বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ২১+২২

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ২১+২২
সাদিয়া জাহান উম্মি

বেশ ভয়ে আছে আরাবী।কারন আজ নিহাদ সাহেব ওদের সকলকে বিকেলে তাদের বাড়ি যেতে বলেছেন। কি জানি জরুরি কথা বলবেন।এটা শুনেই আরাবীর প্রায় কলিজার পানি শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম।কোনভাবে কি আরাবী যে আদিকে চ*ড় মেরেছে এই কারনে নিহাদ সবাইকে ডাকছে?যদি নিহাদ বলে আরাবীর মতো বেয়াদপ মেয়ে তারা তাদের ছেলের বউ বানাবে না।তারপর যদি বিয়ে ভেঙ্গে দেয়?

এই কথাটা ভাবলেই আরাবীর কেমন যেন দম আটকে আসে।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।এখন যেমনভাবেই হোক সে জানে জায়ান তার হবু স্বামি।তাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে।হয়তো এই কারনেই জায়ানকে নিয়ে আরাবীর মনে জায়ানকে নিয়ে কিছুটা ভালোলাগা তৈরি হয়েছে।কিন্তু সব যদি শুরু হওয়ার আগেই ভেস্তে যায় তাহলে আরাবী কিভাবে সামলাবে নিজেকে?আর সবচেয়ে বড় কথা ওর মা তো একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাবে।আরাবীর ভীতর হতে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মাথার চুলগুলো ভালোভাবে আচঁরিয়ে নিতেই নিচ থেকে মিলির ডাক আসে।আরাবী ওড়নাটা ভালোভাবে মাথা টেনে নিয়ে আস্তেধীরে রুম হতে বেড়িয়ে যায়।নিচে নেমে আসতেই আরাবীকে দেখে ইফতি মুচঁকি মুচঁকি হাসছে।আরাবী ভ্রু-কুচকে তাকালো ইফতির দিকে।বুঝার চেষ্টা করছে ইফতি এইভাবে হাসছে কেন?আরাবী বিষয়টা বুঝতে না পেরে এইবার প্রশ্ন করলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-‘ কি হয়েছে ভাইয়া?তুমি হাসছো কেন?’
ইফতি একইভাবে হেসে জবাব দেয়,
-‘ সেটা একটু পরেই জানতে পারবি।এখন চল বড়বাবা অপেক্ষা করছেন আমাদের।’
ইফতি আরাবীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো জায়ানদের বাড়িতে।আর আরাবীর বুকের ধুকপুকানি যেন ক্রমশ বাড়তে লাগলো।একেকটা কদম ফেলতে ওর ভীষন কষ্ট হচ্ছে।ইফতি জায়ানদের বাড়িতে ঢুকেই আরাবীর হাত ছেড়ে দিলো।আরাবী একপলক তাকালো সবার দিকে।এখানে সাথি,নিহাদ,মিলি,মিহান,নূর,ইফতি আর একজন মহিলা আছে যাকে আরাবী চিনে না।নূর আরাবীকে দেখে দৌড়ে আরাবীর কাছে আসলো।তারপর বলে,

-‘ এতোক্ষনে আসলে?চলো আমার সাথে বসবে।’
আরাবী মাথা নিচু করে নূরের সাথে যেতে লাগলো।সোফার কাছে আসতেই সাথি গম্ভীর স্বরে বলে উঠে,
-‘ নূর তুই গিয়ে বস।আরাবী আমার পাশে এসে বসবে।’
সাথির এমন কথায় কেঁপে উঠলো আরাবী।নূরের হাত খামছে ধরে ভয়ার্ত চোখে মিলির দিকে তাকালো।মিলির চোখের ইশারায় বুঝালো সাথির পাশে গিয়ে বসতে।আরাবী ভয় নিয়েই সাথির পাশে বসে পরলো।তারপর সবাইকে সালাম জানালো।সবাই আরাবীর সালামের জবাব নিলেন।এদিকে সাথির এমন কাজে নিহাদের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে।নিহাদ হাসিমুখে বলেন,

-‘ নূর যাও জায়ানকে ডেকে নিয়ে আসো।এই ছেলেটাও না কি যে করে।’
আরাবী ভেবে পাচ্ছে না কি হচ্ছে এখানে।এইভাবে সবাইকে ডেকে এনে কি এমন করবে?মনটার ভীতর ক্রমশ অস্থিরতা বেড়েই চলেছে।আরাবী অস্থিরতায় ক্রমশ হাতে হাত ঘসছে।আরাবী যখন নিজের ভাবনায় ব্যস্ত ঠিক তখনই হঠাৎ ছোট্ট ছোট্ট দুটো হাত আরাবী হাতদুটো আকঁড়ে ধরে।আরাবী প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরমুহূর্তেই তামিমকে দেখেই আপনা আপনি ঠোঁটে চওড়া হাসি ফুটে উঠলো।তামিমও আরাবীর পানে মায়াময়ী হাসি ছুড়ে দিয়ে বলে,

-‘ আমাকে কোলে নেও বউ!’
আরাবী হাসিমুখে তামিমকে কোলে তুলে নিলো।এদিকে সাথি ভ্রু উঁচু করে তামিমকে প্রশ্ন ছুড়লো,
-‘ কিরে কে তোর বউ?’
তামিম আরাবীর কোলে উঠে আরাবী হাত নিয়ে খেলছিলো।সাথির এমন কথা শুনে বলে,
-‘ কেনো তুমি জানো না?এটা আমার বউ! একদম ডলদের মতো দেখতে আমার বউ তাইনা মামনী?’
সাথি তামিমের কান টেনে দিলেন।হেসে উঠে বলেন,

-‘ ওরে দুষ্টু।ও তোর বউ হলো কবে থেকে?এটা তো আমার ছেলের বউ!’
তামিমের যেন কথাটা একটুও ভালো লাগলো না।তামিম মুখ ফুলিয়ে বলে,
-‘ তোমার ওই দামড়া ছেলেকে কে বিয়ে করবে?এটা আমার বউ!’

সাথি এইবার শব্দ করে হেসে দিলেন।এদিকে নূর, ইফতি,মিলি মিহান হাবার মতো তাকিয়ে আছে সাথির দিকে।সাথির আকস্মিক এতো পরিবর্তন যেন ওদের বিষ্ময়ে ওরা কি রিয়েকশন দিবে তা ভুলে বসেছে।এদিকে আরাবী অবাক হয়ে তাকিয়ে সাথির দিক। আজ সাথিকে কেমন যেন লাগছে ওর কাছে।আগের সাথির সাথে এই সাথির বিশাল তফাত। আর কি বললো আরাবীকে? আরাবী তার ছেলের বউ এটা বললো?তারমানে সাথি আরাবীকে জায়ানের বউ হিসেবে মেনে নিয়েছে।আরাবী কি কোন ভুল শুনলো? না কি এটা সত্যি?নিহাদ মুচঁকি হেসে মুগ্ধ হয়ে স্ত্রীর প্রাণখোলা হাসি উপভোগ করছেন।আজ কতোদিন পর কঠোর মনের সাথিকে এইভাবে হাসতে দেখলো।

-‘ এইভাবে হা করে তাকিয়ে ওদিকে কি দেখছো?আমি এখানে!’
আরাবী যখন অবাকের চূড়ান্ত সীমায় ছিলো তখন হঠাৎ কানের কাছে এমন ফিসফিসানো কন্ঠস্বর শুনে কেঁপে উঠে তৎক্ষনাৎ।নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই জায়ানের সুদর্শন মুখশ্রী চোখে লাগে।লোকটা আজ নীল টি-শার্ট এর সাথে কালো ডেনিম প্যান্ট পরেছে। টি-শার্টের হাতা ছোট হওয়ায় পেশিবহুল ফুলো বাহুগুলো দেখা যাচ্ছে।পেটানো, আকর্ষনীয়, দাম্ভিক শরীরের অধিকারি জায়ানকে দেখে আরাবী যেন চোখ সরাতেই পারছে না।হঠাৎ জায়ান আরাবীর দিকে তাকালো।সাথে সাথে আরাবী হকচকিয়ে গেলো।জায়ান এমন এক ভঙ্গিমা করে আরাবীর দিকে তাকালো।আরাবী সাথে সাথে ওর দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।গালগুলোতে লজ্জার লাল আভা ফুটে উঠলো। এদিকে তামিম আরাবী গালে হাত দিয়ে বলে উঠে,

-‘ তোমার চেহারা এমন লাল কেন হয়েছে বউ?’
তামিমের এমন প্রশ্নে সবাই আরাবীর দিকে তাকালো।আরাবী সবার এইভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে খানিক ভড়কালো।তারপর জোড়পূর্বক ঠোঁটে হাসি টেনে বলে,
-‘ ও কিছু না সোনা।এমনি গরমে হয়েছে বোধহয়।’
জায়ান সোফায় হেলান দিয়ে বসে ফোন টিপতে টিপতে বলে,

-‘ আমাদের বাড়িতে এসি থাকা সত্ত্বেও যে কারো এতো গরম লাগতে পারে আগে জানা ছিলো না।’
আরাবী জায়ানের কথায় কি বলবে ভেবে পেলো না।মাথা নিচু করে রইলো।তবে মনে মনে জায়ানকে অসংখ্য গালি দিয়ে দিলো।অসভ্য লোক নিজে ওকে লজ্জা দিয়ে এখন আবার সাধু সেজে বসে আছে। আরাবীর এমন অবস্থা কেন হয়েছে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না ইফতি আর নূরের।ওরা দুজন একে-অপরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চিপে হাসলো।
সবাই যখন নিজেদের মাঝে ব্যস্ত হঠাৎ নিহাদ সাহেব গলা খাকারি দিয়ে সবার এটেন্সন পাওয়ার চেষ্টা করলো।এবং সফলও হলেন তিনি।সবাই নড়েচড়ে যখন উনার দিকে তাকালো।নিহাদ সাহেব তখন ধীরে সুস্থে বলতে লাগলেন,

-‘ আমি আজ একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
কথাটা শুনতেই যেন সবার মুখে একপ্রকার উৎসাহ এসে ভীড় জমালো।নিহাদ সাহেব তা দেখে হেসে বলেন,
-‘ আরাবী আর জায়ানের বিয়েটা খুব শীঘ্রই করিয়ে দিতে চাচ্ছি আমি।তোমরা সবাই কি বলো?’
সবাই নিহাদের কথায় বেশ খুশি হলো।ইফতি আর নূর পারেনা খুশির চোটে সোফাতেই উরাধুরা নেচে উঠতে।নিহাদ সবার খুশি দেখে মনে মনে বেশ শান্তি পেলেন।সাথি এইবার আরাবীকে ডেকে উঠলো,

-‘ আরাবী?’
আরাবী সাথিকে এখনো ভয় পায়।তাই সাথির ডাকে কেঁপে উঠলো।মনের অজান্তেই পাশে রাখা জায়ানের হাত খামছে ধরলো।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,
-‘ জ্বি আন্টি!’
-‘ তোমার আম্মুকে ফোন দেও।তার সাথে আজ আমি কথা বলবো।’
আরাবী সাথির কথায় কি বলবে ভেবে পেলো না।দুরুদুরু বুক নিয়ে ওর মায়ের কাছে ফোন লাগায়।ওর মা ফোন রিসিভ করতেই বলে,

-‘ হ্যালো মা!’
আরাবীর মায়ের ব্যাকুল কন্ঠ,
-‘ কিরে মা?এইতো আধাঘন্টাও হলো না ফোন দিলি। এখন আবার ফোন করলি।সব ঠিক আছে আরাবী?’
আরাবী সরল কন্ঠে বলে,
-‘ চিন্তা করো না মা সব ঠিক আছে।তোমার সাথে সাথি আন্টি কথা বলবে তাই ফোন দিয়েছি।’
আরাবীর মা বেশ চিন্তায় পরে গেলেন।কি এমন কথা বলবে।আরাবী ফোনটা লাউডস্পিকারে দিয়ে সাথির হাতে দিলো।সাথি মুচঁকি হেসে বলেন,

-‘ হ্যালো আসসালামু আলাইকুম লিপি আপা!’
-‘ জি সাথি আপা ওয়া আলাইকুমুস সালাম! কেমন আছেন আপা?’
-‘ এইতো আলহামদুলিল্লাহ! আপনি?’
-‘ আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো।’
আরাবীর মা এইটুকু বলে থামলেন।তারপর করুন কন্ঠে আবারও বলেন,
-‘ কি হয়েছে আপা?আমার আরাবী কি কোন ভুল করেছে আপা? ভুল করে থাকলে বলুন আমি ওকে বুঝিয়ে বলবো!’
সাথি আরাবীর মায়ের এমন অস্থিরতা দেখে মুচঁকি হাসলেন।তারপর বলেন,
-‘ কেন?আমি কি এমনি আমার হবু বেয়ানের সাথে কথা বলতে পারি না?তবে আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ কথার জন্যেই ফোন দিয়েছি।’

আরাবীর মা প্রথম কথা বেশ খুশি হলেও। লাস্ট কথাটায় আবারও চিন্তায় পরে গেলেন।সাথি আবারও বলে,
-‘ কথাটা এই কি আপনার বাড়ির মেয়েকে আমি অতিব শীঘ্রই।মানে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার বাড়ির মেয়ে করে নিয়ে যাওয়ার জন্যে আপনার কাছে অনুমতি চাইছি।’
আরাবীর মা সাথির এমন কথায় কি বলবেন ভেবে পেলেন না।খুশিতে কান্না করে দিলেন আরাবীর মা।বলতে লাগলেন,
-‘ এ তো আমার সৌভাগ্য আপা।আমার মেয়েটাকে যে আপনারা আপনাদের বাড়ির পূত্রবধু বানাবেন এটা আমার সৌভাগ্য।আপনারা যখন চান আমি ওকে আপনাদের হাতে তুলে দিবো এতে আমার কোন আপত্তি নেই।’

সাথি সাথে সাথে, ‘ আলহামদুলিল্লাহ! ‘ বললেন।বেশখানিকক্ষণ আরাবীর মায়ের সাথে নিহাদ, সাথি,মিলি,মিহান কথা বললো।আরাবী যে সাথির এমন ব্যবহারে অবাকের উপর অবাক হচ্ছে।তবে ওর বেশ ভালো লাগছে।যাক অবশেষে সাথি ওকে মেনে নিয়েছে। এটাই অনেক।নাহলে দেখা বিয়েটা হলেও সাথি ওকে মেনে নিচ্ছে না।তখন আরাবী নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যেতো।

উনাদের কথা বলা শেষে সিদ্ধান্ত জানান।আগামী ১৫ দিন পর আরাবী আর জায়ানের বিয়ে হবে।কিন্তু আরাবীর মা এতে বেশ দ্বিধায় ভুগছিলেন।উনি কিভাবে কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না।এই সময়ে মেয়েকে বাবার বাড়ি থাকতে হয়।কিন্তু উনার মেয়েটা এতো অভাগা আজ বাবার বাড়ি থাকতেও ওনার মেয়েটাকে বাবার বাড়ি থেকে বিদায় দিতে পারবেন নাহ।আর উনারও কিছু খরচ আছে।মেয়েকে বিয়ে দিবেন।আর অনুষ্ঠান করবেন নাহ।কিন্তু কিভাবে কি করবে কোন কূলকিনারা পেলেন না আরাবীর মা।আরাবী মা যখন আমতা আমতা করছিলেন এই বিষয় নিয়ে তখন জায়ান মাঝ হতে খপ করে ফোন নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

-‘ আসসালামু আলাইকুম! আপনি কি নিয়ে চিন্তা করছেন তা আমি ভালোভাবে জানি।আপনাকে এই অহেতুক চিন্তা করা লাগবে না।আপনি আপনার মেয়েকে আমাদের দিবেন এইটাই এনাফ।আমাদের আর কিছু লাগবে না।আর আমি কাল আরাবীকে নিয়ে আসছি আপনাদের গ্রামে আপনাকে নিতে।আপনার মেয়ের বিয়ে আপনি থাকবেন না এটা কিভাবে হয় বলুন?তাই ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখবেন।যা হবার আর যা করার তা আমি বুঝে নিবো।বিয়ে নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না।আপনার মেয়েকে পেলেই হবে।আর এটা নিয়ে আর কোন কথা শুনতে চাইনা আমি।যা বললাম তাই হবে।রাখছি আল্লাহ হাফেজ!’

কথাগুলো কথা একসাথে জায়ান খুব বলে বলে।তাই ফোন রেখে বিরক্ত ভঙ্গিতে বসে রইলো।এদিকে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে।জায়ান তা বুঝতে পেরে রাগি গলায় বললো,
-‘ হোয়াট?এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন সবাই?আমার মুখে কি কোন সার্কেস চলছে?’
জায়ানের এমন রাগ দেখে সবাই তড়িঘড়ি করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।সাথি এইবার আরাবীর দিকে ঘুরে বসলেন।মুচঁকি হেসে বলেন,

-‘ আমাকে ক্ষমা করিস মা।আমি তোকে না বুঝে অনেক কথা বলে ফেলেছি।এই বুড়ো মায়ের কথায় কিছু মনে করিস না।’
সাথির এমন আদর মাখা কথায় টলমল করে উঠে আরাবীর চোখজোড়া ধরা গলায় বলে,
-‘ এ কি বলছেন আন্টি?এইভাবে এসব বলে আমাকে ছোট করবেন না প্লিজ।আপনি আমাকে মাফ করবেন।আমি হয়তো আমার মনের অজান্তে আপনাকে কোনভাবে কষ্ট দিয়ে থাকলে!’
সাথি যেন অনেক বেশি খুশি হলেন আরাবীর কথায়।এমন একটা মেয়েকে কিনা তিনি এতোদিন এইভাবে কটু কথা শুনিয়েছেন।সাথি আরাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।নরম কন্ঠে বলেন,
-‘ দেখি আম্মু।তোমার হাতটা দেও।’

আরাবী আস্তে ধীরে নিজের হাত এগিয়ে দিলো সাথির দিকে।সাথি আরাবীর বা হাতের মধ্যমা আঙ্গুলে একটা আংটি পড়িয়ে দিলেন স্বর্ণের।আংটিটা বেশ সুন্দর।আর আরাবীর হাতে যেন তা আরো দ্বিগুন সুন্দর লাগছে।আরাবী সাথির দিকে তাকালে সাথি আরাবীর গালে হাত দিয়ে বলেন,
-‘ এটা আমি আমার মেয়েকে খুশি হয়ে দিলাম।এটা পাকাপোক্ত করে রাখলাম যে তুমিই আমার ছেলের বউ হবে।আর তোমার আর জায়ানের এংগেজমেন্ট হবে। বিয়ের আগেই হবে।তখন নাহয় ওই আঙ্গুলে জায়ান আংটি পরাবে।’

আরাবী লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।সবাই বেশ খুশি হলো।হঠাৎ তামিম ভ্যা করে কেঁদে দিলো।আরাবী সহ বাকি সবাই বেশ অবাক হলো তামিমের কান্না শুনে।আরাবী তামিমকে ওর আর জায়ানের মাঝে বসিয়ে দিয়েছিলো বেশ খানিক আগে।এইবার তামিমের কান্না শুনে তড়িঘড়ি করে তামিমকে কোলে নিয়ে বলে,

-‘ কি হয়েছে বাবু তুমি কাঁদছো কেন?’
তামিম কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-‘ তুমি না বউ?’
আরাবী বোকার মতো বললো,
-‘ হ্যা বাবু আমি তো তোমারই বউ।’
তামিম এইবার আরাবীকে ঝাপ্টে ধরে বললো,
-‘ তাহলে সবাই কি বলছে তোমার আর এই জায়ান ভাইয়ার বিয়ে হবে।কিন্তু তুমি তো আমার বউ।তাহলে জায়ান ভাইয়াকে বিয়ে কেন করবে?’

তামিমের এমন কথা শুনে সবাই জোড়েজোড়ে হেসে দিলো।আরাবী নিজেও ঠোঁট কামড়ে হাসছে তামিমের কথায়।তারপর বলে,
-‘ সবাই বললেই হবে আমি তো তোমাকেই বিয়ে করবো।তুমি কত্তো কিউট!’
তামিম কান্না থামিয়ে দিলো আরাবীর কথায়।হাসি দিয়ে আরাবীর গালে চুমু খেয়ে বসলো।আরাবীও তামিমের গালে চুমু খেলো।এসব দেখে জায়ান রাগি চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।রাগে দাঁত কিরমির করছে জায়ান।

জায়ান আরাবীর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে কিছু একটা বিরবির করলো।তারপর সেখান থেকে উঠে সোজা ছাদের দিকে চলে গেলো ধুপধাপ পা ফেলে।আরাবী বেকুবের মতো জায়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।জায়ান যাওয়ার ঠিক মিনিট পাচেঁক পর আরাবীর ফোনে টুং করে একটা শব্দ হয় মেসেজের।আরাবী তামিমকে ওর মায়ের কাছে দিয়ে ফোনটা ওন করে মেসেজটা চেক করলো সেখানে লিখা,
‘ জাস্ট ফাইভ মিনিট টাইম দিলাম দ্রুত ছাদে আসো।
____জায়ান!’

আরাবী হা হয়ে গিয়েছে মেসেজটা পড়ে।এখন সে কিভাবে যাবে ছাদে।এতোগুলো মানুষদের মাঝ থেকে উঠা যাওয়া বেয়াদবি হবে না? হঠাৎ নূরের দিকে চোখ যেতেই একটা আইডিয়া পেলো আরাবী।তাড়াতাড়ি নূরকে মেসেজ করলো।
‘ প্লিজ হেল্প নূর।তোমার ভাই আমাকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ছাদে যেতে বলেছে।কিন্তু আমি কিভাবে যাবো?প্লিজ হেল্প!’
মেসেজটা পড়ে মুচঁকি হেসে নূর আরাবীর দিকে তাকালো।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ২০

তারপর সকলকে বললো ও আরাবীকে নিয়ে ওর রুমে যাচ্ছে।সবাই নূরের কথা শুনে আর মাথা ঘামালো না।নূর আরাবীকে নিয়ে চলে এলো সেখান থেকে।আরাবী যেন হাফ ছেড়ে বাচঁলো।ছাদের কাছে আসতেই নূর আরাবীকে বেস্ট ওফ লাক বলে চলে গেলো।আর আরাবী ভাবতে লাগলো এসে তো পরেছে।এখন কি যাবে না কি যাবে না।কিছুক্ষন দ্বিধাদন্দে করে শেষমেষ আরাবী ছাদের দিকে পা বাড়ালো।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ২৩