শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ১১

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ১১
আলিশা

বমির ভাব কাটিয়ে উঠতেই আমি তাড়নের ওপর তৈরি হলাম। সুযোগ বুঝে বাড়ি থেকে বের হলাম। স্মরণ তখন কোথাও ছুটে গেছে। সঙ্গে গেছে ছোঁয়া। আমি যেন তার মাথা থেকে ছিটকে পরে গেছি। ইশ পৃথিবী! প্রথম বউয়ের ঠুকনো খোঁজ পেতে না পেতেই আমি তার মন, মস্তিষ্ক থেকে একেবারে ছিটকে গেছি।

কই যাওয়ার আগে একবারও তো বলে গেলো না সে কোথায় যাচ্ছে? মেয়েকে নিয়ে হন্যে হয়ে নাকি ছুটে গেছে। এমনই খোঁজ খবর আমায় শোনালো জয়নব খালা। আমি কপাল পোড়া বেচারি কেন সুখের আশা করেছিলাম? কেন? কানা কলসিতে এক সমুদ্র পানি তুললেও যে তা পানিশূন্য হবেই একথা যেন ভুলে গেছিলো আমার মন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমি হসপিটালে পৌঁছালাম। সন্দেহের বীজ মনে দানা বেঁধেছে। শুধু আজ নয়। গত পাঁচ দিন হলো আমার বমি ভাব। কিছু টেস্ট করালাম। রিপোর্ট হাতে আসবে তিন ঘন্টা পর। যদিও আবহাওয়া আদ্র তবুও আমি বাইরে মন বসাতে পারলাম না। ভার্সিটি মুখো হলে খারাপ হতো না। তবুও ফিরে এলাম বাড়িতে। সকালের নাস্তাটা কেউ করেনি। বাবাও চিন্তিত ছোঁয়ার ভাষ্য শুনে। আমি ফ্রেশ হয়ে খাবার নিয়ে বাবার ঘরে উঁকি দিতেই তিনি কাছে ডাকলেন আমাকে। আমি গেলাম। পাশে বসলাম বাবার। তিনি বলে উঠলেন

— ভয় পাচ্ছিস? ছোঁয়ার কথায়?
যদি সত্যি বলি, তবে আমি শুধু ভয় না। রীতিমতো আতঙ্কিত। তবে যদি সত্যি হয় ছোঁয়ার কথা। তবুও আমার কিছু করার নেই। দূরে সরতে হবে, সংসার ছাড়তে হবে। স্মরণ যেমনটা চাইবে তেমনটাই মেনে নিতে হবে আমার।
— এই হাতে ছোঁয়ার মা’কে দাফন করেছি। কিন্তু….

বাবার এই কিন্তু আমাকে ভীষণ ভাবে ভীতু করে দিলো। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম মনে অধীর আগ্রহ নিয়ে। কিন্তুর পর কি? বাবা উঠে দাঁড়ালেন। আমার থেকে মুখ লুকিয়ে বললেন
— কিন্তু মৃত দেহের মুখের একপাশ স্পষ্ট ছিলো না। থে*ত*লে গিয়েছিলো। আমরা স্পষ্ট বুঝিনি।
— তাহলে ধরে নিলেন কিভাবে ওটা অথৈ…… ওটা ছোঁয়ার মা ছিলো?
আমার অস্থির কন্ঠের পিঠে বাবা বললেন

— স্মরণের বিশ্বাস। ও কি অথৈ কে চিনতে ভুল করবে?
আমি বাহ্যিকভাবে মিইয়ে পরলাম। তবে অন্তরে আমার অস্থিরতা জিইয়ে উঠলো। এ কেমন ক্ষেত্র আমায় ঘিরে? না চতুর্ভুজ না ত্রিভুজ। এ যেন বৃত্ত। চারিপাশ সমান। কোনো পাশ উন্মুক্ত নয়।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো। ম্যাচ ম্যাচ করা শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়ে ভাবছিলাম অথৈয়ের কথা। হঠাৎ ফোনের শব্দে ভাবনা বিলীন হয়ে গেলো। ফোন হাতে নিয়ে উঠে বসতে বসতেই রিসিভ করে কানে ধরলাম। আমার নির্লিপ্ততা ফোনের ওপাশের ছটফটে মানবী উপলব্ধি করতে পারলো না। সে বরাবরই মতোই উদ্বিগ্ন হয়ে বলতে আরম্ভ করলো
— খেয়া রে…. খেয়া আমার বিড়াট সর্বনাশ হয়ে গেছে। এবার কি হবে আমার? আমার ঘোরাঘুরি, পড়ালেখার কি হবে রে?

আমি উৎসুক হতে পারলাম না প্রিয়ার কথায়। বড্ড অমনোযোগী শ্রোতার ন্যায় বললাম
— ওহ।
ওপাশ হতে দাপটে কন্ঠস্বর আমাকে শাসিয়ে বলল
— হোপ মাইয়া… তুই কোনোদিন ঠিক হলি না। এর চাইতে ভালো ছিলো আমি যদি নীলিমা কে ফোন করতাম। ও বেচারি একহাতে রান্না আর অন্য হাতে বই নিয়ে বরের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে স্পিকারে আমার কথা শুনতো। একটু স্বান্তনা দিতো।
— কি হয়েছে বল? শুনছি তো আমি।
প্রিয়া এবার দুঃখী কন্ঠে বলল

— আমি ওয়া ওয়ার আম্মা হতে যাচ্ছি দোস্ত। এটা আমি মানতে পারছি না। কিভাবে সামলাবো ওকে? ঘরের ডাক্তার বলেছে আমি নাকি হাসতে পারবো না। বসতে পারবো না, ঘুরতে পারবো না। হাসলেই পেট ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা নাইন্টি নাইন পার্সেন্ট।

প্রিয়ার কথা শুনে আমার শুকনো মুখে হাসি ফুটলো। ও বকলো আমায়। আমার ভাবনায় ভীর করলো আমার ভবিষ্যত। আজ সকালে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করাতে হসপিটালে গিয়েছিলাম। যদি রিপোর্ট পজিটিভ আসে তবে আমিও কি প্রিয়ার মতো হাসতে পারবো না? সত্যিই কি পেট ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে? বোকা ভাবনা নিয়ে প্রিয়ার সঙ্গে আলাপ এগিয়ে নিলাম। মাঝপথে প্রিয়া পড়ালেখার প্রসঙ্গ তুলল।

কিছু নতুন বই সাজেস্ট করলো ও আমাকে। ওকে সাজেস্ট করেছে শান্ত। আমি লিখে নিতে চাইলাম বইয়ের নাম। তবে দূর্ভাগ্যবশত বা সৌভাগ্যবশত আমার হাতের নিকট কোনো কলম খাতা ছিলো না। অগত্যা উঠতে হলো আমাকে। এগিয়ে যেতে হতো আমার আগের রুমের দিকে। যেখানে কেবল পরে থাকে আমার বই খাতা। স্মরণের রিডিং রুম পেরিয়ে ওঘরে যেতে বড্ড অলসতা কাজ করলো।

দরজা খোলা ছিলো বলে ছোট একটা কাজের জন্য স্মরণের রুমেই প্রবেশ করলাম। তার ইয়া বড় টেবিলে সার্বক্ষণিক সংখ্যা দশেক কলম আর খাতার পেইজ এলোমেলো ভাবে গড়াগড়ি খায়ই। একটা পেইজ টেনে নিজের কাছে এনে বইয়ের নাম লিখালাম। প্রিয়া ফোন কাটলো। আমি কাগজের লেখাটুকু ছিঁড়ে প্রস্থান করার মুহূর্তে হঠাৎ থমকে গেলাম। চোখজোড়া বিস্ময়ে ছেয়ে গেলো।

টেবিলে পরে থাকা একটা কাগজে ছক করা। তারিখ লেখা। পেইজের মাঝখানে লাল কালিতে লেখা অথৈ। তারপাশে লেখা রাত রাত দু’টো সাথে দু’দিন আগের তারিখ ও বার। আমার বুকের ভেতর ধুকপুক ধুকপুক করা শুরু হলো। স্মরণ তবে দু’দিন আগে থেকে অথৈয়ের খোঁজ পেয়েছে? দু’দিন আগে অথৈ তাকে ফোন করেছিল?নিষ্প্রভ চিত্তে থম মেরে দাড়িয়ে রইলাম। একারণেই কি অবহেলা? এড়িয়ে চলা তার?

বড্ড মন খারাপ নিয়ে আমার আর হসপিটালে যাওয়া হলো না। মেঘমেদুর মন নিয়ে বসে রইলাম আমার ঘরে। স্মরণ এলো শেষ বিকেলে। আজ ঘন কুয়াশা গ্রাস করেছে গোধুলীকে। অঙ্গে শীতের বস্ত্র সকলের। ঘরে ফিরে সে আমার খোঁজ করলো। আমার অভিমানের পাল্লা এতোই ভারী হলো যে আমি তার সম্মুখে গেলাম না। তবে ছোঁয়া কে তো দূরে রাখা যায় না। চাইলেও না। সে কোলে এসে বসে পরলো নিরদ্বিধায়। আমি জানালা দিয়ে দূরে কোথাও দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছি। ছোঁয়াও আমাকে অনুসরণ করে দূরে দৃষ্টি ফেলে সহসা শুধালো

— তোমার কি মন খারাপ?
আমি মিষ্টি হাসার চেষ্টা করে বললাম
— না তো।
— আমার মা এলে কি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ১০

সকালের দুঃখ গুলো জাগ্রত হলো আমার হৃদয়ে। চোখে জল এসে দুঃখ প্রকাশ ষোলোকলয় পূর্ণ হলো। ছলছল করা নয়ন নিয়ে ছোঁয়ার কথার প্রত্যুত্তর করলাম। হয়তো মিথ্যে বললাম। নয়তো সত্যি বললাম।
— নাহ।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ১২