রাজনীতির রংমহল বোনাস পর্ব 

রাজনীতির রংমহল বোনাস পর্ব 
সিমরান মিমি

বিকাল তিনটা।সূর্যের তেজ খানিকটা কমে এসেছে।মাথার উপর দন্ডায়মান তেজের ফালি টা আলতো হেলে পশ্চিমে ঢলে পড়েছে।রাস্তার মাঝখানেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো স্পর্শী।গাড়ি’টা দৃষ্টিসীমানার বাইরে চলে গেছে ইতোমধ্যে।দুচোখ দিয়ে দু-ফোটা গরম জল গড়িয়ে পরলো গাল বেয়ে।

নেতামশাই তো তার দিকে তাকিয়েছিলো,এমনকি তাকে ছুটতেও দেখেছে, তাহলে সেই মানুষটা তাকে এভাবে ছূড়ে ফেলে কিভাবে চলে গেল।একবার কি পারতো না তার সাথে কথা বলতে?নার্সের বলা কথা অনুসারে, সে তো প্রেমার সাথে কথা বলতে এসেছিলো।তাহলে তাকে কেন এভাবে ইগনোর করে চলে গেল।আচমকাই রাস্তার পাশে হাটু গেড়ে বসে চিৎকার করে কেদে উঠলো। মুহুর্তে’ই আশেপাশের জনগনকে চোখে পড়তেই তৎক্ষণাৎ উঠে দাড়ালো।চোখ মুছে হস্পিটালের দিকে যেতে যেতে মনকে বোঝালো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সেতো এখন আর একা নেই।তার সাথে জড়িয়ে আছে নেতামশাই য়ের সম্মান।একজন এমপি র বউ রাস্তায় হাটু মুড়িয়ে চিৎকার করে কাদলে যে নানাজন সেটাকে নানাভাবে নেবে।
দ্রুতপায়ে দোতলায় উঠলো।ভেতর থেকে কান্নারা যেন দলা পাকিয়ে বাইরে আসতে চাইছে।দুচোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছে।হাতের মুঠোয় থাকা ফোনটা বেজে উঠতেই স্ক্রিনে র দিকে তাকালো স্পর্শী।”বিপাশা” ফোন দিয়েছে। চোখ মুছে নিজেকে খানিকটা শান্ত করে ফোন রিসিভড করল।ওপাশ থেকে ব্যাস্ত গলায় বিপাশা বললো-

কিরে মা,ফোন দিলি কেন?
চমকে গেল স্পর্শী।কল লিস্ট চেক করতেই দেখলো পাচ মিনিট আগেই তার ফোন থেকে কল গিয়েছে।হয়তো ভুলবশত স্ক্রিনে টাচ লেগে কল গিয়েছে।গলা পরিস্কার করে থমথমে কন্ঠে স্পর্শী বললো-
ও খালামনি হয়তো ভুলে কল গেছিলো।
থমকে গেল বিপাশা।নিজ মেয়ের মতো ছোট বেলা থেকে মানুষ করা স্পর্শীর কান্নাভেজা কন্ঠ চিনতে একটুও ভুল করলেন না।কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললেন-

কিছু কি হয়েছে সোনা?কাদছিলি কেন?
এমন আদুরে কন্ঠস্বর শুনে নিজেকে আর আটকাতে পারলো না স্পর্শী।হুহু করে কেদে দিলো।ওপাশ থেকে অস্থির হয়ে বিপাশা বলতে লাগলো-
আমাকে বল মা।কি হয়েছে?জামাইয়ের সাথে ঝগড়া লেগেছে কি?

–আমার ভাগ্যটা এমন কেন খালামনি?সব থেকেও আমি সারাজীবন নিঃস্ব একাই থেকে যাবো।এমনটা কেন হলো?আচ্ছা,মায়ের বদলে আমি মরতে পারতাম না।তাহলে এতো যন্ত্রনা সইতে হতো না।আমার ভাগ্যটাই খারাপ জানো তো। এতো একাকিত্বের মধ্যেই একটা ছোট্ট সংসার করার সাধ জেগেছিলো।কিন্তু আমি তো ভুলে গেছিলাম আমার পোড়াকপালের কথা,ওই অভিশপ্ত পরিবারের কথা।

সেই ছোট বেলা থেকে দূরে থাকলাম অথচ দেখো এই অভিশপ্ত পরিবার টার কারনে আমি কোথাও সুখে থাকতে পারছি না।যেখানেই যাচ্ছি,অপয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটিয়েই যাচ্ছি।সব আমার জন্য হয়েছে জানো তো।যদি আমি নেতামশাই কে আশকারা না দিতাম তাহলে উনি নিজের সাথে আমায় জড়াতো না। আর না এতোসব হতো।আমার লজ্জা করছে মনি,এই পরিবারের কারো সামনে আমি মাথা উচু করে দাড়াতে পারছি না।ভীষণ লজ্জা করছে আমার।

আতকে উঠলেন বিপাশা।স্পর্শীর অস্থিরচিত্তে এমন করুন স্বরে কথাগুলো শুনে অস্থির হয়ে উঠেছেন তিনি।বললেন-
কি হয়েছে মা?ভাইজান কি কিছু বলেছে?
দম ফেললো স্পর্শী।নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল-

না খালামনি। তুমি জানো তো,তোমার জামাই য়ের সাথে জাফলং গিয়েছিলাম।একটা দিন ও কাটাতে পারি নি সেখানে।তোমার ভাইজানের কুলঙ্গার ছেলে সোভাম,সরদার বাড়ির জানোয়ার গুলো আমার ছোট্ট ননদ টাকে তুলে নিয়ে গেছিলো।ওরা ওকে রে,,,প করেছে মনি।আমার দেবর টাকে নিষ্ঠুর ভাবে কুপিয়ে খুন করেছে।তোমার জামাই সহ্য করতে পারে নি।সে ও নাকি ওদেরকে ঘরে আটকে কুপিয়েছে। আমি ঠিক কিচ্ছু জানি না খালামনি।এখানে আসার পর এক মিনিট ও ওর সাথে কথা বলতে পারি নি আমি। একটু আগেই পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে ওকে।আমার শাশুড়ী বারবার অজ্ঞান হচ্ছে। ননদ টা আগের থেকেও আরো অসুস্থ হয়ে গেছে।ওকে ডক্টর রা বরিশাল নিয়ে যেতে বলেছে।এদিকে আমার শশুর যেন নিজের মধ্যেই নেই।

আমি,আমি কি করবো খালামনি।মাথা ছিড়ে যাচ্ছে আমার।আ আমি রাখছি, প্রেমা আবার কাদছে। ওর কাছে যেতে হবে।
ফোন কাটতেই হাউমাউ করে কেদে উঠলেন বিপাশা।তার ওই ছোট্ট মেয়েটা কিভাবে সামলাবে এতোকিছু।মায়ের কান্নার আওয়াজ পেতেই ঘর থেকে ছুটে আসলো রাহুল।সমস্ত টা শুনতেই পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো।স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ সেখানেই দাড়িয়ে রইলো সে।

পাভেল শিকদার মারা গেছে।এই মানুষটাকেই দাবার গুটি বানিয়ে আর্শিকে বিয়ে করেছিলো সে।নিজের নিচু চিন্তা-ভাবনার কারনে এখন ভীষণ লজ্জা লাগছে তার।লোকটা মারা গেছে ভাবতেই ভেতর থেকে একটা অপরাধবোধ কাজ করে।আচ্ছা,আর্শি কি শুনেছে এই খবর?

ধীর পায়ে ছাদে উঠলো রাহুল।দুরেই অন্যমনস্ক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর্শি। শাশুড়ীর ফোন লুকিয়ে আজ সারাটা দুপুর ধরে ফোন দিয়ে গেছে পাভেল ভাই কে।কিন্তু ফোন বরাবরের মতোই বন্ধ। সে কি জানতো বন্ধ ঘরে একদল হায়নার ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার পাভেল ভাইয়ের পকেটের ফোন টুকরো টুকরো হয়ে গেছে কাল সকালেই।
আর্শি।

আচমকা পেছন থেকে রাহুলের ডাক শুনতেই চমকে উঠলো আর্শি।হাতের ফোন টা দ্রুত ওড়নার পেছনে লুকালো।পেছনে ফিরে ঘাবড়ানো কন্ঠে বললো-
জ্বী বলুন,

আর্শীর স্বাভাবিক রুপ দেখে রাহুল দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।কিছুক্ষণ এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে বললো-
তুমি কি কিছুই জানো না?
ভ্রু কুচকালো আর্শি।বোকা বোকা কন্ঠে বললো-
কেন?কি জানবো?
আর সময় নিলো না রাহুল।ত্রস্ত কন্ঠে বললো-

তোমার ভাই সোভাম, নিরব আর ওদের দলের আরো কয়েক জনকে স্পর্শীর হাসবেন্ড পরশ শিকদার কুপিয়ে খুন করেছে।
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো আর্শি।ভয়কাতুরে কন্ঠে বললো-
কেন?ভাইয়ারা কি করেছে?পরশ ভাইয়া কেন করেছে এমন?উনি তো ভালো মানুষ।
জিভ দিয়ে ঠোট ভেজালো রাহুল।আদোও কথাটা বলা উচিত হবে কি না ভেবে পেল না।পুনরায় আর্শির কথার তোড়ে রাহুল বললো-

কারন তোমার ভাইয়েরা পরশ শিকদারের ছোট বোনকে রেপ করেছে আর তার ছোট ভাই পাভেল শিকদার কে কুপিয়ে খুন করেছে।
স্বাভাবিক ভংগিতেই তাকিয়ে রইলো আর্শি।মাথাটা ভনভন করছে তার। মস্তিষ্ক টা যেন সাময়িক ভাবে অচল হয়ে পড়েছে।মন টা যেন অনুভূতিহীন।বেশ কতক্ষণ রাহুলের দিকে তাকিয়ে ঠিক কি রিয়াক্ট করা উচিত বুঝতে পারলো না।আচমকাই ঠাস করে ছাদের মেঝেতে পড়ে গেল।

হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো রাহুল।দ্রুতপায়ে এগিয়ে আর্শিকে তুলতেই মাথার বামপাশ টা ভেজা অনুভব করলো।চুল সরাতেই দেখলো লাল রঙা তাজা রক্তের স্রোত বয়ে চলেছে মেঝের উপর।

রাজনীতির রংমহল পর্ব ৩১

কিছু কথা:
প্রশ্ন-১:আমি এর আগে প্রতিদিন গল্প দিলেও বর্তমানে কেন একদিন পর পর দেই?
–পাঠক,বর্তমানে আমি ভার্সিটি এডমিশন এক্সামের জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি।যত দিন যাচ্ছে ততই ব্যাস্ত হয়ে পড়ছি।তারপরেও প্রতিদিন না দিতে পারলেও নিয়মিত একটা টাইম নিয়ে আপনাদের গল্পটা দিয়ে যাচ্ছি।আশা করি এর পর থেকে এরকম কোনো প্রশ্ন পাবো না।গল্প টা আপনাদের ভালো লাগছে বলেই অপেক্ষা করতে চাইছেন না।কিন্তু প্রিয় পাঠক,আমি নিরুপায়।হয়তো এটাই আমার লাস্ট গল্প হতে যাচ্ছে।আগামী কবে ফিরে আসবো তার কোনো ঠিক নেই।আপনারা তাড়াহুড়ো করলে আমার ও গল্পটা তাড়াহুড়োয় শেষ করতে হবে যেটা আমি চাইছি না।
আজকে আমার বার্থডে। অনেকেই চাইছিলেন একটা বোনাস পর্ব।যদিও ছোট হয়েছে তাও আপনাদের খুশির জন্য দিয়ে দিলাম।ভালোবাসা রইলো সকলের জন্য

রাজনীতির রংমহল পর্ব ৩২