বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৫

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৫
জাওয়াদ জামী

তাওহীদ নীরাকে ছাড়াই কর্মস্থলে ফিরে যায়। ওর মন টানছিলনা নীরাকে বাসায় রেখে যেতে। কিন্তু ও নিরুপায়। একদিকে নীরা চায়না, অপরদিকে তাহমিদও বেঁকে বসেছে। তবে নীরা রাজি থাকলে ও তাহমিদকে কোনভাবে কনভিন্স করতে পারত। কিন্তু যেখানে আসল মানুষটাই রাজি নয়, সেখানে তাহমিদকে কনভিন্স করে কি হবে!

দৃষ্টি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। শিউলি আক্তার কয়েকবার এসে ওকে ডেকে গেছে, কিন্তু ফলাফল শূন্য। দৃষ্টির ওঠার নামই নেই। গতরাত প্রাঢ পুরোটাই জেগে ছিল ও। কথা বলেছে ওর শ্যামপুরুষের সাথে। কেউ কাউকে বলেনি ভালোবাসি। তবুও দুজনের অব্যক্ত অনুভূতি যেন দুজনেই টের পায়। তবুও কেউ কাউকে গোপন অনুভূতির করে জানায়না। আজকাল ঐ শ্যামপুরুষের সবকিছুই দৃষ্টিকে টানে। তার হাসি, তার দুষ্টুমি, তার রা’গ, শাসন কিংবা অভিমান সবকিছুই দৃষ্টির বক্ষপিঞ্জরের দাগ কেটে যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দৃষ্টি গভীরভাবে আটকে গেছে সেই শ্যামপুরুষের মায়ায়।
” মাইয়া একখান জন্ম দিছি। তারে কুনো কথা শুনাবার পারিনা। হেয় খালি খাওন আর ঘুমান ছাড়া কিছুই বুঝেনা। কুহুও আছিল আর এই মাইয়াও হইছে। কুহুরে কুনু কথা একবারের বেশি দুইবার কওন লাগে নাই। যদিও মাঝেমইধ্যে মুখে মুখে উত্তর দিছে। কিন্তু আমারে কখনোই অসম্মান করেনি। কিন্তু এই মাইয়াডারে কুনো কথা শুনাবার পারিনা! নিজের প্যাটের মাইয়া শত্রুর থাইকা কুনু অংশে কম না। ” শিউলি আক্তার বাসন মাজছে আর বকবক করছে।

শুক্রবার হওয়ায় আজ কায়েস বাড়িতেই আছে। শিহাব বারান্দায় বসে বিস্কুট খাচ্ছে আর মা’য়ের কথা শুনে হাসছে।
” কি ব্যাপার, শিউলি? তুমি মেয়েটাকে এভাবে কথা শোনাচ্ছ কেন? একটা দিন মেয়েটাকে শান্তিমত ঘুমাতে দেবেনা! ” কায়েস স্ত্রী’ কে থামানোর চেষ্টা করছে।

” এমনেই তো তোমার মাইয়ারে কথা শুনাইনা। দুইদিন পর বিয়া দেওন লাগব। হেয় সংসারের কাজকাম কিছু শিখছে? পরের বাইত্তে হেয় বইসা বইসা খাইব? এমুন ভালো মানুষ দুনিয়ায় আছে? ”

” আমার মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে বসে বসেই খাবে। দেখছনা আমার বড় মেয়েটা রাজরানী হয়েছে? আমার ছোট মেয়েও তাই হবে। এখন কাজ না জানলে কি হবে? বিয়ের পর শিখে নিবে। আর ওকে কি আমি যে সে বাড়িতে বিয়ে দেব? আমার বোনেদের যেমন বড় ঘরে বিয়ে হয়েছে, আমার বড় মেয়েরও তাই হয়েছে, দেখ আমার ছোট মেয়েরও বড় ঘরেই বিয়ে হবে। আমার দৃষ্টিও রাজরানী হবে। তাই দৃষ্টির জন্য চিন্তা না করে নিজেকে নিয়ে চিন্তা কর। একটু শুদ্ধভাবে কথা বলতে চেষ্টা কর। তোমাকে এত বছরেও ঠিক করতে পারিনি। আর সেই তুমি আমার মেয়েকে কথা শোনাচ্ছ! তুমি আজকের পর থেকে ছেলে-মেয়ের কাছে একঘন্টা করে বসবে। শুদ্ধ উচ্চারণ শিখবে। নইলে দেখবে মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন তোমাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করবে। ”

” তুমিও আমারে এম্নে কইলা! অশিক্ষিত ঘরের ঝি আমি। বাপ-মায়ের মুখে কুনদিন শুদ্ধ কথা শুনছি, যে আমি শুদ্ধ কইরা কথা কমু। কেলাস ফাইভ পর্যন্ত পইড়া, শুদ্ধ ভাষা শিখমু কেম্নে? ” শিউলি মন খারাপ করে বলল।
” আমি এসব নিয়ে তোমাকে কখনোই দোষারোপ করিনি। শুধু সব সময়ই চেয়েছি শুদ্ধভাবে কথা বল, ছেলে-মেয়েদের ঠিকমত মানুষ কর। তোমার লেখাপড়া কিংবা তোমার পরিবার নিয়ে আমার কখনোই কোন লজ্জা ছিলনা। আমি চেয়েছি তুমি আমার তিন সন্তানকেই সমান চোখে দেখ। কিন্তু তুমি সেটা করোনি। পদে পদে আমার কুহুকে কষ্ট দিয়েছ। তবুও আমি মুখ বন্ধ করে থেকেছি। সব সময়ই চেয়েছি ধীরে ধীরে সব যেন ঠিক হয়ে যায়। হয়েছেও তাই। কিন্তু এখন সময় বদলেছে,

শিউলি। তুমি এখন আগের সেই অবস্থানে নেই। আমার বংশের লোকজনদের তুমি খুব ভালোভাবেই দেখছ। তাদের সাথে তোমার তাল মিলিয়ে চলতে শিখতে হবে। তারা যেমন সব জায়গায় মানিয়ে চলতে পারে তোমাকেও তাই করতে হবে। লেখাপড়া জানলেই যে একজন মানুষ সামাজিক হবে এমনটা নয়। তুমিও নিজেকে বদলে ফেল, দেখবে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। সবাই তোমাকে সম্মান করবে। তুমি এতদিন যতই অন্যায় করনা কেন, দিনশেষে তুমি আমারই স্ত্রী, আমার সন্তানের মা। আমি চাইলেই তোমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবনা। ”

কায়েসের কথা শুনে শিউলির চোখে পানি আসে। কায়েসের প্রতিটা কথায় সত্যতা খুঁজে পায়। ওর ভাষা শুনে অনেকেই নাক সিটকিয়েছে। মুখের ওপর অনেকেই সেই কথা বলেছে। দৃষ্টি, শিহাবের স্কুলে ও কখনোই যেতে পারেনি। ওর কথা শুনে অনেকেই হাসাহাসি করত। কিন্তু শিউলি সেসব কখনোই আমলে নেয়নি। কিন্তু আজ ওর মনে হচ্ছে শুদ্ধ ভাষাটা ওর আগে থেকেই শিখে রাখা লাগত। দৃষ্টি কতবার ওকে ভালোভাবে কথা শেখাতে চেয়েছে। কিন্তু শিউলি শোনেনি।
” আচ্ছা, আমি পোলা-মাইয়ার কাছে এখন থাইকা ভাষা শিখমুনে। আমার জন্য আমার পোলা-মাইয়া লজ্জা পাব এইডা আর হবার দিমুনা। ”

” তুমি বাড়িতে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলবে, এতে তোমাকে কেউ কিছুই বলবেনা। কিন্তু বাহিরে সব সময়ই ভালোভাবে কথা বলবে, ভালো পোশাকআশাকে চলাফেরা করবে, মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলবে, কারো ওপর রুক্ষ মেজাজ দেখাবেনা, সবার সাথে কোমল আচরণন করবে। তখন দেখবে সবাই তোমাকে সম্মান করবে। রা’গ, জেদ কিংবা মানুষের সাথে হম্বিতম্বি করে কখনোই কারও প্রিয় মানুষ হওয়া যায়না এটা মনে রেখ। ”

” আমি এহন থাইকা তোমার কথামতই চলবার চেষ্টা করব। ”
শিউলির স্বীকারোক্তি শুনে কায়েস হাসল। ও কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছে শিউলি ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। এটা বেশ ভালো দিক।
” ফুপু, আসব। ” আফরোজা নাজনীন রুমে বসে সুঁই-সুতোর কাজ করছিলেন। কুহু দরজায় এসে দাঁড়িয়ে ভেতরে ঢোকার অনুমতি চাইল।

” সোনা মা, এই রুমে আসতে তোর অনুমতি লাগবে! ভেতরে আয়। ”
” কি করছিলে, ফুপু? এটা কি? ”
” নীরা, তোর, সিক্তা আর আরোশির জামায় কাজ করছি। তোর আর নীরারটা শেষ হয়েছে এখন আরোশিরটা করছি। এটা শেষ হলেই সিক্তার জামায় হাত দেব। দেখতো কেমন হয়েছে? ”

” অনেক সুন্দর হয়েছে। কিন্তু আমাদের জন্য করছ, তনয়া আর দৃষ্টির জন্য কিছু নেই? ওরা শুনলে মন খারাপ করবেনা? ”
” ওদের জন্যও কাপড় কিনে রেখেছি। তোদের গুলোর কাজ শেষ করে ওদেরটা ধরব। এবার খুশি? ”
” তূর সোনার জন্য আমি একটা ডিজাইন পছন্দ করে রেখেছি। কাল ভার্সিটি থেকে আসার পথে ওর জন্য কাপড় কিনে নিয়ে আসব। এর পরের প্রসেসিং তুমি করে দিও। আর নকশা তোলার দ্বায়িত্ব আমার। ”

” আচ্ছা, নিয়ে আসিস। কিন্তু আমি তূরের জন্য একটা করেছি। ”
” তুমি একটা দিও, আমিও একটা দেব। ফুপু, তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। ” কুহু ইতস্তত করছে।
” কি বলবি বল। এত সংকোচের কি আছে! ”
” বাবা তোমার কাছে ফোন করেছিল, ফুপু? আমার গ্রামে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেছে? কতদিন গ্রামে যাইনা। তাছাড়া বিয়ের পর বাবার বাড়ি যাওয়ার একটা রীতিও তো আছে। ”

” তোর বাবা প্রতিদিনই ফোন করে তোদের যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু আমাদের বাড়ির ত্যাঁদড়টারই তো সময় হচ্ছেনা। আল্লাহই জানে ওর সময় কবে হবে। আমি সেদিন তাহমিদকে বলেছিলাম তোকে গ্রামে পাঠাতে। কিন্তু সেই ত্যাঁড়দ বলল, তোকে একা কোথাও পাঠাবেনা। সে তোকে সাথে করে নিয়ে যাবে। আমার ওর সাথেই নিয়ে আসবে। এরপর আমি আর কি বলতে পারি তুই বল? এছাড়া কায়েসও ওকে ফোন দিয়ে যাওয়ার কথা বলছেই। ”

” তুমি একটু উনাকে আরেকবার বলে দেখনা। তোমার কথা উনি ফেলবেননা। আমার বাবাকে দেখতে ভিষণ ইচ্ছে করছে। এছাড়াও দৃষ্টি, শিহাবকে কতদিন দেখিনা। ছোটমাও ফোন করে যেতে বলছে। ” কুহুর চোখ ছলছল করছে।
” শোন মন খারাপ করিসনা। আজ তাহমিদ আসুক, আমি ওর সাথে কথা বলব। তুই নিজের চোখেইতো দেখছিস, ছেলেটা কত ব্যস্ত থাকে। ওর নিজের ছুটির দিন বলে কিছু আছে? সপ্তাহের সাতটা দিনই বাহিরে বাহিরে থাকছে। ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করতে পারেনা। তারপরও ওর সাথে আমি কথা বলব। শিউলি তোর কাছে ফোন করে, সোনা মা? ”

” প্রতিদিনই একবার করে ফোন করে। জানো ফুপু, ছোটমা মনে হয় পাল্টে গেছে। আগে যেখানে আমাকে সহ্যই করতে পারতনা। খোঁজ নেয়াতো দূরের কথা। কিন্তু এখন প্রতিদিন নিয়ম করে একবার ফোন দেয়। বারবার গ্রামে যাওয়ার কথা বলে। আমার খুব ভালো লাগছে ছোটমার এরূপ পরিবর্তন। ”

” মানুষ পরিবর্তনশীল, সোনা মা। কেউ কেউ সারাজীবন অন্যায় করবে, কিন্তু জীবনের একটা সময় পর দেখবি সে উপলব্ধি করতে পারছে। তার ভুলগুলো নিজ থেকেই বুঝতে পারছে। সে স্বীকার করছে সে ভুল ছিল। তবে সেক্ষেত্রে অপরপক্ষকেও সহনশীল হতে হয়। তুই সহনশীল ছিলি, তাই আজ শিউলি বদলেছে। হয়তো একটা কুহুর অভাববোধ করছে সে। এবার রুমে যা। গোসল সেড়ে খেতে আয়। আরেকজন ফোন করে যদি জানতে পারে তুই খাসনি, তবে আমার রক্ষা নেই। সেই সাথে তোর ফুপারও। ” আফরোজা নাজনীন হাসছেন।

কুহু ফুপুর কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করল। লোকটা যে কেন এমন করে!
রাতে ঘুমানোর আগে শিউলি কায়েসের কাছে এক অদ্ভুত আবদার করে বসল।
” ঘুমাইছ? একটা কথা কইতাম। ”
” বল। ”

” তুমি আমগোরে নিয়া ঢাকা যাইবা? দৃষ্টি, শিহাবের পরীক্ষা সেই কবে শেষ হইছে। হেরাও কুহুরে দেখবার চাইতাছে। তাহমিদরে ফোন দিলেই কয় হেয় ব্যস্ত আছে। হেগোরে আইতে দেরি হইব। মাইয়ার বিয়া হইছে, কিন্তু এহন পর্যন্ত বাপের বাইত্তে আইলনা। গাঁয়ের মানুষজনও নানান কথা কইতাছে। তুমি আমগোরে নিয়া চল। আমরাই ওরে দেইখ্যা আসি। এরপর ওরা সুযোগ পাইলে আইব। ”
” বাবাহ্ শিউলি, তুমি কুহুর চিন্তা করছ! আমি কিন্তু সত্যি অবাক হয়ে যাচ্ছি। ”

” অবাক হওনেরই কথা। যেই মাইয়া আমার দুই চক্ষের বি’ষ আছিল, সেই মাইয়ার জন্য ভালোবাসা দেখালে আদিখ্যেতাই মনে হইব। তয় একটা কথা সত্য, আমার যেদিন মনে হইছে দৃষ্টিরে বিয়া দিলেও হেয় শ্বশুর বাইত্তে যাইবগা। আমার এই বাইত্তে একা থাকন লাগব। আবার মাইয়াডা কুন ঘরে যাইব, হেরা ওরে ভালোবাসব কিনা, বছরে এক-আধবার আইতে দিব কিনা। এইসব ভাববার যাইয়াই কুহুর কথা মনে হইছে। হেয়ও তো একবারেই গেছে গা। আর আইবনা। যদি মনে কয় বছরে একবার আইব। দৃষ্টির জন্য তো আমি চিন্তা করব, কিন্তু হের জন্য কে চিন্তা করব? হের তো মা নাই। আমি যদি তারে ফালায় দিই হেয় কই যাইব? বিশ্বাস কর সেদিন থাইকাই মনডা কুহুর লাইগা পু’ড়া’য়। ”

” এক কাজ কর, তুমি সবকিছু গোছগাছ কর। আমরা দুই-এক দিনের মধ্যেই ঢাকা যাব। তুমি কালকে কয়েকটা হাঁস-মুরগি জবাই করে, কাউকে দিয়ে কেটে বেছে নিও। আমি কালকে আইস বারের ব্যবস্থা করব। যাওয়ার আগে পুকুর থেকে মাছ তুলতে হবে। আর কি কি নেয়া যায় তুমি নিও। আমরা ছোট আপার বাসায়ও যাব। সে অনুযায়ী যা নেয়ার নিও। কালকে একবার মার্কেটে যেও দৃষ্টি, শিহাবকে নিয়ে। তোমাদের কি কি কেনাকাটা করতে হবে করে নিও। ” কায়েস শিউলির কথা শুনে সাথে সাথেই রাজি হয়ে যায়।

” আচ্ছা। তয় শোন তাহমিদের জন্য ভালো কাপড় নেওন লাগব। ঐ বাড়ির সকলের জন্যই নেওন লাগব। কুহুর বড় জা আছে, তার মাইয়া আছে। ”
” কালকে বাজারে যেও, যা যা কিনতে হবে পছন্দমত কিনে নিও। ”
শিউলি অনেকদিন পর যেন সুখের দেখা পায়। আজকাল কায়েস ওর সব কথাই মেনে নেয়। ওর ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেয়।
তাহমিদ অনেক রাতে বাসায় আসল। প্রতিদিনের ন্যায় কুহু ওর জন্য অপেক্ষা করছে। বিয়ের পর থেকে এই মেয়েটাই ওর জন্য অপেক্ষা করে। মা কিংবা বড়মাকে আর জাগতে হয়না।

তাহমিদ ভেতরে ঢুকেই কুহুকে জড়িয়ে ধরল৷ চুমু দিল কুহুর ললাটে।
” বউ, আগে আমাকে একটা চুমু দাওতো। ভিষণ চুমুর তেষ্টা পেয়েছে। একমাত্র তোমার চুমুই পারবে আমার তেষ্টা মেটাতে। ” তাহমিদ নিজের ঠোঁট কুহুর দিকে এগিয়ে দিয়েছে।
” ছিহ্ এসব কি বলছেন! এটা ড্রয়িং রুম সেকথা আপনার মাথায় আছে? ” কুহু এদিকওদিক তাকিয়ে বলল।
” ওহ বুঝেছি, তারমানে আমার বউ রুমে যেয়ে আমাকে চুমু দিতে চায়। ওক্কে বউ, আমি রাজি। চল রুমেই চল। চুমুর সাথে টুমুও হয়ে যাবে। তাহমিদ তোর তো কপাল খুলে গেছে! আজ না চাইতেই বউ অনেক কিছু দেবে। ”

তাহমিদের কথা শুনে কুহু চরমভাবে হতাশ হয়। এই মানুষটা বলে কি! ওর কথার উল্টো মানে বের করেছে!
” এই আপনি পা’গ’ল হয়েছেন! কি বলছেন এসব? আমি কি বললাম, আর আপনি কি বুঝলেন! যান এখন ফ্রেশ হয়ে আসেন। আমি খাবার রেডি করছি। ”
” আজতো দুজন একসাথে ফ্রেশ হব। দরকার হলে রাতের খাবার সকালে খাব। তবুও আমার হক আদায় করেই ছাড়ব। ”
তাহমিদ আচমকাই কুহুকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করল।

” এই কি করছেন এসব। ছাড়ুন আমাকে। পরে যাবতো। ”
” আমি থাকতে কোন ভয় নেই সুন্দরী। নিজে পরে হাড়গোড় ভাঙ্গব, তবুও তোমাকে আঘাত পেতে দেবনা। তোমার সব আঘাত, সব কষ্ট আমি বুক পেতে নেব। ”
তাহমিদ রুমে এসে কুহুকে বিছানায় রেখে দরজা বন্ধ করে দেয়। কুহু চোখ বড় বড় করে তাহমিদের কাজকর্ম দেখছিল। ওর মনে একটা কথাই আসছে, আনান ভাইয়া ভুল বলেনা। এই লোকটা আসলেই পা’গ’ল!

” সুন্দরী, এইযে রুমে এসে গেছি। এবার যা যা করার কর। ”
” আমি কি করব! ”
” যা যা করলে আমার মন খুশি হয়ে যাবে। নাউ স্টার্ট, আ’ম রেডি। ”
” জীবনেও না। আমি কিছুই করতে পারবনা। দেখি ছাড়ুন তো। আমি নিচে যাব। ”

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৪

” জীবনেও হ্যাঁ। তুমি অনেক কিছুই করবে। আমি তোমাকে ছাড়ছিনা এবং নিচেও যেতে দিচ্ছিনা। ওকে, তুমি কিছু না করলে নাই, যা করার আমিই করছি। ”
সত্যি সত্যিই রাতে আর তাহমিদ খাবার খায়না আর কুহুকেও খেতে দেয়না। কুহু শুধু অবাক হয়ে এই পা’গ’ল ডক্টরকে দেখে যাচ্ছে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৬