রাজনীতির রংমহল পর্ব ১৪

রাজনীতির রংমহল পর্ব ১৪
সিমরান মিমি

আপু চলো,ভাইয়া ডাকছে তোমায়।
দরজা দিয়ে ধীর পায়ে ঢুকতে ঢুকতে কথাগুলো বললো আর্শি।স্পর্শী তখন ও চুপ করে আইসক্রিম খাচ্ছে।আর্শির কথা শুনে শান্ত স্বরে বললো-
কেন?

–ওই যে লোকটা আসছে(আরাফের দিকে ইশারা করে)উনি ভাইয়ার বন্ধু।সবার সাথে তো পরিচয় করালো।এখন তুমি শুধু বাকি।
স্পর্শী ভ্রু কুচকে তাকালো।খাট থেকে উঠে দরজার কাছে এলো।উকি মেরে একবার সোফার দিকে তাকালো।এখনো এদিকে তাকিয়ে আছে।এর দৃষ্টি মোটেও সুবিধার লাগছে না।ঠোট কামড়ে সামান্য হাসলো স্পর্শী।তারপর আর্শির দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে বললো-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি তো তোমার ভাইয়াকেই ভালো করে চিনি না।সেখানে তার বন্ধুর সাথে পরিচিত হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।
স্পষ্ট বসার ঘর থেকে শোনা গেল আওয়াজ।সোভাম অসস্তিতে পড়ে হেসে দিলো। তারপর আরাফের দিকে তাকিয়ে বললো-

ও আসলে হোস্টেলে থাকে তো তাই এমন বললো।যাই হোক,পড়ে পরিচিত হয়ে নিস।এখন খাওয়া শুরু কর।
সোফার সামনের মাঝারি কাচের টেবিল টার উপর রকমারি নাস্তার আয়োজন করেছেন সরদার বাড়ির মহিলারা।আরাফ স্পর্শীর বিষয়ে আর মাথা ঘামালো না।সামনের টেবিল থেকে দুটো আঙুর মুখে নিতেই শামসুল সরদার বললেন-
তা বাবা,আবার কবে যাচ্ছো?

আরাফ নড়েচড়ে বসলো।যেন মনপ্রাণ দিয়ে চাইছিলো তাকে কেউ এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুক।ইনিয়ে বিনিয়ে বললো-
আসলে আংকেল যেতে তো খুব তাড়াতাড়ি’ই চেয়েছিলাম।ওখানে জব করি তো আমি।ভীষণ বিজি থাকতে হয়।কিন্তু বাবা তো এবার আসতে না আসতেই আষ্টেপৃষ্টে ধরলেন বিয়ের জন্য।
–সেকি! এতো ভালো কথা।বয়স তো আর কম হচ্ছে না।বিয়ে করে নেও। আমিও তো সোভাম টাকে কতবার বিয়ের কথা বলেছি।শুনছেই না।তা মেয়ে দেখেছো?

-না মানে,একজন কে হুট করেই পছন্দ হয়ে গেছে।চাইছিলাম এবার বাবার ইচ্ছেটা পূরণ করেই ফেলি।
চমকে আরাফের দিকে তাকালো সোভাম।তার দৃষ্টি এখনো স্পর্শীর ঘরের দরজার দিকে।মুহুর্তে’ই পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার হয়ে গেল।মাথার মধ্যে শিরা উপশিরা গুলো দাউদাউ করে উঠলো।তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়িয়ে আরাফের উদ্দেশ্যে বললো-
আচ্ছা চল বাইরে যাই আমরা।অনেক দিন পর তো এলি,ঘুরে ফিরে তোকে দেখাই সবকিছু।

আরাফের থেকে কোনোরুপ সাড়া না নিয়েই একপ্রকার টেনে হিচড়ে বাড়ির বাইরে বের করলো সোভাম।বাড়ির সামনের বড় দিঘিটার কাছে যেতেই বাকি সবাই কে ইশারা দিয়ে চলে যেতে বললো।তারপর আরাফের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে উঠলো-

আমি যদি ভুল না হই তাহলে তোর নজর আমার বোনের উপর গেছে।তাইতো?
চমকে তাকালো আরাফ।তড়িঘড়ি করে সোভামকে বললো-
দেখ ভাই,তুই আমার বন্ধু।আমি জানতাম,আমার মনের কথা তুই সেকেন্ডে বুঝে যাবি। তুই প্লিজ ভার্সিটি লাইফের ওই আড্ডা-মস্তি নিয়ে পড়ে থাকিস না।ওই সময়টা শেষ করে এসেছি আমি।বিশ্বাস কর,কোনো মেয়েলি কেসে গত চার বছরে জড়ায়নি আমি।বাবা বারবার জোর করছে বিয়ের জন্য।তোর বোনকে আমার সত্যিই ভালো লেগে গেছে খুব।
থেমে,

আরে এতো রাগের কি আছে বুজলাম না।বোনের জন্য কেমন পাত্র চাইছিস?নিশ্চয়ই বেশ ভালো পরিবারের।তো আমি খারাপ কোথায়?বিদেশে মোটা অংকের স্যালারিতে জব করি আমি।বাবা মন্ত্রী।আর সবচেয়ে বড় কথা,এবারে এমপি হতে পারিস নি।সামনে বার অবশ্যই পারবি।আমি বাবাকে পটিয়ে ফেলবো তোর সুপারিশ করার জন্য।আর, একটা কথা ভেবে দেখ,রাজনীতিতে এমন দু চার জন মন্ত্রী/মিনিস্টার কে হাতের মুঠোয় রাখা উচিত।নইলে আবারো হারতে হবে তোকে।

একধ্যানে পানির দিকে তাকিয়ে আছে সোভাম।সত্যিই তো, আরাফ ভুল তো কিছু বলেনি।মোটা অংকের স্যালারি পায় মাস শেষে। তার উপর ওর বাবা মন্ত্রী।তাকে হাত করতে পারলে দল বেশ ভারী হবে।পরশ শিকদার কে হারাতে পারবে।আর স্পর্শীর বিয়ে অন্যকারো সাথে হয়ে গেলে খুব তাড়াতাড়িই পরশের থেকে দূরে সরে যাবে।তখন আর এই বাড়তি চিন্তা করতে হবে না তাকে।সবচেয়ে বড় কথা হলো,আরাফ যদিও আগে মেয়েলি বিষয়ে ছুকছুকে স্বভাবের ছিলো কিন্তু এখন আরতো নেই।আর থাকলেও বিয়ের পর ভালো হয়ে যাবে।

আর না হলেও তো কোনো সমস্যা নেই,স্পর্শী তো আর ওর নিজের বোন না।
বাবাকে রাজি করাতে হবে ভাবতেই বাড়ির দিকে রওনা হলো সোভাম।আরাফ হাসলো।কিছুটা রহস্যময়ী সেই হাসি।
বাড়িতে ঢুকতেই সোভাম মেঝো কাকি বলে হাক ছাড়লো।দ্রুত বেগে শাড়ির আচলে হাত মুছতে মুছতে চলে এলেন মহিলা। তাকে দেখতেই সোভাম বললো-

কাকি,আজকে পিঠা বানিও।
অবাক হয়ে মহিলা তাকিয়ে রইলেন সোভামের দিকে।বললেন-
কেন বাবা,খেতে মন চাইছে।
–না আমার না, স্পর্শী তো শহরেই থাকে। এসব পিঠাপায়েস কবে খেয়েছে না খেয়েছে কে জানে?আছেও তো আর ক টা দিন।

রুম থেকে বসার রুমে আসতেই কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পেল স্পর্শী।মুহুর্তে’ই এক আলাদা ভালোলাগায় ছেয়ে গেল মন।সত্যিই তো, সে পিঠা কি সেটাই মনে করতে পারছে না।খুব ছোট বেলায় খেয়েছে কি না তাও মনে নেই।গত তিন/চার বছরের মধ্যে চোখেও দেখেনি।একেই বুঝি ভাই বলে।আর কারো মনে না থাকলেও ভাইয়ের মনে আছে।হোক না সে সৎ ভাই।
সোফায় বসে থাকা শামসুল সরদারের ও চোখ ছলছল করে এলো।ছেলেকে কাছে ডাকলেন।সোভাম গেল।কিছু মুহূর্ত নিশ্চুপ থেকে সোভাম বললো-

আব্বু,কিছু কথা ছিলো আমার।
–হ্যা বলো।
সোভাম দম নিলো। তারপর বললো-
স্পর্শী তো বড় হয়েছে। ওকে স্বাধীনতা দিয়েছো তার মানে এটা নয় যে ওর খেয়াল আমরা রাখবো না।বয়স হয়েছে,বিয়ে দিতে হবে।রাহুল ভাইকে বিয়ে করবে না ভালো কথা।কিন্তু তাই বলে ওর খামখেয়ালীকে পাত্তা দিয়ে তো চলা যায় না।
থেমে,

আরাফকে কেমন লাগে তোমার?
চমকালেন শামসুল সরদার। মুখে বললেন-
এই যে এতোক্ষণ ছিলো,তোমার বন্ধু?
মাথা নাড়ালো সোভাম।পুনরায় বলতে আরম্ভ করলো-
ও লন্ডনের এক নামকরা কোম্পানি’তে বেশ মোটা অংকের স্যালারিতে জব করে।দেখতে শুনতেও বেশ ভালো। ওর বাবা এখানকার মন্ত্রী।তার অবস্থাও তো তোমার অজানা থাকার নয়।
থেমে,

আরাফ স্পর্শীকে পছন্দ করেছে।ওর বাবাকে নিয়ে আসতে চাইছে স্পর্শীকে দেখতে।তুমি অনুমতি দিলে আমি কথাবার্তায় সামনে আগাতাম।
–স্পর্শীয়া কে একবার জিজ্ঞেস করে দেখো?ও রাজি থাকলে সামনে আগাও।
শান্তভাবে শামসুল সরদার বললেন।ক্ষেপে গেল সোভাম।কিন্তু বাবার সামনে নিজেকে যতটা পারলো আটকালো।সং যত হয়ে বললো-

তুমি কি আদোও বুঝতে পারছো? স্পর্শী পরশের ফাদে পড়েছে। ওই জানোয়ারটা ইচ্ছে করে আমার বোনকে টার্গেট করেছে।ওরা তোমার মেয়ের সম্মান নিয়েও পলিটিক্স করা শুরু করেছে।আমি চাইছি আরাফের সাথে স্পর্শীর বিয়েটা দিতে।দেখবে বিয়ের পরে স্পর্শী একদম ভুলে যাবে পরশকে।তুমি দ্বিমত করো না।ওরা আসুক,পছন্দ হোক।আর পছন্দ হলেই তো বিয়েটা হচ্ছে না।
কিছুক্ষণ ভাবলেন শামসুল সরদার। তারপর সোভামের দিকে তাকিয়ে বললেন-

ঠিকাছে,ওনাদের আসতে বলো।
–তাহলে এই কথাই ফাইনাল।কালকেই আসছেন আংকেল। আর আরাফ তো এখানেই আছে।
–কালকেই?এতো দ্রুত আগানোর কি আছে?
—উফফফ আব্বু,তুমি বুজতে পারছে না। যত তাড়াতাড়ি আগানো যায় ততই ভালো।

শামসুল সরদার মাথা নাড়ালেন।সায় দিলেন ছেলের কথায়।রাগে, জেদে থমথম করতে করতে রুমে ঢুকলো স্পর্শীয়া।ইচ্ছে করছে ওই আরাফের মাথা ফাটিয়ে দিতে।অসভ্য লোক,আজকেই দেখেছে আর আজকেই বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।ভাই,বাবা সব কটাকে পটিয়ে ফেলেছে।নাহ!স্পর্শীর এখানে বসে থাকলে চলবে না।বাড়ি থেকে যাওয়ার কথা বললেও বাবা রাজি হবে না।আর যাই হোক,ওনার ওই করুন চাহনি স্পর্শী সহ্য করতে পারে না।আর সোভাম?তাকে তো বড় ভাইয়ের আসনে অলরেডি বসিয়ে ফেলেছে স্পর্শী। পূরো রুমজুড়ে পায়েচারি করতে লাগল।সেদিন এখানে আসার পরেই সোভাম খালামনিকে জানিয়েছে।ফোন হাতে দ্রুত বিপাশার ফোনে ফোন দিলো।রিসিভড করার সাথে সাথেই এপাশ থেকে কেদে দিল স্পর্শী।ঢুকরে কেদে উঠে বললো-

খালামনি,আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও প্লিজ।আমি এখানে থাকবো না।ওরা আবার আমাকে বিয়ের জন্য জোর করছে।এখন আবার কোন মন্ত্রীর ছেলে এসে আমার কপালে জুটেছে।প্লিজ তুমি তাড়াতাড়ি এসো,আমার মাথা খারাপ হলে কিন্তু সব কটাকে খুন করে হোস্টেলে চলে যাব।
হঠাৎ করে স্পর্শীর এমন কান্নাজড়িত কন্ঠ শুনে বিপাশা ভয় পেয়ে গেলেন।তড়িঘড়ি কন্ঠে বললেন-
ওমা,মাথা গরম করিস না।আমি ভাইজানে র সাথে কথা বলছি এক্ষুণি।

–না না না না। তুমি কথা বললে হবে না।তুমি কালকের মধ্যে এখানে আসো।আমিও তোমার সাথে এখান থেকে চলে যাব।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে থামলো স্পর্শী। মনটা কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।নাহ,এভাবে বসে থাকা যাবে না।গটগট পায়ে ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে।বসার ঘরে কেউ নেই । তাই কাউকে কৈফিয়ত ও দিতে হয়নি।বাড়িটা পুরোপুরি অচেনা স্পর্শীর কাছে। তারপরেও সাহস জুগিয়ে সামনে এগোতেই আরাফকে চোখে পড়লো।দিঘির সিড়িতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।স্পর্শী দ্রুত বেগে সেখানে গেল।পেছনে কারো অস্তিত্ব পেতেই তাকালো আরাফ।স্পর্শীকে দেখতেই তড়িঘড়ি করে ফোন কাটল।তারপর নিজেকে সামলে চমৎকার সেই হাসিটা দিলো।

স্পর্শী আড়চোখে অন্যদিকে তাকালো।লোকটার গজ দাত আছে।অনেক মেয়ের’ই এমন দাত পছন্দ।এতে নাকি হাসিটা আরো সুন্দর দেখায়।তাই বলে যখন দেখবে তখনি ক্যাবলার মতো হেসে নিজের দাত কপাটি সবার সামনে তুলে ধরবে। নিজেকে ধাতস্থ করে আরাফের উদ্দেশ্যে বললো-

শুনুন মিস্টার।
–আরাফ।
স্পর্শীর কথা বলার আগেই আরাফ নিজের নাম বললো।পুনরায় অসস্তিতে পড়ে গেল স্পর্শী।অন্যদিকে তাকিয়ে বলল-
সে যাই হোক।আপনাকে আমার সুবিধার ঠেকছে না।প্রথম দেখাতেই আমাকে ভালো লেগে গেল।ইনফ্যাক্ট বিয়েও করতে চাইছেন।ঘটনা টা কি ব্রাদার?(ভ্রু কুচকে)

আরাফ সামান্য হকচকিয়ে গেল।প্রথম বার এই মেয়েকে ছুটে যাওয়া অবস্থায় যতটা চঞ্চল বাচ্চা মনে হয়েছে এ ততটাও নয়।বেশ বুঝে শুনে কথা বলতে হবে।নিজেকে ধাতস্থ করে আরাফ বললো-
দেখো,ভালো কাকে, কখন, কোথায়,কিভাবে লেগে যায় এই ব্যাখ্যা আমি কেন স্বয়ং হুমায়ুন আহমেদ ও দিতে পারবে না।এমনকি তার থেকে বড় বড় প্রেমিক রাও এর ভালো লাগার কারন উল্লেখ করতে ব্যার্থ হবে।
থেমে,

আমি স্পষ্ট বাদী।তোমাকে ভালো লেগেছে।তাই বিয়ে করতে চাইছি পারিবারিক ভাবে।আমি চাইলে প্রেম ও করতে পারতাম।কিন্তু এইসব প্রেম ভালোবাসার মতো হারাম জিনিসের প্রতি আরাফ আকৃষ্ট নয়।তাই সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিলা।বুঝেছো ম্যাডাম।
স্পর্শী সূচালো দৃষ্টিতে আরাফকে দেখলো।তারপর আলতো হেসে বললো-

আপনি আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু।সে হিসেবে আমার ও বড় ভাই আপনি।তাই আপনাকে বলতে কোনো প্রব্লেম নেই।আমার বয়স কত জানেন?বাইশ বছর।এই বয়সেও আপনার মনে হয় আমি অবিবাহিত আছি?না মিস্টার বড় ভাইয়ের বন্ধু।আমি অলরেডি বিবাহিত।ব্যাস এখনো ফ্যামিলিকে জানাইনি।সময় হলে ঠিক জানিয়ে নিব।তাই দয়া করে আপনি আমাকে ছেড়ে অন্যকাউতে মন দিন।আমি আমার হাসবেন্ডকে নিয়েই সন্তুষ্ট। আশা করি বোঝাতে পেরেছি।

স্পর্শী কথাগুলো বলেই বাড়ির দিকে চলে গেল।যাই হোক,নিজেকে বাচাতে দু একটা মিথ্যা কথা বলেছে সে।আল্লাহর কাছে সে এ বিষয়ে বেশী করে ক্ষমা চেয়ে নিবে।কিন্তু আপাতত বিয়েটা যে ভাঙতে পারছে এটাই অনেক। এদিকে থ হয়ে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে রইলো আরাফ।নিজের সূচালো দৃষ্টিটা স্পর্শীকে পুরোপুরি অবলোকন করাল।তারপর মনে মনে আওড়ালো-
কই বিবাহিত মেয়েদের মতো তো লাগছে না।

বিকেল চারটা।ইতোমধ্যে পুরো এলাকা ছড়িয়ে গেছে স্পর্শীর বিয়ের খবরে।কথাটা আপাতত সোভামের দলের ছেলেরাই পাঞ্চার করেছে।সেখান থেকেই এক কান,দু কান হতে হতে পুরো এলাকা ছেয়ে গেছে।সবেমাত্র বিশ্রাম নিয়ে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গায়ে পাঞ্জাবি চাপিয়েছে পরশ।এরইমধ্যে হতদন্ত হয়ে ছুটে এলো পাভেল। দম নিয়ে বলতে লাগলো-
ভাই ঘটনা শুনেছিস?আমি আগেই বলেছিলাম ওই মেয়ের স্বভাব-চরিত্র ভালো না।তুই তো বিশ্বাস ই করলি না।এখন তো ফুরুৎ হয়ে গেল।

ভ্রু কুচকে পাভেলের দিকে তাকালো পরশ। হাতের ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো-
ঘটনা টা কি?সেটা বল।
–সবাই জানে,অথচ তুইই জানিস না।পুরো এলাকার মানুষ জানে মন্ত্রীর ছেলের সাথে সরদার বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে। আর তুই এখনো এসব বলছিস।গেলো তো তোর পাখি,মন্ত্রীর ছেলে পেয়েই ফুসলে গেল।এতো মেয়ে রেখে শেষ পর্যন্ত একটা বাল*ছালের কাছে গিয়ে মরলি।আর কি ছিল না মেয়ে?

পরশের মাথা কোনো কাজ করছে না।পাভেলের বাকি কথা শোনার কোনো প্রয়াস’ই করলো না।মাথার মধ্যে শুধু একটা কথাই ঘুরছে মন্ত্রীর ছেলের সাথে বিয়ে।উফফফ ভাবতে পারছে না পরশ।কাল রাতেও তো স্পর্শীর সাথে কথা হলো। কই তখন তো এমন কিছু বললো না।তাহলে কি পাভেলের কথাই ঠিক।রাজনৈতিক শত্রুতার জো ধরেই নিজের ভাইয়ের কথায় পরশকে ফাদে ফেলছে স্পর্শীয়া।হাতে ফোন টা নিয়েই স্পর্শীর নাম্বারে ডায়েল করলো।একবার -দুবারের বারই ফোব রিসিভড হলো।ওপাশ থেকে ভেসে এলো স্পর্শীর ঘুমন্ত কন্ঠস্বর।

কি হলো নেতামশাই?
বরাবরের মতো এই নেতামশাই শব্দটা পরশকে শান্ত করতে পারল না।তড়িৎ বেগে প্রশ্ন করলো-
মন্ত্রীর ছেলের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে টা কি স্পর্শীয়া?তুমি আমাকে তো এই বিষয়ে কিছু বলো নি?
ঠোট টিপে হাসলো স্পর্শী।তাহলে ঘটনা টা নেতামশাই পর্যন্ত চলে গিয়েছে।বরাবরের মতো পরশকে জ্বালাতে ইনিয়েবিনিয়ে বললো

উমমম বলি নি তো,কি হয়েছে?মনে ছিল না।এই ওয়েট, নেতামশাই।এটা আপনার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার,তাই না।আমি ভিডিও কল করছি,রিসিভড করুন।একটা দারুন জিনিস দেখাবো।
পরক্ষণেই কল কেটে হোয়াটসঅ্যাপে নাম্বার সেট করে মেসেজ দিলো।সাথে সাথে ই একসেপ্ট হলো। পুনরায় ভিডিও কল দিল স্পর্শী।নিজের উত্তেজনা,দুশ্চিন্তা কে যথাসম্ভব দুরত্বে রেখে ফোন রিসিভড করলো পরশ।সাথে সাথেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো স্ক্রিনের দিকে।রাগে,জেদে,ক্ষোভে কপালের শিরাগুলো টনটন করে উঠলো।

স্পর্শী দুষ্টুমি করে দরজার ফাক দিয়ে ক্যামেরাটা সোফার দিকে ধরে আছে।সোফায় আরাফ,নিরব আর সোভাম আড্ডা দিচ্ছে।আরাফের দিকে ক্যামেরা টা ধরে দুষ্টুমির সুরে পরশকে বললো-
নেতামশাই,দেখুন কি কিউট ছেলেটা।একদম স্ট্রবেরির মতো।সেখতে তো পুরাই বলিউডের নায়কদের মতো।শুনলাম লন্ডনে খুব ভালো বেতনে চাকরি করে।তার উপর মন্ত্রীর ছেলে।এতো ভালো ছেলেকে কি এভোয়েড করা যায় আপনিই বলুন?
থেমে
কি বলুন,বিয়েটা সেরেই নিই এবার।

নিজের সাময়িক সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে হাতের ফোন টা ধড়াস করে ফ্লোরের উপর ছুড়ে ফেললো। মাথা টা দাউদাউ করে জ্বলছে পরশের। মাথার ভেতর স্পর্শীর মুখে বলা অন্য পুরুষের প্রশংসাবানী বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।এই মুহুর্তে স্পর্শীকে সামনে পেলে খুন করে ফেলতো পরশ।সে তো অতটা সুন্দর নয়,শ্যামলা। সেটা কি জানতো না স্পর্শী। জেনেশুনে সম্পর্কে এগিয়েছে।এখন সুন্দর,স্মার্ট,বড়লোক ছেলে পেয়েই তাকে ছুড়ে ফেললো। মানতে পারছে না পরশ।দুহাত দিয়ে মাথার চুলগুলো খামছে ধরলো।

বারবার হৃদয়টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে, ভেতর থেকে একটা কথাই বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে”কই স্পর্শী তো কখনো তাকে নিয়ে প্রশংসা করেনি।দেখতে শ্যামবর্ণের হলেও হাজার টা মেয়ে পরশের সাথে সম্পর্কে জড়াতে চেয়েছে।কিন্তু তার গম্ভীর আচার আচরণ আর রাজনৈতিক নেতা হওয়ার কারনে কখনো সামনাসামনি নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করার সাহস পায়নি।সেকি সস্তা?

এতো এতো মেয়ের অনুভূতি গুলো কে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে নিজে থেকে ঠাই নিয়েছে স্পর্শীয়াতে।অথচ সেই মেয়েই তাকে এমন ভাবে ঠকালো।হয়তো সে অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে দেখেই আজ এমন অবহেলা করলো। চোখ জ্বলছে পরশের।সামনেই অবাক হয়ে রুমের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে পাভেল। জীবনে প্রথম এতটা ভগ্ন অবস্থায় দেখলো ভাইকে।তার শান্ত শিষ্ট,গম্ভীর ভাইটা সহযে রাগে না। আর নাতো কারো সামনে নিজের রাগকে প্রকাশ করে।ওই মেয়েকে তো দেখে নিবে পাভেল।

পরশ বিছানা ছেড়ে উঠলো।পাশেই টেবিলের উপর থেকে নিজের অন্য ফোনটা হাতে নিল।স্পর্শীর নাম্বার ডায়েল করার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে রিসিভড হলো।স্পর্শীকে কোনোরুপ বাকবিতন্ডা করতে না দিয়েই গম্ভীর কন্ঠে বলল-
তোমার বাড়ির সামনের রাস্তায় আসো।আমি ওখানেই আছি।সময় মাত্র পনেরো মিনিট।
স্পর্শী চমকালো,থমকালো।দ্রুতবেগে অবাক হয়ে বললো-

আপনি পাগল নাকি নেতামশাই।এখানে আসবেন মানে?আরে কেউ দেখলে কেলেংকারি হয়ে যাবে।এটা শহর নয়।আর ভাইয়াও বাড়িতে আছে।আপনাকে দেখলে ঝামেলা বাড়বে।
চোখ বন্ধ করে নিজের রাগকে দমন করার চেষ্টা করছে পরশ।তাও সফল হলো না।দাতে দাত চেপে বললো-
তোর সময় মাত্র পনেরো মিনিট।এর মধ্যে আসবি কি না ভেবে নে।এক সেকেন্ড দেরী হলেও খোদার কসম,তোর বাড়িতে ঢুকে তোকে তুলে আনতে আমার এক সেকেন্ড ও দেরী হবে না।মাথায় রাখিস।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ১৩

বলেই ফোন কেটে দিলো পরশ।পাভেল কে কিছু একটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।যাওয়ার আগে পুনরায় বললো-
মাথায় রাখিস।মাত্র পাচ মিনিট।এর মধ্যেই ছেলেপেলে নিয়ে হাজির থাকবি।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ১৫