মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ৬
Tahrim Muntahana
রাতের গুমোট পরিবেশ চিঁড়ে নতুন ভোরের সাক্ষাত হয়েছে। সূর্যটা তার জ্যোতি দিয়ে চারপাশ করে তুলেছে আলোময়। আঁধার কে করেছে পরাজয়। কিন্তু সবসময় হয়তো আলোর জয় হয় না। কেননা অন্ধকার না থাকলে আলোর অস্তিত্ব নিছক ছন্নছাড়া! আবার আলোর খুঁজ না মিললে অন্ধকারও আমরা চিনতে পেতাম না!
শহর থেকে দূরবর্তী বাড়িটাই উৎসব মুখর পরিবেশ। আদরের ছোট্ট ভাইয়ের বিয়ে; গোপনে হলেও আফসোস রাখার মতো আয়োজন করেনি সাফিন। সুন্দর করে ডেকোরেট করেছে! একদম আঁটসাঁট বেঁধে নেমেছে কয়েকটা জীবনকে দিশেহারা করতে! আর মাত্র কিছু সময় বাকি; তারপরেই আদর হয়ে যাবে কারো অর্ধাঙ্গিনী! হৃদানের উপর আর কোনো অধিকার থাকবে না তার, হারিয়ে ফেলবে ভালোবাসার মানুষটাকে! আর কখনো শোনা হবে না প্রেমময় বাণী গুলো, আর কখনো গভীর চোখে হারিয়ে যেতে পারবে না!
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
কি অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে ! বুকের চিনচিন ব্যাথাটা যেন দ্বিগুন হারে বাড়ছে! মনে হচ্ছে হৃদপিন্ডটা কেউ খুবলে খুবলে তোলার চেষ্টা করছে আর একটু পর অনিচ্ছাকৃত বিয়েটার অন্তিম পর্যায়ে হৃদপিন্ডটা শরীর থেকে আলাদা করে ফেলবে। আর সে গলাকাটা মুরগীর মতো ছটফট করতে করতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে শুধু একটা আফসোস থেকে যাবে! লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে প্রিয় মানুষটির জন্য অপেক্ষা করার মুহূর্তটার আফসোস রেখেই সে বিলীন হয়ে যাবে!
হাঁসফাঁস করতে থাকে আদর। কথাগুলো ভাবলেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে তার। ভিষণ কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না। দম বন্ধকর পরিস্থিতিতে একটা ভরসার হাত দরকার। কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই! যেন চারদিক মরুভূমি! নিজের পড়া শাড়িটার দিকে এক নজর তাকায় আদর; লাল রঙের শাড়ি কিন্তু এই মুহূর্তে তার কাছে ফাঁসির দড়ির মতো লাগছে! রাগে খামচে ধরে দুহাত দিয়ে, ঠিক তখনি হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে হৃদযা-সুবাহ! আদর আর নিজেকে আটকাতে পারে না; হৃদযার কোমড় আঁকড়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। আদরের এমন অবস্থা দেখে তারাও ঠিক থাকতে না ! তাদের হাতে এখন কিছুই নেই। তবে শেষ চেষ্টা করতে ক্ষতি কি!
হৃদযা-সুবাহ ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য যখন উঁকিঝুঁকি করছিলো তখন দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে সাফিন। দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সাফিন হেসে অবলিলায় তার খারাপ পরিকল্পনার কথা জানায়। কষিয়ে একটা চড় ও খায় হৃদযার হাতে! তবে হৃদযাকে কিছু বলে না; মেয়েটির প্রতি দুর্বল যে! আদরের কাছে পাঠায় সাপোর্ট দেওয়ার জন্য।
আদরকে শান্ত করে ঘরের দরজা টা আটকে দেয় সুবাহ! বিচলিত হয়ে বলে উঠে,
কি করে হলো এসব? তুই রাজি হলি কেন বিয়েতে?
আদরের চোখ আবার ছলছল করে উঠে। ফ্যাঁচফ্যাঁচ কন্ঠে বলে উঠে,
রামিয়া, মামনি কে আটকে রেখেছে এখনো! তোদের কেও কিডন্যাপ করেছে। আমার হাতে কিছুই করার ছিলো না। ফোন টাও নিয়ে নিয়েছে। কিচ্ছু করার নেই আর । আমি হারিয়ে ফেললাম হৃদকে!
হৃদযা কিছু না বলে ভাবতে থাকে। কিছুক্ষণ ভেবে লাফিয়ে বলে উঠে,
আমাদের পালাতে হবে!
অসম্ভব আমি ওদের ছেড়ে কিছুতেই যাবো না। মেরে ফেলবে ওদের!
আদরের কথায় হৃদযা কপাল কুঁচকে ফেলে। সে কখন বলল তারাই শুধু যাবে। বিরক্ত হয়ে বলে উঠে,
আমার ভাই যে তোর মাথা নষ্ট করে দিয়েছে আগেই বুঝতে পেরেছিলাম এখন শিউর হলাম! গাধিই ওদের কেও ছাড়িয়ে আনবো! তার জন্য আমাদের এক জোটে কাজ করতে হবে!
আশার আলো খুঁজে পায় আদর। সে জানে সুবাহ কিছুটা হাবাগোবা হলেও হৃদযা খুব বিচক্ষণ। ওর বুদ্ধি মানেই ভ্রাইডাল কিছু। নড়েচড়ে বসে দুজনই হৃদযার দিকে তাকায়। হৃদযা বিজ্ঞ ব্যক্তির মতো বলে উঠে,
তোর বিয়েটা করে নেওয়া উচিত তবেই আমরা ছাড়া পাবো! তার পর ডির্বোস দিয়ে ভাইয়াকে বিয়ে করবি!
চোখ মুখ অসম্ভব রকমের কুচকে আসে আদরের। এটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। আদরের মনোভাব বুঝতে পেরে হৃদযা হাঁটতে গিয়ে ঠাস করে পড়ে যাওয়ার ভান করে আদরের উপর পড়ে যায়! দুজনেই বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে বলে উঠে,
চুপ আদু। দরজায় দাঁড়িয়ে কেউ আমাদের কথা শুনছে। শোন আমি কি বলি!
দুজনকে কিছু কথা বলে উঠতে উঠতে ঝটপট করে বলে উঠে,
আল্লাহ কোমড় টা গেল। সরি সরি আদু দেখি নি। আমার খুব খিদে পেয়েছে! তাই তো মাথা ঘুরাচ্ছে।
আদর সুবাহ হাসতে গিয়েও হাসে না। হাসলে বিপদ। আদর জোরে হাঁক ছেড়ে বলে উঠে,
খিদে পেয়েছে আমার। কেউ কি খেতে দিবে?
ড্রয়িং রুমেই বসে ছিলো সাফিন। আদরের এমন স্বাভাবিক গলায় খেতে চাওয়ার কথায় ছোটখাটো বিস্ফোরণ বয়ে যায় সাফিনের মধ্যে। কি শুনলো সে! তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে সার্ভেন্ট কে খাবার নিয়ে যেতে বলে। খাবার দেখে একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়তে গিয়েও আদর থেমে যায়। নিশ্চয়ই দরজার পাশে সাফিন রয়েছে ভেবে দুঃখী গলায় বলে উঠে,
আমি খাবো না। তোরা খেয়ে নি; আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না।
খেতে খেতেই হৃদযা সুবাহ অবাক হয়ে তাকায়। এতক্ষণ কি বুঝালো তারা! আদর অন্যদিক তাকিয়ে চুপ রইলো। এমনিতেও তার গলা দিয়ে খাবার নামবে বলে মনে হয় না। তার উপর সাফিন বুঝে গেলে শেষ আশাটুকুও শেষ! দুজন নিজেদের মতো খেয়ে বাইরে আসে। নিজেদের মতো কাজ এগিয়ে রাখতে হবে! সাফিনের সামনে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,
বেস্টুর বিয়েতে এসব নোংরা ড্রেস পড়ে থাকবো। আপনি তো দেখছি মহা কিপ্টে!
সাফিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কি রে এরা এখন উল্টো সুরে কথা বলছে কেন! ঘাপলা তো আছেই!
কোনো ফন্দি আঁটছো না তো তোমরা? আমি আগেই বলে রাখছি কিছু করার প্লেন থাকলেও এক্সিকিউট করার কথা ভেবে না। একদম মেরে দিবো দুজনকে!
ভয় পেয়ে যায় হৃদযা-সুবাহ। ধরা পড়লে চলবে না। হৃদযা মন খারাপ করে বসে পড়ে। মলিন কন্ঠে বলে উঠে,
আমি জানি বিয়ে উপর ওয়ালাই ঠিক করে রাখেন। আপনি হয়তো জানেন এসব বিষয়ে আমি খুব সেন্সেটিভ। আমার ভাই আদর কে ভালোবাসলেও হয়তো আদর তার ভাগ্যে ছিলো না। মি. রাফিনের সাথেই জুটি লিখা ছিলো তাই হয়তো এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর আমার বেষ্টুর বিয়ে ; যেভাবেই হোক ধর্ম মতেই হবে তো। আর আপনি এটাও জানেন আমরা তিনজন একে অপরের কি। আমি চাই আদর ভালোভাবেই মেনে নিক। নিয়তি তো মানতেই হবে। তাই আদরকে সহজ করতে এতটা করতে চাইছি। থাক আপনি যেহেতু চাইছেন না, থাক!
হৃদযা উঠে হাঁটা দেয় আদরের ঘরের দিকে। সুবাহ তো টাস্কি খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাবা গো কি এক্টিং। নিজেরই গর্ব হচ্ছে। তারও কিছু একটা করা উচিত ভেবে মনমরা হয়ে বলল,
আপনি তো আর পেলেন না যাই হোক নিয়তি সম্পর্কে আপনার থেকে কে ভালো জানবে। বিয়ে হতে হতেও হলো না। কষ্ট পাবেন না। আমার বিয়ে ঠিক না হলে আমিই আপনাকে বিয়ে করে নিতাম। ওই যে ভাগ্যে নাই।
কথাগুলো শেষ করে সাফিনের দিকে তাকাতেই আত্মা কেঁপে উঠে সুবাহ’র। এমা লোকটা রেগে গেল কেন? সে কি বেশী বলে ফেলেছে। জোর করে হাসার চেষ্টা করেও হাসতে পারলো না সে তাই কোনোদিক না তাকিয়েই লে ছুট! সাফিন রেগে চলে যায় সেখান থেকে। সুবাহ ঘরের সামনে যেতেই দেখতে পায় আদর হৃদযা মুখ টিপে হাসছে। হৃদযা তো পারে না ঘর কাঁপিয়ে হাসতে। নিজের বোকামোর জন্য এবার সুবাহ’র রাগ হলো না বরং আদর কে হাসাতে পেরে শান্তি লাগছে।
ঠিক পনেরো মিনিট পরেই একজন মেয়ে এসে কয়েকটা শপিং ব্যাগ দিয়ে গেলো। ওরা আর দেরি করলো না দুটো লেহেঙ্গা নিয়েই ওয়াশরুম ছুটলো। এর পরেই শুরু হবে আসল চাল! লেহেঙ্গার সাথে কিছু ম্যাচিং জুয়েলারিও আছে। কিছুটা সেজে দুজন বাইরে বের হয়। আর মাত্র কিছুটা সময় আছে। তাই হৃদযা ড্রয়িং রুমে গিয়েই হাঁক ছেড়ে বলে উঠলো,
এটা কি বিয়ে বাড়ি মনে হচ্ছে? কই সবাই। এদিকে এসো।
হৃদযার ডাকে কিছু গার্ড সার্ভেন্ট এসে উপস্থিত হলো। তারা সবাই যে অবাক হয়েছে বুঝাই যাচ্ছে । অবাক হওয়ার ই কথা। জোর করে বিয়েতে কেউ এভাবে আনন্দ করে! হৃদযা সবার সাথে মিল দিয়ে বলল,
এত সুন্দর করে সেজেছি অথচ একটা ছবিও উঠতে পারলাম না। আমার ফোনটা দাও না গো কয়েকটা ছবি উঠেই দিয়ে দিবো!
ইন্নোসেন্ট মুখের কথাতেও কাজ হলো না। একজন গার্ড বলল,
সরি মেডাম। ফোন দেওয়া যাবেনা। স্যারের নিষেধ আছে!
হৃদযা নিরাশ হয়ে মন খারাপ করে বসে রইলো; এখন? কাজ তো হলো না। সুবাহ ঠাস করে বলে উঠলো,
আজব তো, ফ্যাক্ট তো ছবি উঠায়। তো যে কারোর ফোনেই উঠা যাবে। পরে আমরা নিয়ে নিবো। তোমরা আমাদের ছবি তুলে দাও না প্লিজ প্লিজ প্লিজ!
এবার কাজ হলো। উপর থেকে সাফিন ছবি উঠিয়ে দেওয়ার অনুমতি দিতেই লাফিয়ে উঠলো হৃদযা-সুবাহ। অবশেষে বোকার হদ্দটার বুদ্ধি খুলেছে বলে হৃদযা বাহুবা দিলো চোখে চোখে। হৃদযা আদর কেও নিয়ে এসে সোফায় বসালো। কয়েকটা ছবি উঠে হৃদযা গার্ডের কাছে গিয়ে বলল,
দেখাও দেখাও কেমন হয়েছে ছবি!
ইতস্তত করে গার্ড টি ছবি দেখাতেই হৃদযার চোখ ছোট ছোট হয়ে এলো। সবই তো সুন্দর হয়েছে। এই মুহূর্তে গার্ড টিকে থাপ* ড়াতে ইচ্ছে করছে। কে বলেছিলো এত ভালো ছবি তুলতে! কিছু একটা তো করতে হবে ভেবেই হৃদযা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
আহা* ম্মক এসব কি ছবি তুলেছো?আমিই তো আমাকে চিনতে পারছি না। এই তুমি জানো আমি কে। হৃদান চৌধুরীর একমাত্র বোন! এসব ছবি পোষ্ট দিলে মান ইজ্জত থাকবে? দাও ফোন দাও!
একপ্রকার ফোনটা কেড়ে নিলো লোকটির কাছ থেকে। লোকটি হতভম্ব হয়ে গেছে। এত ভালো ছবি তুলেও এত কথা শুনতে হলো ভেবেই লোকটি ডিপ্রেশনে চলে গেল। আর হৃদযা তো ভেতরে হেসে কুটি কুটি! দাঁত কেলিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে বসলো আদরের কাছে। সুবাহ’র হাতে ফোনটা দিয়ে বললো,
এই ছবি তুলে দে! সুন্দর যেন হয়। আর মিউজিক বাজাও আমি নাচবো! কত স্বপ্ন ছিলো বেষ্টুর বিয়ে নিয়ে আর যাই হোক শোকে পড়ে এসব মিস করতে পারবো না। সবচেয়ে বড় কথা পোষ্ট করতে হবে তো!
সাফিন উপরের করিডরে দাঁড়িয়ে ওদের কান্ডই দেখছিলো। সন্দেহজনক কিছু পেলো না । সে ভালো করেই জানে ইন্টারনেট দুনিয়ার প্রতি আলাদা ঝোঁক আছে হৃদযার। হাজার হাজার পোষ্ট করে। তাই এটাও স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে ভাইকে রেডি করাতে গেল। হৃদযা আড়চোখে তাকিয়ে যখন দেখলো সাফিন চলে গেছে সুবাহ’র কাছ থেকে ফোন নিয়ে নিলো। ইশারা করলো বসতে। কিছু গার্ড কেউ দাঁড় করালো।
যখন দেখলো সবাই নাচতে আর ছবি তুলতে ব্যস্ত চট করে হৃদানের নম্বরে ম্যাসেজ পাঠিয়ে একটা মিসড কলড দিয়ে ছবি তুলতে লাগলো। সে জানে ওইভাবে ম্যাসেজ চেইক করে না তার ভাই তাই কল দিলো এতে ম্যাসেজটা দেখতে পারবে। যাক এই কাজ টা ভালোভাবেই হলো। এখন শুধু অপেক্ষা!
বাহাদুরের থেকেই খবর পেয়েই হৃদান ছুটে এসেছিলো আহমেদ বাড়িতে। যখন শুনতে পেল আদর ঠিক আছে তখন একটু শান্ত হয়ে বসেছে। না দেখা করে যাবে না বলেই চুপ করে বসে আছে। অন্যদিকে আতইয়াব ভেবেই কুল পাচ্ছে না ম্যাসেজ আসার পর থেকে। হৃদান কেও বলছে না যদি তাকে বোকা ভাবে। এমনিতেও পেছনে পড়ে থাকে। হুট করে ফোন আসায় হৃদান ভয় পেয়ে যায় এমনিই আদর কে না দেখা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না। ফোনটা ধরতে যেতেই কেটে যায় ; দৃশ্যমান হয় ম্যাসেজটি,
ভাইয়া আমি হৃদু। বাঁচাও আদরকে। সাফিন রাফিনের সাথে আদরের বিয়ে দিবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। সময় নেই হাতে!
ফোনটা পড়ে যায় হাত থেকে। আদর কে সে হারিয়ে ফেলবে! সে বাঁচবে কি করে?আতইয়াবের খটকা লাগে হৃদানের আচরণে। ফোন নিয়ে দেখতেই তার কাছে সবটা পরিস্কার হয়ে যায়। ঝটপট করে বলে উঠে,
তার জন্যই আদরের ফোন থেকে বাংলাই ম্যাসেজ এসেছে! মি. মডেল বসে থাকার সময় নেই। দেবদাসগিরি পরে করবেন। আগে ওদের খুঁজে পেতে হবে!
হৃদানের এবার টনক নড়ে। বাহাদুর কে লোকেশন স্ট্রেস করতে বলে পান্চুকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে। এক সেকেন্ড সময় ও এখন দামি তার কাছে!
অবাক হয়ে ভাইকে দেখে যাচ্ছে রাফিন। তাকে কেন পাঞ্জাবি পড়াচ্ছে মাথাতেই আসছে না। কিছু বলার সুযোগ ই দিচ্ছে না তাকে। শুধু বলছে সারপ্রাইজ আছে। রাফিন কে রেডি করে সাফিন নিজে যায় রেডি হতে। করিডরে দাঁড়িয়ে একনজর দেখে নেয় সবটা। ঠিক আছে! চোখ পড়ে হৃদযার উপর। সবুজ লেহেঙ্গা টাই একদম পুতুল লাগছে মেয়েটিকে। অজান্তেই চোখ ভিজে আসে তার। মেয়েটি তার হতে গিয়েও হলো না! দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে। আজ কোনো মনখারাপ নয়।
একজন গার্ড এসে যখন জানায় কাজি এসে গেছে; নিচে নেমে আসে সাফিন। আদরের বুকটা ধক করে উঠে। হৃদযা-সুবাহ বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। ভয় তো তারাও পাচ্ছে। তীরে এসে না তরী টাই ডুবে যায়। সাফিন কয়েকজনকে পাঠিয়ে দেয় রাফিনকে আনতে। হৃদযা আদরের হাতে চিমটি মারে। চোখ মুখ কুচকু শব্দ করতে যাবে তার আগেই সুবাহ চেঁচিয়ে বলে উঠে,
হেই আদু এমন করছিস কেন? মাথা ঘুরছে? অসুস্থ লাগছে?
ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয় সে। সে ভেবেই নিয়েছে আদর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হৃদযা-আদর কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে সবার আড়ালে মুচকি হাসে। সুবাহ’র কান্নাটাকেই কাজে লাগিয়ে হৃদযা রেগে বলে উঠৈ,
জায়গা খালি করুন। বাতাস আসতে দিন। এমনিই না খাওয়া তারউপর এত প্রেশার। আমার আদুর কিছু হলে একদম পুঁতে রেখে দিবো সবাইকে! যান খাবার নিয়ে আসুন। আর আদু এবার তোকে খেতেই হবে!
সাফিন হাসলো। মেয়েটির রাগটাও মায়ায় ভরা। ইশারা করে বললো খাবার আনতে। হৃদযা হাত ধুয়ে খাইয়ে দিতে আসতেই আদর মাথা নেড়ে না করে। হৃদযা জোর করে খাইয়ে দিতে গিয়েই তরকারির ঝুল আদরের শাড়িতে ফেলে দেয়। মূলত তার উদ্দেশ্য ই বিয়ে আটকে রাখা যতক্ষণ পর্যন্ত হৃদান রা না আসে! তরকারির ঝুল পড়ায় আদর নির্বাক থাকলেও সুবাহ আফসোস করে বলে উঠলো,
ইশশশ শাড়িটা নষ্ট হয়ে গেলো। এমন করছিস কেন আদু। তুই না খেলেই তো বিয়েটা আটকে থাকবে না। খেয়ে নি!
সুবাহ কথাগুলো বলেই মাথা নিচু করে নেয়। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। আদরের মাঝে কি তুফান বয়ে যাচ্ছে সে বুঝতে পারছে। এরকম পরিস্থিতিতে সেও তো পড়েছিলো। যেদিন শুনলো মৃহান বিয়ে করেছে সেদিন কিশোরী মন এভাবেই ভেঙে খন্ড খন্ড হয়ে গিয়েছিলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফার এক কোণায় বসে রইলো। সাফিন ততক্ষণে আদরের শাড়ি পাল্টানোর হুকুম দিয়েছে।
হৃদযা-সুবাহ দুজনই আবার আদরকে রেডি করিয়ে দেয়। অনেকটা সময় নিয়ে রেডি করিয়েও লাভ হলো না । সাফিন কিছু একটা আন্দাজ করে তাড়া দিতে শুরু করলো। আদরের চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে! একটু একটু করে এগোচ্ছে ততোই বুকটা হাহাকার করে উঠছে। ওরা গিয়েই রাফিন কে চোখ বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করে। হৃদযার বুঝতে দেরি হয় না যে এসব কিছু একা সাফিনের প্লেন। রাফিন কিছুই জানেনা!
মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ৫
আদরকে রাফিনের পাশে বসিয়ে দিয়েই হৃদযারা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। হাত পা রীতিমত কাঁপছে তাদের। এতকিছু করেও কি শেষ রক্ষা হলো না! কাজির বিড়বিড় শব্দ শুনেই আদরের চোখ ঘোলাটে হয়ে আসে। চারদিক অন্ধকার ; একলা বসে আদর; হঠাৎ কেউ যেন তার গলা চেপে ধরে। নিঃশ্বাস নিতে পারে না সে; একসময় ঢুলে নিচে পড়ে যায়!!!