বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ২৫

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ২৫
সাদিয়া জাহান উম্মি

একসময় আরাবী সবসময় উদাসিন থাকতো।আনমোনা হয়ে নিজের জীবনের দুঃখগুলো কিভাবে ঘায়েব করে দেওয়া যায় তার উপায় খুঁজতো। কিন্তু যবে থেকে জায়ান এসেছে ওর জীবনে। রঙহীন জীবনটা যেন লোকটা এক
নিমিষেই রংধনুর সাতরঙ দিয়ে ওর জীবটা কানায় কানায় রঙিন করে দিলো। জায়ানকে প্রথম বার দেখে ভাবতেই পারেনি।এই বগরাগি লোকটাই ওর একমাত্র ব্যাক্তিগত সেই মানুষটি হবে।

যেই লোকটাকে দেখলেই আরাবী ভয়ে সিটিয়ে যেতো আজ সেই লোকটাই যে ওর সবটা জুড়ে এইভাবে সর্বক্ষন বিচড়ণ করবে কখনো কল্পনাও করেনি আরাবী।আর এখন লোকটাকে দেখলেই লাজুক হাসিতে ঠোঁটটা আরাবীর প্রসারিত হয়ে যায়।সাথে পুরো চেহারায় লালাভ আভার ছেঁয়ে যায়।। জায়ানের বলা প্রতিটা কথা বক্ষস্থলে কাঁপন ধরায় ভয়ংকরভাবে।জায়ানের বলা প্রতিটা বাক্য যেন আরাবীর সারা অঙ্গে অদ্ভূত শিহরণ জাগিয়ে তুলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

গম্ভীর লোকটা মাঝে মাঝে এমন সব ভয়ানক কথা বলে আরাবী পারে না লাঁজে মরে যায়।লোকটা এমন অসভ্য কেন?কেন বুঝে না এসব কথা শুনলে লজ্জায় ওর মরে যেতে ইচ্ছে করে?গুমড়োমুখো লোকটা যে ওকে এতোটা চায়, এতোটা চায় তা ওই লোকের চেহারা দেখলে বুঝা বড্ড মুশকিল।আরাবী তো বুঝতে পেরেছে জায়ানের চোখের ভাষা দেখে।জায়ানের চোখগুলো স্পষ্টভাবে আরাবীকে জানিয়ে দেয় যে এই গুমড়ামুখো লোকটা ওকে কতোটা ভালোবাসে।

আরাবী বাগানে সুইপিংপুলটার পাশে বসার চেয়ারগুলো আছে সেখানে বসে পানির দিকে তাকিয়ে জায়ানের ভাবনায় মুশগুল ছিলো। অথচ ও টেরই পেলো না।একজোড়া মুগ্ধ দৃষ্টি ওকেই চেয়ে চেয়ে দেখছে। হঠাৎ হাত টান লাগায় ভড়কে যায় আরাবী।ভয়ে চোখ খিচিয়ে নেয় জোড়েসোড়ে।বুকটা এখনো ধুকপুক করছে।ভয়ে বড় বড় শ্বাস নেওয়ার সময় হঠাৎ সেই তীব্র সুঘ্রানটি সুরসুর করে নাসিকাপথ দ্বারা প্রবেশ করতেই আরাবীর বুঝতে একটুও সময় লাগে না যে লোকটা কে। বুকের কাছে ভয়ে রাখা ছিলো সেই হাতজোড়া।তা এখন আস্তে আস্তে মুঠো পাকিয়ে ফেললো। দুমড়েমুচড়ে হাতের সেই মুঠো টুকোর মাঝে খাবলে ধরলে সেই ব্যাক্তিটির টি-শার্ট। মুখের উপর উষ্ণ নিশ্বাসের খেলা চলছে। সাথে সাথে সেই কাঁপন ধরানো কন্ঠস্বর শোনা গেলো,

-‘ চোখ খুলো!’
আরাবী বাক্যটি শ্রাবণ করা মাত্র নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে বাজেভাবে।একজন মানুষের কন্ঠে যে এতোটা মাদকতা থাকে তা আগে জানতো না আরাবী।কেমন যেন কন্ঠস্বরটা শুনলে নেশা ধরে যায় আরাবীর।ইচ্ছে করে লোকটাকে সামনে বসিয়ে বলতে আপনি কথা বলতে থাকুন আমি শুধু আপনাকে দেখবো। আচমকা মুখের উপর ফুঁ দেওয়ায় কেঁপে উঠলো আরাবী। মৃদ্যু কম্পনরত চোখের পাতাগুলো ধীরে ধীরে খুললো।ওমনেই চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষটির সুদর্শন মুখখানা নজরে এলো আরাবীর।লোকটা বোধহয় কাজ থেকে ফিরেই মাত্রই গোসল নিয়েছে। তাইতো অনেকটা স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।নজর আটকে রইলো আরাবীর সেই শুভ্র স্নিদ্ধ মুখখানায়।আরাবীর এহেন ঘোরলাগা দৃষ্টি দেখে বাঁকা হাসলো জায়ান।বললো,

-‘ এতোক্ষন চোখই খুলতে চাইছিলে না।আর এখন কি করছো বলোতো?’
লজ্জা পেলো আরাবী।সাথে সাথে চোখের দৃষ্টি নত হলো ওর।জায়ান ধীরে ধীরে ওই নত করা মুখখানার দিকে নিজের মুখ নামিয়ে আনলো।কানের সাথে ঠোঁটজোড়া ছুঁই ছুঁই করে বললো,
-‘ লাল রঙ আমার পছন্দ না আরাবী জানো?তবে আজ তোমায় এই লাল জামাটায় এতো সুন্দর আর আবেদনময়ী লাগছে যে আজ থেকে এই রঙটাও আমার প্রিয়র তালিকায় লিখে নিলাম।যেমনটা তোমায় দেখার সাথে সাথে আমার বক্ষস্থলে যে হৃদয়টা আছে সেখানে তোমাকে বসিয়ে দিয়েছিলাম তৎক্ষনাৎ।’

এতোক্ষন জায়ানের কথায় লজ্জা পাচ্ছিলো আরাবী।কিন্তু জায়ানের শেষ কথাটুকু শুনে চমকালো।কি বললো জায়ান মাত্র।আরাবীকে প্রথম দেখাতেই জায়ান ওকে পছন্দ করেছিলো?কিন্তু কিভাবে?পছন্দ করে থাকলে লোকটা তাহলে ওর সাথে বাজে বিহেইভ কেন করতো? নানান প্রশ্ন আরাবীর মস্তিষ্কে কিলবিলিয়ে উঠলো।অন্যমনস্ক আরাবীর কানে কানে ফের বললো জায়ান,

-‘ তোমায় বড্ড চুমু খেতে ইচ্ছে করছে আরাবী।’
এতোক্ষনের চিন্তাকে জলাঞ্জলি দিয়ে দিলো আরাবী জায়ানের মাত্র বলা কথাগুলো শুনে।জায়ানকে এতোটা জোড়ে খামছে ধরলো যে।জায়ান ব্যাথা পেয়ে মৃদ্যুভাবে চোখজোড়া বন্ধ করলো।তবে টু শব্দটুকুও করলো না জায়ান।আরাবী আটকে আটকে বলে উঠলো,
-‘ এসব বলা বন্ধ করুন। দোহাই লাগে আপনার।এইসব বলে আমায় লজ্জা দিবেন না।আমি যে মরে যাবো।’
মৃদ্যু হেসে জবাবে জায়ান বলে,

-‘ আমি তো মেরেই ফেলতে চাই।’
আরাবী মৃদ্যু ঠোঁট নাড়িয়ে বলে,
-‘ পাষাণ,নিষ্ঠুর।’
হাসলো জায়ান আরাবীর কথায়।চট করে আরাবীকে ছেড়ে দিয়ে সরে আসলো জায়ান।আরাবীও তাকালো।জায়ান পকেটে দুহাত গুজে ভ্রু উচিঁয়ে বললো,
-‘ এতো রাতে এখানে কি করছো?’
আরাবী মুখটা কাচুমাচু করে উত্তর দিলো,
-‘ ঘুম আসছিলো না।তাই আরকি….!’
জায়ান কথাটা শুনে নির্বিঘ্ন ভঙ্গিতে বললো,
-‘ আমার কথা মনে পরছিলো সেটা সরাসরিই বলতে পারো।’

আরাবী কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।আসলেই জায়ানের কথা বড্ড মনে পরছিলো।আজ সারাদিনে লোকটাকে দেখতে পারেনি।আর এখন গিয়েও যে দেখা করবে সেটা আরাবী কর‍তে পারবে নাহ।গিয়ে আরাবী কিভাবে বলবে যে ও জায়ানকে দেখতে এসেছে?লজ্জায় আরাবী মুখ দিয়ে তো তখন কথাই বের হবে না।আরাবী মৌনতা লক্ষ করেই জায়ান যা বুঝার বুঝে ফেললো।হালকা হাসলো জায়ান।বাতাসের ঝাপটায় আরাবীর খোলা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছিলো।

জায়ান শক্তপোক্ত হাতটা এগিয়ে দিয়ে আরাবীর মুখের এলোমেলো চুলগুলো কানের পিছে গুজে দিলো।আরাবী চোখজোড়া আবেশে বটে নিলো।আবারও ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো।জায়ান আরাবীর নরম গালটা পাঁচ আঙ্গুল দ্বারা আবৃত করে ধরলো।আরাবী নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে।লোকটা গালে যেভাবে হাত দিয়ে স্পর্শ করেছে।সেখানটা শিরশির করছে।সেই শিরশিরানী ভাবটা ধীরে ধীরে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পরেছে।ভালো লাগার প্রজাপতিগুলো মনের আঙ্গিনায় উড়াউড়ি করে চলেছে নিবীড়ভাবে। আরাবী জায়ানের চোখের দিকে তাকালো।ধরা গলায় বলে,

-‘ আপনি অনেক ভালো।অনেক ভালো।’
জায়ান আরাবীর কথাটায় বেশ অবাক হলো।আরাবীর মতো চাপা স্বভাবের মেয়েটা যে জায়ানকে অকপটে এই কথাটা বলবে ভাবেনি জায়ান। আরো নিবীড়ভাবে আরাবীর গালটা আকঁড়ে ধরলো। দু ধাপ এগিয়ে এসে আরাবীর মুখোমুখি হলো।আরাবী তাকিয়েই আছে জায়ানের দিকে।আজ এতো সাহস কোথা থেকে আসলো আরাবীর মাঝে।কিভাবে যেন নির্দ্বিধায় আজ তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে। জায়ান হালকা হাসলো আরাবীর এতোটা সাহস দেখে।আজ কেন যেন বেহায়া হতে ইচ্ছে করছে জায়ানের।ওই মায়াবী মুখশ্রীটা আদরে আদরে ভড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। জায়ান মুখটা নিচু করলো।

প্রায় অনেকখানি নিচু করলো।কারন আরাবী অনেকখানি খাটো জায়ান থেকে।আরাবী জায়ানকে ঝুকতে দেখে খানিক ভড়কালো তবে দৃষ্টি সরালো নাহ।নান পিছপা হলো।জায়ান যেন এতো অনেকখানি খুশি হলো। জায়ান আরাবীর কপালে অধর ছুঁইয়ে দিলো।এতোদিন বুকের ভীতর জমিয়ে রাখা সকল ভালোলাগা,ভালোবাসাটুকু ঠেলে দিলো ওই উষ্ণ ছোঁয়াটায়।আরাবীর সারা শরীর অদ্ভুতভাবে থরথর করে কেঁপে উঠলো।এই প্রথম, এই প্রথম জায়ানের অধরের স্পর্শ পেলো আরাবী।

উত্তেজনায়,ভালোলাগায় জায়ানের পেটের কাছের টি-শার্টটি দুমড়ে মুচড়ে খামছে ধরলো ওই নরম আঙ্গুলগুলো দ্বারা। উষ্ণ স্পর্শটুকু দিয়ে সরে আসলো জায়ান।আরাবী এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজের ভালোলাগাটুকু জানান দিচ্ছে জায়ানকে।জায়ান আরাবীর বদ্ধ চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।আবারো ওই আদুরে স্পর্শটুকু ঢেলে দিলো আরাবীর ওই বন্ধ চোখজোড়ায়। তারপর হুট করে আরাবীর দুকোমড়ে ওই পুরুষালি হাতজোড়া দাম্ভিকতার সাথে স্পর্শ করলো।এরপর হেঁচকা টানে আরাবীর ছোট্ট দেহটা টেনে নিয়ে আসলো জায়ান ওর সেই প্রসস্থ বুকে।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ২৪

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।অনেকদিন পর লিখায় কেমন যেন শব্দ মিলাতে পারছি না।এলোমেলো লাগছে।আম্মুর শরীরটা ভালো না।আমার আম্মু এক্সিডেন্ট করেছিলো অটোর সাথে।তাও আমি রেগুলার গল্প দিয়েছিলাম। কিন্তু আম্মুর ব্যাথাটা এতো পরিমান বেড়ে গিয়েছিলো যে আম্মুকে নিয়ে ঢাকা আসতে হয়েছে।আমি আপাততো নানুবাড়ি আছি।আমার আম্মু চিকিৎসারত। বুকে ব্যাথা পেয়েছেন আমার আম্মু।আমি আপনাদের সম্পূর্ণ ঘটনাটা বলতে চাইনি।কিন্তু সবাই আপনারা গল্প চাচ্ছেন।তাই আম্মুর সাথে কি হয়েছে তা জানিয়ে দিলাম।সবাই দোয়া করবেন আমার আম্মুর জন্যে।যেন আমার আম্মুর জলদি সুস্থ্য হয়ে যায়।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ২৬