রাজনীতির রংমহল পর্ব ১৫

রাজনীতির রংমহল পর্ব ১৫
সিমরান মিমি

বাকরুদ্ধ হয়ে খাটের উপর বসে পড়লো স্পর্শী।কানের কাছে “তুই” কথাটা বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।নেতামশাই তাকে তুই করে বলতে পারলো।যে লোকটা সবসময় শান্ত,ভদ্র,নরম হয়ে স্পর্শীর সাথে কথা বলে। তার সমস্ত পাগলামো চোখ বন্ধ করে মেনে নেয় সে কিনা আজ এভাবে রেগে কথা বললো ।তাহলে কি স্পর্শী মজা করতে গিয়ে লিমিট ক্রস করে ফেললো?

ধপ করে খাট থেকে উঠলো।লোকটা ভীষণ রেগে গেছে।এখন যদি সে না যায় তাহলে যদি সোজা বাড়িতে চলে আসে।তাহলে?উকি মেরে পুনরায় বসার রুমটা পর্যবেক্ষণ করলো।আগের তিন জনের সাথে আরো দুজন এসে যুক্ত হয়েছে।ওড়না’টা মাথায় দিয়ে ফোন হাতে বাইরে বের হলো।কাউকে কিছু না বলেই সোফার পেছন থেকে সোজা সদর দরজার দিকে গেলো।এরইমধ্যে পেছন থেকে গুরুগম্ভীর স্বরে সোভাম বলে উঠলো-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কোথায় যাচ্ছো তুমি?
স্পর্শী দাড়ালো।পেছন দিকে ফিরে ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললো-
বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি।আমি তো কোনো জেল খানায় আসি নি যে সারাক্ষণ ঘর আটকে বসে থাকবো।
সোভাম পুনরায় বললো-

তোমাকে কোথাও যেতে তো বারণ করে নি কেউ।অবশ্যই যাবে, কিন্তু এখানকার কিছুই তো তুমি চেনো না।আর্শি কে সাথে নিয়ে যাও।
স্পর্শী কিছুক্ষণ থম মেরে বললো-
আর্শি ঘুমাচ্ছে।আর আমি ছোট নই যে হারিয়ে যাব।
থেমে,

আশেপাশেই আছি।চিন্তার কিছু নেই।
বলেই গটগট পায়ে বেরিয়ে গেল বাড়ির বাইরে।গেটের কাছে এসেই সামনে রাস্তা দেখতে পারলো।নির্জন রাস্তা,কিন্তু দূরেই এই রাস্তার নতুন মোড় দেখা যাচ্ছে যেটা বেশ বড়সড়।নেতামশাই ঠিক কোন রাস্তায় আসতে বলেছে মাথায় ঢুকছে না স্পর্শীর।তাও ধীর পায়ে হেটে গেল বড় রাস্তার দিকে।বাড়ির সামনে এলে যে কেউ দেখতে পাবে, তখন ঝামেলা বাড়বে বই কমবে না।

টানা পাচ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে স্পর্শী। কোথাও নেতামশাই’য়ের কালো রঙের মাইক্রো টা দেখা যাচ্ছে না।আশে-পাশে খুব একটা লোক জন ও দেখা যাচ্ছে না।কতক্ষণ পর পর দু একটা বেবি ট্যাক্সি, ভ্যান যাওয়া আসা করছে।হঠাৎ পেছন থেকে দ্রুত গতিতে একটা কালো রঙের বাইক থামলো তার পাশে।চমকে দু -কদম পেছনে গেল স্পর্শী।মাথায় হেলমেট থাকলেও গায়ের পাঞ্জাবি দেখে নিশ্চিত হলো এটাই নেতামশাই।

-বাইকে ওঠো।
চমকালো স্পর্শী।আশে-পাশে একবার তাকালো।সরদার বাড়ির বড় মেয়ে এসেছে এটা সবাই জানলেও স্পর্শী কে খুব একটা চেনে না সবাই।তাই যে যার মতো চলে যাচ্ছে।স্পর্শীকে নিরব থাকতে দেখে পরশ আবারো বললো-
বাইকে উঠতে বলেছি তোমায়।সঙের মতোন দাঁড়িয়ে আছো কেন?

সামান্য ভ্রু কুচকালো স্পর্শী।পরক্ষণেই নেতামশাইয়ের রাগের কথা মাথায় আসতেই ধাতস্থ হয়ে বললো-
বাইকে উঠবো মানে টা কি নেতামশাই?আর আপনি একজন বুঝদার মানুষ হয়েও এমন ছেলেমানুষী করছেন কি ভাবে?আশেপাশের কেউ আমাকে চিনে না ঠিক আছে,কিন্তু আপনাকে তো চেনে।কেউ যদি বাড়িতে বলে দেয় আমি আপনার বাইকে উঠেছি তাহলে কতটা ঝামেলা হবে ভাবতে পারছেন?আমার থেকেও বেশী ঝামেলা আপনার হবে।
থেমে,

আপনি এখন এখান থেকে যান।বাড়িতে ভাইয়া আছে।ও আমাকে বাইরে বের হতে দেখেছে।
পরশ খুব কষ্টে নিজেকে সামলালো।রাগে মাথার রক্ত টগবগ টগবগ করে ফুটছে।আজ প্রায় ছয়/সাত মাস পরে নিজের বাইক নামিয়েছে। এর আগে গাড়িতেই বডিগার্ড সহ চলাফেরা করেছে।লোকজন যাতে এক ঝলক দেখেই চিনতে না পেরে সে জন্য হেলমেট টাও খোলেনি।কিন্তু কয়েকবার তার দিকে তাকালে নিশ্চিত সবাই চিনে ফেলবে।বাইক থেকে নামলো পরশ।কোনোরুপ বাক্য খরচ না করেই টেনে হিচড়ে বাইকে বসালো স্পর্শীকে।
সাময়িক ভাবে হতভম্ব হয়ে গেল স্পর্শী।কিন্তু কিছু বললো না।এরইমধ্যে বাইক স্টার্ট দিয়ে পরশ সামনের দিকে চলল।

বিবর্ণ বিকেল।পরশ হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো ৪:৪৫ বাজে।বাইক থামালো পিরোজপুর সদরে। চারপাশে অজস্র দোকান পাটে লোকজন ভরপুর।তার’ই মাঝখান থেকে একপ্রকার টেনে হিচড়ে স্পর্শীকে নিয়ে গেল নিজের সাথে।চারতলা বিল্ডিং।সিড়ি দিয়ে টেনে তিন তলায় একটা রুমের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলতেই ঢোক গিললো স্পর্শী।চারপাশে তাকিয়ে দেখলো এটা একটা বেডরুম।বেশ সুন্দর ভাবেই বিছানা থেকে শুরু করে যাবতীয় জিনিসপত্র রয়েছে।পেটের ভেতর অলরেডি মোচড়ানো শুরু করে দিয়েছে।নানান রকমের কুৎসিত, বাজে কথা,ঘটনা স্পর্শীর মগজকে উত্তেজিত করে তুলছে।

নেতামশাই বাস্তবিক ভাবে কি করতে চাইছে তার সাথে।আচ্ছা,উনি আমাকে রেপ/টেপ করতে চাইছে না তো।ভাবতেই দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো স্পর্শী।কদিন’ই বা চেনে সে নেতামশাইকে।এতটা বিশ্বাস করা উচিত হয়নি।শুরুতেই বাইকে বসা উচিত হয় নি তার।চাইলেই তো ওখান থেকে বাড়ি ছুটতে পারতো স্পর্শী।কিন্তু সে তো করেনি।উফফ অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।এখন কিভাবে পালাবে এখান থেকে।আশে-পাশে তাকিয়ে দেখতেই পরশকে দেখলো। দরজা ভেতর থেকে চাপিয়ে রেখে তার উপর হেলান দিয়ে ফোন দিচ্ছে কাউকে।ওপাশ হতে রিসিভড হতেই পরশ তেতে উঠে বললো-

এতোক্ষণ লাগে ফোন ধরতে।দু মিনিটের মধ্যে তোরা ওনাদেরকে নিয়ে এখানে আয়।
কথাটা শোনামাত্রই পুনরায় পেটে মোচড় মারলো স্পর্শীর।ওনাদের মানে কি?আরো ক -জন কে ডাকছে নেতামশাই?এদের দিয়ে কি করবে সে।
কোনোরুপ ভণিতা না করে উঠে দাড়ালো স্পর্শী।শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো-
নে তা ম শা ই?

আশ্চর্য!উত্তেজনায় কথা পেচিয়ে যাচ্ছে স্পর্শীর।তাও হার মানলো না।নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠলো-
কাদের কে ডাকছেন আপনি?আর আমাকেই বা আটকে রেখেছেন কেন গুন্ডাদের মতো।দেখুন নেতামশাই,ভালোয় ভালোয় যেতে দিন আমায়,নইলে জেলের ভাত খাওয়াবো আমি।

ভ্রু জোড়া টানটান করে তাকালো পরশ। এরইমধ্যে সিড়ি দিয়ে উঠে আসার আওয়াজ পেতেই দরজা খুললো।একজন উকিল,একজন বয়স্ক ইমাম,পাভেল সহ আরো তিনজন ছেলেকে দেখা গেল।কারো হাতে মিষ্টির প্যাকেট,কারো হাতে রেজিস্ট্রি পেপার,কারো হাতে ফাইল।ভেতরে ঢুকতেই পাভেল চেয়ার গুলো এগিয়ে দিলো ইমাম সহ উকিলকে বসার জন্য।
কিছুক্ষণ থ হয়ে তাকিয়ে রইলো স্পর্শী।কিছুটা হলেও তার মাথায় ঢুকছে।তাও পরশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো –
কি হচ্ছে এসব নেতামশাই?

গলার স্বরকে যথাসম্ভব নিচু করে শান্ত কন্ঠে পরশ বললো-
বিয়ে।
আশ্চর্য হয়ে গেল স্পর্শী।এই লোক তাকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই এতোসব আয়োজন করলো।তার সাথে কড়া ভাষায় কথা বললো।সেই রাস্তা থেকে টেনে হিচড়ে নিয়ে এলো।মানে কি এসবের?তাকে কি সস্তা পেয়ে বসেছে।মুখে বললো-
আমার অনুমতি নিয়েছেন আপনি?
রাগটা পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো পরশের।দাতে দাত চেপে বলল-

দরকার পড়েনি।
তারপর ইমামের দিকে তাকিয়ে বললো-
শুরু করুন।
বাক হারা হয়ে গেল স্পর্শী।হাতের ফোনটাকে জোরে চেপে ধরে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো-
আমি এই সব বিয়ে টিয়ে কিচ্ছু করবো না।

এরইমধ্যে হাতের কব্জিতে টান পড়লো তার।পিছু ফিরতেই দাবাং মার্কা এল থাপ্পড় পড়লো গালের উপর।স্পর্শী হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।পুরো গালটা অবশ হয়ে শিরশির করছে।মাথা টা কেমন চক্কর দিচ্ছে।ভেতর থেকে সমস্ত রাগ,জেদ দলা পাকিয়ে ভয়ংকর ভাষা গুলো গলার কাছে আসতেই নিভে গেল।মুখ দিয়ে আর উচ্চারণ করতে পারছে না সে।কিভাবে পারবে?ছোট বেলা থেকে এমন শাসন হীন বড় হয়েছে সে।সেখানে একই লোকের কাছ থেকে পরপর দু দিন দু দু টো থাপ্পড় খাওয়া কি কম কথা।তাও আবার এমন আটসাটে বডি ওয়ালা পুরুষের।গাল যন্ত্রনায় ছিড়ে যাচ্ছে।এই মুহুর্তে নিজের আত্নসম্মানকে ধুয়ে মুছে বাইরে ফেলে ব্যাথার তাড়নায় ঠোট উলটে হু হু করে কেদে উঠলো।

পরশের রাগের সীমা পার হয়ে গেছে।নিজেকে ছন্নছাড়া লাগছে।এখানে বাইরের কেউ বলতে শুধুমাত্র উকিল আর ইমাম’ই আছে। তা ছাড়া যে দুজন আছে তারা দলের লোক।নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে স্পর্শীর গাল চেপে ধরলো।দাতে দাত চেপে বললো-

প্রেম করতে ইচ্ছে করে অথচ বিয়ের কথা বললেই এতো আপত্তি।নষ্টামি করলে অন্যদের বেছে নিতি আমার সাথে জড়ালি কেন?এখন ওই মন্ত্রীর ছেলেকে ভালো লেগে গেছে তাই না।খুব টাকা ওয়ালা বুঝি?তোর কত টাকা চাই হ্যা?
স্পর্শীর মনে হচ্ছে গালের চাপার দাত গুলো সব ভেঙে পরশের হাতে এসেছে।পরশ ছাড়তেই পুনরায় ঠোট ভেঙে কেদে উঠলো।তাহলে তখন কার ওই মজা করার জন্যই নেতামশাই রেগেছে।বুজতে পেরে অভিমান জড়িত গলায় কান্না করতে করতে বললো-

কিসের বিয়ে?কার সাথে বিয়ে?ভেঙে গেছে তো।আমি তো ওই ছেলেকে বলে দিয়েছি বিয়ে টিয়ে করতে পারবো না।আমি তো ব্যাস মজা করেছিলাম আপনার সাথে।আর আপনি আবার আমার গায়ে হাত……।।
সম্পুর্ন করার আগেই পরশের ধমকে গুটিশুটি পাকিয়ে ফেললো স্পর্শী।
চুপ!!!!একদম মিথ্যা কথা বলবে না।তুমি কি মনে করেছো আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি।কালকে তোমাকে দেখতে আসবে না ওই মন্ত্রী।আর ছেলেকে তো একদম ঘরে উঠিয়ে বসিয়ে রেখেছো।হাতছাড়া করার ইচ্ছে নেই বুঝি।

–ও তো সোভাম ভাইয়ের বন্ধু বলে বাড়িতে আছে।
পরশ নিজেকে সং যত করলো। পুনরায় শান্ত গলায় বলল-
বেশ,মানলাম বিয়ে হবে না।কিন্তু আমাকে বিয়ে করতে কোথায় প্রবলেম তোমার?আমি তো আর ঢাক ঢোল পিটিয়ে বিয়ে করতে যাই নি।এখন এখানে বিয়েটা হয়ে যাক।কেউ জানবে না।
থেমে, স্পর্শীর গাল ধরে।

আমি কোনো রিস্ক নিতে চাইছি না স্পর্শীয়া।ব্যাস রেজিস্ট্রি টা হয়ে যাক,তুমি সই করে দাও।সন্ধ্যার আগেই তোমায় বাড়িতে দিয়ে আসবো। কেউ জানবে না।আমি শুধু তোমায় নিয়ে রিস্ক নিতে চাইছি না।সোভাম জোর করবে তোমায় পরবর্তীতে বিয়ে করানোর জন্য।
স্পর্শীয়া নিচু হয়ে তাকিয়ে রইলো। সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছে সে।কি করা উচিত তার এখন।
পরশ পুনরায় উকিলের দিকে তাকাতেই সে রেজিস্ট্রি পেপার হাতে দিল।স্পর্শীর কাছে পেপার’টা দিয়ে বললো-
এখানে সই করো।

স্পর্শী চমকে কাগজের দিকে তাকালো। তারপর পরশের দিকে তাকাতেই বললো-
হুম,কোর্ট কাবিন করছি।যাতে পরবর্তীতে কোনো সমস্যা না হয়।সই করে দাও।
স্পর্শী বার কয়েক চারদিকে তাকালো।কি করা উচিত তার।পরশের দিকে তাকাতেই দেখলো এক বুক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।মাথাটা বারবার ঝুকিয়ে ইশারা করছে সই দিতে।করে দিল সই।পরশ চকিতে দাড়ালো সোজা হয়ে।কাগজটা নিয়ে নিজেও সই করে দিল।হৃদস্পন্দন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে তার।এরইমধ্যে পাভেল উঠেই স্পর্শীর উদ্দেশ্যে বললো-

সেই সই তো করলেই,শুধু শুধু এতো নাটকের কোনো দরকার ছিলো।মার টাও তো খাইতা না আগে রাজি হলে।
মুহুর্তেই তীব্র অভিমানে চিবুক শক্ত হয়ে গেল স্পর্শীর।মুখটাকে থমথমে করে তাকিয়ে রইলো অন্যদিকে।পরশ চোখ গরম করলো পাভেলের দিকে তাকিয়ে।তারপর ইমামের দিকে ইশারা করতেই সে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।কবুল বলার সময় আসতেই স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে ইমাম বললো-

বলো মা,কবুল।
কোনোরুপ সময় নষ্ট না করেই থমথমে কন্ঠে অন্যদিকে তাকালো স্পর্শী।অভিমানের সুরে বলে উঠলো
কবুল,কবুল,কবুল।
সাময়িক ভাবে হতভম্ব হয়ে গেল কাজি।সে তো একবার বলতে বলেছে মাত্র।কিছু না বলে পরশের দিকে তাকাতেই সেও কবুল বলে দিলো।
ঠোট টিপে হেসে দিলো পাভেল।তারপর পুনরায় বলে উঠলো-

বাহবা,বাবুর আম্মুর কি আগে থেকেই অভিজ্ঞতা ছিল নাকি বিয়ের। একবার বলতেই তিনবার বলে দিল।হেসে দিল বাকি সবাই।গাঢ় অভিমান নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল স্পর্শী।সিড়ির কাছে আসতেই পরশ বাধা দিল।আলগোছে হাত ধরে টেনে নিল নিজের কাছে।গালের উপর হাত বুলিয়ে বললো-
বেশী ব্যাথা লেগেছে?

ব্যাস হয়ে গেল।সমস্ত রাগ উগড়ে দিল পরশের উপর।দুহাত দিয়ে নিজের সমস্ত ব্যাথার শোধ নিতে পরশের বুকের উপর উড়াধুরা কিল মারতে লাগলো।মুখে বললো-
আপনার সাহস হয় কিভাবে আমাকে মারার?সেদিন ও মেরেছেন,কিচ্ছু বলি নি।তাই বলে আজকেও মারবেন।আপনার,,, আপনার,,,
বলার আগেই স্পর্শীর মাথাটা বুকে চেপে ধরলো পরশ। বুক চিরে বের হয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। এ যেন বিশাল যুদ্ধের জয়ের উপহার।ঠোট দুটোকে উচু করে স্পর্শীর মাথায় ছোয়ালো।মুহূর্তেই দু কদম দূরে সরে গিয়ে দাড়ালো স্পর্শী।চোখ গরম করে বললো-

দেখুন নেতামশাই,একদম বাড়াবাড়ি করবেন না।বিয়ে করেছেন বলে কি মাথা কিনে নিয়েছেন আমার?
পরশ সামান্য হকচকিয়ে গেল।তারপর বললো-
আর সব কিনলেও তোমার মাথা কেনার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।ওটাকে তোমার কাছেই রাখো।পুরো মাথাভর্তি গোবর ভরা।যখন যা ইচ্ছে হয় তাই করো।যত্ত সব শয়তানি বুদ্ধি আছে সব কিছু অন্যের উপর ফলিয়ে আমাকে জ্বালাও।
কিরে ভাই,বিয়ের সাথে সাথেই ঝগড়া।ওনাদেরকে তো বিদায় করবি।

উপর থেকে দরজা ফাক করে পাভেল উকি দিয়ে বললো।পরশ আসছি বলে স্পর্শীর হাত ধরে পুনরায় রুমে এলো।সবাইকে টাকা দিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে বিদায় করলো।যাওয়ার আগে সাবধানী বার্তা হিসেবে বিয়েটাকে গোপন রাখতে বললো।স্পর্শী রুমের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে।সবাইকে বিদায় করে স্পর্শীর কাছে এসে দুষ্টমি করে বললো-
তুমি মিষ্টি খাবে না?অবশ্য তোমার জন্য স্পেশাল মিষ্টি রাখা আছে।

স্পর্শী হকচকিয়ে গেল।মনে পড়লো সেদিন জাবির ক্যাম্পাসের লাস্ট চুমুর কথা। মুহুর্তেই লজ্জায় হাস ফাস করতে লাগলো। দ্রুত মাথা টা নাড়িয়ে বললো-
না না,আমি কোনো মিষ্টি খাবো না।
পরশ হাসলো। পুনরায় ঠোট টিপে হেসে বললো-

তুমি কি ভাবছো?আমি তোমায় চুমু দিতে চেয়েছি।ছিঃ ছিঃ স্পর্শীয়া,আমি একজন এমপি মানুষ। এ ধরনের কথা বা কাজ আমার সাথে মানায় নাকি।তুমি বরাবর’ই মাথায় এইসব দুষ্টুমি বুদ্ধি নিয়ে চলো।
থেমে বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো-
সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।চলো,তোমাকে দিয়ে আসি।নইলে তো আমার সমন্ধি সাহেব কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে ফেলবে।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ১৪

বার্তা:আমার জানামতে,গল্পপাঠকদের কল্পনাশক্তি,চিন্তাশক্তি, অনুভবশক্তি একজন লেখকের চাইতে প্রখর হয়।সেখানে সামান্য গল্পের কাহিনি টাকে আপনারে এলোমেলো করে ফেলছেন।
এই গল্পটা বিশেষ করে অতীতকে নিয়েই রচিত।সেক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে আমি একটু আলাদাভাবে অতীত টাকে উপস্থাপন করতে চেয়েছি।যেখানে বর্তমানের ফাকে অতীত নয়, অতীতের ফাকে ফাকে বর্তমান কে ব্যাখ্যা করেছি।যাই হোক,গল্পের বর্তমান দশ পর্বের লাস্টে দেওয়া আছে,বাকি সব পর্ব গুলো অতীত থেকেই উপস্থাপন হচ্ছে।আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।২য়ত,গত তেরো পর্বে আর্শি সপ্ন দেখছিলো পরশ আর স্পর্শীর বিয়ে যেটা আমি ক্লিয়ার ও করেছি।কিন্তু আপনারা এখনো সেখানে এলোমেলো করে ফেলেছেন।আমার মনে হয় আপনারা গল্পটাকে উপভোগ করেন না, ব্যাস পাঠ্যবই এর মতো রিডিং পড়ে যান।আশা করি এখানে সমস্ত উত্তর পেয়েছেন।
দিয়ে দিলাম আপনাদের নেতামশাই আর বাবুর আম্মুর বিয়ে।এবার সবাই ফুচকা ট্রিট দেন আমাকে।আর একটা কথা, এই বিয়েটা কিন্তু বাস্তবেই হয়েছে, এটাকে আবার সপ্ন ভাববেন না প্লিজ।তাহলে আমি সত্যিই হার্ট এটাক করবো।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ১৬