বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১৭+১৮

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১৭+১৮
সাদিয়া জাহান উম্মি

মাথার উপরে সূর্য জ্বলজ্বল করছে। আর সেই সূর্যের তাপে পুরো পৃথিবী যেন ঝলসে যাওয়ার মতো অবস্থা।প্রচন্ড গরমে মানুষজনের জন্যে শ্বাস টেনে নিতেও কষ্ট হচ্ছে।আরাবী আর নূর ভার্সিটি মাঠ দিয়ে হাটছে।উদ্দেশ্য তাদের ভার্সিটির সাথে একটা রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে গিয়ে কিছু খাওয়া।আরাবী গরমে মাথায় হাত দিলো।মাথাটা কেমন যেন ঘুরাচ্ছে।সকালে ঠিকঠাক না খাওয়ায় শরীরটাও বেশ দূর্বল লাগছে।পুরো শরীর ঘেমেনেয়ে একাকার অবস্থা।ফর্সা মুখশ্রী রোদের তাপে টকটকে লাল হয়ে আছে।নূরেরও একই অবস্থা।ভার্সিটি গেটের কাছে আসতেই নূর বললো,

-‘ আরে ইয়ার এই গাড়ি চলাচলগুলো একটু কম হতে পারে না? এখন এই রাস্তা পার হতে আধাঘন্টা লাগবে।আমার গরমে জীবনটা তেজপাতা হয়ে যাচ্ছে।’
আরাবী ওড়না দ্বারা কপালে ঘামটুকু মুছে দিয়ে বলে,
-‘ ঠিক বলেছো।শহরে এই একটা সমস্যা। অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করে রাস্তাঘাটে।আর উশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চালায় তার কারনে আরো বেশি জ্যাম লাগে রাস্তায়।কিন্তু ভোগান্তিতে পরতে হয় সাধারন মানুষদের। গলাটা শুকিয়ে কাট হয়ে গিয়েছে।ব্যাগে যে পানি আছে তাও গরম হয়ে আছে।উফ!’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-‘ তোমরা চাইলে আমি রাস্তা পার করে দিতে পারি। এমন দুজন সুন্দরী রাস্তায় দাঁড়িয়ে এইভাবে কষ্ট করবে তা তো আমি মানতে পারছি না।’
হঠাৎ কারো এমন কথায় চমকে উঠে আরাবী আর নূর।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখে আদি দাঁড়িয়ে আছে।আর ওর ঠোঁটে বিশ্রী হাসি।আরাবী সাথে সাথে পিছিয়ে গিয়ে নূরের পিছনে চলে যায়।এই লোকটাকে ভীষনভাবে ভয় পায় আরাবী।লোকটার চাহনী একদম বাজে।কি বিশ্রীভাবে তাকায়।এদিকে আদি এগিয়ে এলো নূর আর আরাবীর দিকে।নূর সাথে সাথে রাগে কিরমিরিয়ে বলে,

-‘ ভাইয়ের হাতের মার কম হয়ে গিয়েছিলো বুঝি?আবার চলে এসেছিস এখানে?কি চাই তোর?এখান থেকে যা।তোর এই বিশ্রী চেহারা দেখার চেয়ে রাস্তার কুকুরের চেহারা দেখা ভালো।’
আদি নূরের কথা শুনে দাঁতেদাঁত চিপে বলে,
-‘ এতো বেশি তেজ ভালো না।তেজ ভেঙ্গে কিভাবে গুড়িয়ে দিতে হয় সেটাও আমি খুব ভালোভাবে জানি।’
নূর হাতদুটো আড়াআড়িভাবে ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বললো,
-‘ আচ্ছা।তাই নাকি?তুই ভাঙ্গবি আমার তেজ?ভাইয়াকে ফোন দিবো আমি?তখন দেখবো কে কার তেজ ভাঙ্গে।’
আদি নূরের পিছনে দাঁড়ানো আরাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,

-‘ দেখ নূর। তোর সাথে আমার কোন কথা নেই।তুই মাঝ থেকে সর।আমার কাজ তো তোর পিছনে দাঁড়ানো সুন্দরীকে দিয়ে।ওকে আমার পছন্দ হয়েছে।তাই আমি ওর সাথে কথা বলবো।তাই তুই এই ফালতু কথা দিয়ে আমার সময় নষ্ট করিস না।’
নূর বাঁকা হেসে আদির দিকে তাকালো।কারন একটু আগে নূর খুব সাবধানে জায়ানকে ফোন দিয়ে দিয়েছে।এখন যা হবার তা একটু পরই দেখা যাবে। আদি নূরের পিছনে দাঁড়ানো আরাবীর কাছে গিয়ে দাড়ালো। আরাবী সাথে সাথে দু কদম পিছনে চলে গেলো।আদি শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,

-‘ আরে?ভয় পাচ্ছো কেন তুমি?তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে।তাই তোমার সাথে আমি রিলেশন করতে চাই।আর তোমার মতো মেয়েকে পছন্দ না হয়ে কি পারা যায় বলো?আমিও পারিনি।তুমি যেই হট এন্ড সে*ক্সি।’
আরাবী এতোক্ষন সব মুখ বুজে সহ্য করছিলো।কারন এটা জায়ানের খালাতো ভাই।তাই তাকে কিছু উল্টাপাল্টা বলা যাবে না। কিন্তু এইবার আর সহ্য করতে পারলো না আরাবী।আদির লাস্ট বলা বিশ্রি কথাগুলো শুনে রাগগুলো যেন তরতর করে বেরে গেলো আরাবীর।

শরীরের সকল শক্তি ব্যয় করে কষিয়ে চ*ড় মারলো আদিকে।নূর মুখে হাত দিয়ে নিয়েছে সাথে সাথে।ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরাবীর দিকে।আরাবী যে আদিকে এইভাবে চ*ড় মেরে দিবে ভাবেনি নূর।যেখানে ও নিজেই এতোদিনেও আদিকে কথা শোনানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি।আর আরাবীর মতো এমন শান্তশিষ্ট মেয়ে কিনা আদিকে চড় মেরে দিলো।এদিকে আদি গালে হাত দিয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো আরাবীর দিকে।আদি ভাবতেও পারেনি।এই ভীতু মেয়েটা ওকে চ*ড় মারবে। আরাবী আঙ্গুল উঠিয়ে দাঁতেদাঁত চিপে বলে উঠলো,

-‘ আমি মেয়ে মানলাম।মেয়েদের নরম,ভদ্র,নম্র স্বভাবের হতে হয় এটা সবাই বলে।আমার মা নিজেও আমাকে এইসব বলেছেন।আর আমি ঠিক তেমনটাই।কিন্তু যে আমার সাথে ভালো ব্যবহার করে তার জন্যে আমি নরম মনের,ভদ্র,নম্র স্বভাবের। আর যারা আপনার মতো ব্যবহার করে তাদের জন্যে আমি রণচন্ডী হতে দুবার ভাব্বো না।কারন সবার আগে আমার ইজ্জত।আর যেটার দিগে আপনি আমার কুদৃষ্টি দিয়েছেন।ফারদার যেন আপনাকে আমার আশেপাশে না দেখি।তাহলে ভালো হবে না।এখন একটা চ*ড় মেরেছি।পরবর্তী জুতোর বাড়ি খাবেন। চলে যান এখান থেকে।’

আদিকে লাল চোখজোড়া নিয়ে আরাবীর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চলে গেলো সেখান থেকে।আদি যেতেই নূর দ্রুত পায়ে আরাবীর কাছে এলো।প্রায় একপ্রকার চেঁচিয়েই বলে উঠে,
-‘ ও মাই গোড আরাবী।আমি তো বিলিভ করতে পারছি নাএটা তুমি।সত্যি করে বলো তো তুমি আমাদের আরাবী তো?’
আরাবী চারদিকে তাকালো।প্রায় অনেকে তাকিয়ে আছে আরাবীর দিকে।আরাবী অসস্থিতে মাথা নিচু করে ধীর কন্ঠে বললো,
-‘ নূর,বাড়িতে গিয়ে কথা বলি?এখানে সবাই তাকিয়ে আছে।’

নূর নিজেও চারদিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বুঝতে পারলো।তাই আরাবীর কথায় সম্মতি জানিয়ে চলে যেতে নিবে।ঠিক তখন একটা গাড়ি এসে ব্রেক করে ওদের সামনে।আরাবী ভয়ে চোখমুখ খিচে ফেলে।তারপর আস্তে করে চোখ মেলে সামনে তাকায় দেখার জন্যে যে কে এলো।এদিকে ঝটপট গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে আরাবী আর নূরের দিকে এগিয়ে আসলো জায়ান আর ইফতি।
ইফতি অস্থির কন্ঠে বললো,

-‘ ঠিক আছিস তোরা?’
নূর জবাবে বলে,
-‘ হ্যা ঠিক আছি চিন্তা করো না ভাইয়া।’
এদিকে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে থাকা আরাবীর দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জায়ান। গরমে ঘেমেনেয়ে লাল মুখশ্রীতে আরাবী যেন অত্যন্ত মায়াবী দেখাচ্ছে।জায়ান শীতল কন্ঠে বলে উঠলো,
-‘ ঠিক আছো তুমি?ওই আদি তোমাকে কিছু করেনি তো?’

আরাবী নেত্রপল্লব বার দুয়েক ঝাপ্টিয়ে।আস্তে করে তাকায় আরাবী জায়ানের দিকে।সাথে সাথে জায়ানের লাল হয়ে যাওয়া চোখজোড়া দৃষ্টির আড়াল হলো না আরাবী’র।ওই চোখে দেখতে পেয়েছে আরাবী এক আকাশসম ব্যাকুলতা,অস্থিরতা।অথচ দেখো লোকটাকে বাহির থেকে দেখতে একদম শান্ত দেখাচ্ছে।আরাবী মিনমিন করে বলে,
-‘ ঠিক আছি আমি। ওই লোকটা কিছু করেনি!’
জায়ান সাথে সাথে তপ্ত শ্বাস ফেললো।তারপর বলে,

-‘ চলো গাড়িতে উঠো। এইভাবে রোদের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা লাগবে না।’
নূর, ইফতি গাড়িতে উঠে বসে পরে।জায়ান এখনো দাঁড়িয়ে। মূলত আরাবী গাড়িতে উঠবে তারজন্যে অপেক্ষা করছে।আরাবী ছোট্ট ছোট্ট কদমে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ রাস্তার ছোট্ট ইটের সাথে পা লেগে পরে যেতে নিতেই।জায়ান সাথে সাথে আরাবীর বাহু আকড়ে ধরে আরাবীকে সামলে নেয়।আরাবী এখনো ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।ভয়ে বুকটা ধুকপুক করছে।জায়ান হেচঁকা টানে আরাবীকে ওর মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয়।সাথে সাথে চট করে চোখ মেলে তাকায় আরাবী।আরাবী তাকাতেই জায়ান ভ্রু উচিঁয়ে বললো,

-‘নিজেই সামলাতে পারো না।বিয়ের পর আমাকে সামলাবে কিভাবে?’
তারপর আরাবীর অনেকটা কাছে গিয়ে আরাবীর কানে কানে বললো,
-‘ এই আমিটা না বড্ড পাগলাটে বুঝেছো?আমাকে সামলে রেখো।নাহলে বিয়ের পর তোমার অবস্থা কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।’
আরাবীর হৃদয়ের থমকে গিয়েছে জায়ানের এতোটা কাছে আসায়।আরাবী শ্বাস নিচ্ছে না দেখে জায়ান বাঁকা হেসে বললো,
-‘ ব্রিথ!’

আরাবী দ্রুত বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো।জায়ান চোখের ইশারায় গাড়িতে উঠতে বলতেই আরাবী এইবার সাবধানে গাড়িতে উঠে বসলো।কিছুক্ষন বাদে জায়ান এসে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।এদিকে এতোক্ষন যেন কথা বলার জন্যে নূরের পেট ফেটে যাচ্ছিলো।কতোক্ষনে সে ভাইদের বলবে একটু আগে কি হয়েছে।তাই জায়ান আসতেই নূর অনেকটা উচ্ছাসিত কন্ঠে বলে উঠে,

-‘ জানো ভাইয়া আজ কি হয়েছে?আরাবী কি করেছে শুনলে তোমরা দুজনেই বিশাল ঝাটকা খাবে ভাইয়া।’
আরাবী চোখ বড় বড় করে তাকালো নূরের দিকে।নূর কিসের কথা বলছে তা ভালোভাবেই জানে আরাবী।সর্বনাষ মেয়েটা পাগল নাকি।এখানে জায়ান আছে।আর জায়ানকে এইসব বললে জায়ান ওর সম্পর্কে ভুল বুঝবে।এইভাবে জায়ানের কাজিনকে আরাবী চ*ড় মেরে দিলো।আরাবী জলদি নূরের হাত চেপে ধরলো।মিনমিনে কন্ঠে অনুরোধ করে বলে,
-‘ প্লিজ নূর না এমন করো না।আমার কথাটা তো…..!’

আরাবীর কথা সম্পূর্ণ না করতে দিয়ে তার আগেই নূর ওর ফোনে একটা ভিডিও অন করে ইফতির কাছে দিয়ে দিলো।আরাবীকে তখন এমন রেগে যেতে দেখে তৎক্ষনাৎ ভিডিও করে নিয়েছিলো নূর।চ*ড় মেরেছে সেটা ভিডিও করতে পারেনি।তবে আরাবীর কথাগুলো খুব সুন্দরভাবে ভিডিও করেছে।আরাবী কি করবে ভেবে পেলো না।মেয়েটা এতো বিচ্ছু।এতো করে না করলো তাও ওর কথা রাখলো না।আবার সেগুলো ভিডিও করে নিয়েছে ফোনে।ইফতি ভিডিওটা গাড়ির সামনে রাখলো যাতে জায়ানও দেখতে পারে।ভিডিওটা শেষ হতেই জায়ান সাথে সাথে গাড়িতে ব্রেক কষে।তারপর আরাবীর দিকে ঘুরে রাগি কন্ঠে বললো,

– ‘ওয়াট দ্যা হেল? এটা কি করলে তুমি?’
আরাবী জায়ানের এমন রাগি কন্ঠে প্রায় সিট থেকে পরে যাওয়ার উপক্রম।ভয়ে কলিজার পাকি শুকিয়ে গেলো।ভয়ে তটস্থ হয়ে কি বলবে ভেবে পেলো না আরাবী।সে জানতো জায়ান রেগে যাবে।তাই নূরকে থামাতে চেয়েছিলো।কিন্তু মেয়েটা শুনলো না ওর কথা।জায়ান নিশ্চয় ভাবছে আরাবী অনেক খারাপ একটা মেয়ে।খারাপ লাগায় চোখজোড়া জলে ভরে উঠলো আরাবীর।সাথে সাথে জায়ান ধমকে বলে,

-‘ একদম কাঁদবে না।চড়িয়ে তোমার গাল লাল করে দিবো।’
নূর ভাইয়ের এমন রাগ দেখে অবাক।নূর বিশ্বাস করতে পারছে না।ওর ভাই আদিকে মারার জন্যে আরাবীকে ধমকাচ্ছে।এটা কি আদৌ বিশ্বাস করা যায়? জায়ান তো উলটো আরো ওকে আদিকে মারার জন্যে শিখিয়ে দিয়েছিলো তাহলে আজ এমন করছে কেন?নূর ভয়ে ভয়ে বললো,

-‘ কি হয়েছে ভাইয়া?তুমি এমন করছো কেন?তুমিই তো একদিন আমায় শিখিয়ে দিয়েছিলে আদি আমার সাথে বাজে বিহেব করলে আদিকে যেন আমি ইচ্ছেমতো জুতো পেটা করে দেই।তাহলে আজ কেন আরাবীর সাথে এমন করছো?আরাবী তো ভুল কিছু করেনি ভাইয়া।’
জায়ান নূরের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,
-‘ তুই তো কোন কথাই বলিস না।কাজের কাজ তো একটাও করতে পারিস না তুই।’
নূর জায়ানের ধমক খেয়ে দমে গেলো।জায়ান এইবার কান্নারত আরাবীকে দেখে নিলো আবারও।চোখ বন্ধ করে রাগটা সামলানোর চেষ্টা করে। তারপর দাঁতেদাঁত চিপে বললো,

-‘ মাত্র একটা থাপ্পড় মারলে কেন?তোমার হাতে শক্তি নেই?এই মেয়ে একদম কাঁদবে না।কাঁদলে ব্রিজ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো।ওই কু**বা**টাকে পায়ের জুতো খুলে দুগালে গুনে গুনে একশোটা বারি মারলে তাহলে না বুঝা যেতো তুমি জায়ান সাখাওয়াতের হবু স্ত্রী।তা না একটা চড় মেরে এসেছেন উনি।জাস্ট রিডিউকিলাস।চোখ মুছো জলদি।’
জায়ান সোজা হয়ে বসে স্টেরিংয়ে জোড়ে বারি মেরে। রাগে ফুসতে ফুসতে গাড়ি স্টার্ট দিলো।এদিকে আরাবী বিষ্ময়ে কি রিয়েক্ট করবে ভুলে গিয়েছে ও।ও আরো ভাবছিলো লোকটা বোধহয় আদিকে চড় মেরেছে এইজন্যে রেগে গিয়েছে।এখন দেখি হলো উলটো।ওকে কিনা বলে জুতা দিয়ে একশোটা বারি মারতে।মানে কি মারাত্মক পরিকল্পনা চলে এই লোকের মাথায়।নূর আর ইফতি ঠোঁট টিপে হাসছে।ওরা জানতো তার ভাই কখনো আদিকে মারার জন্যে রাগ করবে না।নূর আরাবীকে এইভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,,

-‘ মুখ বন্ধ করো।নয়তো মশা ঢুকবে।’
নূরের কথা শ্রবণ হতেই সাথে সাথে আরাবী স্বাভাবিক হয়ে মাথা নিচু করে নিলো।ভীষন লজ্জা লাগছে।লোকটার এটুকু কথায় কিনা ও ভয়ে কেঁদে দিলো এইভাবে সবার সামনে।লোকটা নিশ্চয়ই ভাবছে আরাবী একটা ছিঁচকাদুনে মেয়ে।
এদিকে নূর আর ইফতি হাসি থামাতে না পেরে হো হো করে হেসে দিলো।জায়ান এতে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকালেও ওরা হাসি থামায় না।ইফতি হাসতে হাসতে ঘাড় ঘুরিয়ে আরাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,

-‘ তুই যে রেগেও যেতে পারিস তা আমি আজ প্রথম জানলাম।’
আরাবী মুখ কাচুমাচু করে ফেললো।নূর হেসে দিলো ইফতির কথায়।বললো,
-‘ আমি মনে হয় জীবনেও এসব পারবো না।’
ইফতি বাঁকা চোখের নূরের দিকে তাকিয়ে বলেনল উঠে,
-‘ তুই এমনিতেও ভীতুর ডিম একটা।মুখেই যতো ছটফট কাজের বেলা ঢেড়স।’
নূর রেগেমেগে ইফতির হাতে খামছি দিয়ে দিলো।ইফতি প্যাথা পেয়ে হালকা আর্তনাদ করে বলে,

-‘ উফ! রাক্ষসী।হ্যা ওই পারিস আমার সাথে।কাজের বেলায় এটা করতে পারিস না?’
নূর ভেংচি কেটে দিলো ইফতিকে।এদিকে আরাবী লজ্জায় জুবুথুবু হয়ে আছে।শরমে মাথা কাটা যাচ্ছে ওর।ইস লোকটা এমন ভয়ানক কেন?

বাড়ির ভীতরে গাড়ি প্রবেশ করতেই। গাড়ি থামায় জায়ান।ইফতি আর নূর নেমে আসে গাড়ি থেকে।আরাবী চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে ছিলো।ক্লান্তিতে কখন চোখ লেগে এসেছিলো জানে না আরাবী।হঠাৎ কারো ডাকে আধো আধোভাবে চোখ মেলে তাকায় আরাবী।তাকাতেই দেখে জায়ান ওকে ডাকছে।জায়ানের মুখটা অনেকটাই ওর কাছে।আরাবী লাফ দিয়ে সোজা হয়ে বসতে নিতেই জায়ান আরাবী মাথাটা দুহাতে ভালোভাবে আকড়ে ধরে।আর একটু হলেই গাড়ির শক্ত গায়ে মাথাটায় আঘাত লাগতো।জায়ান দ্রুত বলে,

-‘ আর ইউ ওকে?’
আরাবী হ্যা বোধক মাথা নাড়ায়।জায়ান হালকা রাগি গলায় বলে,
-‘ এমন করার কি হলো?মনে হলো কোন ভুত দেখেছো?কেয়ারলেস মেয়ে একটা।’
জায়ান রেগে সরে গেলো।আরাবী মুখ ফুলিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো।এইভাবে বলার কি আছে?কাচা ঘুম ভাঙ্গা অবস্থায় এইভাবে মুখের সামনে কাউকে দেখলে ভয় পাবারই কথা।আর সেটা যদি জায়ান নিজে হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই।আরাবী বোধহয় এই একটা লোকের সামনেই চোখ তুলে তাকাতে পারেনা।গলা উচিয়ে কথা বলতে পারে না।আরাবী বাড়ির দিকে যেতে নিবে।তার আগেই জায়ানের গম্ভীর কন্ঠস্বর,

-‘ দাড়াও!’
আরাবী তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে গেলো।জায়ানের দিকে ঘুরে তাকাতেই জায়ান বললো,
-‘ তোমাকে যেন আর কখনো বাড়ি থেকে না খেয়ে কোথায় যেতে না দেখি।ফলাফল ভালো হবে না।যাও এবার।’
আরাবী জায়ানের সব কথা শুনলো।অজান্তেই ওর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।লোকটা বকা দেওয়ার মাঝেও কিভাবে ওর যত্ন নেওয়ার কথা বলে দিলো।আরাবী ভেবে পাচ্ছে না।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১৬

মাত্র একটা দিনের তফাতে কিভাবে জায়ান এতোটা বদলে যেতে পারে না।না আরাবী আর ভাবলো না।যা হবার তা হবেই।তা পরে দেখা যাবে।আরাবী হাসি মুখে ইফতির সাথে বাড়িতে প্রবেশ করতে নিলো।কিন্তু ওর হাসিটা দীর্ঘস্থায়ী হলো না।তার আগেই শুনতে পেলো সাথির কর্কশ রাগি গলার আওয়াজ,
-‘ দাড়াও মেয়ে।তোমার সাহস কি করে হলো?আমার বোনপোকে মারার?এতো সাহস কোথা থেকে আসলো তোমার?’

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১৯