মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ১১
Tahrim Muntahana
তোড়জোড় চলছে তিন বাড়িতে। বাড়ির সামনে কয়েকটা বাস এসে অপেক্ষা করছে। যাত্রীরা চেপে বসলেই ছুটতে শুরু করবে। কেটে গেছে দু’দিন। আজকে সবাই রিসোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। তারই গোছগাছ চলছে। আদর-আতইয়াব বাড়িতে নেই। আত্মীয় স্বজনে বাড়ি ভর্তি তাদের। আতইয়াবের নানাবাড়ির গোষ্ঠী সকালে এসে উপস্থিত হয়েছে।
তাদের কেই ঘুরে ঘুরে দেখছে রামিয়া। এক ঝাঁক মানুষ দেখে তার বিষ্ময়ের সীমা নেই। সে ভেবেছিলো কয়েকজন আসবে কিন্তু এখন তো সে নিজেই দাঁড়ানোর জায়গা পাচ্ছে না। আতইয়াবের দুই মামা দুই খালা; নানা গত হয়েছে কয়েক বছর হলো। তার মধ্যে এক মামা আর খালা পরিবার নিয়ে উপস্থিত হলেও নানি আর এক মামার পরিবার আসেনি। রাস্তায় আছে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
তারা আসলেই রওনা হবে। আতইয়াবের বন্ধুরা ছাদ দখল করে বসে আছে; আর কাজিন গোষ্ঠী সারা বাড়ি ঘুরঘুর করছে আর হাসাহাসি করছে। রামিয়াকে সেভাবে কেউ পাত্তায় দিচ্ছে না। বড়আম্মুও মেহমান নিয়ে ব্যস্ত তাই রামিয়া নিজের ঘরে চলে গেল। ভালো লাগছে না বলেই বই নিয়ে বসলো। কয়েকটা দিন মিস যাবে তাই আগে থেকে কভার করে রাখলে ভালো হয়!
চৌধুরী বাড়িতে তেমন উৎসব মুখর পরিবেশ না হলেও কম না। মৃহান-হৃদানের বন্ধুরা , নাবিল চৌধুরীর কিছু বন্ধু তাদের পরিবার নিয়ে চলে এসেছে। মৃহান কে বাড়িতে রেখে হৃদান গিয়েছে অফিসে। তাড়াতাড়িই চলে আসবে। এত এত কাজ দম ফেলার সময়টুকু যেন নেই। এর মধ্যেও প্রেয়সী কে সে সময় দিয়েছে।
নাবিল চৌধুরী খোশমেজাজে কর্মচারীদের ডিরেকশন দিচ্ছে। তার মনের মধ্যে দু’ধরনের অনুভূতি। একেতো ছেলে বিয়ে করে আরেক মেয়েকে ঘরে তুলবে আরেকদিকে মেয়েটা পরের ঘরে চলে যাবে। বুকের ভেতর হঠাৎ করেই সুখ সুখ লাগে আবার হঠাৎ করেই হু হু করে উঠে। অন্যদিকে সুবাহ’র বাড়িতে এলাহি কারবার। চাচা, মামা, খালা, ফুফু’রা পরিবার সমেত আগেই চলে এসেছে। আজ যেন পরিবারের সকলের মিলন মেলা বসেছে। হাসিঠাট্টা আড্ডা কাজ সবমিলিয়ে সুবাহ’র মনে সুখের বাতাস বইছে। এত বছরের ভালোবাসাকে আপন করে পাবে এর থেকে আনন্দের কি আছে!
মন দিয়ে পড়ছিলো রামিয়া। হঠাৎ পিপাসা পেতেই উঠে দাড়ায়। আলসেমি করে পানি আনা হয়নি এখন আবার নিচে যেতে হবে। ব্যস্ত পায়ে মামপট নিয়ে বের হয় সে। ড্রয়িংরুমে কাউকে না দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিছুটা পানি খেয়ে মামপটে পানি ভরে জলদি পায়ে উপরে চলে আসে।
আতইয়াবের বড়মামার মেয়েটার নাম পিয়ানি। অর্নাস ফাইনাল ইয়ার পড়ে। কয়েকজন কে নিয়ে ঘুরাঘুরি করছিলো সে। ফ্রক পড়া মেয়ে কে একটা ঘরে যেতে দেখে ভ্রু কুচকায়। মেয়েটাকে আগে দেখে নি তো। কৌতুহল নিয়ে সরাসরি ঘরে ঢুকে পড়ে। রামিয়া খানিকটা বিব্রত হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। পরক্ষণেই মেহমান বলে মিষ্টি হেসে বলে,
আপু কিছু বলবেন? কোনো সমস্যা? আমাকে বলতে পারেন!
রামিয়ার কথার ধরণ পিয়ানির ভালো লাগে না। তার উপর ছোট্ট একটা মেয়ে তবুও রূপের শেষ নেই। হিংসে হলো পিয়ানির। কাটকাট করে বলল,
এই মেয়ে কে তুমি? এখানে কি করছো? তোমাকে তো আগে দেখি নি।
রামিয়ার খানিকটা খারাপ লাগলেও হাসি বজায় রেখে বলল,
আমি রামিয়া আহ,,,
রামিয়াকে বলতে না দিয়েই আরেকজন বলে উঠলো,
চুরি করতে আসোনি তো?
মোলায়েম চোখের দৃষ্টিটা তীক্ষ্ম হয়ে যায় রামিয়ার। সে হাসি মুখে কথা বলছে অথচ ছেলে-মেয়ে গুলো কেমন করে কথা বলছে। সে বুঝলো আদরের দুলালিরা তার সাথে মজা নিতেই এসেছে। দাঁড়িয়ে না থেকে বিছানায় বসে পড়ে। কোলের উপর বই নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
আমার বাড়ি আমার ঘর আমি থাকবো না তো কি নরেন্দ্র মোদী থাকবে?
ফিক করে হেসে উঠে একটা মেয়ে। পিয়ানি চোখ রাঙিয়ে চাইতেই মুখে হাত চেপে ধরে। রামিয়া আবার ভাবালেশ বলে উঠে,
কাউকে না জেনে না চিনে কমপ্লিমেন্ট করবেন না। আমার পরিচয় যার বিয়েতে এসেছেন তার কাছে জেনে নিবেন এখন আমি পড়ছি। সো প্লিজ!
দরজার দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে দেয় রামিয়া। কিছু কিছু মানুষ অবাক হলেও আর সবাই রাগ নিয়ে বের হয়ে যায়। পিয়ানিরা চলে যেতেই রামিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ভালো ব্যবহার কিছু কিছু মানুষের কাম্য নয়। মন খারাপ করে পড়তে থাকে।
গাড়ি ড্রাইভ করছে আদর। সে কাজের মধ্যে ভুলেই গিয়েছিলো বাড়িতে তার বোন একা রয়ে গেছে। মানুষ দেখে ঘর থেকে বের হবে কিনা সন্দেহ। খাইনিও মনে হয়; সে যে খেয়েছে এমন না। আতইয়াব ভোর ছয়টায় বেরিয়ে গেছে বলে আদর নিজেও না খেয়ে তাড়াতাড়ি অফিস চলে গেছে। রামিয়া যেন খেয়ে নেয় ফোন করেছিলো মেয়েটি উত্তর দেয় নি। তারই ভুল হয়েছে এভাবে একা রেখে আসা উচিত হয়নি।
আদর গাড়িটা পান্চুদের বাড়ির সামনে দাঁড় করালো। দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কান্চু। হাতে ব্যাগ। আদর কে দেখেই গাড়িতে বসে ক্লোজ আপ হাসি দিয়ে মাথা চুলকায়। কান্চুর কাজে আদর ও একটু হাসে। কান্চু খুশিতে গদগদ হয়ে কিছু বলবে তার আগেই ঠুসস করে শব্দ হয়। কান্চুর মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। আদরের সামনে আসার আগেই কয়েকটি পাদ মেরে এসেছে যাতে আদরের সামনে শুভ কাজটা না হয় কিন্তু পাদ তার কথা শুনেনা। আদর চোখ রাঙিয়ে ইশারা করে চুপ থাকতে। কান্চূ ছলছল নয়নে হাসি মাখা বদনে টাইপ মুখ করে বসে থাকে।
হসপিটাল থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হচ্ছে আতইয়াব। তার অনুপস্থিতিতে দুটো ডক্টর সেট করে সপ্তাহ খানিক ছুটি নিয়েছে। তাড়াহুড়োর কারণ হলো বাহাদুর তাকে ফোন করে জানিয়েছে তার মেম খায়নি। অনেকবার সে বলেছে বিনিময়ে চোখ রাঙানি ছাড়া কিছুই জুটেনি। তাই তাড়াতাড়ি করা। কি একটা মনে করে কানে ব্লোটুথ লাগিয়ে হৃদান কে ফোন দেয়। তার কিছু বিষয়ে আলোচনা করার আছে। নিজের কেবিনে চোখের উপর হাত রেখে সোফায় শুয়ে আছে হৃদান। শরীর খানিকটা খারাপ করছে। হঠাৎ ফোন আসায় উঠে বসে। বাড়িও ফিরতে হবে তাকে। মি. ডক্টর নামটা দেখে আদর প্রচন্ড রকমের অবাক হয়। ঝটপট করে ফোন তুলতেই আতইয়াব বলে উঠে,
মি. মডেল বাবাকে নিয়ে আপনার সাথে কিছু কথা বলার ছিলো।
হৃদানের চোখ মুখে কৌতুহল ফুটে উঠে। আতইয়াব হৃদানের সম্মতি নিয়ে জেলে দেখা করার ঘটনা খুলে বলে। হৃদান অবাক হয় না। শান্ত কন্ঠে বলে উঠে,
আপনার বাবা আমার কাছে ডক্টর!
চমকে গাড়ি থামিয়ে আতইয়াব। ভয়ে ঢোক গিলে। হৃদান বুঝতে পারে বিষয়টা তাই আগেই আশ্বস্ত করে বলে উঠে,
চিন্তিত হবেন না। আপনার বাবা সুরক্ষিত আছে। আপনাকে সব বলতে পারবো না এখন; আমার কাছে তেমন প্রমাণ ও নেই। শুধু বলবো আপনার বাবা মানুষটা আপনাদের থেকেও বেশী ভুক্তভোগী ডক্টর।
আতইয়াবের চাহনী উচ্ছাস ফুটে উঠে। সেদিনের কথার গুলোও তার কেমন লেগেছিলো। সে খুব করে বাবা কে কাছে চায়। হৃদান দুম করে বলে উঠে,
আমি চাই আপনার বিয়ে তে উনি উপস্থিত থাকুক। আর পারলে এখনই কেস টা তুলে নিন সব ব্যবস্থাই আমি করে রেখেছি। আমি নিজেই আপনার আর আদরের সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে চেয়েছি তার আগেই আপনি ফোন দিলেন।
আতইয়াবের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে। চোখ দুটো ছলছল করে উঠে নিমিষেই। নিজেকে সংযত করে বলে উঠে,
কি করতে হবে আমাকে?
আপনি থানায় ফোন দিয়ে শুধু বলেন হৃদান চৌধুরীর কথা মতো কাজ করতে। আর কিছুই করতে হবে না আপনার। আমি মি. আহমেদ কে নিয়ে আসছি। বাই!
আতইয়াব কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারলো না। বিয়ের খুশিটা সে ঠিক মতো নিতে পারছিলো না। বাবাকে সে একটু বেশীই ভালোবাসে। তৎক্ষণাৎ থানায় ফোন দেয়।
হৃদানের কথা মতো সব বলে ছুটতে থাকে বাড়ির দিকে। খুশি যেন ধরে না আজকে! আদর বাড়িতে এসেই দৌড়ে ভেতরে চলে যায়। গিয়েই তার মুখ বিষ্ময়ে হা হয়ে যায়। এত মানুষ! ড্রয়িং রুমে বড়রা বসে আছে বলে সালাম জানায় সবাইকে। মিসেস রাজীব আহমেদ সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আদর আর উপরে যাওয়ার সুযোগ হয় না। মুখে মেকি হাসি নিয়ে কথা বলতে থাকে। কান্চু আগেই উপরে চলে গেছে। এর আগেও সে এই বাড়িতে এসেছে তাই সমস্যা হলো না। তখনই হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করলো আতইয়াব। কোনো দিক না তাকিয়েই আদরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
এখনো খাওনি কেন? আমি খেয়ে যেতে বলেছিলাম?
আদর মাথা নিচু করে নেয়। আতইয়াব বিরক্ত হয়ে কাজের মেয়েকে ডেকে খাবার আনতে বলে সোফায় বসে পড়ে। সামনে তাকিয়ে মামাদের সাথে কুশল বিনিময় করে নেয়। আদরের প্রতি এত দরদ দেখে আতইয়াবের ছোট খালা মুখ বেঁকিয়ে চলে যায়। আতইয়াব লক্ষ্য করলেও পাত্তা দেয় না। কি দরকার! এক দিনেই তো মানুষের মনোভাব পাল্টানো যায় না।
আতইয়াব একজনকে পাঠায় রামিয়াকে খবর দিতে। অন্যদিকে আতইয়াবের কথা শুনে পিয়ানি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে। তার ভাই নেই বলে আতইয়াবকে প্রচন্ড ভালোবাসে ভাই হিসেবে। এসেই খোঁজ করেছিলো! আতইয়াব ও মুচকি হেসে কথা বলতে শুরু করে। কথা বলার একপর্যায়ে পিয়ানি অভিযোগ করে বলে উঠে,
ভাইয়া জানো আজকে একটা মেয়েকে অপমান করেছে আমাদের। ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে।
আতইয়াব ভ্রু কুঁচকে অভিযোগ শুনে। কে ওদের অপমান করবে। বাইরের লোক তো তেমন নেই। ভাইয়া-আপু আসার খবর পেয়ে রামিয়া দৌড়ে নিচে নামে। খিদে পেয়েছে খুব। রামিয়া কে দেখেই পিয়ানি মৃদু চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
এই যে এই অসভ্য মেয়েটা!
আদরের চোখ রাগে লাল হয়ে যায়; এমনকি আতইয়াব ও পিয়ানি কে কোল থেকে উঠিয়ে দেয়। রাগ হলেও ঠিকমতো দেখাতে পারবে না সে জানে তবে সহ্যও করবে না। পিয়ানির অসভ্য বলায় রামিয়ার চোখ ছলছল করে উঠে। অনেকদিন পর গালি শুনলো। আতইয়াব একপলক ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে কাটকাট করে বলে উঠে,
অসভ্য বলিস না পিয়ানি। ঘর থেকে কেন বের করে দিয়েছে?
আতইয়াবের এমন গলা শুনে পিয়ানি অবাক হয়। আরেকজন মেয়ে পাশ থেকে বলে উঠে,
ভাইয়া মেয়েটার কোনো দোষ নেই। মেয়েটিকে ঘরে ঢুকতে দেখেই পিয়ানি আপু ওরা গিয়ে জিজ্ঞেস করে। মেয়েটা ভালো ভাবেই কথা বলছিলো কিন্তু সাজিদ ভাইয়া চোর বলে। তখনি আপুটা বলে নিজের ঘরে আর কে থাকবে। আর আমাদের বের হয়ে যেতে বলে কারণ সে পড়ছিলো। তোমার কাছ থেকে তার পরিচয় নিতে বলে ।
আতইয়াব হাত দিয়ে ইশারা করে রামিয়াকে কাছে ডাকে। কোলে বসিয়ে পরোটার কিছু অংশ খাইয়ে দিয়ে শান্ত সুরে বলে উঠে,
তোদের ভুল ছিলো পিয়ানি। আগাম কিছু বলতে নেই। আর ও তোর যথেষ্ট ছোট এমন কোনো ওয়ার্ড ইউস করিস না মেয়েটার চোখে নিচে নেমে আসিস। ওর নাম রামিয়া আহমেদ। এই বাড়ির মালিক আর ওই যে বসে আছে আদর আহমেদ। দুই বোন আমার দুই কলিজা। আশা করি আর কোনো পরিচয় দিতে হবে না।
আতইয়াবের কথায় পিয়ানির মনে রামিয়ার জন্য রাগ জমা হয়। তার মনে হচ্ছে এই মেয়ে দুটোর জন্যই আতইয়াব তাকে এখন ভালোবাসে না। রেগে বাবার পাশে বসে পড়ে। আতইয়াবের বড় মামাও খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারি নি কিন্তু আতইয়াবের বড়খালা এগিয়ে এসে আদরের মাথায় হাত রাখে। মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ দেখে বলে উঠে,
এত্ত সুন্দর হয়েছে মেয়েটা। ছোট বেলায় দেখেছিলাম। আমার তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। এই আতইয়াব শুন আমার ছেলে আতিকের বউ করবো ওকে। কি মা রাজি আছো?
আদর মুচকি হেসে উপরে চলে যায়। হাসি পাচ্ছে ভিষণ। যদি এই কথাটা হৃদান শুনতে পেতো এই মহিলার রক্ষে ছিলোনা। আতইয়াবের খালা আর কথা বাড়ায় না রান্নাঘর থেকে ডাক পড়তেই চলে যায়।
বেশ খুশি সে। আদরকেই বউমা বানাবে!
নিজের সিক্রেট বাংলোতে ঢুকলো হৃদান। রাজীব আহমেদ কে সে এখানেই রেখেছে। যদিও এনেছিলো অন্য উদ্দেশ্যে পরে নিজের উদ্দেশ্য পরিস্থিতির সাথে পাল্টে নিয়েছে। রাজীব আহমেদ শুয়ে আছে। মুখটা মলিন। হৃদানকে দেখেই তার মুখে হাসি ফুটে। হৃদান হাসি ফেরত দিয়ে বলে উঠে,
রেডি হয়ে নিন আংকেল। ছেলের বিয়ে খেতে হবে না?
বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে রাজীব আহমেদ। হৃদান হেসে উঠে জোরে। গোলগাল মুখটায় বড়বড় চোখ অদ্ভূত সুন্দর লাগছে মানুষটিকে। হেসেই বলে উঠে,
বউয়ের আদর ছাড়া আর কতদিন থাকবেন!
রাজীব আহমেদের মুখটা আবার মলিন হয়ে আসে। হৃদান বুঝতে পেরে বলে উঠে,
আপনার ছেলে আজকে ফোন দিয়ে বলল আপনার কথা। বড্ড ভালোবাসে আপনাকে। পরে ভাবলাম মুখোমুখি যুদ্ধ টা করলে মজা হবে বেশী। সমানে সমানে লড়াই না হলে ইরিটেট লাগে শশুড়মশাই! আপনার ছেলে থানায় ফোন করে বলে দিয়েছে। অপেক্ষা করছে জলদি চলুন!
মনের মধ্যে ভিন্ন এক প্রশান্তি হচ্ছে। এতকিছুর পরেও তার ছেলে যে এখনো ভালোবাসে তাই অনেক। পরক্ষণেই আদর-রামিয়ার কথা মনে হতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে। মেয়েগুলো কে খুব বেশীই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। তার বা কি করার ছিলো!
আদরের দিকটা ভেবে দেখ!
মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ১০
আপনার মেয়েকে নিয়ে আরো টেনশন করতে হবে না। আদর আপনার সেদিনের চাহনী দেখেই নিভে গেছে। নিজের সাথে যুদ্ধ করেও আমাকে বলতে পারেনি কিন্তু একটা সুক্ষ্ম ভালোবাসা ওর চোখে দেখি আমি। আমি বুঝিয়ে বললেই হবে।
রাজীব আহমেদ মলিন হেসে রেডি হয়ে নেয়। বের হয়ে যায় বাংলো থেকে। গাড়িতে চেপে বসে একটু পরের সময়য়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে। ভালোও হতে পারে; খারাপ ও হতে পারে!
অপেক্ষা শুধু সময়ের!