ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ১০

ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ১০
নীহারিকা নুর

তুরাগ দরজায় হাত রেখেই বেশ কিছুক্ষণ সেখানে দাড়িয়ে রইলেন। তার পুরো নজর এতক্ষণ সামনে বসে থাকা রমনীর দিকে নিবদ্ধ ছিল। রমনীর দৃষ্টি তার বইয়ের ভাজে। একমনে কিছু একটা পড়ছে। কি পড়ছে সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। দূর থেকে শুধু তিরতির করে কাপা ঠোট যুগল দেখা যাচ্ছে। সেদিকে এক নজর তাকিয়ে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিল তুরাগ৷ এই মেয়ের দিকে আর তাকাবে না ঠিক করল৷ মেয়েটা মনে জাদু জানে। নয়ত তুরাগ এর নজর ঘুরে ফিরে বারবার কেন ওর দিকেই পড়বে।

তুরাগ হেটে ভেতরের দিকে ঢোকে৷ এতক্ষণে তরুর নজরে পড়ে যে তুরাগ বাসায় এসেছে। সেই কখন থেকে বসে থাকতে থাকতে চোখ লেগে আসছিল৷ তাই তো বই নিয়ে একটু ব্যাস্ত থাকার চেষ্টা করেছে যাতে ঘুমকে একটু তাড়ানো যায়।
তুরাগ তরুকে পাত্তা না দিয়ে তরুর পাশ দিয়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে যেতে নেয়। তরু তড়িঘড়ি করে তুরাগ এর সামনে দুই হাত দুদিকে পাখির ডানার মতো মেলে দিয়ে দাড়ায়৷ থেমে যায় তুরাগ। তরু তুরাগ এর থেকে বেশ খানিকটা শর্ট।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এজন্য তরুকে ঘাড় বাকা করেই তুরাগ এর দিকে তাকাতে হয়৷ তরু ঘাড় বাকা করে তাকিয়ে দেখে তুরাগ ও মাথাটা একটু নিচু করে তরুর দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ পড়ে যায় দুজনের। তুরাগ এক ভ্রু উচু করে কিছু একটা ইশারা করে। তরু বুঝতে পারে যে ওর এভাবে দাড়ানোর কারণ জানতে চাচ্ছে তুরাগ। কিন্তু প্রথমেই জবাব না দিয়ে তরু আবার উল্টো জিজ্ঞেস করে কি বললেন?

– এভাবে কাকতাড়ুয়া হয়ে সামনে দাড়িয়ে আছো কেন।
– আপনাকে উপরে যেতে দিব না তাই।
– আরে আজব আমার বাসায় এসে আমার উপরেই জোর খাটাচ্ছো। সরো সামনে থেকে।
– না সরব না। এটা আপনার বাসা হলে এটা আমার ফুপির ও বাসা। আমি অবশ্যই এখানে জোর খাটাতে পারি। আর আমি এতক্ষণ আপনার জন্য বসে ছিলাম। আপনি আসলে এক সাথে খাব তাই। আপনাদের বাসায় এসেছি বাসার সবাই না খেলে আমি আগে আগে খেয়ে নেই কীভাবে বলুন তো৷ বিষয়টা ভালো দেখায় না৷

এটা আমার ফুপির বাসা কথাটা তুরাগ এর মাথায় বাড়ি খেল কয়েকবার। তার মানে ও যেটা ভেবেছে সেটাই। সেই ছোট্ট পিচ্চি তরু এখন এত বড় হয়ে গেছে। কিন্তু মেয়েটা ওদের বাসায় এসে হুট করেই ওর খাবার নিয়ে খবরদারি করতেছে কেন৷ তুরাগ এই মুহুর্তে কথা ঘুরাতে তরুকে উদ্দেশ্য করে বলল
– ওহ তুমি তাহলে ইন্সপেক্টর নুরুল ইসলাম এর আদরের দুলালি।

কথাটা বেশ গায়ে লাগল তরুর। এমন করে বলার কি আছে। একটু ভালোভাবেও তো বলা যায় নাকি। আস্ত খাটাশ একটা। কিন্তু এর উত্তরে তরুর কি বলা উচিত খুজে পেল না। তাই বলল
– দেখুন তুরাগ ভাই উনি আপনার মামা হন। এভাবে না বলে একটু ভালোভাবে ও তো বলা যায়।
– কি বললে মামা। হাহা। আমার কোন মামা নেই। আমার পথ থেকে সরো মেয়ে। এতক্ষণ যাবত কিছু বলছি না বলে বড্ড সাহস দেখাচ্ছো দেখছি। তুমি বোধহয় জানোনা আমার ইচ্ছের উপরে কারো ইচ্ছে খাটে না।

তরু মনে মনে বিড়বিড় করে বলে- বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে সে আবার এখন বড় বড় কথা বলে যে তার ইচ্ছের উপরে কারো কথা খাটে না। আমিও দেখব কতদিন এই ভাব থাকে। হুহ।
– আমাকে গা’লি দেয়া শেষ হলে সরে দাড়াও। নয়ত কোলে তুলে সামনে থেকে সরাবো।
– আপনি আমাকে তুলতে পারবেন নাকি হুহ। আমি অনেক হেভি।
তুরাগ তরুর পা থেকে মাথা অবধি একবার স্ক্যান করল। তারপর হো হো করে হেসে উঠল।

– উফ হাসতেছেন কেন আপনি।
– হাসব না। আমার সামনে জলজ্যান্ত ফিফটি কিলোর আলুর বস্তা দাঁড়িয়ে আছে যে কিনা নিজেকে হেভি মনে করে। এরকম চুনোপুটি আমি এক হাতে তুলে আছাড় মা’রতে পারি। তুমি দাড়াও আমি দেখাচ্ছি।
তুরাগ সত্যি সত্যি নিচু হয় আর তরু ভাবে তুরাগ হয়ত সত্যি সত্যি ওকে তুলবে৷ তাই লাফ দিয়ে সামনে থেকে সরে দাড়ায়। তুরাগ তরুর দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে উপরের দিকে হাটা ধরে।

তরু পুরো বোকা বনে যায়। ওকে সামনে থেকে সরানোর ট্রিক ছিল এটা তা ও বুঝতেই পারলো না।নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মা’রে। আর তুরাগ কেবলা মার্কা দাত গুলো বের করে তরুর দিকে তাকিয়েই উপরে উঠছে।
– উফফ তুরাগ ভাই এই ক্লোজআপ এর এড দেয়া বন্ধ করেন তো।

তরুর কথা শুনে তুরাগ এর হাসি অটোমেটিক অফ হয়ে যায়। মনে মনে বলে – কি বলল মেয়েটা। ও এতক্ষণ ক্লোজআপ এর এড দিচ্ছিল। ভালোই তো কথা জানে। দেখে তো মনে হচ্ছিল একদম ভদ্রের গোডাউন।
তুরাগকে উপরে আসতে দেখে সেখান থেকে সরে দাড়ায় নুর নাহার৷ এতক্ষণ উপর থেকে যে আরো এক জোড়া চোখ ওদের পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছিল এটা তরু তুরাগ কেউ ঘুনাক্ষরেও টের পায় নি। তুরাগকে উপরে আসতে দেখেই তিনি সরে দাড়ালেন সেখান থেকে।

নুরুল ইসলামদের মিশন এবারেও ফেইল করেছে। রা’গে নিজের মাথার চুল নিজেই টেনে ধরল নুরুল ইসলাম। তিনি আশাবাদী ছিলেন এবারে হয়ত কিছু একটা হবে। কিন্তু তা আর হলো কই। এই একটা কে’স তার মাথা খারাপ দিল। এই কেসটা নিয়ে কত রকম কত গবেষণা চলল। কিন্তু মেইন মাথা কে সেটাই তো এতদিন খুজে পাচ্ছিল না।

আসিফ এর দুঃসাহসিকতায় কিছুটা ইনফরমেশন পাওয়ায় আশার আলো দেখেছিল তারা। কিন্তু এবারও ধরতে ব্যার্থ। তবে আসিফ যে কথা বলেছে সেগুলো একদম ফেলে দেবার নয়। কেননা আসিফ জায়গাটার বর্ণনা যেভাবে দিয়েছিল জায়গাটা পুরোপুরি সেরকম। এখানে কিছুক্ষণ আগেও যে মানুষ ছিল সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। তবে পুলিশ ফোর্স আসার আগেই এখান থেকে সব কিছু সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আসিফ এর সাহসিকতায় এই ডেরার সন্ধ্যান পেলেও তাদের নতুন ডেরা সম্পর্কে কোন ইনফরমেশন ই তো নেই।

মাথার চুল দুহাতে আকড়ে একটা টুলে বসে পড়েছে নুরুল ইসলাম। এমন সময় মিলন সাহেব দৌড়ে আসলেন। এসে নুরুল ইসলাম এর সামনে দাড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগলেন তিনি।
– কি ব্যাপার মিলন কিছু পেলে।
– স্যার চারদিকটা খুজে দেখেছি। কোথাও কিছু নেই।
– কিন্তু এখানে ছিল আমি নিশ্চিত। এখানের পরিবেশ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানে অনেক জন লোক ছিল।
– জ্বি স্যার আপনি ঠিক বলেছেন।

নুরুল ইসলাম এই মিশন ড. আবির আহমেদ এর কথাটা তিনি এখানে পুরোপুরি চেপে গিয়েছেন। ড. আবির আহমেদ দেশের একজন নামকরা ডাক্তার। এভাবে কোন প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র আসিফ এর কথার ভিত্তিতে তার দিকে আঙুল তোলার কোন মানে হয় না। তার উপর তিনি এখনো শিওর না যে আসিফ ড. আবির আহমেদ এর ব্যাপারটা সত্যি বলছে কি না।

নাকি আসিফ নিজ ইচ্ছেতে অপরাধ করে অপরাধীর ট্যাগ থেকে বেচে যেতে আবির আহমেদ এর নাম ব্যাবহার করেছে সেটার কোন প্রুফ তো নুরুল ইসলাম এর কাছে নেই। তার জন্য এখন আগে প্রমাণ জোগার করা জরুরি। নুরুল ইসলাম ঠিক করেন এবার আগে তিনি সোর্স লাগাবেন ড. আবির আহমেদ এর পেছনে। চব্বিশ ঘণ্টা তাকে নজরবন্দী রাখলে হয়ত কোন ক্লু পাওয়া যাবে।

নুরুল ইসলাম সবাইকে আদেশ করে এখন এই জায়গা ত্যাগ করার জন্য। এখানে আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। এই কেসটা এত সহজে সলভ হওয়ার নয়। লোকগুলো ভীষণ ধূর্ত। তাদের ধরা এতটা সহজ নয়।
নুরুল ইসলামকে ফোর্স নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে আড়াল থেকে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলল একজন। এখানে পুলিশ আসবে সেই ব্যাপারে কোন ইনফরমেশন ই তারা পায় নি।

তবে রবিন যখন জানিয়েছিল যে তাদের মধ্যে থেকে রাফিন মিসিং তখন তো তারা ভেবেছিল রাফিন হয়ত পালিয়ে গিয়েছে। তাই রাফিন এর বাড়িতে খোজ লাগায়। কিন্তু দেখে রাফিন সেখানে নেই। তারপর যেখানে আসিফকে আটকে রাখা হয়েছিল সেখানে রাফিনকে ওরকম বিদ্ধস্ত অবস্থায় দেখে তাদের বুজতে বাকি ছিল না তারা তাদের গুটি ভুল জায়গায় চেলে ফেলেছে।

এতক্ষণে আসিফ নিশ্চয়ই পুলিশকে জানিয়েছে। এখানে পুলিশ এট্যাক হতে পারে অনুমান করেই তড়িঘড়ি করে সবটা সরিয়ে ফেলেছিল। নয়ত এতক্ষনে সবাইকে জে’লে থাকতে হতো। এরপর তৎক্ষনাৎ ফোনটা বের করে কাউকে ফোন লাগায়। জানায় – বস পুলিশ চলে গেছে। ফোনের অপরপাশে থাকা ব্যাক্তিটা একটা রহস্যমুলক হাসি দেয়। তারপর তিনি ফোনেই বলেন

ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ৯

– ড. আবির আহমেদকে এবার সরিয়ে দিতে হবে। কারণ ওর ভুলের কারণেই ওকে দেখে নিয়েছে আসিফ। এখন হয় আবিরকে সরিয়ে দিতে হবে নয়ত আসিফকে। যেকোনো একজনের মুখ বন্ধ করে দাও।

ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ১১