মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ৭

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ৭
Tahrim Muntahana

অতিবাহিত হয়ে গেছে পাঁচ মিনিট! সময় তার গতিতে ছুটে চললেও মানুষগুলো রয়েছে থমকে! এমন কিছু হবে তারা হয়তো কেউ ভাবেনি। আদর কে ধরে তুলবে সেই জ্ঞানটুকুও যেন‌ লোপ পেয়েছে। আকস্মিক ঘটনায় যখন সবাই স্তব্দ ঠিক তখন‌ই রাফিন চোখের উপর কাপড় টা সরিয়ে ফেলে। পিটপিট করে চোখ খুলে এমন কিছু দেখবে সে আশাও করে নি।

দাঁড়িয়ে যায় সে। টনক নড়ে সবার। দৌড়ে ছুটে আসে হদযা-সুবাহ। ঝাঁকাতে থাকে শরীর! নাহ কোনো সারা-শব্দ‌ নেই। একজন সার্ভেন্ট পানি এনে দিতেই ছিটিয়ে দেয় মুখে। তবুও কাজ হয় না। চমকে যায় সবাই। নাকের উপর হাত রাখতেই হৃদযা দু’পা পিছিয়ে যায়।‌ নিঃশ্বাস চলছে না। একসময় হাউমাউ করে কেঁদে উঠে! সুবাহ সেই কখন থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। সাফিন‌ রাফিন এখনো স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদযা কাঁদতে কাঁদতে আদর কে জড়িয়ে ধরতেই হালকা নড়েচড়ে উঠে আদর! অবাক হয়ে যায় হৃদযা। আদর ফিসফিস করে বলে উঠে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কিরে পেত্নী মরার আগেই মরাকান্না জুড়ে দিয়েছিস কেন? কি ভাবছো আদর মরে গেল তোমাদের‌ও ঝামেলা শেষ? এত সহজ নাকি?‌ তোর ভাইয়ের সাদা চুল‌ টেনে‌ টেনে না তোলা পর্যন্ত এ‌ই আদরের কিছুই হবে না। ছাড় আমাকে নির্লজ্জ মেয়ে; দম আটকে‌ মরে যাবো এবার!

হৃদযা যেন প্রাণ ফিরে পেলো। সুবাহ’কে ইশারা করবে এই মেয়ে কেঁদেই যাচ্ছে! না পেরে হৃদযা সুবাহ কে জড়িয়ে ধরে। হৃদযার আদুরে স্পর্শে সুবাহ আরো জোরে কান্না করে দেয়। যেন‌ এ‌ই মুহূর্তে কান্নার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। হৃদযা কিছুক্ষণ শান্ত করার ট্রাই করেও তখন ব্যর্থ হলো জোরে চিমটি বসিয়ে দেয় সুবাহ’র পেটে। শব্দ করার সময় না‌ দিয়েই হৃদযা বলে উঠে,

আদরের কিছুই হয়নি। কান্না করতে থাক আর কেউ যেন আদরকে স্পর্শ না করে; বুঝে যাবে!
সুবাহ কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেও একসময় থম মেরে আদরের মাথার কাছে বসে থাকে! আদর অভিনয় করলেও সে তো সত্যিই ভেবেছিলো! আদরের উপর অভিমান করেই এমন‌ থম মেরে যায় সে। একবার বলার প্রয়োজন মনে করলো না!

সাফিন‌ নিজেকে স্বাভাবিক করে এগিয়ে আসতে চাইলেই হৃদযা চেঁচিয়ে বলে উঠে,
একদম ছুঁবেন না । খু* নী আপনি! খুন‌ করেছেন আমার আদুকে। হারিয়ে ফেললাম আদুকে‌। এখন বিয়ে দিন , লাশের সাথে ! দাঁড়িয়ে আছেন কেন বিয়ে দিন!
দৌড়ে উপরের দিকে চলে যায় হৃদযা। সাফিন আর এগোনোর সাহস পায় না। অপরাধবোধে মাথা‌ নিচু হয়ে আসে। রাফিন ধীর কন্ঠে ভাইকে বলে,

এটাই তোমার সারপ্রাইজ? একটাবার আমার কথা শুনলে‌ না? একজন মেয়েকে ঠকিয়ে অপরাধবোধে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম এখন তো মৃত্যু ছাড়া উপায় নেই ভাইয়া!
কেঁপে উঠে সাফিন। ধপ করে‌ সোফায় বসে পড়ে। আফসোস হচ্ছে খুব! অন্যদিকে হৃদযা সবার আড়াল হয়েই মুখে হাত চেপে হেসে উঠে। নিজেকে অভিনেত্রী মনে হচ্ছে। অভিনেত্রীরাও মনে হয় তাদের সাথে পারবে‌ না; তারা তো স্ক্রিপ্ট দেখে মুখস্ত করে আওড়ায় আর তারা তো নিজেরাই নাটকের ডিরেক্টর, নিজেরাই লেখক আর নিজেরাই অভিনেত্রী!

বাহ; এবার নোবেল বিজয়ী তারাই হতো যদি এটা খবরে প্রচার করা যেত! কিন্তু এটা হ‌ওয়ার‌ না ভেবেই হতাশা‌ নিয়ে ঘরগুলোই খুঁজতে থাকে! সে দেখেছিলো কিছু গার্ডকে এদিকে আসতে‌ তাইতো সন্দেহ এখানেই রামিয়া, আর তার হবু শাশুড়ি কে পাবে! তাই হলো, পরপর দুটো ঘরে দুজন‌ কে আটকে রাখা হয়েছে!

সাফিন হয়তো ভাবেনি এমন কিছু হবে তাইতো তেমন সিকিউরিটি রাখেনি। অনায়েসেই দরজা খুলে ঘরে ঢুকে পড়ে হৃদযা। ফ্লোরে বসে বিছানায় মাথা রেখে শুয়ে আছে রামিয়া। চোখের কোণ ঘেসে পানিকণা গুলো চিকচিক করছে। বড্ড মায়া হলো হৃদযার। রামিয়া যে শুধু আদরের‌ ছোট বোন তা ন‌‌য় তারাও ছোট বোনের মতো ট্রিট করে এসেছে।‌এগিয়ে গিয়ে আলতো করে মাথায় হাত রাখে। কিছুটা চমকে উঠে রামিয়া।

মাথা তুলে হৃদযাকে দেখে প্রচন্ড অবাক হয়ে যায়।‌ আশাই করেনি এমন। হৃদযা রামিয়াকে ইশারায় বলে চুপ থাকতে! রামিয়া বুঝেছে কি বুঝেনি জানা গেল না তবে ফ্যালফ্যাল‌ করে তাকিয়ে র‌ইলো শুধু। এক‌ই ভাবে দুজন কে মুক্ত করে নিচে চলে আসলো তিনজন! এখান থেকে তো বের হ‌ওয়া যাবে না। কিছু একটা ভেবে একটা ঘরে আত‌ইয়াবের মা কে লুকিয়ে রেখে রামিয়াকে নিয়ে চললো ড্রয়িং রুমে! মেয়েটির জানা উচিত সে ভুল কাউকে ভালোবেসেছে! হয়তো আঘাত টা বেশিই পাবে তবে বড় ক্ষতি থেকে তো বাঁচতে পারবে!

রামিয়া চুপচাপ থাকলেও ড্রয়িংরুমে গিয়ে আদরকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে আঁতকে উঠে। কোনো দিক না তাকিয়েই আদরের কাছে গিয়ে ঝরঝর করে‌ কেঁদে‌ দেয়! রামিয়া কে দেখেই মুখটা চুপসে‌ যায় রাফিনের। অপলক তাকিয়ে থাকে গোল গোল‌ চেহারার দিকে। মনে হচ্ছে কতদিন‌ পর দেখছে মেয়েটি কে অথচ দুদিন আগেও লুকিয়ে দেখেছে!
কিছুক্ষণ কাঁদার পর পরিস্থিতি বুঝতে এদিক‌ওদিক তাকাতেই চোখ পড়ে রাফিনের উপর। ছলছল করে উঠে চোখ দুটো! হৃদযা রামিয়ার দু্র্বলতার কথা ভেবে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

ওদিক তাকাস না রামু। শয়তান দুটো। আমাদের আটকে রেখে আদর কে বিয়ে করতে চেয়েছিলো জোর‌ করে!
থরথর করে কেঁপে উঠে রামিয়া। সে কি ভুল শুনছে; নিজের কান কেউ যেন‌‌ বিশ্বাস করতে পারছে না! কান না হয় ভুল শুনবে কিন্তু চোখ! সে তো নিজের চোখে ভালোবাসার মানুষটিকে শের‌ওয়ানি পরিহিত দেখতে পাচ্ছে। কি সুন্দর লাগছে! রাফিন করুণ দৃষ্টি ফেলে রামিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। বলতে চায়ছে সে এসব জানতো না: কিন্তু গলায় এসে যেন সব আটকে যাচ্ছে। রামিয়া ছোট ছোট পা ফেলে রাফিনের সামনে দাঁড়ায়। কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে উঠে,‌

ভালোবাসেন আপুকে?
ঈষৎ কেঁপে উঠলো রাফিন। বলতে চায়ছে অনেক কিছু কিন্তু বলতে পারছে‌ না। কে যেন‌ গলাটা সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরেছে। রাফিনের উত্তরের অপেক্ষা করলো না রামিয়া। নিষ্ফলক কন্ঠে বলে উঠলো,
এর জন্য‌ই এত নাটক? এত অভিন‌য়?

তাচ্ছিল্য হাসলো রামিয়া। আগের মতো চোখ তার শান্ত নেই, ক্রোধ আর ঘৃণার মিশ্রণে এক অদ্ভুত চাহনী টের পেলো রাফিন। ভেতর টা একদম নড়ে উঠলো যেন! কাউকে কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে! সাফিন অবাক হয়ে এতক্ষণ দেখছিলো! তার ভাই তাকে রামিমার কথায় বলতে চেয়েছিলো? দেয়ালে ঘুষি মারলো সে; কত বড় ভুল হয়ে গেল! এ‌ই গ্লানি মুছবে কি করে!

এমন শান্ত পরিবেশে ভূমিকম্পের মতো প্রবেশ করলো হৃদান-আত‌ইয়াব-মৃহান! তিনজনের চোখ-মুখেই অসম্ভব রকমের ভিতী! পরিস্থিতি খেয়াল না করেই তাদের চোখ পড়লো ফ্লোরে পড়ে থাকা আদরের উপর।
দুই জন‌ই জমে দাঁড়িয়ে র‌ইলো। হৃদযা‌ কিছু জানানোর সুযোগ পেলো না হৃদান-আত‌ইয়াব আদর বলে চিৎকার করেই ছুটে এলো! চোখ দুটো অসম্ভব রকমের লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে রক্ত জমে আছে !

হৃদযা আত‌ইয়াব কে টেনে দাঁড় করালো; কিছু বলবে তার আগেই ফিক করে হেসে উঠলো! আত‌ইয়াব দিশেহারা হয়ে কিছু বলবে তার আগেই হৃদযা চোখ টিপে বুঝিয়ে দেয় কিছু হয়নি। তবুও যেন শান্ত হতে পারছে না। হৃদযা তাকে টেনে একটু দূরে নিয়ে সংক্ষেপে ঘটনা গুলো বলে। আত‌ইয়াব মুহূর্তেই চুপ হয়ে যায়! বোন দুটোকে জড়িয়ে ধরার তীব্র বাসনা নিয়ে চাতক পাখির মতো দাঁড়িয়ে থাকে! এ প্রহর যেন শেষ হবার মতো নয়! রামিয়া ভরসার মানুষটার মুখ দেখেই দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে! একদিকে বোন আরেকদিকে প্রতারণা; মেয়েটির মনের উপর দিয়ে কি যাচ্ছে উপলব্ধি করতে পারলেও সম্পূর্ণ টা বুঝা মুশকিল! যার যার ক্ষত তার তার‌ই যে জ্বালা!

হৃদান কিছুক্ষণ নিষ্ফলক তাকিয়ে থাকে আদরের শুকিয়ে যাওয়া মুখটার দিকে। আলতো করে গালে হাত রাখে। কয়েকবার আস্তে আস্তে চাপড় দেয়। সারা নেই! চোখ দুটো তার জলে ট‌ইটম্বুর; এ‌ই বুঝি ‘পুরুষদের চোখে পানি সাজে না’ উক্তিটির মর্যাদা ক্ষুন্ন করে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে! সাথে সাথে সমাজের তৈরী করা নিয়মটার‌ও উলটপালট হয়ে যাবে! হৃদানের খেয়াল হয় আদর ফ্লোরে পড়ে আছে; নরম ভাবে ধরে সোফায় শুয়িয়ে সে। চুপটি করে বসে থাকে ফ্লোরে পা বিছিয়ে; হাতের মুঠোয় আদরের হাত। শান্ত কন্ঠে ডেকে উঠে,

আদর, এ‌ই আদর! এ‌ই আদু দেখো আমি চলে এসেছি। তোমার হৃদ চলে এসেছে। একটু দেরি হয়ে গেল না? কি করবো বলো বুঝতে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। আরে বাবা রাগ করে থেকো না আর। এ‌ই উঠো না; একদম ঠিক হচ্ছে‌ না কিন্তু। আমার খুব বিরক্তি লাগছে। হৃদান চৌধুরীর কি দিনকাল আসলো দেখো, একটা মেয়ের জন্য ফ্লোরে বসে আছে আবার আকুল হয়ে ডাকছে! এ‌ইসব যদি আমার মেয়ে ফ্যান রা দেখে তাদের মনটা ভেঙে যাবে; বলো? আরে বাবা উঠো না।

এবার কিন্তু রাগ লাগছে। আমি কিন্তু সব কিছু ধ্বংস করে দিবো। আমাকে তো চিন‌ই আমি কিন্তু কথার খেলাপ করি না। এ‌ই মেয়ে উঠছিস না কেন?‌ অতিরিক্ত সাহস হয়ে গেছে? আমার কথা অমান্য করার স্পর্ধা হয় কি করে?
প্রথম কথাগুলো শান্ত হয়ে বললেও‌‌ শেষের দিকে শান্ত থাকতে পারলো না সে। কেন‌ বুঝে না আদর তাকে! উঠছে না কেন? কথাগুলোয় বারবার বলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে চোখের পানি বাঁধ ভেঙে পড়ছে!

মৃহান এখনো চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। মানে কি করবে, কোন‌ দিকে যাবে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। সুবাহ’র দিকে চোখ যেতেই ঈষৎ কেঁপে উঠে সে। ইশশ‌ একটু সময়ের মধ্যেই কেমন‌ হয়ে গেছে! এগিয়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতেই তুলতুলে শরীর টা ঢুলে পড়ে মৃহানের উপর। আত‌ইয়াব-হৃদযা দুজন‌ই এগিয়ে যায়। হৃদযার মাথায় হাত। এই বল* দি কে নিয়ে কি যে করবে! আত‌ইয়াব চেকাপ করে খারাপ কিছু পেলো না।

আকস্মিক শকড মেনে নিতে পারে নি তাই জ্ঞান হারিয়েছে! অন্যদিকে হৃদানের কোনো কিছুতেই খেয়াল নেই। তার চোখ শুধু আদরেই নিবদ্ধ! আদরের বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। এভাবে তাকিয়ে থাকলে কার না অস্বস্তি হবে! আদর ভেবেছে হৃদান আর কিছু বলবে না তাই পিটপিট করে চোখ খুলতে গিয়েও হৃদানের চিৎকারে থেমে যায়! লোকটা কাঁদছে! তার ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।

আমি আপনাকে আর জ্বালাবো না মি. ডক্টর। আমার আদুকে ফিরিয়ে দিন না প্লিজ। ও উঠছে না কেন? আমার সাথে‌ কথা বলছে কেন? ও কে উঠতে বলুন না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আপনি তো ডক্টর ফিরিয়ে দিন না আমার আদরকে। আমি সারাজীবন আপনার গোলামি করবো; যা বলবেন তাই করবো তবুও আমার আদরকে ফিরিয়ে দিন।

আত‌ইয়াবের চোখের কোণে জল। বোনের জন্য বড্ড সুখ অনুভব হচ্ছে। এ‌ই ছেলে যে তার বোন‌কে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে! আদরের উপর রাগ হলো।‌ এখনো অভিন‌য় করার কোনো মানে আছে? হৃদান‌ এখনো কেঁদেই যাচ্ছে। হঠাৎ ই কাঁধে আলতো ছোঁয়া অনুভব করতেই হৃদানের মুখে হাসি ফুটে উঠে। এ‌ই ছোঁয়া তার বড্ড পরিচিত। একান্ত‌ই নিজের মানুষের। ফট করে ঘুরে তাকাতেই আদরের সুশ্রী মুখশ্রী নজরে পড়ে।

একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়েই বুকে আগলে নেয়। আদরের চোখের কোণেও জলরাশি গুলো উঁকি দিচ্ছে। সে জানতো লোকটা তাকে খুব ভালোবাসে কিন্তু এতটা ভালোবাসে কল্পনাও করতে পারেনি! তীক্ষ্ম বুদ্ধিমান হৃদানের যখন বিষয়টা মাথায় আসে এক ঝটকায় আদরকে নিজের সাথে আলাদা করে নেয়। আদর‌ও মুখ ফুলিয়ে সোফায় বসে থাকে। হৃদান ভেবেছিলো আদর তাকে মানাতে আসবে কিন্তু উল্টো মুখ ফুলাতে দেখে অবাক হয়ে যায়।‌ হৃদানের দিকে তাকিয়ে আদর নির্বিঘ্নে বলে উঠে,

তাকিয়ে আছেন কেন ওভাবে? আমি মুটেও আমার কাজে অনুতপ্ত ন‌য়। বরং নিজের উপর গর্ব হচ্ছে। মনে আছে; না জানিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন? না কোনো‌ ফোন, না কোনো ম্যাসেজ, না কোনো খবর! আমারো ঠিক এমন অনূভুতিই হয়েছিলো। আমার একসপ্তাহের কষ্ট আপনাকে কিছু মুহূর্তে ফেরত দিলাম। আদর আহমেদ কখনো কোনো‌ কিছু স্টকে রাখে না; সুদ সমেত ফেরত দেয়! বিশেষ করে আপনার ক্ষেত্রে। মাইন্ড ইট!

উপস্থিত সবাই আদরকে অবাক হয়ে দেখছে। রামিয়া তো আদরের বুকে গুটিসুটি মেরে মুখ লুকিয়ে আছে। হৃদান‌‌ কিছুক্ষণ ভেবে বাঁকা‌ হাসলো। হৃদযা কে ইশারা করতেই রামিয়াকে ধরলো সে। হৃদান কোনো দিক না তাকিয়েই আদর কে কোলে তুলে নিলো। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় আদর‌। কিছুক্ষণ কোলে নিয়ে এপাশ‌ ওপাশ ঘুরে নামিয়ে দেয়। কিছুই বুঝলো‌ না ব্যাপারটা। আদর বসতে যাবে তার আগেই হৃদান হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বলে,

নাও এখন আমাকে কোলে নাও!
ছোটখাটো বিস্ফোরণ বয়ে যায় আদরের মধ্যে। এ‌ই ব্যাটা বলে কি! হাতির মতো শরীর নাকি সে তুলতে পারবে। হাউ পসিবল! হৃদান আদরের দিকে এগোতে এগোতে বলল,

কি হলো‌ নাও কোলে। তুমি না সুদ সমেত ফেরত দাও। আমি তোমাকে কোলে নিয়ে পাঁচ মিনিট ঘুরেছি তুমি দশ মিনিট ঘুরবে। নাও নাও ; কি মজা কোলে উঠবো!
বাচ্চাদের মতো হাত তালি দিয়ে উঠলো হৃদান। আদর পড়লো ফ্যাসাদে। এ‌ই রে এখন কি হবে! নিজের‌ ডায়লগে নিজেই‌ ফেঁসে গেল। উল্টো ঘুরে দৌড় দিতে যাবে তার আগেই হৃদান আদরের হাত আঁকড়ে ধরে। হেহেহে করে হেসে কিছু বলবে তার আগেই হৃদান চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠে,

আচ্ছা যাও এটা বাদ দিলাম।
বলেই আদরের গালে ছোট্ট করে চুমু বসিয়ে দেয়। জমে যায় আদর। বুকের ভেতর কেমন ধড়াম ধড়াম করছে। কি একটা অনুভূতি। মৃহান‌ খপ করে আত‌ইয়াবের চোখ ঢেকে দিয়ে বলে উঠে,
ভাই হ‌স তুই; এসব দেখতে হয় না!

আত‌ইয়াব ও কম কিসে নিজের হাত দিয়ে মৃহানের চোখ ঢেকে দিয়ে বলে,
ভাসুর হ‌ও তুমি ; এসব দেখলে পাপ হবে!
অন্যদিকে হৃদযা সবার কার্যকলাপ দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। এনে যে তারা‌ একটা বিপদের মধ্যে আছে কারোর ই‌ খেয়াল নেই; সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্থ!

আদর পালানোর পথ খুঁজেও যখন ব্যর্থ হলো ঠোঁট উল্টে কেঁদে ফেলার ভান‌ করতেই হৃদানের হাত আলগা হয়ে যায়। সেই সুযোগে আদর পগারপার!‌ আত‌ইয়াবের পেছনে লুকিয়ে পড়ে! হৃদান এখানে আসবে না সে ভালো করেই জানে। আত‌ইয়াব-মৃহান এখনো একে অপরের চোখ ধরে দাঁড়িয়ে আছে; হৃদান‌ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,
সিনেমা শেষ আর নাটক করো না দুজন!‌

সবাই নিঃশব্দে হেসে উঠে। সুবাহ পিটপিট করে চোখ খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে সে কোথায়! যখন‌ই সবটা মাথায় আসে আবারও চোখ দুটো লাল হয়ে আসে তার। এতকিছুর মাঝে হৃদযার বলা ‘আদরের কিছুই হয়নি’ কথাটা ভুলে গেছে! সামনে তাকিয়ে কিছু বলবে আদরকে দেখেই ভয়ে‌ জমে যায় সে। কোনোদিক না তাকিয়ে‌‌ গগণ কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠে,

আআআআআআআ ভুতততততততততত
ঘড়ির টিকটিক শব্দ জানান‌ দিচ্ছে দুপুর ১ টা বেজে গেছে। আজ যেন‌ সময় খুব ধীরে এগোচ্ছে। সুবাহ নিজের কাজে নিজেই বেকুব হয়ে গেছে। সবার সামনে‌ নিজেকে বল* দ প্রমাণ না করতে দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠে। সবাই ব্যাপার টা বুঝেও কিছু বলে‌না। অযহত লজ্জা দিয়ে লাভ নেই! সবার মাঝে স্বাভাবিকতা ফিরে আসলেই হৃদযা‌ সব ঘটনা একে একে খুলে‌‌ বলে। আত‌ইয়াবরা তো তিনজনের অভিন‌য় ও সাহসিকতা দেখে জাস্ট হতবাক।

ওরা‌ এমনটা না করলে হয়তো আজকের অঘটন টা আটকানো যেত না। হৃদান‌ এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে সাফিন‌ রাফিন‌ কেউ নেই। পালিয়ে গেছে! বাঁকা হাসে সে। ভীতু কোথাকার; কলিজা টা বড্ড ছোট। কয়েকজন‌ গার্ড এখনো রয়ে গেছে। তাদের কিছু বলল না হৃদান। ওরা নিজেদের কাজ করতে বাধ্য! হয়তো তারাও‌ রেহায় পেতো না যদি হৃদযা ওদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতো!‌

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ৬

হৃদযা গিয়ে আত‌ইয়াবের মা কে নিয়ে আসে। আত‌ইয়াব কে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে‌ কেঁদে উঠে তিনি। ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আত‌ইয়াব অবাক তো হয় তখন‌ই যখন জিজ্ঞেস করা হয় ‘কি করে সে ওদের হাতে পড়লো’ তখন ব্যাপারটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলে মিসেস আহমেদ! এত ঝামেলার মাঝে কথা বাড়ায় না কেউ। সব খারাপ মুহূর্ত কে পেছনে ফেলে‌ হাতে হাত রেখে এগিয়ে যায়!

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ৮