বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৮

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৮
সাদিয়া জাহান উম্মি

জেলের ভীতর থেকে বিভৎস চিৎকার ভেসে আসছে।জায়ান এলোপাথারি মারছে আদি’কে।এইবার না থামালে বোধহয় আদি মরেই যাবে।ইফতি তাই দ্রুত জায়ানকে টেনে ওখান থেকে বাহিরে নিয়ে আসলো।জায়ান এখনো রাগে ফুসছে আর বারবার তেড়ে যাচ্ছে আদি’র দিকে।ইফতি জোড়পূর্বক পুলিশস্টেশন থেকে নিয়ে আসলো জায়ানকে।জায়ান ইফতির এমন কাজে।রাগে চিৎকার করে বললো,’ থামালি কেন আমায়?’

ইফতি যথাসম্ভব শান্ত গলায় বলে, ‘ ভাই! আর কতো মারবে?মরে যাবে তো!’
জায়ানের শক্ত জবাব, ‘ যাক মরে। ও মরলেই আমার কলিজা ঠান্ডা হবে।ওকে বুঝিয়ে দিলাম আমার আরাবীর দিকে হাত বাড়ালে কি হয়।’
‘ হু! হয়েছে তো। ওর বাকি শিক্ষা পুলিশ দেবে।চলো বাড়ি চলো।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

জায়ান চুলে হাতের দ্বারা ব্রাশ করতে করতে বলে, ‘ উহু! বাড়ি যাবো না।কাজ আছে?’
ইফতির প্রশ্ন, ‘ কোথায় যাবে? এখন কয়টা বাজে খেয়াল আছে? বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে হতে চললো।আরাবী এই নিয়ে আমায় পাঁচবার ফোন করেছে।তুমি আসছো না কেন এটা জানার জন্যে।’

জায়ান ভ্রুক্ষেপহীনভাবে বললো, ‘ করুক ফোন।আজ আমি এই কাজটা সেরে তারপরেই বাড়ি যাবো।’
ইফতি বুঝলো জায়ান যা বলেছে তা করেই ছাড়বে।তাই জোড়াজুড়ি বাদ দিয়ে সে বলে, ‘ তাহলে আমিও আসি?’
‘ ইওর উইস!’ এটা বলেই জায়ান গাড়িতে উঠে বসলো।সাথে সাথে ইফতিও পাশে সিটে বসে পরলো। মাঝপথে জায়ান একবার গাড়ি থামিয়ে একজন উকিলকে নিয়ে নিলো।তারপর আবারও গাড়ি চালাতে লাগলো।প্রায় ঘন্টাখানিক পর গাড়ি থামলো একটা দুতলা বাড়ির সামনে।জায়ান নেমে দাড়ালে ইফতিও ঝটপট নামলো।ইফতি গাড়ি থেকে নামতেই হা হয়ে গেলো।বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে জায়ানের দিকে তাকালে।জায়ান ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে বলে, ‘ হোয়াট?এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?’
ইফতি একইরকমভাবে তাকিয়ে থেকে বলে,’ এটা তো আরাবীর বাবার বাড়ি।’

জায়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে, ‘ জানিসই যখন তখন প্রশ্ন করছিস কেন?’
ইফতি বললো, ‘ কিন্তু এখানে কেন এসেছি আমরা?’
জায়ান গম্ভীর গলায় উত্তর দিলো, ‘ আমার বউ আমার কাছে কিছু চেয়েছে।আর সেটা আমি তাকে না দিয়ে পারি?বউয়ের কথা না রাখলে পাপ হয় পাপ।’

ইফতি আর কথা বাড়ালো না।যা বুঝার এখন ও স্পষ্ট বুঝে ফেলেছে।তাই চুপচাপ জায়ানের সাথে চললো।দারোয়ান বাধা দিয়েছিলো কিন্তু জায়ান টাকাও সাধলো কিন্তু নিতে চায়নি।জায়ান কারন জিজ্ঞেস করলে বলে তাকে চাকরি থেক বের করে দিবে।এসব জানতে পারলে।জায়ান আশ্বাস দিলো তার চাকরির কিছুই হবে না।ও সামলে নিবে সব।অতঃপর দারোয়ান গেট খুলে দিলো।জায়ান কলিংবেল বাজাতেই একটু পরেই কেউ একজন দরজা খুলে দিলো। একজন মহিলা তিনি ওদের দেখেই বলেন,’ কাকে চাই?’

জায়ান শান্ত কন্ঠেই উত্তর দিলো, ‘ মিসেস শায়লাকে! ‘
মহিলাটি গেট ছেড়ে দিয়ে জায়ানদের নিয়ে সোফায় বসতে দিলো।সাথে উকিল দেখে কেমন যেন একটু ট্যারা চোখে তাকাচ্ছিলো কিন্তু কিছু বলেনি সোজা উপরে চলে গেলেন।জায়ান বেশ আয়েশ করে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।
একটু পরেই দেখা গেলো একজন বৃদ্ধা হাতে লাঠি নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামছেন সাথে আরেকজন মহিলা বয়সটা আরাবীর মায়ের মতোই হবে।জায়ান তাদের দেখে বাঁকা হাসলো। তারা জায়ানের কাছাকাছি আসতেই জায়ান নিজেই আগে বললো,

‘ আসসালামু আলাইকুম দাদি শাশুড়ি আর ফুপি শাশুড়ি!’
মহিলা দুটো তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো জায়ানের দিকে। মধ্য বয়স্ক বেশ কর্কশ গলাতেই বলেন,’ এই ছেলে! কে তুমি?আর এসব কি বলছো হ্যা?’

জায়ানের ঠোঁটে হাসি বজায় আছে।এদিকে ইফতি তার ভাইকে এমন অহেতুক হাসতে দেখে ভড়কে গিয়েছে।তার ভাইতো কখনো এতো হাসে না।ব্যাপারটা কি? যাক, যা হচ্ছে তাই দেখতে থাক।পরে নাহয় বুঝা যাবে।ইফতি এইবার মনোযোগ দিলো জায়ানের দিকে।জায়ান বলছে, ‘ ও এম জি। কি বলেন বউয়ের ফুপি তো আমার ফুপি শাশুড়িই হয় তাই নাহ?’
জায়ানের এমন হোয়ালিপনা দেখে বৃদ্ধমহিলাটি যেন রেগে গেলেন।বলেন,’ কিসের শাশুড়ি শাশুড়ি শুরু করেছো তুমি ছেলে? আর কার ফুপি কিসের ফুপি হ্যা?’

জায়ান মুহুর্তেই তার রূপ বদলে ফেললো।চোয়াল শক্ত করে বলে, ‘ জিহাদ আহমেদ আর লিপি খানমের একমাত্র মেয়ে আরাবী আহমেদ।যে এই বাসার মালকিন আর বর্তমানে যে আমার স্ত্রী।’
জায়ানের এমন কথা শোনা মাত্রই যেন তাদের দুজনের চেহারার রং পালটে গেলো।চোখে মুখে একরাশ দুশ্চিন্তা হানা দিলো তাদের।জায়ান বেশ মজা পাচ্ছে তাদের চেহারা দেখে। বৃদ্ধা মহিলাটি হলেন আরাবীর দাদি শায়লা ভূইয়া আর পাশের জন উনার মেয়ে মানে আরাবীর ফুপি শিলা আহমেদ। শিলা আহমেদ রেগে জায়ানকে বলেন, ‘ কিসব যা তা বলছো তুমি? এই বাড়ির মালিক আমরা।এখানে আরাবী কোথা থেকে আসলো?’

জায়ান এমন কথায় পাশে দাঁড়ানো উকিলকে ইশারা করলো।উকিল দ্রুত কিছু কাগজপত্র শিলার হাতে দিলো।ভ্রু-কুচকে কাগজগুলো হাতে নিলো শিলা।জায়ান ক্রুর হাসি দিয়ে বললো, ‘ রিড ইট ফুপি শাশুড়ি।’
শিলা জায়ানের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে জায়ান আবারও ইশারা করলো কাগজগুলো পড়ার।শিলা এইবার কাগজগুলো পরলে শিলা বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে জায়ানের দিকে তাকালো।জায়ান তা দেখে বাঁকা হাসলো। শায়লা ভূইয়া মেয়েকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে, ‘ কিরে কি লিখা আছে এটায়?আমি তো চোখে তেমন একটা দেখতে পাই না। তুই বল।’

শিলা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে, ‘ এখানে লিখা জিহাদ ভাইয়ের সকল সম্পত্তি তার একমাত্র মেয়ে আরাবী আঠারো বছর হলে আরাবীর নামে হয়ে যাবে।আর যদি তিনি এর আগে মারা গেলে তার সকল সম্পত্তি তার স্ত্রী আর সন্তানের নামে হয়ে যাবে। এতে কোনপ্রকার বাধা কেউ সৃষ্টি করলে তাদের বিপক্ষে আইনিপদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
শায়লা ভূইয়া সব শুনে।চোখ বড়বড় করে জায়ানের দিকে তাকালো।জায়ান হেসে বলে, ‘ কি বুঝলেন তো? এখন এই বাড়িরসহ জিহাদ বাবার যা সম্পত্তি আছে সব আরাবীর।তো বলুন আমার চুপচাপ সব মেনে নিবেন নাকি আইনিপদক্ষেপ নিবো আমি?’

তারা কি বলবে ভেবে পেলেন না। এমনসময় প্রবেশ ঘটলো শিলার হাজবেন্ড ইখতিয়ার হোসেনের।তিনি এসে বাড়ির এমন অবস্থা দেখে অবাক হলেন।বিষ্ময় নিয়ে তিনি প্রশ্ন করলে তাকেও কাগজপত্রগুলো দেখানো হলো।সব দেখে তাকে বেশ খুশিই দেখা গেলো। ইখতিয়ার হোসেন নিজেই চান ঘরের মালিক ঘরে ফিরে আসুক।সেদিন যখন আরাবী আর ওর মা’কে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো।তিনি শত চেষ্টা করেও থামাতে পারেননি তাদের।

আসলে কিইবা বলবেন তিনি তখন নিজে তখন ব্যাবসায় লস খেয়ে বাড়ি গাড়ি সব হারিয়ে শশুড় বাড়ি পরেছিলেন।সেখানে সেইবা কি বলতো।তবে আজ বেশ খুশি তিনি। জায়ান আরো কিছুক্ষন কথাবার্তা বললো ইখতিয়ার সাহেবের সাথে।জায়ান নিজের পরিচয় দিতেই তারা যেন আরো চমকে যান।শায়লা ভূইয়া আর শিলা আহমেদ তো জায়ানের পরিচয় জেনে ভয়ে আর কথাই বলেনি।চুপচাপ ছিলো পুরো।জায়ান ইখতিয়ার সাহেব থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।যাওয়ার আগে এটাও বলে গেলো।কয়েকদিনের মধ্যেই আরাবী আর ওর মা’কে নিয়ে আসবে এখানে।

গাড়িতে উঠে ইফতি তো সেই খুশি। জায়ানকে একপ্রকার জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ ভাই তুমি বেস্ট।ধন্যবাদ ভাই আমার বোনটার জীবনের হারিয়া যাওয়া সবকিছু ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে।’
জায়ান শান্ত কন্ঠে বললো, ‘ ধন্যবাদ আমাকে না দিয়ে চাচ্চুকে দিস।তিনি আমায় হেল্প না করলে আমি এতোটা সহজে সব করতে পারতাম না।’

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৭

‘ সে নাহয় বুঝলাম।কিন্তু আরাবীকে এই খুশির খবরটা কবে দিবে?’
জায়ান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে, ‘ আর দশদিন পর জিহাদ বাবার মৃত্যুবার্ষিকি সেইদিনই নিয়ে আসবো এখানে।ততোদিন নাহয় এটা সিক্রেট থাকুক। তুই কিন্তু কিছু বলিস নাহ।’
ইফতি হাসিমুখেই বলে, ‘ আচ্ছা ভাই বলবো নাহ।’
জায়ান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিলো।গন্তব্য এখন বাড়ি যাওয়া।তার কাঠগোলাপ যে তার জন্যে অপেক্ষা করছে।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৯