মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ১৭

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ১৭
Tahrim Muntahana

তিনটা দিন কিভাবে কেটে গেল বুঝাই যাচ্ছে না। এ‌ই তো সেদিন বিয়ে হলো। বিয়ের পরদিন ই সবাই রিসোর্ট থেকে চলে এসেছিলো। তারপর দিন চৌধুরী বাড়িতে ব‌উভাতের আয়োজন হয়ে গেছে।‌ দু’বাড়িতেই হবে বলে পরিকল্পনা করে দু’দিন রাখা হয়েছে। আজ আহমেদ বাড়ি জাঁকজমক ভাবে সাজিয়েছে আদর‌।

কোনো খামতি রাখেনি। বর্তমানে সে রেড়ি হচ্ছিলো। দুপুর গড়িয়ে সবে মাত্র বিকেলের শুরু। সূর্যের তেজ কমিয়ে এসেছে। আকাশের রূপ টাও দেখার মতো। আদরের ভাবনার সম্পূর্ণ জুড়ে হৃদানের বাস। মানুষটার পাগলামি দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। যখন তখন‌ লজ্জায় ফেলে দেয় তাকে। ভাবছিলো আর মুচকি হাসছিলো। এমন‌ সময় ঠাস ঠুস পাদ মেরে ঘরে ঢুকে পাদু।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বিরক্ত হয় আদর; এ‌ই ছেলেটার অভ্যাস পাল্টাবে না। কিছু বললো না আদর; পাদু চুপচাপ বিছানায় শুয়ে র‌ইলো। ভালো লাগছে না তার; মন টাও ভিষণ খারাপ। জট পেকে গেছে তার মাথায়। বেশী ভাবলো না; চুপচাপ শুয়ে র‌ইলো। আদর পাদু কে চুপচাপ দেখে কিছু বলবে তার আগেই ঘরে ঢুকে হৃদযা সাথে পিয়ানিরা‌।

পিয়ানি আসতে চাইছিল না; হৃদযা’ই নিয়ে এসেছে জোর করে। এতগুলো মানুষ দেখে আদর আর কিছু বললো না। সবাই একেএকে রেড়ি হতে লাগলো। প্রায় সবার সাজ ই কমপ্লিট; আদরের ফোন বেজে উঠতেই হালকা চমকালো সে; কিছু একটা ভাবছিলো। ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই অপর পাশ‌ থেকে আত‌ইয়াব বলে উঠে,
দু’বোন খেয়েছে?

আদর হাসে; এত কাজের মধ্যেও লোকটা তাদের খবর নিতে ভুলে না কিন্তু আদর কি বলবে! হৃদানের প্রেমে মশগুল হয়ে তোমার বোন খাওয়ার কথায় ভুলে গেছে; এটা বললে কেমন হবে? লজ্জায় মাথা কাটা যাবে না? তাই মিনমিনিয়ে কিছু বলবে তার আগেই আত‌ইয়াব বলে উঠে,
হয়েছে বুঝেছি। তোমার বেস্টুও না খাওয়া তোমার জন্য। আমি গাড়িতে, এ‌ইতো চলে এসেছি। এসে খাইয়ে দিচ্ছি।

আদর মিষ্টি হেসে সায় জানায়। ইশ কেমন আদুরে লাগে এখন। চুপচাপ সবাই কে রেড়ি হতে সাহায্য করলো। অনেক কাজ বাকি; সময় ও বেশী একটা নেই। খাবারের‌ দিকটা দেখতে হবে। ভেবেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল আদর। ড্রয়িং রুমে বসেই প্যান্ডেলের কাজ দেখছিলো আতিক।

একপ্রকার জোর করেই কাজ টা নিয়েছে সে। মূলত আদরের এটেনশন পাওয়ার জন্য। কিন্তু খুব একটা লাভ সে করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। আদর কে নিচে নামতে দেখেই নড়েচড়ে বসে। আদর সেদিকে তাকায় না; লোকটাকে তার সহ্য’ই হয় না। আদর ড্রয়িংরুমে আসতেই আত‌ইয়াব এসে হাজির হয়। সার্ভেন্ট কে খাবার দিতে বলে ফ্রেস হতে চলে যায়‌। আদর একপলক দেখে হেসে কাজে মন‌ দেয়। মানুষটা অতিরিক্ত’র চেয়েও বেশী ভালোবাসে।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে রামিয়া। মুখটা মলিন; চোখের কোণে চিকচিক করছে জলকণা। উদাসীন ভাব নিয়ে বাইরের কাজ দেখছে। মনটা একটু বেশীই খারাপ। এ‌ই তো‌ সেদিন বিয়েতে সাফিন‌কে দেখে পুরো রিসোর্ট খুঁজেছিলো। একপলক মানুষটাকে দেখার জন্য ছটফট করেছে। নাহ রাফিন আসেনি। এরপর থেকেই আবার তাকে আঁধার ঢেকে নিয়েছে‌। চাইলেও পারছে না ভালো থাকতে।

সকালে খেয়ে যে ঘরে ঢুকেছে আর বের ও হয়নি। যাও আদর দু’বার এসেছিলো একবার ঘুমিয়ে থাকার ভান‌ করে বিছানায় শুয়েছিলো তো আরেকবার ব‌ই সামনে নিয়ে বসে ছিলো। তাই আদর আর তাকে ঘাটায় নি। রামিয়া নিজেও এতে খুশি। মিথ্যে হাসি আর কত! তার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে আত‌ইয়াব ঢুকে পড়ে ঘরে। হাঁক ছেড়ে ডাকতেই রামিয়া নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। আত‌ইয়াব কিছু না বলেই আলতো স্পর্শ করে মাথায়।

মন কিছুটা হলেও ভালো হয়ে যায় রামিয়ার। আত‌ইয়াব মিষ্টি হেসে রামিয়া কে রেডি হয়ে নিচে আসতে বলে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। রামিয়া মন খারাপ ভুলে রেডি হতে থাকে‌। আত‌ইয়াবের দু’চোখ এখন তার হৃদমোহিনী কে খুঁজছে। সকালে দেখেছিলো এরপর হসপিটাল থেকে আসার পর মহারানীর দেখা নেই। মেয়েটা কি জানে না তাকে না দেখলে এ‌ই প্রেমিকের মনে ঝড় বয়ে যায়!

তৃষ্ণার্ত পাখির মতো ছটফট করে মনটা। আদরের ঘরের সামনে দিয়ে যেতেই আত‌ইয়াব দাঁড়িয়ে যায়‌। হৃদযার গলা শোনা যাচ্ছে। দরজায় নক করে। অনুমতি দিতেই ঘরে ঢুকে পড়ে সে। তাকে দেখেই সব মেয়েরা মুখ টিপে হেসে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। মাথা চুলকে লাজুক হেসে এগিয়ে যায় আত‌ইয়াব‌। হৃদযা এখনো খেয়াল করেনি। শাড়িতে পিন‌ আটকাতে ব্যস্ত সে।

আত‌ইয়াব হাত ধরে আটকে দেয় হৃদযাকে। অতি সন্তর্পণে নরম হাতে পিন‌ লাগিয়ে নিজের দিকে ঘুরায় প্রেয়সীকে। হৃদযা নিজেও আত‌ইয়াবের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্ধাঙ্গিনীর এমন মুগ্ধ চাহনী দেখে হাসে আত‌ইয়াব। হৃদযার মুখে লালাভ আভা ফুটে উঠে‌‌। এবার লজ্জা লাগছে তার। আত‌ইয়াব বাঁকা হেসে আরেকটু কাছে এগিয়ে যায়। মধ্যখানে দূরত্ব নেই বললেই চলে। ঈষৎ কেঁপে উঠে হৃদযা। আত‌ইয়াব ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠে,

এখনো লজ্জা! দু’রাতে লজ্জা বুঝি ভাঙে নি? আমার কিন্তু ভালোয় হলো। আজ লজ্জার ল ও রাখবো না!
হৃদযা এবার নিজের শাড়ি খামচে ধরে‌। এ‌ই লোকটা বিয়ের পর একদম নির্লজ্জ হয়ে গেছে। তার সামনে আসলেই যত লাগাম ছাড়া কথা বের হয়। কপট রাগ নিয়ে হৃদযা বলে উঠে,
নির্লজ্জ পুরুষ! দিন দিন অসভ্য হচ্ছো বেশী।

আত‌ইয়াব শব্দ করে হেসে দেয়। প্রাণোচ্ছল চোখে হাসিটা দেখে হৃদযা। মানুষটার হাসি একদম বুকে লাগে তার। ব‌উয়ের এরকম চাহনী দেখে আত‌ইয়াব দুষ্টূ হাসে। ভড়কে যায় হৃদযা। ভ্রু নাচিয়ে আত‌ইয়াব বলে উঠে,
তুমিই আমাকে নির্লজ্জ হতে বাধ্য করো। আর পুরুষ মানুষের লজ্জা থাকতে নেই; লজ্জা হলো নারীর ভূষণ। তুমি যত লজ্জা পেতেই থাকবে আমার নির্লজ্জের সীমা তত বাড়তেই থাকবে। তোমার ও‌ই লালাভ মুখশ্রীর প্রাণোচ্ছল দৃষ্টি যে এ‌ই প্রেমিকের বুকে ঝড় তুলে সেটা কি বুঝতে পারো?‌নিজেকে আটকে রাখা দায় হয়ে যায়; অসম্ভব রকমের কম্পন সৃষ্টি হয় বুকে।

হৃদযা অপলক তাকিয়ে থাকে। সামনে দাঁড়ানো মানুষটা তার; একান্তই তার নিজের। ভাবতেই মনটা পুলকিত হয়ে যায়। ঝাঁপিয়ে পড়ে ভরসাযুক্ত বুকে। আত‌ইয়াব মিষ্টি হেসে তার হৃদমোহিনী কে আগলে নেয়। এক, দুই পাঁচ মিনিট করে সময়টা আধাঘণ্টায় চলে যায়। আত‌ইয়াবের হঠাৎ খেয়াল হয় খাওয়ার কথা‌‌। না খেয়ে আছে তারা! একটু পর অতিথি রা সব চলে আসবে তখন খাওয়া সম্ভব না। তাই হৃদযা কে ছেড়ে হাত ধরে নিচের দিকে হাঁটা ধরে। হৃদযা পুলকিত নয়নে নিজের স্বামির সাথে পা মেলায়।

চৌধুরী বাড়িতে সব আত্মীয়রা ব‌উভাতের রাতেই চলে গেছে। যারা ছিলো আজকে সকালে র‌ওনা হয়েছে‌। বর্তমানে চার সদস্য বাড়িতে উপস্থিত। সবাই যে যার ঘরে রেডি হচ্ছে। মৃহান মটকা মেরে শুয়ে ছিলো। সুবাহ সেই কখন থেকে ডাকছে উঠার নাম নেই। আরেকটু কাছে গিয়ে ধাক্কা দিতেই টান দিয়ে নিজের উপর ফেলে দেয় সুবাহ কে। প্রথমে ভয় পেলেও পরে রেগে যায় সুবাহ।

কটমট করে তাকালেও রাগান্বিত দৃষ্টি বেশীক্ষণ‌ স্থায়ী থাকে না। মৃহানের ঘুমঘুম দৃষ্টি সুবাহ’র চোখে মুগ্ধতা এনে দেয়। কতটা সুন্দর লাগছে মানুষটাকে। অপলক তাকিয়ে থাকে। মৃহান হাই তুলে ভ্রু নাচায়। লজ্জা পায় না সুবাহ। লজ্জা পেলে মানুষটাকে দেখবে কি করে! মৃহান এবার নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়; চেয়েছিলো ব‌উ কে একটু লজ্জা দিবে তা না ব‌উ তার তাকেই লজ্জা দিয়ে দিলো। সুবাহ কে উঠার জন্য ইশারা করেও লাভ হয় না। সুবাহ অকোপটে বলে উঠে,

গিভ মি এ সফট কিস জামাই!
ভড়কে যায় মৃহান। সুবাহ খিলখিল করে হেসে উঠে পড়ে। মানুষটার বোকা বোকা চাহনী বড্ড ভালো লাগে তার। মৃহান ব্যাপার টা বুঝে চেপে ধরে সুবাহ কে। অধর স্পর্শ করার আগেই দরজায় ঠক ঠক শব্দ হয়। পানসে মুখে ছেড়ে দেয় সুবাহ কে। অপর পাশ‌ থেকে হৃদান চেঁচিয়ে বলছে,

তাড়াতাড়ি করো‌। আর কত। ব‌উ নিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে বসে আছে‌। আর এদিকে আমি ছটফট করে মরছি। কখন দেখতে পাবো। একবার বিয়েটা হোক পনেরো দিন দরজায় খুলবো না।
কথাগুলো বলেই হৃদান চলে যায়। মৃহান-সুবাহ একসাথে শব্দ করে হেসে দেয়। ঝটপট রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে।
হৃদান গাড়িতে উঠেই একটা ম্যাসেজ পাঠায় আদর কে। নিজেই দু’বার লিখাগুলো পড়ে মুচকি হাসে। কখন‌ যে প্রেয়সী কে দেখতে পাবে!

আত‌ইয়াব নিচে আসতেই সবাই কে ড্রয়িংরুমে দেখতে পায়। ব্যাপার টা বুঝতে পারে না সে। এখন তো সবার বাইরে বা কাজে থাকার কথা। তবে বিশেষ একটা পাত্তা দেয় না। সবাইকে দেখে তার আরেকটা ইচ্ছে হয়; যদিও প্রথমে চাইছিলো ঘরে নিয়েই তিনজন কে খাওয়াবে, এখন সে এটা করবে না

। সবার সামনেই বোন আর অর্ধাঙ্গিনীকে খাইয়ে দিবে। সবাই’কে বুঝতে হবে এরা তিনজন তার জীবনে সকল কিছুর উর্ধ্বে।
আদর গিয়েছিলো বাইরে; সবকিছুর ফিনিশিং দেখতে গিয়েছিলো।‌ বাড়িতে ঢুকার সময় ফোন বেজে উঠতেই ফোনের দিকে চোখ যায়। ওপেন করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে,

আসছি! আর কিছুক্ষণ মাত্র অপেক্ষা। চোখের তৃষ্ণাটা মিটিয়ে মনের তৃষ্ণা টা দাবিয়ে রাখতে হবে। তবে মনের তৃষ্ণা টাও মেটাবো। খুব একটা সময় দিতে পারবো না। তৈরি হয়ে নাও মনের রাজরানী!
ম্যাসেজ টা কয়েকবার আওড়ায় সে।

মনের মধ্যে শিতল এক অনুভূতি ঘুরঘুর করছে। মুচকি হেসে ভেতরে যেতেই সে ও খানিকটা ঝটকা খায় ছোট বড় সবাই কে দেখে। প্রচন্ড গরম লাগছে বিদেয় সবার আড়ালে সে ঘরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তা আর হলো ক‌ই, পা বাড়ানোর আগেই আত‌ইয়াব ডেকে উঠে। তার মুটেও ইচ্ছে করছিলো সবার সামনে আত‌ইয়াবের হাতে খেতে।

আত‌ইয়াবের মামা বাড়ির মিসেস আতিয়ার পরিবার ছাড়া যে আর কেউ ওদের ঠিক নিতে পারে না সে বুঝেছে আগেও। তবে বিশেষ কোনো পাত্তা সে কাউকেই দেয়নি। কে কি তার ব্যাপারে ভাবলো সে জাস্ট ইগনোর করে; আগের আদর থেকে এই আদর সম্পূর্ণ ভিন্ন। কিন্তু তার ভয় আত‌ইয়াব কে নিয়ে। কেউ কিছু বললেই আত‌ইয়াব রেগে যাবে আর সে চায় না অনুষ্ঠানের দিনে কোনো ঝামেলা হোক।

আত্মীয়রা মনে বিদ্বেষ নিয়ে আহমেদ বাড়ি ত্যাগ করুক। সে তার বড় আব্বুকে বলতে শুনেছিলো শত্রু পক্ষ‌ও আহমেদ বাড়িতে পা দিলে তাকে অনাদর করা হয় না। সবার ক্ষেত্রেই ভালো ছিলো শুধু মাত্র তাদের ক্ষেত্রেই লোকটা কেন এমন করলো ভেবে পায় না আদর‌। জোরে দম ফেলে এগিয়ে গিয়ে আত‌ইয়াবে পাশে বসে পড়ে। আদর কে দেখেই হৃদযা আত‌ইয়াবের পাশ‌‌ থেকে উঠে আদরকে বসার জায়গা দেয়।

এতে আত‌ইয়াবের মনে হৃদযার প্রতি সম্মান‌ যেন হাজার গুন বেড়ে গেল। হৃদযা মিষ্টি হেসে আত‌ইয়াবের দিকে তাকায়; আত‌ইয়াব মুগ্ধ হয়ে অবলোকন করে। ঠিক তখনি ঝড়ের বেগে কেউ এসে আত‌ইয়াবের কোলে বসে পড়ে। আত‌ইয়াব কিছুটা চমকালেও রামিয়ার খিলখিল হাসিতে নিজেও‌ যোগ দেয়। রামিয়া হেঁটেই আসছিলো কিন্তু মিসেস রোকেয়ার আদরের দিকে তাকিয়ে মুখ বেঁকানো দেখেই তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায়।

আরেকটু জ্বালানো যাক এ‌ই বুড়িকে ভেবেই সে দৌড়ে আত‌ইয়াবের কোলে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ কথা বলতেই সার্ভেন্ট খাবার নিয়ে আসে। হৃদযার যেন চোখ কপালে উঠে যায়। বড়দের সামনে তাকে খাইয়ে দিবে ব্যাপার টা কেমন হবে! খারাপ ভাববে ভেবেই সে উঠতে চাইলো কিন্তু আত‌ইয়াবের চোখ রাঙানোতে উঠতে পারলো না। দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলো।

আত‌ইয়াব সর্বপ্রথম রামিয়ার মুখে খাবার তুলে দিলো, তারপর আদরের মুখে। হৃদযার দিকে এগোতেই হৃদযা‌ সবার দিক একপলক তাকিয়ে ইতস্তত করে খেয়ে নিলো। আত‌ইয়াবের‌ রাগ সম্পর্কে সে ভালো করেই জানে। সবার চোখ ওদের চারজনের উপর। মিসেস আতিয়া আর আতিক আদরকেই দেখছে। আর সবার চোখেই বিদ্বেষ। মিসেস রোকেয়া তো চেঁচিয়ে বলেই উঠলো,

দামড়ি মেয়েদের খাইয়ে দিতে হবে। কেন ওদের হাত নেই? চটাং চটাং কথা তো ঠিকই বলতে পারে। সুবিধাবাদী মেয়েসব।
ফট করে চোখ তুলে‌‌ মিসেস রোকেয়ার দিকে তাকায় আত‌ইয়াব। চোখ দেখে বুঝার উপায় নেই মনে কি চলছে। হৃদযা মাথা নিচু করে নেয় মহিলার কথা শুনে। আদর এমন কটু কথা শুনলেও তার কোনোদিন এমন কিছু শুনতে হয়নি তাই হয়তো একটু বেশীই খারাপ লাগছে।

রামিয়া ঠোঁট চেপে হাসছে। কারণ সে চাইছিল‌ই এমন পরিস্থিতি আসুক আর আত‌ইয়াব ও‌ই মহিলা কে আচ্ছা মতো কথা শোনাক। অন্যদিকে আদরের মুখে ভয়। আত‌ইয়াবের বাম হাত চেপে ধরে। একপলক আদরের দিকে তাকিয়ে আবার মিসেস রোকেয়ার দিকে তাকায় আত‌ইয়াব। আদর হাত ছেড়ে দেয়; তার কথা এখন শুনবে না তার ভাই বুঝে গেছে। মিসেস রোকেয়া খানিকটা ভয় পেলেও নিজের আক্রোশমুখী রূপ বদলায় না। আত‌ইয়াব শান্ত কন্ঠে বলে উঠে,

প্রথম দিন ই বলে দেওয়া হয়েছিলো এ‌ই মেয়ে দুটো আমার কলিজা। সর্বপ্রথম ছোট টাকে আমিই কোলে নিয়েছিলাম আর বড় টাকে দ্বিতীয়। তোমার বোঝা উচিত ছিলো খালা। আর কথা হচ্ছে বেড়াতো এসেছো বোনের কাছে; বাড়িটা কিন্তু বোনের না! বোন‌কে নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকো না; বাড়ির মালিক নিয়ে টানাটানি করো কেন। এই দিকটা আত‌ইয়াব একটুও সহ্য করবে না।

আছো তো আর একদিন। আমি চাই না কোনোরকম অসম্মান নিয়ে বাড়ি ছাড়ো‌‌। গুরুজনের ব্যবহার এমন‌ টাইপ নয়। তাই ব্যবহারে একটু লাগাম টানো। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে সামনের মেয়েটা আমার অর্ধাঙ্গিনী; মানে আমার বাম পাজরের হাড়, আমার অংশ। তাকে কিছু বলা মানে আমাকে অপমান করা। আমাকে কিছু বললে আমি মেনে নিবো কারণ তুমি আমার খালা কিন্তু আমার‌ অংশ কে কিছু বললে মেনে‌ নেওয়ার প্রশ্ন‌ই আসে না। মোমের‌ মতো মন‌দের ভেঙে দিও না খালা; বড্ড পোড়ায় বুকে!

রামিয়া আর দেরী করে না; আত‌ইয়াবের গালে শব্দ করে চুমু খায়। খুব ভালো লেগেছে কথাগুলো। হৃদযার মুখে হাসি ফুটে উঠে। নিচু মাথা উঁচু করে সাবলিল ভাবে খেতে থাকে‌। আর আদর সে চোখ মেলাতে পারে না আত‌ইয়াবের চোখে। ভেবেছিলো আত‌ইয়াব কে তাদের খারাপ ব্যবহারের কথা জানতে দিবে না কিন্তু আত‌ইয়াব যে সব জেনে বসে আছে ভাবেনি। তাই খানিকটা খারাপ লাগছে। আদরের মনোভাব আত‌ইয়াব বুঝতে পারে। হালকা হেসে বলে উঠে,

ইউ ক’নো‌ না? আমার কাছে তোমরা কি! তোমাদের সব খবর আমার কাছে থাকে তাই নেক্সট টাইম এমন কিছু লুকানোর চেষ্টা করো‌ না। আর সবকিছুতে সবসময় আদর্শের দোঁহায় দিলে আদর্শের‌ই অপমান‌ হয়। অন্যায় অন্যায় ই!

আদরের মুখে হাসি ফুটে। পিয়ানি আতিকের পাশে বসে আছে মনমরা হয়ে। বারবার আত‌ইয়াবের দিকে তাকাচ্ছে। বিয়ের রাত থেকেই তার মন খারাপ‌। ‘ইয়েস সাফিন খান স্পিকিং’ এ‌ই শব্দটিতেই যেন সে আটকে আছে। আজকে সে ও দুপুরে খায়নি‌। ক‌ই আত‌ইয়াব তো তাকে খাইয়ে দিলো না। সে কি বেশীই খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে!

এমন‌ই ভাবছিলো, ভাবুক পিয়ানির দিকে একনজর তাকায় আত‌ইয়াব। এ কয়েকদিন সে মেয়েটার সাথে কথা বলেনি। রামিয়াকে অপদস্থ করা বিষয়টা জানতে পেরেই রাগ হয়েছিলো‌। তবে বেশ লক্ষ্য করছে দু’একদিন। কেমন মনমরা থাকে। সে শুনেছে পিয়ানি খায়নি। মায়া হলো তার; এটা ঠিক আদরদের উপরে কেউ নেই তবে সে পিয়ানিকেও ভালোবাসে। তাই গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

পিয়ানি কাম!
ভয় ভয় নিয়ে উঠে দাঁড়ায় পিয়ানি। খারাপ ব্যবহারের জন্য তাকেও কি বকা দিবে? সে তো এখন ওদের কিছু বলে না। ভিষণ কান্না পেল পিয়ানির। আত‌ইয়াবের কাছে যেয়েই বলে উঠে,
আ’ম সরি ভাইয়া। সেদিনের ঘটনার জন্য। অন্যায় করেছি তবে আর করবো না।
আত‌ইয়াব হাসলো। মেয়েটি অতিরিক্ত আদরে কিছুটা বিগড়ে গিয়েছিলো। এখানে এসে ঠিক হয়ে গেছে। ভালো লাগলো তার। কিছুটা হেসে বলে উঠে,

ভুল বুঝতে পেরেছিস খুশি হলাম‌। আমি তোকে খাইয়ে দিতে ডেকেছি।
পিয়ানির চোখ এবার ছলছল করে উঠে। আদর নিজেও মিষ্টি হেসে উঠে দাঁড়ায়। তার খাওয়া হয়ে গেছে। এভাবেই অনেকটা সময় কেটে যায়। গেস্ট রা প্রায় চলে এসেছে। তাই আত‌ইয়াব চলে যায় রেডি হতে। আবার আজকে শুশুড় বাড়ি যেতে হবে।

সব গেস্টরা চলে গেছে। রাত প্রায় আটটার মতো বাজে‌। চৌধুরী পরিবার ড্রয়িং রুমে বসে আছে মেয়ে আর মেয়ে জামাই কে নিয়ে যাবে। আত‌ইয়াব হৃদযাকে নিয়ে ভেতরে গেছে ফ্রেস হতে। এসব ভারী সাজ নিয়ে হৃদযার অস্বস্তি হচ্ছিলো‌। আত‌ইয়াবরা জলদি করে রেডি হয়ে নিচে নামে। আদর হৃদান বাগানে বসে আছে।

গেস্টরা চলে যেতেই আদর কে জোর করে বাগানে নিয়ে এসেছে। দুজনে হাতে হাত রেখে বসে আছে। মোবাইলে সময়টা দেখে নিয়ে আদর উঠে দাঁড়ায়। পান্চুকে ডাক দিয়ে হৃদান কে নিয়ে আসতে বলে আগে চলে যায় সে। আদর বাড়িতে ঢুকতেই সবাই কে বসে থাকতে দেখে হৃদযা-সুবাহ’র কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তখনি মিসেস আতিয়া আত‌ইয়াব কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

আত‌ইয়াব বাবা আমার একটা কথা ছিলো। মধ্যে সময় পাইনি আর তুই আজ শশুড়বাড়ি যাচ্ছিস, আমরা তো কাল বাড়ি ফিরবো তাই কথাটা এখন বললে ভালো হয়।
সবাই আবার বসে পড়ে। নাবিল চৌধুরী উঠতে চাইলে আত‌ইয়াবের মা আটকায়। পরিবার ই তো এখন। মিসেস আতিয়া আদর কে ডেকে তার পাশে বসায়। আত‌ইয়াবের ভ্রু কুচকে আসে। আতিক লাজুক হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সে জানে তার মা কি বলবে! মিসেস আতিয়া সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

আমার আদর কে খুব পছন্দ হয়েছে, আতিকের সাথে বেশ মানাবে। আমি আমার ছেলের জন্য আদরের হাত চাই। আত‌ইয়াব না করিস না তুই জানিস আতিক কেমন ছেলে। খুব ভালো থাকবে তোর বোন!
চৌধুরী বাড়ির সবার মুখেই ভয় ফুটে উঠে। হৃদযা আশেপাশে তাকিয়ে হৃদান কে না দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আদর তো পারে না সবকিছু ভেঙে ফেলে। মহিলা নিজের সীমা ভুলে গেছে। আত‌ইয়াব বলে উঠে,
সেটা আমাকে আলাদা বললেই ভালো হতো বড় খালা। এত সবার মাঝে বললে কেন?

মিসেস আতিয়া ঢোক গিলে। তার ভাই ই তো বুদ্ধি দিলো সবার সামনে বলতে‌। কিছু বললো না, চুপ থাকলো। আত‌ইয়াব তার মায়ের দিকে তাকালো গম্ভীর চোখে। তার মা খুব ভালো করেই জানে আদরের সম্পর্কে তাহলে কেন এলাউ করলো? সে এটাই বুঝতে পারছে না। কিছু বলবে তার আগেই রুশভারী কন্ঠ শুনে থেমে যায়,
আপনার ছেলের সাথে আদর কে একদম মানাচ্ছে না। আদর আহমেদ‌ কে একমাত্র হৃদান চৌধুরীর সাথে মানায়। কারণ উপর ওয়ালা হৃদান চৌধুরীর জন্য‌ই ওই মেয়েটিকে তৈরি করেছে।

হৃদানের চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুর‌ ঝরছে। কোনো প্রেমিক ই প্রেমিকার অন্য কারোর সাথে বিয়ে কথাটি সহ্য করবে না সেখানে হৃদানের মতো পাগলাটে প্রেমিক হলে তো কথায় নেই। আদরের নিজের ও কিছুটা ভয় লাগে। আস্তে করে উঠে হৃদানের পাশে দাঁড়ায়।

হুইল চেয়ার ডেঙিয়ে হৃদানের কাঁধে হাত রাখে। চোখ বুজে নেয় হৃদান। এ‌ই মেয়েটার স্পর্শ তার কাছে বিদ্যুৎ এর মতো মনে হয়। শরীর একদম শিরশির করে। হৃদান বেশ কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে আদর কে একপলক‌ দেখে নেয়। কড়া কন্ঠে মিসেস আতিয়া কে কিছু বলবে তার আগেই নাবিল চৌধুরী পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বলে উঠে,

আপা কষ্ট নিবেন না। আদরের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। ও‌ই যে আমার ছেলে ওর সাথে‌।
মিসেস আতিয়ার মুখটা মলিন হয়ে যায় সাথে আতিকের। এতটা দিন‌‌ কি কি ভাবলো সে। তবুও সাহস করে তিনি বলেন ,

আমার ছেলে আদর কে বেশ পছন্দ করে। এত মেয়ে দেখালাম পছন্দ হয়নি, আদর কেই পছন্দ করেছে। আপনার ছেলের জন্য মেয়ের অভাব হবে না। আদর কে আমার ছেলের জন্য দিন না ভাই।
এবার হৃদানের রাগ যেন সপ্তম আসমানে চলে যায়। হুইল চেয়ারের হাতল শক্ত করে ধরে আছে। আদরের দিকে তাকিয়ে ধমকে বলে,

এখানে কি করছো?
আদর ভয় পেয়ে যায়। চোখ ভরে আসে তার। হৃদানের বুকে চিনচিন ব্যাথা করে উঠে। মেয়েটাকে কেন রাগ দেখাচ্ছে। দোষ তো ওর না। তাই নিজেকে শান্ত করে বলে উঠে,
আদু পাখি আ’ম সরি। আ’ম রিয়েলি সরি। যাও গাড়িতে গিয়ে বসো। আমরা আসছি। তুমি আজ তোমার ভাইয়ার সাথে আমাদের বাড়ি যাবে।

আদর দাঁড়ায় না ছলছল চোখ নিয়ে বাইরে চলে যায়। হৃদান হৃদযা-সুবাহ কে ইশারা করে আদরের কাছে যেতে বলে। আদরের খুব ইচ্ছে ছিলো হৃদান কি কি বলে শুনবে। অভিমান‌ নিয়ে গাড়িতে বসতে গিয়েও ছুটে আসে। দরজার কাছে লুকিয়ে হালকা মাথা বের করে ভেতরে চোখ দেয়। হৃদযা-সুবাহ আদরের দেখাদেখি লুকিয়ে পড়ে। হৃদান এবার আয়েশ ভঙ্গিতে বলে উঠে,

আচ্ছা আতিক ভালোবাসেন আদর কে?‌
আতিক মায়ের চোখ রাঙানো তে মাথা নাড়ায়। হৃদানের রাগ হলেও বাঁকা হেসে বলে,
আপনার পাশের টেবিলের ড্রয়ারে রিভলবার আছে। ওটা নিয়ে আপনার মা কে ফটাফট শুট করে দিন। আমি দাঁড়িয়ে থেকে আপনার সাথে আদরের‌ বিয়ে দিবো। দেখি আপনার ভালোবাসা!
চমকে উঠে সবাই। এটা কেমন‌ কথা। আদর ওরা তিনজন ফিক করে হেসে দেয়। মিসেস আতিয়া রেগে বলে উঠে,

কি সব বলছে এ‌ই বেয়াদব ছেলে। শুট করবে মানে?
দেখেন আপনার ছেলের ভালোবাসা। এখন পর্যন্ত ড্রয়ার টাও‌‌ খুলতে পারলো না। এ‌ইটুকু কলিজা নিয়ে আদর আহমেদ কে ভালোবাসতে আসে।
তাচ্ছিল্য হাসে হৃদান। নিজের প্যান্টের ভেতর থেকে রিভলবার বের করে আতিকের দিকে তাক করে। ভয় পেয়ে যায় তারা। হৃদান‌ বাঁকা হেসে বলে,

ভালোবাসিস আদর কে? এখন বল! মাথা নাড়া এখন। একদম কলিজা ভেদ করে ঢুকে যাবে বুলেট। আমার ভালোবাসার দিকে চোখ দেওয়ার সাহস কি করে হলো? তোকে যে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি তাই অনেক। তুই রিভলবার টাই বের করতে পারলি না আর আমি আদরের জন্য মরতেও পারি মারতেও পারি। দেখবি?
কথাটি বলেই আতিকের গা ঘেঁষে বুলেট ছুড়ে মারে। খানিক টা কেটে গিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। মিসেস আতিয়া চিৎকার করে উঠে। আদর ওরাও এখন থমকে গেছে। এতটা ডেসপারেট হয়ে গেল‌ কেমন করে। এবার হৃদান শান্ত কন্ঠে বলে উঠে,

জ্বলছে? পোড়াচ্ছে? তোর মায়ের কথা শুনে আমারও পোড়াচ্ছিলো। জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছিলাম। যে আমি মেয়েটার চোখের কাজল কে হিংসা করি সেই আমার সামনেই তোর মা কেমন‌ অকোপটে বলছে তোর সাথে আদর কে মানায়! তুই পছন্দ করিস! আমাকে ছেড়ে দিতে বলছে। মা‌ ছেলের কলিজা কতবড় দেখবো না?
সবাই স্তব্ধ হয়ে হৃদান‌ কে দেখছে। এ কেমন‌ ভালোবাসা। কিভাবে অবলিলায় সহজ স্বীকারোক্তি! অন্যকে মারতেও‌ হাত কাঁপে না। সবার চোখ যেন এরকম দৃশ্যে ধাঁধিয়ে গেল। হৃদান আবার পাগলামি করে বলে উঠলো,

আমি নিজেকেও আঘাত করতে পারি। আদর আহমেদ নামক মেয়েটা শুধু হৃদান‌ চৌধুরী। মারতেও পারে, মরতেও পারি। দেখবি?

কথাটা বলে হাতের দিকে রিভলবার তাক করতেই নাবিল চৌধুরী দাঁড়িয়ে যায়। আত‌ইয়াব নিজেও অস্থির হয়ে যায়। কড়া ডোজের ঔষধের জন্য মাথা এমনিতেও এলোমেলো থাকে তার উপর সবচেয়ে দুর্বল জায়গায় আঘাত পেয়ে এ‌ই লোক দিশেহারা হয়ে গেছে। আদর কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে। পাগলামির সীমানা ছাড়িয়ে গেছে এ‌ই লোক। চিৎকার করে বলে উঠে,

আমার কসম হৃদ। নিজেকে আঘাত করবেন না হৃদ। আমার কসম। আমি মরে যাবো হৃদ, মরে যাবো‌। রিভরবার ফেলুন!

আদরের কন্ঠ শুনেই হৃদান শান্ত হয়ে যায়। ধপ করে পড়ে যায় রিভলবার। আদর দৌড়ে এসে হৃদানের গলা জড়িয়ে ধরে। চোখ বুজে নেয় হৃদান। মাথায় কেমন দপদপ করছে। অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে। আত‌ইয়াব ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজের ঘরে দৌড় দেয়। এক্সিডেন্টে লোকটা মাথাতে যে ভালোয় আঘাত পেয়েছে আত‌ইয়াব ডক্টর হয়ে ব্যাপারটা আন্দাজ করেছে। অথচ হৃদান এটা লুকিয়ে গেছে। আদরের জড়িয়ে ধরা অবস্থায় আত‌ইয়াব ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে দেয়। হৃদান সুঁই ঢুকানোতেই বুঝতে পারে। আদরের একহাত আঁকড়ে ধরে ফট করে চোখ খুলে। বিড় বিড় করে বলে উঠে,

আদর শুধু আমার। আদর শুধু হৃদের। একদম মেরে ফেলবো ওর সাথে আর কারো নাম যুক্ত করলে। আদর আমার। একান্ত‌ই আমার।
কথাটি বলেই ঢুলে পড়ে আদরের হাতের‌ উপর। আত‌ইয়াব চোখ দিয়ে আশ্বাস দেয় চৌধুরী পরিবার কে। সবাই কিছুটা শান্ত হতেই আত‌ইয়াব সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

ঘুমাতে যাও, অনেক নাটক হয়ে গেছে।
কিন্তু আদর এখন আর চুপ থাকতে পারলো না। হৃদানের ক্ষেত্রে সে কোনো কম্প্রমাইস করবে না। শক্ত কন্ঠে বলে উঠে,

বড়‌আম্মু তোমার বাবার বাড়ির লোকদের বলে দিও কালকে যেন আর না দেখি এ‌ই বাড়িতে‌। সব কিছুর সঠিক একটা নিয়ম আছে। বলা নেই হুট করেই কিছু বলে‌ বসবে আর মেনে নিবো ভাবা বোকামি। অনেক দেখেছি সবার ব্যবহার। আমার বাড়ি আমার ডিসিশন।

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ১৬

হৃদান কে নিয়ে বেরিয়ে যায় আদর। আদরের দেখাদেখি চৌধুরী পরিবারের সবাই বেরিয়ে যায়। এতকিছুর মাঝেও আদর-হৃদানের ভালোবাসা তাদের মুগ্ধ করেছে। অতিরিক্ত পাগলামি টাইপ ভালোবাসা। এমন ই থাকুক ভালোবাসা। ভালোবাসা সুন্দর!

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ১৮