বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৬

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৬
শারমিন আক্তার বর্ষা

“আমি এক কথা বারবার পুনরাবৃত্তি করতে পছন্দ করিনা৷ তোমাদের এর আগেও কয়েকবার বলেছি আমার পারমিশন ছাড়া গোডাউনের মধ্যে কেউ জেনো প্রবেশ না করে. কিন্তু দেখো তোমাদের সকলের চক্ষু আড়ালে গতকাল রাতে কেউ একজন গোডাউনে প্রবেশ করেছিল। কোথায় ছিলে তোমরা? রাত বিরাইতে ঘাস চড়তে গিয়েছিলে? এত সিকিউরিটি এবং এতগুলো গার্ড থাকতে কেউ কিভাবে গোডাউনে প্রবেশ করে?”

রাগান্বিত কণ্ঠে কথাগুলো বলে ধপ করে চেয়ারে বসে পরলেন রাজেশ সরকার। রাগে হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপরের সব ছোট বড় জিনিসপত্র গুলো ছুঁড়ে ফ্লোরে ফেলল। পাশ থেকে রফিক করুণকণ্ঠে বলল,” বস! ইনস্পেক্টর নিহান কর্ণ’র ওপর কড়াকড়ি নজর রাখছি। আসল ক্রিমিনালদের বিরুদ্ধে কিছু ইনফরমেশন অ্যান্ড ওভার হয়েছে উনার কাছে। ইনস্পেক্টর নিহান প্রেসের সামনে বলেছেন, মার্ডা’রার এতগুলো মা’র্ডার করার পর্যায়ে একটা মস্তবড় ভুল করেছে আর উনি এটাও বলেছেন যে ওই ভুলের জন্য উনি ক্রিমিনাল দের খুব তারাতাড়ি হাতেনাতে ধরবেন।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে, ইজি চেয়ারে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে মৃদু দুলে রাজেশ সরকার বলল,” পুলিশ কি করবে না করবে সেটা নিয়ে আমাদের এত কিসের চিন্তা ভাবনা? পুলিশদের কে তাদের কাজ করতে দাও। আর তোমরা তোমাদের কাজ করো। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এ.স কে কাবু করতে হলে ওই মেয়েকে আমার লাগবে। ওইবার তো ম’রতে ম’রতে বেঁচে গেছে।

কিন্তু এইবার উঁহু, বাঁচার সুযোগ আর দিচ্ছি না। এক মিনিটও জেনো মেয়েটা চোখের আড়াল না হয়। মেয়েটার ওপর নজর রাখো।” রাজেশ সরকারের কথা শুনে উপর নিচ মাথা নাড়ে তার ডানহাত রফিক। হাতের একটা ফাইল টেবিলের ওপর রেখে ফাইলটা রাজেশের দিকে এগিয়ে দেয় রফিক। সুক্ষ্ম শ্বাস ফেলে ফাইলটা হাতে নেয় রাজেশ, হাতের ইশারায় রফিক কে চলে যেতে বলে। চোখের চশমাটি একটু নাড়িয়ে ফাইলটা দেখতে লাগে। পাশের ফোনটি শব্দ করে বেজে উঠে। সাথে সাথে কল রিসিভ করে, অপর পাশের মানুষটার কথাশুনে স্মিথ হাসল রাজেশ।

“মাম্মাহ বললাম তো আমি ঠিক আছি। আমার কিছু হয়নি। প্লিজ আমাকে নিয়ে টেনশন করিও না। সুমাইয়া আন্টি আমাদের খুব যত্ন করছেন। এবং আমরা যেদিন আসছি সেদিনই আমাদের রিটার্ন টিকেট কেটে ফেলছি। বাঙালি বিয়ের রুলস অনুযায়ী ফিরানির পর, আমরা বেক করব। আর মাত্র কয়েকদিন প্লিজ মা আমাকে নিয়ে টেনশন করিও না। আচ্ছা এখন রাখছি পরে কথা বলবো। শ্যামার সাথে আমরা ছেলের বাড়িতে আসছি।”

ঘন্টা খানেক আগে, বিয়ে সম্পূর্ণ করে শশুর বাড়ি আসে শ্যামা। নতুন বউকে রুমে বসিয়ে রাখছে। বাড়ির বড়রা এসে বারবার শ্যামাকে জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে। কোনো কিছু লাগবে কি না? কোনো সমস্যা হলে তাদের জানাতে বলছেন। মৃদু হেসে ডানেবামে মাথা নাড়িয়ে না বোধক ইশারা করে। কিছু লাগবে না।

শ্যামাকে দেখতে এলাকার অনেকে আসছে। অনেক শোরগোল লোক জনের সমাগমে শ্যামার পাশে বসে আছে ওর বন্ধুরা। হুট করে রুহানির ফোনটি বেজে উঠল। ফোনের স্কিনে মাম্মাহ দেখা মাত্র, সকলের উদ্দেশ্য ‘এক্সকিউজ মি!’ বলে ওঠে চলে যায়। ছাঁদের এক কোণে এসে ইয়ানার নাম্বারে কল লাগাল। প্রথমবার কল রিং হতে রিসিভ করে ইয়ানা। রুহানিকে নিয়ে বেশ চিন্তিত ইয়ানা।

কণ্ঠ স্বাভাবিক রেখে মেয়ের সাথে কথা বলে। নিজের অসুস্থতার কথা এখনও জানায়নি ও’কে। কিছুক্ষণ কথা বলে ছাঁদ থেকে চলে যেতে নেয়। এমতাবস্থায় ছাঁদের ওপর থেকে দৃষ্টি গেলো বাড়ির সামনে একটা বড় গাছের ওপরে। এমন মনে হচ্ছে গাছের আড়ালে কেউ লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের ভুল ভেবে সেদিকে তেমন পাত্তা না দিয়ে ছাঁদ থেকে চলে যায় রুহানি।

” আরিশ শাহ কারো সাথে আপোষ করে না মি.রুদ্র। কিন্তু শান্ত মাথায় ভেবে দেখুন। সে নিজে এসেছে আপনার ফ্ল্যাটে এবং আপনার মুক্তিপণ দাবি করছে। আপনারা সবাই যে অন্যায় করছেন তার শাস্তি তো শুধু কেবল মাত্র মৃত্যু। অথচ দেখুন, আমরা এখন পর্যন্ত কেউ আপনার গায়ে হাত দেইনি। সেই সন্ধ্যা থেকে আপনার জন্য আপনার ফ্ল্যাটে এসে বসে আছি। তবে একটা বিষয় হচ্ছে, আপনার এই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতে আমাদের একটু প্রবলেম হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যাপার না, কোনো কিছুই তো আর অসাধ্য নয়।

আমরা আপনার থেকে আহামরি কিছু চাচ্ছি না মি. রুদ্র। শুধু মাত্র ওই দু’টো ফাইল চাচ্ছি যে দু’টো আপনি লুকিয়ে রাখছেন। ও দু’টো আমাদের দিয়ে দিলে আমরা চলে যাবো। এবং আপনিও প্রাণে বেঁচে যাবেন।”

তাজ তীক্ষ্ণতার সাথে কথাগুলো বলল। সামনে সোফায় বসে আছে রুদ্র। হালকা শীতের মধ্যেও সে ঘামছে। হাতে টিস্যু পেপার দিয়ে কপালের ঘাম টুকু মুছে নিয়ে সরু চোখে আরিশ শাহ এর দিকে তাকাল। আন্ডারওয়ার্ল্ডের একজন গ্যাংস্টার এত সুন্দর ও সুদর্শন কি করে হতে পারে বুঝে আসছে না তার। আরিশের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে চোখ জেনো সরাতে পারছে না রুদ্র। জড়ানো কণ্ঠে বলল, “আমি ফাইল দু’টো আপনাদের দিয়ে দেওয়ার পর আপনারা যে আমাকে মারবেন না তার কী গ্যারান্টি?”

অট্টহাসির শব্দ শুনে রুদ্র ভিতু চোখে আরিশের দিকে তাকাল। আরিশের ওষ্ঠদ্বয়ের কোণে ফুটে ওঠে বাঁকা হাসি। প্রবীর সাইড থেকে স্মিথ হেসে বলল,
” কিছু না বলে ম’রে যাওয়ার চেয়ে কিছু বলে বেঁচে যাওয়া বেটার মি.রুদ্র! কি বলেন? আর শুনেছি আপনার ছেলে ও বউ শহর থেকে গ্রামে গেছে আপনার মা অসুস্থ বলে। এখন একটু ভেবে দেখুন তো রুদ্র। আপনার অসুস্থ মা যদি শুনতে পায় আপনি আর নেই তখন তার কি অবস্থা হবে?”

কথার মাঝে ফোঁড়ন কাটে আরিশ। তার হাতের পি’স্ত’ল টা সেন্টার টেবিলের ওপরে রাখল। চোখের ইশারায় রুদ্র কে পিস্ত’লের দিকে তাকাতে ইশারা করে। সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসে এক হাত দিয়ে খানিকটা কপাল চুলকে আরিশ বলল,

” আমাদের যদি একান্তই কিছু বলতে না যাস তাহলে সামনেই পি’স্তল রাখা আছে। পি’স্তল ওঠা আর নিজে নিজেকে শু’ট করে দে। কিস্সা খতম।”
রুদ্র কাঁপা কাঁপা হাতে পি’স্তল হাতে নিলো। উপস্থিত সকলের দিকে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে থেকে পি’স্তল নিজের কপালের ডানপাশে পয়েন্ট করে। ভ্রুযুগল কুঁচকানো করে রুদ্রর মতিভ্রম বুঝবার চেষ্টা করছে আরিশ। মিনিট পরেই নিজের ওপর থেকে পি’স্তল সরিয়ে আরিশের ওপর তাক করল। হতবিহ্বল হয়ে পরল তাজ ও প্রবীর। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আরিশের কপাল বরাবর শু’ট করে দেয় রুদ্র।

প্রবীর রাগে রুদ্রর দিকে এগিয়ে আসে। রুদ্রর চুলের মুঠি শক্ত করে টেনে ধরে দাঁত চেপে চেপে বলল, “তোর এত বড় সাহস তুই এ.স কে শু’ট করার জন্য পি’স্ত’ল তাক করিস। এবার দেখ আমরা তোর কি করি।”
প্রবীরের একটা কথায় ওদের কয়েকজন গার্ড এসে রুদ্র কে ফ্লোরে ফেলে ধোলাই দিলো। ফ্লোরে হামাগুড়ি দিয়ে আরিশের পায়ের কাছাকাছি আসে রুদ্র। আরিশের পা ধরে আকুতি মিনতি করছে।

আরিশ মলিন হাসল শানিতকণ্ঠে বলল,” সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুলটা একটা বাঁকাতে হয় মি. রুদ্র। এতক্ষণ ভাবছিলাম তোকে একা মারবো। কিন্তু আমি এখন আমার প্লানিংয়ে কিছুটা চেঞ্জ আনছি। আর সেটা হচ্ছে, তোকে মেরে আধমরা করে ফেলে রাখবো। তারপর তোর গ্রাম থেকে তোর মা, বউ ও সন্তান কে তুলে এনে তোর সামনে তিলেতিলে মা’রবো।

তাদের মরতে দেখে তুই ছটফট করবি সেটা দেখে যে আনন্দ টা পাবো ওইটা তোর এমনি মরাতে পাবো না। ওয়াসিফ আর দেরি না করে, রুদ্রর পরিবারকে গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে আসার ব্যবস্থা কর।” শেষের কথাটি কর্কশকণ্ঠে ওয়াসিফের উদ্দেশ্য বলল, আরিশ। তার কথাশুনে স্তব্ধ হয়ে যায় রুদ্র। আরিশ শাহর সম্পর্কে কোনো কিছুই অজ্ঞাত নেই তার। সে জানে এ.স কতটা সাংঘাতিক। রুদ্র আহত অবস্থায় আহত কণ্ঠে আরিশকে অনুরোধ করে বলল,” আপনারা যা বলবেন আমি তাই করবো শুধু আমার পরিবারের কোনো ক্ষতি করবেন না।”

ফ্লোরের ওপরে পা দিয়ে অদ্ভুত খটখট আওয়াজ করল আরিশ। শক্ত ও গম্ভীর গলায় বলল,” ফাইল!”
রুদ্র কিছুক্ষণের মধ্যে ফাইল দু’টো এনে আরিশের হাতে তুলে দেয়। ফাইল দু’টো তে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকা করে হাসল এ.স। ফাইল দু’টো নিয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়াল। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো সকলে। তাদের যেতে দেখে, ভারী নিঃশ্বাস ফেলে সোফায় হেলান দিয়ে বসে রুদ্র।

এমন ভাবে ‘মারছে যে জাগা জাগা থেকে র’ক্ত বের হচ্ছে। চোখ জোড়া বন্ধ করে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। আস্তে করে চোখ জোড়া মেলতে রুদ্র দেখল, চোখের সামনে একজন মাস্ক পরা লোক রুদ্রর দিকে কিছু টা ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র ওঠতে যাবে তার আগে লোকটা তার হাতের পিস্তলটা রুদ্রর বুকের বা পাশে রেখে পরপর দুই-তিন টা শুট করল।

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৫

মূহুর্তে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলো রুদ্র। রুদ্র নিশাচরের মতো চোখ দু’টি দিয়ে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে। মাত্রাতিরিক্ত রাগে সামনে টেবিলের ওপরে সজোড়ে লা’ণ্থি মা’রল সে। চেঁচিয়ে বলল, “এইবার নয়। বারবার তুই জিততে পারিস না”

বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব ১৭