মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ৮
Tahrim Muntahana
শিশিরকণা গুলো একটু একটু করে জমতে শুরু করেছে। শীতের শুরু মাত্র, এখনো খুব একটা শীত পড়েনি। সকালের শুরুতে হালকা ঠান্ডা পরিবেশ থাকলেও; বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যটা তীর্যক আকার ধারণ করে। শুরু হয় অসহনীয় গরম। তবুও ছুটতে হয় জীবিকার তাড়নায়! ঢাকার মতো শহরে জ্যামের জন্য চলাফেরা করাই মুশকিল।
অনেক অনেক সময় তো ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেও জ্যাম ছাড়ানো যায় না। এই জ্যামের মধ্যে বসে আছে মৃহান। কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। সব কিছু স্বাভাবিক হলেও কিছু কিছু জীবনে এখনো কিছু অস্বাভাবিকতা রয়ে গেছে। এই যে মৃহান; এত গুলো দিন চলে গেলোও মুখ ফুটে ভালোবাসার কথা টা এখনো বলতে পারেনি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
বলতে গিয়েও যেন কোনো এক দুটানা তাকে বাঁধা দেয়। সুবাহ’র পরিবার কি তাকে গ্রহণ করবে? এই একটা দুটানার জন্য অসহনীয় যন্ত্রণায় ভুগছে সে। তার উপর জুটেছে রনি নামক প্যারা! সারাক্ষণ সুবাহ’র সাথে চিপকে থাকে। কি সম্পর্ক আজো জানা হয় নি তবে এই ছেলেটাকে দেখলেই মৃহানের রাগ হয়। সুবাহ কে হারিয়ে ফেলার ভয় হয়!
বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে এদিক ওদিক চোখ ঘুরাচ্ছিলো মৃহান। হঠাৎ করেই পাশে চোখ যেতেই কপালের রগ ফুলে উঠে তার। আবার সেই ছেলেটা। আজ সে জেনেই ছাড়বে কে হয় এই ছেলেটা। কি সম্পর্ক তাদের! আরো বিশ মিনিট পর জ্যাম ছাড়তেই গাড়ি চলতে শুরু করে। পিছু নেয় মৃহান। গাড়ি গিয়ে থামে শপিং মলের সামনে।
সুবাহ-রনি যাওয়ার কিছু সময় পর মৃহান ভেতরে ঢুকে। রনির হাত আঁকড়ে ধরে একেরপর এক দোকান ঘুরে যাচ্ছে সুবাহ। এই মূহুর্তে ছেলেটির দু-পা ধরে আকাশের দিকে কিক মারতে ইচ্ছে করছে মৃহানের! মরলে অন্য কোথাও গিয়ে মরুক। নিজের এই অদ্ভুত ভাবনায় বিরক্ত হলো মৃহান। প্রেমে পড়ে তার মাথা গেছে সে ভালোই বুঝতে পারছে। মাথাটা জলদি ঠিক করতে হবে। তা একমাত্র সুবাহ ই ঠিক করতে পারবে।
এবার বিরক্তি নিয়ে শপিং মলে ঘুরছে সুবাহ! লোকটা শুধু ঘুরেই যাচ্ছে, একেরপর এক জিনিস দেখেই যাচ্ছে কেনার নাম নেই। এই মূহুর্তে তার কি করতে ইচ্ছে করছে সে নিজেও বুঝতে পারছেনা। হঠাৎ মৃহান কে দেখে তার অর্ন্তআত্মা কেপে ওঠে। চোখের এই ধারালো দৃষ্টি বলে দিচ্ছে এই মূহুর্তে সামনে থাকা লোকটি প্রচন্ড রেগে আছে। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যায় সুবাহ। মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে বলে
মৃহান ভাইয়া আপনি এখানে?
মৃহান এবার সপ্তম আকাশে চলে যায়। ভাইয়া! লাইক সিরিয়াসলি? এখন ভাইয়া ডাকা হচ্ছে। আগে তো জোর করেও ভাইয়া ডাকানো যেতো না। আর ছেলেটির সামনে ভাইয়া ডাকছে: কোনো তো ঘাপলা আছেই। সুবাহ আবার বলে উঠে,
মিট রনি ইশতিয়াক! আমার ভাবির ভাই। আর রনি ভাইয়া উনি হচ্ছে মৃহান চৌধুরী। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হৃদিযার ভাই।
কাজিন হলে তাও একটা কথা। এটা তো রীতি মতো অত্যাচার তার উপর। রনি মৃহানের সাথে হাত মিলানোর জন্য হাত বাড়ালে ও মৃহান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সুবাহ’র দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
শপিং মল কি তোমার বাপের নাকি যে আমি আসতে পারবো না। ভাবির ভাইয়ের হাত ধরে ঘুরবার কি আছে। দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে পারো না। যত্তো* সব!
সুবাহ কে কথা গুলো বলেই গটগট পায়ে শপিং মল থেকে বেরিয়ে আসে মৃহান। সুবাহ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সেদিকে। হঠাৎ এতো রাগের কি হলো বুঝতে পারলো না সে। কিছুক্ষণ ভেবে যখন রাগ টাকে জেলাসিতে নিয়ে গেল আপনাআপনি সুবাহ র ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। এখন তার তো ডানা মেলে আকাশে উড়তে মন চাইছে। রনি সুবাহ র হাবভাব কিছুই বুঝলো না। বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। সুবাহ হাসতে হাসতেই বললো,
রনি ভাইয়া তুমি খুব ভালো। চলো চলো ঘুরতে যাবো!
রনি সুবাহ’র খুশি দেখে আর কথা বাড়ালো না। সায় জানিয়ে হাঁটা ধরলো। মাথায় যেন ঘটনাটি এঁটে গেলো: ভাবতে বাধ্য করলো কে লোকটি। কেন এমন ব্যবহার!
গোধূলি বিকেলের শেষ ভাগ। চারদিক লাল আভায় ছেয়ে আছে। এই মুহূর্তে প্রকৃতিকে লাল টুকটুকে বউ মনে হচ্ছে। যে লজ্জা পেয়ে লাল আভা ধারণ করে বসে আছে রাতের কালো আঁধারে ডুব দিয়ে চাঁদের সাথে সন্ধি করতে! সাঝের বেলায় সুন্দর মুহূর্ত টা উপভোগ করছে হৃদান। অফিসের কাজের ফাঁকে এই একটু সময় ই সে নিজের মতো ডুবে থাকে। প্রকৃতির মাঝে নিজের মা কে খুঁজে পায়। ঘ্রাণ উপভোগ করে! কিন্তু আজকে কিছুতেই মন বসাতে পারছে না। বার বার ঘুরে ফিরে মন টা শুধু মায়াবি মুখটাতেই হারিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটাকে একদম বুকের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে। এই বিরহ সহ্য করার মতো না। ফোন টা বের করে ফোন লাগালো আদরের ফোনে..
একের পর এক ফাইল চেইক করছে আদর। কাজের এত চাপ, ভালো করে নিঃশ্বাস নেওয়ার ও সময় নেই। এমন সময় ফোন বেজে উঠতেই হালকা বিরক্তি হলো সে। এমন সময় কার এত শখ হলো তাকে বিরক্ত করার। একপ্রকার রাগ নিয়েই ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো। অপর পাশ থেকে হৃদান বলে উঠলো,
আই নিড এ কিস বেবি!
শিতল ঘোর লাগানো কন্ঠে এমন কথা শুনে ঈষৎ কেঁপে উঠলো আদর। না দেখেই ফোনটা ধরে এবার নিজেই বিপদে পড়লো। এই লোকটার ইদানিং প্রেম প্রেম পায় নাকি। কথাগুলো ভেবেই মুচকি হাসলো সে। আদরের নিশ্চুপতা দেখে হৃদান আবার বলে উঠলো,
আর কত পুড়াবে আদর? আমি আর পারছি না; মনে হচ্ছে যোজন যোজন দুরত্বে অবস্থান করছো। কবে সেই সকাল টা হবে যে সকালে তোমাকে আমার বুকে পাবো, কবে সেই রাত টা আসবে যে রাতে মত্ত থাকবো তোমাতে; কখনো জ্যোৎস্না বিলাসে, কখনো ভালোবাসার গভীরে। আমার সকল ভালোবাসা বিলিয়ে দিবো; কত কত ইচ্ছে কত কত স্বপ্ন সব একসাথে পূরণ করবো; হাটবো একসাথে, দূর থেকে বহু দূরে!
চোখ বন্ধ করে প্রেমময় কথাগুলো উপভোগ করছে আদর। শরীরের প্রতিটা নিউরন যেন চিৎকার করে বলছে হৃদান হৃদান হৃদান! লজ্জার আভাটা ফুটে ওঠেছে ঠোঁটের লাজুক হাসিতে। এই মুহূর্তে কোনো কবি যদি আদর কে দেখতো হয়তো ভালোবেসে শত শত কবিতা রচনা করে ফেলতো।
কিন্তু হৃদান তো কবি নয়; তবুও কেন আদরের লাজুকতা কে ঘিরে কবিতা রচনা করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কতশত শব্দ মাথাতে ঘুরঘুর করছে। সে তো প্রেমিক! এক ভয়ংকর পাগল প্রেমিক। প্রেমিকার অনুপস্থিতে যার শরীরের নিউরন ও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অনুভূতিহীন লাগে অথচ প্রেমিকার একটু উপস্থিতি, একটু স্পর্শ তার শিরা উপশিরায় ঝড় তুলে দিতে সক্ষম! হৃদান হাসে; একটু শব্দ করেই হাসে। হৃদানের মন ঘুরাতে আদর বলে উঠে,
ইউ ক’নো না? আ’ম ভেরি ভেরি হ্যাপি ফর ভাইয়া এন্ড হৃদযা! আর মাত্র একটা সপ্তাহ পর বিয়ে। ইশশশ কি মজা। আমি জীবনে বিয়ের মজা উপভোগ করিনি। প্রথম হৃদযার বিয়েতে মজা করার কথা ছিলো কিন্তু পরিস্থিতি তখন অন্যরকম ছিলো। ইচ্ছেও ছিলো না আর বিয়েটা তো সম্পূর্ণ সাজানো ছিলো! আমি তো ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিলাম; সাজানোটাও ভালো করে দেখা হয়নি। এবার আমি সবটা, প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করবো। শপিং থেকে শুরু করে প্রতিটা কাজ নিজের হাতে করবো। ইয়াহুওওওও!
আদরের কথাগুলো শুনেই হৃদানের মুখে হা ফুটে উঠলো আবার হঠাৎ করেই নেমে আসলো আঁধার। এ যেন আনন্দ-দুঃখ দুই মিলে ভিন্ন এক অনুভূতি। সে সকল কিছু বিসর্জন দিতে পারে এই মেয়েটার হাসির জন্য! আর এইটুকু সময় অপেক্ষা করতে পারবে না? পারবে, অবশ্যই পারবে! আদরের খুশিটা দ্বিগুন করতে হৃদান হাসিমুখে বলে উঠে,
তুমি যে দিন দিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো তুমি কি জানো?
অবশ্যই! নিজের পরিবর্তন নিজের টের পাবো না? আ’ম আদর আহমেদ ওকে!
ভালোবাসা পেলে মানুষ এমনিতেই বাচ্চা হয়ে যায়, আদুরে পরিবেশে শক্ত-এডাল্ট টাইপ বিহেভ করলে ভালোবাসাটা ঠিক উপভোগ করা যায় না। তরল পদার্থ যেমন যে কোনো পাত্রেই আকার ধারণ করে তেমনি ভালোবাসা দেখে একেক সময় একেক রূপে ভালোবাসা গ্রহণ করতে হয়, অনুভব করতে হয়। আমি তো মাত্র কিছুটা রূপ নিয়েছি; আস্তে আস্তে আরো বাচ্চামো করবো। এন্ড অলসো হৃদান চৌধুরী আপনি যত বড় মাপের মানুষ ই হন আর যত ব্যস্ত থাকুন আমার সকল আবদার মানতে বাধ্য । নাহলে বাহাদুর দিয়ে কিডন্যাপ করে আটকে রাখবো ইউ পৃদান চৌধুরী!
আদর ভাব নিয়ে ভাষণ গুলো দিয়ে ফিক করে হেসে দেয়। ইদানিং সে এত এত কথা বলছে সে নিজেই অবাক হয় অন্যকেউ তো চরম অবাক হবেই। আদরের শেষের কথা শুনে হৃদান শব্দ করে হেসে দেয়। চমকে উঠে কর্মচারীরা। কথা বলতে বলতে কখন নিজের কেবিন ছেড়ে বাইরে এসেছে নিজেই টের পায় নি। হৃদান কে হাসতে দেখে অনেকেই মুখ টিপে হাসে তারা বুঝতে পেরেছে সবটা! হৃদান গাড়িতে উঠতে উঠতে বলে,
আপনার আদেশ পালন করতে আমি সদা প্রস্তুত রাজরানী। কিন্তু তুমি কি জানো তোমার ওই হাতি সিস্টেম বাহাদুর আমাকে দেখে ভয়ে থরথর করে কাঁপে? আর তুমি আমাকে তার ভয় দেখাচ্ছো ? হাউ ফানি! হৃদান চৌধুরী উপর ওয়ালা ছাড়া কাউকে ভয় পায় না!
হৃদানের কথায় আদরের চোখ ছোট ছোট হয়ে আসে। ভয় পাস না দাড়া দেখাচ্ছি কথাটা মনে মনে বলেই গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
আপনি কি বললেন? আবার বলেন? আপনি কাউকে ভয় পান না? রিয়েলি? আচ্ছা নো প্রবলেম আমার সামনে এসে কথাটা বলিয়েন তারপর দেখাবো!
হৃদান বড়সড় একটা ঢোক গিলে। এইরে ক্ষেপেছে মেয়ে। এই মেয়েটাকে যে সে ভয় পায় সেটা এখন অনেকেই জানে।
না মানে হেহেহে আমি তো ভয় পাই। তোমাকে ভয় পাই। হৃদান চৌধুরীও ভয় পায়। আদর আহমেদের কাছে হৃদান চৌধুরী কিছুই না।
হৃদানের এমন ইতস্তত কথায় আদর খিলখিল করে হেসে উঠৈ। মানুষটা তার মন ভালো করার ঔষধ। কখনো হারাতে দিবে না সে। আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয় হৃদান। আদর ফোন টা বুকের মাঝে চেপে ধরে স্বপ্ন বুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ভালোবাসা সুন্দর!
আদরের ফোন কেটে সাথে সাথেই হৃদান পান্চুর কাছে ফোন দেয়। ফোন ধরতেই বলে উঠে,
প্ল্যান ক্যান্সেল! আদর চায় মি. ডক্টরের বিয়েটা পুরো দমে উপভোগ করতে। আমি চাই না নিজের বিয়ের জন্য সে আনন্দ টা মাটি হোক। আলাদা ভাবে বিয়েগুলো উপভোগ করাবো। অনেকটা খুশি এনে দিবো!
পান্চু হেসে সায় জানায়। ভালোবাসা গুলো আসলেই সুন্দর। হৃদান আকাশের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। ভালোবাসাটাই মুখ্য। অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়!
অন্ধকার কারাগারে চুপটি করে বসে আছে রাজীব আহমেদ। চোখ তার নির্জীব। না আছে কোনো দুঃখ, না আছে কোনো আক্রোশ শুধু চোখের কোণে লেগে আছে আফসোসের একটু জল। যা চোখের কোণ ঘেসে পড়ে আছে অত্যন্ত অবহেলার সাথে। পাশেই হিয়ান খান বসে আছে। চোখে যেন আগুন জ্বলছে। একবার বের হতে পারলেই সব শেষ করে দিবে। আদর আহমেদ কে ধ্বংস করে তবেই শান্ত হবে!
সেদিকে কোনো ধ্যান নেই রাজীব আহমেদের। সে তার আপন ভাবনায় ব্যস্ত। এমন সময় খট করে তালা খোলার শব্দ হয়। দুজনই অবাক হয়ে তাকায়। কে এলো তাদের সাথে দেখা করতে,,,!
বিষন্ন মুখে পুলিশের সামনে বসে আছে আতইয়াব। দেখা করতে এসেছে বাবার সাথে। জন্মদাতা তো! ছোটবেলায় হয়তো কত ভুল করেছে ক্ষমা পেয়েছে তো। সেই মমত্ববোধের জোরেই আজ দেখা করতে এসেছে। মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারেনি। আতইয়াব কে দেখেই রাজীব আহমেদ মুচকি হাসলো।
অবাক হয় আতইয়াব। সে ভেবেছিলো রাজীব আহমেদ তাকে দেখে রেগে যাবে; কথা বলবে না অথচ ঘটছে অন্যটা। রাজীব আহমেদ নিজেই এগিয়ে এসে আতইয়াবের গাল ছুঁয়ে দেয়। ভালোবেসে! আতইয়াব স্পষ্ট দেখেছে রাজীব আহমেদের চোখ ছলছল করছে! ইমোশন কে পাত্তা না দিয়ে আতইয়াব গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে হাঁটা ধরে। রাজীব আহমেদ হেসে পিছু নেয়। যেন ছেলের অভিমান ভাঙাতে পেছনে ছুটছে!
চারপাশ একনজর দেখে রাজীব আহমেদ আতইয়াবের পাশে বসে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে স্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠে,
হঠাৎ খারাপ বাপ টা কে মনে পড়লো!
আতইয়াব তাচ্ছিল্য হাসলো। নজর এড়ালো না রাজীব আহমেদের! তিনি আবার বলে উঠলো,
আগলে রেখো বোনকে। বলা তো যায় না কখন কি হয়! কাছের জনই কিন্তু ছুরী বসায়! একদম কলিজায়!
আতইয়াবের প্রথমে রাগ হলেও রাজীব আহমেদের কথাগুলো অন্যরকম শুনালো। যেন তাকে সতর্ক করছে কোনো চ্যালেন্জ নয়। অবাক হয়ে তাকালো বাবার দিকে। রাজীব আহমেদ হেসে উঠে পড়লেন। একটি বারের জন্যও ঘুরে তাকালেন না। যেন এখান থেকে যেতে পারলেই সে বাঁচে। আতইয়াব কিছুক্ষণ বসে উঠে পড়ে একটু এগোতেই সামনে পড়ে একজন কনস্টেবল। আতইয়াব কে দেখেই একদম অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। এক ছুটে চলে যায় সেখান থেকে। আতইয়াবের বিষয়টা খটকা লাগে। তাদের উপর কেউ নজর রাখছে? কিন্তু কেন? কেই বা নজর রাখবে? প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়েই থানা থেকে বের হয়ে যায়। সামনে কি কিছু হতে চলছে!
গাড়ি নিয়ে সোজা চলে আসে চৌধুরী বাড়ির সামনে। একটু শান্তি দরকার তার। যার জন্য হৃদযাকে লাগবে এই মুহূর্তে। গাড়িতে বসেই ফোন লাগায়। পড়ছিলো হৃদযা, মূলত শর্ট নোট তৈরি করছিলো আদরের জন্য। মেয়েটা সারাদিন কাজ করে রাতটুকু বিশ্রাম না নিয়ে পড়াশোনা করে। এভাবে চলতে থাকলে বড় একটা রোগ বাসা না বাঁধে। তাই সে আর সুবাহ মিলে আদরের জন্য নোট তৈরি করছে। এতে আদরের কষ্ট করে খুঁজে খুঁজে পড়তে হবে না। খুব সহজেই তাড়াতাড়ি পড়া কমপ্লিট করতে পারবে। ফোন আসায় মুখে হাসি ফুটে তার। এমন সময় আতইয়াব ই তাকে ফোন দেয়। সন্ধ্যার এতটুকু সময়ই ফ্রি থাকে সে! ফোন ধরেই বলে উঠে,
আই মিস ইউ আত্তুবেবি!
আতইয়াব কিছুক্ষণ চুপ মেরে থেকে শান্ত কন্ঠে বলে উঠে,
আই নিড ইউ হৃদু। একটু আসবে নিচে? আমি গাড়িতে বসে আছি।
আতইয়াবের কন্ঠটা অন্যরকম শোনালো বলেই হৃদযা আর কথা বাড়ালো না। পড়নে তার শর্ট টপস আর প্লাজো! উড়না টা ভালো করে পেঁচিয়ে ফোনটা নিয়ে নিচের দিকে হাঁটা দেয়। কেউ ই বাড়িতে নেই তাই লুকিয়েও যেতে হবে না। হৃদযার দিকে একপলক তাকিয়েই দরজা খুলে দেয় আতইয়াব। হৃদযার ভ্রু কুঁচকে আসে। কিছু তো হয়েছেই! গম্ভীর মুখেই টান দেয় গাড়ি। কিছুটা দূরে গিয়েই গাড়ি রেখে একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়েই হৃদযাকে জড়িয়ে ধরে। অবাক হওয়ার একপর্যায়ে কাঁধে ভেজা কিছু অনুভব হতেই ধ্বক করে উঠে হৃদযার বুক। কেমন চিনচিন ব্যাথা করছে। কান্নাভেজা কন্ঠে আতইয়াব বলে উঠে,
কেন আমাদের জীবনটা এমন হলো হৃদু? কেন সুখী একটা পরিবার পেলাম না? কেন ফুল দুটোকে এত কষ্ট পেতে হলো? কেন আজ আমি বাবা ছাড়া? কেন সে এখন অন্ধকার কারাগারে? কেন এমন হলো হৃদু? আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে। মানুষটা কেমন ভালোবেসে গাল ছুঁয়ে দিচ্ছিলো! এরকম ভালোবাসা তো প্রত্যেক সময় পাওয়ার কথা ছিলো! কেন এমন করলো সে!
মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ৭
আতইয়াবের আহাজারিতে হৃদযার চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ে। ভালোবাসার মানুষটার কিছু হলে নিজে ঠিক থাকা যায় না যে। হৃদযা কথা না বলেই আতইয়াবের পিঠ আঁকড়ে ধরে। ভরসা পায় আতইয়াব। মনের মধ্যে যত কথা, মত অভিযোগ সব হৃদযার কাছে তুলে ধরে। হৃদযাও মনোযোগী শ্রোতা র মতো চোখে জল নিয়ে শুনতে থাকে। যেন দুঃখগুলো একে অপরের সাথে ভাগ করে নিচ্ছে!