বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৪৯

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৪৯
জাওয়াদ জামী

তাহমিদ নিজেই ওদের বাসায় পোঁছে দিতে যায়। তাই আনানকে ওর বাইক এখানেই রেখে যেতে হয়। তাহমিদ ওদের নিজেকে কোন রিস্ক নিতে চাচ্ছেনা এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে, তার ওপর বাইকে যাওয়া মোটেও ঠিক হবেনা। দিনের বেলায় আনানদের বাসা আর তাহমিদের বাসায় আসতে দুই ঘন্টা লাগে।

জ্যামের কারনে সময়টা বেশি লেগে যায়। কিন্তু রাতে রাস্তা নির্জন থাকায় এবং তাহমিদ শর্টকাটে যাওয়ায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় লাগে ওদের পৌঁছাতে।
আনানের বিল্ডিংয়ের সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করায় তাহমিদ। আনান প্রথমে গাড়ি থেকে বেরিয়ে দারোয়ান চাচাকে ফোন করে।
সিক্তাও গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। তাহমিদ এসে দাঁড়ায় সিক্তার পাশে। আনান দারোয়ান চাচার সাথে কথা বলছে। দারোয়ান চাচা গেইট খুলে দেয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” সিক্ত, এমন পা’গ’লা’মি আর কখনোই করবিনা।নেহাৎ আনান ভালো ছেলে, তাই সে অসময়ে তোর বায়না মেনে নিয়ে, ঐ বাসায় গেছে। আনানের জায়গায় অন্য কেউ হলে তোর কথা কখনোই শুনতনা। উল্টো তোর সাথে অশান্তি করত। শোন কখনো যদি তোর বড় চাচ্চু, বড়মার জন্য খারাপ লাগে, তবে তুই তাদের ফোন দিবি। এমনভাবে রাতবিরেতে বাসা থেকে বের হবিনা। যখনই তোর ঐ বাসায় যেতে মন চাইবে, তবে আমাকে ফোন করবি। আমি এসে তোদের দুজনকে নিয়ে যাব। ঠিক আছে? ”

” ঠিক আছে, ভাইয়া। আসলে বাবা-মা’র জন্য কষ্ট হচ্ছিল, তাই হুটহাট এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আর এমন হবেনা। ”
” গুড গার্ল। এবার বাসায় যা। আনান, তোরা ভেতরে যা। আমিও যাই। ”
” ভাই ,এতরাতে বাসায় যাওয়ার দরকার নেই। রাতটুকু এখানেই থেকে যাও। ”
” আমার যেতেই হবে। বড়মার, চাচ্চুর অবস্থাতো দেখেছিস? তাদের রেখে আজ আমার এখানে থাকা ঠিক হবেনা। যা তোরা ভেতরে, যা। ”

আনান সিক্তা ভেতরে গেলেই তবে তাহমিদ গাড়িতে উঠে বসল।
আনান সিক্তাকে নিয়ে চুপিচুপি বাসায় ঢোকে। তখন রাত প্রায় সাড়ে তিনটা।
হঠাৎ করেই সিক্তা খুব অপরাধবোধে ভুগতে থাকে। ওর বোকামির জন্যই আজকের রাতটা মাটি হয়ে গেল। আনান কত স্বপ্ন দেখেছিল এই রাতটা নিয়ে।
সিক্তা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে হাজারটা গালি দিচ্ছিল।

” সিক্ত, এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন! ঘুমাবিনা নাকি? যা এই ভারি শাড়িটা খুলে অন্য কিছু পরে আয়। এসে লম্বা একটা ঘুম দে। ”
আনানের কথা শুনে সিক্তার খারাপ লাগাটা গভীর হয়। কি বোকামিই না ও করল!

” আজকের রাতে কি কেউ ঘুমায় নাকি! আর আমার মোটেও ঘুম পায়নি। ” সিক্তা কথাটা বলেই দুই হাতে মুখ চেপে ধরল।
এদিকে আনান সিক্তার কথা শুনে বিজয়ের হাসি হাসল। ও অনুমতি পেয়ে গেছে। অজান্তেই সিক্তা ওকে নিজের কাছে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে।

আনান ঠোঁট কামড়ে হেসে সিক্তার কাছে এগিয়ে যায়। এক ঝটকায় ওকে কোলে তুলে নেয়। সিক্তা প্রথমে ভয় পেলেও, পরে লজ্জায় আনানের বুকে মুখ লুকায়।
আনান ওকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। আজকের রাতের শুরুটা অন্যরকম হলেও, শেষটা মধুর হতে চলেছে। দুই প্রেমিক হৃদয়ের মিলন হতে চলেছে আজ। এই রাত দুজন দুজনাতে মিশে যাওয়ার। খুব কাছ থেকে ভালোবাসা অনুভব করার এই রাত। সিক্তা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে রাখল। আনান ওর এত কাছে এসেছে, যে ও আনানের প্রতিটা নিঃস্বাস অনুভব করতে পারছে।

আনান সিক্তাকে চোখ বন্ধ করে থাকতে দেখে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারায়।
তাহমিদ বাসায় ফিরে দেখল সবাই ওর অপেক্ষায় বসে আছে। আফরোজা নাজনীন আর সানাউল রাশেদিন দুজনেই ঘুমাচ্ছেন। ফজরের আজান দিলে যে যার রুমে চলে যায়।

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গলে আফরোজা নাজনীন একটু সুস্থ করছেন। তার প্রেশারও এখন ঠিক আছে। সানাউল রাশেদিনও ঠিক আছেন। কিন্তু তারা যখন শুনলেন, রাতে সিক্তা আনানের সাথে এখানে এসেছিল, স্বভাবতই তারা ভিষণই অবাক হলেন। মেয়েটা তাদের জন্য এমন পা’গ’লা’মি করেছে! তিনি তৎক্ষনাৎ সিক্তাকে ফোন করতে চাইলেন। কিন্তু তাহমিনা আক্তার তাকে আটকালেন। এখন সকাল আটটা বাজে। তিনি তাকে বোঝালেন, কালকে তারা গভীর রাতে বাসায় গেছে। এত সকালে নিশ্চয়ই ওরা ঘুম থেকে উঠেনি। তাহমিনা আক্তারের কথা মেনে নিলেন আফরোজা নাজনীন।

সকাল নয়টা বাজলেও আনান সিক্তা ঘুম থেকে উঠেনি৷ এদিকে আরোশি, তনয়া, দৃষ্টি ড্রয়িং রুমে পায়চারী করছে, কখন ওরা উঠবে৷ আজকে নাকি নতুন বউকে নিয়ে কিসব আয়োজন আছে৷ বড়রা তাই সব ঠিকঠাক করছে। তারা সিক্তাকে ডাকতে বলছে। কিন্তু শাহনাজ সুলতানা বারবার বলছেন, ওদেরকে পরে ডাকতে। তাই ওরা সিক্তাকে ডাকতে না পেরে পায়চারী করছে।

” দৃষ্টি, নিচে যাবি? চল তোকে আইসক্রিম খাওয়াব। আর কিছু কথাও আছে। ” নিহানের ডাক উপেক্ষা করতে পারেনা দৃষ্টি। ওর সাথে নিচে যায়।
দুজনে বেশ কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক ঘুরাঘুরি করে। নিহান ওকে আইসক্রিম খাওয়ায়। ওরা রিক্সা করে ঘুরল। সারাটা সময় নিহান দৃষ্টির হাত ধরে রাখল। দৃষ্টি বেশ উপভোগ করল নিহানের সঙ্গ। আজকের দিনটা ও সারাজীবন মনে রাখবে।
দৃষ্টিরা বাসায় আসতেই বাকিরা ওকে চেপে ধরল। ও নিহানের সাথে কেন গিয়েছিল, কোথায় গিয়েছিল এমন প্রশ্নে ও ঘাবড়ে যায়। তবে নিহান আসে ওকে উদ্ধার করতে।

” আরে তোরা এত হাইপার হচ্ছিস কেন! দৃষ্টির ঢাকায় ঘোরার অভিজ্ঞতা তেমন নেই। তাই ওকে নিয়ে একটু ঘুরতে গেছিলাম। বাসা থেকে মেহমানরা বিদায় নিলে তোদেরকে নিয়েও ঘুরতে যাব, বুঝেছিস। এবার বেচারিকে রেহাই দে। ” নিহানের কথা সবাই মেনে নিল। ওরা আর দৃষ্টিকে ঘাঁটালনা।
দেখতে দেখতে কেটে গেছে সাতদিন। আগামীকাল কায়েস পরিবার নিয়ে গ্রামে যাবে। নাজমা পারভিনও চিটাগং ফিরবেন।
এই কয়দিন তাদের খুব আনন্দে কেটেছে।

শিউলি আক্তার তাহমিদকে বেশ করে ধরেছে। সে চায় কুহু কিছুদিন গ্রামে গিয়ে থাকুক। সেই সাথে তাহমিদকেও যাওয়ার কথা বলল। তবে তাহমিদ এবার শিউলির কথা ফেলতে পারলনা। সে জানাল, মাস খানেক পর ওরা ফুলতলা যাবে। তাহমিদের কথা শুনে শিউলি আক্তার খুব খুশি হয়।

আফরোজা নাজনীন আজ সিক্তার পরিবারের সবাইকে দাওয়াত করেছেন। কাল তার ভাই-বোনেরা চলে যাবে, তাই আজকে তারা একসাথে হয়েছেন। তার বাকি তিন মেয়েও আছে বাবার বাড়িতে।
সন্ধ্যার পর শাহনাজ সুলতানা ভাই-বোনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে যান।
পরদিন সকালে আফরোজা নাজনীনের কাছ থেকে বিদায় নেয় কায়েস আর নাজমা পারভিন। অশ্রুসিক্ত নয়নে আফরোজা নাজনীন বিদায় দিলেন তার ভাই-বোনকে। দৃষ্টি নিহানের মন খুব খারাপ হয়ে গেছে। আবার কবে ওদের দেখা হবে, তা ওরা জানেনা।

বিয়ের ব্যস্ততা শেষ করে তাহমিদ আবার ব্যস্ত হয়ে গেছে কর্মজীবনে। সেই আগের রুটিনে ফিরে যেতে হয়েছে ওকে। সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে বাসায় আসতে রাত একটা কি দেড়টা বাজছে। নিয়ম করে কুহু ওর জন্য অপেক্ষা করে। ওর সকল দ্বায়িত্ব মন দিয়ে পালন করছে। উপহার হিসেবে থাকছে তাহমিদের আনলিমিটেড ভালোবাসা আর দুষ্টুমি। মাঝে মাঝে কুহু তাহমিদের এমন কান্ডে হাঁপিয়ে ওঠে। ও ভেবে পায়না সারাদিন ধরে পরিশ্রমের পর, একটা মানুষের এত ভালোবাসা আসে কোথা থেকে! কিন্তু আবার যখন ভাবে, দিনভর বিরতিহীন পরিশ্রমের পর মানুষটা ওর মাঝেই নিজের সুখ খুঁজে নেয়, তখন একরাশ ভালোলাগা ছুঁয়ে যায় ওর হিয়া।

” বউ, এভাবে একমনে কি ভাবছ? আমার বাহুডোরে থেকে এমন আনমনা কেন আমার, বউ? আমার ছোঁয়া কি আজ তার মনে দোলা দিচ্ছেনা? নাকি আমি তার মনের ঘরের দরজা খুলতে পারিনি? ”
তাহমিদের কথা শুনে কুহু তার দিকে চমকে তাকায়। এ কি বলছে সে!
” এসব কি আবোলতাবোল কথা বলছেন! আমিতো আপনার কথাই ভাবছিলাম। তাই একটু আনমনা হয়ে গেছিলাম। আর আপনি কত কিছু ভেবে নিলেন! ”

” আমার বুকে থেকে আবার আমার কথাই ভাবা হচ্ছে! তারমানে ডাবল ভালোবাসা আজকে পাচ্ছি। তাহমিদরে তোর কপাল খুলেছে। তোর বউয়ের ভালোবাসায় আজ অফার চলছে। বিষয়টা তোর জন্য লটারি পাওয়ার মত। না চাইতেই নিজের ভাগের ভালোবাসাও পাবি, আবার অফারেরটাও পাবি। কই বউ, তারাতারি দাও। আগে অফারেরটা দাও। পরে নাহয় ভাগেরটা দিও। ”

কুহুর এবার নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। এই মানুষটা এমন কেন! সারাদিন তার এত ভালোবাসা পায় কেমন করে!
” বউ, আবার কোথায় হারালে? আমি অপেক্ষা করছি তো। তুমি তারাতারি সবকিছু দিলেই তবে আমি ঘুমাব। দাও তারাতারি দাও। আমার এখন ভালোবাসা পাওয়ার নেশা উঠেছে। এ নেশা যেকোন নেশার থেকেও জোড়ালো। ” তাহমিদ ওর ঠোঁট এগিয়ে দেয় কুহুর দিকে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৪৮

কুহু বুঝল আজ ওর নিস্তার নেই। এই মানুষটা আজ ওকে ছাড়বেনা। সে যা চায় আজকে তা তাকে দিতেই হবে। কুহু হেসে তাহমিদের পুরুষ্টু ঠোঁটে নিজের রাঙা ঠোঁট ছোঁয়ায়।
বিঃদ্রঃ আজকে ছোট পার্ট পড়েই সন্তুষ্ট থাকেন। সারাদিন কাজের চাপে রান্না করার সুযোগ পাইনি। রাত দশটার দিকে সব কাজ শেষ করার পর এইটুই লিখতে পেরেছি।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৫০