বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৭

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৭
জাওয়াদ জামী

ওরা খাবার টেবিলের কাছে এসে চেয়ার নিয়ে বসে পড়ল। কুহু নিচ থেকেই সিক্তাকে খেতে ডাকল। সিক্তা নিচে এসে আনানকে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে চেয়ারে বসল।
আফরোজা নাজনীন, তাহমিনা আক্তার এবং নীরাও হাজির হয়েছে। তাহমিদের কথায় ওরা সবাই একসাথে খেতে বলেছে। সবার প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে আফরোজা নাজনীনও নিজের প্লটে খাবার নিলেন।

” সিক্ত, তোর ভাই আজ মেডিকেলে যায়নি কেন রে? তাকে কি মেডিকেল থেকে পারমানেন্টলি বহিষ্কার করেছে? অবশ্য এটা যদি ঘটেও থাকে তবে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। কেই-বা চাইবে কোন পাগল, তার ছেঁড়া পাব্লিককে ডক্টরের মর্যাদা দিতে। তোর কপাল পু’ড়’ল রে, কোকিলা। ” আনান মুখভর্তি পরোটা নিয়ে বলল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সিক্তা পরেছে বিপদে। ও এখন কার পক্ষ নিবে! একদিকে ভাই, অন্যদিকে পছন্দের মানুষ। যদি আনানের পক্ষ নেয়, তবে ভাইয়ের বিরুদ্ধে যাওয়া হবে। আবার ভাইয়ের পক্ষ নিলে আনানের মন খারাপ হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে ও তাহমিদের পক্ষেই কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়।
” এসব তুমি কি বলছ? আমার ভাইয়া পাগল হতে যাবে কেন? তুমি অযথাই ভাইয়াকে হেনস্থা করছ। একটা দিন কি ভাইয়া ছুটি কাটাতে পারেনা? তারও তো ঘর সংসার আছে নাকি? ” সিক্তা কথা বলছে আর আনানকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে। ও কিছুতেই চায়না তাহমিদকে খেপিয়ে দিতে।

কিন্তু আনান সিক্তার চোখ রাঙানি থোরাই কেয়ার করলে তো।
” হয়েছে? এবার থাম। দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা বন্ধ কর সিক্তা। তুই নিজেকে যতই চালাক ভাবিস, আদতে তুই বোকার হদ্দ। তাই আপাতত চুপচাপ খেতে থাক। আর একান্তই যদি তোর কিছু বলতে ইচ্ছে করে, তবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে যা বলার বল। ”

তাহমিদের কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। তাহমিদ হঠাৎ ওকে এই ধরনের কথা বলল কেন? এসব কথার অর্থই বা কি?
” আহ্ তোরা খেতে বসেও একটু শান্ত থাকবিনা? চুপচাপ খা। সারাজীবন এমন ছোটটিই থাকবি নাকি একটু বড় হবি? একজন বিয়ে করেছে, কয়দিন পর দেখা যাবে বাচ্চার বাপ হয়েছে। সে-ও যেমন বাচ্চামো ছাড়তে পারছেনা, তোরও অবস্থা দেখছি তেমনই। তোরও বিয়ের বয়স হল, অথচ এখনও বাচ্চাই থেকে গেলি। ” আফরোজা নাজনীন আনানকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললেন।

” বিয়ের বয়স হলেই কি, আর না হলেই কি খালামনি! আমাকে তো এখনই বিয়ে দিচ্ছেনা কেউ। অথচ একটা বউ যে এই মুহূর্তে ভিষণ প্রয়োজন, তা বুঝলে তো। তোমরা আমাকে বড় হতে দিলে কই। ”
আনানের কথা শুনে সিক্তা বিষম খায়। লজ্জায় ওর মাথা নিচু হয়ে গেছে। মনে মনে ভাবছে, কি নির্লজ্জ ছেলেরে বাবা!
” বড়মা, তোমার বোনের ছেলের জন্য মেয়ে দেখ। আর আমাকে যদি বল, আমি মেয়ে দেখতে পারি। মেডিকেলে সদ্য জয়েন করা একজন নার্স আছে। দেখতে-শুনতে মন্দ নয়। এটার সাথে মানিয়ে যাবে। এর যে যোগ্যতা আপাতত নার্স ছাড়া অন্য কেউ কপালে জুটবেনা। ”

তাহমিদের এমন উস্কানিমূলক কথায় আনানের মাথা গরম হয়ে গেল। ওর সম্পর্কে সবকিছু জেনেও তাহমিদ এমনটা বলছে! আনান মনে মনে তাহমিদকে কঠিন একটা গালি দিয়ে বসল।
ঐদিকে নীরা ওদের দু’জনের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল। বেশ খানিকক্ষণ হাসার পর অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে কথা বলল।

” সিরিয়াসলি আনান, তাহমিদ, তোমরা পারোও বটে। দু’জন একসাথে হলে কিছুনা কিছু নিয়ে তোমাদের বাঁধবেই। কিন্তু এত কিছুর পরও দুজনের বন্ডিং একটুও ছুটে যায়না। কেম্নে কি একটু বলবে? ”

” ভাবি, তুমি এই পা’গ’ল ডক্টরের দিকে না তাকিয়ে আমার দিকে মনোযোগ দাও। এই ভদ্রলোক হচ্ছে বংশপরম্পরায় পা’গ’ল। এই বংশের মধ্যে আমি শুধু তার বাবাকে ছাড়া বাকি সবগুলোকে পা’গ’ল বলেই জানি। আর রইল বন্ডিংয়ের বিষয়টা। আমিই তার সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করি। ইনফ্যাক্ট মানিয়ে নেই। কারন আমি জানি, এই ভদ্রলোকের কোনও বন্ধুবান্ধব নেই। সবাই জানে সে তার ছেঁড়া। সেকারণে আর আশেপাশে কেউ ভিড়েনা। অবশ্য এটা সে কাউকেই বুঝতে দেয়না। কিন্তু আমিতো সেটা হতে দিতে পারিনা। এই বাড়ির সম্মানের কথা চিন্তা করে আমি তাকে ছেড়ে যাইনা। হাজার অসম্মানের পরও তাকে আমি ভাই ডাকি। বুকে আগলে রাখি। ”

আনান চোখের কোনা মুছল সিক্তার ওড়না দিয়ে। সে এমন ভাব করছে যেন কথাগুলো বলতে গিয়ে ওর চোখে পানি এসেছে। কিন্তু তা মোটেও নয়।
আনান হুট করে সিক্তার ওড়না নেয়ায় মেয়েটা একটু চমকে গেছে। কেউ যদি কিছু মনে করে। ওর আনানের ওপর ভিষণ রাগ হচ্ছে।

তাহমিদ খাওয়া বন্ধ করে আনানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আজ একটা হ্যাস্তন্যাস্ত না করলেই নয়। আনান এতদিন ওর পেছনে দূর্নাম করত। কিন্তু আজকাল ওর সামনেই নানান কথা বলছে। ওর সাথে সাথে আজকাল ওর বংশের মানুষজনকেও পা’গ’ল বলছে আনান!
নীরা একবার আনানের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার তাহমিদের দিকে তাকাচ্ছে। তবে তাহমিদ যে রে’গে গেছে সেটা ও বেশ বুঝতে পারছে।

কিন্তু আনান কোন চিন্তা না করে খেয়ে যাচ্ছে। দুইটা পরোটা শেষ করে আরেকটা পরোটার জন্য কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। তাহমিদকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে, ও তাহমিদের প্লেট থেকে পরোটা তুলে নিয়ে খেতে থাকে। আনান ভালো করেই জানে, তাহমিদের যতই রা’গ হোকনা কেন ও আনানকে কখনোই কিছু বলবেনা। ওদের দু’জনের সম্পর্কটাই এমন। তাহমিদ আনানকে হাজার কথা শোনালেও যেমন ওর রা’গ হয়না। তেমনি তাহমিদ আনানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেলেও আনানকে কিছুই বলবেনা। ওদের দু’জনের সম্পর্কে যেমন সম্মান আছে, তেমনি হাসিঠাট্টার সম্পর্কটাও বেশ জোড়ালো। তার থেকে দৃঢ় ওদের বন্ধুত্ব।

কুহু তাহমিদের দিকে তাকিয়ে ওর প্লেটে আরেকটা পরোটা তুলে দিল।
” আমাকে আর পরোটা না দিয়ে, তোমার ভাইকে দাও। ওর খাওয়া দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন ধরেই না খেয়ে আছে। আজ ওকে এমন খাওয়ানো খাওয়ায়, যাতে আগামী একমাস ওর কোন কিছু খাওয়া না লাগে। ওকে ঠিকঠাক আপ্যায়ন কর। সব শেষে আমি ওকে আপ্যায়ন করব। ”

আনান তাহমিদের কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে দেঁতো হাসি হাসল।
” পারবেনা ভাই, তুমি আমাকে কিছুই করতে পারবেনা। সম্পর্কের গ্যাঁড়াকলে তুমি ফেঁসে গেছ। এখন আমার সময়। তোমার মাথার ওপর উঠে আমি তান্ডব নৃত্য করব। তুমি আমাকে ফেলতেও পারবেনা, আবার ধরতেও চাইবেনা। সিচুয়েশনটা কেমন একটু ভেবে দেখতো। ”

” আনান, এইবার একটু থাম বাবা। তুই-ও খা, তাহমিদকেও খেতে দে। ছেলেটা একদিনও ধীরেসুস্থে খেতে পারেনা। ” আফরোজা নাজনীন আনানকে থামিয়ে দিলেন।

এতক্ষণ তাহমিনা আক্তার নীরবে সব অবলোকন করছিলেন। তবে আজ তিনি কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছেন। আনান ছেলে হিসেবে মন্দ নয়। শিক্ষা-দীক্ষা, আদবকায়দায় তাহমিদ অথবা তাওহীদের থেকে কোন অংশেই কম নয়। যে ছেলে এই বয়সেও বাবা-মা’য়ের বাধ্য থাকে, সেই ছেলে আজীবন বাবা-মা’য়ের সুসন্তান হিসেবেই পরিগণিত হবে। আর এমন ছেলেরাই স্বামী হিসেবে পারফেক্ট। তারা বাবা-মা’র যেমন কদর করতে জানে, তেমনি স্ত্রীকেও রানীর আসনে বসিয়ে রাখতে পারদর্শী। আর ভবিষ্যতে এমন ছেলেরাই আদর্শ পিতা রূপে আবির্ভূত হয়।

” তাহমিদ, আজ মেডিকেলে যাসনা বাবা। আজকের দিনটা বাসায় থাক। এত পরিশ্রম করলে তোর শরীর টিকবে? ” তাহমিনা আক্তার খুব করে চাইছেন আজকে তার ছেলেটা বাসায় থাকুক।
” মা, আজকে থাকতে পারবনা। দুই-এক দিন পর ছুটি নিব। আমি ঘন্টা দুয়েক বাসায় আছি। নাস্তা করে দিদুনের কাছে যাব। অনেকদিন থেকে দিদুনের সাথে গল্প করিনা। দিদুনের খোঁজখবর ঠিকমত নেয়া হয়না। আমি বোধহয় দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছি, মা। ”

” এসব দেখে বলছিস, বাবা? এভাবে বলিসনা। তোরা দুই ভাই আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। তোদের কিছু হলে আমি বাঁচতে পারব, তুই-ই বল? ” তাহমিনা আক্তার আঁচলের কোনায় চোখের পানি মুছলেন।
এদিকে তাহমিদের কথা শুনে কুহুর বুক ধক করে উঠেছে। নীরা চমকে উঠেছে শ্বাশুড়ির কান্না দেখে। আনানও খাওয়া থামিয়ে অসহায়ের মত এদিকওদিক তাকাচ্ছে।

” তাহমিনা, এসব কি বলছিস তুই? আর এভাবে কাঁদছিস কেন? কোথায় তুই ছেলেকে সাহস দিবি, ওকে সামনে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করবি। সেটা না করে তুই ওকে দূর্বল করে দিচ্ছিস! এক ফোঁটাও চোখের পানি ফেলবিনা। তুই কাঁদলে তোর ছেলে খেতে পারবে? তোরা থামলি কেন? খাবার ঠান্ডা হয়ে গেলে খাবি? ” আফরোজা ধমকে উঠলেন।
এরপর আর কোন কথা হয়না। সবাই নীরবে খাওয়া শেষ করল।

শিউলি সকাল থেকে ব্যস্ত সময় পার করছে। সকালে ঘুম উঠেই হাঁস-মুরগি জ’বা’ই করে, প্রতিবেশিদের সাথে নিয়ে কে’টে বেছে ফ্রিজে রেখে দিয়েছে। এরপর চালের গুঁড়া করতে দিয়েছে একজনকে। বিকেলে পিঠা বানাবে। কায়েস জেলেদের বলে রেখেছে। আগামীকাল ভোরে মাছ তুলবে। সকাল এগারোটার মধ্যে সব কাজ শেষ করে শিউলি ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাজারে গেল।

ছেলে-মেয়ের অনুরোধে কায়েস আফরোজা নাজনীন কিংবা কুহু কাউকেই জানায়নি তারা ঢাকা আসছে। দৃষ্টি শিহাব মিলে কুহুকে সারপ্রাইজ দিতে চায়।
বাজার থেকে বাড়ি ফিরতে শিউলিদের বিকেল হয়ে যায়। বিকেলেই আবার পিঠা তৈরি করতে বসল।
কায়েস মাইক্রো ভাড়া করেছে। আগামীকাল সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটার ভেতরে গাড়ি চলে আসবে।
তাহমিদ সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে মেডিকেলে চলে গেছে। কুহু, সিক্তা আজকে ক্লাসে যায়নি। আনানও থেকে গেছে ‘ কুঞ্জছায়া’য়।

নীরা নিজ রুমে মন খারাপ করে বসে আছে। ও কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত কুহু, সিক্তা, আনানের সাথে আড্ডা দিয়ে নিজের রুমে এসেছে। ওর আজকাল কিছুই ভালো লাগেনা। ওর সাথে সবাই আছে, সবকিছুই আছে, তারপরও যেন মনে হয় কিছুই নেই। এই যে তাহমিদ সারাদিনের পরিশ্রম শেষে বাসায় এসে কুহুর মাঝে শান্তি খুঁজে নেয়। ওর সকল ক্লান্তি ঘোচায় কুহুর সান্নিধ্যে এসে। বিষয়টা নীরার কাছে ভিষণ ভালো লাগে। তাওহীদও তো এক সময় এমনই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কি থেকে কি হয়ে গেল! ওর সাজানো-গোছানো জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেল। যদিও তাওহীদ প্রতিদিনই কয়েকবার করে ফোন করে। কিন্তু নীরা একবারও রিসিভ করেনা। এক অজানা অভিমান চেপে বসে বুকের গহীনে। কখনো কি এই অভিমানের পালা ঘুচবেনা? এই দূরত্ব নীরারও সহ্য হচ্ছেনা।

নানান কথা চিন্তা করতে গিয়ে নীরা হু হু করে কেঁদে উঠল।
” ভাবি, তুমি কাঁদছ কেন? কি হয়েছে তোমার? ” কুহু নীরার রুমে আসতেই নীরার কান্না দেখে উদগ্রীব হয়ে ওর দিকে এগিয়ে যায়।
” কুহু, তুমি / তোমরা কত সুখে আছ। আমার জীবনে সুখ নেই কেন বলতে পার? আমি কি খুব খারাপ মেয়ে? সংসার টিকিয়ে রাখার ক্ষমতা আমার কি নেই? আমি কি স্বামীর যোগ্য স্ত্রী হয়ে উঠতে পারিনি? স্বামীকে বেঁধে রাখার কোন যোগ্যতাই কি আমার নেই? ” কুহুর হাতদুটো মুঠোর মধ্যে নিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে নীরা।

” কে বলে তুমি অযোগ্য! তুমি একজন যোগ্য স্ত্রী, যোগ্য মা, যোগ্য পুত্রবধূ। এসব আজেবাজে কথা চিন্তা করে নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছ? আমার একটা কথা রাখবে, ভাবি? যদি অনুমতি দাও তবেই বলব। ” কুহু অনুমতির অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকে নীরার দিকে।

” বল, কি বলবে। আমি একা নিজের সাথে বোঝাপড়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এই মুহূর্তে আমার কাউকে ভিষণ প্রয়োজন। যার সাথে মন খুলে কথা বলতে পারব। বড়মা, তাহমিদকে আর এসব নিয়ে কষ্ট দিতে চাইনা। ”

” ভাবি, তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমান একটা মানুষ। তোমাকে কোন বুদ্ধি কিংবা উপদেশ দেয়ার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। তবুও তোমাকে একটা বলব, সম্পর্কে দূরত্ব আসতে দিওনা। দূরত্বই যেকোন সম্পর্কে ঘুন ধরায়। ভাইয়া কোন ভুল করে থাকলে, তার ভুল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দাও। তাকে শাস্তি দিতে চাইলে, তার কাছে থেকে তাকে শাস্তি দাও। নিজে কষ্ট পেওনা আর ভাইয়াকে কষ্ট দিওনা। বাকি রইল ফুপু আর তোমার দেবর। তারাও তোমার ভালো চায়। তোমাদের দু’জনকে একসাথে দেখতে চায়। তোমার ব্যাক্তিগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত তোমাকেই নিতে হবে। এবং সেটা খুব তারাতারি। এরপর ভাইয়া ফোন করলে তাকে অপেক্ষায় রেখনা। এবার চোখ মুছে নিচে চল। মা আমাদের জন্য কি যেন রান্না করছে। ” কুহু একরকম জোড় করেই নীরাকে নিয়ে নিচে আসল।

তাহমিনা আক্তারের বানানো আইটেম খেতে খেতে সবাই আড্ডা দিচ্ছিল। তখনই নীরার ফোন বেজে উঠল। নীরা তাওহীদের নম্বর দেখে ইতস্তত করছিল। কুহু সেটা বুঝতে পেরে নীরাকে ফোন রিসিভ করতে ইশারা করল।
নীরা ফোন নিয়ে দিদুনের রুমে যায়। দিদুন সবার সাথে ড্রয়িং রুমে আছে। তাই নীরা দিদুনের রুমেই যায়।
নীরা ফোন রিসিভ করে চুপচাপ থাকে।

” নীরু। ” তাওহীদ ব্যাগ্রভাবে ডেকে উঠল।
তাওহীদের গলা শোনামাত্রই নীরা হু হু করে কেঁদে উঠল।
” নীরু, তুমি কাঁদছ কেন! আমার জান, তুমি কেঁদোনা। তুমি কাঁদলে আমার বুকের পাঁজরে হাজারো তীর ভাঙ্গা ঢেউ আছড়ে পরে। একটা মাস পর তুমি আমার ফোন রিসিভ করলে। কিন্তু কথা না বলে কেঁদেই যাচ্ছ। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে নীরু। ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। ”

নীরার কান্না তবুও থামলনা।
তাওহীদ আর সহ্য করতে পারলনা। ও ফোন কে’টে’ই রওনা দেয় ঢাকার পথে। কতদিন পর ওর নীরু ফোন ধরেছে। এবার বুঝি অভিমানের পাহাড় ভেঙে খানখান হল।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৬

বিঃদ্রঃ গত কয়েকদিন থেকে মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছেন।৬ অগাস্ট আমার বড় চাচা মা’রা যায়। ১৫ অগাস্ট মেজো চাচা মা’রা যায়। নয় দিনের ব্যবধানে পরিবারের দু’জন অভিভাবকের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছিনা। এছাড়াও হঠাৎ করেই নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। একারণে বোধহয় রাইটিং ব্লকে পরে গেছি। কিছুতেই লিখতে পারছিনা। চেষ্টা করছি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার কিন্তু পারছিনা। জানিনা কবে স্বাভাবিক হতে পারব আর কবেইবা লিখায় মনোযোগ দিতে পারব। পাঠকমহল আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৮