মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ৪

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ৪
Tahrim Muntahana

ব্যস্ত নগরীতে সবাই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত। কাজ না থাকায় হ‌ইতো কেউ কেউ নিজেকে নিয়ে ভাবতে ব্যস্ত। সবাই ব্যস্ত; কেউ কারো দিকে ফিরে তাকাবার আগ্রহ‌ও যেন পায় না। সময়ের ব্যবধানে সবাই নিজের কার্যসিদ্ধি করতে এতটাই তৎপর হয় যে বিপরীত কাউকে প্রাণে মারতেও বুক কাঁপে না। যার প্রমাণ বর্তমানে হিয়ান খান।
হিয়ান‌ খান যখন দেখলো তার বাঁচার আর কোনো পথ নেই তখন মুখে কাঠিন্য ফুটিয়ে নিজের হিংস্রতার প্রমাণ দিয়েই দিলো,

হঠাৎ করেই আমাকে টেক্কা দিতে উদয় হলো রাতাফ! প্রথমে ভাবলাম বন্ধুতু করে নিই, একসাথে বিজনিস করা যাবে। কয়েকটা ভালোমন্দ কথা বলতেই রাতাফ ডিলে রাজি হয়ে গেল। ভালোয় চলছিলো কিন্তু একদিন রাতাফ আমার কালো ব্যবসায়ের কথা জেনে যায়। হাজার হাজার টাকা লস হলেও সে আমার সাথে বিজনিস করবে না বলে জানায়। অনেক বোঝায় কাজ হয় না। আমাকে হুমকি দিতে শুরু করে! কি করতাম বলো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নিজের হার তো কেউ দেখতে পারে‌না। রাতাফ একবার পুলিশের কাছে কথাটি চালান করলে আমি তো শেষ হয়ে যেতাম‌ই; আমার ছেলে দুটোর ও ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যেত! একের পর এক হামলা চালাই; ব্যাটার ক‌ই মাছের প্রাণ। আহত হলেও কোনো ভাবে বে‍ঁচে যায়। কোনো ভাবেই সুরাহা করতে পারছিলাম না। তখন‌ই আমার কাছে আসে রাজিব।‌ নতুন দিশা খুঁজে পাই। দুজনে মিলে প্লেন করি। রাজিব লুকিয়ে স্টোর রুমে ড্রাগস রেখে আসে।

আর আমাদের একটা অফিসার ঠিক করাই ছিল। ইশারা মাত্র‌ই অফিস সার্চ করে । লুকিয়ে রাখা ড্রাগস গুলো খুঁজে পেয়ে কোমড়ে দড়ি পড়িয়ে নিয়ে যায়। আহ কি দৃশ্য। অফিস কিছুদিন বন্ধ‌ থাকে। পুনরায় রাজিব চালু করে। দুইজনে মিলে ব্যবসায় করছিলাম। তখন‍ও আমার রাগ মেটেনে। রাতাফ খুব চালাক। ওর ব‍উ যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলো। আমার ধরা পড়ার ভয় ছিলো। তাই‌ সুযোগ বুঝে টাকা খাইয়ে রাতাফ কে বের করি।

তারপর দিন ডেকে পাঠাই প্লেন করে। পথিমধ্যে গাড়ি এক্সিডেন্ট করিয়ে যমের দোয়ারে পাঠিয়ে দিই। হা হা হা! তারপর শুরু হয় আমার সাম্রাজ্য! তবুও যেন রাতাফের উপর রাগ থেকেই গেল। সব সম্পত্তি রাতাফ দুই মেয়েকে দিয়ে গেল। এডাল্ট হ‌ওয়ার অপেক্ষা। কিন্তু আত‌ইয়াব বোনদের এমন‌ ভাবে আগলে রাখে নাগাল পাচ্ছিলাম না। প্লেন করি আবার। ততক্ষণে আদর ভোলাভোলা থেকে নিজেকে কঠিন‌ করে নিয়েছে।

একদিন হুট করেই ছোট ছেলে আবদার করে তার আদর কে চাই! যাক অবশেষে প্লেন এক্সিকিউট করার সময় হলো। খুঁজ নিয়ে জানলাম হৃদযার বেস্টফ্রেন্ড। একদম কলিজা! সাফিন কে দেখাতেই হৃদযা কে মনে ধরলো তার। আমার পরিকল্পনা সম্পর্কে তারা‌ কিছুই জানে না। সাফিন রাফিনের কানে‌ তুলে‌ দিলাম আদরের নিষ্ঠুরতার কথাগুলো। হতাশ‌ হয়ে সবটা আমার উপরেই ছেড়ে দিলো। আমি জানতাম এটাই হবে।

বিয়ের প্লেন শুনে প্রথমে নাকচ করে। আমি উঠে পড়ে লাগি বোঝাতে। যখন বললাম বিয়ের পর আদরের মন নরম হবে ছেলে রাজি হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি বিয়ে ঠিক করলাম। হৃদযার সাথে বিয়ে ঠিক করি আমি আমার ব্যবসায় সার্থের জন্য; আদর কে ব‌উ করতে পারলে তার সব সম্পত্তি তো আমার ছেলের ই! কিন্তু প্লেন ফ্লপ! আদর কোনো ভাবে জেনে যায় আর‌ নিজেরা পরিকল্পনা করে আমার সম্মান ধুলোয় মিশেয়ে দেয়!

আগের জেদ টা আবার মাথায় চড়ে বসে। এরমধ্যেই আদর নিজের অধিকার নিয়ে অফিসে বসে। রাজীব রেগে যায়। দুইজনে আবার‌ প্লেন করি। কর্মচারীদের হাত করতে চেয়েছিলাম কিন্তু একটাও রাজি হয় না। প্রয়োজনে মরে যাবে তবুও বেইমানি করবে না। সেই রাতাফের সাথেই করা ষড়যন্ত্রটার পুনরাবৃত্তি করলাম। সেই অফিসার কেই সঙ্গে নিলাম। আদর যাওয়ার আগেই অফিসার অফিস সার্চ করে। সাথে করে নিয়ে যাওয়া কিছু ড্রাগস রেখে আসে। সবকিছু আমাদের মতোই হচ্ছিলো। আদর এখন জেলে থাকার কথা কিন্তু!

কিন্তু হৃদান চৌধুরী কি‌ করে তার কলিজা কে একলা ছেড়ে দিতে পারে! কলিজা টা বড্ড ছটফটে তো; এদিক সেদিক হলেই লাফাতে শুরু করে!
এতক্ষণ সবাই ঘৃণ্য চোখে অবাক হয়ে হিয়ান খানের কথা শুনছিলো। তার কথা শেষ‌ ন হতেই হৃদান কথাটি গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে! এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল সবাই। হৃদান হিয়ান খানের সামনাসামনি বসে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠে,

আমি চাইলে তখনি অফিসারের ঘাড় থেকে মাথা টা আলাদা করে দিতে পারতাম! তখনি প্রমান করতে পারতাম আদর নির্দোষ। তোরা সিসি টিভি বন্ধ করতে পারলেও আমার লাগানো গোপন ক্যামেরার কি করতি? এই বুদ্ধি নিয়ে খেলতে নামিস? বয়স হলো অথচ বুদ্ধি হলো না।

হৃদানের ঠেস দেওয়া কথা‌ শুনে হিয়ান‌ খানের রাগ হলেও চুপ করে র‌ইলো। শান্ত, ঘুমন্ত বাঘের সামনে বসে টু শব্দ করা‌‌ মানে এক থাবায় জীবন‌ শেষ! হৃদান আদরের দিকে এক নজর তাকালো। মেয়েটা কেমন থম মেরে গেছে। আদর কে এক হাত দিয়ে আগলে‌ রেখেছে তার বোন। এতকিছুর মাঝেও হৃদান হাসলো। বন্ধুতা খুব প্রকট! আত‌ইয়াব তার বাবার মুখোমুখি দাঁড়ালো। চোখ মুখে মলিনতা। আত‌ইয়াবকে দেখেই বিরক্তি চোখে তাকালো রাজীব আহমেদ। যে ছেলে বাবার বিরুদ্ধে থাকে সে ছেলের প্রতি আবার কিসের মায়া! আত‌ইয়াব মলিন কন্ঠে বলে উঠলো,

কেন এতকিছু করলে বাবা? তোমার ভাই তো! এক‌ই রক্ত ব‌ইছে শরীরে; সেই রক্তকে মারতে কষ্ট হলো না তোমার?
এ যেন কুকুরের সামনে খাবার দিয়ে বলছে শান্ত থেকো; ঘেউ ঘেউ করো না!কথা শুনা মাত্রই রাজীব আহমেদ আত‌ইয়াবের গালে ঠাস করে চ‌ড় মারে। চমকে উঠে সবাই। আদর নিজের দুহাত মুঠো করে নেয়! ভাই তার প্রাণ; একটা আঁচড় পড়লেই কেঁদেকেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলতো! আদর এগোতে নিলেই হৃদান আটকে দেয়; বাবা-ছেলের‌ মধ্যে যাওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু আদর তো আদর‌ই! কিছু মানুষের ক্ষেত্রে নো কম্প্রমাইস! একপলক হৃদানের দিকে তাকাতেই হৃদান হাত ছেড়ে দেয়। চোখের গভীরতা মে বিশাল। রাজীব আহমেদ একটা থাপ্পড় দিয়ে তাচ্ছিল্য সুরে বলে উঠে,

তুই ও তো আমার ই রক্ত! তোর কষ্ট হচ্ছে বাবাকে হাতকড়া পড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে?
আত‌ইয়াব বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো! এতে যেন‌ রাজীব আহমেদ আরো রেগে গেলেন। রাগ টাকে সহ্যসীমার বাইরে নিতে আত‌ইয়াব মলিন‌ কন্ঠে বলে,

সেটাই তো; তোমার রক্ত হয়েও কেন রাতাফ আহমেদের চরিত্র পেলাম বলো তো! তবুও আমার কষ্ট হচ্ছে! বাবা কে হারানোর কষ্ট হচ্ছে! এমন টা না হলেও পারতো বলো! সুখী একটা পরিবার হতে পারতো! বাবার ছায়ায় বাঁচতে পারতাম। ওই দুটো মেয়েকে এতিম হতে হতো না। আমার নিজের শৈশব বন্ধু ছোট‌আব্বুকে হারাতে হতো না।

আমার আরেকটা মাকে হারাতে হতো না। আমি কিন্তু জানি বাবা তোমার ভাইয়ের ব‌উকে আমি প্রথম মা বলে ডেকেছিলাম। সন্তান‌ জন্মদানে স্টেবল না হয়ে যখন‌ পুরো ছয়টা মাস তোমার ব‌উ হসপিটালে পড়েছিলো তখন পরম মমতায় ওই মানুষ দুটো আগলে রেখেছিলো আমাকে।‌ রাত দিন‌ জেগে মায়ের মমতা দিয়েছিলো। ব‌উয়ের বিরহে তখন হসপিটালের পড়েছিলো তখন নিজের সবটা দিয়ে ব্যবসায় টিকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো। শেষমেষ মানুষ‌ দুটোকে প্রতিদান দিলে মৃত্য!

নিশ্চুপ সবাই! সবার চোখ‌ই ছলছল করছে। হৃদান আত‌ইয়াবের কাঁধে হাত রেখে আশ্বস্ত করে। আদর হৃদযার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল‌ গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু সবাই কে অবাক করে দিয়ে রাজীব আহমেদ আদরের সামনে‌ দাড়ায়! হৃদান জলদি নিজের কাছে নিয়ে নেয় মেয়েটিকে। লোকটিকে দিয়ে বিশ্বাস নেই যদি আঘাত করে বসে! হৃদানের কাজে রাজীব আহমেদ একপলক তাকায়; ফের আদরকে কিছুক্ষণ দেখে মলিন‌ হাসে! ধক করে উঠে আদরের বুক। মানুষটার মলিন হাসি তাকে কষ্ট দিচ্ছে‌‌ কেন! ‌আদরের কেন জানি মনে হচ্ছে এই হাসিটাই কোনো অভিনয় নেই;‌ না‌‌ আছে কোন ছলনা‌। আদরের‌‌ ভাবনার মাঝেই রাজীব আহমেদ চিৎকার করে বলে উঠে,

আমি মেরেছি রাতাফকে। আমিই আদরকে ফাঁসিয়েছি। কারণ বলতে ইচ্ছুক নয়। অফিসার নিয়ে চলো আমাকে!
রাজীব আহমেদের কথায় সাংবাদিক, পুলিশ‌ সবাই বের হয়ে আসে। হৃদানের অনুমতি নিয়ে; দুজন কে নিয়ে চলে যায়। সাংবাদিক গুলোও লাইভ দেখাতে দেখাতে চলে যায় নিজেদের কাজে! বাড়িটায় রেখে যায় কিছু দুঃখ, হতাশা, দুটানা, রহস্য। রাজীব আহমেদের মলিন হাসির কারণ কি? কি ঝড় আসতে চলছে ওদের জীবনে! নাকি সব ঝড় শেষ!

সন্ধ্যা প্রায় ছয় টার মতো বাজতে চললো। সূর্যটা নিভু নিভু আলোয় জ্বলছে । রক্তিম বর্ণ ধারন করে আকাশ সহ পুরো পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে আকাশের বুকে ডুব দেওয়ার। এটাই যেন তার শান্তি ঠিকানা। আকাশকে ভালোবেসে আপন করে নেওয়ার শান্তি। কিন্তু সবার জীবনে ভালোবাসাকে আপন করে নেওয়ার ভাগ্য তো থাকে না। কারো কারো জীবনে ভালোবাসা টা চরম হতাশা হয়ে ধরা দেয়।

রাফিনের জীবনেও ঠিক তাই হয়েছে। ভাগ্য তার সহায় হয় নি। ভালোবাসাকে পায়নি অথচ মধ্যে থেকে রামিয়া নামক বুকের চিনচিন ব্যাথা টা নিয়ে প্রকৃতি বিলাশ করছে। রাফিন এসেছে তাদের পুরোনো বাংলোতে। গাছ পালায় ঘেরা বাংলোটা সত্যি অসাধারণ। যে কারো মন ভালো করতে সাক্ষম। কিন্তু রাফিনের মন ভালো করতে সক্ষম হচ্ছে না। কেনো বার বার রামিয়ার কথা মনে হচ্ছে? কেনো বার বার নিজেকে অপরাধী লাগছে তার?

সে জানে না! ভাবতে পারছেনা সে এসব।তাইতো ঘরে গিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো। ঠিক তখনি অনুভব করলো তার নাকের উপর কেউ রুমাল চেপে ধরেছে।এক সময় সব কিছুকে দূরে ঠেলে নেতিয়ে পড়ে বিছানায়। আগুন্তক ভালো করে চেক করে উঠিয়ে নেয় রাফিন কে। আস্তে আস্তে পা ফেলে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে আরও দুজন নেমে রাফিন কে বসিয়ে ছুট লাগায় গাড়ি করে‌ সবার মুখেই তৃপ্তির হাসি!
কি হতে যাচ্ছে?

কোচিং শেষ করে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে রামিয়া। আজকে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেলো। এতদিন পড়ায় মনোযোগ না দেওয়ায় হালকা পিছিয়ে গিয়েছিলো। তাইতো আজকে সবটা শিক্ষকের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছে।
পাঁচ মিনিট ধরে কোচিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে; ড্রাইবার চাচার আসার খবর নাই।বার বার ঘড়িতে চোখ বুলাচ্ছে দেখে। একটু পর এখানে একা থাকা মুশকিল হবে আবার সে একা যেতেও পারবেনা। ভেবে কোচিং এর ভিতর যেতে নিবে তখনি গাড়ির হর্ন শুনে থেমে যায়। ঘুরে তাকাতেই রামিয়ার কপালে ভাজ পড়ে। একটা ছেলে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ভয় হলো রামিয়ার।। তাড়াহুড়া করে ভিতরে ঢুকবে তার আগেই ছেলেটি বলে উঠলো,

রামিয়া দাঁড়াও। তোমাকে নিতে এসেছি আমি। আদর মেম পাঠিয়েছে।
রামিয়া স্বাভাবিক হতে গিয়েও হতে পারলো না। ছেলেটা কেমন এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ দেখে ফেললে চরম বিপদ। রামিয়ার সন্দেহ দৃষ্টি দেখে ভড়কে গেল ছেলেটি। আমতা আমতা করে বলল,
কি হলো গাড়িত উঠো৷ মেম একটা মিটিংয়ে আছে‌। আমাকেও জলদি যেতে হবে৷ সময় নেই হাতে। ড্রাইবার চাচা ছুটি নিয়েছে আজ।

রামিয়া উঠে বসল গাড়িতে। আদর না পাঠালে তো ছেলেটি এত কিছু জানতো না। তার ছোট্ট মাথায় এটা ঢুকেনি অনেক ভাবেই এসব খবর রাখা যায়। রামিয়াকে গাড়িতে উঠতে দেখে ছেলেটি এক মিনিট ও দেরি করল না৷ পা চালিয়ে গাড়িতে উঠে বসেই গাড়ি স্টার্ট দিলো। রামিয়া চুপচাপ বসে আছে । ছেলেটি একটু পর পর আড়চোখে তাকাচ্ছে রামিয়ার দিকে।। তার বড্ড মায়া হচ্ছে ছোট্ট মেয়েটির উপর। কিন্তু কাজ যে নিয়ে ফেলেছে; কিছুই করার নেই। লোকটি কিছুক্ষণ পরে গাড়ি থামাতেই চমকে উঠল রামিয়া। কিছু একটা ভাবছিলো সে। হুরমুর করে দুটি মেয়েকে গাড়িতে উঠতে দেখে রামিয়া বিচলিত হয়ে উঠলো,

এই এই কে আপনারা? গাড়িতে উঠছেন কেন?? আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?? আমার বাসা তো এদিকে না। কে আপনারা? বলুন কে আপনারা???
মেয়ে দুটি হেসে উঠলো, কিছু না বলে চুপ করে রইলো। রামিয়ার মাথায় আসলো কিছু একটা হচ্ছে। সে বিপদে পড়ে গেলো; এখন বার বার আদরের কথা মনে হচ্ছে তার। কেন যে আদরের কথা শুনে গার্ড নিলো না সে। ভালো লাগে না তার এসব।। এখন মনে হচ্ছে কত বড় ভুল করেছে সে৷ রামিয়া তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নামতে যেতেই মেয়ে দুটি হাত চেপে ধরল।

ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকে এলো রামিয়ার।শব্দ করল না। এ টুকু ব্যাথা তাকে কাবু করতে পারে না। জোর গলায় বলে উঠলো,
কারা আপনারা আমি জানি না। বাট আই সোয়ার একেকটার এমন হাল হবে যা কল্পনাও করতে পারবেন না।।। আদর আহমেদের বোনকে কিডন্যাপ করা? তার গায়ে হাত দেওয়া? এত সহজ হয়ে যাবে???
মেয়ে দুটির রাগ হলো খুব। হাতটা আরেকটু চেপে ধরে বলল,

এই তুই চুপ থাক। তোর বোনকে চিনিনা আমরা। দেখব কি করে তোর বোন।
রামিয়া এবার জোরে হেসে উঠলো। তার জন্যই এদের সাহস হয়েছে। আদরকে চিনলে হয়তো এরকম সাহস হতো না। রামিয়ার হাসি দেকে তিন জনই অবাক হলো। কিছুক্ষণ হেসে রামিয়া বলল,

হৃদান চৌধুরী কে চিনেন তো? তার কলিজার কলিজাকে কষ্ট দিচ্ছেন! টিকতে পারবেন তো?
এবার সবার টনক নড়লো রামিয়া কোন আদর আহমেদের কথা বলছে? সবার চোখে ভিতী‌ ভাব দেখা গেলো। হৃদান চৌধুরীর কলিজাকে তারা ভালো করে জানে।। এতো বড় একজন মডেল তবুও এসব গোপন করেনি বলেই জানতে পেরেছে তারা। আবার ভাবলো সাফিন ত না জেনে তাদের কাজ দেয়নি। কিছু হবে না। হলে সাফিনের হবে!

সোনালি সুর্যটা অনেকক্ষণ আগেই বিদায় জানিয়েছে। পাখির কলকাকলিও শোনা যাচ্ছেনা। মাঝে মধ্যে দূর থেকে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ আর তীব্র যানজটের শব্দই ভেসে আসছে। পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ ছিলো এইতো খানিক আগেই। হৃদান, হৃদযা, সুবাহ অনেকক্ষণ থেকে চলে গেছে। কিছুটা একা থেকে নিজেদের গুছিয়ে নিক। খবর দেখে সুবাহ’ও এসেছিলো। আত‌ইয়াব আদর কে জড়িয়ে ধরেই বসেছিলো ; হঠাৎ করে যখন ডাইভার জানালো রামিয়া কোচিং এ নেই পুরো বাড়ি আবার গমগম করে উঠল। বাহাদুর ছুট লাগালো কোচিং এর দিকে। আদর দিশেহারা হয়ে পুলিশ কে ফোন দিলো। নাহ কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছেনা!

ঘড়ির কাঁটার এগারো টা ছুঁই ছুঁই। অন্ধকার ঘরে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে রামিয়াকে । চুপচাপ চোখ বন্ধ করে সে বসে আছে। একটা কথাও বলেনিকে সে। কেউ যে ঘরে এসে লাইট জ্বালিয়েছে তাও সে খেয়াল করেনি। হঠাৎ পায়ের শব্দে নড়েচড়ে বসে রামিয়া। চোখ খুলতেই সাফিন কে দেখে চমকে উঠে।

সে চিনে ছেলেটিকে। রাফিনের ভাই! তাহলে কি রাফিন তাকে ধরে নিয়ে এসেছে? রাফিন কে জ্বলায় বলেই কি রাফিন তাকে মেরে ফেলার জন্য নিয়ে এসেছে? শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায় তার। মৃত্যুর কে যেনো খুব কাছে থেকে দেখছে। বার বার আদর-আত‌ইয়াব এর মুখ টা ভাসছে। প্রিয়জন কে কি আর দেখতে পারবে না? তার আগেই বাবা মায়ের কাছে চলে যাবে? চোখ দিয়ে জল ঘুরিয়ে পড়ার আগেই সাফিন যত্ন নিয়ে মুছিয়ে দেয়। হাতের বাধন খুলে বলে,

কেঁদো না বোন ! আমার এ ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। তোমার কোনো ক্ষতি করবো না তুমি যদি চুপচাপ থাকো আর। যদি তুমি বাড়াবাড়ি করো তোমার ভাইয়া আর আপুকে জানে মেরে দিবো। আমার হাত বহুত লম্বা আশা করি বুঝতে পারছো
? আমার কাজ হওয়ার পর সহি সালামতে তোমাক রেখে আসব। আদর আত‌ইয়াবের‌ও কোনো ক্ষতি করবো না .. শুধু চুপ থাকো!

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ৩

রামিয়া এক পলক সাফিন কে দেখে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার জীবনের পরোয়া সে করে ! খুব করে ; কিন্তু ভাইয়া আপুর জীবনের থেকে বেশি না। সে তো আপুর স্বপ্নের জন্য বেঁচে থাকতে চেয়েছিলো। সাফিন বুঝলো রামিয়া নিরব সম্মতি দিয়েছে । তাই নিশ্চিন্তে বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে। খুব সাবধানে কাজ করতে হবে তাকে.. হৃদান চৌধুরী জানার আগেই আদর কে হাতের মুঠোই নিতে হবে!

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ৫