মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ১২
Tahrim Muntahana
দুই ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে। পালাক্রমে বিয়ে বাড়ির কাজ বেড়ে যাচ্ছে। সবার মাঝেই একটা আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। আনন্দ করতে পারছে না আতইয়াব। টেনশনে মাথা তার ফেটে যাচ্ছে এমন অবস্থা। বারবার ঘড়ি দেখছে আর দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। কখন আসবে? কিভাবে আসবে? আতইয়াব কে সেই কখন থেকে লক্ষ্য করছে আদর। সবার মাঝে কিছু জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না। গাড়ির হর্ন আসতেই আতইয়াবের চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে; একপ্রকার হুমড়ি খেয়েই বেরিয়ে যায়। আদর নিজেও পিছু নেয়। এমন কে আসলো যার জন্য আতইয়াব এমন করছে!
গাড়ি থামিয়ে আতইয়াব কে দৌড়ে আসতে দেখে মুচকি হাসে হৃদান। ইশারায় পাশে থাকা রাজীব আহমেদ কে দেখাতেই চোখ তার ছলছল করে উঠে। নেমে দাঁড়ায় দুজন। হৃদান আতইয়াবের সাথে কুশল বিনিময় করে। আতইয়াব বারবার গাড়ির দিকে তাকাচ্ছে ! কই তার বাবা? হৃদান কি তাকে মিথ্যে বললো? হৃদান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে দুষ্টু হেসে বলল,
কি কাকে খুঁজছেন? আর কারো আসার কথা?
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আতইয়াব চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই হৃদান হালকা শব্দ করে হেসে দেয়। ফিসফিস করে বলে উঠে,
এতটাই দিশেহারা হয়ে গেছেন যে সামনে দাড়ানো ভদ্রলোক কে আপনার চোখেই পড়েনি!
অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আতইয়াব। এটা তার বাবা! এভাবে সেজেছে কেন? রাজীব আহমেদ আতইয়াবকে জড়িয়ে ধরেই কেঁদে দেয়। এভাবে কত বছর জড়িয়ে ধরা হয়নি; একটু আদর করা হয়নি! হৃদান বাবা-ছেলের এমন মুহূর্তে থাকতে চায় না বলে আতইয়াব কে উদ্দেশ্য করে বলে,
আস্তে; এত ইমোশনাল হবেন না। ইনি কিন্তু আপনার বাবা না; আপনার সিনিয়র ডক্টর যাকে আপনি খুব সম্মান করেন। আমি কি বুঝাতে চেয়েছি নিশ্চয়ই মাথায় ঢুকেছে। না ঢুকলেও সমস্যা নেই চশমা টা পড়ে নিন সব বুঝতে পারবেন। কানা!
হৃদানের ঠেস দেওয়া কথা শুনে রাজীব আহমেদ শব্দ করে হেসে উঠলেন আর আতইয়াব সে তো পারে না চোখ দিয়েই খু** ন করে দিবে। হৃদান তাড়াতাড়ি চলে আসে।
দরজায় আদর কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই ভয়ে ঢোক গিলে সে। কিছু বুঝলো না তো! অন্যদিকে আদর ভ্রু কুঁচকে ওদের তিনজন কে দেখছিলো। সাদা চুল দাড়ির লোকটাকে অদ্ভূত লাগছে তার; কেমন বিদেশি বিদেশি দেখতে। এই লোকটার জন্যই তার ভাই এমন করছিলো! আবার সাথে হৃদান কে দেখে তার সন্দেহ হচ্ছে। কিছু তো ঘাপলা আছেই। হৃদান কাছাকাছি এসেই মেকি হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরতে যাবে তার আগেই আদর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
তাড়াতাড়ি মাস্ক পড়েন। বিয়ে বাড়ি এটা ভুলে গেছেন? একবারো যদি মাস্ক ছাড়া দেখেছি আপনার মাথার চুল একটাও থাকবে না; আপনার এসিস্ট্যান্ট টাকলার মতো করে দিবো!
হৃদান তাড়াতাড়ি পকেট থেকে মাস্ক খুলে পড়ে নেয়। কি আজব সে ভয় পাচ্ছে কেন! মানসম্মান আর থাকলো না। আদর আবার ও চোখ রাঙিয়ে বলে উঠে,
ভাইয়ার অনেক মেয়ে কাজিন আছে। সোজা আমার ঘরে চলে যাবেন খবরদার কারো দিকে তাকালে চোখ আপনার চোখের জায়গায় থাকবে না। এখন আমার সামনে থেকে যান!
হৃদান তাড়াতাড়ি ভেতরে চলে যায়। এই মেয়েকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। হৃদান যেতেই আদর জোরে দম ফেলে মুচকি হাসে। মাত্রাতিরিক্ত সুদর্শন পুরুষ! তার উপর মডেল। যে কোনো মেয়ে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য; সে তো এসব হতে দিতে পারে না! নিজেও ভেতরে চলে যায় । আতইয়াব মনে মনে প্রস্তুত হয়ে রাজীব আহমেদ কে নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। বিচক্ষণতার সাথে সবার মাঝে বলে উঠে,
আমার সিনিয়র ডক্টর রা,, আতিকুল জামান; এব্রুড থাকে।
সবাই তীক্ষ্ম চোখে পরখ করে। ঘাবড়ে যায় দুজনই । তবুও বুঝতে না দিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে তবুও রাজীব আহমেদ উত্তর দিতে পারছে না। কন্ঠ শুনলেই চিনে যাবে সেটা এখন হতে দেওয়া যাবে না। সবাই কেমন করে দেখছে। আতইয়াব থতমত খেয়ে যায়। কি বলবে, না বলবে কিছুই বুঝতে পারেনা। শেষমেষ উপায় না পেয়ে বলে,
উনি কথা বলতে পারে না। কিছুদিন হলো কানেও শুনতে পারে না। একটা এক্সিডেন্টে কন্ঠনালি আর কানে আঘাত পায় তখন থেকেই এমন। এজন্য চাকরীটাও ছাড়তে হয়েছে। যাই হোক আমার অনেক অনুরোধে স্যার আসতে রাজি হয়েছে; উনার কোনো সমস্যা হয় না দেখো কিন্তু তোমরা!
কথাগুলো শুনেই রাজীব আহমেদের চোখ কপালে উঠে গেছে। ক্রিমিনাল তাও ঠিক ছিলো শেষ পর্যন্ত কালা-বোবাও হতে হলো। আতইয়াব অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে বাবার দিকে। মিসেস রাজীব আহমেদ কেমন করে দেখছে ওদের। আতইয়াবের এমন অবস্থা দেখে করিডরে দাঁড়িয়ে জোরে হেসে উঠে হৃদান। কোনো ভাবেই হাসিটা আটকে রাখতে পারছিলো না। সবার দৃষ্টি তার উপর পড়তেই থতমত খেয়ে যায় হৃদান। কানে ব্লোটুথ থাকায় হুদাই কথা বলার ভান করতে করতে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। আদর কে বলতেও পারে না। আর সবাই ভাবছে ছেলেটা কে! আর আতইয়াব তো চরম ক্ষেপেছে। এই বড়শালা কে শিক্ষা না দেওয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত হবে না !
হাসতে হাসতে রামিয়ার পেট ব্যাথা হয়ে গেছে। আদরের কাছে কান্চু সম্পর্কে সে শুনেছে সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। আজ কান্চু এসেই রামিয়ার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলেছে। কান্চু দুটো কথা বলতে না বলতেই বায়ু নির্গত করে দাঁত কেলিয়ে হাসছে আর রামিয়া ঘর কাঁপিয়ে হাসছে। আবার মজার মজার কথাও বলছে। রামিয়ার তো কান্চুকে বেশ লেগেছে। কতদিন পর সে এভাবে হাসছে। একদম মন খুলে। বোনের খিলখিল হাসির শব্দে আদর চমকে ঘর থেকে বের হয়। হঠাৎ কি হলো সব ব্যাথা ভুলে ছোট্ট পুতুলটা এত হাসছে। দরজা দিয়ে উঁকি দিতেই কান্চুকে চোখে পড়ে তার। সে বুঝতে পারে বিষয়টা। খুব করে কৃতজ্ঞ হয় কান্চুর প্রতি। কান্চু আদর কে দেখেই দাঁত কেলিয়ে বলে উঠে,
মিস ক্রাশু! আমাদের বিয়েটা কবে হবে? বুড়ো হয়ে ফোকলা দাঁত নিয়ে তোমাকে মিস ক্রাশু বলে ডাকবো আর তুমি লজ্জা পেয়ে মুখ ঢাকবে আমি পাদ মেরে লজ্জা টা উড়িয়ে দিবো!
আবার হো হো করে হেসে উঠে রামিয়া। আদর রাগ করতে গিয়েও ফিক করে হেসে দেয়। এগিয়ে এসে কান্চুর চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে রামিয়ার পাশে বসে। কান্চু এতই খুশি হয় যে গুনে গুনে ছয়টা পাদ মেরে ক্ষান্ত হয়। আদর রামিয়া হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে হেসে উঠে। ওরা ভুলেই গেছে যে এটা বিয়ে বাড়ি। অনেক মানুষ। অনেকেই অনেক কিছু ভাবতে পারে। উপর থেকে হাসির শব্দ শুনেই আতইয়াবের ছোট খালা মিসেস রোকেয়া মুখ বেঁকিয়ে বলে উঠে,
দেখ দেখ লজ্জা শরম কিছুই নেই। কিভাবে হেসে যাচ্ছে । বাড়িতে যে এত মানুষ ঘুরঘুর করছে; কত বেড়াছেলে রা আছে তাও নির্লজ্জের মতো দুই বোন হাসছে। ওই সব ধান্দা!
মিসেস রোকেয়া কথায় বিরক্ত হয় আতইয়াবের বড় খালা মিসেস আতিয়া।
তার তো দুই বোন কে অনেক ভালো লাগে। তিনি মিসেস রোকেয়া কে থামিয়ে বললো,
আহ থাম তো রোকেয়া। কি সব বলছিস। বিয়ে বাড়িতে মজা করবে না তো মুখ ভার করে বসে থাকবে?
ধমক খেয়ে মিসেস রোকেয়া নিজের কাজ করতে থাকে। মিসেস আতিয়া ছেলেকে দেখেই ডাক দেয়। বিয়ের বয়স হয়েছে অথচ মেয়ে পছন্দ হয় না। তার বিশ্বাস আদর কে দেখলে তার ছেলে অপছন্দ করবে না। মুখের আদল টাই যে এরকম! তিনি বুদ্ধি করে বলে উঠে,
এই আতিক যা উপরে যা ওদের নিয়ে। কি বড়দের মধ্যে বসে আছিস। দেখ উপরে ওরা আড্ডা দিচ্ছে, হাসাহাসি করছে। যা তোরাও যা।
মায়ের কথায় আতিক ও ভালো করে কান দেয়। হাসির শব্দ শুনে তারও কৌতুহল হয় । কি এমন হচ্ছে ওখানে যে এতো হাসছে। পিয়ানি রাগ করে যেতে না চাইলেও আতিকের জোরাজুরি তে রাজি হয়। এক ঝাঁক নিয়ে উপরের দিকে হাঁটতে থাকে। উপরে আদর রা দেখছে কান্চুর ফোনে ভিডিও।
হাগু করতে গিয়ে না হিসু করে থাকতে পারার ব্যাপার টা নিয়ে কান্চু কথা তুলেছে। রসিয়ে রসিয়ে রামিয়াকে ঘটনা গুলো বলছিলো আর কান্চুর কথার ধরণ দেখেই ওরা হাসতে হাসতে শেষ। তার মধ্যে হুট করে কান্চুর ভিডিও এর কথা মনে পড়েছে। সেটাই দেখাচ্ছিলো দুজন। আদর রামিয়া দুজনেরই চোখের কোণে ঈষৎ পানি। আর হাসতে পারছে না তারা তবুও হেসেই যাচ্ছে। এরকম হাসি ওরা কোনোদিন হাসেনি। এমন সময় ঘরের মধ্যে এতগুলো মানুষ দেখে ওরা থেমে যায়। কান্চু ভিডিও অফ করে আদরের পাশে বসে। আদর মিষ্টি হেসে বলে উঠে,
প্লিজ বি সিট! আপনাদের সাথে তেমন কথা হয়নি। কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো!
আতিক হেসে বলে,
না না সমস্যা হচ্ছে না। আমি আতিক; আতইয়াবে বড়খালার ছেলে। পড়াশোনা শেষ কিছু মাস হলো ; এখন বাবার ব্যবসায় সামলাচ্ছি।
আদর কিছু বলবে তার আগেই পিয়ানি মুখ বেঁকিয়ে বলে উঠে,
সমস্যা হবে কেন? আমরা কি পরের বাড়ি এসেছি। খালার বাড়ি এসেছি।
কথার ধরণ কারোরই ভালো লাগে না। আদর কোনো রিয়েক্ট করে না; হাজার হলেও আতইয়াবের নানাবাড়ির লোক। সে অসম্মান করতে চায় না। তাই মুখে হাসি ফুটিয়েই বলে,
না না আমি তেমন ভাবে বলিনি। অনেক দিন পর এসেছেন আর বিয়ে বাড়ি অনেক মানুষ তাই বলছিলাম। ডন্ট মাইন্ড প্লিজ!
পিয়ানি আবারো মুখ বাঁকায়। আদরের কথা শুনে সে মনে মনে হাসছে। ভেবেছে কথা বলতে পারে না ভালো করে। আরেকটা মেয়ে বলে,
তুমি কি করো আপু?
আমি পড়াশোনা, বিজনেস দুটোই করি। অনার্স ফাইনাল ইয়ার পড়ছি।
আতিক আদরের দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ পছন্দ হয়েছে মেয়েটিকে। আরেকটু আলাপ হতে বলে উঠে,
আমার ছোটই হবে। তুমি করেই বলছি কেমন?
আদর মনে মনে ভিষণ বিরক্ত হয়। কিছু পুরুষ বাদে তার আর কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করে না। নেহাত ভাইয়ার কাজিন; মুখের উপর না ও করতে পারছে না। আবার হঠাৎ করে আদর ভাবে সে পাল্টে গেছে সম্পূর্ণ হৃদানের জন্য, কিছু মানুষের প্রতি; আর কারোর সামনে কেন সে এত বিনয়ী হচ্ছে। নাহ! আগের ফর্মে ফিরে যেতে হবে! কথা গুলো ভেবেই আদর একটু হাসি নিয়ে বলে,
ইউর উইশ। এনি ওয়ে গাইস কনটিনিউ করেন আড্ডা আমি আসছি!
রামিয়া বুঝতে পারে ব্যাপার টা। আতিক কিছু বলতে চাইলেও রামিয়া হাত দিয়ে ইশারা করে। অবাক হয় আতিক। দরজা দিয়ে যেতে যেতে বলে উঠে,
বইগুলো গুছিয়ে রাখবে রামিয়া। ছয়টা দিন মিস গেলে তেমন কিছুই হবে না। তোমার ভাইয়া বারবার বিয়ে করবে না।সো এনজয়। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে সবাই রেডি হয়ে নিবেন। বাস ছাড়তে বেশী দেরী নেই!
এখনকার কথা বলার ধরণ আগের কথা বলার ধরণ সম্পূর্ণ আলাদা। আদর নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। রামিয়া ফিসফিস করে বলে উঠে,
গাইস তোমরা কেউ আপুর সাথে কথা বলতে যেও না। আপু অতিরিক্ত কথা বলা একদম পছন্দ করে না; আর একবার রেগে গেলে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে যায়।
সবার মনেই আদরের প্রতি আলাদা ধারণা তৈরি হয়। রামিয়া পাদু সবার সাথেই ফ্রি হয়ে যায়। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে সবাই যার যার মতো রেডি হয়ে নেয়!
অন্যদিকে হৃদান খুশী মনে ড্রাইভিং করছিলো। আর মাত্র কিছু সময় তারপর থেকে কয়েকটা দিন প্রেয়সী তার চোখের সামনেই থাকবে। দেখতে পারবে সর্বক্ষণ! ভাবতেই মন পুলকিত হচ্ছে। নানা রকম কল্পনা সাজাতে ব্যস্ত হৃদান খেয়াল ই করেনি একটা ট্রাক তুমুল বেগে তার দিকে ধেয়ে আসছে। নাহ গাড়ির কিছু হয়নি, ট্রাক টা হৃদান কে কেন্দ্র করেই ধেয়ে আসছে। যতক্ষণে হৃদানের খেয়াল হলো ততক্ষণে সময় ফুরিয়ে গেছে।
হৃদান ঘামতে শুরু করছে। চোখের পাতায় কয়েকটা মুখ বারবার ঘুরতে থাকে। দিশেহারা হয়ে হৃদান স্টেয়ারিং একদম ঘুরিয়ে পাশের জঙ্গলের দিকে ঠেলে দেয় গাড়িটা। মুহূর্তের মধ্যেই গাড়িটা প্রকান্ড এক গাছের সাথে ধাক্কা লেগে থেমে যায়। কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝার আগেই চারপাশ অন্ধকার দেখে হৃদান। একসময় গাড়িতেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়!
রাগে আদরের মুখ থমথমে হয়ে আছে। চোখদুটো লাল হয়ে মনে হচ্ছে রক্ত বের হবে। একটু আগে ফোন এসেছিলো অফিসের তিনতলায় কেক বানানোর ঘরে আগুন লেগেছে। বিশেষ ক্ষতি না হলেও একজন কর্মচারীর হাত বেশ খানিকটা পুড়ে গেছে আগুন নেভাতে। যেখানে আগুন লাগার কোনো সম্ভবনায় নেই সেখানে আগুন কিভাবে লাগলো! কে করলো কাজ টা! এটা ভেবেই মাথা গরম আদরের। অনেক কষ্টে ব্যবসায় টা নিজের মতো করে দাঁড় করিয়েছে।
একটু ক্ষতিও সে বরদাস্ত করবে না। জলদি রেডি হয়ে আদর নিচে নেমে আসে। সবাই রেডি হয়ে ড্রয়িং রুমে বসে ছিলো; আতইয়াবের ছোট মামা ফোন দিয়েছিলো এই তো বাসস্টপে চলে এসেছে। দশ কি বারো মিনিট লাগবে তাই সবাই নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আতইয়াব ও সেখানেই ছিলো। জুতোর ঠকঠক শব্দ টা কানে যেতেই ছোটরা সিঁড়ির দিকে দৃষ্টি দেয়। আদরের মুখ দেখেই আতইয়াব বুঝতে পারে আদর রেগে আছে। ভয় হয় তার। আদর কি কোনোভাবে বাবার কথা জেনে গেল? আর জেনে গেলেও মানে নি আদর? এসব ভেবেই উঠে দাড়ায়। আদরের সামনে দাঁড়াতেই আদর নিজেকে খানিকটা সংযত করে। অযহত টেনশন দিয়ে লাভ নেই বিদেয় মেকি হেসে বলে উঠে,
ভাইয়া আমাকে একটু অফিসে যেতে হবে। ছোট্ট একটা প্রবলেম হয়েছে। তোমরা চলে যেও আমি হৃদ কে নিয়ে আসবো!
আতইয়াব তবুও সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আদর ধরা পড়ার ভয়ে পা চালিয়ে হাঁটতে থাকে। ঠিক তখনি ফোন বেজে উঠে। কিছুটা চমকে উঠে আদর। ভাবনার মধ্যে শব্দ হলে চমকানোর কথাই। ফোন টা রিসিভ করে কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে বলে উঠে,
মে….ম একটা খারাপ খবর আছে!
আদর ভ্রু কুঁচকে কান থেকে ফোন নামিয়ে ফোন নম্বর টা চেইক করে নেয়। হৃদানের মেইন গার্ড। হঠাৎ ই কেঁপে উঠে সে। খারাপ খবর মানে? হৃদের কিছু হলো না তো? কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে,
কি হয়েছে? হৃদ ঠিক আছে তো?
মেম বস বাড়ির দিকে যাচ্ছিলো। মধ্যে একটা ট্রাক ফুল স্পিডে এসে….
আর বলতে পারলো গার্ডটি। আদর চেঁচিয়ে বলে উঠে,
আই সেইড হৃদ ঠিক আছে তো? ওর কিছু হলে কাউকে ছাড়বো না আমি। একদম পুঁতে দিবো!
আকস্মিক চিৎকারে গার্ড সহ ড্রয়িং রুমের সবাই চমকে উঠে। উপর থেকে রামিয়া কান্চু দৌড়ে আদরের পাশে দাড়ায়। সবার চোখেই কৌতুহল। কার কি হলো? আতইয়াব চোখে মুখে একরাশ ভয়। এই তো মানুষটা গেল এর মধ্যেই আবার কি হলো! গার্ড টি ভয়ে ঝটপট বলে উঠে,
মেম বস ঠিকাছে। শুধু কপালে আর হাতে একটু লেগেছে। ট্রাকটা ইচ্ছে করেই এক্সিডেন্ট করাতে এসেছিলো। আমাদের তাই মনে হলো!
আদর হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে চেয়ারে বসে পড়ে। হৃদান কে হারানোর ভয় ভেতরটা কেমন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে! কপালের একপাশে হাত বুলিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে উঠে,
ট্রাকটা ইচ্ছে করে ধাক্কা দিতে এসেছিলো?
জি মেম তাই মনে হলো?
আদরের এবার আর সহ্য হলো না। মনে হলো মানে কি? দ্বিগুন চিৎকারে বলে উঠে,
মনে হলো মানে কি? তোরা এখনো মনে হওয়ার মধ্যে বসে আছিস। আই সোয়ার এক ঘন্টা সময় দিলাম ওই ট্রাক ড্রাইভার কে আমি আমার সামনে দেখতে চাই নাহলে আমার বুলেট একদম তোদের বুকের ভেতর ঢুকিয়ে দিবো। আমার কলিজায় হাত দেওয়ার পরিণাম খুব ভয়ংকর হবে।
দুম করে কল কেটে দিয়ে কোনোদিক না তাকিয়েই ডেকে উঠে,
বাহাদুর, বাহাদুর। গাড়ি বের করো।
আদরের উঠার শক্তি হচ্ছে না। মনে হচ্ছে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাবে। ইশারা করে আতইয়াব কে কাছে ডাকে আদর। আতইয়াব সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আদর ছোট্ট করে বলে,
মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ১১
গাড়িতে দিয়ে আসো ভাইয়া উঠতে পারছি না। আর সব ঠিকাছে। সময় মতো বেরিয়ে পড়বে। আর কিছু জিজ্ঞেস করবে না।
আতইয়াব কিছু না বলেই আদর কে কোলে তুলে নিয়ে বাইরের দিকে হাঁটা ধরে। যেন আদরের বশ সে। আদর কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ততক্ষণ পর্যন্ত গাড়ি দেখা যায় ততক্ষণ চেয়ে থাকে। গাড়িতে বসে আদর বারবার ঢোক গিলতে থাকে। গলাটা কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে । মানুষটাকে সামনাসামনি না দেখা পর্যন্ত শান্তি মেলবে না। ভালোবাসা এমনই!