বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৩

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৩
সাদিয়া জাহান উম্মি

দূর্বল প্রায় শরীর নিয়ে আরাবী নেতিয়ে পরেছে প্রায়।লেপ্টে আছে জায়ানের বক্ষে।জোড়ালো কান্না থেমেছে।তবে এখনও হালকা আওয়াজে কাঁদছে আরাবী। কান্নার ধিমিকে কেঁপে কেঁপে উঠছে শরীর।হিঁচকি উঠে গিয়েছে।জায়ানের আর সহ্য হচ্ছে না আরাবীর কান্না। আরাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম কন্ঠে জায়ান বলে উঠে, ‘ হয়েছে তো! আর কাঁদেনা।’

আরাবী ঠোঁট কামড়ে ধরলো।কান্না থামানোর জোড়ালো প্র‍য়াস চালালো।ভাঙ্গা আওয়াজে বললো, ‘ আমি পা…পারছি না তো।আমার ভাবতেই শরীর ঘিনঘিন করছে। ওই শয়তান আ..আমায় স্পর্শ করেছে জায়ান। আ..আমার শরীরের উপর ঝাপিয়ে পরেছিলো।আ..আমার এখানে,এইদিকে, এই জায়গায় স্পর্শ করেছে।’
বলতে বলতে আরাবী ওর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ দেখাচ্ছে যেখানে আদি ওকে বাজেভাবে স্পর্শ করেছে।আরাবী অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায় জায়ানের দিকে।বলে, ‘ আমার ঘৃনা লাগছে।বমি পাচ্ছে জায়ান।আমি কিভাবে ভুলবো এসব? আ..আজ আপনি সময় মতো না আসলে। আ..আমার সাথে ও….!’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অর্ধেক বলে আবারো কান্নায় ভেঙ্গে পরলো আরাবী। মেয়েদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে তাদের ইজ্জত।আর যখন সেই ইজ্জতের দিকে কেউ হাত বাড়ায় তখন সেই মেয়ের কাছে ঠিক কি অনুভূত হয় তা সে ছাড়া আর কেউ জানে না।কতোটা বাজেভাবে মনের মাঝে আঘাত করে তা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।আরাবীর সারা শরীর এখনো কাঁপছে ভয়টা এখনো কাটাতে পারছে না আরাবী। জায়ানের চোখজোড়া লাল হয়ে এসেছে।ছেলে মানুষ কাঁদতে পারেনা।

ওরা যদি কাঁদতে পারতো। তাহলে অন্তস্থল হৃদয়টা নামক যন্ত্রটায় ঠিক কতোটা বাজেভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা বুঝি সবাইকে বোঝাতে পারতো।কিন্তু আফসোস।জায়ান চোখ বুঝে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।দুহাতে আরাবীর গাল ধরে ওর মুখটা উঁচু করে আরাবীর কপালে চুমু খেলো। ধরা গলায় বলে, ‘ আমি আছি তো।আর কেউ তোমাকে কিছু করতে পারবে না।আজকের মতো ভুল আমি আর কখনো করবো না।আমার আরাবীকে আমি আর কখনো একা ফেলে যাবো না।সবসময় তাকে আগলে রাখবো আমার বুকের মাঝে।যাতে আর কেউ তাকে বাজেভাবে স্পর্শ করতে না পারে।তুমি ভয় পেও না।তুমি তো আমার স্ট্রোং গার্ল। আর কাঁদেনা।’

আরাবী জায়ানের চোখের দিক নিস্প্রভভাবে তাকিয়ে রইলো।এক সেকেন্ডের জন্যে পলক ফেললো না।টপটপ করে অশ্রু ঝরছে ওর চোখ দিয়ে।জায়ান বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা আরাবীর চোখের জলগুলো মুছে দিলো।চুমু খেলো ওর সিক্ত চোখজোড়ায়। একটু সরে আসতেই আরাবী আবারো দৃষ্টি নীবদ্ধ করলো জায়ানের দিকে।হঠাৎ কেমন যেন অদ্ভুত একটা কন্ঠে আরাবী বলে উঠলো, ‘ বিয়ে করবেন আমায়?’

জায়ান অবাক হলো আরাবীর কথায়।বিয়ে তো ও করবেই আরাবীকে।সেটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে।তবে আরাবীর মুখে এই কথাটা শুনে বেশ শান্তি লাগলো জায়ানের।বললো, ‘ হ্যা করবো তো।তোমাকে করবো না তো কাকে করবো?’
আরাবী জায়ানের হাত খামছে ধরলো বললো,’ আমি সেটা বলছি না।আমাকে বিয়ে করবেন।তাও আজ, এক্ষুনি!’

চমকে উঠলো জায়ান আরাবীর কথায়।খানিক স্তব্ধ ভঙ্গিতে থম মেরে রইলো। পরক্ষণেই আরাবীকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে, ‘ করবো বিয়ে।কিন্তু আজ না। আজ তুমি অসুস্থ।আমি নূরকে ডাকছি। ওর সাহায্যে গোসল করে ফ্রেস হয়ে নেও।অনেক আঘাত পেয়েছো শরীরে মেডিসিন লাগাতে হবে।খাবার খেয়ে,ওষুধ খেতে হবে।তারপর বিশ্রাম করিও।’
জায়ানের এরকম কথায় আরাবীর যেন রাগ হলো অনেক।এক ঝটকায় জায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, ‘ নাহ! এক্ষুনি বিয়ে হবে।যদি আজ আপনি আমায় বিয়ে না করেন।তাহলে আমি আর আপনাকে বিয়ে করবো না।চলে যাবো আমি এখান থেকে।আর আমাকে খুজেও পাবেননা আপনি।’

জায়ান থমকে গেলো আরাবীর কথায়।আরাবীর দিকে তাকালো।মেয়েটা কেমন থরথর করে কাঁপছে।ভালোভাবে তাকাতেও পারছে না।জায়ান বুঝলো আজকের ঘটনাটা বেশ ভালোভাবেই ইফেক্ট করেছে আরাবীর মন,মস্তিষ্কে।আরাবী যে ওকে নিয়ে প্রচন্ড ইনসিকিউরড ফিল করছে বুঝতে পারছে জায়ান। তাই আর কোন তর্কে জড়ালো না।আরাবীর বাহু ধরে ওকে নিজের কাছে এনে বলে, ‘ আচ্ছা আজই হবে আমাদের বিয়ে। তুমি কোন চিন্তা করো না।আমি তোমারই।আমি তোমাকে রেখে কোথাও যাবো না। তুমি থাকো।আমি নূরকে ডাকছি।ওর সাহায্যে ফ্রেস হয়ে নেও। ক্ষতগুলোতে মেডিসিন লাগাও,খাবার খেয়ে ওষুধ নিবে ঠিক আছে?আমি ততোক্ষনে সব ব্যবস্থা করছি।’

আরাবীর কপালে চুমু খেয়ে জায়ান ওকে সুইয়ে দিয়ে বাহিরে চলে আসলো।সোজা নিচে নেমে আসলো। বাড়ির সবাই সেখানে বসে আছে।জায়ানকে আসতে দেখে আরাবী মা ধুকরে কেঁদে উঠলেন।বললেন,’ আমার মেয়েটা কেমন আছে বাবা?আমি কি যাবো?’
জায়ান আরাবীর মায়ের কাছে গেলো।বললো, ‘ চিন্তা করবেন না আন্টি।ও ঠিক আছে।’
‘ আমার মেয়েটার সাথেই কেন এসব হয়?সবার কুনজর কেন থাকে আমার মেয়েটার উপর।আল্লাহ্ যেন ওর সব বিপদ আমাকে দিয়ে দেন।তাও আমার মেয়েটা যেন আর দুঃখ না পায়।’

জায়ান ক্রোধপূর্ণ কন্ঠে ইফতিকে বললো,’ ওই কুকুরের বাচ্চা কই ইফতি?’
ইফতি বলে, ‘ ভাই ওকে পুলিশ নিয়ে গিয়েছে।তুমি চিন্তা করো না।’
জায়ান হাতমুষ্টিবদ্ধ করে বলে, ‘ পুলিশকে বলবি ওকে যেন টাচ না করে তারা।যা করার আমিই করবো কাল গিয়ে।’
ইফতি সম্মতি জানালো।
জায়ান রাগটাকে সামলে নিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো।নূরকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ নূর।যা আরাবীকে ফ্রেস হতে সাহায্য কর।ক্ষতস্থানগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দিস।আর হ্যা ভালোভাবে চেক করিস কোথায় কোথায় আঘাত লেগেছে।’

নূর মাথা দুলালো, ‘ আচ্ছা ভাইয়া।তুমি চিন্তা করো না।’
নূর চলে গেলো।আরাবীর মা বললো, ‘ আমিও যাই বাবা।মেয়েটাকে একটু বুকে না নিলে শান্তি পাবো না।’
জায়ান থমথমে গলায় বলে, ‘ নাহ আন্টি এখন যাবেন না।জরুরি কথা আছে আপনাদের সবার সাথে?’
সাথি ভ্রু-কুচকে তাকালেন ছেলের দিকে। বললেন,’ আশ্চর্য? তোর কথার থেকে কি?উনি উনার মেয়ের কাছে যাবে সেটা ইম্পোর্টেন্ট নাহ?’

‘ হ্যা জানি আমি।তবে আমি যা বলবো সেটা আজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ! ‘
জায়ানের কথায় নিহাদ সাহেব গম্ভীর গলায় বললো, ‘ কি এমন কথা শুনি?’
জায়ান সবার দিকে এমপলক তাকালো।ফের বললো, ‘ আজ আর এক্ষুনি আমার আর আরাবীর বিয়ে হবে। ওকে আমি এইমুহূর্তে বিয়ে করবো।’
চমকে উঠলেন সবাই।নিহাদ আর সাথি ছেলের কথায় বেশ রেগে গেলেন।এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো। আর এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে পারে ছেলেটা বিয়ের কথা বলতে? নিহাদ সাহেব বেশ রাগি গলায় বলে, ‘ মাথা ঠিক আছে তোমার?কি যা তা বলছো?’

জায়ান ঠান্ডা কন্ঠে বলে, ‘ আমি সম্পূর্ণ ঠিক আছি বাবা!’
আরাবীর মা করুন গলায় বললেন, ‘ বাবা! মেয়েটা আমার অসুস্থ। এমন অবস্থায় বিয়েটা না করলে হয়না।দুদিন বাদে তো এমনিতেও বিয়ে হতো।’

জায়ান শ্বাস ফেললো উনার কথায়। বললো, ‘ আমিও সেটাই বুঝিয়েছিলাম আপনার মেয়েকে।কিন্তু তিনি আমার কথা শুনতে নারাজ।সে করতে চায় আর তা এক্ষুনি।তাকে আমি শতবার বুঝিয়েও লাভ হয়নি।তিনি তার কথাতেই অটল।’
সবাই একে-অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলো।এইবার সবাই বুঝতে পেরেছে ব্যাপারটা।যে এই সিদ্ধান্ত জায়ান নেই নি। জায়ান এতোটাও কান্ডজ্ঞানহীন না। আরাবীই ওকে জোড় করেছে। আরাবীর দিকটা ভেবে সবাই রাজি হয়ে গেলো।জায়ান সবার সম্মতি পেয়ে গম্ভীর স্বরে বললো, ‘ জায়ান কাজি আর হুজুরের ব্যবস্থা কর।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩২

এতোদিনে তোর বোন আমার কাছে এই একটা আবদার করেছে।আমি কি তা না রেখে পারি বল?উলটো আমি নিজেই তো এইদিনটার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম।আর তোর বোন নিজেই সেই অপেক্ষার অবষান করার ইচ্ছা পোষণ করেছে।যা দ্রুত।আর দেরি করিস না।’
ইফতি জায়ানের কথায় মাথা নাড়ালো।বেশ হাসিমুখেই ভাইয়ের কথামতো কাজে লেগে পরলো।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৪