মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ২

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ২
Tahrim Muntahana

ক্লাবের এক কোণে বসে ম* দ্য পানে ব্যস্ত রাজিব আহমেদ। এখানে সব ধনীদের মেলা। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ইয়াং রাও সমান তালে নেচে যাচ্ছে। ম* দের গালে চুমুক দিচ্ছে আর ঘড়ি দেখছে রাজিব আহমেদ, হয়তো কারোর আসার অপেক্ষা করছে । ঘড়ির দেখার তালে তালে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে যাচ্ছে তার ।বোঝায় যাচ্ছে খুব তাড়ায় আছে সে।

এমন সময় এক সুন্দরী ললনা রাজিব আহমেদের কোলে বসে পরে। প্রথমে তার রাগ হলেও মেয়েটির রুপ দেখে কিছু বলে না সে। মেয়েটির মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। হাত ধরে রাজিব আহমেদ কে দাড় করাতেই উপস্থিত হয় হিয়ান খান । মেয়েটি দু পা পিছিয়ে যায়। হিয়ান খান দেখে ফেলার আগেই মুখ লুকিয়ে ক্লাব থেকে বের হয়ে যায় সে। হিয়ান খান এতটাই চিন্তিত ছিলো যে মেয়েটিকে তার চোখেই পড়েনি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাজিব আহমেদ হিয়ান খান কে দেখেই মদের গ্লাস ঠাস করে রেখে ভেতরের রুমের দিকে হাটা দেয়।হিয়ান খান বুঝতে পারে রাজিব আহমেদ রেগে আছে। বাট সে পাত্তা দেয় না। ওসবে কান দেওয়ার সময় নেই তার ।রুমে ঢুকেই হিয়ান খান বলে ওঠে-

আমরা আমাদের পরিকল্পনায় প্রায় সফল। এবার শেষ চালটা দেওয়া বাকি/সতর্ক থাকতে হবে।আদর আহমেদ কিন্তু নিশ্চুপ আছে যা আমাদের জন্য মোটেও ভালো না। তাই সাবধান।
রাজিব আহমেদ নড়েচড়ে বসে ।কিছুক্ষণ ভেবে বলে ওঠে-
শেষ চালটা কখন চালাবো ,আমার আর সইছে না। কবে ওই দু টাকার মেয়ের চোখে পানি দেখতে পারবো। অপমানের শোধ নিবো হাড়ে হাড়ে!

কথার ধাঁচে রাজীব আহমেদ কাঁপতে থাকে। যেন শরীরের সকল উপশিরায় রাগ প্রবাহিত হচ্ছে। হিয়ান খান হাসে।রোগ দেয় রাজীব আহমেদ। যেনো তারা তাদের সফলতা এখনই দেখতে পাচ্ছে। এতকিছুর মাঝে তারা আতইযার- হৃদান কে ভুলেই বসেছে। হাসাহাসির মাঝেই হিয়ান খান রাজিব আহমেদ কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
তোর মনে আছে রাজিব; রাতাফ কে কিভাবে বোকা বানিয়ে ছিলাম? শালা বুঝতেই পারলো না এসব আমাদের চাল ।উল্টে তোকে বিশ্বাস করে সবটা ছেড়ে দিলো । হা হা হা হা। বোকা!

হিয়ান খানের কথায় রাজিব আহমেদ ও পৈশাচিক আনন্দে মেতে ওঠে ।তাদের হাসিতেই তাদের কুটিলতা প্রকাশ পাচ্ছে। রাজিব আহমেদ পাল্টা হেসে বলে ওঠে,
আরে আমার ভাই হলে কি হবে আস্ত
এক হাদা* রাম । হুট করে কিভাবে এত বড় ডিল আসলো সেটাও ধরতে পারলো না । আর সেখানেই মারটা খেলো । হা হা হা!

অট্ট হাসিতে ফেটে পরে দুজন । এভাবেই অতীতে করা নিজেদের ষড়যন্ত্র গুলো আওড়াতে থাকে। অনেক দিন পর আড্ডা জমেছে। অথচ তারা আড্ডায় মশগুল থেকে চিন্তাও করতে পারছে না হয়তো দেয়ালেরও কান আছে!

ঘর অন্ধকার করে শুয়ে ছিলো রামিয়া। সামনে টেস্ট পরীক্ষা অথচ তার সেদিকে কোনো খেয়াল ই নেই। আপন ভাবনায় শুধুই ওই পুরুষটি; যে তার ছোট্ট মস্তিষ্কে এমন ভাবে রাজ করছে অন‍্য কিছু ভাবনাতেও আনতে পারছে না। এমন সময় ঘরে ঢুকতেই আদরের ভ্রু আপনাআপনি কুচকে এলো।

মুখটা যথাসম্ভব কঠোর করে লাইট অন করে দিলো। চমকে উঠে বসলো রামিয়া। সে বুঝে নিয়েছে কে এসেছে! আদরের কঠোর মুখশ্রী দেখে ঈষৎ কেঁপেও উঠলো সে। বড্ড ভয় পায় কঠোর আদর কে। ছোট বোনের দিকে তাকিয়ে আদর চোখ বুজে নিলো। কি অবস্থা করে ফেলেছে। তার জীবনের একাংশ ঝামেলার প্রভাব যে তার ছোট্ট বোনের জীবনে পড়বে ভাবতেও পারেনি সে। অপরাধ বোধ কাজ করলেও বুঝতে দিলো না আদর। রামিয়ার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,

এখন শুয়ে থাকার সময় না রামু। সামনে টেস্ট পরীক্ষা ভুলে যেও না। পড়ায় মনোনিবেশ করো; আমাকে তো চিনো! খুব একটা ভালো হবে না তোমার জন‍্য।
রামিয়া ঘন ঘন চোখের পলক ফেলে কান্না টা লুকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।তার মস্তিষ্ক একটাই কথা জানান দিচ্ছে আদর সব জানলে তাকে ভুল বুঝবে। কিন্তু তার‌ই কি করার আছে! আবেগে পড়ে ভেসে গিয়েছে যে সে। আর উঠতে পারছে না। আদর বুঝতে পারে বোনের খারাপ লাগা টা। আস্তে আস্তে পা ফেলে এগিয়ে যায়। রামিয়ার পাশে বসে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। একসময় রামিয়ার হাত ধরে শান্ত কণ্ঠে বলে উঠে,

তোমার তো স্বপ্ন ছিলো ডক্টর হ‌ওয়ার! ভুলে গেছো? ডক্টর হয়ে গরীব-দুঃখীদের সাহায্য করবে না? জানো এই শীতে কত কত বৃদ্ধ-শিশু ঠান্ডায় কষ্ট করে, জ্বর হয়, কাশি হয় কিন্তু ঠিক টাকার অভাবে ঔষধ কিনতে পারে‌না। তুমি কি পারো না উনাদের পাশে দাঁড়াতে? আমি যে তোমাকে একজন ভালো সৎ ডক্টর হিসেবে দেখতে চাই‌। লোকে যেন আমাকে দেখে বলে, ওই যে দেখো ডক্টর রামিয়া আহমেদের বোন যাচ্ছে! পারবে না?

রামিয়া কান্না লুকাতে পারে না। আদর কে জ‌‌ড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে দেয়। আদর কিচ্ছু বলে না। এখন রামিয়ায় নিজের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে। সে কোন কিছু চাপিয়ে দিতে চায় না। আর বোনের কোনঠাসা থাকাটাও সে দেখতে চায় না। চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে হালকা আদর করে বের হয়ে আসে ঘর থেকে। নিজের‌ও পড়তে হবে।

আদর চলে যেতেই রামিয়া কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে। চোখ মুখ ভালো করে ধুয়ে পড়তে বসে যায়। পড়াশোনা ঠিক রেখেই তাকে বাকি সব করতে হবে। পড়ার একপর্যায়ে হঠাৎ করেই আবার রাফিন নামক ঝড় টা হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়। আপনাআপনিই মনটা খারাপ হয়ে যায় তার। একটু ভালোবাসলে কি হতো! সে তো বেশি কিছু চায়নি। কেন এলো মানুষটা? কেন এলোমেলো করে দিলো তাকে? দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে নেয়। চোখ বন্ধ করে আদরের কথা গুলো ভাবতে থাকে। পড়ায় যেন‌ জোর খুঁজে পায়।

মাথায় কারো আদুরে স্পর্শ পেতেই ফট করে চোখ খুলে রামিয়া। আত‌ইয়াব দাঁড়িয়ে আছে। রামিয়া নিজেকে স্বাভাবিক করার আগেই আত‌ইয়াব নরম কণ্ঠে বলে উঠে,
কনকনে শীতের শুরুতে আহমেদ বাড়ি আলো করে জন্ম নিলো এক মেয়ে শিশু। ছোট ছোট হাত পা জমে যাওয়ার যোগাড়। দেখভালের অভাবে নার্স রাও সামান্য অবেহেলায় ফেলে রাখলো। যখন‌ খবরটা আমার কানে পৌঁছায় কি একটা অনুভূতি হয়েছিলো বলে বোঝাতে পারবো।

ছুটে চলি হসপিটালে। বাচ্চা টাকে কোলে নিতেও‌ নাকি টাকা লাগবে। জানো তখন আমার কাছে একটা টাকাও ছিলো না। আবার ছুটে আসলাম বাড়িতে। বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করতে‌ গিয়ে‌ হাতেনাতে ধরা পড়লাম মায়ের কাছে। মা‌ কিন্তু মারেননি। বরং বেশ কিছু টাকা গুঁজে দিয়েছিলো। আবার ছুটে গেলাম। নার্সের হাতে কিছু টাকা দিতেই শিশুটাকে কোলে তুলে দিলো।

নরম লাল লাল শরীরটা যেন আমার সাথে মিশে গেল। একদম ফুলের মতো। আমার জীবনে দ্বিতীয় ফুল হয়ে এলে তুমি! ফুল দুটোর যে আমি আর দাদি ছাড়া কেউ ছিলো না। আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলে। আশেপাশের মানুষের ক* টু কথায় সমাজ সম্পর্কে অল্প বয়সেই অনেকটা বুঝে গেলে কিন্তু স্ট্রং হতে পারলে‌ না। নিজের অধিকার বুঝে নিতে পারলে না। কিন্তু যখন আমি আমার ভরসার হাত টা গুটিয়ে নিলাম ঠিক তখনি তোমার রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়ালো আমার বড় ফুল! ধরতে গেলে আমার প্রথম সন্তান!

ঠিক বাবার মতোই তোমাদের দুজনকে আগলে রেখেছি, সন্তানের মতোই একটু একটু করে বড় করেছি। আমি জানি তুমি আমার প্রতি ভুল ধারণা পোষণ করে আছো তাই তো আগের মতো কাছে আসো না; ভাইয়া বলে জড়িয়ে ধরো‌ না; আবদার করো না! তোমার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক এটা।

যাইহোক অনেক কথা বলে ফেললাম। কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হলো তুমি এখনো আমার কাছে সেই প্রথম কোলে নেওয়া শিশুর ন্যায়। তোমার বড় বোনের কাছে স্বপ্ন তুমি! আশা করবো এমন‌কিছু ভুল পদক্ষেপ নিও না যার দরুন তিনটা জীবন এলোমেলো হয়ে যায়!

আত‌ইয়াব আর দাড়ায় না। দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে চলে আসে। রামিয়া ছলছল চোখে আত‌ইয়াবের যাওয়া দেখে। এই মানুষ টাকে সে ভুল বুঝেছিলো! আদর কে দেখেও সে এই মানুষটার কাছাকাছি যায় নি। অপরাধবোধে মাথা নিচু হয়ে আসে রামিয়ার। চুপচাপ কিছুক্ষণ ভেবে পড়ায় মন দেয়। বেশ ফুরফুরা লাগছে এখন। আবার সেই আগের রামিয়া হতে হবে। বা‍ঁচতে হলে এবার ভাইয়া-আপুর জন্য বাঁচবে; ম* রলেও দুজনের জন্য‌ই! তার যে বয়স এখন হেসে খেলে বেড়ানোর দিন; অন্যকিছু নয়!

সকাল সকাল হাঁটতে বের হয়েছে কান্চু
সাথে তার বাবা মি. ফঞ্চু। বেশ কয়েক দিন ধরেই বাবা-ছেলে মিলে জগিং করছে। ইদানিং মি ফঞ্চুর ভুড়িটা সমান তালে বেড়ে চলছে। যদিও তার এতে প্রবলেম ছিলো না। নেহাত বউ হুমকি দিয়েছে ঘরে ঢুকতে দিবে না। না হলে কে আরামের ঘুম ছেড়ে হাটি হাটি পা করতে আসে এই বয়সে।

অন্যদিকে কান্চু নিজেকে ফিট রাখার জন্য সকল প্রকার এক্সারসাইজ করছে। যে করেই হোক তাকে হৃদান চৌধুরী কে পেছনে ফেলতেই হবে । তবেই না মিস ক্রাশু তার হবে! এই পাদু তকমা টা সে উঠিয়েই ছাড়বে। এমন ভাবে নিজেকে তৈরি করবে সপ্তাহেও একটা পাদ যেন না আসে।

এসব ভাবতে ভাবতে হুট করেই থেমে যায় কান্চু। ভাবতে বসে যায়। সপ্তাহে যদি অন্তত একটা পাদ না আসে তাহলে সে বাঁচবে? পেট ফুলে না মারা যাবে! যাই হোক মারা যাওয়া যাবে না। তাহলে তার অনুপস্থিতে হৃদান চৌধুরী তার ক্রাশুকে নিয়ে চলে যাবে। এ হতে পারে না। জোরে জোরে দৌড়ানো শুরু করে কান্চু। ছুটতেই থাকে সে !

নিজ ঘরে পায়চারি করছে সাফিন। মাথায় শুধু তার ভাইয়ের চিন্তা ঘুরছে। ছোট ভাইকে সে ভীষণ ভালোবাসে। সে তার ভালোবাসা পাইনি তো কি হয়েছে! ছোট ভাইকে কিছুতেই কষ্ট পেতে দিবে না সে। এর জন্য যতো দূর যাওয়া লাগে সে যাবে।নিজ মনে কিছু ভেবে ওয়াশরুমে ডুকে পড়ে সাফিন। উদ্দেশ্য গোসল করা। খুব জলদি বের হতে হবে তাকে। নিজের মতো তৈরি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায় সাফিন।

সাফিন বের হওয়ার ঠিক কয়েক মিনিট পরেই গাড়ি ঢুকে হিয়ান খানের। মাতালের মতো টলতে টলতে বাড়িতে প্রবেশ করে। কালকে রাতে মদের নেশায় আর আসতে পারে নি। সেখানেই ছিলো। নেশা কাটতেই মুখ লুকিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
সাফিন এসেছে তার বন্ধু মহলের আড্ডাতে। অনেক দিন আসা হয়নি। যদিও সে আগের মতো আগ্রহ পায় না কোন কিছুতে। নেহাত দরকার তাই আসতে হলো। সাফিন কে দেখেই বন্ধু মহলে হইচই পড়ে যায়। সাফিন হাসে না। কুশল বিনিময় করে বন্ধুদের উদ্দেশ্য বলে উঠে,

আমার একটা হেল্প লাগবে!যদিও অন্যদের দিয়ে করাতে পারতাম। তবে কিছু কারণ আছে। এর জন্য মোটা অঙ্কের টাকাও পাবি।
সাফিনের কথায় সবাই অবাক হয়। কি এমন কাজ থাকতে পারে হয়তো তাই ভাবছে। সাফিন সবার দিকে একনজর তাকিয়ে বলে,

কিডন্যাপ করতে হবে একটা মেয়েকে!ডিটেইলস ফোন চেক কর পেয়ে যাবি। আগামী ৩ দিনের মধ্যে সব কাজ ওকে চাই। তোরা রাজী?
প্রথম সবাই কিছুটা ইতস্তত করলেও টাকার লোভে রাজী হয়ে যায়। সাফিন বাঁকা হেসে স্থান ত্যাগ করে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। সাফিন যেতেই বন্ধু মহল নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নেয়। যেন এটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মিশন! সফল হলেই ভাগ্য খুলবে…

অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে আদর। আজ মনটা তার ভীষণ ভালো। অজানা কারণে ফুরফুরে লাগছে। সত্যিই কি অজানা?ভাবে আদর; এইতো প্রায় চল্লিশ কি পঞ্চাশ মিনিট আগে হৃদান ফোন দিয়েছিলো। সে থেকেই তো ভালো লাগার সাগরে সাঁতার কাটছে সে। মুচকি হাসে আদর।

হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়। ড্রয়িংরুমে আসতেই মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায় তার। এক আকাশ রাগ এসে হানা দেয় মস্তিষ্কে। সোফায় আধশোয়া হয়ে বসে রাজীব আহমেদ তার স্ত্রী কে গালাগালি করছে। মদের নেশা এখনো পুরোপুরি কাটেনি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আদর সামনে গিয়ে এক মগ পানি ছুঁড়ে মারে।

ধরফর করে উঠে দাড়াঁই রাজীব আহমেদ। আদর কে দেখেই হেসে ওঠে। কেন জানি আজ তার রাগ লাগছে না। আদরের ভ্রু কুচকে আসে রাজীব আহমেদ কে হাসতে দেখে। রাজীব আহমেদ হো হো করে হেসে বলে ওঠে,
যাও যাও অফিসে যাও। তবেই না আসল খেলা।

আদর বিনিময়ে কিছু বলার সুযোগ পায় না। টুংটাং করে ফোন বেজে ওঠে। অফিস থেকে ফোন দিচ্ছে। তাকে চোখ রাঙিয়ে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যায় আদর। রাজীব আহমেদ হাসতে থাকে। উপর থেকে বাবার হাসি দেখে বাঁকা হাসে আতাইয়াব। যে হাসির কারণ তার জানা! চারদিক থেকে ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে রেখেছে। কি করে রেহায় পাবে আদর? আদও কি পাবে?

আদর অফিসে এসেই দেখতে পায় অফিস তালা দেওয়া। এমনকি অফিসের সামনে পুলিশ থেকে শুরু করে সাংবাদিক সহ আরও অন্যান্য লোকও রয়েছে। চমকে যায় আদর। পুলিশ কেন? আদর গাড়ি থেকে নামতেই একঝাঁক সাংবাদিক ছুটে আসে। নাগাল পায় না আদরের। তার আগেই বাহাদুর তার টিম নিয়ে সামনে দাড়ায়। বাহাদুরকে দেখে পিছনে চলে যায় সবাই। ইয়া বড় দানবের সামনে থাকা যায় নাকি! দিশেহারা হয়ে যায় আদর। চারদিক খুঁজতে থাকে কাওকে। নাহ মানুষটার ছিটেফোঁটাও নেই এখানে। আদরকে দেখেই পুলিশের হেড বলে ওঠে,
আপনার অফিসের স্টোর রুম থেকে আমরা ড্রাগস পেয়েছি। অফিসটা আপাদত বন্ধ এবং আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে।

হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আদর। কিছু বলার শক্তিও যেন নেই। শরীরের মৃদু কা‌ঁপুনি জানান দিচ্ছে মানুষটা আকস্মিক শকড নিতে পারে নি। তার অফিসে ড্রাগস আসবে কোথা থেকে? ভাবনাতেও নিজেকে অসহায় দেখতে পায় আদর। বারবার মায়ের আকুতির শব্দগুলো কানে বাজতে থাকে। শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে নেতিয়ে পড়ার আগেই ভরসার হাতটাকে প্রবল করতে হৃদানের আগমন।

ঝাপটে ধরে আদরকে। চোহারায় ভয়ের রেশ মাত্র নেই। যেন কিছুই হয়নি। তীক্ষ্ণ চোখে অফিসারের দিকে তাকাতেই নড়ে চড়ে দাড়ায় অফিসার। কে না চেনে হৃদান চৌধুরীকে! ক্ষমতা সম্পর্কেও তার জানা। অফিসার সালাম দিলেও হৃদানের কোনো ভাববেগ হয় না। গম্ভীর মুখ করে দাড়িয়ে থাকে। একসময় হুট করে বলে ওঠে,

কার ইনফরমেশনে এতো বড় পদক্ষেপ নিলেন অফিসার?
অফিসার ভড়কে যায় একদম। হাঁসফাঁস করতে থাকে। অফিসারকে বলার সুযোগ না দিয়ে আবার বলে ওঠে,
এমপ্লয়দের কথা বলে পার পাবেন না।সবরকম টেস্ট নিয়েই চাকরিতে রাখা হয়েছে। সো সত্যটা আপনি বলবেন নাকি আমি বলবো? মনে রাখবেন আমার বলা কিন্তু একদম উল্টো। আই রিপিট আমার বলা একদম আলাদা হবে। স‌ইতে পারবেন না।

হৃদানের কথা শুনে ঘামতে শুরু করে অফিসার। এখান থেকে যেতে পারলে যেন বাঁচে সে। হৃদান বাঁকা হাসে। অন্যকে ট্র্যাপে ফেলে কিভাবে নিজের কাজ আদায় করতে হয় সে খুব ভালো পারে। আদর এখন হা করে দেখছে সব। কি থেকে কি হলো ! হৃদান আদরের মুখ বন্ধ করে দিয়ে বলে,

যেভাবে হা করে তাকিয়ে আছো হাতিও ঢুকে যাবে অবলিলায়। বি কন্ট্রোল বেবি। নাহলে আমি কন্ট্রোললেস হয়ে যাবো।
আদরের রাগ হয়। এমন একটা সময়েও তার এমন কথা আসে কিভাবে! ঠোঁট ফুলিয়ে দাড়িয়ে থাকে সে। হৃদান ফিক করে হেঁসে ওঠে। এত বড় মেয়েকে বাচ্চাদের মতো আচরণ করলে কার না হাসি পাবে! অফিসার ঠায় দাড়িয়ে হাঁসফাঁস করছে এখনো। আদরের থেকে নজর সরিয়ে হৃদান থাবা বসায় অফিসারের কাঁধে। চুপচাপ হজম করে নেয় অফিসার। নাহলে সবার কাছেই তার রুপ বের হয়ে যাবে।‌ অফিসার নিজেকে বাঁচাতে উল্টো চাল চালে,

এসব কৈফিয়ত আপনাকে দিতে বাধ্য নয় মি. চৌধুরী। লোকটি নিজের পরিচয় গোপন রেখে আমাদের ইনফর্ম করেছে। আমাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করবেন না। কোঅপারেট করুন।
এবার‌ও হৃদান‌ স্বাভাবিক। পার্থক্য এটাই আগের হাসিটায় পরিবর্তন এসেছে। এমন সময়ে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় হাসতে দেখলে কার না ভয় লাগবে! সেখানে অফিসারের মধ্যে তো ঘাপলা আছে! হৃদান অফিসারটির কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে,

আলমারির সেকেন্ড পার্টে ছয় লক্ষ টাকার হদিস কি জানিয়ে দিবো?
হাতের লাঠি টা নিচে পড়ে যায় অফিসারের। কিটকিটিয়ে হেসে উঠে হৃদান। অফিসার আর কিছু বলার সাহস পায় না। অফিসারের চুপ থাকা টা পছন্দ হ‌য় না হৃদানের। মুহূর্তেই মুখটাকে কঠোর করে দা‌ঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
তোর মাশুল দিতে হবে। সদ্য ফুটে ওঠা ফুল কে ঝরে ফেলার প্লেনে সাহায্য করায় তোকে মাশুল দিতে হবে। সবথেকে বড় ভুল‌ তোর কি জানিস; তুই হৃদান চৌধুরীর কলিজায় হাত দিয়েছিস!

যাকে ধরতে গেলেও আমি দশ বার ভাবি ব্যাথা পাবে‌ না তো, যার সাথে কথা বললেও হিসেব করে কথা বলি আমার কোনো কথায় কষ্ট পাবে না তো! সেই তাকেই তুই সকাল‌ সকাল এত বড় শকড দিলি! যে শকড না মানতে পেরে নেতিয়ে পড়েছিলো! একবার ভাবতো আমি ঠিক সময় না আসলে কি হতো? মাটিতে পড়ে গিয়ে ফুলটা ব্যাথা পেতো; সহ্য করতাম কি করে! তোর কত বড় কলিজা; তুই হৃদান চৌধুরীর হৃদপিন্ডে থাবা বসাতে এসেছিস! ওই কলিজা টাকে যদি ষোল টুকরা করে আমার পোষা বিড়াল কে না খাইয়েছি আমিও ক্ষান্ত হবো না!

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ১

অফিসার টির রুহ বেরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। কেন যে টাকার লোভ সামলাতে পারলো না; অন্তত জীবন টা বেঁচে যেত! আদর হৃদানের বাহুডোরে ছিলো বলেই শুনতে পেলো সবটা। ভয়াবহ রকমের শিতল শিহরণ বয়ে গেল সারা শরীরে। কি একটা শিতল অনুভূতি। তার প্রত্যাশার থেকেও যে হৃদান চৌধুরী নামক লোকটা তাকে চারগুণ বেশি ভালোবাসে! চোখ বন্ধ‌ করে জোরে শ্বাস ফেলে আদর। গরম শ্বাস ফেলে যেন‌ একটু আগের খারাপ লাগাটা বহুদূরে পাঠিয়ে দেয়! এত ভালোবাসা থাকতে তার জীবনে দুঃখের জায়গা কোথায়!

মন পাথরে হঠাৎ ঝড় সিজন ২ পর্ব ৩