বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৬

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৬
জাওয়াদ জামী

সকাল বেলা কুহুর ভাঙ্গলে নিজেকে তাহমিদের বাহুডোরে আবিষ্কার করল। মানুষটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। মাথার ওপর মৃদু আওয়াজে ফ্যান ঘুরছে। তাহমিদ তখন শুনেছে এসিতে কুহুর ঠান্ডা লাগে, সেদিন থেকে এই রুমের এসি বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্যানের বাতাসে তাহমিদের ঘন, কালো চুল উড়ছে। ঘুমের মাঝেও মানুষটার ভ্রু কুঁচকে আছে। কিন্তু তার ঠোঁটের কোনে যেন মৃদু হাসি খেলা করছে! এটা কি চোখের ভ্রম?

ঘুমন্ত মানুষটাকে দেখতে কুহুর মন্দ লাগছেনা। কুহু কিছুতেই ভেবে পায়না এই সুদর্শন, প্রতিষ্ঠিত ডক্টর কুহুকেই কেন ভালোবাসতে গেল? আর এতটাও ভালোবাসে কেন? সে ইচ্ছে করলে হাই প্রোফাইল কোন মেয়েকে বিয়ে করতে পারত। আর পাঁচটা ডক্টরের বউদের মত কুহু স্মার্ট নয় কিংবা এ্যালিগ্যান্ট কোন ব্যাপারস্যাপার ওর মধ্যে নেই। ও সরল, সাধাসিধা একটা মেয়ে। চেহারায় আহামরি কিছুই নেই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হঠাৎই কুহুর মনে শিহরণ দোলা দেয়। এই মানুষটা ওকে ভালোবাসে ভাবতেই নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী নারী মনে হচ্ছে। এই মানুষটার বুকের পাঁজরে অনন্তকাল কাটানোর ইচ্ছে তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। এই মানুষটা ছাড়া কুহু অসম্পূর্ণ।

ও নিজেও কি ভাবতে পেরেছিল, তাহমদিকে এতটা ভালোবেসে ফেলবে! আসলে তাহমিদ মানুষটাই এমন। সে নিজেও যেমন উজার করে ভালোবাসতে জানে, তেমনি ও উজার করা ভালোবাসা আদায় করে নিতেও জানে।
কুহু ওর বক্ষস্থলের এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে তাহমিদের মুখাবয়বে হাত বুলায়। গভীর ভালোবাসা নিয়ে ছুঁয়ে দেয় তাহমিদের প্রশস্ত ললাট, ঘন বাঁকা ভ্রু-যুগল, নেশা ধরানো মুদিত চক্ষু, কালচে খয়েরী পুরুষ্টু ঠোঁট। গালে হাত দিতেই খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে আটকায় হাত। কুহু লক্ষ্য করেছে তাহমিদ সপ্তাহে একদিন শেইভ করে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতেই সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

কুহু কিছু না ভেবেই টুপ করে তাহমিদের ললাট আর কপোলে ঠোঁট ছোঁয়ায়। জেগে থাকলে তো কখনোই এই মানুষটাকে চুমু দেয়ার সাহসই করতনা ও। চুমু দেয়ার পর কুহু ভালো করে দেখল সে বুঝতে পেরেছে কিনা। মানুষটা যে ঠোঁটকাটা স্বভাবের! সে জানতে পারলে কুহুকে নির্ঘাত লজ্জায় ফেলবে। কুহু যখন বুঝল সে জেগে নেই, তখন সাহস করে আরও একবার আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায় তাহমিদের পুরো মুখে। এরপর তার উন্মুক্ত বুকে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়েই বিছানা ছাড়তে যায়।

” মুখে, বুকে চুমু দিলে ঠিক আছে। কিন্তু আমার ঠোঁট কি দোষ করল? ঠোঁটে চুমু দিলে কি আমি না করতাম! নাকি আমার জীবাণু আছে? ”
কুহুর পা কেবলই মেঝে স্পর্শ করেছে। ঠিক তখনই তাহমিদের গলা শুনে ওর শরীর লজ্জায় কেঁপে উঠল। ও চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে ধরল। এতক্ষণ লোকটা জেগে ছিল!

কুহু মেঝেয় এক পা রেখে বেকায়দাভাবে বিছানায় বসে আছে। ও নড়াচড়ার শক্তি হারিয়েছে। ইশ! সকাল সকাল কি লজ্জায় পরতে হল। কুহু মনে মনে নিজেকে গালি দিচ্ছে। কেন আবেগের বশে এই খা’টা’শ লোকটাকে চুমু দিতে গেল?
” কি বউ, এভাবে দেবী এ্যাথেনার মত পিঠ দেখিয়েই আমাকে পা’গ’ল করতে চাও? তবে শুনে রাখ, আমি পুরো তুমিটার ওপর অনেক আগে থেকেই পা’গ’ল হয়ে আছি। একটা সময় মনে হত এ্যাথেনার থেকে সুন্দরী, এ্যাট্রাকটিভ কেউ থাকতেই পারেনা। কিন্তু তোমাকে প্রথম দেখার পর সেই ভুল আমার ভেঙেছে। এবার ঝটপট কাছে এসে ঠোঁটে চুমু দিয়ে যাও। নিজ থেকে চুমু খেলে আমার বউটাকে কেমন লাগে একবার স্বচক্ষে দেখি। এই কয়েকমাসে যেটা দেখার সৌভাগ্য হয়নি, আজ সেটা পূরণ কর। ”

কুহু এই ভয়টাই পাচ্ছিল। লোকটা এবার ওকে জব্দ করেই ছাড়বে। কুহু নিজেকে প্রস্তুত করছে লোকটার কথার জবাব দিতে।
” এসব আজেবাজে কি বলছেন! আমি কি করেছি হুম? খালি সুযোগ খোঁজেন? বদ ডক্টর। বাসায় এতটুকু সময়েই এই অবস্থা করে। তবে সারাদিন হসপিটাল, ক্লিনিকে না কি করে! ”
” হোয়াট! কি বললে তুমি? আমাকে কি তোমার ক্যারেক্টারলেস মনে হয়? মাই গড! নিজের একটামাত্র বউ, এই সার্টিফিকেট দিল! দুই-চারটা বউ থাকলে এই সার্টিফিকেট দিলে মেনে নেয়া যায়। কিন্তু আমার একটাই বউ। তাও আবার আমি পিওর ভার্জিন। তা-ও এতবড় অপবাদ! ”

এবার বিস্ময়ে কুহুর চোয়াল ঝুলে পরল। সে নাকি পিওর ভার্জিন! এই লোকের মাথা নির্ঘাত গেছে। তাহলে এতদিন ওর সাথে যা যা হয়েছে সেগুলো কি কুহু স্বপ্নে দেখেছে?
” আপনিও ভার্জিন, আর শাকিব খানও অবিবাহিত! আপনি কি সত্যিই ডক্টর? এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে। ”

” কি বললে তুমি! একসাথে দুই অপবাদ দিলে! শাকিব খানের সাথে তোমার একমাত্র ভার্জিন জামাইয়ের তুলনা করলে? তুমি অতি নিষ্ঠুর এক রমনী। আবার আমি ডক্টর কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ করছ! আল্লাহ কেন যে এই হিটলারের বংশধরকে ভালোবাসলাম! তোমার উচিত এখন আমেরিকায় গিয়ে এফবিআই কিংবা সিআই-এ যোগ দেয়া। মনে এরূপ সন্দেহ থাকলে বছর খানেকের মধ্যেই তোমার প্রমোশন পাক্কা। যে রমনী তার নিষ্পাপ ভার্জিন জামাইকে সন্দেহ করে বর্হিবিশ্ব তোমাকে লুফে নেবে। ” তাহমিদের চোখেমুখে কৃত্রিম অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে।

কুহু তাহমিদের এই চেহারা দেখে হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায়না। স্বীকার করতেই হচ্ছে তার এলেম আছে।
” আপনি কি আজ মেডিকেলে যাবেননা? কয়টা বাজে দেখেছেন? আপনার সাথে বকবক করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে। সাড়ে আটটা বেজে গেছে, অথচ এতক্ষণ আমি নিচে যেতে পারলামনা! হয় এক্ষুনি উঠবেন নয়তো আপনাকে রুমে বন্ধ করে রেখে আমি নিচে যাব। ”

” আজ একটু দেরি করে মেডিকেলে গেলে তোমার সমস্যা হবে, বউ? প্রতিদিনই তো তারাতারি যাই। আজ না হয় একটু তোমার সাথে, পরিবারের সবাইকে সময় দিলাম। কতদিন সবার সাথে আড্ডা দেয়া হয়না। দিদুনের পাশে বসে গল্প করতে পারিনা। ”

তাহমিদের কথা শুনে কুহুর চোখ ভিজে আসল। আবেগে রুদ্ধ হতে থাকল কন্ঠা। মানুষটা নিজের স্পষ্ট পূরণ করতে, দুস্থদের পাশে দাঁড়াতে দিনরাত এক করে পরিশ্রম করে চলেছে। অনেক ভাগ্য করলেই তবে এমন স্বামী পাওয়া যায়, আর এমন সন্তান জন্ম দেয়া যায়।
” আজকে বাসায় থাকুন। কোথাও যাবেননা। আজকের দিনটা সবাই একসাথে কাটাই। আপনি বরং এখন একটু ঘুমান। মেডিকেল, ক্লিনিক, রুগী এইসব করতে করতে পরিপূর্ণ ঘুম হয়না আপনার। ” কুহু তাহমিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল।

” আমাকে একটু টনিক দিলেইতো ঘুমাতে পারি। তুমি কি জানোনা, আমার সর্ব রোগের টনিক তোমার কাছে আছে? ” আবদারের সুরে বলল তাহমিদ।
” আপনার কি রোগ হয়েছে? কই আমাকে বলেননিতো! আর কোন টনিকের কথা বলছেন? ” কুহু উদগ্রীব হয়ে জানতে চায়।
” আমার টনিকই হচ্ছে তোমার চুমু। আমার মাথা ব্যথা, বুক ব্যথা, কলিজা ব্যথা, কিডনি ব্যথা, ফুসফুস ব্যথা, এমনকি আমার সর্বাঙ্গে ব্যথার টনিক তোমার রাঙ্গা ঠোঁটের চুমু। একটা চুমু দাওনা, একটু রিল্যাক্স করে ঘুমাই। ”

কুহু তাহমিদের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে। এই লোকটার এত রোমান্টিকতা কোথায় থেকে আসে সেটা ও ভেবে পায়না। আবার এমনভাবে কথা বলে শুনলেই কলিজা শুকিয়ে যায়।
” আপনার ঘুমাতে হবেনা, আপনি এখন উঠুন। ফ্রেশ হয়ে নিচে যান। দিদুনের সাথে গল্প করুন। তবুও এমন এলোমেলো আবদার করবেননা। ”

” আমার সকল আবদারের জায়গাই তো তুমি। তুমি ছাড়া কার কাছে এমন আবদার করব! আর তা নাহলে অনুমতি দাও, আরেকটা বিয়ে করি। তার কাছেই তখন আবদারের ঝুড়ি নিয়ে বসব। অবশ্য চারটা বউ রাখার ক্ষমতা আমার আছে। তবে তুমি রাজি হলেই দুইটা দিয়ে কাজ চালাব। আমি আবার এসব বিষয়ে ভিষণ দয়ালু। ” তাহমিদ কথাটা বলেই কুহুর দিকে তাকায়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ওর বুক ঠিকই ধুকপুক করছে।
এদিকে কুহু তাহমিদের কথা শুনে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে। ও বোঝার চেষ্টা করছে তাহমিদ সত্যি বলছে, নাকি মজা করছে। তবে যখন বুঝতে পারল তাহমিদ ওকে রা’গা’নো’র জন্যই কথাগুলো বলেছে, তখন কুহু চাইল তাহমিদকে রাগিয়ে দিতে।

” আল্লাহ ছেলেদের কত সুযোগ দিয়েছেন। এতেই ছেলেরা আহ্লাদে গদগদ হয়ে যায়। তবে এখনকার মেয়েরাও কম যায়না। জামাইকে বিয়ে করতে দেখলেই, অনেকেই জামাইয়ের থেকেও ভালো ছেলের সাথে গাঁটছড়া বাঁধার কথা চিন্তা করে। মির্জাপুর থাকতে দেখেছিলাম, একজন ভদ্রমহিলা তার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের পর, স্বামীর থেকেও ভালো মানুষ দেখে বিয়ে করে নিয়েছিল। অবশ্য তার আগে স্বামীকে নাকানিচুবানি খাইয়ে ছাড়িয়েছিল। ”
কুহুর বলতে দেরি নেই, তাহমিদ কুহুর হাত মুচড়ে ধরে। নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তাহমিদের এমনভাবে ধরায় কুহু বেশ ব্যথা পায়। মনে হচ্ছে ওর হাত আর পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে।

” কত্তবড় সাহস! ইন্ডাইরেক্টলি আমাকে দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনিয়ে দিচ্ছ? আমি না তোমাকে ছাড়ছি, আর না দ্বিতীয় বিয়ে করছি। তুমি ভুলেও এসব চিন্তা মাথায় এনোনা। আমি যেদিন বুঝব তুমি আর আমার নেই, সেদিন প্রথমে তোমাকে মে’রে পরে আমি ম’র’ব। আমার সম্পদ তুমি। আমার হৃদ কোঠরে তুমি ভালোবাসার গুপ্তধন। ভুলেও আমার থেকে দূরে যাওয়ার চিন্তা করোনা।তাহমিদের ভালোবাসা যেমন খাঁটি, তেমনি তার রা’গও পুরো দুনিয়ার সব মানুষের রা’গে’র থেকে বেশি। ” তাহমিদের চোখ দিয়ে যেন আ’গু’ন ঝরছে। গলায় রা’গ উথলে পড়ছে।

” আমি কি আপনার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার কথা বলেছি নাকি! আপনার থেকে দূরে যাওয়ার চিন্তা আমি স্বপ্নেও করতে পারিনা। আমিতো কেবল এক ভদ্রমহিরার কথা বলেছিলাম। কিন্তু আপনি আরেকটা বিয়ে করার কথা চিন্তা ঠিকই করছেন। ”
তাহমিদের বাঁধন আলগা হয়ে আসে। ও কুহুর কোমড় পেঁচিয়ে ধরল। ধীরে ধীরে ওর হাত কুহুর পেটের দিকে যায়। আঁকিবুঁকি করতে থাকে কুহুর কোমল পেটে।

” আমিও কি মন থেকে বিয়ের কথা বলেছি নাকি? আমি তোমার প্রতিক্রিয়া দেখতে চেয়েছিলাম। ”
” আমিও আপনার প্রতিক্রিয়া দেখতে চেয়েছিলাম। ”
” তো কি জানতে পারলে? ” কুহুর চুলে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল তাহমিদ।
” আপনি একশো তে এক হাজার পেয়ে পাশ করেছেন। এবার উঠুন আর আমাকেও ছাড়ুন। অনেক বেলা হয়ে গেছে। আজকে মা, ফুপুর সামনে কেমন করে দাঁড়াব ভাবতেই লজ্জা করছে। ”

” একটা চুমু দাও, এখনই ছেড়ে দিচ্ছি। ”
” আবার! ” কুহু পেছনে তাকাতেই দেখল তাহমিদ ওর দিকে ঠোঁট বাড়িয়ে দিয়েছে।
কুহু বুঝল ওর নিস্তার নেই। ও ডান হাত দিয়ে আলতো করে তাহমিদের চোখ চেপে ধরল। এরপর অতি সন্তর্পনে ঠোঁট ছোঁয়ায় তাহমিদের ঠোঁটে।

কুহুকে নিচে নামতে দেখে তাহমিনা আক্তার ওর দিকে এগিয়ে আসলেন।
” কুহু, তাহমিদ আজ মেডিকেলে যাবেনা? ওর শরীর ঠিক আছে? ”
” আজ উনি দেরি করে যাবেন। আমি আজকে যেতে মানা করেছি, দেখি শোনে কি না। মা, রান্নাবান্না শেষ? আমি আজ সময়মত আসতে পারলামনা। ” কুহু সংকোচের সাথে বলল।
” প্রতিদিনতো তুই আমাদের ছাড়াই কাজ করিস, মা। একদিন নাহয় আমরা করলাম। আমার ছেলে কি ঘুমাচ্ছে? তোদের জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। ও আসলেই একসাথে খাব। ”

” সে ঘুম থেকে উঠে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবে। ভাবি কোথায়, মা? ”
” নীরা তোর দিদুনের সাথে গল্প করছে। তুই একটু রান্নাঘরে যাবি, মা? চুলায় গরুর মাংস রান্না হচ্ছে। তুই গিয়ে নেড়েচেড়ে নামিয়ে ফেল। আমি ততক্ষণে তোর বাবার সাথে কথা বলে আসছি। সে দুইবার ফোন দিয়েছিল, কিন্তু রিসিভ করতে পারিনি। ”

” আপনি যান, মা। আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি। ”
কুহু টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিল এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল। কুহু হাতের কাজ রেখে দরজা খুলতে যায়।
” কি রে পা’গ’ল ডক্টরের বউ, তোর মাথা ঠিক আছে তো? যে পা’গ’লে’র ঘর করছিস। হিসেবে তোর তো একমাসেই পা’গ’ল হওয়ার কথা। ঐ তার ছেঁড়া ডক্টর কি মেডিকেলে চলে গেছে? এই কয়দিনে কি ডক্টরের দুইটা তার বেশি ছিঁ’ড়ে’ছে, নাকি আগের মতই আছে? ”

” ভাইয়া, তুমি এসব কি বলছ? উনি কিন্তু বাসাতেই আছেন। একবার সে যদি এসব শোনে, তবে তোমার কি হবে জানো? ”
” রাখ তোর পাগল ডক্টরের কথা। ব্যাটায় একটা ধড়িবাজ। আজ পর্যন্ত আমাকে সালাম দিলনা, সম্মান জানিয়ে কথা বললনা! নেহাৎ আমি ভদ্র ছেলে তাই এখন পর্যন্ত তাকে কিছুই বলিনি। এমন একটা বউয়ের বড় ভাই কোথাও পাবেনা ঐ তার ছেঁড়া ডক্টর। ”

” কারও অবর্তমানে তার দূর্নাম করা অন্যায় এটা জানিসতো, আনান? তুই আজ একসাথে দুইটা অন্যায় করেছিস। এক, আমার নামে দূর্নাম, দুই আমার একমাত্র বউয়ের কান ভাঙ্গিয়েছিস। এবার তুই-ই বল, তোর কি শাস্তি পাওনা হয়েছে? ”
” ভাই, আমি তোমার নামে কোন দূর্নাম করিনি। আমিতো আদর করে তোমাকে সেসব নামে ডাকি। তুমি আমার একটামাত্র গুল্টুমু্ল্টু ভাই। কুচুমুচু ডক্টর। আমার কোকিলা বইনার একমাত্র কিউটুমিউটু হট জামাই। সে তুমি ভেতরে ভেতরে যতই তার ছেঁড়া হওনা কেন। তোমাকে দেখে বোঝাই যায়না, ভেতরে কি আছে। ”

” তোর আজ ক্লাস নেই? ফাজিল ছেলে, ক্লাস মিস দিয়ে এসেছিস আমার সংসারে আ’গু’ন লাগাতে? আনানরে, ভালো হয়ে যা, নইলে আমি তোর না হওয়া সংসারে ইউরেনিয়াম ছিটিয়ে দেব। চাবি কিন্তু আমার হাতে এটা ভালো করেই জানিস। নেহাৎই তুই আমার বউয়ের একজন ফাজিল ভাই। তাই এখন পর্যন্ত আমি চুপচাপ সব শুনেই যাচ্ছি। তা তুই আমার বউকে সালাম দিয়েছিস? আমাকেও তো এখন পর্যন্ত সালাম করলিনা। আর সেই তুই কিনা আমার কাছ থেকে সম্মান আশা করছিস? তুই সবথেকে কম নম্বর পেয়ে ফেইল করেছিস। একশোর মধ্যে জিরো পেয়েছিস। ”

” ভাই, এভাবে মাথা গরম করতে নেই। তুমি মাথা গরম করলেই রুগীদের বিপদ। দেখা যাবে হার্টের অপারেশন করতে গিয়ে, রুগীর হার্ট খুলে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছ। আবার দেখা যাবে রুগীকে এ্যান্টাসিডের জায়গায় কৃমির ট্যাবলেট দিয়েছ। বেচারা রুগী না জেনে তিন বেলাই এ্যান্টাসিডের বদলে কৃমির ট্যাবলেট খাচ্ছে, কিন্তু তার অ্যাসিডিটি দূর হচ্ছেনা। শেষ পরিনতিতে বেচারা রুগীর অ্যাসিডিটি মাথায় বাসা বাঁধল, আর সে পাবনার স্থায়ী বাসিন্দা হল। আর তুমি পাগল ডক্টর হিসেবে স্থায়ীভাবে একটা সার্টিফিকেট পেয়ে গেলে। তখন কোকিলার কি হবে এটা ভেবেই আমার কিডনি লাফাচ্ছে। ”

আনানের কথা শুনে কুহু মিটিমিটি হাসছে।
তাহমিদ বিরক্তি নিয়ে আনানের দিকে তাকিয়ে আছে।
” তোর কিডনি বুঝি হার্ট অ্যাটাক করেছে? তাই আজকাল লাফালাফি শুরু করেছে? এক কাজ কর, খেয়েদেয়ে তুই আমার রুমে আসিস। একই সাথে তোর কিডনি আর চাপার অপারেশন করে দেব। তাহলে তোর বেয়ারা চাপা সময়ে-অসময়ে বেশি ছুটবেনা। ”

” মাফ চাই, ভাই। ম’রে গেলেও তোমার কাছে চিকিৎসা করবনা। শেষে দেখব আমার হার্টের জায়গায় তুমি বান্দরের হার্ট লাগিয়ে দিয়েছ।এর পরের দৃশ্য আমি গা ভর্তি উকুন নিয়ে গাছের আগায় ঝুলছি আর সময়ে-অসময়ে কলা খাচ্ছি। আমার অনেক ইচ্ছে চারটা বাচ্চাকাচ্চার বাপ হব। তোমার দুই কাঁধে দুইজন লটকাবে, দুই হাতে দুইজন ঝুলবে। দৃশ্যটা দেখার আমার ভিষণ সাধ। অকালেই এমন সুন্দর স্বপ্নের জলাঞ্জলী দিতে পারবনা। ”

” যদি এমন হয়, সেই চারটা বাচ্চাকাচ্চার বাপ না হয়ে মামা হয়ে গেলি? আমি আমার ভাগ্নে-ভাগ্নীদের নিয়ে কোলাহল করছি, আর তুই গাছের আগায় ঝুলে দৃশ্যগুলো দেখছিস। কি রে ভালো হবেনা? ”
” কোকিলা, আমাকে খেতে দে। ভিষণ ক্ষুধা লেগেছে। আর হ্যাঁ, সামনের ভদ্রলোককে আগে ঠান্ডা পানি দে। সে আমার জন্ম-জন্মাতরের শত্রু। আমার সুখ সে সহ্য করতে পারেনা। শুধু একবার একটা সুযোগ পাই। তোর জামাই সেদিন আমাকে সেদিন বউয়ের বড় ভাই বলে সালাম দেবে। ”

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৫

” তুই বসে বসে দিবাস্বপ্ন দেখতে থাক। ” তাহমিদ গটগটিয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে যায়।
আনান অসহায় চোখে তাহমিদের দিকে তাকিয়ে থাকে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৭