বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৯

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৯
সাদিয়া জাহান উম্মি

মন খারাপ করে নিয়ে জায়ানের জন্যে অপেক্ষা করতে করতে বারান্দার সেই ছোট্ট বিছানাতেই ঘুমিয়ে পরেছে আরাবী।জায়ানের জন্যে অপেক্ষা করেছিলো ও।লোকটাকে ফোন করেছিলো দুপুর একটার দিকে।তখন সে জানায় বিকেল তিনটা, চারটা বাজবে ওর আসতে আসতে।তাই আরাবী আর দুপুরের খাবার খায়নি।

ভেবেছিলো জায়ান আসলেই জায়ানের সাথে খাবে।কিন্তু বিকেল পাঁচটা বেজে যায় জায়ানের আসার কোন খবর নেই।এর মধ্যে ফোনও দিয়েছিলো তিন চারবার কিন্তু লোকটার ফোনও বন্ধ।চিন্তায় অস্থির হয়ে ইফতিকে ফোন করে জানতে পারে জায়ান ওর সাথেই আছে।আর একটা খুব জরুরি কাজে আটকে পরেছে তারা তাই আসতে দেরি হচ্ছে।তাতে যেন স্বস্তি মিললো আরাবীর।কিন্তু জায়ানের ফোন এইভাবে বন্ধ থাকায় একঝাঁক অভিমান জড়ো হয় মনের কোনে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফোন বন্ধ করে রাখার কি দরকার ছিলো?একবার বললেই তো হতো। সেই অভিমান ধরে এখানে এসে একটা বই পড়ছিলো আরাবী।কিন্তু কখন যে ঘুমিয়ে পরলো জানেই নাহ।হঠাৎ আরাবীর মনে হচ্ছে কেউ ওকে চুমু দিচ্ছে।তাও আবার পুরো মুখশ্রীতে। জড়িয়ে ধরেছে। তাও আবার শক্ত করে।এমন করে ধরেছে যে আরাবীর মনে হচ্ছে ওর দম বন্ধ হয়ে যাবে।আরাবী হালকা গোঙ্গালো।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে চোখজোড়া মেলে তাকাতেই জায়ানের হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রী নজরে আসে।লোকটা মুচঁকি হেসে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।আরাবী ওই হাসি দেখে থম মেরে রইলো।

কারো হাসিমাখা মুখটাও বুঝি এতো সুন্দর হয়?এইযে লোকটাকে দেখে ওর হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে।এটার দায় কে নিবে? আরাবী কিছু বলতে গিয়েও বললো না।অভিমানটা আবারও নাড়াচাড়া দিয়ে উঠলো মনের মাঝে। মন খারাপ করে জায়ানকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা কর‍তে লাগলো ও।কিন্তু ওর সেই নরম হাতদুটো জায়ানের শক্তপোক্ত হাত আর পাকে সামান্য পরিমান সরাতে পারলো নাহ।ব্যর্থ হয়ে আরাবী মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

তাকাবেই না আর লোকটার দিকে। আরাবীকে অন্যদিকে তাকাতে দেখে জায়ান হুট করে নিজের মুখ গুজে দিলো আরাবীর ঘাড়ে।সেখানে ছোট ছোট উষ্ণ স্পর্শ দিতে লাগলো জায়ান।আকস্মিক এমন আক্রমণে বাকরুদ্ধ আরাবী।বহু কষ্টে একটা হাত জায়ানের চুলের মাঝে ডুবিয়ে দিয়ে তা খামছে ধরলো ও।আবেশে চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেলো।জায়ানের অধর ছোঁয়া যেন আরো তীব্র হয়ে উঠলো এর কারনে।আরাবী এইবার মুচঁড়ে উঠলো।নিজেকে ছাড়ানোর জন্যে ছটফট করতে লাগলো।অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো, ‘ ছেড়ে দিন প্লিজ।’

কথাটা শুনে সাথে সাথে ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে নেয় জায়ান।আরাবীকে এখনো চোখ বন্ধ করে রাখতে দেখে বললো, ‘ চোখ খুলো।’
আরাবী জবাব দিলো না।জায়ান এইবার গম্ভীর গলায় বললো, ‘ চোখ না খুললো এইবার ফাইনাল রোমান্স শুরু করবো।এখন তুমি কি চাও বলো?’

আরাবী আৎকে উঠে সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালো।জায়ান ওই দৃষ্টিতে দেখতে পেলো অভিমানের সাগর। জায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘ দুপুরে খাওনি কেন?আম্মুদের সাথে খেয়ে নিতে।আমি তো বলেই দিয়েছিলাম আমার দেরি হবে। ‘
আরাবী চুপচাপ রইলো।একটা কথাও বললো না।জায়ান আরাবীর উপর থেকে উঠে গিয়ে আরাবীর হাত ধরে ওকেও টেনে তুললো।আরাবীকে ঠেলেঠুলে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে নিজেই চোখমুখে পানি দিয়ে দিলো। আরাবী এখনো চুপ।এতে জায়ান বেশ রেগে গেলো।আরাবীকে ধমক দিয়ে উঠলো, ‘ কি সমস্যা কথা বলছো না কেন? এমন করলে আমি আবার চলে যাবো।তারপর আর আসবো না।চাইলেও আমাকে আর খুঁজে পাবে নাহ।’

চমকে উঠলো আরাবী জায়ানের এমন কথায়।মনের ভীতরটা কেমন হু হু করে উঠলো।চিনচিনে ব্যাথা সৃষ্টি হলো বুকের বাঁ-পাশটায়।ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হুট করে জায়ানকে শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আরাবী। ভেজা কন্ঠে বললো, ‘ এগুলো কেমন কথা বলছেন আপনি? আর কখনো এসব বলবেন না প্লিজ।’
জায়ান আরাবীকে জড়িয়ে ধরলো।বললো, ‘ তাহলে কথা বলছিলে না কেন?’
আরাবী বলে, ‘ আপনি নিজের ফোন বন্ধ করে কেন রেখেছিলেন?আমি কতবার ফোন করেছিলাম আপনাকে।টেনশন হচ্ছিলো খুব।পরে ইফতি ভাইয়াকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম আপনি তার সাথে আছেন। এইজন্যেই রাগ করেছিলাম।’
জায়ান আরাবীর চুলের ভাঁজে চুমু খেয়ে‌ আরাবীকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, ‘ চলো খাবে।এতোক্ষন কেউ না খেয়ে থাকে? দুপুরে মেডিসিনও তো ছিলো।এমন করলে চলবে?’

আরাবী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে জায়ানের সাথে নিচে নেমে আসলো খাবারের জন্যে।জায়ানকে টেবিলে বসতে বলে আরাবী গেলো খাবার গরম করতে। একে একে সব খাবার গরম করে এনে জায়ানের প্লেটে খাবার বেড়ে দিলো।তারপর পাশের চেয়ারে বসে নিজের প্লেটে খাবার নিতে গেলে জায়ান বাধা দেয়।আরাবী ভ্রু-কুঁচকে তাকালে জায়ান খাবার মেখে আরাবীর মুখের সামনে ধরলো।

ওমনিই মনে একটু আধটু যেই অভিমানটুকু ছিলো তা একনিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো আরাবীর।জায়ান খাবারটা মুখে নেওয়ার জন্যে ইশারা দিতেই আরাবী মুচকি হেসে খাবারটুকু খেয়ে নেয়।জায়ান আরাবীকে খাইয়ে দিলো পরক্ষনে নিজেও খেয়ে নিলো।খাওয়া দাওয়া শেষে আরাবী সবকিছু গুছিয়ে রাখলো।জায়ান বসে আছে ওর জন্যে। লোকটাকে বললো রুমে চলে যেতে ও একটু পর আসবে। কিন্তু কে শুনে কার কথা।লোকটা ত্যাড়ামি করে এখানেই বসে আছে।হাতের কাজগুলো শেষ করে জায়ানের কাছে আসলো আরাবী।জায়ান তখন ফোনে কি যেন ঘাটাঘাটি করছিলো। আরাবী নিচু স্বরে বললো, কাজ শেষ।চলুন!’

জায়ান আরাবীর কথা শোনামাত্রই ফোনটা পকেটে গুঁজে নিয়ে আরাবীর হাত ধরে রুমে চলে আসলো।আরাবীকে শুইয়ে দিয়ে রুমের পর্দাগুলো টেনে দিয়ে আসলো।রুমের লাইটটাও নিভিয়ে দিলো।অতঃপর বিছানায় এসে টি-শার্ট’টা খুলে আরাবীর গায়ে কম্বলটা মেলে দিলো।রুমে এসি চলছে মেয়েটার এমনিতেও ঠান্ডা বেশি।জায়ান নিজেও এইবার কম্বলের ভীতরে ঢুকে আরাবীকে টেনে বুকে নিয়ে আসলো।আরাবী ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে জায়ানের দিকে।জায়ান আরাবীকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,, ‘ কি সমস্যা? এমনভাবে তাকিয়ে আছো কেন?’

আরাবী ছোট্ট কন্ঠে বলে, ‘ রাত আটটা বাজে আর আপনি এখনি আমাকে নিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।এটা কি হলো? ‘
জায়ান গম্ভীর গলায় বললো, ‘ তো কি সমস্যা?বাড়িতে কেউ নেই।খালামনি অসুস্থ। মা,বাবা আর নূর সেখানে গিয়েছে।তাহলে তুমি এখন করবে টা কি শুনি?’
জায়ানের যুক্তিতে কি বলবে ভেবে পেলো না।জায়ান আরাবীর মাথাটা বুকে চেপে ধরলো।
‘ ঘুমাও।আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।’

আরাবী চুপচাপ চোখ বন্ধ করে নিলো।আরাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জায়ান নিজেই ঘুমিয়ে পরেছে।কিন্তু আরাবীর চোখে ঘুম নেই। সে তো পুরো বিকেল ভরেই ঘুমোলো।এখন আর ঘুম আসছে না।ডাগর ডাগর আঁখিজোড়া মেলে ও তাকিয়ে জায়ানের দিক।লোকটা এতো সুন্দর যে আরাবী একধ্যানে তাকিয়ে থাকে জায়ানের দিকে। জায়ানের সৌন্দর্যের কাছে তো ও কিছুই না।সেখানে নাকি এই লোকটা ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে।মাঝেমধ্যে বড্ড হাসি পায় আরাবীর।ওদের প্রেমটা কেমন যেন।

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৩৮

নাহ কোন কোন প্রেম নিবেদন হলো, না কোন ফুল আদানপ্রদান হলো,না কেউ কাউকে ভালোবাসি বললো।অথচ মন দিয়ে দুজন দুজনার তীব্র ভালোবাসাটা খুব করে অনুভব করতে পারে।আচ্ছা আরবী যে লোকটা এতো ভালোবাসে লোকটা কি তা জানে?ওকে কি বুঝতে পারে?ওর চোখের ভাষা পড়তে পারে?ওর হৃদয়ের ব্যাকুলতা অনুভব করতে পারে?যেমনটা ও করতে পারে জায়ানেরটা? আরাবী হাসলো।মনে মনে বললো, ভালোবাসা বড্ড অদ্ভূত।’

বৃষ্টি ভেজা কাঠগোলাপ পর্ব ৪০