বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৫৩

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৫৩
জাওয়াদ জামী

তাহমিদ অনেকক্ষণ থেকেই কুহুকে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু ওর রেসপন্স নেই। বাধ্য হয়ে ও দৃষ্টিকে ফোন দেয়। কিন্তু দৃষ্টিও ফোন রিসিভ করলনা। ও একের পর এক ফোন দিতেই থাকে।

রাত বারোটা বেজে গেছে সেই কখন, তবুও কুহু ফোন রিসিভ করলনা। এবার তাহমিদের চিন্তা হচ্ছে। ও এবার ফোন করল কায়েসকে। কয়েকবার ফোন বেজে যায় কিন্তু রিসিভ হয়না। তাহমিদ তবুও দমে যায়না। ও আবারও ফোন করল। এবার ওকে হতাশ হতে হয়না। কিন্তু তাহমিদ কথা বলার আগেই কায়েস কাঁপাকাঁপা গলায় কথা বলল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” তাহমিদ, তুমি কি ফুলতলা আসতে পারবে? তোমাকে আসতেই হবে। ”
” মামা, কি হয়েছে? কুহু ঠিক আছে তো? তোমরা ঠিক আছ? ”
” কি..কিছু ঠিক নেই। তুমি একবার এস।”
” আমি মেডিকেল ক্যাম্পের জন্য সিরাজগঞ্জ এসেছিলাম। এখন সেখানেই আছি। দুই ঘন্টার ভেতর আমি আসছি। ততক্ষণ কুহুকে দেখে রেখ। ” ভয়ে তাহমিদের বুক দুরুদুরু করছে। ওর সর্বশরীর কাঁপছে। ও তৎক্ষনাৎ ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে।

কায়েস ওর চাচাতো ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে মেডিকেলে যায়। ওর বুকের ব্যথা যেন আজ জানান দিচ্ছে, তার বাস এখনো কায়েসের বুকেই।
শিউলি বিলাপ করতে ভুলে গেছে। চুপচাপ দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু ঝরছে। কুহুকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওর অবস্থার ধীরে ধীরে অবনতি হচ্ছে। দৃষ্টির অবস্থাও তাই। ডক্টর ওদের দ্রুতই রাজশাহী মেডিকেলে নিতে বলে।

তাহমিদ ড্রাইভারকে বারবার জোড়ে গাড়ি চালাতে বলছে। কায়েসের মুখে কিছুই ঠিক নেই কথাটা শোনার পর, ওর জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি কি হয়েছে। ও একমনে আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে।
গভীর রাত হওয়ায় রাস্তা ফাঁকা থাকায় ও সিরাজগঞ্জ থেকে দেড় ঘন্টায় নাটোর পৌঁছে। কায়েসকে ফোন দিলে, কায়েস ওকে মেডিকেলে আসতে বলে। এবার তাহমিদের বুক শুকিয়ে যায়। কি হয়েছে কুহুর? ও কায়েসকে কোন প্রশ্ন না করে মেডিকেলে পৌঁছে।

আওয়াজ তুলে অ্যাম্বুলেন্স অন্ধকারের বুক চিঁড়ে ছুটে চলেছে। তাহমিদ যেন আজ পাথর হয়ে গেছে। বারবার মনে হচ্ছে কেন সে কুহুকে ফুলতলা একা রেখে গেল? এসবকিছুর জন্য ও-ই দায়ী। ওর জন্যই দৃষ্টির আজ এই অবস্থা।
তাহমিদ মেডিকেলে ফোন করে সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। ততক্ষণে ওর বাড়ির সবাই জেনে গেছে কুহু আর দৃষ্টির সাথে কি ঘটেছে। আফরোজা নাজনীন, তাহমিনা আক্তারকে নিয়ে মেডিকেলে এসেছেন ভোরেই। ওদের অ্যাম্বুলেন্স আসতে আর দেরি নেই। আজ আফরোজা নাজনীন নিজেকে সামলাতে পারছেননা। তিনি থেকে থেকেই ডুকরে কেঁদে উঠছেন। কাঁদছেন তাহমিনা আক্তারও। শাহনাজ সুলতানা সংবাদটা পাওয়ামাত্রই সবাইকে নিয়ে ছুটে এসেছেন। নাজমা পারভিন রওনা দিয়েছেন চিটাগং থেকে।

কুহুকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। মাথায় আঘাত পাওয়ায় ওর ব্রেইনে ইন্টারনাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে। ডক্টররা তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছেন।
দৃষ্টিরও চিকিৎসা চলছে পুরোদমে। শিউলি সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করছে। সে বারবার আহাজারি করছে আর বলছে, কেন সে ওদের একা রেখে বিয়েতে গেল।
আজ কেউ কাউকে শান্তনা দেয়ার অবস্থায় নেই।

” ডক্টর তাহমিদ, আপনার স্ত্রী’র রিপোর্ট এসেছে। সরি টু সে, তার ব্রেইনে হ্যামারেজ হয়েছে। আর সেই সাথে তার মিসক্যারেজও হয়েছে। তিনি সাত সপ্তাহের অন্তঃস্বত্বা ছিলেন। তার পেটে আঘাত লাগায় ইউটেরাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে সন্তান নিতে গেলে তাকে জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে। ” ডক্টর ইশরাত তাহমিদের সামনে রিপোর্ট এগিয়ে দিয়ে বললেন।

ডক্টরের কথা শুনে তাহমিদের চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি টুপ করে পরল। কুহু মা হতে চলেছিল! নিশ্চয়ই মেয়েটা জানতনা। জানলে সে অবশ্যই তাহমিদকে জানাত। কিন্তু সে পৃথিবীতে আসার আগেই আরেকজন তার অস্তিত্ব মুছে দিয়েছে!
কুহুর অবস্থার কথা শুনে তাহমিনা আক্তার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। সেই সাথে কাঁদছে সেখানে উপস্থিত সবাই।
আনান কারও সাথে কথা বলছে। ও একটার পর একটা ফোন করেই যাচ্ছে।

আজ সে তাহমিদকে এরূপ শান্ত থাকতে দেখে ভয় পাচ্ছে। যে তাহমিদ কুহুর সামান্য কষ্ট সহ্য করতে পারেনা, আজ সেই মানুষটা কুহুর এতবড় বিপদে চুপ করে আছে। এটা যেন আনানের কাছে নতুস অভিজ্ঞতা। শুধু আনান কেন সবাই তাহমিদের এরূপ আচরনে বিস্মিত।

করিডোরের একপ্রান্তে চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে আছে নিহান। দুই হাত মুঠো করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। একটু পরপর ফুলেফুলে উঠছে ওর পিঠ। কেউ ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবে ও কাঁদছে। দৃষ্টির এই পরিনতি ও মানতেই পারছেনা। অথচ ও দৃষ্টিকে নিয়ে কত স্বপ্নই না দেখেছিল!

শিহাবের বাম হাত ভেঙে গেছে সবুজের করা আঘাতে। ওর হাতে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে অনেক আগেই। ছোট ছেলেটা চোখের সামনে এসব ঘটতে দেখে ভড়কে গেছে। তারপর থেকেই কেমন অস্বাভাবিক আচরন করছে।
সেই বৃদ্ধা আগেই কায়েসদের জানিয়েছিল কারা করেছে এসব। অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই শিউলি তাহমিদকে জানায় মেম্বার আর সবুজের কথা। এরপর একে একে সবাই জেনে যায়।
পিঠে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে মাথা তুলে তাকায় নিহান। তাহমিদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হওয়ার বৃথা চেষ্টা করল।

” খুব কষ্ট হচ্ছে, নিহান? আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝলি? যাকে ভালোবাসি, যার মধ্যে নিজের সুখ খুঁজে পাই, সেই মানুষটাকে অসার হয়ে শুয়ে থাকতে দেখতে কারইবা ভালো লাগে বল? ”
তাহমিদের কথা শুনে আনান ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।
” দৃষ্টিকে খুব ভালোবাসিস? আজকের পরেও ওর জন্য তোর ভালোবাসা আগের মতই থাকবে? মেয়েটা কিন্তু খুবই প্রানচঞ্চল ছিল। ওর সাথে এমনটা না হলেও পারত। ”
এবারও নিহান কেঁদে উঠল।

” পরীক্ষা শেষ করে একটা জব করতে চেয়েছিলাম, ভাই। তারপর বাসায় দৃষ্টির কথা বলতাম। কিন্তু তুমি আমাদের কথা জানলে কিভাবে? আমরাতো কাউকেই বলিনি! ”
” আনানের হলুদ সন্ধ্যায় তোদের ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে পেরেছিলাম। এরপর বিয়ের দিন শিওর হয়ে যাই। ”

” জানো ভাই, মেয়েটা প্রথমদিকে খুবই দুষ্টু ছিল। ওকে যেটা করতে নিষেধ করতাম, ও সেটাই করত। এরপর ওকে আমি শাসন করতে শুরু করলাম। ধীরে ধীরে মেয়েটা আমার সব কথা মানতে শুরু করল। চঞ্চলতার ছিঁটেফোঁটাও রইলোনা ওর মাঝে। আমার ভালোলাগা যেমন ওর ভালোলাগা হয়ে উঠল, ঠিক তেমনি আমার মন্দ লাগাও বুঝতে শিখে গেল। আর আমিও ওকে নিজের থেকে বেশি ভালোবেসে ফেললাম। আচ্ছা ভাই, দৃষ্টি সুস্থ হয়ে যাবে তো? ও আর কয়দিন ঘুমিয়ে থাকবে? ওকে নিশ্চুপ দেখতে যে আমার ভালো লাগছেনা। ” নিহান আবারও কাঁদছে।

” চিন্তা করিসনা, দৃষ্টি খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে উঠবে। দেশের সেরা চিকিৎসক ওর চিকিৎসার দ্বায়িত্ব নিয়েছে। তবে একটা কথা মেয়েটা সুস্থ হয়ে উঠলে ওকে কোন কষ্ট দিসনা। এমনিতেই ও অনেক কষ্ট পেয়েছে। ”
” আমি ওর মন দেখে ভালোবেসেছি। মনের ভালোবাসার কাছে শরীরের ভালোবাসা তুচ্ছ, ভাই। আমি আমার দৃষ্টির নির্মল মন ভালোবাসি, ওর সরল হাসিকে ভালোবাসি, ওর গভীর চাহনি ভালোবাসি, আমার প্রতি ওর গভীর ভালোবাসাকে আমি ভালোবাসি। সেখানে এই শরীর তুচ্ছ। আমার ভালোবাসার ভেতরে কোন কামনা নেই আছে শুধু প্রশান্তি। কিন্তু এতকিছুর পরেও তুমি এত ঠান্ডা মেজাজে আছ কেমন করে, ভাই! ”

” মনে কর ঝড়ের আগে পৃথিবী যেমন থমকায়, তেমনি থমকে আছি আমি। ” তাহমিদ আর সেখানে দাঁড়ায়না। দূর্বল পায়ে এগিয়ে যায় আইসিইউর সামনে। যেখানে ওর বেঁচে থাকার অক্সিজেন, নিচে বাঁচার জন্য লড়াই করছে।
তিনদিন পর জ্ঞান আসে দৃষ্টির। ব্যথায় ওর শরীর জর্জরিত। চোখ খুলেই চারপাশে সবাইকে দেখল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করল। হঠাৎ করেই ফুপুদের দেখে ও বিস্মিত হয়। কিন্তু পরক্ষনেই মনে পরল সেই বিভিষিকাময় রাতের কথা। সেদিন ওর সাথে কি হয়েছে ভাবতেই শরীর অবশ হয়ে আসল। চোখ বন্ধ করল লজ্জায়। সেই সাথে অঝোরে ঝরতে থাকল অশ্রুকনা। কারও দিকে তাকানোর সাহস ওর নেই।

একে একে সবাই দৃষ্টিকে নানান কথা বলে সাহস দেয়। ওর মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করে। দৃষ্টি নিশ্চুপ থেকে শুধু শুনে যায়।
আরও তিনদিন পর দৃষ্টি অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছে। কিন্তু ও পুরোটাই নিশ্চুপ হয়ে গেছে। কুহুর কথা খুব জানতে ইচ্ছে করলেও কাউকে কিছুই জিজ্ঞেস করলনা।

তাহমিদ দৃষ্টির ব্যাপারে ডক্টরের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল, মেয়েটা ট্রমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ওকে একা ছাড়া যাবেনা। ছায়ার মত ওর পাশে থাকতে হবে। ভালোবাসা দিয়ে ওর অতীতকে ভুলিয়ে দিতে হবে।
নিহান কয়দিন থেকেই লক্ষ্য করছে দৃষ্টি ওকে দেখলেই আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওর দিকে একবারও তাকাচ্ছেনা। বিষয়টা ওকে কষ্ট দিচ্ছে। অথচ ও এই দুঃসময়ে দৃষ্টির পাশে থাকতে চায়।

” ভাই, সবুজ আর মেম্বারের খবর পাওয়া গেছে। ওরা বেনাপোল সীমান্তের কাছে একটা গ্রামে লুকিয়ে আছে। সুযোগ পেলেই ওরা ইন্ডিয়ায় পালাবে। অবশ্য আমি ওদের পেছনে লোক লাগিয়ে দিয়েছি। ” আনানের কথা শুনে তাহমিদ ভয়ংকর হাসল।

সানাউল রাশেদিন তার সব ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে দেশের সব বর্ডারে সবুজ আর মেম্বারকে আটকানোর ব্যবস্থা করেছেন। সব বর্ডারেই ওদের ছবি দেয়া হয়েছে। ওরা বর্ডারে যাওয়া মাত্রই ওদের অ্যারেস্ট করা হবে।
কুহুর অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি এই কয়দিনে। তাহমিদ অসহায় চোখে কাঁচের দরজার এপাশ থেকে নিষ্পলক চোখে কুহুকে দেখে যায়। ও কুহুকে নিয়ে সিঙ্গাপুর যেতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন ওকে নিয়ে কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। ডক্টর সম্পূর্ণ নিষেধ করে দিয়েছেন।

রাত দ্বিপ্রহর। সবাই বাসায় গেলেও মেডিকেল রয়ে গেছেন আফরোজা নাজনীন এবং নাজমা পারভিন। তাদের সাথে তাহমিদও আছে। সে কিছুতেই কুহুকে একা রেখে কোথাও যাবেনা।
আজ শিউলিকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন আফরোজা নাজনীন। গত কয়েক রাত শিউলি ঘুমায়না। তাই ওকে বাসায় পাঠিয়েছেন আফরোজা নাজনীন। তবে বাসায় যাওয়ার আগে ডক্টরকে দিয়ে ওকে চেক-আপ করিয়ে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিয়েছিলেন। তাহমিনা আক্তারকে বলেছেন, শিউলির খেয়াল রাখতে।

” বাপ, তুই নিজেকে কিভাবে শান্ত করে রেখেছিস! তোকে এই অবস্থায় দেখতে আমাদের কারও ভালো লাগছেনা। তুই আমাদের সাথে কেন রা’গ করছিসনা! আমরা না পাঠালে তুই কখনোই কুহুকে নিয়ে ফুলতলা যেতিস না। দোষ তো আমাদের। ” আফরোজা নাজনীনের কথা শুনে তাহমিদ হু হু করে কেঁদে উঠল।
অনেকক্ষণ ধরে কাঁদল ও। আফরোজা নাজনীনও এটাই চাচ্ছিলেন। ছেলেটা কাঁদলেই তবে ওর বুকের চাপা কষ্ট কিছুটা কমবে।

” দোষ তোমাদের কারোরই নয়, বড়মা। দোষ মেয়েটার ভাগ্যের। আজীবন ও ভাগ্যের সাথে লড়াই করে এসেছে। এবারও তাই করছে। তবে দুঃখ একটাই, ওর বিপদে আমি অনেক দূরে ছিলাম। যার দরুন ওকে কষ্ট পেতে হচ্ছে, আমি আমার সন্তানকে হারালাম। ওকে আদৌ ফিরে পাব কিনা তা-ও জানিনা। এতসব চিন্তা আমাকে কাঁদতে ভুলিয়ে দিয়েছে। নিজেকে বড্ড বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে। একজন স্বামী হয়ে স্ত্রীকে রক্ষা করতে পারলামনা, একজন বাবা হয়ে সন্তান আসার সুসংবাদ পাবার আগেই তাকে হারাতে হল। একজন মানুষের পাথরে পরিনত হতে কি এই কারনগুলো যথেষ্ট নয়? ”
আফরোজা নাজনীন কিছু না বলে তাহমিদের মাথায় হাত রাখলেন।

দৃষ্টি চুপচাপ শুয়ে চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে। এমন সময় কেবিনে নিহান প্রবেশ করল।নিহানকে দেখে দৃষ্টি মুখ ঘুরিয়ে নেয়। নিহান বারবার দৃষ্টির সাথে কথা বলতে চাইলেও দৃষ্টি মুখ ঘুরিয়েই রাখল।
সবাই কুহুর চিন্তায় অস্থির। মেয়েটার কোনই উন্নতি নেই। ওর জ্ঞান কবে ফিরবে তা ডক্টররাও বলতে পারছেনা। আবার কায়েসও বুকের ব্যথা নিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। এমতাবস্থায় কারো ভালো থাকার কথা নয়।

মেডিকেলের বারান্দায় সবাই চিন্তিত মুখে বসে আছে। ঠিক সেই সময় নিহান সেখানে এসে দাঁড়ায়। নাজমা পারভিন বড় বোনের সাথে কোন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। নাজমা পারভিনের স্বামী সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হওয়ায় ছুটি না পাওয়ায় এই কয়দিন আসতে পারেননি। তিনি গতকালই এসেছেন। বর্তমানে তিনি সানাউল রাশেদিনের সাথে কথা বলছেন।
” আম্মু-আব্বু, তোমাদের সাথে আমার কথা ছিল। ” নিহানের কথা শুনে সবাই একযোগে তার দিকে তাকায়।
” বল কি বলবে। ” নিহানের বাবা বললেন।

” আব্বু, আমি দৃষ্টিকে বিয়ে করতে চাই। তোমরা রাজি থাকলে আলহামদুলিল্লাহ। আর না থাকলেও কোন অসুবিধা নেই। কারণ আমি দৃষ্টিকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবনা। আমি তোমাদের মতামত জানতে চাই। ” নিহানের এলোমেলো কথা শুনে ওর বাবা কিছুক্ষণ ভ্রুকুটি করে চেয়ে রইলেন। তার সদা গম্ভীর পুত্রটির মুখে এমন এলোমেলো কথা বেমানান লাগল তার কাছে। তবে তিনি পুত্রের চোখমুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলেন, তার ছেলে কোনরূপ ঠাট্টা করছেনা। নিহানের মধ্যে তিনি দৃঢ়তার ছাপ দেখতে পেলেন। তিনি বুঝলেন তার পুত্রধন গভীর প্রেমে মজেছে। এখান থেকে তাকে বের করে আনা অসম্ভব।

” তুমি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছ, তখন আমরা আর কি বলব! তবে তার আগে দৃষ্টিকে সুস্থ হতে দাও। ওর পাশে ছায়া হয়ে থাক। ওকে আরেকবার তোমার হতে রাজি করাও। ”
স্বামীর কথা শুনে নাজমা পারভিন হাঁফ ছাড়লেন। দৃষ্টিকে তারও ভিষণই পছন্দ ছিল। তিনি ভেবেছিলেন নিহানের পড়াশোনা শেষ হলে কায়েসের কাছে প্রস্তাব রাখবেন। কিন্তু তার ছেলে সেটা আর হতে দিল কই!

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৫২

বিঃদ্রঃ আজকে আপনাদের কমেন্ট দেখে আমার ভিষণই খারাপ লেগেছে। প্রথম সিজনের সাথে আজকের পার্টের কি কোনও মিল আছে! প্রথম সিজনে সবুজ ছিল দৃষ্টির স্বামী। যে দৃষ্টির সাথে বেইমানী করেছিল। কিন্তু আজকের পার্টে দৃষ্টি ষড়যন্ত্রের শিকার। মেম্বারের নজর ছিল দৃষ্টির দিকে। তাই সুযোগ বুঝে সে দৃষ্টির ক্ষতি করেছে। এমনটা কি আমাদের সমাজে এখনো হয়না? এমন অনেক মেম্বার দেশের আনাচকানাচে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হয়তো খুঁজলে সবুজের মত মানুষকেও পাওয়া যাবে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন একজন মেয়ে হয়ে কিভাবে ধ’র্ষ’ন’কে প্রমোট করি? আমি মোটেও ধ’র্ষ’ন’কে প্রমোট করিনি। এটা একটা সামাজিক ব্যধি বলে আমি মনে করি। আমরা না লিখলেও কিন্তু এই ব্যধি সর্বত্রই ছড়িয়েছে। বাবা-মা’র অসাবধানতার সুযোগে অনেক মেয়ের সাথেই এমনটা ঘটে। তাই বিষয়টা নেগেটিভভাবে না নিয়ে, বরং আমরা সচেতন হই। নিজের ভেতরের কুবাসনা নিয়ন্ত্রণ করে একটা স্বচ্ছ সমাজ গড়ে তুলি। আর যেন কোন মেয়েকে দৃষ্টির মত কষ্ট না পেতে হয়, এই প্রত্যয়ে এগিয়ে যাই।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৫৪