমাকে কোলে নিয়ে শুধু এই বিছানায় কেন, সারা বাড়ি ঘুরিয়ে আনতে কোন সমস্যা হবেনা। ” তাহমিদ উঠে আসতেই কুহু লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
ততক্ষণে তাহমিদ ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এক ঝটকায় ও কুহুকে কোলে তুলে নেয়।

আজ রাত দুই পুরুষ-নারীর কাছে আসার রাত। এক অতৃপ্ত পুরুষের তার ভালোবাসার নারীকে প্রনয়ের দোলায় দুলিয়ে তৃপ্ত হওয়ার রাত। কাঙ্ক্ষিতা নারীকে খুব কাছে পেয়েও একটুও অধৈর্য্য হয়না সেই অতৃপ্ত পুরুষ। নিজেকে শান্ত রেখে তার রমনীকে ভাসায় প্রেমোচ্ছাসে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ২০

পায়ের পাতা থেকে শুরু করে ললাটে অধর ছোঁয়ায়। পরতে পরতে রমনীর কাছে নিজের ভালোবাসার পরিচয় করায়। রমনীও সব লাজলজ্জা ভুলে সায় দেয় তার একান্ত পুরুষের ডাকে। যেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়না কোন আভরণ। দুজন দু’জনের এতটাই কাছে আসে, যতটা কাছে আসলে নিজের অস্তিত্বকে একে-অপরের কাছে বিসর্জন দেয়া যায়।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ২২