বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৭

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৭
সাদিয়া জাহান উম্মি

ভালোভাবে ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো আরাবী। ওকে দেখে জায়ান এগিয়ে আসলো।আরাবীর কপালে কোমল স্পর্শ দিয়ে বললো, ‘ লাল খয়েরী শাড়ি পড়া,ভেজা চুল,মাত্র গোসল করায় সতেজ মুখশ্রী।ভীষন সুন্দর লাগছে।চোখ সরাতে পারছি না।’

আরাবী লাজুক হাসলো।ধীর আওয়াজে বললো,’ধন্যবাদ!’
জায়ান আরাবীর কথায় হালকা রাগি গলায় বললো, ‘ সকাল সকাল মুডটা খারাপ করে দিচ্ছো।কথায় কথায় শুধু সরি আর ধন্যবাদ।এইসব কেন বলো?আমার বউয়ের প্রসংশা আমি করবো দিনরাত চব্বিশঘন্টা। এখন তুমি কি সেই দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা ধন্যবাদ দিবে?’
আরাবী মুখটা কাচুমাচু করে ফেললো এমন কথা শুনে। মিনমিন করে বলে, ‘ তাহলে কি কিছুই বলবো না?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ কেন বলবে না?’
‘ তাহলে কি বলবো আপনি বলে দিন!’
‘ আমি কেন বলবো?’
‘ আশ্চর্য! এমন করছেন কেন?’
‘ কি করলাম?’
‘ ধ্যাৎ ভালোলাগে না।’

আরাবী জায়ানের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিতেই জায়ান আরাবীর হাত ধরে টেনে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।আরাবীর কানের পাতায় অধর ছুঁয়ে দেয়।আরাবী কেঁপে উঠে পেটের উপর রাখা জায়ানের হাত খামছে ধরে।জায়ান ফিসফিস করে বললো, ‘ থ্যাংকিউ অথবা সরি না বলে তার বদলে আমাকে চুমুও তো খেতে পারো।এটা আবার বলে দিতে হয়?আমি তো তাই করতাম।শুধু তোমার জন্যেই পারিনা।লজ্জায় না আবার তুমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলো।’
আরাবী লাজুক হেসে বলে, ‘ হয়েছে আমি আপনার মতো ওতো লুচু না।’
জায়ান ভ্রু-কুচকে ফেললো সাথে সাথে বললো, ‘ স্বামি চুমু দিলে সে লুচু হয়ে যায়?’

‘ হ্যা হয়!’
‘ কে বলেছে এসব ফালতু কথা?’
‘ আপনার বউ!’
‘ তাহলে তো বউটার সাথে একটু লুচুগিরি করেই ফেলি।সে যেহেতু আমায় লুচু নামে আখ্যায়িত করে দিলো।’
জায়ানের এমন কথায় আরাবী দ্রুত জায়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।ঠোঁট চিপে হাসি আটকে রেখে বলে, ‘ একদম না।আমি মাত্র শাওয়ার নিলাম।’
জায়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,’ তো কি? আমি তো নেইনি!’

‘ না নিলে এখন নিবেন!’
‘ নাহ নিবো না।এখন আমি রোমান্স করবো।দ্যান তুমি আমি একসাথে রোমান্টিক বাথ করবো!’
কথাগুলো বলে জায়ান এগিয়ে আসতে নিলেই আরাবীর বারান্দার দিকে দৌড়ে গিয়ে বারান্দার দরজা আটকে দেয়।জায়ান সাথে সাথে রাগি গলায় বলে, ‘ এটা কিন্তু ঠিক হলো না আরাবী।’
আরাবী হাসতে হাসতে বলে,’ একদম ঠিক হয়েছে।’

‘ বেড়িয়ে আসো বলছি!’
‘ আসবো না।’
‘ আমি আসলে কিন্তু রেহাই নেই!’
‘ কিভাবে আসবেন।’
‘ দরজা ভেঙ্গে ফেলবো।’
‘ ইস পারবেন না!’
‘ চ্যালেঞ্জ করছো?’
‘ ধরুন তাই!’

হঠাৎ দরজায় ধুমধাম শব্দ হতেই আৎকে উঠে আরাবী।লোকটা সত্যি সত্যি ভেঙ্গে ফেলবে না কি দরজা। আরাবী দ্রুত দরজা খুলে বেড়িয়ে আসলো।জায়ানের হাত ধরে ওকে থামিয়ে দিলো।অবাক কন্ঠে বললো, ‘ আশ্চর্য! পাগল নাকি আপনি?কি করছেন এসব?’
জায়ান আরাবীর থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সাথে সাথে আরাবীর গাল চেপে ধরলো।দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ ফারদার ডোন্ট ড়ু দিস এগেইন। নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।’
আরাবী চোখ নামিয়ে নিলো।ধীরে বললো, ‘ আচ্ছা স..!’

সরি বলতে গিয়েও বললোনা আরাবী নিচু কন্ঠেই বললো,’আর কখনো করবো না।’
জায়ান ছেড়ে দিলো আরাবীকে।গম্ভীর কন্ঠে বললো, ‘ আমার জামা কাপড় বের করো।অফিসে যাবো।’
এই বলে জায়ান তাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।আরাবীর মন খারাপ হয়ে গেলো।লোকট কি রাগ করলো ওর সাথে?নাহলে বিয়ের পরেরদিন কি কেউ অফিসে যায়?আরাবী মন খারাপ নিয়ে মাথার চুল ভালোভাবে মুছে দিলো।তারপর রুমের চারদিকে চোখ বুলালো।এলোমেলো হয়ে আছে রুমটা।আরাবী রুম গোছাতে শুরু করলো।বিছানার চাঁদর উঠাতে গিয়ে প্রচুর লজ্জা পেলো আরাবী।পুরনো চাঁদর উঠিয়ে আরেকটা নতুন চাঁদর বিছিয়ে দিলো।ফুলগুলো ভালোভাবে ঝাড়ু দিয়ে একত্রে করে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।রুমে এয়ারফ্রেসনার স্প্রে করে দিয়ে শ্বাস ফেললো আরাবী।যাক রুমট এখনো গোছালো লাগছে।এইবার আরাবী গিয়ে জায়ানের জামা কাপড় বের করে দিলো।অফিসে যাবে লোকটা।ঘড়ি,

ওয়ালেট,রুমাল এসবও তো লাগবে। ওগুলো খুজতে নেমে পরলো আরাবী।অনেক খোজাখুজির পর অবশেষে বিছানার সাথে লাগানো টেবিলটার ড্র‍য়ারে পেলো।সুন্দর মতো জায়ানের সব জিনিস বিছানার উপর রেখে।আরাবী গেলো ড্রেসিংটেবিলের সামনে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কাকের বাসা হয়ে আছে।সেগুলো আঁচড়ানোতে মনোযোগ দিলো।তার একটু বাদেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ হলো।আরাবী আয়নায় দেখলো জায়ান বেড়িয়েছে।শুধু শরীরে একটা তোয়ালে পেচানো।লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো আরাবী।মনে মনে আরাবী জায়ানকে চরম নির্লজ্জের উপাধি দিয়ে দিলো। জায়ান শার্ট আর প্যান্ট পরে নিলো।আঁড়চোখে আরাবী যে চুল নিয়ে যুদ্ধ করছে সেটাও দেখে নিলো।ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো আরাবীর কাছে জায়ান।গিয়ে আরাবীর হাত থেকে চিরুনিটা নিয়ে নিলো।আরাবী আচমকা এমন করায় একটু চমকে গেলেও।পরে জায়ানকে দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,’ কি হলো চিরুনি নিলেন কেন?’

জায়ান গম্ভীর গলায় বলে, ‘ যেভাবে চুলের সাথে যুদ্ধ করছো।এমন করলে অকালে নেড়া হয়ে যাবে।তখন সবাই আমাকে বলবে জায়ানের বউ টাকলু।আর আমি সেটা চাই না।’
জায়ানের এমন কথায় কি বলবে আরাবী বুঝলো না।তবে পরক্ষনে ফিক করে হেসে দিলো।জায়ান ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে আরাবীর চুল আঁচড়ে দিতে লাগলো।বেশ সুন্দরভাবে আরাবীর চুলগুলো আঁচড়িয়ে দিলো জায়ান।চিরুনিটা আবারও আরাবীকে দিয়ে বললো, ‘ আমি চুল টুল বাধঁতে পারিনা।বাকিটা তুমি করে নেও!’
জায়ান চলে যেতে নিতেই আরাবীর ওর জায়ানের শক্তপোক্ত হাতটা আঁকড়ে ধরলো।দৃষ্টি নত করে অপরাধী স্বরে বললো, ‘ আপনি কি আমার সাথে রাগ করেছেন?’

ওপাশ হতেই জায়ানের জবাব শোনা গেলো না।তবে জায়ান আরাবীর অপার হাতটা ধরে ওকে নিজের মুখোমুখি দাড় করালো।আরাবী তাকালে জায়ান আরাবীর ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।পরক্ষনে বললো, ‘ একবার রাগ করে যে ভুল করেছি তা দ্বিতীয়বার আর করবো না।’
আরাবী মন খারাপ করে বলে, ‘ তবে ওরকম কাঠখোট্টাভাবে কথা বলছিলেন কেন?’
জায়ান নিশব্দে হাসলো আরাবীর কথায়।বললো, ‘ আরে তখন হালকা একটু বিরক্ত হয়েছিলাম।তুমি এইভাবে বারান্দার দরজা আটকে দেওয়াতে।এর থেকে বেশি কিছু না।তুমি মন খারাপ করো না।’

জায়ানের কথাগুলো শুনে সাথে সাথে আরাবীর ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।জায়ান আরাবীর সেই হাসিমাখা মুখশ্রী দেখে তৃপ্তি পেলো।জায়ান হাত ধরে বিছানার সামনে নিয়ে এলো।এরপর বলে, ‘ গায়ে ব্লেজার জড়িয়ে দেও,সাথে টাই বেধে দিবো,এন্ড ঘড়িও পড়িয়ে দিবে! ‘
আরাবী হাসলো।বিনাবাক্যে জায়ানের কথামতো সব করে দিলো।জায়ান এরপর বলে, ‘ চলো ব্রেকফাস্ট করবো।’
আরাবী বেড়িয়ে আসলো রুম থেকে।সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে আরাবী হালকা গলায় বলে, ‘ অফিসে যাবেন কেন আজ? বিয়ের পরেরদিনই অফিসে যায় কেউ?’

জায়ান হালকা হেসে বললো,’ যেতাম নাহ।কিন্তু ফোনে টেক্সট এসেছে একটা জরুরি মিটিং আছে।১১ টার দিকে।বেশি জরুরি না হলে আমি আজ বউকে নিয়ে রুম থেকেই বের হতাম নাহ।’
আরাবী আর কথা বাড়ালো না। লাজুক হেসে জায়ানের সাথে নিচে নেমে আসলো। নিচে আসতে দেখে সাথি নিহাদ সাহেবের প্লেটে খাবার বেরে দিচ্ছেন।নিহার সাহেব আরাবীকে দেখেই বললো, ‘ আসো আসো জলদি আসো।খুব খিদে পিয়েছিলো তাই তোমাদের ছাড়াই বসে পরেছি।যাক তোমরা এসে পরলে!’

আরাবী মুচঁকি হেসে বলে,’ সমস্যা নেই বাবা আপনি খাওয়া শুরু করুন!’
সাথিকে খাবার বেরে দিতে দেখলে।আরাবী এগিয়ে বললো, ‘ মা আপনি বসুন।আমি খাবার দিচ্ছি।’
সাথি আরাবীকে থামিয়ে দিলো।বললো, ‘ তুমি গিয়ে বসো। আমি দিচ্ছি।এতো তাড়াতাড়ি কাজের প্রেসার স্টার্ট করো না।আমি যবে থেকে অসুস্থ হবো। বিছানায় পরে যাবো তখন নাহয় তুমি সব কাজের দায়িত্ব নিও।এখন যাও বসে পরো।’
নূর নিজেই ব্রেড নিতে বলে, ‘ ভাবি বসে পরো।’

আরাবী আর কথা না বাড়িয়ে বসার জন্যে এগিয় গেলে জায়ান একটা চেয়ার টেনে দিলো আরাবীকে বসার জন্যে।আরাবী সেখানে বসে পরলে জায়ান আরাবীর পাশে বসে পরলো। সাথি সবাইকে ব্রেকফাস্ট দিয়ে নিজেও বসে পরলেন।অবশেষে সবাই মিলেমিশে সকালের নাস্তা শেষ করলো।নূর যাবে না ভার্সিটিতে কারন আরাবীও আজ যাবে না তাই।আরাবী জায়ানকে এগিয়ে দিতে গেলো।জায়ান গাড়িতে উঠার আগে আরাবীর কপালে চুমু দিয়ে বললো,’ নিজের খেয়াল রেখো।আমি জলদি এসে যাবো!’

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৬

আরাবী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলেই জায়ান গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।আরাবীও চলে গেলো বাড়ির ভীতর।শশুড়, শাশুড়ি আর ননদের সাথে গল্পগুজুবে মেতে উঠলো।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৮