শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১৪

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১৪
তানিয়া মাহি

শুভ্রতা সকাল সকাল তৈরি হচ্ছিল ভার্সিটিতে যাবে জন্য। স্নিগ্ধা তখনো পড়ছে আজকেও পরিক্ষা আছে তার তবে সেটা দুপুরবেলা। শুভ্রতা তৈরি হয়ে বের হতেই নেহা এসে সামনে দাঁড়ায়। শুভ্রতা থেমে যায়,
” কি রে রাস্তা আটকে দাঁড়ালি কেন?”
” ভাইয়া বলেছে তোমাকে দাঁড়াতে। ভাইয়া তোমাকে নিয়ে যাবে।”

” ভাইয়াকে বলে দে আমি বাসে করে যাব। দশ মিনিটের মধ্যে বাস চলে আসবে। আমার জন্য শুধু শুধু ওখানে যেতে হবে না। রাস্তা অল্প হলে কথা ছিল না শুধু শুধু এতদূর যেতে হবে না।”
” নেহা, ওকে বলে দে আমি এমনি এমনি যাব না। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাব আমার দাওয়াত আছে সেখানে তাই যাচ্ছি আর এমনি এমনি গেলেও তার কোন সমস্যা থাকার কথা না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শুভ্রতা কথা শেষ করতেই নিহান সেখানে এসে তার কথা শেষ করে। নেহা এবার কিছু না বলে মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে যায়। শুভ্রতা কাধের ব্যাগ ঠিক করে বলে, ” দেখুন নিহান ভাই আমাই একাই যেতে পারব, এতদিন যাওয়া আসা করছি আমার কোন সমস্যা হয় না এখনো হবে না। আপনি একা চলে যান ”
” আমি আমার সাথে তোকে যেতে বলেছি শুভ্রা, সবসময় এরকম ঘাড় ত্যাড়ামি করবি না একদম।”
” আমার থেকে দূরে থাকুন, একা থাকতে দিন তাহলে আমার কোনকিছুই আপনার কাছে ত্যাড়ামি লাগবে না। আমি চাই না আমার আশেপাশে আর কোন পরপুরুষ থাকুক।”

” আমি পরপুরুষ হয়ে গেলাম?”
” নন? দেখুন এখন এত কথা বলার কোন ইচ্ছে নেই আমার। আমাকে যেতে দিন এখন, সরুন সামনে থেকে। আপনাকে দেখে সবাই ভয় পেলেও আমি ভয় পাই না।”
” আমি চাই ও না তুই ভয় পাস। শুধু যেরকম করছিস এরকম করিস না।”
” আমি এবার আসছি।”
” সোজা গিয়ে বাইকের পাশে দাঁড়াবি, আমি স্নিগ্ধার কাছে থেকে আসছি। আমি যদি বাহিরে এসে দেখি যে তুই নেই তাহলে কিন্তু তা*ন্ডব বাধিয়ে দেব শুভ্রা।

শুভ্রতা কোন কথা না বাড়িয়ে বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। সে আপাতত চায় না কোন পুরুষ মানুষ তার আশেপাশে থাকুক। নিহান তো নয়-ই কারণ শুভ্রতা জানে নিহান তাকে এখনো পছন্দ করে। সে যদি নিহানের সাথে নরম হয় তাহলে নিহান আবার তার দিকে পা বাড়াবে। শুভ্রতার মতে সেটা ঠিক না। নিহান যে অবস্থানে আছে এই অবস্থানে থেকে সে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করে। সে নিহানের যোগ্য নয়।

মোটকথা শুভ্রতা এখন আর কোনরকম সম্পর্কে জড়াতে চায় না। সে কঠিনভাবে নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করতে হয় যেন ভবিষ্যতে কারো ওপর নির্ভর করতে না হয়। কিছু মেয়ে কোন একটা সময় এসে আর পছন্দের কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে না। সেই মেয়ে নির্দিষ্ট একটা সময়ে এসে চায় তার পরিবারের মানুষগুলোকে ভালো রাখতে হাসিখুশি রাখতে, ভালো একটা অবস্থানে থাকতে, সবার চোখে নিজের সম্মান দেখতে চায় সে আর এগুলো অর্জন করতে অবশ্যই ভালোভাবে পড়াশোনার কোন বিলল্প নেই।

শুভ্রতা সোজা গিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়। বাড়িতে দেরি হওয়ায় রাস্তায় দাঁড়ানো অবস্থায় মিনিট পার হতেই বাস চলে আসে। শুভ্রতা বাসে উঠে বসে। অন্যদিন সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কিন্তু আজ বাসে স্টুডেন্ট কম থাকায় কয়েকটা সিট খালি রয়ে গেছে। বাস চলতে শুরু করে আর প্রায় চল্লিশ মিনিট পর ভার্সিটিতে পৌঁছেও যায়।
শুভ্রতা বাস থেকে নেমেই দেখে ফাউজিয়া অপেক্ষা করছে। শুভ্রতা গিয়ে ফাউজিয়ার সামনে দাঁড়ায়।

” তুই এখানে?”
” আমি মাত্রই রিকশা থেকে নামলাম। নেমে দেখি বাস ঢুকছে তাই দাঁড়ালাম। তুই আমাকে চিনতে পারলি?”
” তুই আমাকে চিনলে আমি কেন চিনব না? চোখ দেখেই তোকে চিনে ফেলতে পারি আমি।”
” একটা কথা ছিল। ”
” হ্যাঁ বল না। ”
” তোর কাছে কিছু টাকা হবে?”
” হ্যাঁ হবে কিছু টাকা, কেন কি করবি?”

” আম্মুর ওষুধ কিনতে হবে। ব্যাংকের চেকবইটা পাইনি সকালে, আজ গিয়ে খুঁজতে হবে। বারোশো টাকা লাগবে, হবে তোর কাছে? আমি কালকেই দিয়ে দেব।”
” হ্যাঁ আছে টাকা৷ ক্লাসে চল, দিয়ে দেব। আমি মেয়ে হিসেবে মাকে ওষুধ কিনে দিতেই পারি। তোর ফেরত দিতে হবে না কোন টাকা।”
” না না আমি ফিরিয়ে দেব। ”
” বেশি কথা কেন বলিস? চল ক্লাসে।”
“ঠিক আছে চল।”

শুভ্রতা আর ফাউজিয়া দুজন ক্লাসের দিকে হাটা শুরু করে দেয়। ফাউজিয়া মাঝেমাঝে শুভ্রতার দিকে তাকাচ্ছে আর ভাবছে ” এরকম বন্ধুও পাওয়া যায়!” ফাউজিয়া সামনে তাকালে শুভ্রতা বলে ওঠে,
” আজ সন্ধ্যায় শাকিরাকে বিয়ের জন্য দেখতে আসবে বুঝলি? আমার আবার তাড়াতাড়ি ওদের বাড়িও যেতে হবে। মেয়েটা কি যে চিন্তা করছে কে জানে! সকালে ওর কাছে যেতেও পারি নি পড়া জমে ছিল তাই।”

” তুই না বলেছিলি তোর কোন যেন ভাইকে শাকিরা পছন্দ করে?”
” হ্যাঁ দুজনই দুজনকে পছন্দ করে কিন্তু কেউ কাউকে কিছু বলতে পারে নি। এভাবে যদি শাকিরার অন্যকোথাও বিয়ে হয়ে যায় তাহলে কেমন বাজে ব্যাপার হবে ভাবতো! রায়হান ভাইয়া কোন সময়ই প্রেম বিষয়টা পছন্দ করে না তাই শাকিরাকে তার বিষয়টা বুঝতে দেয় নি এমনকি কয়েক বছর আমাদের বাড়িও আসে নি ভাবতে পারছিস!”

” এমন কেন?”
” কারণ কাছাকাছি থাকলে অনুভূতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে তাই। ভাইয়া অসম্ভব ভালো মানুষ। সকালে ভাইয়াকে কল দিয়েছিলাম রিসিভ করে নি। ক্লাসে গিয়ে আবার কল দিয়ে শাকিরার বিষয়টা জানাতে হবে।”
” হ্যাঁ জানিয়ে দে, আচ্ছা শোন না ম্যাম তো পড়া দাগিয়ে দেবে পরিক্ষার জন্য বই এনেছিস?”
” হ্যাঁ এনেছি।”

” এখন কি ক্লাসেই বসবি নাকি বাহিরেই বসবি?”
” ক্লাসেই চলে যাই বাহিরে কি করব!”
” ঠিক আছে চল।”
ফাউজিয়া আর শাকিরা রুমে এসে ব্যাগ রেখে বসে। হঠাৎ কোন কথা মনে পড়ার ভঙ্গিতে ফাউজিয়া বলে ওঠে, ” গতকাল সন্ধ্যায় কি হয়েছে জানিস?”

” তুই না বললে জানব কীভাবে? শুভ্রতা কথাটা বলে ফাউজিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
” আরে মজা করিস না শোন।”
” হ্যাঁ জান বলো। ”
” আবার!”
” আচ্ছা আচ্ছা বল।”
” সন্ধ্যায় সাহিল স্যারকে দেখলাম।”
” কোথায়?”
” আমাদের বাসা ছেড়ে কিছুদুর গিয়ে একটা পুরাতন দোতলা বাড়ি আছে সেই বাড়ির গেইট দিয়ে ফুল হাতে বেরিয়ে রাস্তার দিকে গেল দেখলাম।”

” স্যার কি বিবাহিত! নাকি স্যার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন?”
” তা জানি না, শুধু দেখলাম ফুল হাতে সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পরে কোথায় যেন যাচ্ছেন।”
” তুই কোথায় গিয়েছিলি?”
” আমি আর আম্মু একটা স্টুডেন্টের বাসায় গিয়েছিলাম, যাওয়ার সময়ই স্যারকে দেখলাম।”
” জানি না বাবা, কার কোথায় কি চলছে কে জানে! কিন্তু স্যার তো বলেছিল উনি অবিবাহিত!”
” হ্যাঁ সেটাই ভাবছি। আচ্ছা বাদ দে যা হওয়ার হয়েছে।”

দুজন এবার অন্য কথা শুরু করে। ফাউজিয়া শুভ্রতার সাথে থেকে থেকে সে নিজেও এখন একটু মিশুক হয়ে গিয়েছে। নিজে থেকেই এখন অনেক কথা বলে আর শুভ্রতা বসে বসে শোনে।
ফাউজিয়া কথা বলছেই এমন সময় শুভ্রতা তার ব্যাগ থেকে নুডলসের বক্স বের করে ফাউজিয়াকে এগিয়ে দেয়। ফাউজিয়াকে বক্সটা খুলতে বললে ফাউজিয়া বক্সটা খোলে। বক্সটা খুলতেই নুডলস দেখে ফাউজিয়ার মুখে হাসি ফুটে যায়।

” নুডলস!”
” হ্যাঁ আমি রান্না করেছি আসার আগে।”
” আমার জন্য?”
” হ্যাঁ পুরোটা তোর জন্য তবে তোর যদি দয়ার শরীর হয় তাহলে আমাকে এখান থেকে একটু দিতে পারিস।”
” এতটুকু দয়া আমি করতেই পারি, দে চামচ দে।”

শুভ্রতা ব্যাগ থেকে চামচ আর পানির বোতল বের করে দেয়। ফাউজিয়া চামচটা ধুয়ে নিকাবের নিচে দিয়ে নুডলস খাওয়া শুরু করে। ফাউজিয়ে নিজে খাচ্ছে আর মাঝেমাঝে শুভ্রতাকে খাইয়ে দিচ্ছে। এরকম দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। দুজনের খাওয়া শেষ না হতেই সাহিল শেখ ক্লাসে প্রবেশ করেন। দুজন তাড়াহুড়ো করে বক্স আটকে ব্যাগে রেখে দেয় লুকিয়ে পানিটাও খেয়ে নেয়। ফাউজিয়ার অবস্থা দেখে শুভ্রতা হাসতে থাকে, ফাউজিয়াকে দেখে স্কুল লাইফের কথা মনে পড়ে যায়। ক্লাসে লুকিয়ে কতকিছুই যে খাওয়া হতো সবার, কতই না মজা হতো!!

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১৩

আজকে মন ভালো থাকায় দুই পর্ব একসাথে দিলাম, তবে গল্প পোস্ট দেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে জন্য রিচেক দেওয়া হয় নি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন সকলে, সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১৫