বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১৯

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১৯
সাদিয়া জাহান উম্মি

‘ দাড়াও মেয়ে।তোমার সাহস কি করে হলো?আমার বোনপো’কে মারার?এতো সাহস কোথা থেকে আসলো তোমার?’
সকলে যেন সাথির এমন রাগি কন্ঠের আওয়াজে প্রায় ধমকে গিয়েছে।আরাবী ঠোঁট কামড়ে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে।সাথির এমন প্রশ্নে কি উত্তর দিবে ভেবে পেলো না।গলাটা শুকিয়ে কাট হয়ে যাচ্ছে।চিন্তায়, অস্থিরতায় দেহের ক্লান্তিগুলো যেন বেড়ে দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে।এই করা রোদের তাপে যেন দাঁড়িয়ে থাকা কষ্ট হয়ে দাড়িয়েছে আরাবীর কাছে।হাত,পা গুলো কাঁপছে ভীষনভাবে।ঝাপ্সা হয়ে আসছে চোখের দৃষ্টি। সাথি’র তেজশ্রী কন্ঠস্বর আবারও শোনা গেলো,

-‘ কি হলো?জবাব দিচ্ছো না কেন? আদিকে কেন মেরেছো তুমি?’
নূর আরাবীকে এইভাবে হেনস্তা হতে দেখতে পারছে না কোনক্রমেই।তাই এগিয়ে এসে কন্ঠে খানিক জোড় এনে বলে,
-‘ মা তুমি পুরো ঘটনা জানতে পারলে কখনো এমন করবে না।প্লিজ আমার কথাটা…..!’
নূরের কথা অসমাপ্তই রয়ে গেলো।তার আগেই সাথির বাজখাই গলায় ধমকে উঠলেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-‘ তুই চুপ থাক বেয়াদপ মেয়ে।এই মেয়েটার সাথে থেকে থেকে চরম অসভ্য হচ্ছিস তুই।চড়িয়ে তোর দাঁত ফেলে দিবো।’
নূর কাঁদো কাঁদো হয়ে জায়ানের দিকে তাকালো।তার মাকে এখন জায়ান ছাড়া কেউ সামলাতে পারবে না।কিন্তু ওর ভাইটা কিছুই বলছে না।জায়ান একেবারে শান্ত দৃষ্টিতে আরাবীর দিকে তাকিয়ে আছে।নূর রাগে দুঃখে তৎক্ষনাৎ সেই স্থান ত্যাগ করলো।ইফতি আরাবীকে নিয়ে এমন সব কথা সহ্য করতে পারছে না।তাই খানিকটা রুক্ষ কন্ঠেই বলে,
-‘ বড় মা তুমি এইভাবে একতরফা কথা শুনে বিচার করতে পারো না।আদি যে কেমন ছেলে সেটা আমার থেকে তুমি ভালো জানো।তাও কেন আরাবীর সাথে এমন বিহেইভ করছো?ভুলে যেও না আরাবী এখন আমার বোন।’
সাথি রাগি চোখে তাকালেন ইফতির দিকে।বললেন,

-‘ হ্যা,রাস্তার মেয়েদের তুলে এনে বোনের পরিচয় দিলেই হয়না।রক্ত’র ধাঁচ থেকেই যায়।’
জায়ান আরাবীকে এতোক্ষন শুধু দেখছিলো।কিন্তু আরাবীর কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসে জায়ানের।আরাবীকে ধমক দিয়ে বলে,
-‘ এই মেয়ে?তুমি কি বোবা?কথা বলতে জানো না?তখন তো বেশ চপরচপর করছিলে যে তোমার সাথে যে বাজে বিহেইভ করে তার কাছে তুমি রণচন্ডী তাহলে এখন কিসের জন্যে চুপ করে আছো?’
আরাবীর চোখ থেকে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে।ফোপাতে ফোপাতে বলে,

-‘ তি..তিনি আপ..আপনার মা।’
জায়ান হুংকার ছুরে বলে,
-‘ তো?আমার মা তো কি?যে অন্যায় করে তার শাস্তি হবেই।এখন সে যেই হোক না কেন?’
এদিকে এতোক্ষন ছেলের সব কথা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন সাথি।ছেলের এহেন ব্যাবহারে তার যেন আকাশ থেকে ভূপৃষ্ঠে আছাড় খেয়ে পরার মতো অবস্থা হয়েছে।তার ছেলে যে তার সাথে এমন করবে কাশ্মিনকালেও ভাবিনি সাথি।বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।

এদিকে আরাবী কান্না থামানোর চেষ্টা করতেও পারছে না।এইভাবে তাকে সবার সামনে অপমান হতে হবে কখনো ভাবিনি আরাবী।ছোট থেকেই নরম মনের আরাবী।কেউ একটু কটু কথা বললেই সাথে সাথে কান্না চলে আসে আরাবীর।আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না।শ্বাস নিতে আরাবীর ভীষন কষ্ট হচ্ছে।একেতো পানির তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে, রোদের তাপে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা।মাথাটা উত্তপ্ত হয়ে আছে ভীষনভাবে।আবার সকাল থেকে না খাওয়া।পেটে একফোটা পানিও পড়েনি এখন অব্দি।আবার একে একে এইসব ঘটনা।

সব কিছু একেবারে আরাবীর ছোট্ট মস্তিষ্ক আর সহ্য করতে পারলো না।মাথাটা ঘুরে উঠলো ভীষনভাবে।ঝাপ্সা দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা ধরে যে নিজেকে সামলাবে তাও আর হলো না।নেত্রজোড়া বুজে নিয়ে তৎক্ষনাৎ দেহের ভর ছেড়ে দিলো আরাবী।জায়ান চমকে উঠে দ্রুত আরাবীকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলে।মেয়েটার মলিন মুখশ্রীটা চক্ষুশূল হতেই বুকের কোথাও একটা অসহনীয় ব্যাথা অনুভব করলো ভীষনভাবে। আরাবীকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে দেখে ইফতি ভয়ার্ত গলায় বলে,

-‘ আরাবী?কি হয়েছে তোর? আরাবী চোখ খুল!’
জায়ান শান্ত কন্ঠে বলে,
-‘ হাইপার হয়ে লাভ নেই ইফতি।ও জাস্ট জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।মেইবি প্রেসার ফল করেছে।টেন্সন করিস না।’
জায়ান দ্রুত আরাবীকে পাজাকোলে তুলে নেয়।আরাবী ভারসাম্যহীন দেহটা তুলোর মতো নরম।জায়ানের শক্তপোক্ত বাহুতে যেন আরাবীর নরম দেহখানা একেবারে ঢুকে যাবার উপক্রম।আরাবীর মাথাটা জায়ানের বুকে এসে ঠেকতেই চোখ বুজে নেয় জায়ান।হৃদয়টা যেন শীতলতায় ছেয়ে গিয়েছে।আরাবীকে আরেকটু ভালোভাবে নিজের সাথে আকড়ে ধরে জায়ান।তারপর এমন দৃষ্টিতে তাকালো সাথির দিকে।সাথি দুপা পিছিয়ে গেলো। তার ছেলের এমন দৃষ্টি আজ প্রথম দেখতে পেলেন সাথি।জায়ান শীতল কন্ঠে আওড়ালো,

-‘ ইউ আর নট মাই মাদার।কারন আমার মা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়না।আর যে অন্যায়ের সাপোর্ট করে এইভাবে নির্দোষ একজনের সাথে বাজে ব্যবহার করে সে আমার মা হতে পারে না!’
জায়ান কথাগুলো শুনে গটগট পা গেলে ইফতিদের বাড়ির ভীতরে চলে গেলো।এদিকে সাথি বুকে হাত চেপে দাঁড়িয়ে আছেন।হৃদযন্ত্রটা এতো ব্যাথা করছে কেন?অসহনীয় পীড়া হচ্ছে সেখানে।সাথির চোখ দিয়ে টপটপ করে কান্নাগুলো ঝড়তে লাগলো।কেমন নিস্তদ্ধ ভঙিতে হেটে বাড়ির ভীতরে চলে গেলেন।

জায়ান আরাবী নিয়ে বাড়ির ভীতরে প্রবেশ করতেই মিলির কান্নারত মুখশ্রী দেখতে পায় জায়ান।এতোক্ষন তিনি আড়ালে দাড়িয়ে সবটাই দেখেছেন।তবে সামনে যায়নি।কারন তিনি সাথিকে প্রচন্ড সম্মান করেন।তাকে বড় বোনের মর্যাদা দিয়েছেন।তার সাথে কিভাবে মুখে মুখে তর্ক করবেন?আর ওখানে গেলে আবার নিজেকে দমিয়েও রাখতে পারতেন না।ফলস্বরূপ আরাবীর জন্যে অনুশোচনা দগ্ধ হয়ে আড়ালে দাড়িয়েই কাদছিলেন তিনি।জায়ান চোখের ইশারায় কাঁদতে বারন করলো।তারপর আরাবীকে নিয়ে আরাবীর রুমের দিকে অগ্রসর হলো।

জায়ান আরাবীর রুমে এসে আরাবীকে বিছানায় সুইয়ে দিলো।মিলিকে বললো,
-‘ ছোট মা ও আপাততো ঘুমাক।জ্ঞান ফিরলে কিছু খাইয়ে দিও।না খাওয়ার কারনে প্রেসার লো হয়ে গিয়েছে। ‘
মিলি সম্মতি জানাতেই জায়ান আরো একবার আরাবীকে দেখে নিলো।তারপর বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে।আজ আর অফিসে যাওয়া হবে না।মাথার রগগুলো ব্যাথায় টনটন করছে।এখন একটু ঘুমিয়ে নিলে মন্দ হয়না।যদি একটু ব্যাথাটা কমে।

সন্ধ্যে নেমে আসছে।কিন্তু মনে হচ্ছে ঘন অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।আকাশে কালো মেঘেদের দলে দলে বিচড়ণ করতে দেখা যাচ্ছে।থেকে থেকে হালকা শব্দে বজ্রপাত হচ্ছে।জোড়ালো হাওয়া বইছে।সাথে সাথে শো শো শব্দে করে গাছপালাগুলো নড়েচড়ে উঠছে। আরাবী সুইমিংপুলের কাছটায় বসে আছে পানিতে পা ডুবিয়ে।জ্ঞান ফিরেছে এই ঘন্টা দুয়েক আগেই।ও উঠেই আগে গোসল দিয়েছে।শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছিলো।তারপর মিলি এসে খাবার খাইয়ে দিয়েছিলো। মন খারাপ থাকায় ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না।তাই মনে হলো বাগান থেকে ঘুরে আসার।এই একটা জায়গায় আরাবী অনেক শান্তি খুজে পায়।এইযে হাওয়া বইছে এতে আরাবীর শরীরসহ, মনটাও শীতল হয়ে আসছে।

আরাবী চোখ বুজে নিলো।সাথে সাথেব সকালের ঘটনাগুলো মাথ চারা দিয়ে উঠলো।আরাবীর চোখের কার্নিশ বেয়ে একফোটা তপ্ত জল গড়িয়ে পরলো।জীবনটা ওর এতো জটিলতায় ঘেরা কেন?যখনই মনে হয় এই বুঝি সুখ এসে ধরা দিলো ওর কাছে।কিন্তু তখনি তা ভুল প্রমানিত হয়ে ওর সব ভাবনা লন্ডভন্ড হয়ে যায়।আর সহ্য হয়ে না কিছু।মাঝে মাঝে ওর মন চায় দূরে কোথায় ছুটে চলে যেতে।অপমান,অপদস্থ হতে হতে আরাবী ক্লান্ত।এখন একটু বিশ্রাম চায় আরাবী।
আরাবী যখন নিজের ভাবনায় ব্যস্ত হঠাৎ ওর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কেউ বলে উঠলো,

-‘উষ্ণতা তোমাকে ঘিরে আছে এবং
সন্ধ্যার ঠান্ডা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে
আমি ভাবছি আমি কি তোমার রূপের আগুনে
নিজেকে উষ্ণ করতে পারবো?’

আচমকা ঠান্ডা শীতল কন্ঠের বাক্যগুলো কর্ণপাত হতেই কেঁপে উঠলো আরাবী।তৎক্ষনাৎ চোখ খুলে দাঁড়িয়ে যায় আরাবী। পিছনে ফিরে দেখে কেউ নেই।ভয় পেয়ে গেলো আরাবী?কেউ নেই তাহলে ওই কথাগুলো ওকে কে বললো?বাড়িতে তো এখন কোন ছেলে নেই সবাই তো অফিসে।তাহলে? কন্ঠস্বরটা অনেক পরিচিত লাগলো আরাবীর।তবুও খটকা লাগছে কেমন যেন।সন্ধ্যে হয়েছে অনেক আগেই।এখন রাত হয়ে আসছে।

ভুত টুত হবে নাহ তো?কলিজা কেঁপে উঠলো আরাবীর।বাগানে বসে আর একটু সময় কাটাবে সেই কথা বাদ দিয়ে একদৌড়ে বাড়ির ভীতর চলে গেলো।এদিকে আরাবীর এমন কান্ড দূর হতে দেখে জায়ান নিঃশব্দে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।বিরবির করে বললো,
-‘ তোমার চোখের একফোটা অশ্রুজলও যেন আমার হৃৎপিন্ডে অসহনীয় দহন সৃষ্টি করে আরাবী।’

‘ দাড়াও মেয়ে।তোমার সাহস কি করে হলো?আমার বোনপো’কে মারার?এতো সাহস কোথা থেকে আসলো তোমার?’
সকলে যেন সাথির এমন রাগি কন্ঠের আওয়াজে প্রায় ধমকে গিয়েছে।আরাবী ঠোঁট কামড়ে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে।সাথির এমন প্রশ্নে কি উত্তর দিবে ভেবে পেলো না।গলাটা শুকিয়ে কাট হয়ে যাচ্ছে।চিন্তায়, অস্থিরতায় দেহের ক্লান্তিগুলো যেন বেড়ে দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে।এই করা রোদের তাপে যেন দাঁড়িয়ে থাকা কষ্ট হয়ে দাড়িয়েছে আরাবীর কাছে।হাত,পা গুলো কাঁপছে ভীষনভাবে।ঝাপ্সা হয়ে আসছে চোখের দৃষ্টি। সাথি’র তেজশ্রী কন্ঠস্বর আবারও শোনা গেলো,

-‘ কি হলো?জবাব দিচ্ছো না কেন? আদিকে কেন মেরেছো তুমি?’
নূর আরাবীকে এইভাবে হেনস্তা হতে দেখতে পারছে না কোনক্রমেই।তাই এগিয়ে এসে কন্ঠে খানিক জোড় এনে বলে,
-‘ মা তুমি পুরো ঘটনা জানতে পারলে কখনো এমন করবে না।প্লিজ আমার কথাটা…..!’
নূরের কথা অসমাপ্তই রয়ে গেলো।তার আগেই সাথির বাজখাই গলায় ধমকে উঠলেন,

-‘ তুই চুপ থাক বেয়াদপ মেয়ে।এই মেয়েটার সাথে থেকে থেকে চরম অসভ্য হচ্ছিস তুই।চড়িয়ে তোর দাঁত ফেলে দিবো।’
নূর কাঁদো কাঁদো হয়ে জায়ানের দিকে তাকালো।তার মাকে এখন জায়ান ছাড়া কেউ সামলাতে পারবে না।কিন্তু ওর ভাইটা কিছুই বলছে না।জায়ান একেবারে শান্ত দৃষ্টিতে আরাবীর দিকে তাকিয়ে আছে।নূর রাগে দুঃখে তৎক্ষনাৎ সেই স্থান ত্যাগ করলো।ইফতি আরাবীকে নিয়ে এমন সব কথা সহ্য করতে পারছে না।তাই খানিকটা রুক্ষ কন্ঠেই বলে,
-‘ বড় মা তুমি এইভাবে একতরফা কথা শুনে বিচার করতে পারো না।আদি যে কেমন ছেলে সেটা আমার থেকে তুমি ভালো জানো।তাও কেন আরাবীর সাথে এমন বিহেইভ করছো?ভুলে যেও না আরাবী এখন আমার বোন।’
সাথি রাগি চোখে তাকালেন ইফতির দিকে।বললেন,

-‘ হ্যা,রাস্তার মেয়েদের তুলে এনে বোনের পরিচয় দিলেই হয়না।রক্ত’র ধাঁচ থেকেই যায়।’
জায়ান আরাবীকে এতোক্ষন শুধু দেখছিলো।কিন্তু আরাবীর কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসে জায়ানের।আরাবীকে ধমক দিয়ে বলে,
-‘ এই মেয়ে?তুমি কি বোবা?কথা বলতে জানো না?তখন তো বেশ চপরচপর করছিলে যে তোমার সাথে যে বাজে বিহেইভ করে তার কাছে তুমি রণচন্ডী তাহলে এখন কিসের জন্যে চুপ করে আছো?’
আরাবীর চোখ থেকে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে।ফোপাতে ফোপাতে বলে,

-‘ তি..তিনি আপ..আপনার মা।’
জায়ান হুংকার ছুরে বলে,
-‘ তো?আমার মা তো কি?যে অন্যায় করে তার শাস্তি হবেই।এখন সে যেই হোক না কেন?’
এদিকে এতোক্ষন ছেলের সব কথা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন সাথি।ছেলের এহেন ব্যাবহারে তার যেন আকাশ থেকে ভূপৃষ্ঠে আছাড় খেয়ে পরার মতো অবস্থা হয়েছে।তার ছেলে যে তার সাথে এমন করবে কাশ্মিনকালেও ভাবিনি সাথি।বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।

এদিকে আরাবী কান্না থামানোর চেষ্টা করতেও পারছে না।এইভাবে তাকে সবার সামনে অপমান হতে হবে কখনো ভাবিনি আরাবী।ছোট থেকেই নরম মনের আরাবী।কেউ একটু কটু কথা বললেই সাথে সাথে কান্না চলে আসে আরাবীর।আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না।শ্বাস নিতে আরাবীর ভীষন কষ্ট হচ্ছে।একেতো পানির তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে, রোদের তাপে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা।মাথাটা উত্তপ্ত হয়ে আছে ভীষনভাবে।আবার সকাল থেকে না খাওয়া।পেটে একফোটা পানিও পড়েনি এখন অব্দি।আবার একে একে এইসব ঘটনা।

সব কিছু একেবারে আরাবীর ছোট্ট মস্তিষ্ক আর সহ্য করতে পারলো না।মাথাটা ঘুরে উঠলো ভীষনভাবে।ঝাপ্সা দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা ধরে যে নিজেকে সামলাবে তাও আর হলো না।নেত্রজোড়া বুজে নিয়ে তৎক্ষনাৎ দেহের ভর ছেড়ে দিলো আরাবী।জায়ান চমকে উঠে দ্রুত আরাবীকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলে।মেয়েটার মলিন মুখশ্রীটা চক্ষুশূল হতেই বুকের কোথাও একটা অসহনীয় ব্যাথা অনুভব করলো ভীষনভাবে। আরাবীকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে দেখে ইফতি ভয়ার্ত গলায় বলে,

-‘ আরাবী?কি হয়েছে তোর? আরাবী চোখ খুল!’
জায়ান শান্ত কন্ঠে বলে,
-‘ হাইপার হয়ে লাভ নেই ইফতি।ও জাস্ট জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।মেইবি প্রেসার ফল করেছে।টেন্সন করিস না।’
জায়ান দ্রুত আরাবীকে পাজাকোলে তুলে নেয়।আরাবী ভারসাম্যহীন দেহটা তুলোর মতো নরম।জায়ানের শক্তপোক্ত বাহুতে যেন আরাবীর নরম দেহখানা একেবারে ঢুকে যাবার উপক্রম।আরাবীর মাথাটা জায়ানের বুকে এসে ঠেকতেই চোখ বুজে নেয় জায়ান।হৃদয়টা যেন শীতলতায় ছেয়ে গিয়েছে।আরাবীকে আরেকটু ভালোভাবে নিজের সাথে আকড়ে ধরে জায়ান।তারপর এমন দৃষ্টিতে তাকালো সাথির দিকে।সাথি দুপা পিছিয়ে গেলো। তার ছেলের এমন দৃষ্টি আজ প্রথম দেখতে পেলেন সাথি।জায়ান শীতল কন্ঠে আওড়ালো,

-‘ ইউ আর নট মাই মাদার।কারন আমার মা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়না।আর যে অন্যায়ের সাপোর্ট করে এইভাবে নির্দোষ একজনের সাথে বাজে ব্যবহার করে সে আমার মা হতে পারে না!’
জায়ান কথাগুলো শুনে গটগট পা গেলে ইফতিদের বাড়ির ভীতরে চলে গেলো।এদিকে সাথি বুকে হাত চেপে দাঁড়িয়ে আছেন।হৃদযন্ত্রটা এতো ব্যাথা করছে কেন?অসহনীয় পীড়া হচ্ছে সেখানে।সাথির চোখ দিয়ে টপটপ করে কান্নাগুলো ঝড়তে লাগলো।কেমন নিস্তদ্ধ ভঙিতে হেটে বাড়ির ভীতরে চলে গেলেন।

জায়ান আরাবী নিয়ে বাড়ির ভীতরে প্রবেশ করতেই মিলির কান্নারত মুখশ্রী দেখতে পায় জায়ান।এতোক্ষন তিনি আড়ালে দাড়িয়ে সবটাই দেখেছেন।তবে সামনে যায়নি।কারন তিনি সাথিকে প্রচন্ড সম্মান করেন।তাকে বড় বোনের মর্যাদা দিয়েছেন।তার সাথে কিভাবে মুখে মুখে তর্ক করবেন?আর ওখানে গেলে আবার নিজেকে দমিয়েও রাখতে পারতেন না।ফলস্বরূপ আরাবীর জন্যে অনুশোচনা দগ্ধ হয়ে আড়ালে দাড়িয়েই কাদছিলেন তিনি।জায়ান চোখের ইশারায় কাঁদতে বারন করলো।তারপর আরাবীকে নিয়ে আরাবীর রুমের দিকে অগ্রসর হলো।

জায়ান আরাবীর রুমে এসে আরাবীকে বিছানায় সুইয়ে দিলো।মিলিকে বললো,
-‘ ছোট মা ও আপাততো ঘুমাক।জ্ঞান ফিরলে কিছু খাইয়ে দিও।না খাওয়ার কারনে প্রেসার লো হয়ে গিয়েছে। ‘
মিলি সম্মতি জানাতেই জায়ান আরো একবার আরাবীকে দেখে নিলো।তারপর বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে।আজ আর অফিসে যাওয়া হবে না।মাথার রগগুলো ব্যাথায় টনটন করছে।এখন একটু ঘুমিয়ে নিলে মন্দ হয়না।যদি একটু ব্যাথাটা কমে।

সন্ধ্যে নেমে আসছে।কিন্তু মনে হচ্ছে ঘন অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।আকাশে কালো মেঘেদের দলে দলে বিচড়ণ করতে দেখা যাচ্ছে।থেকে থেকে হালকা শব্দে বজ্রপাত হচ্ছে।জোড়ালো হাওয়া বইছে।সাথে সাথে শো শো শব্দে করে গাছপালাগুলো নড়েচড়ে উঠছে। আরাবী সুইমিংপুলের কাছটায় বসে আছে পানিতে পা ডুবিয়ে।জ্ঞান ফিরেছে এই ঘন্টা দুয়েক আগেই।ও উঠেই আগে গোসল দিয়েছে।শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছিলো।তারপর মিলি এসে খাবার খাইয়ে দিয়েছিলো। মন খারাপ থাকায় ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না।তাই মনে হলো বাগান থেকে ঘুরে আসার।এই একটা জায়গায় আরাবী অনেক শান্তি খুজে পায়।এইযে হাওয়া বইছে এতে আরাবীর শরীরসহ, মনটাও শীতল হয়ে আসছে।

আরাবী চোখ বুজে নিলো।সাথে সাথেব সকালের ঘটনাগুলো মাথ চারা দিয়ে উঠলো।আরাবীর চোখের কার্নিশ বেয়ে একফোটা তপ্ত জল গড়িয়ে পরলো।জীবনটা ওর এতো জটিলতায় ঘেরা কেন?যখনই মনে হয় এই বুঝি সুখ এসে ধরা দিলো ওর কাছে।কিন্তু তখনি তা ভুল প্রমানিত হয়ে ওর সব ভাবনা লন্ডভন্ড হয়ে যায়।আর সহ্য হয়ে না কিছু।মাঝে মাঝে ওর মন চায় দূরে কোথায় ছুটে চলে যেতে।অপমান,অপদস্থ হতে হতে আরাবী ক্লান্ত।এখন একটু বিশ্রাম চায় আরাবী।
আরাবী যখন নিজের ভাবনায় ব্যস্ত হঠাৎ ওর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কেউ বলে উঠলো,

-‘উষ্ণতা তোমাকে ঘিরে আছে এবং
সন্ধ্যার ঠান্ডা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে
আমি ভাবছি আমি কি তোমার রূপের আগুনে
নিজেকে উষ্ণ করতে পারবো?’

আচমকা ঠান্ডা শীতল কন্ঠের বাক্যগুলো কর্ণপাত হতেই কেঁপে উঠলো আরাবী।তৎক্ষনাৎ চোখ খুলে দাঁড়িয়ে যায় আরাবী। পিছনে ফিরে দেখে কেউ নেই।ভয় পেয়ে গেলো আরাবী?কেউ নেই তাহলে ওই কথাগুলো ওকে কে বললো?বাড়িতে তো এখন কোন ছেলে নেই সবাই তো অফিসে।তাহলে? কন্ঠস্বরটা অনেক পরিচিত লাগলো আরাবীর।তবুও খটকা লাগছে কেমন যেন।সন্ধ্যে হয়েছে অনেক আগেই।এখন রাত হয়ে আসছে।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ১৭+১৮

ভুত টুত হবে নাহ তো?কলিজা কেঁপে উঠলো আরাবীর।বাগানে বসে আর একটু সময় কাটাবে সেই কথা বাদ দিয়ে একদৌড়ে বাড়ির ভীতর চলে গেলো।এদিকে আরাবীর এমন কান্ড দূর হতে দেখে জায়ান নিঃশব্দে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।বিরবির করে বললো,
-‘ তোমার চোখের একফোটা অশ্রুজলও যেন আমার হৃৎপিন্ডে অসহনীয় দহন সৃষ্টি করে আরাবী।’

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ২০