বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৩

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৩
শারমিন আক্তার বর্ষা

“তোমাকে দেখে আমি ইস্টুপিট ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন তো দেখছি তুমি আস্ত একটা গাধা। ওহ, নো স্যরি স্যরি। আস্তো এক গাধী হবে।”

একহাত কোমড়ে ও আরেকহাত থুতনিতে রেখে কিঞ্চিত রুহানির দিকে ঝুঁকে কথাটি বলে A.S রাগে ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে রাগী চোখে তাকাল রুহানি। রুহানিকে রাগতে দেখে ঠোঁট চেপে মৃদু হাসি হাসল এ.স পরক্ষণে রুহানি এ.স এর দিকে রাগান্বিত চোখে তাকাই রাগী ও শক্ত গলায় বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আপনি আমাকে সরাসরি গাধী বলছেন?”
এ.স ডোন্ট কেয়ার অ্যাটিটিউট দেখাল। গায়ের জেকেটের সামনের দিক টা হাত দিয়ে ঝেড়ে বলল,
” গাধীকে, গাধী বলবো না তো কি বলবো?”
রুহানি চোখ জোড়া বড়সড় করে রাগান্বিত হয়ে চেঁচিয়ে বলল,

” আপনি একটা গাধা। ছিনতাইকারী কোথাকার মেয়েদের ব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে পালিয়ে যান। চোর একটা। ”
আমার কথার পিঠে উনার চোখেমুখে বিভ্রান্তির চিহ্ন দেখলাম। উনি কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ থেকে মাথা তুলে রুহানির দিকে তাকালো, রুহানি ‘ওর’ নেত্র যুগল কুঁচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে দেখে, এ.স খোপ করে রুহানির হাতখানা ধরে ফেলল। আকস্মিক ঘটনায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় রুহানি। এ.স এর হাত থেকে নিজ হাতটি ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,
” হোয়াইট দ্য হেল। কি করছেন আপনি? হাত ছাড়ুন বলছি আমার।”

চোখের পলকে কোথা থেকে জেনো একটি বাইক আসল। এ.স আঁড়চোখে তার বাম পাশে তাকাল। চোখ দিয়ে ইশারা করায় লোকটি বাইক থেকে নেমে যায়। রুহানি ছটফট করছে। কিন্তু এ.স এর হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছে না। যত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে এ.স ও’র হাত তত শক্ত করে চেপে ধরছে।

একটানে রুহানিকে নিজ অতিবকাছে নিয়ে আসল। বাইকার লোকটা সামনে থেকে সরতে রুহানি ধরে জোরপূর্বক বাইকে বসায় তারপর নিজেও ওঠে বসে পরে। কেবলা কান্তর মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল শ্যামা। যেই এ.স বাইক স্টার্ট দিলো তখনই শ্যামা কয়েক কদম এগিয়ে আসল, একহাত সামনের দিকে তাক করে তুতলিয়ে বলল,

” এই এই আমার ফ্রেন্ড।” শ্যামা আরও কিছু বলার পূর্বে বাইকার লোকটা শ্যামার সামনে এসে দাঁড়ালো। বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
” চিন্তা করবেন না। আপনার ফ্রেন্ড যথা সময়ে সহি সালামত বাড়ি পৌঁছে যাবে। আপনি এখন বাড়ি চলে যান।”
শ্যামা রাস্তার দিকে ঘুরে তাকিয়ে ক্ষীণকণ্ঠে বলল,

“কিন্তু রুহানি?”
লোকটা উনার একহাত তা’র বুকের ওপর রাখে। শ্যামাকে আস্থা দিয়ে বলে,
“বললাম তো ম্যাম! ঠিক সময়ে আপনার ফ্রেন্ডকে বাসায় দিয়ে আসা হবে। আপনি বাসায় গিয়ে রেস্ট নেন।”

একমনে বাইক চালাচ্ছে এ.স ঠোঁটের কোণে প্রস্ফুটিত এক দুষ্ট হাসি। হাসি দমিয়ে এ.স ত্রস্ত কণ্ঠে বলল,
“এটাকে বলে ছিনতাই করা। লাইক দিনের বেলা মাঝ রাস্তা থেকে তোমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছি। আর তুমি কিচ্ছু করতে পারছো না। কিংবা এক প্রকার চুরি করা বলতে পারো। যেমন তোমাকে চুরি করছি।”

হলুদ, লাল, নীল মরিচ বাতির আলোতে সজ্জিত হয়েছে চারপাশ। পুরো গার্ডেন এড়িয়া জুড়ে অগোনিত মানুষের সমাগম। সবাই নিজেদের মতো করে পার্টির আনন্দ উপভোগ করছে। গার্ডেনের এক সাইডে একটা স্টেজ করা হয়েছে। স্টেজের উপরে উঠে একে একে সবাই নিজেদের পারফরমেন্স করছে। স্টেজের সামনের দিকটায় একদম পুরোটা জায়গা জুড়ে ব্রাইড-গ্রুম প্লাস গেস্টদের বসার জন‍্যে ব‍্যাবস্থা করা হয়েছে। সেখানে সবার প্রথম সারির একদম মাঝখানে বসে আছে শ্যামা ও ও’র বন্ধুরা। ওদের সামনে ছোট একটা স্টুলের উপরে বসে আছে হিনা আর্টিস্ট। যিনি এই মুহূর্তে খুব মনোযোগ দিয়ে শ্যামার হাতে মেহেন্দির ডিজাইন একে দিচ্ছে।

অন্য দিকে রাগী লুকে গার্ডেনের এক সাইডে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে রুহানি।
লোকটার সাথে গিয়ে ভাব জমাচ্ছে রাইসা ও লাবণ্য। যা দেখতে রাগে শরীর জ্বলে ওঠছে রুহানির। কোনোমতে দাঁতে দাঁত চেপে নিজ রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে রুহানি।

রুহানি নিজের দু-হাতের উপরের সাইডের মেহেদি দেওয়া কম্পিলিট করে হাতের দুই আঙুল দিয়ে লেহেঙ্গার সাইড ধরে বসা থেকে উঠে দাড়ালো। তারপর হেঁটে গিয়ে রাইসা ও লাবণ্য’র পাশে দাঁড়িয়ে গলা খ‍্যাকানি দিয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো,

“তোরা দু’জন এই অসভ্য লোকটার সাথে দাঁড়িয়ে কি এত হা হা হে হে হু হু করছিস? ”
এদিকে তেমন একটা কোলাহল নেই! লোকটা তার ডানহাতের দুই আঙুল দিয়ে পাঞ্জাবির গলা ঠিকঠাক করে বলল,
” মিস রুহানি! কাইন্ডলি বলবেন, আমি আপনাদের সাথে কি অসভ্যতামি করেছি? যার ধরুণ আপনি সবার সামনে এমনকি আপনার ফ্রেন্ডদের সামনে আমাকে অসভ্য বলছেন। ”

রুহানি ঠোঁট জোড়া একত্র করে কিলবিলিয়ে বলল,
” সকালেই তো আমাকে জোর করে..”
বাকিটা বলতে গিয়েও থমকে গেলো রুহানি। পাশ থেকে রাইসা ন্যাকা কণ্ঠে বলল,
” সকালে। কি সকালে? বেবস তুমি কি করেছো এই খারুস মেয়েটার সাথে?”
রাইসার মুখে এ.স কে বেবস সম্মোধন শোনে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় রুহানি। রাইসার মুখোমুখি তাকিয়ে ধাতস্থ কণ্ঠে বলে,

” এই লোকটা তোর বেবস হলো, কবে?”
রাইসা এ.স এর দিকে তাকালো। মুখ টিপে হেসে বলল,
” এই সবে মাত্র হয়েছে। যাজ্ঞে সে সব কথা বাদ দে তুই এটা বল, আমার বেবস কে তুই আমার সামনে অসভ্য বলছিস কোন দুঃখে?”

রুহানি রেগে মেগে চেঁচিয়ে বলে,
“ঠাসিয়ে কানের নিচে একটা থা’প্পড় দিবো। উনি এক পলকে তোর বেবস হয়েগেছে তাইনা? সুন্দর কাউকে দেখলেই তোর নোটাঙ্কি শুরু হয়ে যায়। আর সবার সামনে ঢং করলেও আমার সামনে করবি না।”

মাত্রাতিরিক্ত রাগে কথাটি বলল রুহানি৷ রুহানির কথাশুনে চুপসে যায় রাইসা৷ পাশ থেকে কিছু বলার জন্য মুখ খুললো লাবণ্য। এক ধমক দিয়ে তাকেও চুপ করিয়ে দিলো রুহানি। মাথা নিচু করে মুচকি হাসি হেসে মৃদুস্বরে এ.স বলল,
” আমি কি ঠিক শুনছি? না মানে নিজের কানকে নিজে বিশ্বাস করতে পারছি না। মিস রুহানি আমাকে সুন্দর বলে সম্মোধন করল।”

কথাটি বলে ঠোঁট জোড়া মুখের মধ্যে নিয়ে দুষ্ট হাসি হেসে যাচ্ছে এ.স। এখানে দাঁড়িয়ে নিজের বেইজ্জতি করানোর থেকে চলে যাওয়া শ্রেয় হবে মনে করে রাইসা চলে গেলো। ওর পিছু পিছু লাবণ্য ও চলে যায়।
রুহানি চোখ রাঙিয়ে চলে যেতে নিবে তখন এ.স ওর সামনে এসে দাঁড়ালো ঠোঁট জোড়া চুকো করে রুহানির হাত লক্ষ্য করে মসৃণ কণ্ঠে বলল,

” যেভাবে হাত ভরে মেহেদী পড়েছেন। মনে হচ্ছে বিয়ে আপনার বান্ধবীর না, আপনার।”
রুহানি রাগে দাঁত চেপে ধরে বলল,
” ঠিক ভাবছেন আমারই বিয়ে। তাতে আপনার কি সমস্যা? আপনাকে বলেছি আমার ব্যাপারে নাক গলাতে?”
এ.স তার অন্য হাত দিয়ে পাঞ্জাবীর হাতা গুটাতে গুটাতে বলে,

” আমার নাক আমার যেখানে ইচ্ছে হবে, আমি ওখানেই গলাবো।”
রুহানি জায়গাতে দাঁড়িয়ে থেকে, এ.স এর দিকে কিছুটা ঝুঁকে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
“আমি আপনার নাক টাই কে’টে দিবো।”
এ.স সশব্দে হাসি হেসে বলল,
” ম্যাম আমার অপরাধ?”

“আমার শুধু একটাই চিন্তা আর সেটা হচ্ছে আরিশ। আরিশের জন্য ভালো একটা মেয়ে পেতাম। তাহলে ওকে তারহাতে তুলে আমি নিশ্চিত হতাম। তখন ম’রেও শান্তি পেতাম।”
ইয়াসিরের মুখ থেকে কথাটি টেনে নেয় প্রবীর। শুকনো কণ্ঠে বলে,

” আপনি মৃ’ত্যু কামনা কেনো করছেন আঙ্কেল? বরং এমনটা দোয়া করুন, জেনো আরিশের বাচ্চা গাচ্চা আপনি নিজ হাতে পালতে পারেন। তাদের সাথে খেলা করবেন, হাসিঠাট্টা করবেন, তাদের মুখে দাদু ডাক শুনবেন। তা না, আপনি ম’রে যাওয়ার কথা বলছেন।”

ইয়াসির পায়ে হেঁটে প্রবীরের সামনে এসে দাঁড়ালো। তার একহাত প্রবীরের কাঁধে রাখে বলে,
” আমি ছাড়া ওর আর পৃথিবীতে কেউ নেই। আমার পরে ও জেনো সুস্থ স্বাভাবিক জীবন পাড় করতে পারে সেটাই তো চাই।”
প্রবীর সুক্ষ্ম শ্বাস ফেলে বলে,

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১২

” আপনি কি করতে চাচ্ছেন আঙ্কেল।”
ইয়াসির চোখ জোড়া ছোটছোট করে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। জানালার বাহিরে দৃষ্টি স্থির করে মলিন কণ্ঠে বলে ওঠল,
” এ.স এর বিয়ে।”

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৪