মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ১৬

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ১৬
Tahrim Muntahana

সাদা কাপড়ের ছাউনির নিচে হেটে আসছে তিন নারী। চোখ ধাঁধানো আগমনে সবাই স্তব্ধ। প্যান্ডেল সামনে সবাই এসে ভিড় করেছে। গানের তালে তালে অনেকেই আবার কোমর দোলাচ্ছে। আত‌ইয়াব-মৃহান তো প্রেয়সীদের দেখে শকড হয়ে গেছে। লাল বেনারসি তে দুজন কে কতটা অপরুপা লাগছে বলে বুঝানো মুশকিল ই। হৃদযা-সুবাহ কে সোফায় বসিয়ে দেওয়া হলেও আত‌ইয়াব-মৃহানের চোখ সরেনি। একরাশ‌ মুগ্ধতা নিয়ে দেখে চলছে। আদর মিটিমিটি হেসে দুজনের কানের কাছে চিৎকার করতেই দুজন বেসামাল ভাবে সোফায় পড়ে যায়। চারদিক হাসির শব্দ যেন দ্বিগুন হয়।

হৃদযা লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। লোকটা একদম যা তা! কিন্তু সুবাহ! সে তো তার স্বপ্নের পুরুষ কে ড্যাবড্যাব করে দেখছে। কত বছরের অপেক্ষার ফল আজ তার সামনে। সুবাহ’র ভিষণ কান্না পায়। মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন‌ দেখছে। একটু পরেই স্বপ্নটা ভেঙে যাবে আর সে পড়ে থাকবে একা। হাতড়ে হাতড়েও মৃহান কে পাবে না। রোবটের মতোই উঠে দাঁড়ায় সুবাহ। মৃহান ও দাঁড়িয়ে যায় সুবাহ কে তার দিকে আসতে দেখে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাদা পর্দা ভেদ করে সুবাহ মৃহান কে জাপটে ধরে। পড়ে যেতে ধরতেই আত‌ইয়াব আটকে দেয়। আর সুবাহ তো হাউমাউ করে কাঁদছে। মৃহান বুঝতে পারে পুরো বিষয়টা। তার চোখ টাও ছলছল করে‌ উঠে। শিতল এক অনুভূতি সারা শরীরে প্রবাহিত হয়ে যায়। তার দ্বিধা আজ কেটে গেল। যে মেয়ে তাকে পেয়েছে বলে এভাবে সবার সামনে কাঁদতে পারে আর যাই হোক সে মেয়ে বেইমানি করবে না। মৃহান আগলে নেয় তার প্রেয়সী কে।

কান্নার মাঝেও সুবাহ ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। হঠাৎ করেই তার মনে হয় সে ছবি উঠে নি। কত কত ইচ্ছে ছিলো। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে গেলেই মৃহান আটকায়। পকেট থেকে রুমাল বের করে যত্ন নিয়ে মুছে দেয়। সুবাহ’র পরিবারের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে। শুরু হয় ফটোশুট। নাচ গান ফটোশুট মিলে দু’এক ঘন্টা চলে যায়। এমন সময় কাজিকে নিয়ে হাজির হয় পান্চু। সবাই চুপ হয়ে যায়। আদর দুজন‌কে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। কারণ সুবাহ’র পাশে তার পরিবার আর হৃদযার পাশে তার বাবা বসে আছে। এ‌ই সময়টাতে মানসিক সাপোর্ট খুব দরকার যে।

কাজি বসতেই আত‌ইয়াব বলে উঠে,
আগে আমার বিয়ে হবে।
এক থাপ্পড়ে দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদব, বড় ভাই পাশে বসে আছে। লজ্জা করে না? আগে আমার বিয়ে হবে।

আত‌ইয়াবের‌ কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে মৃহান। আর সবাই হেসে দেয়। আত‌ইয়াব একটু দমে যায়। ঠিক‌ই বলেছে মৃহান। মৃহানদের বিয়ে পড়ানো শুরু হয়। কবুলের সময় মৃহান‌ ধিরে ধিরে কবুল বললেও এক সেকেন্ড সময় ব্যয় করে না সুবাহ। কাজি কে তিনবার বলার সুযোগ না দিয়েই নিজে গটগট করে তিন কবুল বলে দেয়। এমন কি খুশিতে সবার আগে আলহামদুলিল্লাহ বলেই সে ক্ষান্ত হয় না। দৌড়ে মৃহানের কাছে চলে যায়।

খকখক করে‌ কেশে উঠে মৃহান। বাধ্যগত স্বামী চিন্তায় বিভোর স্ত্রীর মতো কপাল কুচকে পিঠ চাপড়ে দেয় সে। মৃহান আর নিতে পারে না; এমন‌ বিয়ে পাগল মেয়ে সে আর কোথাও দেখেনি। তার কপালেই জুটেছে! সুবাহ সবার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠে। সবাই চাপা হেসে দ্বিতীয় বিয়েতে মন দেয়। আত‌ইয়াবের সময় সে বেশী সময় না নিলেও হৃদযা চুপটি করে বসে থাকে।

বাবা, দুই ভাইয়ের মুখ যেন চোখের সামনে ভাসছে। বুকের ভেতর অসহনীয় যন্ত্রণা হয় তার। তাকে ছাড়া ওরা থাকবে কি করে? সে ই বা কি করে থাকবে। একসময় সকল জড়তা ভুলে চোখের তপ্ত জল অবলিলায় গাল বেয়ে পড়তে থাকে। মৃহান আস্তে আস্তে পা ফেলে সুবাহ’র এক হাত আঁকড়ে ধরে। নাবিল চৌধুরী সুবাহ কে জড়িয়ে ধরে‌ শক্ত করে!
এ‌ই সময়টা সব মেয়ের জীবনেই আসে আম্মু। এটাই তোমাদের জীবনের অংশ।

নাবিল চৌধুরীর কথায় হৃদযা বাবা কে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে দেয়। বুকটা চিনচিন করে উঠে আত‌ইয়াবের। চোখটাও জ্বালা করে উঠে। এ কেমন কানেকশন ভেবে পায় না।
আমি বিয়ে করবো না বাবা। আমি তোমাদের ছেড়ে যাবো না। আমাকে পর করে দিও না বাবা। সহ্য করতে পারছি না। তোমাদের খাবার কে তৈরি করে দিবে?‌‌ কে যত্ন নিবে তোমাদের? আমি যাবো না তোমাদের ছেড়ে।

কান্না ভেজা কন্ঠে এরকম কথা শুনে সবাই কম বেশী ইমোশনাল হয়ে যায়। নাবিল চৌধুরীর বুকটা মনে হচ্ছে ফেটে যাচ্ছে। এতক্ষণ যাও একটা ঠিক ছিলো এখন অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। বড় বড় ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত করে সে। নরম কন্ঠে বলে উঠে,
পর কেন হবে মা। তুমি আমাদের‌ রাজকন্যা ছিলে। দুই ভাইয়ের কলিজা। এমন ই থাকবে। এক পরিবার ছেড়ে আরেক পরিবারে যাচ্ছো। ওটাও তোমার নিজের পরিবার ই মা। দুটোই তোমার নিজের বাড়ি। বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসি না? শুভ কাজ টা সম্পন্ন করো মা!

নাবিল চৌধুরীর কথা শেষ হতেই সুবাহ কোমড়ে দুই হাত দিয়ে বলে উঠে,
খাবার কে তৈরী করে দিবে মানে? যত্ন কে নিবে মানে? তোর কি আমাকে আকাম্মা মনে হয়। ইনডাইরেক্টলি তুই আমাকে অপমান করলি। এর শোধ নিবো। খালি শশুড় বাড়ি থেকে আয়। ভাবি কিভাবে ননদ কে জ্বালায় আমিও দেখিয়ে দিবো।
আর তুই এখন থেকে আমাকে ভাবি ডাকবি। সম্মান দিয়ে কথা বলবি। নাহলে চৌধুরী বাড়িতে তোকে ঢুকতে দিবো না; তোর বাড়ি থেকেই তোকে বিতাড়িত করে আমি রাজ করবো। হা হা হা!

হৃদযা শান্ত হয় বাবার কথায়। পরক্ষণেই সুবাহ’র কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয়। মেয়েটা তাকে সহজ করতেই এমন বলছে সে জানে। হৃদযার হাসি দেখে গুমোট ভাবটা ও কেটে যায়। সুবাহ বিশ্বজয়ীর হাসি দিয়ে মৃহানের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচায়। মানে, কেমন দিলাম দেখেছেন আপনার ব‌উ কেমন জিনিয়াস; এরকম ভাব!

হৃদযা ধীর কন্ঠে কবুল বলে আবার কান্না ভেঙে পড়ে। হৃদান‌ এক কোণায় গম্ভীর হয়ে বসে আছে। চোখ তার বোনের দিকে। লাল টকটক করছে চোখ দুটো। চাইলেও সে কাঁদতে পারছে না। অন্যদিকে আদরের চোখ জলে ট‌ইটম্বুর হয়ে আছে। গড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে না। তার মন পড়ে আছে নাবিল চৌধুরীর আগলে রাখার মুহূর্তেই। তার ও এমন‌ সময় আসবে। কিন্তু আগলে রাখার মতো একজন‌ বাদে কেউ নেই তার!

কথাগুলোর ভাবনা শেষ করতে পারে না তার আগেই আগলে নেয় এক হাত। চমকে হাতের দিকে তাকায় আদর। মনে‌ হচ্ছিলো এ‌ই হাত টাই সে খুঁজছিলো। মানুষটাকে দেখেই আদর পিছিয়ে যায়। আত‌ইয়াবের স্যার! এ‌ই লোক কেন বার বার তার সামনে আসে?‌ কেন‌ হুটহাট আগলে নেয়। আদরের সন্দেহজনক চাহনি দেখেই রাজীব আহমেদ হাত ছেড়ে দেয়। ইতস্তত চাহনি ফেলে এক ছুটে চলে যায়। কেন যে ঠিক রাখতে পারে না‌ নিজেকে!

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে সাফিন। একদম স্বাভাবিক সে। দু চোখ ভরে আজ দেখেছে মনের মানুষ কে। কিন্তু আগের মতো তার অন্তর শিতল হয়নি বরং দগ্ধ হয়েছে। জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে ভেতরটা। আরো কিছুটা এগিয়ে যায় সে। হাতে রাখা গিফটটার দিকে তাকায়।‌ দুটানায় ভুগছে। গিফট টা দিলে কি হৃদযার সংসারে সমস্যা হবে? দিবে কি দিবে না ভেবেই এগিয়ে যায়। আত‌ইয়াব তো হৃদযা কে ভালোবাসে; সে তো চিনে তাকে।

এত ঠুনকো নয় তার ভালোবাসা। যার যার মতো কথা‌ বলছিলো। আত‌ইয়াব হৃদযার এক হাত ধরে বন্ধুদের সাথে আলাপ করছে। এমন সময় সাফিন‌ গিয়ে দাঁড়ায় হৃদযার সামনে। হৃদযা‌ কিছুটা ভড়কে যায়; আত‌ইয়াবের দিকে তাকায়। নাহ সে এখনো কথা বলছে। সাফিন‌ গিফটা এগিয়ে দিতেই হৃদযা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সাফিনের চোখে এখন কোনো দ্বিধা নেই। নরম কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে,

এ‌ই গিফটা তোমার জন্য হৃদ.. হৃদযা। একান্তে খুলে দেখো।
কন্ঠে শুনেই চিনে যায় হৃদযা। ভয় চোখে পাশে তাকায়। আত‌ইয়াবের‌ এদিকে কোনো খেয়াল নেই দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। পরক্ষণেই সাফিনের‌ চোখে চোখ পড়তেই মাথা নিচু করে নেয়। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা যে ভয়ংকর। সাফিন হেসে হাঁটা ধরে। আত‌ইয়াবের ঠোঁটে ফুটে উঠে মলিন হাসি। সে শুরু থেকেই জানে সাফিন‌‌ আসার কথা। ঘাটাতে চায়নি। সাফিনের ভালোবাসা শুদ্ধ ছিলো; শুধু মাত্র বাবার কথায় ফেঁসে গেছে।

আদর খুঁজে চলছে হৃদান‌ কে। কোথাও‌ পাচ্ছে না। এ‌ই পান্চু টাও ব্যস্ত। সে জানে হৃদানের মনে কি চলছে। অতি আদরের বোন পরের বাড়ি চলে যাচ্ছে কষ্ট হ‌ওয়াটাই স্বাভাবিক। টেনশনে তার মাথা ধরে যাচ্ছে। ঝামেলা সব শেষ হলে একটু শান্তি তে ঘুমাবে। এমন সময় মিসেস আতিয়া কে দেখে থেমে যায়। তার দিকেই হেসে এগিয়ে আসছে। আরেকবার চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিলো সে। হৃদানের ছায়াও নেই। মিসেস আতিয়া এসেই আদরের চিবুক ধরে আদুরে গলায় বলে উঠে,

মাশাআল্লাহ কি সুন্দর। আমার কল্পনার থেকেও সুন্দর লাগছে তোমাকে। আমার ছেলেটার সাথে খুব মানাবে।
আদরের মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায়। এ‌ই মহিলা একটু বেশিই ভেবে ফেলছে। না‌ জানি কখন হৃদানের কানে এসব চলে যায়। আস্ত রাখবে না এদের, সে ভালোয় জানে। আদর মেকি হেসে বলে উঠে,
আন্টি আমার একটু কাজ আছে আপনার সাথে পরে কথা বলছি।
আরে দাঁড়াও। এত ছটফট করছো কেন। ওসব কাজ পরে‌ হবে।

কথাটি বলেই মিসেস আতিয়া এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আতিক দেখছিলো আদর‌ ও তার মা কে। মিসেস আতিয়ার ডাক শুনেই এগিয়ে যায়। মিসেস আতিয়া আতিক কে আদরের পাশে দাঁড় করিয়ে বলে উঠে,
মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ দুজন কে কি সুন্দর মানিয়েছে‌। উপর ওয়ালা যেন দুজন কে এক জুটি বানিয়েছে।
ক্রমশ আদরের চোখ রাগে লাল হতে থাকে। তার পাশে‌ দাঁড়ানোর যোগ্যতা বা রাইট একমাত্র হৃদানের রয়েছে। এরকম প্যারা‌ সহ্য করার মতো নয়। আপাতত আদরের বৈশিষ্ট্যে এরকম কিছু সহ্য করা পড়ে না। মায়ের কথায় আতিক লাজুক হাসে। যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে। আদর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,

হোয়াট ডু ইউ মিন বাই দেট?
মিসেস আতিয়া তাকিয়ে থাকে কিছু বলতে পারে না। কি করে বলবে; সে তো ইংলিশ পারে না। আদরের কথায় আতিক বুঝতে পারে মেয়ে রেগে যাচ্ছে। রাগার ই কথা। এভাবে সরাসরি কেউ বলে! আদর কে সরি বলা মা কে নিয়ে সে চলে আসে। আদর আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু চলে যাওয়ায় বলতে পারলো না।

এতে রাগ টা যেন আরো বেড়ে গেল। ধপাধপ পা ফেলে পান্চুর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই পান্চু ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়। প্যান্ডেলের খামের সাথে টাক মাথায় বারি খেয়ে চিৎকার করতে গিয়েও করে না‌‌। এ‌ই মুহূর্তে তার যম সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আদর পান্চুর টাক মাথায় থাপ্পড় মেরে বলে উঠে,

বস কোথায়? তোমাকে যে বলেছিলাম উনার সাথে সাথে থাকতে? টাকলা, কোনো কাজ ই ঠিক মতো করতে পারো না খালি টাক মাথায় বারি খাওয়া ছাড়া। পাঁচ মিনিটের মধ্যে উনাকে আমার সামনে চাই। নাহলে তোমার টাক মাথায় গুনে গুনে একাত্তর টা বারি দিবো। একাত্তর টা কেন জিজ্ঞেস করো? উনিশশো একাত্তর সালে যুদ্ধ হয়েছে সেই যুদ্ধকেই স্মরণ করবো তোমার টাক মাথার সাহায্যে‌। যাওওওওও!

যাও বলতে দেরী পান্চুর দৌড় দিতে দেরী হয়নি। যেন কোনো রকম জান বাঁচিয়ে বেচারা পালালো। আর আদর সে তো মিসেস আতিয়ার রাগ টা পান্চুর উপর খাটালো। এখন আবার হৃদানের টেনশন এসে ভর করলো মাথায়। নিজেও খুঁজতে চলল। এ‌ই পান্চু কে দিয়ে বিশ্বাস নেই।

রিসোর্টের শেষ মাথায় সুইমিংপুলের সামনে হৃদান কে পেয়ে যায় আদর। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হৃদানের পাশে দাঁড়ায়। হৃদান‌ চুপচাপ পানির দিকে তাকিয়ে আছে। আদর হুট করেই পানিতে পা ভিজিয়ে বসে পড়ে। আঁকড়ে ধরে হৃদানের বা হাত। ভরসা পায় সে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদরের দিকে মন দেয়। আদর ঝলমলে হাসি উপহার দেয়। দুজনে চন্দ্র বিলাস করতে করতেই অনেকটা সময় পাড় করে দেয়‌। সাথে তো আদরের বকবক আছেই। নিজেই কথা বলছে তো নিজেই হেসে গড়িয়ে পড়ছে। আর হৃদান মুগ্ধ হয়ে দেখছে। মাঝে মাঝে এটা ওটা বলে নিজেও হাসাচ্ছে। দুজন যেন ভিন্ন‌ এক জগতে চলে গেছে। যে জগতে তারা দুজন ই বসবাস করে।

চুপচাপ হাঁটছে পিয়ানি। মাথায় তার আদর হৃদানের কেমেস্ট্রি‌। কোনো‌ দিন‌ সে প্রেমে পড়েনি। কিন্তু বহুবার ক্রাশ‌ খেয়েছে। ওসব শুধু মাত্র বাহিরের চাকচিক্য দেখে। এমন না সে প্রেম করেনি। বফের অভাব নেই তার, তা‌ শুধু মাত্র ঘুরাঘুরি পর্যন্ত‌ই সীমাবদ্ধ। কারো সাথে ভালো করে ফোনে কথাও বলেনি‌। ইন্টারেস্ট পেত না। আজ‌ প্রথমবার তার মনে হচ্ছে জীবনে হৃদান-আত‌ইয়াব-
মৃহানের মতো একজন মানুষ থাকা প্রয়োজন। যার মুখে প্রেমময় কথা শুনে চোখ বাঁধ মানবে না। কিন্তু এমন‌ মানুষ সে কোথায় পাবে।

অন্যদিকে এলোমেলো পায়ে হাঁটছে সাফিন। পা যেন চলছে না। এমন সময় কারোর সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায় সে‌। পিয়ানি নিজেও হতবাক হয়ে যায়। ইশশশ ব্যাপারটা সিনেমার মতো হয়ে গেল। মুখটা দেখার ইচ্ছে হলেও মাস্ক থাকায় দেখতে পারে না; হতাশ হয় সে। সাফিন তাকায় না পিয়ানির দিকে। থম মেরে মাটিতে বসে থাকে। মাথা ঘুরছে কেমন। ফোন বেজে উঠতেই নড়েচড়ে উঠে সাফিন। পকেট থেকে ফোন বের করে এলোমেলো কন্ঠে বলে উঠে,‌

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ১৫

ইয়েস সাফিন খান স্পিকিং!
বলতে বলতেই উঠে চলে যায়। কিন্তু পিয়ানি দুরুদুরু বুকে উঠে দাঁড়ায়। কি হলো এটা? কারো কন্ঠ এতটা সুন্দর হয় কি করে। এ‌ই প্রথম তার মনে কিছু একটা টের পাচ্ছে‌। সেটা কি আদরদের বদৌলতে কিনা বুঝলো না। তবে হাসলো সে। হাসির কারণ ও সে জানে না। যতদূর পর্যন্ত সাফিন‌কে দেখা যায় তাকিয়েই র‌ইলো। একসময় সাফিনের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেল অন্ধকারে!

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ১৭