শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪০

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪০
তানিয়া মাহি

” বউ একটু জড়িয়ে ধরব?”
নিহানের কথায় ফিক করে হেসে ফেলে শুভ্রতা। নিহান একপলকে শুভ্রতার হাসি দেখছে। শুভ্রতা হাসলে তার গালের টোল সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে নিহানের।
” তুমি কি জানো এই হাসি আমার সময় থামিয়ে দেয়? সময়ের সাথে শরীরটাও থেমে যায়, চোখ ও পলক ফেলতে ভুলে যায়। তুমি কি জানো মেয়ে তোমার হাসি অন্যকারো ঠোঁটেও হাসি ফোঁটায়?”

” কার মুখে হাসি ফুঁটে যায় আমার হাসি দেখে?”
” তোর একমাত্র বরের।”
” আচ্ছা, তাই!”
” হ্যাঁ। ”
” আর কি কি হয়?”
” বুকে উথাল-পাতাল ঢেউ উঠে, গালটা ঠোঁট দিয়ে ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করে।”
” ছিঃ বা*জে লোক একটা।”
” সত্য কথা বললেই বা”জে লোক?”
“তা হয়তো কি!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আচ্ছা তাই?” বলেই নিহান মুখে হাসি নিয়ে শুভ্রতার দিকে এগোতে থাকে। শুভ্রতা নিহানের এগিয়ে আসা দেখে পিছাতে থাকে। নিহান শুভ্রতার হাত ধরে এক ঝটকায় নিজের কাছে এনে বলে, ” পিছিয়ে যাচ্ছো কেন, আর কত এগোতে হবে আমাকে। জড়িয়ে ধরা পরে, এসো একটা কড়া করে চুমু খেয়ে দেখো। মিষ্টি লাগবে, বারবার খাওয়ার জন্য আবদার করবে দেখে নিও৷ নিহানের স্পেশাল চুমু নেশা ধরিয়ে দেবে গ্যারান্টি।”

নিহানের কথায় শুভ্রতা যেন লজ্জায় ম***রে যাচ্ছে। কী সব কথাবার্তা বলছে নিহান। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চোখ ঢেকে ফেলে সে। নিহান শুভ্রতার অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে। এক নিমিষেই বুকে জড়িয়ে নেয় তাকে। নিহান অনুভব করে হৃদয়টা কেমন শীতল হয়ে যাচ্ছে। এত বছরের কাঙ্ক্ষিত মানুষটা আজকে বুকে ঠাই পেয়েছে। অতিরিক্ত ভ্যাপসা গরমের পর বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়া যেমন পরিবেশ ঠান্ডা করে দিয়ে যায় ঠিক তেমনই এত দিনের না পাওয়ার যন্ত্র*ণা নিমিষেই শরীর, মন শীতল করে দিচ্ছে।

চারদিক থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। শুভ্রতা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ফজরের সময় হয়ে গিয়েছে। বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। নিহানকে ডাকবে কি না সেটা ভাবছে৷ তার অনেকদিনের ইচ্ছে ফজরে দুজন একসাথে নামাজ পড়তে উঠবে। সেটা আগের জীবনেও কয়েকটা দিন পুরণ হয়েছিল, আর তারপর….!
শুভ্রতা নিহানের পিঠে হাত দিয়ে ডাকতে থাকে। কয়েকবার ডাকার পর নিহান চোখ পিটপিট করে শুভ্রতার দিকে তাকায়।
ঘুম জড়ানো গলায় বলে, ” কি হয়েছে? ডাকছিস কেন?”

” আজান দিচ্ছে।”
” তো?”
শুভ্রতা কিছু বলবে তখনই নিহানও, ” আচ্ছা উঠছি।” বলে উঠে বসে। চোখ ডলতে ডলতে বলে “ওয়াশরুমে কে আগে যাবে? আমি নাকি তুই?”
” আপনিই যান, আমি বসে অপেক্ষা করছি। আপনার তো জামায়াতে নামাজ পড়তে হবে। আমি ওয়াশরুমে গেলে দেরি হবে তার চেয়ে আপনিই আগে যান ভালো হবে।”
” ঠিক আছে।”

যাওয়া বাদ দিয়ে এক পলকে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে আছে নিহান। ঘুম থেকে উঠলেও একটা মানুষ এত সুন্দর দেখায় কীভাবে! এলোমেলো চুল, চেহারাটাও ঘুম ঘুম, কি অসম্ভব সুন্দর লাগছে!
” কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
” তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি।”
” ধুর, যান তো দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

নিহান ওয়াশরুম থেকে বের হতেই শুভ্রতা ভেতরে চলে যায়। নিহান তৈরি হয়ে শুভ্রতার জন্য একটা চিরকুট রেখে নিজেও মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়। জামায়াতে নামাজ শুরু হতে সাত মিনিট বাকি, বাড়ি থেকে মসজিদে যেতে তিন থেকে চার মিনিট লাগে। নিহান দরজাটা কিছুটা ভেজিয়ে চলে যায়। নামাজ শেষে তার আরেকটা কাজে যেতে হবে।

ফুলের যোগাড় করতে হবে, এটা একটা পুরুষের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। পুরুষ এটাকে গুরুত্ব দিলে নারীও পুরুষের প্রতি গুরুত্ব দেয়া বাড়িয়ে দেবে। নারীর ছোট ছোট ইচ্ছে-পূরণ হলেই তারা বেশি প্রশান্তি পায়। এই যেমন হুটহাট ফুল পেলে, নামবিহীন কোন উপহার, বাসায় আসার পথে তার শখের কোন জিনিস, এক জোড়া কানের দুল বা শুভ্র কোন শাড়ি, প্রিয় লেখকের কোন বই, সময়মতো সামান্য প্রশংসা নারীর মন প্রশান্ত রাখার জন্য এগুলোই যথেষ্ট।

শুভ্রতা আলমারি থেকে কয়েকটা শাড়ি বের করে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে কোনটা পরবে সেটা ভেবে। নিহানের কোন রঙটা পছন্দ সেটাও জেনে নেওয়া হয়নি। হঠাৎ ফোনের নিচে সাদা কাগজের মতো দেখতে পেয়ে হাতে নেয়। চিরকুট! চিরকুট পড়ে শুভ্রতা আবার আলমারি খুলে বামপাশের ড্রয়ারে কালো রঙের শাড়িটা দেখতে পায় সে। হাসিমুখে শাড়িটা নিয়ে পরতে চলে যায়।

সকাল আটটা- বাড়িতে হৈচৈ এর শব্দ শোনা যাচ্ছে। স্নিগ্ধার মনে পড়েছে গতকাল সকালে রঙগুলো তার রুমেই ছিল তাই সেগুলো নিয়ে এসে সকাল সকাল আবিরা আর নেহার মুখে দিয়েছে। তাদের দুজনকে দেখতে একদম ভূ*তের মতো লাগছে। দুজন মিলে স্নিগ্ধার মুখে রঙ লাগিয়ে দিচ্ছে তার সাথে যোগ দিয়েছে শাকিরা।

মায়ের প্রেশারটা বেড়েছে শুনে নিহান মোড়ের মাথায় গিয়েছিল ওষুধ নিয়ে আসতে। পাড়ার একজনের ফার্মেসি আছে সেখানে, কল দিয়ে তাকে ডেকে নিয়েছিল। নিহান বাড়িতে ঢুকতেই নেহা এসে তার ডান গালে রঙ মাখিয়ে দেয়। একটা ধমক দিতে যাবে তখনই ভাবে, নাহ ধমক দেয়া ঠিক হবে না। বিয়েতে মজা করছে, করুক। তার চেয়ে বরং খানিকটা রঙ নিজের কাছে রেখে দেওয়া যায়, সময় বুঝে নতুন বউকে রাঙিয়ে দেওয়া যাবে।

হৈ-হুল্লোড়ের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় শুভ্রতার। উঠে বসে সে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আটটা পার হয়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি করে উঠতে গিয়ে বিছানার পাশে চোখ যেতেই দেখে সেখানে একটা গোলাপ আর বেলীফুলের মালা রাখা। সাথে চিরকুটে লেখা, ” শুভ সকাল শুভ্রপরী “। চিরকুট আর ফুলগুলো নিয়ে বসে কিছু ভাবতে থাকে সে। প্রতিটি পদক্ষেপে নিহান তাকে চমকে দিচ্ছে। যে মানুষটা এত ভালোবাসতে পারে সেই মানুষটা এতগুলো বছর ভালোবাসা অপ্রকাশিত রেখেছিল!

বাহিরের রুমে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে, নিহান ও বসে আছে। রান্নাঘরে রাবেয়া বেগম নাস্তা বানাচ্ছেন। শুভ্রতা সিড়ির কাছে এসে ভাবছে মাথায় কাপড় দেবে কি না? ভালোভাবে নিচে দেখে নেয় কে কে আছে, শুধু আবিরা আর নেহা আছে সাথে নিহান। বড়মা রান্নাঘরে কাজ করছেন, তাই সে আর সাত-পাঁচ না ভেবে মাথায় কাপড় না দিয়েই নামতে থাকে। মাথায় কাপড় দিলে তো খোপার ফুলটা নিহান দেখতে পাবে না।

নিহান বসে ফোনে কিছু একটা করছিল। শুভ্রতা পাশ দিয়েই সোজা রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। নিহান সামনে তাকাতেই শুভ্রতার খোপায় ফুল দেখে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে।
শুভ্রতাকে দেখে রাবেয়া বেগম বলেন, ” ঘুম হলো?”
” হ্যাঁ হয়েছে। আমায় কিছু কাজ দাও করে দিই।”
” তোর কিছু করতে হবে না, আমি তোর বড়মা’ই আছি চাপ নিস না। আমার দুই মেয়েকে রান্না করে খাওয়াতে পারলে তোকেও পারব। যা গিয়ে বস ওখানে।”

” কিছু একটা করি প্লিইইইইজ বড়মা।”
” তুই কালো শাড়ি পরেছিস! আজ কালো শাড়ি কেন?”
রাবেয়া বেগমের প্রশ্নে শুভ্রতা শুকনো ঢোক গিলে নিহানের দিকে তাকায়। নিহান মনোযোগ দিয়ে ফোন টিপছে। বউ এখানে কালো শাড়ি পরে জেরার সম্মুখীন হয়েছে আর বর চুপচাপ বসে ফোন ঘাটছে!

” কি হলো ওদিকে কি দেখছিস?”
” উনি বলেছেন কালো শাড়ি পরতে তাই পরেছি।”
” আচ্ছা যা গিয়ে বস ওখানে। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।”
” আমি তোমার সাথে নাস্তা নিয়ে যাই অন্তত।”
” শুভ্রতা! যেতে বলেছি আমি। ”

শুভ্রতা আর কোন কথা না বাড়িয়ে আবিরার পাশে গিয়ে বসে। শুভ্রতাকে আবিরার পাশে বসতে দেখে নিহান ভ্রু কুচকে তাকায় তার দিকে। শুভ্রতা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আবিরা আর নেহার সাথে গল্প শুরু করে দেয়।
বিকেলে আসরের নামাজ শেষ করে বাবার সাথে বসে বসে গল্প করছে শুভ্রতা। স্নিগ্ধা ঘুমোচ্ছে আর আয়েশা বেগম শুভ্রতার জন্য ফ্রিজ থেকে পায়েস নিয়ে এসে পাশে বসলেন। শুভ্রতা ঘন দুধের বাদামী রঙের পায়েস খেতে ভীষণ পছন্দ করে। ছোটবেলা থেকেই মাঝেমাঝে পায়েস খাওয়ার বায়না ধরে। আয়েশা বেগম পায়েস এগিয়ে দিতেই সে মনোযোগ দিয়ে খেতে থাকে।

” ভালো হয়েছে খেতে? কালকে তো খেতেই পারলি না।”
” তোমার হাতের পায়েস ভালো না হয়ে উপায় আছে? বাবাকেও দাও একটু। ”
” না রে আমি এখন পায়েস খাব না। একটু বের হব, সারাদিন বাড়িতে ছিলাম। ”
” একটু খেয়ে বের হও দেখো অসাধারণ হয়েছে খেতে।”
” ঠিক আছে, আয়েশা দাও পিরিচে করে একটু খেয়ে দেখি।”
আয়েশা বেগম পায়েশ আনতে যান। আবিরা রুমে ঢুকতেই শুভ্রতা তার মাকে ডেকে বলে, ” মা আরেকটা পিরিচেও দিও পায়েস, আবিরা আপু এসেছে।”

আবিরা এগিয়ে এসে পাশে বসে বলে, ” সে পায়েস খাচ্ছি সমস্যা নেই। কথা হচ্ছে ভাইয়া তোকে ডাকছে।”
” আমাকে? কেন, কি হয়েছে?”
” সেটা জানি না, পায়েসটা শেষ করে একটু তাড়াতাড়ি যা। দেরি করলে আবার রেগে যাবে।”
শুভ্রতা চিন্তায় পড়ে যায়। এত জরুরি তলব কেন? আসার সময় দেখে এলো কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে, আসার সময় বলেও এসেছে। তবুও কেন ডেকে পাঠিয়েছে কে জানে!

পায়েস খাওয়া শেষ করে, বাবাকে বলে উঠে ফোন হাতে নিবে তখনই দেখে সেখানে ফোন নেই। তার মানে ফোন রুমেই রেখে এসেছে। সেই অচেনা নম্বর থেকে আবার কল এলো না তো! শুভ্রতা তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৩৯

লেখার নেশা*টা কাটিয়ে উঠতেই পারছিলাম না। গল্প ২৩ তারিখের আগে হয়তো একবার পাবেন। কারণ এই দুইটা পরিক্ষার পড়া মোটামুটি অনেকটাই হয়ে এসেছে। ঈদের পরে আবার একটানা পরিক্ষা থাকায় তখন দিতে পারব না।
গল্পে নতুন মোর আসতে চলেছে, অপেক্ষা করুন নতুন কিছুর জন্য।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪১