মধুমাস পর্ব ২৯

মধুমাস পর্ব ২৯
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

শ্যামা নিঃশব্দে আবার তার রুমে ফিরে যায়,শ্বাস আটকে রেখে তার মায়ের কাছে শুয়ে পড়ে।মোবাইলটা বন্ধ করে বালিশের কাভারের ভেতরে রেখে দেয়।চোখ বন্ধ করে ফিরোজকে অনুভব করে,ফিরোজ;তার স্বামী।শ্যামার মনে হয় ফিরোজের হাতের মৃদু ছোঁয়া,তার গায়ের পুরুষালি শক্ত ঘ্রাণ শ্যামার গায়ে আষ্টেপৃষ্টে লেগে আছে,শ্যামা দম ভরে শ্বাস নেয়।

তাদের বিয়েটা যদি স্বাভাবিক ভাবে হলে এখন সে ফিরোজের বুকে থাকতো,ফিরোজের পাগলামির সামিল হতো।ফিরোজের পাগলামির কথা মনে হয়ে শ্যামা লজ্জা পায়,এই ছেলে যে তার জন্য এতো পাগল হবে তা সে আগে বুঝেনি।ফিরোজের দুষ্টু আদর,মিষ্টি ছোঁয়া তার অশান্ত হৃদয় শান্ত করে।চোখ বন্ধ করে বৃথা মনের অভিলাষে ফিরোজকে জড়িয়ে ধরে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভাগ্যিস কেউ দেখেনি,দেখলে আজকে একদম মে,রেই ফেলতো।
ফিরোজ চুপচাপ বাড়ি আসে,ভেতরের সত্তা হাফসাফ করছে,যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে,আর কিছুক্ষণ থাকলে একটু শান্তি লাগতো কিন্তু এতো রিক্স নিয়ে থাকার কোনো মানে হয় না।কেউ দেখলে হয়তো তাকে কিছু বলবে না কিন্তু শ্যামার উপর দিয়ে তুফান যাবে,সে চায়না শ্যামা বিপদে পড়ুক।ফিরোজ বাড়ি ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।শ্যামা,তার বউ।ফিরোজ ঘুমানোর চেষ্টা করে কিন্তু চোখ বন্ধ করলেও শ্যামা তার চোখের পর্দায় ভেসে উঠে।ফিরোজ ছটফট করে,বাকিটা রাত ঘুমাতে পারে না,ভোরের দিকে সদ্য বিবাহিত পুরুষ বউ না পাওয়ার যন্ত্রণা ভুলে চোখে ঘুম নেমে আসে।

ফিরোজ এখনো মোহাম্মদ আলীর সাথে কথা বলেনা।বিয়ের এক পনেরো দিন চলে গেছে ওই যে প্রথমদিন মেয়েটার সাথে দেখা হলো আর একবারও দেখা হয়নি,যদিও রাতে সামান্য মেসেজ আদান প্রদান হয় কিন্তু এইটুকু মেসেজে কি মন ভরে?মন তো পাগলপারা তার চাওয়া আরেক রকম,পাগলাটে,ক্ষাপাটে রুদ্ররূপ ধারন করতে সে মরিয়া।শ্যামাকে বিয়ে করার পর থেকে দেহ মন তাকে ফুসলিয়ে যাচ্ছে,কাছে পাওয়ার তীব্র বাসনায় অন্তর ক্ষ,ত,বি,ক্ষ,ত হচ্ছে তাইতো আর দেখা করতে যায়নি,যেহেতু দেহ মন জেনে গেছে শ্যামা পুরোপুরি তার তাই আদুরে মেয়েটাকে কাছে পেলে সে দিশা হারায়,নিজের ভারসাম্য হারানোর যোগার হয়।তুলতুলে মেয়েটাকে একেবারে বুকের ভেতরে নিয়ে যেতে সাধ জাগে।পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার জন্য দেখা না করাই ভালো।

এই পনেরো দিন দেখা না করার আরেকটা কারণ হলো কাজের চাপ খুবই বেড়ে গিয়েছে,এমপি মহোদয় নতুন একটা দায়িত্ব তাকে দিয়েছে,ফিরোজ কাজটা সুনিপুণ ভাবে করার চেষ্টায় আছে।কয়েকটা ছেলে তার নাম করে দোকানীদের হু,মকি ধা,মকি দিয়ে টাকা উঠাচ্ছে এই সমস্যাটাও সমাধান করতে হবে,তাছাড়া এগুলোর চেয়ে বড়ো যেই সমস্যাটা তা হলো শ্যামার পরিবারের খুঁজ রাখা উনিশ বিশ হলেই যেকোনো পদক্ষেপ নিতে হবে।ফিরোজ চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে, বউটাকে দেখতে এতো ইচ্ছা করছে।

মোহাম্মদ আলী ছেলের এই নিশ্চুপতা দেখে ভাবেন শ্যামার ভুত বুঝি মাথা নেমে গিয়েছে,কিন্তু ছেলে অভিমানে আছে, এখনো উনার সাথে কথা বলছে না।এখন আর হোটেলেও আসে না বাড়িতে ঠিকঠাক ভাত খায় না।উনি চিন্তা করেন যেহেতু ছেলে আর শ্যামার কথা বলছেনা তাহলে উনিও তুলবেন না।শ্যামার বিয়ের পরে না হয় ফিরোজকে বিয়ে করানোর ব্যাপারটা দেখা যাবে।মানুষের থেকে শুনতে পান প্রতিদিনই শ্যামাকে দেখতে আসছে।

স্বপন ইসলাম হতাশ হয়।বিষন্ন মুখে দরজায় বসে আছে।শ্যামাকে প্রতিদিন একটা দুইটা পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে কিন্তু একটা পাত্রপক্ষও শ্যামাকে পছন্দ করছে না,অথচ অপছন্দ করার মতো মেয়ে শ্যামা না তারপরও কেনো যে অপছন্দ করছে তার কারণটাই কেউ খুঁজে পাচ্ছে না।কতো ভালো ভালো সমন্ধ আসে দেখে যাওয়ার পরে কি হয় যে জানে উনাদের থেকে উত্তর না ই আসে।স্বপন ইসলাম চিন্তা করে দেখে শ্যামা এখন বেশ শান্ত, ওইদিনের পর থেকে আর একবারও ফিরোজের নাম মুখে নেয়নি কিংবা ফিরোজও আর আসেনি, দুজন হয়তো বুঝে গিয়েছে তাদের মিল সম্ভব না তাই দূরে সরে গিয়েছে।এদিক থেকে স্বপন ইসলাম খুশীই হয় কিন্তু উনি নিশ্চিত হতে পারছেনা।স্বামীর কথা মতো ফাতেম বেগম মেয়ের রুমে যায়।

“শ্যামা।”
শ্যামা তখন টেবিলে বসে ছিলো।মায়ের ডাকে উনার দিকে তাকায়।
“সত্যি কথা বল তো।”
“কি কথা আম্মা?”
“ফিরোজের সাথে তুই কথা বলিস?”
“কিভাবে কথা বলবো?”
“তুই কি আসলেই কোনো যোগাযোগ রাখিস না?”
“আশ্চর্য! আম্মা তোমরাই তো চাও যেনো যোগাযোগ না রাখি এখন এসব বলছো কেনো?”
“এমনি বলেছি।তাহলে আমাদের কথামতো বিয়ে করতে তোর কোনো আপত্তি নেই।”
শ্যামা মুচকি হেসে বললো,

“না নেই।”
মেয়ের মুখে মুচকি হাসি সমেত এমন উত্তর শুনে ফাতেমা বেগম আসস্ত হয়ে চলে যায় কিন্তু বিয়ে গুলো কেনো ভেঙ্গে যাচ্ছে সেটাই ভাবে।
শ্যামা বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়।কথাগুলো বলতে যদিও কেমন লাগছিলো কিন্তু ফিরোজের কথামতোই সব বলেছে।শ্যামা উঠে দাঁড়ায়,চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ে।পনেরো দিন হয়ে যাচ্ছে প্রিয় মানুষের মায়াভরা নেশালু চেহারাটা দেখা হচ্ছে না,আদর নিয়ে ছুঁয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

শ্যামা নিজেও জানে ফিরোজ কেনো আসে না কিন্তু অবুজ মনটা যে বেশামাল আবদার করে,মনের সুক্ষ্ম দেয়াল চিকন কাঠি দিয়ে খুচিয়ে ভাঙ্গতে চায়।ফিরোজের কাছে যাওয়ার ইচ্ছায় সারা শরীরে শিহরণ বয় ছটফটিয়ে উঠে তনুমন,আহা একি উদ্দম যন্ত্রনা।শ্যামা অবশ্য নিজের এই নতুন অসুখের কথা ফিরোজ নামের প্রনয়পুরুষকে বলেনি,আগুনে ঘি ঢালার ইচ্ছে তার নেই, পরিস্থিতি বুঝতে হবে।সব ঠিকঠাক হলে কাছে আসা সময়ের ব্যাপার মাত্র,এর জন্য দুজনকেই ধৈর্য ধরতে হবে।ফিরোজ প্রতি রাতে আদুরে বাক্যবাণে শ্যামাকে জর্জরিত করে দেয়।এসব ভাবতে ভাবতে শ্যামা ঘুমিয়ে পড়ে।

মধ্যরাতে শ্যামার ঘুম ভাঙ্গে।মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে উনি ঘুমাচ্ছে।সে মোবাইল অন করে সময় দেখে,দুইটা পাঁচ।আজকে ফিরোজের সাথে কথা বলা হয়নি।দ্রুত ফিরোজকে ফোন দেয়।
আর তাকে অবাক করে দিয়ে সাথে সাথেই ফোন রিসিভ হয়।

ফিরোজ হেসে বললো,
“কি ঘুমিয়ে গিয়েছিলে?”
শ্যামা দ্রুত হাতে লেখে,
“আমি দেখবো।”
“ভিডিও কল দেবো?”.
” না এমন দেখা না,ছুঁয়ে দেয়ার মতো দেখা।”
ফিরোজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“কি হয়েছে মধুরানীর?”
“আসবেন না?”

“আসছি।পাঁচ মিনিট পরে বের হয়ো।”
শ্যামা পাঁচমিনিট পরে বেরোয়।ফিরোজ উঠোনের কোণে বড়ো বড়ই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে।শ্যামা আশেপাশে তাকিয়ে দ্রুত সেদিকে যায়।দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে,ফিরোজ মাথায় চুমু দিয়ে বললো,
“বেশী মিস করছিলে?”
শ্যামা মাথা নাড়ে।ফিরোজ বুকে জড়িয়ে বললো,
“আমিও।”

“তাই ঘুমাননি?”
“ঘুম আসছিলো না,তোমার কাছে আসার তীব্র ইচ্ছা হচ্ছিলো।”
শ্যামা ফিরোজের মাথাটা টেনে নিজের দিকে এনে চুমু দেয়।নাকে চুমু দিয়ে হাসে। ফিরোজের শ্বাস ঘন হয়,গভীর গলায় বললো,

মধুমাস পর্ব ২৮

“শ্যামা,পাখিটা। আমার বাড়ি চলো তো।বউ ছাড়া থাকা অসম্ভব।”
“এতোদিনে তা মনে হলো?”
“আগে তো এই যন্ত্রণা বুঝি নি।”

মধুমাস পর্ব ৩০