ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ৯

ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ৯
নীহারিকা নুর

হাত পা কে’টে একাকার অবস্থা হয়েছে আসিফ এর। উপরে ঢাকা সেই লতা পাতার সাথে ছোট ছোট ডালপালা ও ছিল যার কারণে হাত পায়ের এই অবস্থা হয়েছে। সেই মুহুর্তে যখন এপাশ ওপাশ দুইপাশের বের হওয়ার মুখ বন্ধ তখন বাচার শেষ চেষ্টা করতেই ঢাকনায় নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতে লেগেছিল এবং যার ফলে একটু ফাঁকা হয়েছিল। তা দিয়েই ঠেলেঠুলে বেরিয়েছে। হাত পা কে’টে রক্ত ঝড়ছে। সেদিকে খেয়াল নেই। জীবনটা বেঁচে গিয়েছে এই ঢের। আসিফ এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ ছিল। কিন্তু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে আজকের পর থেকে আর জীবনেও কোনদিন বলবে না ও এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ। ঢের শিক্ষা হয়েছে।

সেখান থেকে উঠে পা টেনেটেনে দৌড়াতে থাকে। একসময় জঙ্গলের শেষ মাথায় পৌছেও যায়। সেখানে বসেই নিজের পোশাক বদলে নেয়। গার্ড এর পোশাক সেখানেই ফেলে আসে। এখন একজন সাধারণ মানুষের বেশে বেরিয়ে আসে জঙ্গল থেকে। হাটতে হাটতে মেইন রাস্তায় পৌছে যায়। কিন্তু এখনো ভোরের আলো ফোটেনি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চারদিক নিস্তব্ধ। এই সময় কোন গাড়ি পাওয়াও সম্ভব না। কিন্তু এখানে বসে থাকাটাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না৷ তাই পায়ে হেটেই সামনে এগুতে থাকে।
বেশি সময় হাটা লাগে না। এর মধ্যেই দূর থেকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি কানে এসে লাগে। শব্দটা অনেক দূর থেকেই আসছে। বোঝাই যাচ্ছে এই জায়গা লোকালয় থেকে বেশ কিছুটা দূরে।

সাতটার দিকে অবশেষে একটা বাস এর দেখা মেলে। এটাই হয়ত স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা প্রথম বাস। এতক্ষণে হাটতে হাটতে অবশ্য অনেক দূরে চলে এসেছে আসিফ। আর কাল বিলম্ব না করে চড়ে বসে সেই বাসেই। এ জায়গা থেকে সরাসরি তাদের গ্রামে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। তাই এই বাস ধরে আগে ঢাকায় যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে আবার অন্য বাস ধরে গ্রামে পৌঁছাতে হবে।

এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সবটাই শুনলেন নুরুল ইসলাম। তারপর হালকা হাতে পিঠ চাপড়ে দিলেন আসিফ এর। আর বললেন
– সাবাস বেটা। এই না একটা কাজের মতো কাজ করেছো।
আসিফ আর কিছু বলে না শুধু তার ঠোটের কোনে একটু মুচকি হাসির রেখা ফুটে ওঠে।
নুরুল ইসলাম এত কিছু শোনার পরেও আবার জিজ্ঞেস করে
– আসিফ যা বলছ তুমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর তো? তুমি বোঝোই তো এত বড় একটা মিশন যদি সাকসেসফুল না হয় তাহলে উপর মহলের চাপ এসে আমার ঘাড়ে বর্তাবে।

আসিফ বলে আঙ্কেল আপনার সাথে মিথ্যা বলার মতো কিছু দেখছি না আমি। আমি নিজ চোখে যেটা দেখেছি সেটাই আপনাকে জানালাম। এখনো ওখানে অনেক গুলো মানুষ রয়েছে। তাদের জীবন বাচানো আপনাদের দায়িত্ব। এখন আপনারা যদি দায়িত্ব পালন না করে এড়িয়ে যান সেই দায় সম্পুর্ণ আপনাদের।
এর মধ্যে নার্স এসে কেবিনে ঢুকে। কথা বলতে বলতে আসিফ হাপিয়ে গেছে দেখে নার্স নুরুল ইসলামকে অনুরোধ করে
– স্যার আপনি একটু এখন পেসেন্টকে একা থাকতে দিন। ওনার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

নুরুল ইসলাম এর এতক্ষণে খেয়াল হয়। আসিফ এর সত্যিই অনেক কষ্ট হচ্ছে। নুরুল ইসলাম আর কথা বাড়ালো না। আসিফ এর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বেড়িয়ে গেলেন কেবিন থেকে।
তিনি তহমিনা বেগমকে বলে গেলেন এদিকে সবটা খেয়াল রাখতে। তহমিনা বাধ্য স্ত্রীর মতো মাথা নাড়ল।
নুরুল ইসলাম এর হাতে নষ্ট করার মতো আর একটা মুহুর্ত ও নেই। সেই মুহুর্তে ছুটলেন চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্য। এদিকে ফোনে যতটা সম্ভব কথা বলে মোটামুটি একটা টিম রেডি করলেন ড. আবির আহমেদ এর গোপন ডেরায় যাওয়ার জন্য।

প্রতিদিন সকালেই একটা জিনিস লক্ষ্য করে তরু। নুরনাহার প্রতিদিন ই সকালে নাস্তার টেবিলে চারজনের খাবার তৈরি করে। তিনজন খাবার খেলেও একজনের খাবার প্রতিদিন টেবিলেই থেকে যায়। দুপুর অবধি সেই খাবার সেখানে থাকে। তুরাগকে ততক্ষণেও নাস্তার টেবিলে দেখা যায় না। এমনকি সে তার রুমের দরজাও খোলে না।

দুপুর হলে সেই খাবার টেবিল থেকে সরিয়ে ফেলে নুরনাহার। দুপুরেও তুরাগ খেতে আসে না। তরুর ফুফা তখন কাজের তাগিদে বাহিরে থাকেন। তাই দুপুরের খাবারে তরু আর নুরনাহারই ডাইনিং এ আসে। তুরাগ তখন ও রুমের দরজা খোলে না। যখন ঘড়ির কা’টা ঠিক তিনটার ঘরে পৌছায় ঠিক সেই মুহুর্তেই তুরাগ এর রুমের দরজা খোলার শব্দ পাওয়া যায়। একদম পরিপাটি হয়ে বের হয়। আজও পান্জাবি পড়ে বের হয়েছে। ব্লাক জিন্সের উপর হোয়াইট কালার পান্জাবি পড়া। ব্লাক কালার ওয়াচ, ব্লাক সুজ, ব্লাক সানগ্লাস।

চুল গুলো স্পাইক করা। রুম থেকে বেরিয়ে সানগ্লাসটা হাতে ঘুরাতে ঘুরাতে এক নজর ড্রইং রুমে বসা মায়ের দিকে তাকাবে। কিন্তু কোন কথা বলবে না। সানগ্লাসটা হাতে ঘুরাতে ঘুরাতে বেরিয়ে যাবে। এই মুহুর্তে কোথায় যায়, এখন কি কাজ সেটাই বুজতে পারছে না তরু। বিগত কয়েকদিন এই একই রকম দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত তরু। যতটুকু বুঝল তুরাগ ঘরে খাবার ও খায়না আর কারো সাথে কথা ও বলে না। শুধু বাড়িতেে আসে আর এসেই নিজের রুমে ঢুকে যায়। আজ তরু আবার সাহস করে নুরনাহারকে জিজ্ঞেস করে

– ফুপি তুরাগ ভাই এই সময়ে কোথায় যায়?
– কোথায় আবার যাবে সামনে সিটি করপোরেশন এর নির্বাচন তার মিটিং মিছিল করতে যায়।
– কেন তোমার ছেলে মেয়র হবে নাকি।
– আরে নাহ। এবারের নতুন পদপ্রার্থী কালাম মোল্লার হয়ে জন সমর্থন আদায় করতে যায় আমার পুত্র। কালাম মোল্লার রাইট হ্যান্ড।

– কি বলো ফুপি। তোমার ছেলের সিঙ্গার থেকে পলিটিশিয়ান হয়ে গেছে। তোমরা কিছু বলো নি। ফুপা তো মনে হয় এসব পছন্দ করে না তাই না?
– তোর ফুপা, তোর বাবা কেউই এখন আর ওর সাথে কথা বলে না। আর না ও কারো সাথে কথা বলে। আমার একটা কথাও শোনে না। আর না আমার কোন কথার জবাব দেয়। চুপচাপ বাসায় আসে আবার বেরিয়ে যায়৷ তোর ফুপার এই একটা কথাই ও রাখে। সে বলেছিল যত যাই করো না কেন রাতে বাসার বাহিরে থাকবা না। তাই যত রাতই হোক না বাসায় ফিরবেই।

– আচ্ছা ফুপি হঠাৎ করে গান টা ছেড়ে দিল কেন তুরাগ ভাই। তার তো এত এত ফ্যান ফলোয়ার ছিল। আর আমি যতটুকু শুনেছি সিঙ্গার হওয়াটা তার শখ ছিল। আর তোমাদের বিরুদ্ধে এক প্রকার যুদ্ধ করেই এই প্রফেশনে গিয়েছিল তাহলে নিজের পছন্দের প্রফেশন থেকে কেন সরে আসল?
তরুর এমন প্রশ্নে মুখটা কালো হয়ে গেল নুর নাহার এর। তিনি এক প্রকার এড়িয়ে গেলেন প্রশ্নটা। তিনি বললেন
– সেটা ও ই ভালো জানে।

কিন্তু তরুর মনে হলো নুর নাহার ভেতরে ভেতরে কোন অপরাধ বোধে ভুগছেন। যেটা তিনি প্রকাশ করতে পারছেন না। তরু তাই এই প্রসঙ্গ পাল্টে আবার জিজ্ঞেস করল
– আচ্ছা ফুপি তুরাগ ভাই যে বাসায় কিছু খায় না এতে তোমার অনেক কষ্ট হয় তাই না।
তরুর কথা শুনে জোড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল নুর নাহার। কি বলবেন তিনি। কষ্ট তো অবশ্যই। নিজের ছেলে ঘরের মধ্যে থাকে অথচ তাদের সাথে এক টেবিলে বসে কখনো খাবার খায় না। তাদের গলা দিয়ে কি আর খাবার নামে। তবুও বেঁচে থাকার তাগিদে খেতে তো হবেই।

নুর নাহার এর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে এসব নিয়ে কথা বলতে। তাই তরু এখন আর কিছু জানতে চায় না। ও প্রথম দিন রাতেই ভেবেছিল এসব নিয়ে আর কথা বলবে না। তবুও কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করে বসেছে। এখন ফুপির মন ঠিক করতে বলে

– ফুপি তোমার তো এখন কোন কাজ নেই তাই না?
– না আপাতত নেই।
– চলো তাইলে আমরা একটা মুভি দেখি।
– কি আর করব। দেখ তুই।
– আরে তুমি ও দেখো। মন ভালো হয়ে যাবে।

টিভি টা অন করে দিয়ে আসে তরু। তরু বসেছে তো ফুপির সাথে মুভি দেখতে কিন্তু মন পড়ে রয়েছে অন্য জায়গায়। মনে মনে অনেক কিছু কিছু ভেবে ফেলেছে তরু। সে ঠিক করে নিয়েছে যেভাবেই হোক তুরাগ ভাইয়ের সাথে কি হয়েছিল সেটা জানবে। তারপর দেখতে হবে তিনি বাসায় কেন খায় না। তরু ঠিক করে ফেলেছে যে তুরাগ ভাই কে আবার আগের মতো করে তুলবে। কেননা তার জন্য ফুপিও কষ্ট পাচ্ছে। আর ফুপির কষ্ট তরুর সহ্য হচ্ছে না।

আসার পর থেকে কেমন যেনো অন্য মনষ্ক হয়ে আছে তুরাগ। বিষয়টা অনেক ক্ষণ যাবত লক্ষ্য করছে প্রান্ত। অনেক ক্ষণ যাবতই প্রান্ত ভাবছে কথা বলবে তুরাগ এর সাথে। কিন্তু সেই ফুসরত আর কোথায়। আসার পর থেকেই এই কাজ, সেই কাজ একটার পর একটা লেগেই আছে। আজ আবার কালাম মেল্লা মিটিং ডেকেছিল।

সামনের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করার জন্য। সেটা গুছাতে গুছাতেই প্রান্ত এক প্রকার হাপিয়ে গেছে। আজ তুরাগটাও কেমন দম মে’রে বসে আছে। তার কাজও আজ প্রান্তকেই করতে হচ্ছে। কালাম ভাই যদি কিছু উল্টা পাল্টা দেখে তাহলে এসে প্রান্তর উপরেই চেচাবে। কারণ সে তুরাগকে কিছু বলে না৷ তুরাগ যা জিদ্দি। কিছু বললে না আবার এখানেও আসা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কালাম ভাই তুরাগ এর মতো একটা মানুষ কোন ভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না৷

তাই যত ঝড় ঝাপটা প্রান্তকেই সহ্য করতে হবে। কালাম ভাই চলে গেছে বেশ কিছুক্ষন হলো। তুরাগ এক কর্নারে একটা চেয়ার পেতে বসে আছে। আর গভীর চিন্তায় মগ্ন সে। কি যে ভাবছে তা এই মুহুর্তে বোঝা মুশকিল। প্রান্ত এদিকটা মোটামুটি ভাবে সামলে নিল। তার সাথেই ছিল রাহাত। রাহাতকে বলল সবার জন্য নিচ থেকে চা নিয়ে আসতে। প্রান্তের বলতে দেরী কিন্তু রাহাত এর ছুট লাগাতে দেরী হয় নি। সে যেন এটার জন্যই অপেক্ষা করতে ছিল। যেভাবে দৌড়ে গিয়েছিল আবার সেভাবেই চায়ের ফ্লাক্স হাতে দৌড়ে আসল রাহাত। প্রান্ত ভ্রু কুচকে একবার রাহাতের দিকে তাকাল।

– কি রে মাত্র না গেলি চা আনতে এর মধ্যে আসলি কীভাবে।
– আসলে আগেই ফোন দিয়ে চা রেডি করতে বলেছিলাম।
– সাবাস। ভালোই উন্নতি হয়েছে বুদ্ধির। এখন শোন দুই কাপ ঢেলে আমাকে আর তুরাগকে দে। বাকিটা তোরা ভাগ করে নিয়ে নে।

– আচ্ছা ভাই।
প্রান্ত দুই কাপ চা নিয়ে এসে একটা চেয়ার টেনে তুরাগ এর পাশে বসল। তুরাগ এর সামনে চায়ের কাপ ধরল। কিন্তু তুরাগ চায়ের কাপ নিল না। সে বাহিরের এসব কিছু দেখছে না। কি চিন্তায় যেন মগ্ন। প্রান্ত চায়ের কাপটা নিচে রেখে তুরাগ এর কাধে ধাক্কা দিল। কাধে ধাক্কা লাগতেই ধরফর করে উঠে এদিক ওদিক তাকালো তুরাগ। তারপর সামনে প্রান্তকে দেখে চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকাল।

– আরে ভাই এভাবে তাকাচ্ছিস কেন। আমি কিছু করি নাই। চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তাই ডাক দিছি নয়ত দিতাম না হুহ।
তুরাগ আর কথা না বাড়িয়ে চায়ের কাপটা হাতে নেয়। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে প্রান্ত জিজ্ঞেস করে
– তুরাগ একটা প্রশ্ন করব?
– যে কয়টা মন চায় কর। তবে চা শেষ হওয়ার আগেই প্রশ্ন শেষ করবি।
– হুম। আচ্ছা ভাই তোর হয়েছে কি আমাকে একটু বলবি।
– আমার আবার কি হবে।

– কিছু তো একটা হয়েছে। আসার পর থেকে দেখছি কেমন অন্য মনষ্ক হয়ে আছিস। কিছু একটা ভাবছিস। কি ভাবছিস সেটাই জানতে চাচ্ছি। লুকানোর চেষ্টা করে লাভ নেই। আমি তোকে খুব ভালো করেই বুঝতে পারি। তাই অন্তত আমার কাছে লুকোস না।
তুরাগ আরেক বার চুমুক দেয় চায়ের কাপে। তারপর চোখ বন্ধ করে নেয়। একটা জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলে
– জানিস প্রান্ত সেই চোখ জোড়া না আমি আবার দেখেছি। একদম অবিকল সেই চোখ জোড়া।
– সেই চোখ মানে।

– তোর মনে নেই। তিন বছর আগে ঢাকার বাহিরে একটা কলেজে কন্সার্টে গিয়েছিলাম। সেখানে দর্শক সারিতে বসা সেই মায়াবি চোখ জোড়া মনে হলো আমি আবার দেখেছি। শুধু একবার না। অনেক বার। আমি যে কয়বার তার সামনে গিয়েছি সেই কয়বার আমি তার চোখের দিকে তাকিয়েছি। অবিকল সেই চোখ জোড়া মনে হচ্ছে আমার সামনে।
তুরাগ এর কথা শুনে প্রান্ত বসা থেকে দাড়িয়ে গেল। তারপর একটু জোড়েই বলল
– কিহহহ।

প্রান্তর এভাবে রিয়াক্ট করায় তুরাগ আবারও চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। সেটা দেখে প্রান্ত সাথে সাথে আবার চেয়ারে বসল।
– এভাবে দাড়ালি কেন?
– তো কি করব। যে নিউজ তুই শুনালি ভাই সেই নিউজ আমাকে বসা থেকে দাড় করিয়ে দিয়েছে। কি বলছিস ভাই তুই। সেটা কীভাবে সম্ভব।

– সম্ভব বলেই বলছি। মেয়েটা আমাদের বাসায় এসেছে। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না ও কে। বাসার কারো কাছেও জিজ্ঞেস করতে পারছি না। তবে আমার মনে হচ্ছে আমি ওকে খুব ভালোভাবে চিনি৷ এখন মনে করতে পারছি না কে ও। তবে আমার মনে হচ্ছে আমার মামার একটা মেয়ে ছিল এটাই সে। অনেক বছর গ্রামে না যাওয়ায় ঠিক চিনতে পারছি না৷ তবে অনুমান করছি।

– কিন্তু সেই চোখ অবিকল। কেমনে ভাই।
– আই ডোন্ট নো। বাট আমি অনেক বার দেখেছি।
– তুই আগে দেখ মেয়েটা কে।
– হুম।

আজও সব কাজ গোছাতে গোছাতে দেরী হয়ে গেছে তুরাগদের। বাইকটা রেখে আজ প্রান্তের বাইকে করে এসেছে তুরাগ। প্রান্ত ওকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে সে চলে গেছে। তুরাগ তো বাসার ভিতর ঢুকছিল আর ভাবছিল আজও বুঝি বেলকনি টপকে ঢুকতে হবে। কিন্তু বাসার সামনা সামনি এসে আজও সেই দৃশ্য। ড্রইং রুমের লাইট এখনো অন করা। যদিও অন্য সব রুমের লাইট অফ। শুধু ড্রইং রুমের লাইট টা অন করা৷ তুরাগ মনে মনে কিছু টা খুশি ও হয়।

যাক আজ তাহলে কষ্ট করে বেলকনি টপকাতে হবে না৷ মেইন ডোর ও লক করা না। খোলাই আছে। প্রান্ত মেইন ডোর দিয়েই বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। ড্রইং রুমে প্রবেশ করে আগে নজর বোলায় সোফার দিকে। না সেখানে কেউ নেই। এরপর নজর যায় দোতলায় ওঠার সিড়ির দিকে। সেইখানেই বসে আছে তরু। হাতে একটা বই। দেখে মনে হচ্ছে ইন্টার এর বোটানি বই৷ তুরাগ মনে মনে বলে

ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ৮

– এতো দেখি পিচ্চি মেয়ে। এই মেয়ে এখনো জেগে এখানে বসে আছে কেন?

ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ১০