রাজনীতির রংমহল পর্ব ৩১

রাজনীতির রংমহল পর্ব ৩১
সিমরান মিমি

বিনর্ণ দুপুর।চারদিকে লোকজনের চিৎকার,হাহাকারে ছেয়ে গেছে ধরণী।শত শত লোকের আনাগোনা রয়েছে পিরোজপুর সদরে।সোভামের পার্টি অফিসের সামনে বিরোধী দলের নেতা পরশ শিকদারকে দেখেই আশে-পাশের দোকানদার/রাস্তার জনগণের চোখ কপালে উঠেছিল।

একে অন্যকে কানাঘুষা করতে করতে প্রায় শতখানেক লোক হাজির হয়েছিলো সেখানে। রুমে ঢুকতেই ভেতরের সবার চিৎকারে ভয় পেয়ে গেছিলো জনগন।ছুটে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো ভেতর থেকে দরজা লাগানো। জানলা দিয়ে ভেতরের বিভৎস রুপ দেখে আতকে উঠেছিলো সবাই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পাভেলের জানাজা স্কুল মাঠে পড়ানো হবে।এতো এতো খারাপ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই বাজারে লোকজনের আনাগোনা ছিলো খুব বেশী।টানা বারো মিনিটের এই বিভৎস ঘটনায় হাজির হয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক গুলো ফোর্স,দু দলের শুভাকাঙ্ক্ষী রাজনৈতিক নেতাসহ আশে-পাশের সাধারণ জনগন।

পাইপের পানি দিয়ে শরীরের রক্ত ধুয়ে স্থির হয়ে সামনে তাকালো পরশ।এরইমধ্যে থানার ইনস্পেকটর তার পাশে গেল।সারাজীবন শান্ত-শিষ্ট থাকা এই নেতার এমন করুন রুপ দেখে ভীষণ ভয় পেয়েছে সে।পাশে গিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বললো-

এমপি সাহেব,খুব কি দরকার ছিলো এভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়া?
রক্তলাল চক্ষুদুটো নিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে ইনস্পেকটরের দিকে চাইলো পরশ।মুহুর্তেই ঘাবড়ে গেল ইনস্পেকটর।আমতা-আমতা করে বললো-

না,মানে আপনার স্ত্রী আমাদের সব বলেছে।আমরা একটু আগেই প্রেমার থেকে স্বীকারোক্তি নিয়েছি।ভিডিও ক্লিপ টা কমিশনার সাহেবের কাছে পাঠানোর ব্যাবস্থাই করছিলাম।এরইমধ্যে খবর পেলাম আপনি এখানে।
কোনো রুপ সাড়া দিল না পরশ।ইনস্পেকটরের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো-
জানাজা কোথায় হচ্ছে ইনস্পেকটর সাহেব?

–আ হ্যা ওই তো স্কুল মাঠের সামনে।
পরশ আর কিচ্ছু বললো না।ত্রস্ত পায়ে গাড়িতে উঠে বসলো।সাথে সাথেই স্টার্ট দিয়ে সামনের দিকে চলল।ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ইনস্পেকটর। দ্রুত নিজের গাড়িতে উঠে পরশের পিছু ধাওয়া করলো।পাশ থেকে ড্রাইভিং করা কনস্টেবল বললো-

স্যার,ওনাকে গ্রেফতার করলেন না কেন?এখন যদি পালিয়ে যায়।
চকিতে সেদিকে তাকালো ইনস্পেকটর। তারপর নরম গলায় শুধালো-
নাহ,উনি পালাবে না।আর এখন যতদুর আমার মনে হয়,উনি ওনার ভাইয়ের জানাজায় যাবেন।ভাইকে কবর দেওয়ার পরেই আমরা ওনাকে গ্রেফতার করতে পারবো।

স্কুল মাঠের দিকে না গিয়েই সোজা নিজেদের পার্টি অফিসে ঢুকলো পরশ । ত্রস্ত পায়ে উপরের পার্সোনাল রুমে ঢুকে বাথরুমে গেল।টানা এক ঘন্টা বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো পুলিশ।এই এক ঘন্টা বাথ্রুমে বসে পরশ কি করেছে তা সবার অজানা।
ক্রিং ক্রিং করে ওপাশ থেকে ফোন আসলো ইনস্পেকটরের কাছে।রিসিভড করে হু হা বলে ঘাবড়ে গিয়ে গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে দিলো।
কনস্টেবল- কি হয়েছে স্যার?কে ফোন দিয়েছিলো?
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে ইনস্পেকটর বললো-

কমিশনার সাহেব।ওরা ওখান থেকে লাশ সহ সবাই কে নিয়ে গেছে।দুজন স্পট ডেট।সোভাম আর আরিফ।সোভাম সরদারের মাথা ছিন্ন দেহটাতেও অসংখ্য কোপের আঘাত পাওয়া গেছে।যেন নিজের সমস্ত রাগ/যন্ত্রনা চোখ বন্ধ করে ওই শরীর টার উপরে মিটিয়েছে পরশ শিকদার।আরিফের ও গায়ে কোপের চিহ্ন থাকলেও মাথার পেছনের গভীর কোপটার জন্য সেখানেই মৃত্যু হয়েছে।নিরব কে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে।পেটের কোপে শরীরের নাড়ি-ভুড়ি বের হওয়ার সাথে খাদ্যনালী টাও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।ডাক্তার রা একদম আশা ছেড়ে দিতে বলেছে।

ঘাবড়ে গেল কন্সটেবল।ভয় জড়ানো কন্ঠে বললো-
বাকি দুইজনের কি হয়েছে?বাচবে তো স্যার।
তপ্ত শ্বাস ফেললো ইনস্পেকটর। বললো-
রানা নামক ছেলেটার সারা শরীরে কাচ ঢুকেছে।তার উপর কাটাতারের উপর পরে পেরেক চোখে ঢুকে গেছে।আর ওই সোহেল ছেলেটার ও হাটুতে অপারেশন হচ্ছে।ভেতরের হাড্ডিই নাকি কেটে গেছে।

ঘামতে লাগলো কনস্টেবল। প্রায় আরো বিশ মিনিট অপেক্ষার পর সিড়ি দিয়ে নিচে নামলো পরশ।গায়ে সাদা পাঞ্জাবি,মাথায় সাদা টুপি।তবে চোখ দুটো আগের থেকেও টকটকে লাল হয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক ক্ষণ ধরে কান্নার ফলে এমনটা হয়েছে।আগের থেকে যদি কোনো পার্থক্য পাওয়া যায় তবে সেটা তার কপাল। এর আগে কপালের শিরা গুলো ফুলে রাগের অস্তিত্ব জানিয়েছে সবাইকে।আর এখন সেই কপাল টা শিথিল হয়ে যেন অসহায়ত্বের ছাপ পড়েছে।
নিচে নেমে পুনরায় গাড়িতে উঠলো।স্টার্ট দিয়ে আবারো চললো স্কুল মাঠের দিকে।ইনস্পেকটর ও পূর্বের ন্যায় তার পেছনে গাড়ি চালিয়ে গেল।

পুরো মাঠ ভর্তি জনগণ। কেউ বা পাশের পুকুরে ওযু করছে।আবার কেউ কেউ গোল হয়ে আলাপ-আলোচনা করছে পরশ কে নিয়ে।কিছুক্ষণ আগেই গোসল করানোর পর হস্পিটালের সামনে নিয়ে শেষ বারের মতো সবাইকে পাভেলের মুখ দেখিয়ে এনেছে।
ইতোমধ্যে চারদিকে ছড়িয়ে গেছে খুনের কথা।পিয়াশা বড় ছেলের এমন ভয়ংকরী রুপের কথা শুনে পুনরায় জ্ঞান হারিয়েছে।

মহিউদ্দিন শিকদার খাটিয়ার একপাশে নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে।যেন কোনো ঘোরের মধ্যে আছেন তিনি।চারপাশের সবকিছু যেন তার স্নায়ুকে শিথিল করে দিয়েছে।গত দু দিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাকে তিনি বিরাট কোনো দুঃস্বপ্ন ভাবছেন।পাশেই আলতাফ শিকদার এবং তাদের অন্যান্য আত্নীয়রা দাঁড়ানো। পরশকে মাঠে দেখতেই একটা হৈ-হুল্লোড় পড়ে গেল।পরশ ধীর পায়ে হুজুরের নিকট গেল।জানাজা পরানোর আদেশ দিয়ে একপাশে দাড়িয়ে পড়লো।

হতভম্ব হয়ে করিডোরে রাখা এক বেঞ্চিতে বসে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে স্পর্শী। কিচ্ছুক্ষণ আগেই সে নার্সের থেকে জানতে পেরেছে।মন, মস্তিষ্ক কিছুতেই এমন জঘন্য/ভয়ংকর ঘটনাকে মানতে পারছে না।তার ওই শান্ত শিষ্ট নেতামশাই কি করে এমন নিষ্ঠুর হতে পারে?ইচ্ছে করছে সেও অজ্ঞান হয়ে যাক শাশুড়ির মতো। কিন্তু বিধাতা কিছুতেই তার মনোবাঞ্ছা পূর্ন করলো না।বরং শক্ত হয়ে সেখানেই দেয়াল ঘেঁষে পড়ে রইলো।

মন/মস্তিষ্ক বার বার চাইছে “এ সব কিছু মিথ্যে হোক।তারা তো জাফলং গিয়েছিলো ঘুরতে।আচ্ছা,এই সব কিছু কি তার দুঃস্বপ্ন হতে পারে না?চোখের কোল ঘেঁষে অনবরত অশ্রু গুলো বেয়ে পরছে দু-পাশে।পেটে খিদেয় মোচড় মারছে।সেই কাল সন্ধ্যা সাত টার সময় খেয়েছে এখন বাজে দুই টা।অথচ এখন পর্যন্ত পেটে দানা-পানি ও পড়ে নি।কি করে খাবে সে?কার কাছেই বা চাইবে খাবার।

অসুস্থ ননদ,সংজ্ঞা হারানো শাশুড়ী কে ফেলে কি করে সে বাড়িতে যাবে।অথচ এদিকে পেট ও মানছে না।কি করে মানবে?সেও তো রক্ত মাংসের গড়া মানুষ। তার ও তো ক্ষুধা/তৃষ্ণা আছে।মুহুর্তেই পরশের কথা মনে পড়তেই সব কিছু ভুলে গেল।
” সেতো একা নয়,ওই লোকটাও তো এখনো না খেয়ে আছে।না জানি কি কি ঝড় যাচ্ছে তার উপর থেকে।

স্কুল মাঠের’ই এক কোনায় পাভেল কে দাফন করার জন্য কবর খোরা হয়েছে।স্থানীয় সকল নেতার পরামর্শে শেষে আপত্তি সত্ত্বেও মহীউদ্দীন রাজি হলেন।কিন্তু পরশ শোনামাত্রই ভ্রু কুচকে তাকালো।শান্ত দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে বললো-
আমার ভাই কোনো ভাস্কর্য নয় যে ওকে সবাই দর্শন করবে।পারিবারিক গোরস্থানেই ওকে দা’ফ’ন করা হবে।

দাফন-তিনটি বর্নের এই শব্দটাকে উচ্চারণ করতে যেন পরশের প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছিলো।বুকের উপর পাথর সমান ওজন বিস্তার করছিলো।হৃদয়ের রক্তক্ষরণকে সবার থেকে যথাসম্ভব লুকানোর চেষ্টা করে খাটিয়ার পাশে গেল।
সকলের সামান্য খারাপ লাগলেও মেনে নিল পরশের কথা।এরপর খাটিয়ার সামনের এক পাশ পরশ,অন্যপাশ সুমন এবং পেছনের দু পাশ আলতাফ এবং দলের আরেকজন সদস্য ধরলো।মহীউদ্দীন পারলেন না।তার হাত-পা ভীষণ কাপছে।তিনি কিছুতেই ছেলের লাশ কাধে নিতে পারবেন না।

শিকদার মঞ্জিলের বামপাশে কিছুটা দুরেই পারিবারিক গোরস্থান।ইতিমধ্যে কবর খোরা হয়ে গেছে।পাভেলের লাশ উঠাতে গিয়ে আলতো করে বুকে জড়িয়ে ধরলো পরশ।কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর আওয়াজে বললো –
আমার থেকে মুক্তি পাওয়াটাই কি তোর শেষ ইচ্ছা ছিলো ভাই?খোদার কসম! জানলে কখনোই আমি তোকে ছেড়ে জাফলং যেতাম না।

কবর থেকে ওঠা মাত্রই কমিশনার এগিয়ে এলেন।ধীর কন্ঠে বললেন-
এমপি সাহেব,এবারে আমাদের কাজ টা করতে দিন।চলুন।
পরশ আলতো হাসলো।অন্যদিকে তাকিয়ে কমিশনার কে বললো-
শেষ বারের মতো আমার বোনের সাথে দেখা করতে চাই।
কমিশনার কিছুক্ষণ নিরব থাকলো। তারপর বললো-
আমাদের গাড়িতেই চলুন তাহলে।

কোনোরুপ বাক্যব্যয় না করেই পরশ গাড়িতে উঠলো।চলন্ত গাড়ি থেকে যত দূর পর্যন্ত দেখা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত সদ্য মাটি চাপা দেওয়া কবরটার দিকে তাকিয়ে রইলো পরশ।এক সময় চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো।

আজকেই প্রেমাকে বরিশাল অথবা ঢাকায় নেওয়ার কথা ছিলো। কেননা তার অবস্থার তেমন উন্নতি হচ্ছিলো না।কিন্তু হঠাৎ করে দ্বিতীয় বারের মতো এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি শিকদার বাড়ির কেউ।দোতলায় প্রেমা শুয়ে আছে।তিনতলায় স্পর্শী শাশুড়ির কাছে বসে আছে।তিনি অঝোরে কাদছেন। আর কতক্ষন পরপর জ্ঞান হারাচ্ছেন।অনেক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও তাকে কিছু খাওয়াতে পারলো না স্পর্শী।পিয়াশার প্রেসার হাই।একটুতেই হাইপার হয়ে যায় সে।শেষে বাধ্য হয়ে নার্স ঘুমের ইঞ্জেকশন করলো।

শাশুড়ীকে না খাওয়াতে পেরে টুল থেকে উঠে বসলো স্পর্শী।এখন প্রেমাকে খাওয়াতে যেতে হবে।উঠতে গিয়েও ধপ করে বসে পড়লো। মাথাটা ভীষণ ঘুরছে তার।যন্ত্রনায় ছিড়ে যাচ্ছে।পেটেও মোচড় দিয়ে ব্যাথা করছে।হয়তো না খেয়ে থাকার জন্যই।সিটের উপর মাথা ঝুকিয়ে কিছুক্ষণ সেভাবেই বসে রইলো স্পর্শী।

ত্রস্ত পায়ে দোতলায় প্রেমার কেবিনে ঢুকলো পরশ।কেবিনের বাইরে সকল পুলিশ দাড়ানো।ধীর পায়ে টুল নিয়ে বসলো পরশ। প্রেমা ছাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।দুচোখ দিয়ে অশ্রু দুপাশে গড়িয়ে পড়ছে।
প্রেমা(আদুরে কন্ঠে বোনকে ডাকলো পরশ)

একবার তাকিয়ে আবার অন্যদিকে তাকালো প্রেমা।এই তো কিছুক্ষণ আগে ভাইয়ের লাশ দেখে চিৎকার করে কেদেছে।সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করছে সে।মরে গেলে সে যেত কিন্তু তাকে বাচানোর জন্য ভাইটা চলে গেল।এতো বোঝা সে কি করে বইবে।এর থেকে সে ও মরে যাক।
দুহাত ধরে আলগোছে বোনকে বসালো পরশ।বুকে জড়িয়ে ধরতেই ঝরঝর করে কেদে দিলো প্রেমা।দুহাতে আগলে পরশ আদুরে কন্ঠে বললো-

একি তুমি কাদছো কেন?আমার বোনটা এতটা দুর্বল।তুমি না খুব স্ট্রং মেয়ে।সব কিছু বোঝো,বড়দের মতো করে সবকিছু সামলে নিতে জানো,তাহলে এখন কাদছো কেন?
দুহাত দিয়ে গাল ধরে নিজের দিকে তাকিয়ে পুনরায় পরশ বললো-
সোনা,কুকুর কামড়ালে কি মানুষ মরে যায়?কি হলো বলো?
প্রেমা মাথা “না” ভঙ্গিতে নাড়ালো।পরশ পুনরায় বললো-

কুকুর কামড়ালে যেমন ডক্টর দেখিয়ে মানুষ সুস্থ হয়ে যায়।তুমিও সুস্থ হয়ে যাবে।একদম ভেঙে পড়বে না।ভাই তো চলে গেছে তাই না।এখন বাবা-মাকে কে দেখবে?তুমি কাদলে তারা খুব ভেঙে পড়বে।আমার সোনা,একদম স্ট্রং থাকবে।আবার সারাদিন লেখাপড়া করবে।ভালো রেজাল্ট করবে।এসএসসি তে একদম জেলা ফার্স্ট হয়ে দেখাবে।কি পারবেনা ভাইয়ের আশা পূরণ করতে।

প্রেমা মাথা নাড়ালো।
পরশ আবারো বললো-
গুড!এইতো আমার বোন আবার স্ট্রং হয়ে গেছে।এভাবেই থাকবে সবসময় হাসি -খুশি। ওকে
বলে উঠে দাড়াতেই প্রেমা বললো-
তুমি এরপর থেকে আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে ভাইয়া।আমি আর একা যাবো না কোথাও।
কলিজাটা মুচড়ে ধরলো যেন পরশের।বোনের কপালে চুমু দিয়ে বললো-

ভাইয়া ওই কুকুর গুলোকে মেরে ফেলেছে তো।তাই কিছুদিন দূরে থাকবে।তবে যেখানেই থাকি না কেন?তোমার রেজাল্ট যেন আমি পাই। ওকে।
প্রেমা কিছু বুঝে উঠলো না।তাও আলতো হাতে নাক টেনে বললো-
এসএসসি তো এখনো দু বছর পর।
পরশ আলতো হেসে বললো-

তো কি হয়েছে।এই দুই বছরে ভালো করে প্রিপারেশন নিবে।ওকে
বলে ত্রস্ত পায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।গটগট পায়ে নিচে নেমে আলতাফ শিকদারের মুখোমুখি হলো। কন্ঠে কাঠিন্যতা এনে বললো-

চাচ্চু,প্রেমাকে কাল পরশুর মধ্যেই বরিশালে নেওয়ার ব্যাবস্থা করবে।এখানে ওর চিকিৎসা ভালো হবে না।
আলতাফ মাথা নাড়িয়ে পরশের ঘাড়ে হাত রেখে বললো-
তুই চিন্তা করিস না বাবা।খুব শীঘ্রই তোকে ছাড়িয়ে আনবো।
হাসলো পরশ।সে জানে এ নিছিক সান্ত্বনা। দ্রুতপায়ে আর কারো সাথে দেখা না করেই গাড়িতে উঠলো।গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার সাথে সাথেই দোতলা থেকে চিৎকার ভেসে আসলো-

নেতামশাই!!!!
পরশ শুনেও শুনলো না।গাড়ি চলতে শুরু করলো।এরইমধ্যে স্পর্শী ছুটতে ছুটতে রাস্তায় চলে এলো।পিজঢালা রাস্তায় গাড়ির পেছনে “নেতামশাই” বলে চিৎকার করতে কর‍তে ছুটছে স্পর্শি।ইনস্পেকটর একবার পিছনে বসা পরশের দিকে তাকিয়ে বললো-

রাজনীতির রংমহল পর্ব ৩০

এমপি সাহেব,গাড়ি কি থামাবো।
শান্ত চাহনিতে পরশ একবার রাস্তায় ছুটতে থাকা স্পর্শীর দিকে চাইলো।যেন তার বিপদ গুলো পিছু ছুটে আসতে চাইছে তার কাছে।পরক্ষণেই কন্ঠে কাঠিন্যতা এনে বললো-
প্রয়োজন নেই।

রাজনীতির রংমহল বোনাস পর্ব